নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০১ পিএম, ১৪ জুলাই, ২০১৮
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে থেকে সবচেয়ে বড় বন্ধুর পরিচয় দিয়েছে ভারত। কোটি শরণার্থীকে জায়গা দিয়েছে, অস্ত্র দিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে, এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধও করেছে ভারতীয় সেনারা। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের মতোই সহায়তা করেছে আরেকটি দেশ রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন)। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোর বিরোধী ছিল পাকিস্তানের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ নিয়ে কত কিছুই তো করতে পারতো যুক্তরাষ্ট্র। কিছুই করতে পারেনি শুধুমাত্র রাশিয়ার কারণে। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের অব্যাহত হুমকি রুখে দিয়েছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র যখন বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠানোর হুমকি দিয়েছে। এর প্রতি-হুমকি দিয়েছে রাশিয়াও। ভারত ও রাশিয়ার অব্যাহত সহায়তার কারণেই নয় মাসের সংগ্রামে আমরা পেয়েছি স্বাধীন দেশ। ত্বরান্বিত হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তি।
আজ শনিবার পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ-কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ-শিল্প বিষয়ক উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউরি ইভানোভিচ বরিসভ। বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে ৩৩ তম পারমাণবিক শক্তির অধিকারী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে তো রাশিয়ার জন্যই। আর তিনদিনের সফরে বাংলাদেশে আসা ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ উদ্বোধন করলেন সবচেয়ে বড় ভিসা কেন্দ্র। এর ফলে বাংলাদেশিদের ভারত যাওয়া আরও সহজ হলো। একই সঙ্গে রাজশাহীর সারদায় অবস্থিত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে সদ্য নির্মিত বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ভবনের উদ্বোধন করলেন সফররত ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। বাংলাদেশ-ভারত ভাতৃপ্রতীম সম্পর্কই আরেকবার দেখা যাচ্ছে রাজনাথ সিংয়ের সফরে। একসঙ্গে দুই সফর ভারত রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের কথাই বলে। মনে করে দেয় একাত্তরের বন্ধুত্ব।
বাংলাদেশের জন্মলগ্নের দুই বন্ধু ভারত-রাশিয়া এখনো অকৃত্রিম উদার। স্বাধীনতার ৪৭ তম বছরেও এই সত্য স্বচ্ছ জলের মতোই টলটলে পরিষ্কার। শুধু এখনই নয় স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের বিভিন্ন পট পরিবর্তনে বন্ধুর মতোই সবসময়ই পাশে ছিল ভারত-রাশিয়া। একাত্তরের বন্ধুরাই বাংলাদেশের সবসময়ের প্রকৃত বন্ধুর পরিচয় দিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় দেশ পুনর্গঠনে ও অবকাঠামো নির্মাণে বিপুল অর্থ সহায়তা দিয়েছে রাশিয়া। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গড়ে ওঠা বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানা থেকে শুরু করে প্রতিটি বড় অবকাঠামোর পেছনে দেখা যায় রাশিয়ার অবদান।
২০১৪ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্তাল সময়েও দুটি দেশ সবসময়ই বাংলাদেশের পাশে ছিল ভারত ও রাশিয়া। এখনো বাংলাদেশে শান্তি,স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের অন্যতম সহযোগী এই দুই দেশ।
অপরদিকে বাংলাদেশে স্বাধীনতার ঘোর বিরোধী যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান কী? আজই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। বৈঠকে বার্নিকাট বলেছেন, আগামী তিন সিটি নির্বাচন গাজীপুরের মতো হবে না বলেই তিনি আশা করেন। এছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে মন্তব্য করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন বিরূপ মন্তব্যের বিষয়ে দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্ট নিশ্চিত করেছে মার্কিন মতামতেরই প্রতিফলন।
যুক্তরাষ্ট্র যখন বাংলাদেশ নিয়ে এমন মনোভাব পোষণ করছে বাংলাদেশ কিন্তু ঠিকই পাশে পাচ্ছে ভারত-রাশিয়াকে। বিশ্লেষকদের মতে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর বিশ্বজুড়ে রাশিয়ার প্রভাব কিছুটা হলেও খর্ব হয়েছিল। কিন্তু গত দুই যুগে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে স্নায়ুযুদ্ধের মতো অবস্থায় না থাকলেও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিমত নিয়েও শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে রাশিয়া। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ রাজনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান মনোভাবের বিপরীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পাচ্ছে দুই পরীক্ষিত বন্ধু ভারত ও রাশিয়া।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুরে ফিরে ইতিহাস বার বার আবর্তিত হয়। তেমনি পরীক্ষিত বন্ধুরাই পাশে থাকে। তাই আশা করা যায়, সময়ে-দু:সময়ে বাংলাদেশের পাশে থাকবে পরীক্ষিত বন্ধুরাই। আর তাদের হাত ধরেই লেখা হবে বাংলাদেশের পরবর্তী ইতিহাস, যা হবে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ দলীয় কোন্দল
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
রাজনীতিতে প্রায় পরিত্যক্ত আবর্জনার ডাস্টবিনে পড়ে থাকা মাহমুদুর রহমান মান্না নিজের ওজন বাড়াতে এবং রাজনীতিতে নিজের অবস্থান জানান দেওয়ার জন্য নতুন স্টান্টবাজি গ্রহণ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, নির্বাচনের আগে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে মন্ত্রী হওয়ার অফার দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কী স্বেচ্ছা নির্বাসনে গেলেন? গতকাল তিনি ওমরা পালন শেষে দেশে ফিরেছেন। দেশে ফেরার পরেও সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তাঁর কোন উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়নি। তিনি ছিলেন প্রচন্ড বিরক্ত এবং অনুৎসাহী। বারবার সাংবাদিকদের তিনি অনুরোধ করেছিলেন তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। এরপর তিনি বাড়িতে গিয়েছেন এবং সেখানে রীতিমতো নিজেকে গৃহবন্দি করে রেখেছেন। আজ সারাদিন দলের নেতাকর্মীরা তাঁর সঙ্গে কোন যোগাযোগ করতে পারেননি। এমনকি ফোন করা হলেও তিনি ঘুমিয়ে আছেন, বিশ্রামে আছেন কিংবা পরে ফোন করুন- এরকম বক্তব্য পাওয়া গেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই নীরবতা বিএনপির মধ্যে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
একের পর এক ভুল কৌশল বিএনপির রাজনীতির অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে। এবার উপজেলা নির্বাচনেও বিএনপি যে কৌশল গ্রহণ করেছিল, প্রথম দফা ভোটগ্রহণের পর সেই কৌশল ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপির ভোট বর্জন যেমন সাধারণ মানুষ সাড়া দেয়নি ঠিক তেমনি ভাবে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীরাও নির্বাচনে একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে যাননি। সাত জন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এর ফলে আগামী ধাপগুলোতে যারা বিএনপির পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং যারা দল থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন তারা আবার নতুন করে উৎসাহ পাবেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাবেন। এর ফলে বিএনপির বহিষ্কার কৌশল ব্যর্থ হয়ে যাবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।