নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৩০ পিএম, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
সাহিত্যানুরাগী হিসেবে সুনাম ছিল তাঁর। বেশ কিছু উপন্যাস আর কবিতাও লিখেছিলেন তিনি। তবে সব কিছু ছাপিয়ে যে পরিচয়টি বড় হয়ে উঠেছিল তা হলো, উদ্ভট ও নিষ্ঠুর এক স্বৈরশাসক। যিনি নিজ দেশেই রাসায়নিক গ্যাস ও বোমা বর্ষণ করে নির্দ্বিধায় লাখো সাধারণ মানুষ হত্যা করেছিলেন। বলা হচ্ছে, সাদ্দাম হোসেনের কথা। ইরাকের সমৃদ্ধির নায়ক বলা হয় তাঁকে, একই সঙ্গে ধ্বংসেরও।
নিজের ছেলেদের প্রতি অস্বাভাবিক স্নেহশীল ছিলেন সাদ্দাম হোসেন। ছোট ছেলে উদয় হোসেন এক বিয়ের অনুষ্ঠানে আনন্দ উদযাপন করতে গিয়ে গুলিবর্ষণ করেছিলেন। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছিল। এই অপরাধের জন্য সাদ্দাম তাঁর পুত্রকে হাস্যকর এক শাস্তি দিয়েছিলেন। উদয়ের রোলস রয়েস, ফেরারিসহ দামি কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
১৯৭৯ সালের ১৬ জুলাই ইরাকের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসেন সাদ্দাম হোসেন। পুরো নাম ছিলো সাদ্দাম হোসেন আব্দুল মজিদ আল তিকরিতি। তাঁর শাসনামলে দেশটি অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে। সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নতি ঘটে। তাঁর এক বড় সংস্কার ছিলো ইরাকের তেল সম্পদের জাতীয়করণ। যার ফলে দেশটির বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়েছিল এবং ব্যাপক সমৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছিল।
দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সাদ্দাম বিরোধীদের ওপরও দমন পীড়ন শুরু করেন। ক্ষমতাগ্রহণের পরপরই তিনি নতুন একটি বাহিনী গঠন করেছিলেন। এর কাজ ছিলো সরকারের জন্য হুমকিস্বরুপ বিভিন্ন ক্ষুদ্র গোষ্ঠী ও বাহিনীকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। তাঁর নির্দেশেই ১৯৭৪ সালে দেশটির দাওয়া পার্টির নেতাদের হত্যা করা হয়। এরপর ’৮০ সালে হাজার খানেক কুর্দি হত্যা এবং ’৮৮ তে রাসায়নিক হামলা চালিয়ে আনুমানিক পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লাখ মানুষ হত্যা করেন তিনি। ১৯৯০ সালে এই স্বৈরশাসকের নির্দেশে একটি নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। যার ফলে ‘মার্শ আরব’ নামক আদিবাসীগোষ্ঠীর বসতভিটা পানির নিচে তলিয়ে যায়।
১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত সাদ্দামের নেতৃত্বে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালিত হয়। প্রায় নয় বছর দীর্ঘস্থায়ী এ যুদ্ধে ইরাকের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। যুদ্ধের মূল কারণ হিসেবে সাদ্দামের উচ্চাভিলাষ ও আগ্রাসী মনোভাবকেই দায়ী করা হয়। বলা হয়ে থাকে, তাঁর স্বপ্ন ছিল পারস্য উপসাগরের ওপর নিজের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৯০ সালে কুয়েতে হামলা চালায় ইরাকি বাহিনী। মাত্র ১৩ ঘণ্টার মধ্যে দেশটির ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় তারা। সাদ্দাম দাবি করে বসেন, ঐতিহাসিকভাবেই এটি ইরাকের অংশ ছিল। কিন্তু ’৯১ এ মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোটের কাছে হার মেনে যুদ্ধ-বিরতিতে সম্মত হন তিনি।
ইরান এবং কুয়েত দু’টি দেশের ওপরেই অন্যায়ভাবে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিলেন সাদ্দাম হোসেন। বলা হয়ে থাকে, ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করে না। সীমান্ত বিরোধ, ইরাকের অভ্যন্তরে শিয়া জঙ্গিদের মদদ দেওয়া ও ইরাকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারিক আজিজের হত্যাচেষ্টাসহ আরও কিছু অবান্তর অভিযোগ দেখিয়ে দেশ দু’টিতে আক্রমণ চালিয়েছিলেন তিনি। ঠিক একইভাবে ইরাক আক্রমণের সময়ও তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ সাদ্দাম প্রশাসনের বিরুদ্ধে গণবিধ্বংসী অস্ত্র নির্মাণের মিথ্যা অভিযোগ তুলেছিলেন।
২০০৩ সালের ২০ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাকে আগ্রাসন শুরু হলে আত্মগোপনে চলে যান লৌহমানব খ্যাত সাদ্দাম। সেপ্টেম্বরে জন্মস্থান তিকরিতের একটি খামারবাড়ি সংলগ্ন ভূগর্ভস্থ গর্ত থেকে তাকে আটক করা হয়।
বলা হয়ে থাকে, নিরাপত্তার জন্য সাদ্দাম তাঁর মতো চেহারার বেশ কয়েকজনকে তৈরি করেছিলেন। মার্কিন বাহিনী তাঁকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়েছিল। এই বিশেষজ্ঞের প্রথম কাজ ছিল আটক ব্যক্তিই প্রকৃত সাদ্দাম কি না তা নিশ্চিত করা। জন নিক্সন নামের ওই বিশেষজ্ঞ ১৯৯৮ সালে সিআইএতে যোগদানের পর থেকেই সাদ্দামকে নিয়ে অধ্যয়ন শুরু করেছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর নিক্সন জানিয়েছিলেন, আমার দেখা মানুষদের মধ্যে সাদ্দামই সবচেয়ে সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তি। তাঁকে করা প্রতিটি প্রশ্নের জবাবে তিনি আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করতেন।
