ইনসাইড আর্টিকেল

সেই দুঃসহ স্মৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:০৯ এএম, ০৬ অগাস্ট, ২০১৮


Thumbnail

শোকের মাস আগস্ট। এই মাসেই জাতি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্বাধীন দেশের মাটিতে ষড়যন্ত্রকারীদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে। শোকের মাসে বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে জাতির পিতা ও অন্যান্য শহীদদের।

এই শোকাবহ মাসে বাংলা ইনসাইডার পাঠকদের জন্য নিয়েছে বিশেষ আয়োজন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের কিছু স্মরণীয় লেখা তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ থাকছে রহীম শাহ সম্পাদিত শেখ ফজলুল করিম সেলিম এর ‘সেই দুঃসহ স্মৃতি’ শিরোনামে একটি লেখা। লেখাটি নেওয়া হয়েছে রহীম শাহ সম্পাদিত‘পঁচাত্তরের সেই দিন’ বই থেকে।

সেই দুঃসহ স্মৃতি

শেখ ফজলুল করিম সেলিম

পনেরই আগস্ট। ৭৫- এর এ দিনটিতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। হত্যা করা হয়েছিল আবদুর রব সেরনিয়াবাতসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের। সেই কালোরাত্রিতে আরও হত্যা করা হয়েছিল বাংলা বাণীর প্রতিষ্ঠাতা, অগ্রজ শেখ ফজলুল  হক মনি ও আমার অন্তঃস্বত্ত্বা ভাবী শামসুন্নাহার আরজুকে। মনি ভাই ও ভাবীকে যখন হত্যা করা হয়, তখন আমিও তাঁদের পাশে ছিলাম। ঘাতকদের ব্রাশ ফায়ারের বুলেটে বিদ্ধ মনি ভাই ও ভাবীর দেহ মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। আমিও তাঁদের সঙ্গে লুটিয়ে পড়ি। তাঁদের রক্তধারার উপর আমার লুটিয়ে পড়ায় দেহের জমাকাপড় ভিজে যায়। স্বজন হননের সেই হৃদয়বিদারক মর্মন্তুদ মূহূর্তে নৃশংস ঘটনার সময় আমি প্রাণে বেঁচে গেলেও সেই দুঃসহ স্মৃতি আজ এত বছর পরও চোখের মণিকোঠায় ভেসে ওঠে।

ঐ কালো অধ্যায় আজ কালের চাকায় বহু বছর পিছনে। কিন্তু স্মৃতির মিনারে ইতিহাসের সেই করুণ অধ্যায়টির চাক্ষুস অবলোকন এখনও আবছা হয়ে যায়নি। বরং যতই দিন যাচ্ছে, মাস যাচ্ছে, আর বছর ঘুরে পনেরই আগস্ট আসছে, ততই স্বজন হারানোর পাথরচাপা শোক শুধু অশ্রুতে নয়, স্মুতির মিনারে অক্ষয় চিরঞ্জীব মানুষগুলোর মহান মৃত্যুর রক্তধারার উষ্ণ স্রোতের স্পর্শের অনুভবে সেই শোক এখন শক্তির উৎস। কী করে, কীভাবে চোখের সামনে মনি ভাই ও ভাবীকে হত্যা করা হলো, তার স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে মনে পড়ছে, নিজেরও বাঁচার কথা ছিল না। কিন্তু সবচেয়ে বড় সত্য, সকল নির্মম ঘটনা ও কালো অধ্যায়ের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হয়তো ইতিহাসের প্রযোজনেই অলৌকিকভাবে বেঁচে যায়। সৌভাগ্য বলুন বা দুর্ভাগ্য বলুন, আল্লাহ তা’ আলারই ইচ্ছায় মনি ভাই ও ভাবীর রক্তধারা গায়ে মেখে ঐদিনের প্রত্যক্ষ বিবরণের জন্য আমিও বেঁচে আছি।

দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে আগস্টের সেই কালো রাতে মনি ভাই ও ভাবীকে হত্যার একটি চাক্ষুস বিবরণ জাতির কাছে পেশ করার জন্য ঐতিহাসিক দায়েই আজ আমি কলম ধরেছি। এই বিবরণ চোখে যা দেখেছি, তা-ই লিপিবদ্ধ করলাম।

১৩ নম্বর সড়কস্থ ধানমন্ডির একটি বাড়ি। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত মনি ভাই এই বাড়িতেই ছিলেন। দোতলা বাড়ির সামনে এই চিলতে উঠোন। পনেরই আগস্টের আগের দিন ১৪ আগস্ট সন্ধ্যা থেকেই বাড়ি লোকে লোকারণ্য। বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ জড়ো হয়েছিল মনি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য। মনি ভাই তখন বাকশাল সেক্রেটারি। আমি এইদিন বিভিন্ন কাজকর্ম শেষ করে রাত এগারটার দিকে বাড়িতে ফিরি। তখন মনি ভাই ছিলেন না। তাঁর জন্য অপেক্ষমান দূরদূরান্ত থেকে আগত নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছিলাম। মনি ভাই তখন অফিসেও ছিলেন না।

রাত সাড়ে এগারটায় মনি ভাইয়ের গাড়ি এল। কিন্তু উনি এলেন না। ড্রাইভার রহমান বলল, ‘মনি ভাই ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে নিয়ে গেছেন, নিজে গাড়ি পাঠিয়ে। উনি তখনও ফেরেননি।

রাত সাড়ে বারোটা। মাকে নিয়ে মনি ভাই এলেন। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে তাঁর বেডরুমে দু’জনে অনেকক্ষণ একসঙ্গে ছিলেন। তখন ওখানে অন্য কেউ ছিলেন না। রাত বেশি হয়ে যাচ্ছে বলে এবং মা অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে আছেন বলে মামী (বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী) ডাইনিং রুমে গেলেন। বঙ্গবন্ধু মনি ভাইকে বললেন, ‘মনি, বুজিকে নিয়ে আমার সঙ্গে চারটে খেয়ে যাও।’

বাড়ি ফিরতে দেরি হবে বলে মা ও মনি ভাই না খেয়েই চলে গেলেন।

আজ ব্যথায় বুক মোচড় দেয়, মনি ভাইকে চারটে ভাত একসঙ্গে খেয়ে যাবার আমন্ত্রণেই ছিল দু’জনার মধ্যে শেষ কথা।

মনি ভাই মাকে সঙ্গে করে নিয়ে যখন বাড়িতে ফিরলেন তখন আমি লনে। গাড়ি থেকে নেমে মা দোতলায় আর মনি ভাই ড্রয়িং রুমে চলে গেলেন। মনি ভাই তখন সারাদিন পরিশ্রমে ক্লান্ত ও অবসন্ন। কিন্তু চোখে আত্মপ্রত্যয়ের দৃষ্টি। সমবেত ব্যক্তিবর্গের উদ্দেশে বললেন, ‘বঙ্গবন্ধু আগামীকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন। ওখানে আমাকেও যেতে হবে।’

এরপর সকলেই চলে গেলেন। পৌনে একটার দিকে মনি ভাই খেতে বসলেন মা ও ভাবীকে নিয়ে। খাওয়া-দাওয়ার পর আত্মজ পরশ-তাপসের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বেডরুমে ঘুমাতে গেলাম। মনি ভাই মিনিট তিনেক বাদে বেডরুম থেকে বেরিয়ে লাইব্রেরি রুমে ঢুকে বইপত্র ঘাঁটলেন। ঘুমোতে যাবার আগে বই পড়া আর খুব সকালে উঠে জাতীয় দৈনিকগুলো পাঠ করা মনি ভাইয়ের নিত্যদিনের রুটিন। লাইব্রেরি রুম থেকে একটি বই বেছে নিয়ে বেগরুমে এলেন। বইটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপর লেখা একটি বিখ্যাত দলিল। নাম- লাস্ট ব্যাটল। বুকের উপর বই মেলে ধরে শুয়ে শুয়ে তিনি এটা পড়ছিলেন। মনি ভাই একা জেগে বিখ্যাত বইটি যখন পড়ে যাচ্ছিলেন, তখন বাড়ির সকলেই ঘুমে নিমগ্ন। রাত্রির শেষ প্রহরে ঢাকা মহানগরীও ঘুমন্ত।  

ভোর প্রায় ৫য়াটা। ঘুম থেকে উঠে পড়লেন মনি ভাই। পরনে লুঙ্গি ও গেঞ্জি। নিয়ে নেমে এলেন দৈনিকগুলোর উপর চোখ বুলানোর জন্য। হঠাৎ চোখ পড়ল বাইরের দিকে। গেইট থেকে ২০/২৫ গজ দূরে আর্মির ল্যান্সার ফোর্সের এই দলটিকে দেখামাত্রই মনি ভাই আবার ত্বড়িৎ গতিতে উপরে উঠে এলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় চিন্তিত তাঁর মুখাবয়ব। কিন্তু একেবারে বিচলিত হলেন না তিনি। ওই সময়ে আমার স্ত্রী ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য যায়। মনি ভাইয়ের চিন্তিত মুখাবয়ব দেখে ঘাবড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘মনি ভাই, কী হয়েছে?’

 

মনি ভাই কোনো কথা বললেন না। তার চোয়াল শক্ত হলো। বেডরুমে ঢুকে ফোন করলেন। আকাঙ্ক্ষিত নম্বরে ডায়াল করে এনগেইজড টোন পেলেন। খুব সম্ভবত বঙ্গবন্ধুকেই ফোন করেছিলেন। এরপর ফের টেলিফোনের রিসিভার তুলে ডায়াল করলেন। কিন্তু কোনো প্রত্যুত্তর নেই। এই সময় ফোন বেজে উঠল। মনি ভাই ধরলেন। অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এল, সেরনিয়াবত সাহেবের বাড়ি আক্রান্ত। ‘ফোন রাখো, আমি দেখছি’- মনি ভাই ফোন ছেড়ে দিলেন। ঠিক এ সময়ে সেনাবাহিনীর ৬/৭ জন লোক ভারী বুটের শব্দ সিঁড়ি ভেঙ্গে দোতলায় উঠতে উঠতে চিৎকার শুরু করল, ‘মনি সাহেব কোথায়, উনি আছেন?’

মনি ভাই দ্রুত বেডরুম থেকে বেরিয়ে এসে সামনের ছোট স্পেসে আগন্তুকদের মুখোমুখি হয়ে বললেন, ‘আমি; কী হয়েছে?” তেজী ও ভারী কণ্ঠের আওয়াজে আগান্তুকরা ইতস্তত। মনি ভাই আবার বললেন , ‘কী হয়েছে বলুন?’

ওদের ভিতর থেকে একজন বললেন, ‘ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট।’

তখনি মনি ভাই বললেন, ‘হোয়াই, কী অন্যায় করেছি আমি?’

ক্ষিপ্ত একজন ঘাতক সঙ্গিন উঁচিয়ে মনি ভাই-এর মাথায় আঘাত করল, চুলের ঝুটি জাপটে ধরল। দৃশ্য দেখে ছুটে গিয়ে আমার স্ত্রী আমাকে ডাকল। বলল, ‘কী সাহস, কারা যেন মনি ভাইকে মারছে।’

চুলের ঝুটি ধরা হাতটা ঝাপটা দিয়ে ছাড়ালেন। ভাবীও তখন বেড রুম থেকে এসে মনি ভাই এর ডান পাশে দাঁড়াল। আমি মনি ভাই-এর পাশে, আমার পাশে আমার স্ত্রী। পরশ-তাপস দরজার সোজাসুজি ঘরে বিছানায় শায়িত। অনুজ মারুফ তখন নিচে গান-পয়েন্টের মুখে। মনি ভাইয়ের চুল, ছাড়িয়ে নেওয়ার পর ওদের একজন আবার বললেন, ‘আমাদের সঙ্গে যেতে হবে, এগেইন রিপিট ইট, ইউ আর নাউ আন্ডার অ্যারেস্ট।’

মনি ভাই বললেন, ‘ঠিক আছে, আমি আসছি।’-এ কথা বলে একটু ঘুরে ঠিক যে মুহূর্তে তিনি জামাকাপড় পাল্টানোর জন্য তার রুমের দিকে উদ্যত হয়েছেন, ঠিক সেই মুহূর্তেই দুইগজ দূর থেকে শুরু হলো ব্রাশ ফায়ার। সামনের আড়াই বাই তিন ফুট স্পেসের উপর আমরা সবাই মেঝেতে লুটিয়ে পড়ি। মনি ভাই ও ভাবীর গায়ে বুলেট বিদ্ধ হয়ে রক্তধারায় মেঝে লাল হয়ে যায়। আমার ও আমার স্ত্রীর গায়ে গুলি লাগে নি। মনি ভাই ও ভাবীর রক্তধারায় আমর জামা কাপড় রঞ্জিত হলো, ওরা আবার ফায়ার শুরু করল। এবারও গায়ে লাগল না। আমার স্ত্রী দরজার আড়ালে ছিল। এরপর তাড়াহুড়ো করে আগন্তুক খুনিরা নিচে নেমে যায়। গুলির শব্দে পরশ-তাপস চিৎকার করে ওঠে। আমার স্ত্রী দৌড়ে ওদের কাছে ছুটে যায়। ওদের জড়িয়ে ধরে বলল, ‘বাবা, চিৎকার করোনা, লক্ষ্মীটি চিৎকার করো না।’

 

ওরাও তখন কিছু বলল না। চাচির বুকের উপর পড়ে ডুকরে চাপা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। একই সঙ্গে মাও চিৎকার করে তার রুম থকে বেরিয়ে আসেন। এরপর মা অজ্ঞান হয়ে ঐ রক্তধারার উপর লুটিয়ে পড়েন। এই চিৎকার শুনে খুনিরা আবার ব্রাশ ফায়ার শুরু করে। এই গুলি কারো গায়ে লাগে নি। ঘাতকরা চলে যাবার সময় বাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ছিল। আমরা তখন মৃত্যর মুখোমুখি হয়ে পরম করুণাময় আল্লাহতালার কাছে এই অবিচারের আরজি পেশ করলাম। ওদের গুলির ঝাঁঝে সারা বাড়ি মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংসযজ্ঞের পরিণত হয়। খুনিরা অতঃপর চলে গেল।

মা’র সঙ্গে সঙ্গে আমার বৃদ্ধ পিতা শেখ নূরুল হক ঘর থকে বের হয়ে এসে এই করুণ অবস্থা দেখতে পেয়ে তার বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ তিনি নিথর নিস্তব্ধ হয়ে থাকেন। তারপর আমাকে জিজ্ঞেশ করলেন, ’মনিকে কারা মারল?’

আমি বললাম, ‘আর্মি।’

একথা শুনে তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘কেন?’

আমি বললাম, ‘জানি না।’

এরপর তিনি নির্বাক, নিশ্চুপ হয়ে একদৃষ্টিতে মনি ভাইয়ের লুটিয়ে পড়া দেহের দিকে তাকিয়ে থাকলেন।

এরপর রক্তাপ্লুত দেহ দিয়ে মেঝেতে উঠে মনি ভাই-এর দিকে ঝুঁকে তাকালাম। মনি ভাই নিথর, নিস্পন্দ। ভাবীর দিকে চোখ ফেরালাম। তাঁর ঠোট নড়ছে। যন্ত্রণার আর্তিতে বলে উঠলেন, ‘আমার পেট ছিড়ে-ফুড়ে গেছে। কোমরে শাড়ির বাধনটি একটু হালকা করে দিন।’

আমার স্ত্রী কোমরের বাধন হালকা করে দেওয়ার পর ভাবীর মুখ মেঝেতে এলিয়ে পড়ল। তিনি বললেন, ‘আমাকে বাঁচান। আমার দুটো বাচ্চা আছে।’

পরশ-তাপস তখন তাদের চাচির বুক থেকে মা-বাবার রক্তাপ্লুত দেহের কাছে ছুটে এল। ওরা করুণ আর্তিতে মা-বাবার মুখের কাছে মুখ রেখে ভেঙে পড়ল, ‘মা, কথা বলো, বাবা, কথা বলো।’

নিচে থেকে ছোট ভাই মারুফ উঠে এল। তার চোখ পাথরের মতো অনড়। আমি তাড়াতাড়ি ৩২ নম্বরে ফোন করলাম। কিন্তু লাইন পেলাম না। মারুফ চেষ্টা করে ফোনে শেখ জামালকে পেল। ওরা দু`জনে অভিন্ন হৃদয় বন্ধু। মারুফ জামালকে জানাল, মনি ভাইকে মেরে ফেলেছে, ভাবী আহত। শোনার পরই জামালের উদ্ভ্রান্ত কণ্ঠস্বর ভেসে এল, ‘দোস্ত রাখ। আমাদের বাড়িতেও গুলি হচ্ছে।’

এরপর মারুফ ফোন রেখে দেয়। তখনো বুঝতে পারছি না কী ঘটছে? আমি, মারুফ ও শাহাবুদ্দিন মনি ভাই ও ভাবীকে নিয়ে পিজিতে ছুটলাম। আমার গাড়িতে ছিল ভাবী। মারুফের গাড়িতে মনি ভাই। পথে মোস্তফা মহসীন মন্টুর দেখা পেলে মারুফ তাকে গাড়িতে নেয়। পিজির সামনেই দেখলাম, আর্মি পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে। বাংলাদেশ বেতারের সামনেও আর্মি। ওদিকে যাওয়াই মুশকিল। গাড়ি ঘুরিয়ে মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে আসার সঙ্গে সঙ্গে পেছনে হর্নের শব্দ শুনলাম। ঐ গাড়িতে ছিল আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের লাশ। ঐ গাড়িতেই ছিল রমনা থানার ওসি মি. আনোয়ার। তিনিও জানতেন না কী ঘটছে।

মনি ভাইকে সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেন দেওয়া হলো, ভাবীকে নিয়ে যাওয়া হল অন্য ওয়ার্ডে। ইমারজেন্সি বারান্দায় সেরনিয়াবাত সাহেবের ১১ বছরের গুলিবিদ্ধ কন্যা বেবী একটু একটু নড়ছে। ডাক্তারকে বলল, ‘একটু দেখুন।’

কিছু সময় পর সে আর বাঁচে নি। এই কিশোরীটিও আমার চোখের সামনে বলি হলো। মনি ভাইয়ার কাছে তাড়াতাড়ি ছুটে গেলাম। ডাক্তার বললেন, ‘উনি আপনার কে হন?’

‘আমার ভাই।’

‘দুঃখিত। অনেক চেষ্টা করেছি। বাঁচাতে পারলাম না।’

মনি ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ শুনে কয়েক মিনিট পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। আবার ছুটে গেলাম । ভাবীর কী অবস্থা দেখতে। ধারণা ছিল ভাবী হয়তো বেঁচে যাবেন। কিন্তু তিনিও এই সুন্দর পৃথিবীতে অসুন্দরের হাতে বলি হয়ে পরপারে চলে গেলেন।

মনি ভাইয়ের বুকে, লাংসে ও থুতনিতে তিনটি গুলির চিহ্ন ছিল। আর ভাবীর পেট ঝাঝরা হয়ে গিয়েছিল। আমি তখন একেবারে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তখনই বঙ্গবন্ধুর বাসা থেকে মেডিকেল কলেজে বুলিটবিদ্ধ কয়েক জন আহত লোক এল। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর বাসার কাজের লোক আলতাফ ছিল। সে মারুফকে বলল, ‘ভাই সাহেবকে, কামাল ভাইকে, সবাইকে মেরে ফেলেছে।’

এ খবর মারুফ আমাকে বলার পর তখন আসল ব্যাপারটা বুঝতে পারি। এর কিছুক্ষণ পরেই হাসপাতাল আর্মি ঘেরাও করল। আমি বাসায় ফোন করে বললাম, ‘তোমরা বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ো। পাশের বাসায় চলে যাও।’

ফোন করেই আমি, মারুফ ও শাহাবুদ্দিন হাসপাতালের তিন তলায় চলে গেলাম। তখন বাইরে হাজার হাজার মানুষের জমায়েত। এদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় কোনো চেনামুখ দেখা গেল না। ওরা চিৎকার করে বলেছেন, ‘লাশ দিন, আমরা মিছিল করব।’

পরে অবশ্য অস্ত্রের দাপটে মুহূর্তের মধ্যে এলাকাটি জনশূন্য হয়ে যায়। এরপর হাসপাতালে থাকা আমাদের জন্য নিরাপদ নয়। আমাদের গায়ের জামাকাপড়ে মনি ভাই ও ভাবীর রক্তের চিহ্ন। এভাবে বের হওয়া মুশকিল বিধায় চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. এস. এম. মনিরুল হক ও আরও কয়েকজন ডাক্তার খুব সতর্কতার সঙ্গে আমাদের বের করে দেন। রক্তাক্ত জামা-কাপড়গুলো খুলে ফেলে ওদের জামাকাপড় পরেই বের হয়েছিলাম।

বাড়িতে ফিরে দেখি বাড়ির লোকজন কেউ সরে যায়নি। আমরা তখন আরও উদ্বিগ্ন। আমাদের দেখেই পরশ ও তাপস কান্নায় ভেঙে পড়ল। ওরা বললো, ‘চাচা, আমাদের মা-বাবা কোথায়? মা-বাবার কাছে আমাদের নিয়ে যাও।, মা-বাবাকে আমাদের কাছে এনে দাও।’

পরশের বয়স তখন পাঁচ। তাপসের বয়স সাড়ে তিন। এই অবোধ শিশু দুটির প্রশ্নের জবাব সেদিন দিতে পারিনি। বুক থেকে একটি ভারি বাতাস কণ্ঠ অবধি এসে আটকা পড়েছিল।

আবার শুনলাম, সেই একই চিৎকার- ‘মনি নাহেব আছেন?’

সামরিক উর্দিপরা একদল ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে। আমি জবাব দিলাম, ‘উনি নেই, হাসপাতালে।’

পুনরায় জিজ্ঞেস করল, ‘মারুফ আছে?’

বললাম, ‘বাইরে।’

ওরা বলল, ‘ছোটাছুটি করবেন না। আমরা দেখছি।’

আমরা সেই বাড়িটি ত্যাগ করে পাশের একটি বাড়িতে চলে গেলাম। দূর থেকে দেখলাম, আরেকটি সামরিক গাড়ি। কিন্তু আর্মি বাড়িতে ঢুকে কী যেন তল্লাশি করল এবং লুটপাট করতেও আর বাকি রাখলো না।

মনি ভাইয়ের সেই মৃত্যুকালীন জিজ্ঞাসা- ‘কী অন্যায় করেছি আমি?’- এখনো আমার কানে বাজে। কানে বাজে ভাবীর সেই শেষ আর্তনাদ- ‘আমাকে বাঁচান। আমার দুটো বাচ্চা আছে।’  

 [রহীম শাহ সম্পাদিত ‘পচাত্তরের সেই দিন’ বই থেকে নেওয়া। (পৃষ্ঠা- ২৯ থেকে ৩৪)]

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/জেডএ

 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

বিসিএস উন্মাদনায় তরুণ প্রজন্ম

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ১৬ মে, ২০২৪


Thumbnail

দেশের শিক্ষিত তরুণ তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে সরকারি চাকরি। আর তাই সরকারির চাকরির মধ্যে এক নম্বরে পছন্দের বিসিএস ক্যাডার হওয়া। আর এ ক্যাডার হওয়ার জন্য চলে রীতিমতো পড়াশোনার যুদ্ধ। শিক্ষার্থীদের মনের মধ্যে প্রচন্ড এক জেদে এগিয়ে যাবার দৃঢ় প্রত্যয়। শুধু যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা বিসিএসের পেছনে ছুটছেন তাই না প্রকৌশল বা মেডিকেল কলেজের অনেক শিক্ষার্থীও এখন ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ হতে চাচ্ছেন।

বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষা বাংলাদেশে সরকারি পদে চাকরি অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এবং সেই পরিক্ষার সহায়ক হওয়া জন্য শিক্ষার্থীরা একাধিক কারণে এই পথে যেতে চায়, যেমন সরকারি সেবা, সামাজিক সেবা, ক্যারিয়ার সুযোগ, সামরিক ও আর্থিক সুরক্ষাসহ নানান অর্জনের দৌড়ে বর্তমান তারুণ্যরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিরাপদ জীবিকা নির্বাহের মোহে শিক্ষার্থীরা বিসিএসের পেছনে ছুটছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের প্রধান লক্ষ্য, যে করে হোক বিসিএস ক্যাডার হতে হবে। না হতে পারলে জীবন বৃথা। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক এমন পেশাজীবীর মর্যাদাও নিশ্চিত করতে হবে। অন্য পেশায় জীবন নিশ্চিত করতে না পারলে চাকরিপ্রার্থীরা বিসিএসের পেছনে ছুটবেন এটিই স্বাভাবিক।

আরও পড়ুন: কেন চাকরির বয়সসীমা ৩৫ করা উচিত নয়?

এদিকে দেশের প্রায় ৪১ শতাংশ তরুণ নিষ্ক্রিয়। অর্থাৎ তারা পড়াশোনায় নেই, কিংবা কর্মসংস্থানে নেই। এমনকি কোনো কাজের জন্য প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন না। মেয়েদের মধ্যে নিষ্ক্রিয়তার হার বেশি, ৬১ দশমিক ৭১ শতাংশ। ছেলেদের মধ্যে এ হার কম, ১৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ। দিন দিন এই ধরনের তরুণের সংখ্যা বাড়ছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসের ২০২২ প্রতিবেদনে বিবিএস নিষ্ক্রিয় তরুণের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ধরেছে ১৫ থেকে ২৪ বছর। তাদের হার ধরে হিসাব করে দেখা যায়, নিষ্ক্রিয় তরুণের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৯ লাখ।

প্রতিবছর বিসিএস পরীক্ষায় প্রার্থী বেড়ে যাওয়ায় এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা। যে তরুণরা কেন বিসিএস মুখী হচ্ছে তার যৌক্তিক কিছু কারণও কিছু খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন নীতিমালা, নতুন নতুন পে-স্কেলে সরকারি চাকরীজীবি সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি।

এছাড়াও আরও কিছু কারণ উঠে এসেছে। যেমন, সামাজিক মর্যাদা, বর্তমান সরকারের আমলে বড় রকমের ঝুটঝামেলা ছাড়া স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া, মেধার মূল্যায়ন, বেতন বেসরকারি চাকরির প্রায় সমান, সরকারি চাকরিতে নিরাপত্তা, পারিবারিক চাপের কারণে, ক্ষমতার জন্য, বিয়ের বাজারে বিসিএস চাকরিজীবীর কদর বেশি, সরকারি চাকরি হতে অবসর গ্রহণের পর পেনশন ও গ্রাইচুটি সুবিধা, তরুণদের পড়াশোনা শেষ করে উদ্যোক্তা হবার মত পুঁজির অভাব এ ব্যাপারে পরিবারের সাপোর্ট না থাকাসহ নানাবিধ কারণে শিক্ষিত তরুণরা সরকারি চাকরির দিকে ঝুঁকে পড়ছে।

শুধু কি স্ফীত বেতন ও লোভনীয় পেনশনের আকর্শনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আকৃষ্ট হয়! তরুন সম্প্রদায় সর্বত্তম নিদর্শন হিসেবে বেছে নেয় বিসিএস। কারণ তারা শাসন কার্যে নিজেদের নিয়োজিত করতে চায়। যে শাসন দেশের দাসত্বকে করে দৃঢ়মূল, দারিদ্রকে করে ক্রম বর্ধমান।

বিসিএস একটা নিছক চাকরির পরীক্ষা নয়, এটা হল একটা ‘লাইফ স্টাইল’ চয়েজ করার মতো। এই লাইফস্টাইল চয়েজ অনেকের পছন্দ না। বাংলাদেশে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা গৎবাঁধা সরকারি চাকরির পেছনে না দৌড়িয়ে চ্যালেঞ্জিং, সৃজনশীল আর স্বাধীন জীবন যাপনের প্রতি আকর্ষণবোধ করে থাকেন। এ কারণে অনেকে উচ্চ বেতনের বেসরকারি চাকরি, নিজস্ব ব্যবসা বা পারিবারিক ব্যবসায় নিয়োজিত হতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন। এছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিসিএসে অংশগ্রহন করার প্রবণতা কম থাকে। অনেকের আবার সৃজনশীল অথবা টেকনিকাল কাজে আগ্রহ বেশি থাকায় তারা সরকারি চাকরির দিকে কম ঝুঁকে।

আরও পড়ুন: জিপিএ-৫ পেয়েও ‘নামি’ কলেজে ভর্তি কঠিন!

অস্বাভাবিক "সম্মান" এর লোভে তরুণরা এখন এই ক্যাডার সার্ভিসে ঝুঁকছে। যেখানে সার্ভিসে আসার মূল কারণ হওয়া উচিত ছিল দেশের সেবা করা। সেটার বদলে এখন সার্ভিসে আসলে নিজের আখের গোছানো সুবিধা তাই সবাই আসতে চায়। এই মেন্টালিটি নিয়ে যারা সার্ভিসে ঢুকবে তাদের কাছ থেকে আপনি কি সার্ভিস আশা করবেন? কোরায় একজন ক্যাডারের লেখা দেখেছিলাম সে একদম সরাসরি বলছে যে অন্য কাজের ভ্যালু নাই শুধু বিসিএসই একমাত্র যোগ্য চাকরি দেশের সেবার জন্য। ভেবে দেখেনতো তাহলে, তারা কি চিন্তা নিয়ে সার্ভিসে ঢুকছে!

অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দেশের প্রাইভেট সেক্টরের ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ের CSE, EEE, IT এর মতন ডিমান্ডিং বিষয়ে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরাও অনেক সময় মনমতো চাকরি পেতে হিমশিম খায়। এমনকি একদল তরুণ যাচ্ছে বিদেশে আরেক দল যাচ্ছে বিসিএস এ, দেশের কাজ তাই চায়না ইন্ডিয়া থেকে বেশি টাকা দিয়ে লোক এনে করানো লাগতেসে। তাই এতে স্পষ্ট সমস্যাটা বহুমাত্রিক।

তবে এটার ফলাফল হচ্ছে দেশ এমন একটা নিউ জেনারেশন পাচ্ছে যারা এনালিটিকাল ক্ষমতার বদলে মুখস্ত ক্ষমতায় দক্ষ বেশি হচ্ছে। যাদের সায়েন্স, টেকনোলজি, ফিলোসফি বা ইকোনমিক্সের বদলে MP3 পড়ায় বেশি আগ্রহ। বিসিএসমুখী পড়ালেখার কারণে শিক্ষার্থীরা গুরুত্ব দিয়ে পড়ালেখা করেন। যার ফলে তারা বিষয়ভিত্তিক পড়ালেখায় যথাযথ মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হন। ফলে উচ্চশিক্ষার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের।


বিসিএস   বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস   তরুণ   প্রজন্ম   বিশ্ববিদ্যালয়  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

কেন চাকরির বয়সসীমা ৩৫ করা উচিত নয়?

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৫ মে, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের চাকরির বাজারের প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়ার জনপ্রিয়তা সবচাইতে বেশি। চাকরিপ্রত্যাশীদের মতে সরকারি চাকরির মত পেশাগত নিরাপত্তা আর কোথাও নেই। আর সেজন্যই অনেক দেশে বেশি বয়সে সরকারি চাকরির আবেদনের সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশে এর সীমাবদ্ধতা ৩০ বছরে রয়েছে। সরকারি চাকরির কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতার দরকার হয়। সেই দক্ষতা অর্জনের জন্য বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া চাকরির আবেদনের বয়স যতই থাকুক না কেন, পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ অনির্দিষ্ট হয় না। একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ৫ বা ৭ বার সিভিল সার্ভিসের জন্য আবেদন করতে পারেন। আমাদের দেশেও যেকোন যুক্তিতে বয়স বাড়াতে গেলে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত।

চাকরিপ্রত্যাশী অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশে পড়াশোনা বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা উচ্চশিক্ষা শেষ করে বের হন তাদের সেশন জটের কারণে ২৬-২৭ বছর লেগে যায়। সেক্ষেত্রে ৩০ বছরের বয়সসীমা তাদের জন্য অন্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় বৈষম্যমূলক। বিশ্বের অনেক দেশেই চাকরির বয়সসীমা নেই। বাংলাদেশে বয়সসীমার বাধাটিও বৈষম্যেরই সামিল। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি নেই। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণত চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে যাদের বয়স একটু বেশি থাকে তারাই আবেদনের বয়সসীমা বাড়ানোর আন্দোলন করে থাকেন। দুই দশক ধরে এ রকম আন্দোলন নিয়মিতভাবে সংবাদমাধ্যমে আসতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীদের যুক্তি-বিভিন্ন দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ থেকে ৫৯ বছর পর্যন্ত দেখা যায়। সুতরাং, বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েটরা কেন এই সুযোগ পাবেন না? তাদের মতে, বয়স নয়, যোগ্যতাই হতে পারে একজন প্রার্থী বাছাইয়ের প্রধান বিবেচ্য। তাছাড়া মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারটিও তারা উল্লেখ করেন।

সম্প্রতি জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়টি নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও আলাপ-আলোচনা করবেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আপাতত বয়সসীমা বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত সরকারের নেই। গত ১৫ বছরে সরকার অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চাকরির বয়স ছিল ২৭ বছর সেখান থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সেটা ৩২ বছর করা হয়েছে। চাকরি থেকে অবসরের বয়স ৫৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়েছে। আমরা সবসময় যুগের সাথে তাল মিলিয়ে জনবল কাঠামো ও নিয়োগ প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন করে থাকি। যুগের সাথে সম্পর্ক রেখে আমরা পরিবর্তনও করে থাকি।

সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরের বয়স বেশি বাড়ানোর প্রধান অসুবিধা হিসেবে ওপরে সরকারি চাকরিতে তারুণ্যের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেটি ছাড়াও একটি সামাজিক সমস্যা রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পদবিন্যাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো খোলা (ওপেন) বা পরিবর্তনশীল (ডাইনামিক) নয়; এখানকার পদবিন্যাস প্রায় স্থির। বয়োজ্যেষ্ঠদের অবসরে যাওয়ার ফলে এখানে অপেক্ষাকৃত তরুণ চাকরিজীবীদের পদপ্রাপ্তি তথা পদোন্নতির সুযোগ তৈরি হয়। বয়োজ্যেষ্ঠরা দীর্ঘদিন পদ ধরে রাখলে তরুণেরা আরও বেশি দিন পদোন্নতিবঞ্চিত থাকবেন। এতে বয়োজ্যেষ্ঠরা ঘটনাক্রমে বয়ঃকনিষ্ঠদের বিরক্তির কারণ হতে পারেন।

বাংলাদেশে চাকরির বয়সসীমা ৩০ কেন উপযুক্ত বয়স? কারণ, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে তরুণদের কাজে লাগাতে চায় কর্তৃপক্ষ। তরুণরা যাতে তাদের মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে। এমনকি চাকরিতে প্রবেশের একটা মানসিক বয়সও রয়েছে। সাধরণত সামরিক বাহিনীতে চাকরির ক্ষেত্রে যেমন শারীরিক সক্ষমতার বিষয় থাকে, বেসামরিক চাকরিতে সেটা না থাকলেও মানসিক সক্ষমতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চাকরিতে প্রবেশের পর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় পিক-আপ (গ্রহণ) করা এবং সে অনুযায়ী সার্ভিস বা সেবাদান ঠিক রাখতে হলে একটা নির্দিষ্ট বয়স দরকার হয়। এছাড়া ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার বিষয়টি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হতে পারে। চাকরিতে ‘কন্ট্রিবিউট’ করা বা অবদান রাখতে হলেও একটা নির্দিষ্ট বয়সের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ সে যাতে অবদান রাখতে পারে তার জন্যও পর্যাপ্ত সময় দরকার হয়।

বাংলাদেশে সাধারতণ চাকরির ক্ষেত্রে বর্তমানে অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর। দেরীতে চাকরিতে প্রবেশ করলে অবদান রাখার সময়ও কমে আসতে পারে। বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি বাংলাদেশে কর্ম কমিশন (বিসিএস) এর আওতাধীন নিয়োগ পরীক্ষাসমূহ। এই পরীক্ষার মাধ্যমে একজন চাকরিপ্রত্যাশীর সম্পূর্ণ নিয়োগ পেতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগে। ৩০ বছর বয়সে কেউ এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া পেরিয়ে চাকরি শুরু করতে হলে তার বয়স অন্তত ৩৩-৩৪ বছর হয়ে যায়। ফলে তার অবদান রাখার সময়সীমা এমনিতেই কমে যায়। এতে করে যেই সেক্টরে একজন ব্যক্তি চাকরি করেন সেখানে চাকরিতে তার সম্পূর্ণটা দিতে সক্ষম হন না। ফলে দেশের একাংশ ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। 

বিবেচনা করলে দেখা যায়, কোন ব্যক্তি ২৫ বছর বয়সে চাকরিতে যোগদান করলে তার পিক-আপ করার সক্ষমতা যত থাকবে, ৩৪ বছর বয়সী একজনের সেই সক্ষমতা একই হবে না, এসব বিষয় মাথায় রেখেই বয়স নির্ধারণ করা হয় হতে পারে। একজন ব্যক্তি ২৫ বছরে চাকরিতে প্রবেশ করলে সে অপেক্ষাকৃত তরুণ থাকে এবং প্রশিক্ষণসহ নানা ধরণের কর্মসূচীতে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে তার কোন পিছুটান থাকে না। কিন্তু বয়স বেশি হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিয়ে, অন্য চাকরির মতো পিছুটান তৈরি হয় যা নতুন চাকরি, প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য কর্মসূচীতে বাধার সৃষ্টি করতে পারে।

এছাড়া কর্মক্ষেত্রে যারা সহকর্মী হিসেবে কাজ করবেন সেখানেও, বয়সের পার্থক্য খুব বেশি যাতে না হয় বা একটা নির্দিষ্ট বয়সের ধারা বজায় রাখার প্রতিও নজর দেয়া হয় বলে মনে করেন সমাজের বিশিষ্টজনরা। এমনকি বাংলাদেশে চাকরির সংকটের কারণগুলোও বিবেচনা করা কে তা বিশেষ ভাবে পর্যালোচনা করে সংকট মোকাবিলায় কাজ করা হয়।

দেশের তরুণদের চাকরির সংকটের নানা কারণে হতে পারে বিশষে করে চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতার অভাব। ২০১৯ সালে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক, বিআইজিডি ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা-জরিপ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতায় মারাত্মকভাবে পিছিয়ে আছেন বাংলাদেশের তরুণেরা। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করেও তাঁরা কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন না। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার চাকরির নিয়োগের সময়ে এই ব্যাপারটি দেখা যায়। তাই তরুণদের দক্ষ ও যোগ্য করে তোলার জন্য বাজারের চাহিদার দিকে নজর রেখে নানা ধরনের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া যায়।

সুতরাং সব দিক ভেবে যুবসম্প্রদায়ের প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র ও সময় প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ এবং অবসরের বয়সের একটি সাম্যতা দরকার। আর একই সঙ্গে বয়োজ্যেষ্ঠদের সেবা একটি যৌক্তিক বয়স পর্যন্ত পেতে এবং নতুন প্রজন্মের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে চাকরি থেকে অবসরের বয়স এক বছর বাড়িয়ে ৬০ বছর করাই বাঞ্ছনীয়।

কিন্তু চাকরি থেকে অবসরের দিক থেকে যদি দেখা হয়, সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও অবসর গ্রহণের সময়সীমা সক্রিয়ভাবে নির্ধারন করা হয়েছে। বিচারকদের অবসর গ্রহণের বয়স ৬৭ বছর এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫ রাখা হয়েছে। এমনকি একজন ডাক্তারও বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগদান করে তাকে ৫৯ বছর বয়সে অবসরগ্রহণ করতে হয়। কিন্তু একই ডাক্তার যদি কোন মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসরের চাকরি করেন তাহলে তাকে ৬৫ বছরে অবসরে যেতে হয়। তাহলে সাম্যতা কোথায়? যদি চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে বয়সের সিমাবদ্ধতা দরকার হয় তাহলে চাকরি থেকে অবসরের সময়ও নির্দিষ্ট সিমাবদ্ধতা দরকার।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

পরীক্ষার ফলাফলে কেন ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে?

প্রকাশ: ০৮:০৩ এএম, ১৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

একটি জাতির মেরুদণ্ড হল শিক্ষা। যা কিনা জাতি গঠনের প্রধান উপাদান। স্বমহিমায় নিজেদের উদ্ভাসিত করতে কেবল শিক্ষত জাতিই পারে। বিবেকবান মানুষ, সুনাগরিক, কর্তব্যপরায়ণ, দায়িত্ববান ও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষার বিকল্প নেই। সে জন্য প্রয়োজন শিশুকাল থেকেই শিক্ষা অর্জন। স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য অনেকেই পারি দেন বিদেশে।

শিক্ষার সূচনা পরিবারের থেকে হলেও জ্ঞান অর্জনের বাল্যকালের বিশেষ ধাপ মনে করা হয় প্রাইমারি থেকে এসএসসি পর্যন্ত। আর এই এসএসসি পরিক্ষার ফলাফলে চলতি বছরে দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে পাসের গড় হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪। যা গতবারের (২০২৩ সালে) চেয়ে বেড়েছে। গেল বছর পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। কিন্তু এবারের এসএসসি তে মোট পাসের হারের মধ্যে ছাত্রীদের পাসের হার ৮৪.৪৭ আর অন্যদিকে ছাত্রদের পাসের হার ৮১.৫৭ শতাংশ। এর নেপথ্যের কারণ কি? কেনইবা ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পাসের হার এগিয়ে?

রোববার (১২ মে) এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর এক সংবাদে সম্মেলনে পরিক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা কম দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেন ছেলেরা পিছিয়ে তা জানতে শিক্ষা বোর্ড প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ অনুযায়ী এসএসসি ফলাফলে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা কেন এগিয়ে তার কিছু সুনির্দিষ্ট দিক থেকে শিক্ষার্থীদের বেড়ে উঠা, তাদের প্রতি পরিবারে দায়িত্ব ইত্যাদি নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি যে..

সাধারণত পড়াশোনার ক্ষেত্রে ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার পেছনে মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত সময় ব্যয় করা প্রধানত দায়ী হতে পারে। ছেলেরা বাইরে ঘোরাঘুরির পাশাপাশি বাসায় ফিরে মোবাইল ফোনে ডুবে যাচ্ছে। স্কুলপড়ুয়ারা অতি মাত্রায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করায় পড়ালেখায় মনোযোগী হতে পারছে না। এমনকি  ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা মোবাইল ফোন ব্যবহারের বেশি সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি কিশোর অপরাধে জড়িয়ে পড়াও ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। ছাত্রীদের মধ্যে তারা পড়াশোনায় বেশি আগ্রহ দেখছেন। আর ছেলে সন্তানদের চেয়ে মেয়েরা পড়াশোনায় আগ্রহী হয়ে ওঠায় তাদের পড়াশোনায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বাবা-মাও। এমনকি মেয়েদের লেখাপড়ায় অভিভাবকরা বেশি ব্যয় করতেও দ্বিধা করছেন না।

সচেতন মহল মনে করছেন, স্কুলপড়ুয়া ছেলেটার হাতে বাবা-মা মোবাইল তুলে দিচ্ছে। কিন্তু মেয়েটার হাতে দিচ্ছে না। হয়তো অন্য কোনো চিন্তা থেকে দিচ্ছে না। তাতে মেয়েটা পড়াশোনায় মনোযোগ দিচ্ছে। আর ছেলেটা ফেসবুক, গেমিংয়ে সেটা ব্যবহার করছে। এভাবে ছেলেরা পড়ালেখায় ক্রমে চরম অমনোযোগী হয়ে পড়ছে।’ অতি মাত্রায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে।

মেয়েরা কেন এগিয়ে 

মেয়েরা পড়ালেখায় মনোযোগি হতে পারে কারণ তারা আগ্রহশীল, সাহায্যকারী, মনোযোগী, এবং সমর্থনশীল হতে পারেন। তাদের প্রকৃতি বিশেষভাবে পড়াশোনার ক্ষেত্রে উত্সাহী এবং অনুশাসিত হয়। মেয়েদের পড়ালেখায় মনোযোগের আরও  কিছু কারণ হতে পারে, যেমন..

সামাজিক প্রতিফলন: সাধারণ সমাজে শিক্ষার প্রতিফলন মেয়েদের হাতেই। তাই তারা নিজেকে সমাজের মধ্যে সাবাস করার জন্য শিক্ষালোভী হতে চায়।

প্রতিযোগিতামূলক: মেয়েদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষার আগ্রহ অনেক। আর তাই তারা শিক্ষা অর্জন ও পড়াশোনার মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারে।

সামর্থ্য ও উদারতা: মেয়েদের অনেকে সামর্থ্য ও উদারতা দেখানোর চাপে থাকে, যা তাদের পড়ালেখায় মনোযোগিতা বৃদ্ধি করে।

পরিবারের সমর্থন: পরিবারের সদস্যরা মেয়েদের উত্সাহ দিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগিতা বৃদ্ধি করে। এতে করে মেয়েদের ফলাফল আসে সাফল্যের।

এছাড়াও সম্পূর্ণ সমাজে মেয়েদের উপলব্ধি ও প্রতিযোগিতামূলক স্বাধীনতা দেওয়া উচিত, যা তাদের পড়ালেখায় আরও মনোযোগিতা বৃদ্ধি করে। এই সমস্ত কিছু কারণে মেয়েদের পড়ালেখায় মনোযোগিতা বৃদ্ধি হয় তার তাই তারা পরিক্ষার ফলাফলে অর্জন করে সাফল্য।

সাধারণত আদর্শ ছাত্রের বৈশিষ্ট্য হিসেবে আমরা জানি: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত থাকা, নিয়মিত পড়াশোনা করা, সহপাঠদের (জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণী নির্বেশেষে) সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা, নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলা, মাদক থেকে দূরে থাকা, প্রলোভন থেকে বিরত থাকা, এমনকি সমাজ ও রাষ্ট্র বিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকা।

যা করা উচিৎ

সম্প্রসারণ ও সমর্থন: পরিবারের সদস্যরা ছাত্রদের শিক্ষামূলক প্রক্রিয়ার সমর্থক করতে হবে এবং তাদের পক্ষ থেকে প্রশংসা ও সমর্থন প্রদান করতে হবে।

প্রোত্সাহন ও সমর্থন: পারিবারিক সদস্যরা ছাত্রদের এমন কার্যকলাপে উৎসাহিত করতে হবে যা ছাত্রদের শিক্ষামূলক ও ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ছাত্রদের প্রেরণা ও মনোনিবেশ: ছাত্র প্রোত্সাহন ও প্রেরণা প্রদানের মাধ্যমে তারা উচ্চ লক্ষ্য স্থাপন করতে পারে এবং নিজেদের উন্নতিতে মনোনিবেশ করতে পারে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ:

এছাড়া ছাত্র-ছাত্রী উভয়কেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন ক্যারিয়ার প্লানিং, দারিদ্র্য সহায়তা, নৈতিক শিক্ষা, ব্যক্তিগত উন্নতি ইত্যাদির জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। কেননা পারিবারিক শিক্ষাব্যবস্থা সামাজিক, মানসিক ও ব্যাক্তিগত উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি ছাত্র-ছাত্রীদের সুস্থ ও সমৃদ্ধ রেখে তাদের পড়ালেখা করতে উৎসাহিত করে। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরে মেধা বৃদ্ধি হতে পড়াশোনায় মনোযোগি হবে। এবংকি পরিক্ষার ফলাফল অগ্রগতি হবে। জাতি হবে শিক্ষিত। প্রজন্ম গড়বে শিক্ষিত মেধাযুক্ত।


পরীক্ষা   ছেলে   মেয়ে  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

বাড়ছে ‘ভার্চুয়াল অ্যাডিকশন’, তরুণীদের সচেতনতা কোথায়?

প্রকাশ: ১০:৪২ এএম, ১৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

বর্তামানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের জীবনকে করেছে সহজ থেকে সহজতর। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করেই জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতি বা ‘শিল্প বিপ্লব’ গড়ে উঠেছে। জ্ঞানের সমৃদ্ধি, সংরক্ষণ ও ব্যবহার তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে। কিন্তু তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধাটি যখন একদল অসৎ ও অপরাধপ্রবণ ব্যক্তির দ্বারা নেতিবাচকভাবে ব্যবহৃত হয় তখনই এর অপব্যবহারে বিপন্ন হয় সমাজ তথা প্রজন্ম।

প্রজন্মের ধারাবাহিকতায় ক্রমেই তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছে তরুণীরা। যুগের বিবর্তন এবং সরকারের সুক্ষ পরিকল্পনায় একদিকে তরুণীরা যেমন তাদের স্বাধীনা অর্জন করেছে অন্যদিকে সেই স্বাধীনতা রক্ষা করার নামে এই তরুণীদের অনেকেই বিষর্জন দিচ্ছে তাদের অস্তিত্ব ব্যক্তিত্ব কিংবা স্বতিত্ব।

জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’-এর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন পুরুষ, ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন তরুণী। যেখানে পুরুষের চেয়ে তরুণীদের সংখ্যা বেশি সেখানে তরুণীদের সমাজের সচেতনতা অবলম্বন করে তাদের স্বাধীনতা রক্ষা করা জরুরী।

তরুণীরা ভার্চুয়াল ব্যবহারে সচেতন না হলে পড়তে পারে বিপদজনক পরিস্থিতিতে। অনলাইনে যদি কোন সম্পর্কে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করতে হলে প্রাইভেসি নিশ্চিততা হানির ঝুঁকি থাকে। এটি তরুণীকে নিজের গোপনীয়তা সংরক্ষণ না করে বিপদে ফেলতে পারে। অনলাইনে যে সম্পর্ক এবং বার্তা পাঠানো হয়, তা যদি নিয়মিত হয় তাহলে মনের অপরিচিত মানুষের সাথে সমস্যা হতে পারে। যেমন, অবাঞ্ছিত মেসেজ বা ব্লক করা প্রবলেম হতে পারে। এছাড়াও অনলাইনে অসময়ে নেগেটিভ বা হানিকর কোনও সম্পর্কে পড়তে পারে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এমনকি ঝুঁকি থাকতে পারে অপরাধী হানির। অপরাধী হানির শিকার হতে পারে কিছু তরুনী, যেমন সাইবার বুলিং, অনলাইন নির্যাতন, কাইবার সাথে পার্সনাল তথ্যের অপসারণ ইত্যাদি।

এদিকে বিবিএস জানায়, এক দশকে দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে ২ কোটি ১১ লাখ ১৪ হাজার ৯১৯ জন। সর্বশেষ ২০১১ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭। ক্রমাগত ভাবে বৃদ্ধি হচ্ছে দেশের জনসংখ্যা। সরাকারের নানান উদ্যেগ বাল্যবিবাহ থেকে পরিবার পরিকল্পনার নির্দেশনায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হলেও বেশিভাগই হচ্ছে না তরুণীসচেতনতা অবলম্বন না করাতে।

অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার কিংবা ‘ভার্চুয়াল অ্যাডিক্টেড’ এর অসচেতনার ফলে সময় অপচয় হয় পর্যাপ্ত পরিমাণ। অনলাইনে সময় অপচয় একটি বিশেষ ধরণের সমস্যা কেননা দৈনন্দিন জীবনের কাজে অসুবিধা তৈরি করতে পারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অহেতুক পদ্ধতিতে সময় ব্যায় করা। প্রত্যেক তরুণীকেই নিজের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সংরক্ষণস্বার্থে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, বর্তমান প্রজন্মের তরুণী কিংবা তরুণীরাই পরিবর্তন করতে পারে দেশ কিংবা জাতীকে।

যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে তরুণীদেরও ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা তরুণীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর পরিপূর্ণতা পাবে সমাজ, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র, এবং তরুণীদের সঠিক অধিকার।


ভার্চুয়াল অ্যাডিকশন   তরুণী   সচেতনতা   প্রজন্ম  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

প্রেম মানে না বয়সের গণ্ডি

প্রকাশ: ০৭:৫৬ এএম, ১১ মে, ২০২৪


Thumbnail

প্রেমের কোনো বয়স হয় না। গল্প, উপন্যাস ও বাস্তব জীবনে এর আগে বহুবার তা প্রমাণ হয়েছে। আরও একবার সে কথা মনে করিয়ে দিল নিউইয়র্কের বাসিন্দা হ্যারল্ড টেরেন্স (১০০) ও জেনি শার্লিনের (৯৬) প্রেমকাহিনি। তাদের এই প্রেম পরিণতিও পেতে চলেছে। কিছু দিন পরেই দুজনে সংসার পাতবেন। তারই প্রস্তুতি চলছে।

হ্যারল্ড বিমানবাহিনীতে কাজ করতেন। এখন অবসরপ্রাপ্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। পড়াশোনা চলাকালীন বিমানবাহিনীতে যোগ দেন হ্যারল্ড। তখন হ্যারল্ডের বয়স ২০। চাকরি সূত্রে ইংল্যান্ড পাড়ি দেন। কয়েক বছর সেখানেই ছিলেন। হঠাৎই ইংল্যান্ড ছেড়ে যাযাবর হয়ে যান।

ইউক্রেন, বাগদাদ, তেহরানসহ বিভিন্ন দেশে ঘুরে কাজ করতে থাকেন। বেশ কয়েক বছর এভাবে চলার পর জীবনে থিতু হতে চান তিনি। তাই আবার আমেরিকায় ফিরে আসেন। নিজের মাটিতে ফিরে নতুন জীবনও শুরু করেন। সংসার পাতেন দীর্ঘ দিনের বন্ধু থেলমার সঙ্গে।

বছর দুয়েকের মধ্যে দুই সন্তান আসে। স্ত্রী, সন্তানকে ছেড়ে কাজে ফেরার ইচ্ছা ছিল না হ্যারল্ডের। কিন্তু স্ত্রীর জোরাজুরিতেই আবার কাজে যোগ দিয়েছিলেন। হ্যারল্ড চলে যাওয়ার পর সংসার ও সন্তানের সমস্ত দায়িত্ব গিয়ে পড়ে থেলমার ওপর। দায়িত্ব পালনে অবশ্য কোনো ত্রুটি রাখেননি তিনি। সন্তানরাও বড় হয়ে নিজেদের মতো জীবন গুছিয়ে নেয়।

জীবনের অধিকাংশ সময় পরিজনদের সঙ্গ পাননি। জীবনের শেষটা এমন হোক, তা চাননি হ্যারল্ড। তাই ২০২১ সালে চাকরি থেকে পুরোপুরি অবসর নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।  কিন্তু নিয়তিতে যা লেখা থাকে, তার অন্যথা হওয়ার জো নেই। হ্যারল্ড বাড়ি ফেরার মাসখানেকের মধ্যে মারা যান থেলমা। দুই ছেলে কাজের সূত্রে ভিন দেশে।

স্ত্রীর মৃত্যুর পর আবার একা হয়ে যান বৃদ্ধ হ্যারল্ড। তার এই নিঃসঙ্গ জীবনে হঠাৎই আলাপ জেনির সঙ্গে। জেনি অবিবাহিত ছিলেন। মনের মতো কাউকে পাননি, তাই সংসারও পাতা হয়নি। ৯৬ বছর বয়সে হ্যারল্ডের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর জেনির মনে হয়েছিল, এই মানুষটির জন্যই অপেক্ষা করছিলেন।

তাই সময় নষ্ট না করে নিজেই মনের কথা খুলে বলেন হ্যারল্ডকে। একা থাকতে আর কে চায়! তাই আর দেড়ি করেননি, জেনির সঙ্গে জীবনের বাকি দিনগুলো হেসেখেলে কাটিয়ে দিতে চেয়ে আবার নতুন করে শুরু করেন।


প্রেম   বয়স   গণ্ডি  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন