নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৩১ পিএম, ১০ নভেম্বর, ২০১৮
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যদি অংশগ্রহণ করে তবে একটি দল বিজয়ী ও আর একটি দল প্রধান বিরোধী দল হবে এটা নিশ্চিত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমরা ৯১’ এর পর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক গণতন্ত্রের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। তবে, প্রতিবারই নির্বাচনে দুইটি প্রধান দল একক ক্ষমতাবলে ক্ষমতায় আসেনি। ক্ষমতায় আসতে সাহায্য নিয়েছে তৃতীয় শক্তির।
৯১’ এর নির্বাচনে বিএনপিকে জামাতের উপর ভর করে ক্ষমতায় আসতে হয়েছিল। তৃতীয় শক্তি হিসেবে জামাতের আবির্ভাব হয়েছিল তখন। একইভাবে, ৯৬’এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জাতীয় পার্টির সাহায্য নিতে হয়েছিল। শুধু তাই নয় জাতীয় পার্টির নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে মন্ত্রিসভায় নিয়ে সরকার গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি ঐ সময় তৃতীয় পার্টির ভূমিকা পালন করেছিল। আবার, ২০০১-এর নির্বাচনে জামাত এসেছিল তৃতীয় শক্তি হিসেবে। জামাতকে নিয়েই ক্ষমতায় বসেছিল বিএনপি। এদিকে ২০০৮-এর নির্বাচনে জামাতকে পিছে ফেলে তৃতীয় শক্তির অবস্থান আবার দখলে নেয় জাতীয় পার্টি। ২০১৪-এর নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন থেকে বঞ্চিত হয় দেশবাসী।
এবারের নির্বাচনের তাৎপর্যপূর্ণ দিক হচ্ছে, জামাতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় প্রতীক হারিয়েছে দলটি। এরফলে, জামাত এখন আর নিজস্ব পরিচয়ে নির্বাচন করতে পারবে না। সেই সঙ্গে, জঙ্গিবাদ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়ার ফলে জামাত আর আগের অবস্থানেও নেই। এই কারণে জামাতের তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই, এবারের নির্বাচনে কে ক্ষমতায় আসবে, কে বিরোধী দল হবে এর চেয়ে চিত্তাকর্ষক বিষয় হচ্ছে রাজনীতির মাঠে তৃতীয় শক্তি হিসেবে কার আবির্ভাব ঘটে?
তৃতীয় শক্তি হিসেবে জাতীয় পার্টির পাশাপাশি বিকল্পধারা বড় সম্ভাবনার একটি ক্ষেত্র তৈরি করেছে। কেননা বিকল্পধারা মধ্যে বিএনপিসহ আওয়ামী লীগের পক্ষ ও বিপক্ষের শক্তি রয়েছে।
এদিকে, বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে রাজনীতিতে টিকে আছে বামদলগুলো। এবার যদি তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তবে তৃতীয় শক্তি হিসেবে তাদের এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু তা ভোটের মাধ্যমেই দেখা যাবে।
সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি চোখে পড়ার মতো দিক হচ্ছে, খেলাফত মজলিশসহ ইসলামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। গত কয়েকটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তারা ভালো ফলাফলও করেছে। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ জায়গাগুলোতে খেলাফত মজলিশ তৃতীয় অবস্থান দখল করেছে। যদিও বাংলাদেশে এখনো একটি জনগোষ্ঠী আছে, যারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে প্রাধান্য দেয়, যারা ইসলামী মনস্ক ধ্যান ধারণা পোষণ করে, এদের সংখ্যা কিন্তু একেবারেই কম নয়। শেষমেশ জামাতকে যদি নির্বাচন করতে হয় তবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়েই করতে হবে। সেক্ষেত্রে বলা যেতেই পারে, তাদের এ ভোটগুলো জামাতের পক্ষে যাচ্ছেনা। সুতরাং, এবারের নির্বাচনে খেলাফত মজলিশসহ ইসলামী দলগুলো কোন বিস্ময় নিয়ে আবির্ভাব হয় কিনা এটাই এখন দেখার বিষয়।
যদিও একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তৃতীয় শক্তির উত্থান, পতন ও বিকাশ ঘটে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তি কখনোই সুবিধা করতে পারেনি। আবার প্রধান দুইটি দল সবসময়ই এই তৃতীয় শক্তির উপর নির্ভর করেছে। সেইসঙ্গে সুবিধামতো করেছে ব্যবহার। আমরা বারবার দেখেছি, জামাত ও জাপার মধ্যে তৃতীয় শক্তির অদল-বদল হয়েছে। এবারের নির্বাচনে জামাত থাকছে না, সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি, বিকল্পধারা নাকি খেলাফত মজলিশের মতো ইসলামী কোন দলের তৃতীয় শক্তি হিসেবে উত্থান হয়, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহল ব্যাপক আগ্রহ ব্যাপক।
বাংলা ইনসাইডার/বিকে/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ দলীয় কোন্দল
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
রাজনীতিতে প্রায় পরিত্যক্ত আবর্জনার ডাস্টবিনে পড়ে থাকা মাহমুদুর রহমান মান্না নিজের ওজন বাড়াতে এবং রাজনীতিতে নিজের অবস্থান জানান দেওয়ার জন্য নতুন স্টান্টবাজি গ্রহণ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, নির্বাচনের আগে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে মন্ত্রী হওয়ার অফার দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কী স্বেচ্ছা নির্বাসনে গেলেন? গতকাল তিনি ওমরা পালন শেষে দেশে ফিরেছেন। দেশে ফেরার পরেও সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তাঁর কোন উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়নি। তিনি ছিলেন প্রচন্ড বিরক্ত এবং অনুৎসাহী। বারবার সাংবাদিকদের তিনি অনুরোধ করেছিলেন তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। এরপর তিনি বাড়িতে গিয়েছেন এবং সেখানে রীতিমতো নিজেকে গৃহবন্দি করে রেখেছেন। আজ সারাদিন দলের নেতাকর্মীরা তাঁর সঙ্গে কোন যোগাযোগ করতে পারেননি। এমনকি ফোন করা হলেও তিনি ঘুমিয়ে আছেন, বিশ্রামে আছেন কিংবা পরে ফোন করুন- এরকম বক্তব্য পাওয়া গেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই নীরবতা বিএনপির মধ্যে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
একের পর এক ভুল কৌশল বিএনপির রাজনীতির অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে। এবার উপজেলা নির্বাচনেও বিএনপি যে কৌশল গ্রহণ করেছিল, প্রথম দফা ভোটগ্রহণের পর সেই কৌশল ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপির ভোট বর্জন যেমন সাধারণ মানুষ সাড়া দেয়নি ঠিক তেমনি ভাবে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীরাও নির্বাচনে একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে যাননি। সাত জন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এর ফলে আগামী ধাপগুলোতে যারা বিএনপির পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং যারা দল থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন তারা আবার নতুন করে উৎসাহ পাবেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাবেন। এর ফলে বিএনপির বহিষ্কার কৌশল ব্যর্থ হয়ে যাবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।