নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ১২ অগাস্ট, ২০১৮
ভারতের আসাম প্রদেশে বাঙালি খেদাও অভিযান চলছে। এই উদ্দেশ্যে গত ৩০ জুলাই প্রকাশিত হয়েছে ভারতের জাতীয় নাগরিক পঞ্জী বা ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেনসের (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকা। আসামের কয়েক লাখ বাংলাভাষী হিন্দু-মুসলমান এই তালিকা থেকে বাদ পড়ে রাষ্ট্রবিহীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আছেন। আসামের জাতীয়তাবাদীরা অবশ্য দাবি করছেন তাঁরা বাঙালিদের তাড়িয়ে দিচ্ছেন না। শুধু আসামে বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব তালিকা থেকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চাইছেন। আসামের মতো পশ্চিমবঙ্গেও চলছে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর অভিযান। তবে আসাম পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি ভারত।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে চলা এমন অভিযানের ঘটনায় বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার খুবই চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন বোধ করছে। আওয়ামী লীগ মনে করছে জাতীয় নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে ভারতের বিজেপি সরকার এই ইস্যুতে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিচ্ছে আর এতে করে আওয়ামী লীগ সরকার একটি বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে। কারণ আসামের নাগরিকদের যদি বাংলাদেশে পুশ ব্যাক করা শুরু হয় তাহলে তা দুই দেশের সম্পর্কের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। অবশ্য এখন পর্যন্ত সরকার এটি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।
ভারতের রাষ্ট্রদূত অবশ্য বলেছেন, এই ইস্যু বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, নির্বাচনের আগে বিজেপি সরকারের এই ভূমিকা আওয়ামী লীগের ওপর একটি বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। আওয়ামী লীগ তাই এই বিষয়ে একটি অনানুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের থিংক ট্যাংকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাঁরা বিজেপি সরকারের সঙ্গে এবং বিজেপির বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে কথা বলবে।
বিএনপির কয়েকজন নেতা সাম্প্রতিক সময়ে ভারত সফর করেছেন। এছাড়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসেরও বিজেপি সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এমনকি তিনি ৮ম সামাজিক ব্যবসা দিবস এবার বাংলাদেশে উদযাপন না করে ভারতের বেঙ্গালুরুতে উদযাপন করেছেন। এই যোগাযোগগুলো ভারত সরকারকে তথাকথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের ব্যাপারে আগ্রাসী ভূমিকা নিতে উৎসাহী করেছে কী না এই নিয়েও আওয়ামী লীগের মধ্যে আলোচনা রয়েছে। এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগের একটি অংশ মনে করছে, ভারত সরকারের সঙ্গে এই মুহূর্ত সম্পর্ক খারাপ হলে পরবর্তী নির্বাচনে জয়ী হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ শক্তিশালী সরকার গঠন করতে পারবে না। একটি দুর্বল সরকার গঠন করে দলটি ক্ষমতায় আসবে আর এই বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উত্থান-পতন ভূমিকা রাখতে পারে। এই কারণে আওয়ামী লীগ সরকার সতর্কতার সঙ্গে ইস্যুটি মোকাবেলা করতে চাইছে। সরকার এমন কিছুই করতে চাইছে না যাতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়ে।
নির্বাচনের আগে ভারত সরকারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক আওয়ামী লীগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৪ সালেও নির্বাচন সুসম্পন্ন করতে ভারতের সমর্থন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। সে সময় ভারত সরকারের সমর্থন নির্বাচনটিকে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেতে সাহায্য করেছিল। তাই হঠাৎ সামনে চলে আসা বিব্রতকর এই ইস্যুটিকে আওয়ামী লীগ সরকার কৌশলগত ভাবে সুরাহা করতে চাচ্ছে।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
বিএনপি আমির খসরু মির্জা ফখরুল রুহুল কবির রিজভী
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রথম দফায় ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। যথারীতি বিরোধী দল বিহীন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় জয়কার। আওয়ামী লীগের নেতারাই অধিকাংশ উপজেলায় নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু তারপরেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সন্তুষ্টি নেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি এবং শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিরক্তি কাজ করছে।
নানা কারণে উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক ফলাফল আনতে পারেনি বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে উদ্বিগ্ন এবং দল ও গণতন্ত্রের জন্য সামনের দিনগুলোতে আরও সংকট অপেক্ষা করছে বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সামনে পাঁচটি সংকটকে উন্মোচন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে-
১. ভোটার উপস্থিতি কম: উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার এবার সর্বনিম্ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যতগুলো উপজেলা নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে এবার ভোট পড়েছে সবচেয়ে কম। ২০০৮ এর ভূমিধস বিজয়ের পর প্রথম আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হয় ২০০৯ সালে। সেই উপজেলা নির্বাচনে ৬৮ ভাগের বেশি ভোট পড়েছিল। দ্বিতীয় দফায় ৬১ ভাগ ভোটার উপজেলা নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। ২০১৯ সালে এই হার ছিল ৪০ শতাংশের বেশি।
কিন্তু এবার নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ ভোটার উপজেলা নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। এটি কখনোই স্বস্তি দেওয়ার খবর নয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাধারণত ভোটাররা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দেয়। কিন্তু এবার উপজেলা নির্বাচনে ভোটাররা উৎসাহ নেয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগের যে রিজার্ভ সমর্থক বলে যারা পরিচিত সেই ভোটাররাও ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত ছিল না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নেতা কর্মীদেরকে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা, তারা যেন ভোটকেন্দ্রে যায় সে জন্য উৎসাহিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশ মাঠে প্রতিফলিত হয়নি। ভোটার উপস্থিতি কম থাকার ফলে আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তির কারণ।
২. অভ্যন্তরীণ কোন্দল: আওয়ামী লীগের জন্য এই নির্বাচন ছিল অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানোর মাধ্যম। এ কারণেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, দলীয় প্রতীক উপজেলা নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে না। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আশা করেছিলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের যে কোন্দল এবং বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিয়েছিল তার কিছুটা হলেও অবসান ঘটবে।
কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগকে আরও বিভক্ত করেছে। বিশেষ করে যে সমস্ত স্থানে স্বতন্ত্রদের সাথে আওয়ামী লীগের বিরোধ ছিল, সেই বিরোধে গুলো আরও সহিংস রূপ নিয়েছে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি অশনী সংকেত।
৩. কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করার প্রবণতা: আওয়ামী লীগের জন্য উপজেলা নির্বাচনে একটি বড় অস্বস্তির বিষয় ছিল কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করা। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ মাঠে প্রতিফলিত হয়নি। দু একজন মন্ত্রী-এমপি ছাড়া অধিকাংশই তাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন এবং প্রভাব বিস্তার করে জিতিয়ে এনেছেন। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি সতর্কবার্তা। কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করার এই প্রবণতা যদি বাড়তে থাকে সেটি ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের জন্য একটি খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।
৪. এলাকায় এলাকায় জমিদারতন্ত্র-পরিবারতন্ত্র কায়েম: এবার উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিরা তাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে মনোনয়ন দিয়েছেন, তারা এলাকায় এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করছেন। এর ফলে বিভিন্ন এলাকায় একটি গোষ্ঠীতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র বা জমিদারতন্ত্র কায়েম হচ্ছে। এটিও আওয়ামী লীগের জন্য একটি খারাপ সংবাদ বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
৫. অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনে অনীহা: আওয়ামী লিগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার নেতাকর্মীদেরকে বলেছিলেন যে- অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু দেখা গেছে, নির্বাচনে যারা শক্তিশালী প্রার্থী হয়েছেন তারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন। পেশিশক্তির প্রয়োগ ঘটিয়েছেন, কালো টাকা ছড়িয়েছেন। আর এগুলো আওয়ামী লীগের ইমেজ নষ্ট করেছে এবং জনগণের কাছে ভুল বার্তা দিয়েছে। এই সমস্ত অস্বস্তিগুলো উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। এখন ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ কীভাবে এই সংকটগুলো কাটিয়ে উঠবে, সেটাই দেখার বিষয়।
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
বিএনপিতে নতুন মহাসচিব নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বিভিন্ন জেলার স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে নৈশ বৈঠকের আয়োজন করছেন। এ পর্যন্ত নোয়াখালী, কুমিল্লা, সিলেট, বরিশালসহ অন্তত দশটি জেলায় এই ধরনের জুম বৈঠক আয়োজন করা হয়েছে। যে বৈঠকগুলোতে লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া সরাসরি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মী ছাড়াও ছাত্রদল, যুবদল, কৃষক দলের মতো বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ তারেক জিয়ার সঙ্গে কথা বলছেন।
প্রথম দফায় ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। যথারীতি বিরোধী দল বিহীন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় জয়কার। আওয়ামী লীগের নেতারাই অধিকাংশ উপজেলায় নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু তারপরেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সন্তুষ্টি নেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি এবং শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিরক্তি কাজ করছে।