নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৯
এখন পর্যন্ত যা খবর, তাতে আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নেবে না বিএনপি। তৃণমূলের তারেক জিয়াপন্থী নেতাদের ইচ্ছা পূরণের মানসে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় এই সিদ্ধান্তকে বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সিদ্ধান্ত বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তাঁদের কারো কারো দাবী হচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অজস্র মামলা হয়েছে, এখন নতুন করে এই নির্বাচনে গেলে হয়ত আরো অনেক মামলা হবে৷ পাশাপাশি এই সরকারের অধীনে যে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, সেটাও ৩০ ডিসেম্বরের ভোটের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে৷ রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে (!) গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিও করেছেন তাঁরা’৷ পুরাতন স্টাইলে ‘ঈদের পরেই তুমুল আন্দোলন’ করে সরকারের পতন ঘটানো হবে বলে বিএনপি’র ‘জনবিচ্ছিন্ন আবাসিক নেতা’দের বিশ্বাস।
ঢাকায় বসে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা আর রিপোর্ট পড়ে আর বছরে ৩/৪ বার গ্রামে গিয়ে ঘুরে এসে গ্রাম উন্নয়ন বা স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাত একাধিক বিজাত (বিএনপি-জামায়াত) ঘরণার বুদ্ধিজীবীও তারেক রহমানের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলছেন বিদেশী খয়রাতি টাকার লোভে। এবার এই খেলাটা একটু ভিন্ন বলে অনেকেই মনে করছেন। কারণ সবাই জানেন যে, নির্বাচন এলে বড় কোন দলের তৃণমূলের নেতারা তা উপেক্ষা করতে পারেন না। কারণ গ্রামীন জীবনের নানা সমস্যার জন্য তাদের প্রশাসনিক সহায়তা লাগে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকলে তা করা সম্ভব নয়। তাই নির্বাচন এলে বড় কোন দলের তৃণমূলের নেতারা নির্বাচন না করে পারেন না। সতন্ত্র হয়ে হলেও নির্বাচন করা লাগে। কেন তা করতে হয় ঢাকায় বসে পত্রিকা ও রিপোর্ট পড়া স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞগণ তা অনুধাবন করতে পারেন না।
এই প্রসঙ্গে একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। মনে করুণ একদল গ্রাম উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশের কোন গ্রামীণ জীবনের বাস্তব অবস্থা দেখতে গ্রামে গেলেন। তাঁরা কোন গরীব কৃষকের বাড়িতে থাকবেন সেটা আগে থেকেই কৃষকেরা জেনে যান। তাই ঐ কৃষকের বাড়ির আঙ্গিনা হয় পরিষ্কার, বিছানাপত্র হয় তুলনামূলক ঝকঝকে। টাকা ধার করে হলেও ৫/৭ দিনের জন্য তাঁরা অতিথিকে ভালো খাবার দেন পরিস্কার থালা বাসনে, গ্লাসে। যা তাদের দৈনন্দিন জীবনের বাস্তব চিত্র নয়। অতিথীপরায়ণ বাংগালী যে এটা করেন তা ঐ বিশেষজ্ঞদের পুরোপুরি জানা নেই। তাঁরা হয়তো সেই বিখ্যাত ‘ঝগড়াপুর’ বইটি পড়েই বসে আছেন যা ৫০ বছর আগের গ্রামের চিত্র, বর্তমানের নয়। ১৯৭১ উত্তর গ্রাম বাংলার চিত্র মানুষের আচরণ এখন অনেক বদলে গেছে। মানুষের মনের কথা বা তাঁর মুখ থেকে সত্য বের করাও ৫০ বছর আগের মত সহজ নয়।
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস বলে যে, বিএনপি’র একটা বিরাট অংশ নিয়েই ১৯৮৬ সালে লেঃ জেঃ এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হয়। এসময় অবস্থা বেগতিক দেখে ১৯৮৪ সালের ১০ মে বেগম খালেদা জিয়া বিএনপি’র চেয়ারপার্সন নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন। তখন দলে সিনিয়র নেতার সংখ্যা ছিল খুব কম, কিন্তু তাদের ছাত্র সংগঠন সাংগঠনিক ও আর্থিকভাবে বেশ শক্তিশালী ছিল। কারণ বাম ছাত্র নেতা বাব্লুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির ছাত্রফ্রন্ট জাতীয় ছাত্র সমাজে বামের স্থান পান বেশী, ছাত্রদলের নেতাদের নেওয়া হয় কম।
বিএনপি যতই বলুক না কেন যে, তাদের দল আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নেবে না বাস্তবে তাঁর উল্টা হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিএনপি অংশ না নিলে বিএনপি কর্মীরা দলে দলে কিছুটা সমমনা অন্য রাজনৈতিক দলে (যেমন বি চৌধুরীর দল) যোগ দিয়ে নির্বাচন করবেন। পত্রিকার খবরে এমন তথ্য উঠেও এসেছে ইতোমধ্যে।
১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত টানা প্রায় ৯ বছর ক্ষমতায় থেকে জাতীয় পার্টির গাংগঠনিক ও আর্থিকভাবে একটা শক্তিশালী দলে পরিণত হয়। যে কারণে ১৯৯০ সালের গনুভ্যত্থানে লেঃ জেঃ এইচ এম এরশাদ তাঁর পুলিশ বাহিনী এমনকি সেনাবাহিনী নামিয়েও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি তখনকার দিনের সবচেয়ে শক্তিশালী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫ দল আর তাঁর ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র লীগের নেতৃত্বে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের দুরবার আন্দোলনের মুখে। সেখানে ছাত্রদলের ভূমিকা কতটুকু ছিল তা যারা ১৯৯০ সালের গন অভ্যত্থান দেখেছেন তাঁরা জানেন।
১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত টানা মিথ্যাচার, নানা ধরণের পত্র পত্রিকা ও বই প্রকাশের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ তথা বঙ্গবন্ধুর নামে যে মিথাচার হয় তা দারা তৎকালীন তরুণ সমাজ প্রভাবিত হন, যাদের বয়স এখন ৫০এর কাছাকাছি। কিন্তু যাদের বয়স এখন ১৬ থেকে ৩৫ এর মধ্যে তাদের অনেকেই এখন শিক্ষিত আর তাদের আছে অবাধ তথ্য প্রবাহে নিজেদের সামিল করার সুযোগ। সিটিজেন জার্নালিজমের কল্যাণে এরা সবাই এখন সত্য জানতে পারেন, যদি চান। আকাশ সংস্কৃতির এই যুগে, গত ১০ বছরের মত আগামী ৫ বছরে যদি এই অবাধ তথ্য প্রবাহ আর সিটিজেন জার্নালিজম নিশ্চিত করা যায় তবে তাঁর কল্যাণে বাংলাদেশের তরুণ ও যুব সমাজকে আর মিথ্যা দিয়ে প্রভাবিত করা যাবে না। তাঁরা তাদের পরবারের মাঝেও সত্য প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হবেন।
উল্লেখিত অবস্থার প্রেক্ষাপটে আগামী ফেব্রুয়ারিতেই অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা নির্বাচন ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বিএনপি বর্জনের ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তা তাঁর দলের নেতা কর্মীরা সবাই মানবেন না। কারণ তাঁরা জানেন যে, আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচন প্রতিহত করার মত সাংগঠনিক শক্তিও বিএনপি’র এখন নেই। আর রাজনীতি করতে হলে নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। নির্বাচন ছাড়া কর্মী সমর্থকদের ধরে রাখা যায় না। বিএনপি’র শক্তি যা ছিল তারেক জিয়া, তাঁর মফঃস্বল এজেন্ট আর কিছু সিনিয়র নেতার মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে তা প্রায় শেষের দিকে। এমতবাস্থায় আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিলেই বিএনপি কিছুটা হলেও তাঁর ঘোর গুছাতে পারবে, তা না হলে নয়। ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কোন নির্বাচন বাদ দেয় নি। ১৯৯৬ সালে তখনই নির্বাচন বর্জন করেছে যখন তা বাতিল করে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা শক্তি অর্জন করেছে। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস অন্ততঃ তাই বলে।
যারা মনোনয়ন বানিজ্যে সঙ্গী ছিলেন তাদের দেওয়া তথ্যে দলের নেতা কর্মী আর সাংগঠিনিক শক্তি সম্পর্কে ভুল তথ্য থাকে তা হয়তো জনাব তারেক জিয়া বুঝতে পারেন নি বা বুঝতে চান না। উনার বানিজ্যে হয়ে গেছে, তাই “নিজের ধান পেকে গেছে, মারুক খরা” মনভাব নিয়ে চলছেন হয়তো তিনি। নিজেদের শক্তি সম্পর্কে আর প্রতিপক্ষের সক্ষমতা আমলে না নিয়ে আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার তারেক জিয়া সিদ্ধান্ত হবে চরম আত্মঘাতী। তারেক জিয়ার স্থানীয় সরকারগুলকে বর্জনের এই সিদ্ধান্ত বিএনপিকে মুসলীম লীগ বানাবে, তারা হবে ইতিহাসের অংশ, সেদিন আর বেশি দূরে নয়।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১৫ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১২ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:০৭ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতে বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক অভাবনীয়, অনন্য এবং যুগান্তকারী একটি মডেল। শিশু স্বাস্থ্য, মাতৃ স্বাস্থ্য এবং কিশোরীদের স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। নবজাতকের মৃত্যু, মাতৃ মৃত্যু কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনুসরণ শুরু করেছে। গত বছর ১৭ মে কমিউনিটি ক্লিনিক ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিসিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়। ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ সারা বিশ্বের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশী জনগণের জন্য ‘আলোক বর্তিকা’।
আজকে আমরা ১৭ মে নিয়ে কথা বলছি। যেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। আবার গত বছর এই দিনে তাঁর চিন্তা প্রসূত কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজকে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি, উন্নয়নশীল বাংলাদেশের কথা বলছি, যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি, একদিন উন্নত বাংলাদেশ হব বলে স্বপ্ন দেখছি এই সবকিছু শেখ হাসিনার স্বপ্ন, শেখ হাসিনার ইনিশিয়েটিভ। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৭৮১ সালে পলাশি যুদ্ধে ইতিহাসের ঘৃণিত সেনাপতি মির্জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাব সিরাজ উদ্দৌলার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ২০০ বছরের গোলামী আমাদের ললাটে এসেছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হলেও বাঙালী এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা পায়নি। যার পটভূমিতে বীরদর্পে আবির্ভূত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ থেকে ৭৫’ বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে স্বাধীনতার লাল পতাকা উড়েছিল বাঙালী আশায় বুক বেধেছিল।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বিয়োগান্তের ঘটনায় জাতি ছিল দিক নির্দেশনাহীন। নারকীয় এই ঘটনায় জনগণ হয়ে পড়েন দিশেহারা। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করার কোন শক্তি সাহস ছিল না। দলের অনেক বড় বড় নেতাও ছিলেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ধানমন্ডির ৩২ বাড়ি ছিল কবরের নীরবতা। সমগ্র জাতি তখন অন্ধকারে। সামরিক বুটে পিষ্ঠ গণতন্ত্র। নির্বাসনে সংবিধান আর মানুষের মৌলিক অধিকার। বাক স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। এমনকি বঙ্গবন্ধু নাম উচ্চারণ ছিল নিষিদ্ধ।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের মৌলিক চরিত্রকেই বদলে ফেলা হয়। বিশেষ করে পাকিস্তানি ধারায় সামরিক শাসনের সংস্কৃতির প্রবর্তন ঘটে দেশে। সাম্প্রদায়িকতা ফিরে আসে রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে। একের পর এক স্বপ্নভঙ্গের ঘটনা ঘটতে থাকে দেশে। বাঙালি জাতির জীবনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। ঠিক এমন প্রতিকূল সময় ১৯৮১ সালের ১৭ মে সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর রক্তস্নাত মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন বাঙালির মুক্তির মহানায়কের যোগ্য উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনা।