ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলোর কাজ কী?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৬ জুলাই, ২০১৮


Thumbnail

সম্প্রতি বাংলাদেশ স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য, বাংলাদেশের মৎস্যজীবীদের জন্য, সর্বোপরি বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের জন্য এ এক অসাধারণ অর্জন। যেহেতু মৎস্য খাতের এই অর্জনে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ ভূমিকা রেখেছে, তাই এটি প্রত্যাশা করা অস্বাভাবিক ছিল না যে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জনগণকে অবহিত করে ক্যাম্পেইন করা হবে। আর ক্যাম্পেইন করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকাটি নিতে পারত বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ। বাংলাদেশের মৎস্যজীবী সম্প্রদায় ও মৎস্যখাতের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যেই আওয়ামী লীগের এই অঙ্গ সংগঠনটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু মৎস্যখাতে এত বড় অর্জনেও তাদের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

শুধু আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগই নয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ বেশ পুরনো। আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মিছিল, মিটিং, সভা-সেমিনার করে পত্রিকার পাতা গরম রাখে। বাংলাদেশ যুবলীগও বেশ কিছু সৃজনশীল ও মননশীল উদ্যোগের কারণে বেশ প্রশংসিত। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক লীগ দিবস ভিত্তিক কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এর বাইরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রমের তেমন কোনো খবর পাওয়া যায় না। স্বাভাবিকভাবেই তাই আওয়ামী লীগের ওপর মহলে প্রশ্ন উঠেছে, এই সহযোগী সংগঠনগুলোর কাজ আসলে কী? কী তাঁদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য?

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশায় আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছিল মাত্র ৫টি। এগুলো হলো ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগ। এদের মধ্যে অবশ্য ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগকে আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে অভিহিত করা হয়। সময়ে সময়ে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলটির অঙ্গ সংগঠনের সংখ্যা এখন বেড়েছে। দলটিতে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন পেশাজীবীদের সংগঠন যেমন - তাঁতি লীগ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ), আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ প্রভৃতি।

বঙ্গবন্ধু যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার পেছনে বঙ্গবন্ধুর একটি সুস্পষ্ট ও অতুলনীয় চেতনা ছিল। সেই চেতনার মূল কথা ছিল, আওয়ামীপন্থী বিভিন্ন পেশাজীবীদের নিয়ে দলটির যেসব অঙ্গ সংগঠন গঠন করা হবে তাদের নেতাকর্মীরা নিজেদের পেশাজীবী মধ্যে আদর্শ ও চেতনার গ্রুমিং করবেন।  এভাবেই দেশের সকল পেশাজীবীর মধ্যে দেশপ্রেমের চেতনা, রাজনৈতিক চেতনা ছড়িয়ে পড়বে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যে রাজনৈতিক চেতনা ধারণ করবে তা সকল অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে সেটাই প্রত্যাশা ছিল বঙ্গবন্ধুর। চেতনার প্রবাহমান এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে মানবদেহের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ার সঙ্গে তুলনা করা যায়। রক্ত হৃদপিণ্ড থেকে শিরা, ধমনীর মধ্য দিয়ে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পৌঁছে যায়। তেমনি কেন্দ্র থেকে পুরো দেশটির মধ্যে যাতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চেতনা পৌঁছে যায় তার জন্য দলটির অঙ্গ সংগঠনগুলো কাজ করবে সেই উদ্দেশ্যেই গঠন করা হয়েছিল অঙ্গ সংগঠনগুলো।

দেশে বিভিন্ন পেশা আছে, পেশাজীবী আছেন। এই পেশাজীবীদের মধ্যে আছেন কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী ইত্যাদি। তাদের সবার মধ্যে যাতে আদর্শের চেতনাটা সঞ্চালিত হয় তা নিশ্চিত করাই ছিল আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলোর দায়িত্ব। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলটির অঙ্গ সংগঠনগুলো হয়ে গেছে দলবাজি, টেন্ডারবাজির আখড়া। এসব অঙ্গ সংগঠনে পদ পাওয়াকে অনেকে আরও বড় পদ-পদবী পাওয়ার সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করেন, বিবেচনা করেন বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ হিসেবে। অথচ নিজেদের পেশাদারি আদর্শ বাস্তবায়নের কাজে তাঁদের অনীহা দেখার মতো।

অথচ এই সংগঠনগুলো যদি ঠিকঠাক ভাবে কাজ করতো, আদর্শিক জায়গা থেকে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতো তবে তাঁরা সফলভাবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারতো। সরকারকে পরামর্শ দিতে পারতো সংশ্লিষ্ট খাত ও পেশার উন্নয়নে।

বর্তমানে দেশের সড়কগুলোতে দুর্ঘটনায় মৃত্যু একটি নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে শ্রমিক লীগ আছে, পরিবহণ লীগ আছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় সে বিষয়ে কিন্তু এরা সহায়তা করতে পারে, সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে বিভিন্ন পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু এই সংগঠনগুলোর কাছ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল চিকিৎসা বিষয়ক অঙ্গ সংগঠন। কিন্তু বাংলাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য চলছে তা নিরসনে স্বাচিপের কোনো ভূমিকাই নেই।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন। এই ক্যাম্পেইনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আয়োজিত জনসভায় তিনি বারবার বলছেন, দেশের প্রত্যেকটি গ্রামকে তিনি শহরে রূপান্তরিত করবেন। শহরের অধিবাসীরা যে নাগরিক সুযোগ-সুবিধাগুলো পায় গ্রামের অধিবাসীদের জন্যও তিনি একই রকম সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করবেন। আর আমরা সবাই জানি, একটি গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করতে অবকাঠামো লাগে, লাগে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং অবশ্যই উন্নত স্বাস্থ্যসেবা। এই উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে স্বাচিপের চিকিৎসকরা নিতে পারে উদ্যোগী ভূমিকা। কিন্তু সেরকম কোনো ভূমিকার চিত্র এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।

বর্তমানে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার পরিস্থিতি ভালো নয়। জ্বর, সর্দি-কাশি ছাড়া অন্যসব জটিল অসুখে গ্রামের মানুষকে এখনো শহরের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে ছুটতে হয়। আমাদের চিকিৎসকরা যদি গ্রামের হাসপাতালগুলোতে গিয়ে সেবা দিত তাহলে এ পরিস্থিতি পাল্টে যেত। আর এ বিষয়ে সবচেয়ে উদ্যোগী ভূমিকা তো বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী চিকিৎসকদেরই নেওয়া উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাচিপ করা কোনো চিকিৎসক গ্রামে থাকতে চান না।

আরেকটি বিষয় না উল্লেখ করলেই নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি কখনো নোবেল পান তবে তার পেছনে অন্যতম কারণ হবে গ্রামে গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা। এ বিষয়টি বৈশ্বিক পর্যায়েও আলোচনায় এসেছে। অথচ বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, স্বাচিপের এ বিষয়ে কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণা বা উদ্যোগ নেই। নেই কোনো প্রোগ্রাম। এই গাফিলতির কারণে আওয়ামী লীগের ভালো কাজগুলোর খবর জনগণের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।

একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে আওয়ামী পন্থী প্রকৌশলীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদেও। সরকারকে সহযোগিতা করা কিংবা সরকারের কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রচার-প্রচারণা তাঁদেরকেও করতে দেখা যায় না। বরং পদ-পদবীর ভাগাভাগি নিয়ে সংগঠনটিতে ব্যস্ততা বেশি দেখা যায়।

আওয়ামী লীগ সভাপতির গ্রামকে শহরে রূপান্তর করার যে স্বপ্ন, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে দলটির প্রকৌশলীদের নিয়ে গঠিত অঙ্গ সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কোনো বিকল্প নেই। অবকাঠামো নির্মাণ বা উন্নত যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থার সূচনার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের উচিত ছিল যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর হাতে একটি মডেল তুলে দেওয়া। সে মডেলে গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করার সমস্ত খুঁটিনাটি সংযুক্ত থাকতে পারতো। কিন্তু এমন কোনো উদ্যোগ আওয়ামীপন্থী প্রকৌশলীদের এই সংগঠনটি গ্রহণ করেনি। এমনকি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ করা কোনো লোক ঢাকার বাইরে পোস্টিংই নিতে চান না।

ঢাকার বাইরে মফস্বলে যেতে চান না আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সমিতির নেতারাও । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী নীল দলের শিক্ষকদের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ছাত্র পড়ানোর চেয়ে তাঁদের নজর বেশি থাকে তদবির করে কীভাবে পদ-পদবি পাওয়া যায় তার দিকে।

আওয়ামীপন্থী বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনগুলোর এসব কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, এই অঙ্গ সংগঠনগুলো প্রতিষ্ঠার পেছনে বঙ্গবন্ধুর মূল চেতনার যে জায়গাটি ছিল, যে আকাঙ্ক্ষা থেকে অঙ্গ সংগঠনগুলো তৈরি করা হয়েছিল তা পূরণ হচ্ছে না।

একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে নির্বাচনী কর্মসূচি দিয়ে। এই কর্মসূচিগুলো দেখেই জনগণ তাঁদের ভোট দেন। তাই ক্ষমতায় আসার পর কর্মসূচিগুলোর বাস্তবায়নই হলো সরকারের প্রধান কাজ। কিন্তু সেই কর্মসূচির বাস্তবায়ন করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এর জন্য বিভিন্ন পেশার মানুষের অংশগ্রহণ দরকার। সরকারের কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলো যদি দায়িত্ব পালন না করে তাহলে কোনো ভাবেই সরকার সফলতার সঙ্গে তাঁদের কার্যক্রম চালাতে পারবে না।

মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিদের সাংস্কৃতিক সংগঠন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর এক সময় দারুণ রমরমা ছিল। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, উদ্যোগের কারণে তরুণদের মধ্যে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা ছিল সংগঠনটির। চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব আলমগীর কুমকুম ছিলেন সংগঠনটির শেষ প্রদীপ। কিন্তু বর্তমানে এই সংগঠনের কোনো অস্তিত্বই যেন চোখে পড়ে না। অথচ আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। আসাদুজ্জামান নূরের নেতৃত্বে সংস্কৃতি অঙ্গন আরও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠার কথা ছিল।

বাস্তবতা হচ্ছে, সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছাড়া কখনো চেতনার আন্দোলন সমৃদ্ধ হয় না। মুক্তিযুদ্ধ সফল হতো না যদি না সে সময় একটি সফল সাংস্কৃতিক আন্দোলন হতো। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ে বড় একটি ভূমিকা রেখেছিল সে সময়ে গৃহীত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উদ্যোগ। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিষ্ঠিত অস্থায়ী রেডিও স্টেশন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র আমাদের উজ্জীবিত করেছিল, উজ্জীবিত করেছিল শোনো একটি মুজিবুরের থেকে, জয় বাংলা বাংলার জয়ের মতো দেশাত্মবোধক গানগুলো। কিন্তু এখন আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনার মান কোথায়? আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন করার স্বপ্ন দেখছি, সেই বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মানটিও উন্নত হতে হবে, উন্নত একটি দেশের সঙ্গে মানানসই হতে হবে। না হলে উন্নত জাতিসত্তার একটি রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব হবে না। এই উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের এই অঙ্গ সংগঠনগুলোকে নিষ্ক্রিয়তার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে সংগঠনের কার্যক্রম গতিশীল করতে হবে।

একটি সময় ছিল যখন আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীরাই শিল্প-সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান তথা বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গনের প্রতিভূ ছিলেন। শিক্ষাবিদ ও লেখক আনিসুজ্জামান, আইবিএর প্রতিষ্ঠাতা অর্থনীতিবিদ এম. শফিউল্লাহ প্রমুখের নাম এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। সাংস্কৃতিক অঙ্গন বা ক্রীড়া অঙ্গনের প্রতিভাবান এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও প্রতিনিধিত্ব করতেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রাখা দল আওয়ামী লীগেরই। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন আবাহনী লিমিটেডের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল। বিখ্যাত ফুটবলার শফিউল আলম টুটুল এবং কাজী সালাউদ্দিনও আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ক্রিকেটার রকিবুল হাসান ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় কমনওয়েলথ একাদশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ম্যাচে পাকিস্তানের হয়ে ব্যাটিং ওপেন করেন। কিন্তু দুঃসাহসের পরিচয় দিয়ে সেদিন তিনি ব্যাটে জয় বাংলা লিখে নেমেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে আওয়ামীপন্থীদের কোনো উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। ফলে দেশে একটি অদ্ভুত সুশীল সমাজের উদ্ভব হয়েছে যারা শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে রাষ্ট্রের বিরাজনীতিকরণকে গুলিয়ে ফেলছেন।

এসব দেখেশুনে এবং তৃণমূলে গণসংযোগ করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করবেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

এটি প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া অন্য অনেক দারুণ সিদ্ধান্তের মতোই একটি ভালো সিদ্ধান্ত কারণ আমরা যদি উন্নত জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে চাই তবে পেশীশক্তি, অস্ত্র-গোলাবারুদের ব্যবহার কমিয়ে এনে বাড়াতে হবে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা। দেশের উন্নয়নে সরকারকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসতে হবে বিভিন্ন পেশাজীবীদের নিয়ে গঠিত অঙ্গ সংগঠনগুলোকেই। এই সংগঠনগুলো যদি থিংক ট্যাংক হিসেবে নিজেদের ভূমিকা পালন করতে পারে, নীতি নির্ধারণী ক্ষেত্রে এবং সরকারের উন্নয়ন-উদ্যোগ প্রচারে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে পারে তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলা সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু সংগঠনগুলো যদি নিষ্ক্রিয়ই থেকে যায় তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে অদূর ভবিষ্যতেই মূল্য দিতে হতে পারে।


বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

আবার তাপস-খোকন বিরোধ, আওয়ামী লীগে অস্বস্তি

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ১৮ মে, ২০২৪


Thumbnail

সারা দেশে আওয়ামী লীগে কোন্দল বিভক্তি চরম আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যেই ঢাকার আওয়ামী লীগের দুই হেভিওয়েট নেতা শেখ ফজলে নূর তাপস এবং সাঈদ খোকনের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্য আকার রূপ নিয়েছে। কয়েকদিন আগে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দুটির মেয়রদের মেয়াদ চার বছর পূর্ণ হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের প্রথম দিকে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হবে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে ঢাকা সিটির দক্ষিণের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন এখন তাপসের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। অন্যদিকে বর্তমান মেয়র তাপস দীর্ঘদিন ধরেই সাঈদ খোকনকে কোণঠাসা করার জন্য প্রকাশ্য তৎপরতা দেখিয়েছেন। এই দুই নেতার বিরোধ এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে এক অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যে সময় সারা দেশে আওয়ামী লীগ কোন্দল নিরসনে আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে।

আরও পড়ুন: জামায়াত চাঙ্গা হচ্ছে কীভাবে?

সাইদ খোকন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রাক্তন মেয়র ছিলেন। তার মেয়র থাকা অবস্থায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নানা রকম অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছিল। বিশেষ করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে তার সীমাহীন ব্যর্থতা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ গত নির্বাচনে সাঈদ খোকনকে আর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে মনোনয়ন দেয়নি। তার বদলে ধানমন্ডি এলাকার এমপি শেখ ফজলে নূর তাপস মনোনয়ন পান এবং নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি চার বছর অতিক্রম করেছেন। তাপস যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ব্যাপক উন্নয়ন করতে পেরেছেন এমনটি নয়৷ তবে দুর্নীতি বা অন্যান্য অভিযোগে তিনি সাঈদ খোকনের মত ব্যাপকভাবে সমালোচিত হননি।

অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশনে দায়িত্ব গ্রহণ করে তাপস সিটি কর্পোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং সেটি করতে যেয়ে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের অনুগত বেশ কয়েক জনকে চাকরিচ্যুত করেন। তিনি সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে বেশ প্রকাশ্য অবস্থান গ্রহণ করেন এবং তার কিছু নীতি এবং কর্মসূচির বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। এরকম বিরোধের জেরে এক সময় সাঈদ খোকনের সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছিল দুর্নীতির অভিযোগে। এবং দুজনের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্য রূপ ধারণ করেছিল। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপে সেই বিরোধ সাময়িকভাবে থেমে যায়।

আরও পড়ুন: অর্থকষ্টে বিএনপি

সাইদ খোকন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মনোনীত হন। গত নির্বাচনে তিনি ঢাকার একটি আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। আজ শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘মিট দ্য প্রেস’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে তিনি মেয়র হিসেবে তার কার্যক্রম এবং সাফল্যের কথা তুলে ধরেন৷ এই সাফল্যের কথা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বর্তমান মেয়রের তীব্র সমালোচনা করেন এবং মেয়রের বিভিন্ন নীতি এবং অবস্থানের ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য তুলে ধরেন।

আরও পড়ুন: তারেক কি যুক্তরাজ্যে অবাঞ্ছিত হচ্ছেন?

ধারণা করা হচ্ছে যে, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখেই সাঈদ খোকন সমালোচনার তীর ছুড়েছেন তাপসের দিকে। এখন তাপস যে তাকে পাল্টা আঘাত হানবেন এটা বলাই বহুল্য। স্থানীয় ঢাকাবাসীরা মনে করছেন, ফজলে নুর তাপস মেয়র হওয়ার পর সিটি কর্পোরেশনের দুর্নীতি কমিয়েছেন। তিনি কিছু সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ এবং কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। দুজনেরেই ভালো মন্দ আছে। তবে সাঈদ খোকন মেয়র থাকা অবস্থায় দুর্নীতির একটি বড় ধরনের পার্সেপশন সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছিল যেটি তাপসের সময় তৈরি হয়নি। এখন মেয়র হিসেবে আবার দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনে ফিরে আসতে চাইছেন সাঈদ খোকন। সে জন্যই তিনি বর্তমান মেয়রকে সমালোচনা করছেন বলেই অনেকে মনে করেন।

তবে তাপস এবং সাঈদ খোকনের এই বিরোধ আওয়ামী লীগের মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে এই সময় আওয়ামী লীগের দই গুরুত্বপূর্ণ নেতার বিরোধ সরকার সম্পর্কে এবং দলের ভিতর ভুল বার্তা দিবে বলেই অনেকে মনে করছেন। 


আওয়ামী লীগ   সাঈদ খোকন   শেখ ফজলে নুর তাপস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

জামায়াত চাঙ্গা হচ্ছে কীভাবে?

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৮ মে, ২০২৪


Thumbnail

৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর নির্বাচন বিরোধী অধিকাংশ বিরোধী শিবিরেই এখন হতাশা। বিশেষ করে আন্দোলনের ব্যর্থতা নেতা কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের অনীহা তৈরি করেছে। নতুন করে আন্দোলন শুরু করা বিএনপি বা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য কষ্টসাধ্য এবং কঠিন হয়ে উঠেছে বলেই মনে করেন বিএনপির নেতারা। কিন্তু এরকম পরিস্থিতিতে জামায়াত যেন বিএনপির সহায়ক শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়েছে। বিএনপিকে চাঙ্গা করা এবং বাঁচিয়ে রাখার মহান দায়িত্ব গ্রহণ করেছে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত।

গত কিছুদিন ধরেই জামায়াতের মধ্যে অত্যন্ত চাঙ্গা ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জামায়াত শুধু তাদের নিজেদের সংগঠনকে গোছাচ্ছে না বরং বিএনপিকেও পরিচালনা করার ক্ষেত্রে প্ররোচিত করছে, প্রভাব বিস্তার করছে। জামায়াত এখন আবার শক্তিশালী অবস্থানে ফিরে এসেছে। বিশেষ করে বিরোধী রাজনীতির মেরুকরণে জামায়াত এখন কর্তৃত্বের আসন গ্রহণ করেছে বলেও মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আরও পড়ুন: অর্থকষ্টে বিএনপি

প্রশ্ন উঠেছে জামায়াত চাঙ্গা হচ্ছে কীভাবে? ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ভূমিধস বিজয়ের পর যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে এবং এই বিচারে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব নেতাকেই বিচারের আওতায় আনা হয়েছে এবং তারা সর্বোচ্চ শাস্তি পেয়েছে। একে একে জামায়াতের সব শীর্ষনেতা যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত হওয়ার পরও দলটি বিলুপ্ত হয়নি, ভেঙে পড়েনি। বরং বিভিন্ন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জামায়াত এখন আগের চেয়ে সংগঠিত হচ্ছে এবং তৃণমূল পর্যন্ত এর সংগঠন বিস্তার করছে। জামায়াত দীর্ঘদিন প্রকাশ্যে সমাবেশ করতে পারেনি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়গুলোতে জামায়াতের শোডাউন লক্ষ্য করার মতো। বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরের জামায়াতের সমাবেশ তার আগে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আমাদের কর্মী সমাবেশ। নির্বাচনের পরে জামায়াতের তৎপরতা। গত রমজানে পাঁচতারকা সোনারগাঁ হোটেলে জামায়াতের ইফতার পার্টি ইত্যাদি সবই জামায়াত কে নতুন শক্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

জামায়াত চাঙ্গা হচ্ছে কীভাবে সেটি এখন একটি বড় প্রশ্ন। কারণ যুদ্ধাপরাধের বিচারের পর অনেকেই মনে করেছিলেন যে বাংলাদেশে ধর্মান্ধ মৌলবাদ এবং স্বাধীনতার বিরুদ্ধে রাজনীতির চির অবসান ঘটবে। এই দলগুলো মুখ থুবড়ে পড়বে। কিন্তু এই সমস্ত বিচারের এক দশক পরও দেখা যাচ্ছে যে জামায়াত নতুন করে সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে। এর একটি বড় কারণ হল স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে প্রগতিশীল ধারার রাজনৈতিক দলগুলো মানুষকে আকর্ষণ করতে পারছে না। জামায়াত তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে সংঘটিত হচ্ছে। অনেক স্থানে জামায়াত তাদের পরিচয় গোপন করে ধর্মপ্রচারের নামে তাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করছে। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে দাওয়াত এবং নানা রকম ইসলামী কর্মসূচির মাধ্যমে জামায়াত একটি নতুন আবহাওয়া তৈরি করার চেষ্টা করছে।

আরও পড়ুন: তারেক কি যুক্তরাজ্যে অবাঞ্ছিত হচ্ছেন?

তাছাড়া জামায়াতপন্থি যেসমস্ত ব্যবসায়ীরা তারা সরকারের সাথে একধরনের গোপন আঁতাত এবং সম্পর্ক তৈরি করছেন এবং আঁতাত ও সম্পর্কের মাধ্যমে তারা সরকারের সাথে ব্যবসা-বানিজ্য করছেন। সেই ব্যবসার টাকা সংগঠন করার জন্য দিচ্ছেন। আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করা গেছে তা হলো, জামায়াতের কর্মীরা দলকে নিয়মিত চাঁদা দিচ্ছেন এবং ছোট ছোট চাঁদার ফলে একটি বিপুল অর্থ জমা হচ্ছে। আর একারণেই জামায়াত এখন বিরোধী রাজনীতির কেন্দ্রে এসে দাড়িঁয়েছে। 


জামায়াত   বিএনপি   আওয়ামী লীগ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

অর্থকষ্টে বিএনপি

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৮ মে, ২০২৪


Thumbnail

৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিএনপি নতুন করে আন্দোলন শুরু করতে চাইছে। কিন্তু আন্দোলন শুরু করার জন্য যে আর্থিক সামর্থ্য প্রয়োজন, সেই আর্থিক সামর্থ্য এখন বিএনপির অনেক কমে গেছে। অর্থকষ্টে ভুগছে দলটি। সম্প্রতি দলের স্থায়ী কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বিষয়টি লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার কাছে অবহিত করেন। তারেক জিয়া তাদের বলেছেন, ‘আমারই চলতে কষ্ট হচ্ছে, আপনারা টাকা জোগাড় করুন’।

উল্লেখ্য যে, বিগত দুই বছর বিএনপির বেশ কিছু কর্মসূচি করেছিল এবং তাদের কাছে আর্থিক প্রবাহে একটা স্ফীতিভাব লক্ষ্য করা গিয়েছিল। বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা গোপনে গোপনে দুই নৌকায় পা দেওয়ার মতো আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে অর্থ সহায়তা দিয়েছে। তাছাড়াও বিভিন্ন বিএনপিপন্থি ব্যবসায়ীরা দলটিতে অর্থ সহায়তা বাড়িয়েছিল। তাদের আশা ছিল যে, শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচন প্রতিরোধ করতে পারবে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটবে। আর এই কারণেই ডু অর ডাই অবস্থা থেকে অনেক ব্যবসায়ী বিএনপিকে দুই হাতে অর্থ ঢেলেছিল। আর এ কারণেই বিএনপির মধ্যে গত দুই বছর চাঙ্গাভাব দেখা দিয়েছিল। কোটি কোটি টাকা খরচ করে তারা বিভিন্ন বিভাগীয় সমাবেশ করেছে। কর্মসূচি পালন করেছে। এই সমস্ত কর্মসূচির ফলে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আশা এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পর আস্তে আস্তে বিএনপিতে অর্থ প্রবাহ কমতে থাকে।

আরও পড়ুন: তারেক কি যুক্তরাজ্যে অবাঞ্ছিত হচ্ছেন?

বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন যে, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিএনপিকে অনেকেই আর্থিক সহায়তা দিচ্ছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠিত হওয়া এবং বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রগুলো নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রেক্ষিতে এখন বিএনপিকে সবাই এড়িয়ে চলতে চাইছে। যে সমস্ত ব্যবসায়ীরা আগে বিএনপিকে অর্থ দিতেন তারা এখন বিএনপি নেতাদের টেলিফোন ধরছেন না বলেও কোন কোন নেতা অভিযোগ করেছেন। আর বিএনপিপন্থি যে সমস্ত ব্যবসায়ীরা সরকারের পতনের লক্ষ্যে আন্দোলনের গতি বাড়ানোর জন্য দুহাতে অর্থ দিয়েছেন তারা এখন হাত পা গুটিয়ে নিয়েছেন।

এখন ওই সমস্ত ব্যবসায়ীরা তাদের অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করছেন। নতুন করে সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে কারও কারও মধ্যে। কারণ তারা মনে করছে, আন্দোলনে বিএনপি পরাজিত হয়েছে, এখন বিএনপির পেছনে অর্থ ঢালা মানে নিজেকে ঝুঁকিতে ফেলা। এ কারণেই বিএনপি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে যে চাঁদা আদায় করত সেই চাঁদার পরিমাণ এখন শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে।

আরও পড়ুন: হাইকমান্ডের হাতে বিএনপির ৩০০ নেতার ভাগ্য

বিএনপির অর্থ উপার্জনের একমাত্র উপায় হল, কমিটি গঠন করা এবং কমিটি গঠন করার মাধ্যমে বিভিন্ন নেতা কর্মীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা। কিন্তু নেতাকর্মীরা এখন আগের মতো সচল অবস্থায় নেই। বহু নেতাকর্মী জেলে। তাদের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। এমনকি অনেকে আদালতের খরচ মেটাতেও হিমশিম খাচ্ছেন। এ কারণে টাকা দিয়ে কমিটিতে জায়গা নেওয়াটা অনেকের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এখানেও আর্থিক অর্থ প্রাপ্তিতে একটি টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। এ কারণে বিএনপি এখন বহিষ্কার বাণিজ্যের দিকে ঝুঁকছে। বিভিন্ন নেতাকে ঢালাওভাবে বহিষ্কার করা হচ্ছে। তখন তারা টাকা পয়সা দিয়ে দলে আবার জায়গা করে নিচ্ছেন। এভাবে কোনরকমে দলটি টিকছে।

তবে বিএনপি নেতারা মনে করছেন, যারা অর্থসংগ্রহ করছে সে সমস্ত নেতারা ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন। বিশেষ করে কয়েকজন নেতা যারা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তারা একটি মোটা অংকের টাকা নিজেদের কাছে রেখে অল্প কিছু দলের জন্য বরাদ্দ করেছেন। তবে ওই সমস্ত নেতাদের অনেকেরই দাবি তারা নিজের কাছে কিছুই রাখেননি। বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তারা যে চাঁদা বা আথিক অনুদান পেয়েছেন তার একটি বড় অংশই তাদেরকে লন্ডনে পাঠাতে হয়েছে তারেক জিয়ার বিলাসী জীবনযাপনের জন্য।


বিএনপি   আওয়ামী লীগ   ব্যবসায়ী  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

হাইকমান্ডের হাতে বিএনপির ৩০০ নেতার ভাগ্য

প্রকাশ: ০৭:১৯ পিএম, ১৮ মে, ২০২৪


Thumbnail

দীর্ঘদিন ধরে চলছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সরকারবিরোধী আন্দোলন। এই আন্দোলনকে ঘিরে নানা কারণে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে এখন পর্যন্ত সাত শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করেছে দলটি। এদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতারাও রয়েছেন। বহিষ্কার হওয়া এসব নেতারা এবার ভুল স্বীকার করে দলে ফিরতে চান।

এরই মধ্যে ক্ষমা চেয়ে অন্তত তিনশজন আবেদন করেছে দলীয় হাই কমান্ডের কাছে। আবেদনের পর এখন পর্যন্ত বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে মাত্র ২০ জনের। বাকিদের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্তে অনড় হাইকমান্ড।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্ষমা না পেয়ে কেউ কেউ একাধিকবার আবেদনও করেছেন। ঘুরছেন বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে।

তবে কোনো সংকেত না মিললেও বিএনপির কর্মসূচিতে বহিষ্কৃত অব্যাহতি পাওয়া নেতাদের অনেকেই অংশ নিচ্ছেন।

ক্ষমা না করার কারণ হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, বেশ কয়েকজন একাধিকবার আবেদন করলেও স্থানীয় গ্রুপিং-দ্বন্দ্বের কারণে দলে ফেরানোর সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। আবার ঢালাওভাবে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলে দলে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়তে পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বহিষ্কৃত নেতাদের আবেদন বিবেচনাধীন রয়েছে।

এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় কেন্দ্রীয় জেলা পর্যায়ের ১৪ জনকে বহিষ্কার করে বিএনপি। এর মধ্যে দুজন ছাড়া কেউ বিজয়ী হতে পারেননি। ফলে বাকিদের কেউ কেউ বিএনপিতে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ছাড়া ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত বহিষ্কার করা হয়েছে ২০৪ নেতাকে।


হাইকমান্ড   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

তারেক কি যুক্তরাজ্যে অবাঞ্ছিত হচ্ছেন?

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৮ মে, ২০২৪


Thumbnail

প্রায় ১০ হাজারের বেশি অবৈধভাবে বসবাস করা বাঙালিকে যুক্তরাজ্য ফেরত পাঠিয়েছে। তাদের সেখানে থাকার আবেদন নাকচ করে দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের দৈনিক টেলিগ্রাফ এবং স্ট্যান্ডার্ডের খবরে বলা হয়েছে, ১১ হাজার বাংলাদেশী শিক্ষার্থী, ভ্রমণ কিংবা অন্য কোন কাজের পেশায় যুক্তরাজ্যে যান। সেখানে তারা বসবাসের জন্য রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন। তবে তাদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। বাকি ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশির আবেদন খারিজ করে দিয়েছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। আবেদন খারিজ হওয়া এসব বাংলাদেশীকে এখন বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘ফাস্ট ট্র্যাক রিটার্ন’ চুক্তির আওতায় এসব বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হবে বলেও জানানো গেছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ‘ফাস্ট ট্র্যাক রিটার্ন’ চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এই চুক্তি অনুযায়ী যারা যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে বসবাস করবেন তাদেরকে দ্রুত বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, তারেককে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার কৌশল হিসেবেই যুক্তরাজ্যের সাথে ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। এই চুক্তির আওতায় শুধুমাত্র অবৈধ ব্যক্তিদেরকেই দ্রুত ফেরত পাঠানো হবে না, বাংলাদেশে দন্ডিত, অপরাধী এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদেশে বসে অপপ্রচারকারীদেরও ফিরিয়ে নানার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এই চুক্তিতে বলা হয়েছে, যারা বাংলাদেশে অপরাধ করে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যাবে তাদেরকে যুক্তরাজ্য ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করবে এবং তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল করার জন্য প্রক্রিয়া করবে। সেই বিবেচনায় তারেক জিয়াকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের একটি অন্যতম রাজনৈতিক কৌশল হল, তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে এনে দন্ড কার্যকর করা। ইতোমধ্যে তারেক জিয়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হয়েছেন। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করেননি এবং আপিল করার সময়সীমাও পেরিয়ে গেছে। এছাড়াও অর্থপাচারের একটি মামলায় হাইকোর্ট তাকে ৭ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করেছেন। তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ সরকার নানা রকম দেন দরবার করে আসছেন। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে তারেক জিয়াকে দেশে আনা সম্ভব হয়নি।

তারেক এখন যুক্তরাজ্যে আছে রাজনৈতিক আশ্রয়ে এবং রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করা ব্যক্তিকে যে সমস্ত শর্ত এবং নিয়ম মানতে হয় তা মানছেন না বলেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একাধিকবার অধিকার করা হয়েছে। যেমন- লন্ডনে বসে তারেক বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্র এবং সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকম বিষেদাগার করছেন, সরকার পতনের জন্য ষড়যন্ত্র করছেন।

এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর অন্তত ৩টি সফরে তারেক জিয়া লন্ডনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন এবং তার নির্দেশে সেখানে সহিংস ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। বাংলাদেশ দূতাবাসেও তারেক জিয়ার নির্দেশে হামলা করা হয়েছিল এবং এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ বলে বাংলাদেশ সরকার মনে করে। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের দূতাবাস তারেক জিয়াকে ফিরিয়ে আনার জন্য কয়েক দফা আবেদন করেছে এবং কূটনৈতিকরা মনে করছেন, তারেক জিয়াকে ফিরিয়ে আনার স্বার্থেই ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে।

তবে কোন কোন মহল বলছে, তারেক জিয়ার বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাকে যেহেতু যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া হয়েছে এবং তারেক জিয়া সেই রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের আবেদন সংক্রান্ত চিঠিতে উল্লেখ করেছেন যে, বাংলাদেশে এলে তার জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে সেকারণেই তারেক জিয়াকে বাংলাদেশে পাঠানোর বিষয়টি এত দ্রুত নাও হতে পারে। তবে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এ ব্যাপারে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখবে বলেই জানা গেছে।


তারেক জিয়া   বিএনপি   যুক্তরাজ্য   ফাস্ট ট্র্যাক চুক্তি  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন