নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৩ পিএম, ২৬ মার্চ, ২০১৭
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরোচিত, নিষ্ঠুর ও নিকৃষ্টতম গণহত্যার স্মরণে প্রথমবারের মতো ‘গণহত্যা দিবস’ পালন করেছে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন।
রোববার ঢাকায় প্রাপ্ত জাতিসংঘ স্থায়ী মিশনের এক সংবাদ বিঞ্জপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল শনিবার স্থানীয় সময় বেলা ৩টায় মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে ২৫ মার্চ কালরাতের শহীদসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের স্মরণে দোয়া ও এক মিনিট নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এরপর ২৫ মার্চের গণহত্যার উপর একটি প্রামাণ্য ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ এর নামে নিরস্ত্র, ঘুমন্ত, নিরপরাধ বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হিংস্র আক্রমণ ও নির্মম গণহত্যার কথা তুলে ধরে বলেন, “পরিসংখ্যানের বিচারে বিশ্বের অন্যান্য গণহত্যার তালিকায় এই গণহত্যা একেবারে প্রথম দিকে অবস্থান করছে। আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের গণহত্যার যথাযথ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। বরং দীর্ঘদিন স্বাধীনতা বিরোধী চক্র আমাদের এ গণহত্যার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে এটিকে বিস্মৃতির দিকে ঠেলে দিয়েছিল। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়ার মাধ্যমে সেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথ উন্মোচিত হয়েছে।”
একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য বর্তমান সরকার গৃহীত পদক্ষেপ সর্বশক্তি দিয়ে বাস্তবায়ন করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে রাষ্ট্রদূত বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা জাতিসংঘের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছি। গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ উপদেষ্টার সাথে দেখা করে সরকারের এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এবং এটি জাতিসংঘে উত্থাপনে বাংলাদেশের উদ্যোগের বিষয়টি অবহিত করেছি। এছাড়াও জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের নেতৃবৃন্দের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছি।”
তিনি আরো বলেন, “আন্তর্জাতিকীকরণের অংশ হিসেবে এ বিষয়ে অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমাদের সম্ভাব্য সবধরণের কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।”
গণহত্যার বিষয়ে সমমনা বন্ধু রাষ্ট্র, মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী দেশ ও গণহত্যা কবলিত দেশসমূহকে নিয়ে জাতিসংঘে ও অন্যান্য বৈশ্বিক প্লাটফর্মে ২৫ মার্চের গণহত্যার পক্ষে একযোগে কাজ করার উপর গুরুত্বরোপ করেন স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন।
তিনি এক্ষেত্রে প্রবাসী বাঙালি, এনজিও, সুশীল সমাজ, মিডিয়া, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ ও গবেষকসহ সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড বিশ্বমানবতাকে পরাজিত করেছিল উল্লেখ করে প্রবাসী বাঙালিদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা অনেকেই এদেশের নাগরিক। আপনাদের সুযোগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রতিনিধি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে এই গণহত্যার কথা তুলে ধরা।”
প্রবাসে গণহত্যা দিবস পালনের মাধ্যমে সারা পৃথিবী ১৯৭১ সালের পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর চালানো বিশ্বের ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যার প্রকৃত ঘটনা জানতে পারবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “আসুন দলমত নির্বিশেষে মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল সপক্ষ শক্তি ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির জন্য একযোগে কাজ করি।”
মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ড. মহসিন আলী ও মুক্তিযোদ্ধা আবুল মনসুর খান। অন্যান্যদের মাঝে আরও বক্তব্য রাখেন- জেনোসাইড-৭১ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট বসারত আলী, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বেলাল বেগ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ডা: মাসুদুল হাসান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুখ আহমেদ ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইরিন পারভীন।
একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের মাধ্যমে এ হত্যার অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে বক্তাগণ তাদের অভিমত ব্যক্ত করেন।
বাংলা ইনসাইডার/এসআই
মন্তব্য করুন
ইরান ইসলামি বিপ্লব ইব্রাহিম রাইসি
মন্তব্য করুন
ইব্রাহিম রাইসি ইরানের প্রেসিডেন্ট
মন্তব্য করুন
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহিয়ান ও পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নরসহ ৯ জন আরোহীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় চলছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা, না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড- এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে এটিকে হত্যাকাণ্ড বলা হচ্ছে। তারা মনে করছে, এটি দুর্ঘটনা নয়। তবে দুর্ঘটনাই হোক বা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডই হোক। এর সঙ্গে যে ইরানের অভ্যন্তরীণ কিছু ব্যক্তি জড়িত এ নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।
ইরানের গণমাধ্যম এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরাও বিশ্বাস করছেন যে, ইরানের ভিতর কিছু বিশ্বাসঘাতকদের সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। এই ঘটনার পর কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এরকম একটি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার কেন উড়ার সিদ্ধান্ত নিল? এই ব্যাপারে নিরাপত্তা ছাড়পত্র কে দিল সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ যেকোনো বিবেচনায় এই বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে হেলিকপ্টার উড্ডয়নের কথা নয়।
আল জাজিরার রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, ইরানের প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং গভর্নর এক হেলিকপ্টারে ওঠাটাও একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। কারণ এর আগে কখনোই ইরানের প্রেসিডেন্ট অন্য কারও সঙ্গে হেলিকপ্টারে ওঠেন না। তৃতীয়ত, যেখানে তাদের বহনকারী অন্য হেলিকপ্টারগুলো অন্যদিকে যাচ্ছিল সেখানে এই হেলিকপ্টারটি কেন গতিপথ পরিবর্তন করল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আর এ সবকিছু একটি পরিকল্পিত বলেই মনে করা হচ্ছে।
পরিকল্পিত ভাবার পিছনেও কারণ আছে। অতীতেও দেখা গেছে যে, এরকম বিমান বা হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার শত্রুকে দমন করেছে পাকিস্তানি জিয়াউল হক নিহত হয়েছিলেন এরকমই একটি বিমান দুর্ঘটনায়। পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে যে, সেটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই একটি পরিকল্পিত নীল নকশা এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূতকেও ওই দুর্ঘটনায় জীবন দিতে হয়।
এবার ইরানের যে ঘটনাটি ঘটল তার পিছনে সুপরিকল্পিত চক্রান্ত রয়েছে বলেই অনেকে মনে করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এখন বলছেন যে, এর পিছনে মোসাদের হাত রয়েছে। ইসরায়েলি এই গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই ইরানে পট পরিবর্তনের জন্য ভেতরে ভেতরে কাজ করছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের ভিতরে যে হিজাব বিরোধী আন্দোলন, সেই আন্দোলনেও মোসাদের হাত ছিল এবং মোসাদকে সহযোগিতা করেছিল সিআইএ- এমন তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ইরানকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য মোসাদ এবং সিআইএ বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেছে, ষড়যন্ত্র করছে- এমন প্রতিবেদনও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইরান, ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের মাথাব্যথা হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশটির মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন জঙ্গি সন্ত্রাসীদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়, অস্ত্র সরবরাহ করে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলে যে হামলা হামাস পরিচালনা করেছিল, তার পিছনে ইরানের মদত ছিল। ইরানের মাধ্যমেই মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে, এমন বক্তব্য মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা হরহামেশাই করে থাকেন। আর এ কারণে ইরানের পট পরিবর্তনের একটি পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ছিল।
এর আগেও ইরানের গোয়েন্দা প্রধানকে হত্যা করা হয়েছিল। যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সিআইএ এবং মোসাদ জড়িত ছিল বলে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এবারের এই ঘটনাটি সেরকমই কোন ঘটনা বলেই অনেকের স্থিরবিশ্বাস। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে ইরানের ভিতর একটি প্রতিবিপ্লব ঘটিয়ে উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেওয়ার একটা পরিকল্পনা চলছিল। এখন সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটানো হল বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর এখন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তিনি অত কট্টরপন্থী নন বলেই মনে করা হচ্ছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার অনেকটাই নমনীয় এবং ইরানের ভিতর এখন এরকম ব্যক্তির সংখ্যা আরও বেড়েছে বলেই কোন কোন বিশ্লেষক মনে করছেন। বিশেষ করে যদি ভিতরে শত্রু তৈরি করে প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা যায়, তাহলে ইরানে ইসলামী বিপ্লবী সরকারকে হটিয়ে দেওয়াটা খুব কঠিন কাজ নয়। মোসাদ এবং সিআইএ কি সেই পথেই এগোচ্ছে, এর উত্তর সময়ই বলে দিবে।
ইব্রাহিম রাইসি ইরান হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা মোসাদ সিআইএ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল
মন্তব্য করুন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কোয় নিয়োজিত ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালিকে ক্রেমলিনে ডেকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনা বিস্তারিত শুনেছেন। রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন।
কাজেম জালালি বলেন, 'রোববার রাশিয়ায় সরকারি ছুটি হওয়া সত্ত্বেও রাত ১০টার দিকে পুতিন বৈঠক করেন। এ সময় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তার আমন্ত্রণে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের প্রতিনিধি হিসেবে আমি বৈঠকে অংশগ্রহণ করি।'
কাজেম জালালি বলেন, বৈঠকের শুরুতেই পুতিন আমাকে বলেন, ইরানের প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় আমরা খুবই মর্মাহত। এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য যা দরকার হবে, তা আমরা করব। এ ঘটনায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন ও বিচলিত। যা কিছু প্রয়োজন, তার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি, এ বার্তা ইসলামিক রেভল্যুশনের সর্বোচ্চ নেতার কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করুন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলুসভ, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি সের্গেই শোইগু, সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব দ্য জয়েন্ট স্টাফ ভ্যালিরি গেরাসিমভ, বেসামরিক সুরক্ষা, জরুরি পরিস্থিতি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী আলেক্সান্দার কোরেনকোভ, প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ইগোর লেভিতিন ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
ইরান রাষ্ট্রদূত হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
মন্তব্য করুন
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির দাফন আগামীকাল মঙ্গলবার তাবরিজে অনুষ্ঠিত হবে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে। খবর বিবিসির
ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃৃত করে দেশটির গণমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি তার নিহত সফরসঙ্গীদের দাফনও হবে সেখানে।
এর আগে মরদেহগুলো তাবরিজের ফরেনসিক বিভাগে রাখা হবে।
প্রসঙ্গত, রবিবার সন্ধ্যায় তাদেরকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে দুর্ঘটনার শিকার হয়। তবে ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা এখনও জানা যায়নি।
স্থানীয় সময় সোমবার সকালে তাদের মৃত্যুর খবর জানায় 'তেহরান টাইমস ও মেহের নিউজ'সহ স্থানীয় আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে একই হেলিকপ্টারে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আব্দুল্লাহিয়ান। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন সেটিতে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম ইরনা জানিয়েছে, এই হেলিকপ্টারে পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালেক রহমাতি ও এই প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেমও ছিলেন। এছাড়াও অন্যদের মধ্যে প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষী দলের সদস্য মাহদি মুসাভি, হেলিকপ্টারের পাইলট, সহকারী পাইলট ও ক্রু সদস্য ছিলেন।
ইরান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি দাফন মৃত্যু
মন্তব্য করুন
১৯৭৯ সালে ইরানের ‘ইসলামি বিপ্লব’ সংঘটিত হয়েছিল। রেজা শাহ পাহলভির রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে যে ‘ইসলামি বিপ্লব’ ঘটানো হয়েছিল, সেটিকে বলা হয় ফরাসি এবং বলশেভিক বিপ্লবের পর ইতিহাসের তৃতীয় মহা জাগরণ, যেখানে জনগণ এককাট্টা হয়ে রেজা শাহ পাহলভির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছিল। এই সময় নির্বাসন থেকে ফিরে আসেন আয়াতুল্লাহ খোমেনি এবং খোমেনির নেতৃত্বে ইরান ইসলামি প্রজাতন্ত্রে রূপ গ্রহণ করে। কঠোর শরিয়া আইন অনুসারে ইরান পরিচালিত হতে থাকে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নতুন করে অশান্তি সৃষ্টির ইঙ্গিত দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্যের অস্থির পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়ে পড়বে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে আজ বলা হয়েছে যে, ইরানের এই ঘটনাটিকে ইরানবাসী কোনভাবেই স্বাভাবিক দুর্ঘটনা বলে মনে করছে না। তারা মনে করছেন, এটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো ঘটছে। এটির পেছনে ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জড়িত বলেও তারা ধারণা করছে। আর এই ধারণাকে পুঁজি করে রাইসির মৃত্যুর পরে যে আবেগ এবং ক্ষোভ সেটাকে কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উস্কানি এবং উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে বলে আল জাজিরায় কয়েকজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন। তারা মনে করছেন যে, ইরান যদি মনে করে এই ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং এই ঘটনা ঘটিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল, তাহলে তারা অবশ্যই পাল্টা প্রতিশোধ নেবে।
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহিয়ান ও পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নরসহ ৯ জন আরোহীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় চলছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা, না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড- এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে এটিকে হত্যাকাণ্ড বলা হচ্ছে। তারা মনে করছে, এটি দুর্ঘটনা নয়। তবে দুর্ঘটনাই হোক বা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডই হোক। এর সঙ্গে যে ইরানের অভ্যন্তরীণ কিছু ব্যক্তি জড়িত এ নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কোয় নিয়োজিত ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালিকে ক্রেমলিনে ডেকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনা বিস্তারিত শুনেছেন। রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন। কাজেম জালালি বলেন, 'রোববার রাশিয়ায় সরকারি ছুটি হওয়া সত্ত্বেও রাত ১০টার দিকে পুতিন বৈঠক করেন। এ সময় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তার আমন্ত্রণে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের প্রতিনিধি হিসেবে আমি বৈঠকে অংশগ্রহণ করি।'
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির দাফন আগামীকাল মঙ্গলবার তাবরিজে অনুষ্ঠিত হবে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে। খবর বিবিসির ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃৃত করে দেশটির গণমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি তার নিহত সফরসঙ্গীদের দাফনও হবে সেখানে। এর আগে মরদেহগুলো তাবরিজের ফরেনসিক বিভাগে রাখা হবে।