নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৩ এএম, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পূর্বের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের কারণে বাংলাদেশের তখনকার অর্থনৈতিক অবস্থান ছিল শিথিল। বলতে গেলে বাংলাদেশ খুব গরীব দেশ ছিল। সেসময় বাংলাদেশের বাজেটের প্রায় ৮০ ভাগই আসত বিদেশ থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্ব ব্যাংকসহ অন্যান্য দাতা দেশ ও সংস্থাগুলো তখন বাংলাদেশের নির্বাচন কেমন হবে, বাংলাদেশের এনার্জি পলিসি কেমন হবে, বাংলাদেশ কৃষিতে ভর্তুকি দিবে কিনা ইত্যাদি নানা বিষয়ে ওপর খবরদারি করত।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ হয়। সেসময়ে দুস্থ মানুষকে বিনামূল্যে খাবার খাওয়ানোর জন্য দেশে প্রায় ৬ হাজার লঙ্গরখানা খুলতে হয়েছিল। সেখানে প্রায় ৪৪ লাখ মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব হয়। তবে সরকার দেশে তীব্র দুর্ভিক্ষ হওয়া সত্ত্বেও খাদ্য শস্য আমদানিতে সাফল্য দেখাতে পারেনি। কারণ কিউবাতে পাট রপ্তানি করার অপরাধে যুক্তরাষ্ট্র তখন বাংলাদেশকে খাদ্য সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। ফলে ১৯৭৩ সালের তুলনায় ১৯৭৪ সালে কম খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র বারবার পাট রপ্তানি বন্ধে চাপ প্রয়োগ করলেও সরকার সেই চাপকে উপেক্ষা করে। বাণিজ্য নীতি ও পররাষ্ট্রনীতির কারণেই তখন এটা করা হয়েছিল বলে জানা যায়।
শুধু ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বব্যাংক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ নানা সময়ে বাংলাদেশের ওপর খবরদারি করেছে। নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে বাংলাদেশের ওপর নাক গলিয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এখন বাংলাদেশের বাজেটের প্রায় ৯৫ শতাংশ অভ্যান্তরীণ অর্থায়ন থেকে আসে। ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এখন একটা উদীয়মান দেশ। বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইস্যুসহ অন্যান্য ইস্যুগুলোতে দাতাগুলোর আর আগের মতো খবরদারি করার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশে দাতা দেশগুলোর সর্বশেষ খবরদারি ছিল ২০০৬ সালে। তারা বাংলাদেশে ১/১১ আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তবে এখন সময় পাল্টেছে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের প্রভূত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৫ থেকে বাংলাদেশ এখন ৭ এর ওপরে অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ এখন স্বাধীন সক্রিয় আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে নিজেদেরকে বিশ্বদরবারে কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। আর এই সময়ে যখন আমাদের রাজনৈতিক নেতারা কথায় কথায় দাতা দেশগুলোর শরণাপন্ন হয়, জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে নালিশ করে, সেটা বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুন্ন করে। জাতি হিসেবে আমাদের আত্মমর্যাদায় আঘাত করে। কারণ বাংলাদেশ এখন আর ওই দৈন্যদশার বাংলাদেশ না। বাংলাদেশকে এখন আর দাতা দেশগুলোর সহযোগিতার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আগামী নির্বাচন ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে জাতিসংঘে পৌঁছেছেন। বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সেখানে গিয়ে তারা নালিশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বিএনপির এই প্রতিনিধি দলের বৈঠক হবে। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানেও তারা নালিশ করবেন। এর আগে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল আমীর খসরু মাহমুদের নেতৃত্বে ভারতে গিয়েছিল। ভারতে গিয়ে তারা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে নিয়ে নালিশ করেছিল। তারা কয়েকদিন পরপরই বিভিন্ন কূটনীতিকদের ডাকে এবং ডেকে নালিশ করে। এটা বাংলাদেশের জন্য ভুল রাজনীতি। কোনো আত্মমর্যাদাশীল দেশের বিরুদ্ধে বিদেশীদের কাছে এরকম বলা উচিত না।
ভারতের রাজনীতিতেও নানা ধরনের সংকট আছে। নানা ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়াদিসহ অনেক ধরনের মতোবিরোধ আছে। তবে দেশের প্রশ্নে তারা কিন্তু এক। দেশের ব্যাপারে তারা বাইরের কাউকে নাক গলাতে দেয় না। এই শিক্ষাটা আমাদের নেওয়া উচিত।
গণতন্ত্রকে যদি প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তবে আমাদের দেশ আমাদের মতো করেই পরিচালনা করতে হবে। একটা গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থার মধ্যে আনতে হবে। আমাদের মারামারি, কটুক্তি কিংবা মতোবিরোধ আমাদের দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। বাইরের কাউকে ডেকে এনে নাক গলানোর সুযোগ দেওয়া যাবে না। কোনো মর্যাদাশীল দেশ এটা করে না। কোনো মর্যাদাশীল দেশের রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি এটা করে না। আমাদের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের এই বোধদয়টা কবে হবে? কবে তারা আমাদের সমস্যাগুলোকে আমাদের মতো করে সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেবে? যারা বাইরে গিয়ে অভিযোগ করে তারাই যে ছোট হয় এটা তারা কবে বুঝবে?
বাংলা ইনসাইডার/বিপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ দলীয় কোন্দল
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
রাজনীতিতে প্রায় পরিত্যক্ত আবর্জনার ডাস্টবিনে পড়ে থাকা মাহমুদুর রহমান মান্না নিজের ওজন বাড়াতে এবং রাজনীতিতে নিজের অবস্থান জানান দেওয়ার জন্য নতুন স্টান্টবাজি গ্রহণ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, নির্বাচনের আগে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে মন্ত্রী হওয়ার অফার দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কী স্বেচ্ছা নির্বাসনে গেলেন? গতকাল তিনি ওমরা পালন শেষে দেশে ফিরেছেন। দেশে ফেরার পরেও সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তাঁর কোন উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়নি। তিনি ছিলেন প্রচন্ড বিরক্ত এবং অনুৎসাহী। বারবার সাংবাদিকদের তিনি অনুরোধ করেছিলেন তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। এরপর তিনি বাড়িতে গিয়েছেন এবং সেখানে রীতিমতো নিজেকে গৃহবন্দি করে রেখেছেন। আজ সারাদিন দলের নেতাকর্মীরা তাঁর সঙ্গে কোন যোগাযোগ করতে পারেননি। এমনকি ফোন করা হলেও তিনি ঘুমিয়ে আছেন, বিশ্রামে আছেন কিংবা পরে ফোন করুন- এরকম বক্তব্য পাওয়া গেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই নীরবতা বিএনপির মধ্যে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
একের পর এক ভুল কৌশল বিএনপির রাজনীতির অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে। এবার উপজেলা নির্বাচনেও বিএনপি যে কৌশল গ্রহণ করেছিল, প্রথম দফা ভোটগ্রহণের পর সেই কৌশল ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপির ভোট বর্জন যেমন সাধারণ মানুষ সাড়া দেয়নি ঠিক তেমনি ভাবে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীরাও নির্বাচনে একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে যাননি। সাত জন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এর ফলে আগামী ধাপগুলোতে যারা বিএনপির পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং যারা দল থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন তারা আবার নতুন করে উৎসাহ পাবেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাবেন। এর ফলে বিএনপির বহিষ্কার কৌশল ব্যর্থ হয়ে যাবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।