বন্দী অবস্থায় জীবনের শেষ সময়ে সাদ্দাম মার্কিন গায়িকা মেরি জে ব্লাইজার গান শুনতেন নিয়মিত। নিজের এক্সারসাইজ বাইকে চড়তেও পছন্দ করতেন তিনি। মার্কিন রক্ষীরা জানান, জীবনের শেষ দিনগুলোতে সাদ্দাম তাঁদের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করতেন। তাঁর ব্যবহার দেখে বোঝাই যেত না যে সাদ্দাম হোসেন কোনো এক সময়ে একজন নিষ্ঠুর শাসক ছিলেন।
কিউবান `কোহিবা` সিগার খাওয়ার খুব নেশা ছিল সাদ্দামের। বন্দি অবস্থায়ও তিনি ওই নেশা ছাড়তে পারেননি। অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে ভেজা ওয়াইপে জড়িয়ে একটা বাক্সে সেগুলো রাখতেন তিনি। কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রো তাকে সিগার খাওয়া শিখিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন সাদ্দাম।
বার্ডেনওয়ার্পার নামের একজন রক্ষী জানান, সাদ্দাম হোসেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আশা করতেন যে তাঁর ফাঁসি হবে না। নতুন করে কোনো নারীর সঙ্গে প্রেম করার ইচ্ছা পোষণ করতেন সাদ্দাম। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে আবারও বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল তাঁর।
বন্দিশালাতেও নাস্তার ব্যাপারে খুঁতখুঁতে স্বভাব ছিল সাদ্দামের। ডিমের অমলেট টুকরো হয়ে গেলে, সেটা আর খেতেন না তিনি।
২০০৬ সালের ডিসেম্বরে ঈদের দিনে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় সাদ্দামের। কিন্তু ইরাকের বহু মানুষ এখনো বিশ্বাস করে এই লৌহমানব এখনো বেঁচে আছেন। তাদের দাবি, সাদ্দাম মারা যায়নি। যাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে সে সাদ্দামের মতো দেখতে অন্য কেউ।
বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/জেডএ
মন্তব্য করুন
ইরান ইসলামি বিপ্লব ইব্রাহিম রাইসি
মন্তব্য করুন
ইব্রাহিম রাইসি ইরানের প্রেসিডেন্ট
মন্তব্য করুন
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহিয়ান ও পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নরসহ ৯ জন আরোহীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় চলছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা, না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড- এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে এটিকে হত্যাকাণ্ড বলা হচ্ছে। তারা মনে করছে, এটি দুর্ঘটনা নয়। তবে দুর্ঘটনাই হোক বা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডই হোক। এর সঙ্গে যে ইরানের অভ্যন্তরীণ কিছু ব্যক্তি জড়িত এ নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।
ইরানের গণমাধ্যম এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরাও বিশ্বাস করছেন যে, ইরানের ভিতর কিছু বিশ্বাসঘাতকদের সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। এই ঘটনার পর কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এরকম একটি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার কেন উড়ার সিদ্ধান্ত নিল? এই ব্যাপারে নিরাপত্তা ছাড়পত্র কে দিল সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ যেকোনো বিবেচনায় এই বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে হেলিকপ্টার উড্ডয়নের কথা নয়।
আল জাজিরার রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, ইরানের প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং গভর্নর এক হেলিকপ্টারে ওঠাটাও একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। কারণ এর আগে কখনোই ইরানের প্রেসিডেন্ট অন্য কারও সঙ্গে হেলিকপ্টারে ওঠেন না। তৃতীয়ত, যেখানে তাদের বহনকারী অন্য হেলিকপ্টারগুলো অন্যদিকে যাচ্ছিল সেখানে এই হেলিকপ্টারটি কেন গতিপথ পরিবর্তন করল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আর এ সবকিছু একটি পরিকল্পিত বলেই মনে করা হচ্ছে।
পরিকল্পিত ভাবার পিছনেও কারণ আছে। অতীতেও দেখা গেছে যে, এরকম বিমান বা হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার শত্রুকে দমন করেছে পাকিস্তানি জিয়াউল হক নিহত হয়েছিলেন এরকমই একটি বিমান দুর্ঘটনায়। পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে যে, সেটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই একটি পরিকল্পিত নীল নকশা এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূতকেও ওই দুর্ঘটনায় জীবন দিতে হয়।
এবার ইরানের যে ঘটনাটি ঘটল তার পিছনে সুপরিকল্পিত চক্রান্ত রয়েছে বলেই অনেকে মনে করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এখন বলছেন যে, এর পিছনে মোসাদের হাত রয়েছে। ইসরায়েলি এই গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই ইরানে পট পরিবর্তনের জন্য ভেতরে ভেতরে কাজ করছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের ভিতরে যে হিজাব বিরোধী আন্দোলন, সেই আন্দোলনেও মোসাদের হাত ছিল এবং মোসাদকে সহযোগিতা করেছিল সিআইএ- এমন তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ইরানকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য মোসাদ এবং সিআইএ বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেছে, ষড়যন্ত্র করছে- এমন প্রতিবেদনও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইরান, ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের মাথাব্যথা হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশটির মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন জঙ্গি সন্ত্রাসীদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়, অস্ত্র সরবরাহ করে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলে যে হামলা হামাস পরিচালনা করেছিল, তার পিছনে ইরানের মদত ছিল। ইরানের মাধ্যমেই মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে, এমন বক্তব্য মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা হরহামেশাই করে থাকেন। আর এ কারণে ইরানের পট পরিবর্তনের একটি পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ছিল।
এর আগেও ইরানের গোয়েন্দা প্রধানকে হত্যা করা হয়েছিল। যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সিআইএ এবং মোসাদ জড়িত ছিল বলে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এবারের এই ঘটনাটি সেরকমই কোন ঘটনা বলেই অনেকের স্থিরবিশ্বাস। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে ইরানের ভিতর একটি প্রতিবিপ্লব ঘটিয়ে উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেওয়ার একটা পরিকল্পনা চলছিল। এখন সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটানো হল বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর এখন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তিনি অত কট্টরপন্থী নন বলেই মনে করা হচ্ছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার অনেকটাই নমনীয় এবং ইরানের ভিতর এখন এরকম ব্যক্তির সংখ্যা আরও বেড়েছে বলেই কোন কোন বিশ্লেষক মনে করছেন। বিশেষ করে যদি ভিতরে শত্রু তৈরি করে প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা যায়, তাহলে ইরানে ইসলামী বিপ্লবী সরকারকে হটিয়ে দেওয়াটা খুব কঠিন কাজ নয়। মোসাদ এবং সিআইএ কি সেই পথেই এগোচ্ছে, এর উত্তর সময়ই বলে দিবে।
ইব্রাহিম রাইসি ইরান হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা মোসাদ সিআইএ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল
মন্তব্য করুন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কোয় নিয়োজিত ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালিকে ক্রেমলিনে ডেকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনা বিস্তারিত শুনেছেন। রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন।
কাজেম জালালি বলেন, 'রোববার রাশিয়ায় সরকারি ছুটি হওয়া সত্ত্বেও রাত ১০টার দিকে পুতিন বৈঠক করেন। এ সময় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তার আমন্ত্রণে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের প্রতিনিধি হিসেবে আমি বৈঠকে অংশগ্রহণ করি।'
কাজেম জালালি বলেন, বৈঠকের শুরুতেই পুতিন আমাকে বলেন, ইরানের প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় আমরা খুবই মর্মাহত। এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য যা দরকার হবে, তা আমরা করব। এ ঘটনায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন ও বিচলিত। যা কিছু প্রয়োজন, তার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি, এ বার্তা ইসলামিক রেভল্যুশনের সর্বোচ্চ নেতার কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করুন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলুসভ, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি সের্গেই শোইগু, সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব দ্য জয়েন্ট স্টাফ ভ্যালিরি গেরাসিমভ, বেসামরিক সুরক্ষা, জরুরি পরিস্থিতি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী আলেক্সান্দার কোরেনকোভ, প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ইগোর লেভিতিন ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
ইরান রাষ্ট্রদূত হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
মন্তব্য করুন
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির দাফন আগামীকাল মঙ্গলবার তাবরিজে অনুষ্ঠিত হবে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে। খবর বিবিসির
ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃৃত করে দেশটির গণমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি তার নিহত সফরসঙ্গীদের দাফনও হবে সেখানে।
এর আগে মরদেহগুলো তাবরিজের ফরেনসিক বিভাগে রাখা হবে।
প্রসঙ্গত, রবিবার সন্ধ্যায় তাদেরকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে দুর্ঘটনার শিকার হয়। তবে ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা এখনও জানা যায়নি।
স্থানীয় সময় সোমবার সকালে তাদের মৃত্যুর খবর জানায় 'তেহরান টাইমস ও মেহের নিউজ'সহ স্থানীয় আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে একই হেলিকপ্টারে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আব্দুল্লাহিয়ান। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন সেটিতে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম ইরনা জানিয়েছে, এই হেলিকপ্টারে পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালেক রহমাতি ও এই প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেমও ছিলেন। এছাড়াও অন্যদের মধ্যে প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষী দলের সদস্য মাহদি মুসাভি, হেলিকপ্টারের পাইলট, সহকারী পাইলট ও ক্রু সদস্য ছিলেন।
ইরান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি দাফন মৃত্যু
মন্তব্য করুন
১৯৭৯ সালে ইরানের ‘ইসলামি বিপ্লব’ সংঘটিত হয়েছিল। রেজা শাহ পাহলভির রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে যে ‘ইসলামি বিপ্লব’ ঘটানো হয়েছিল, সেটিকে বলা হয় ফরাসি এবং বলশেভিক বিপ্লবের পর ইতিহাসের তৃতীয় মহা জাগরণ, যেখানে জনগণ এককাট্টা হয়ে রেজা শাহ পাহলভির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছিল। এই সময় নির্বাসন থেকে ফিরে আসেন আয়াতুল্লাহ খোমেনি এবং খোমেনির নেতৃত্বে ইরান ইসলামি প্রজাতন্ত্রে রূপ গ্রহণ করে। কঠোর শরিয়া আইন অনুসারে ইরান পরিচালিত হতে থাকে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নতুন করে অশান্তি সৃষ্টির ইঙ্গিত দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্যের অস্থির পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়ে পড়বে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে আজ বলা হয়েছে যে, ইরানের এই ঘটনাটিকে ইরানবাসী কোনভাবেই স্বাভাবিক দুর্ঘটনা বলে মনে করছে না। তারা মনে করছেন, এটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো ঘটছে। এটির পেছনে ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জড়িত বলেও তারা ধারণা করছে। আর এই ধারণাকে পুঁজি করে রাইসির মৃত্যুর পরে যে আবেগ এবং ক্ষোভ সেটাকে কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উস্কানি এবং উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে বলে আল জাজিরায় কয়েকজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন। তারা মনে করছেন যে, ইরান যদি মনে করে এই ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং এই ঘটনা ঘটিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল, তাহলে তারা অবশ্যই পাল্টা প্রতিশোধ নেবে।
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহিয়ান ও পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নরসহ ৯ জন আরোহীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় চলছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা, না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড- এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে এটিকে হত্যাকাণ্ড বলা হচ্ছে। তারা মনে করছে, এটি দুর্ঘটনা নয়। তবে দুর্ঘটনাই হোক বা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডই হোক। এর সঙ্গে যে ইরানের অভ্যন্তরীণ কিছু ব্যক্তি জড়িত এ নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কোয় নিয়োজিত ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালিকে ক্রেমলিনে ডেকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনা বিস্তারিত শুনেছেন। রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন। কাজেম জালালি বলেন, 'রোববার রাশিয়ায় সরকারি ছুটি হওয়া সত্ত্বেও রাত ১০টার দিকে পুতিন বৈঠক করেন। এ সময় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তার আমন্ত্রণে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের প্রতিনিধি হিসেবে আমি বৈঠকে অংশগ্রহণ করি।'
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির দাফন আগামীকাল মঙ্গলবার তাবরিজে অনুষ্ঠিত হবে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে। খবর বিবিসির ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃৃত করে দেশটির গণমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি তার নিহত সফরসঙ্গীদের দাফনও হবে সেখানে। এর আগে মরদেহগুলো তাবরিজের ফরেনসিক বিভাগে রাখা হবে।