নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৮
ঘটনাটি ১৯৯১ সালের। সদ্য এরশাদের পতন হয়েছে। বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছে। দেশজুড়ে নির্বাচনের উৎসব চলছে। নির্বাচনে পরিষ্কার ফেবারিট আওয়ামী লীগ। ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে আওয়ামী লীগের নেতাদের চোখে মুখে ক্ষমতার খোয়াব। ক্ষমতায় গেলে কে কোন দপ্তর নেবেন তা নিয়ে আলোচনা। এ সময় জাসদের তাত্ত্বিক হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান, এক আড্ডায় বলছিলেন ‘বিএনপির জন্ম ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। ওরা ষড়যন্ত্র বোঝে। ষড়যন্ত্র সফর হলে নির্বাচনে কি হয় কে জানে? ৯১ এর ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে নাটকীয়, অবিশ্বাস্য ভাবে জয়ী হয়েছিল বিএনপি।
আজ মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে সিরাজুল আলম খানের সেই কথাটি মনে পড়ল। বিএনপির কূটচাল এবং প্রাসাদ রাজনীতির দক্ষতার প্রমাণ দেখল জাতি।
আসুন দেখে নেওয়া যাক বিএনপির কূটকৌশলগুলো:
১. আওয়ামী লীগকে বোকা বানাতে এবং অপ্রস্তুত রাখতে বিএনপি বারবার বলছিল নির্দলীয় সরকার এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। আসলে এটা ছিল বিএনপির একটা কূটকৌশল। এর ফলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যতটা প্রস্তুতি নেওয়া দরকার ছিল ততটা নেয়নি।
২. বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন ছিল রাজনৈতিক কূটকৌশল এবং ষড়যন্ত্রের আরেক বড় প্রমাণ। যেহেতু তাদের সঙ্গে জামাতের সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন মহলের নাক সিটকানো আছে, তাই তারা ভাড়া করলেন সুশীল সমাজের পুরোহিত ড. কামাল হোসেনকে। জামাতকে এক বগলে আর ড. কামালকে আরেক বগলে রাখার ‘ম্যাজিক’ কেবল কূট রাজনীতিতেই সম্ভব।
৩. এক ড. কামালকে সামনে রেখে বিএনপি যুদ্ধাপরাধী, সন্ত্রাসী, জঙ্গি সব জায়েজ করে নিলো। সুশীল এবং যুদ্ধাপরাধীরা বিএনপির চাণক্য কূটনীতিতে এক ঘাটে জল খাচ্ছে দিব্বি।
৪.এরপর বিএনপি হেফাজতকে আওয়ামী লীগের পিছনে লেলিয়ে দিলো। হেফাজতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মাখামাখি থেকে হতাশ হলেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ। বিএনপি জানে, হেফাজত আর যাই হোক আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হবে না।
৫. সর্বশেষ চমক হিসেবে, এরশাদকে আওয়ামী লীগ থেকে আলাদা করলো বিএনপি। চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্রের এর চেয়ে বড় নজির আর ক`টা পাওয়া যাবে?
পাদটীকা: অনেকেই বলছে ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। যারা আওয়ামী লীগের নামে গলা ফাটাচ্ছে। যারা নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জেতানোর ঠিকা নিয়েছেন তাদের অনেকেই নাকি শেষ পর্যন্ত বিএনপির পক্ষে কাজ করার ফন্দি এঁটেছেন। হয়তো এটা স্রেফ গুজব। কিন্তু বাংলাদেশ এক বিচিত্র দেশ। এদেশে গুজবগুলো কীভাবে যেন সত্য হয়ে ধরা দেয়। নির্বাচনের মাঠে ‘ষড়যন্ত্রের ভিটামিনে’ বিএনপি ক্রমশ: বলশালী হয়ে উঠেছে।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রথম দফায় ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। যথারীতি বিরোধী দল বিহীন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় জয়কার। আওয়ামী লীগের নেতারাই অধিকাংশ উপজেলায় নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু তারপরেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সন্তুষ্টি নেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি এবং শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিরক্তি কাজ করছে।
নানা কারণে উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক ফলাফল আনতে পারেনি বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে উদ্বিগ্ন এবং দল ও গণতন্ত্রের জন্য সামনের দিনগুলোতে আরও সংকট অপেক্ষা করছে বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সামনে পাঁচটি সংকটকে উন্মোচন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে-
১. ভোটার উপস্থিতি কম: উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার এবার সর্বনিম্ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যতগুলো উপজেলা নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে এবার ভোট পড়েছে সবচেয়ে কম। ২০০৮ এর ভূমিধস বিজয়ের পর প্রথম আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হয় ২০০৯ সালে। সেই উপজেলা নির্বাচনে ৬৮ ভাগের বেশি ভোট পড়েছিল। দ্বিতীয় দফায় ৬১ ভাগ ভোটার উপজেলা নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। ২০১৯ সালে এই হার ছিল ৪০ শতাংশের বেশি।
কিন্তু এবার নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ ভোটার উপজেলা নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। এটি কখনোই স্বস্তি দেওয়ার খবর নয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাধারণত ভোটাররা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দেয়। কিন্তু এবার উপজেলা নির্বাচনে ভোটাররা উৎসাহ নেয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগের যে রিজার্ভ সমর্থক বলে যারা পরিচিত সেই ভোটাররাও ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত ছিল না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নেতা কর্মীদেরকে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা, তারা যেন ভোটকেন্দ্রে যায় সে জন্য উৎসাহিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশ মাঠে প্রতিফলিত হয়নি। ভোটার উপস্থিতি কম থাকার ফলে আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তির কারণ।
২. অভ্যন্তরীণ কোন্দল: আওয়ামী লীগের জন্য এই নির্বাচন ছিল অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানোর মাধ্যম। এ কারণেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, দলীয় প্রতীক উপজেলা নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে না। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আশা করেছিলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের যে কোন্দল এবং বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিয়েছিল তার কিছুটা হলেও অবসান ঘটবে।
কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগকে আরও বিভক্ত করেছে। বিশেষ করে যে সমস্ত স্থানে স্বতন্ত্রদের সাথে আওয়ামী লীগের বিরোধ ছিল, সেই বিরোধে গুলো আরও সহিংস রূপ নিয়েছে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি অশনী সংকেত।
৩. কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করার প্রবণতা: আওয়ামী লীগের জন্য উপজেলা নির্বাচনে একটি বড় অস্বস্তির বিষয় ছিল কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করা। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ মাঠে প্রতিফলিত হয়নি। দু একজন মন্ত্রী-এমপি ছাড়া অধিকাংশই তাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন এবং প্রভাব বিস্তার করে জিতিয়ে এনেছেন। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি সতর্কবার্তা। কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করার এই প্রবণতা যদি বাড়তে থাকে সেটি ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের জন্য একটি খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।
৪. এলাকায় এলাকায় জমিদারতন্ত্র-পরিবারতন্ত্র কায়েম: এবার উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিরা তাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে মনোনয়ন দিয়েছেন, তারা এলাকায় এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করছেন। এর ফলে বিভিন্ন এলাকায় একটি গোষ্ঠীতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র বা জমিদারতন্ত্র কায়েম হচ্ছে। এটিও আওয়ামী লীগের জন্য একটি খারাপ সংবাদ বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
৫. অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনে অনীহা: আওয়ামী লিগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার নেতাকর্মীদেরকে বলেছিলেন যে- অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু দেখা গেছে, নির্বাচনে যারা শক্তিশালী প্রার্থী হয়েছেন তারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন। পেশিশক্তির প্রয়োগ ঘটিয়েছেন, কালো টাকা ছড়িয়েছেন। আর এগুলো আওয়ামী লীগের ইমেজ নষ্ট করেছে এবং জনগণের কাছে ভুল বার্তা দিয়েছে। এই সমস্ত অস্বস্তিগুলো উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। এখন ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ কীভাবে এই সংকটগুলো কাটিয়ে উঠবে, সেটাই দেখার বিষয়।
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রথম দফায় ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। যথারীতি বিরোধী দল বিহীন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় জয়কার। আওয়ামী লীগের নেতারাই অধিকাংশ উপজেলায় নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু তারপরেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সন্তুষ্টি নেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি এবং শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিরক্তি কাজ করছে।