নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
২০০৮ এর নির্বাচনে বিজয়ের পর আওয়ামী লীগে আওয়াজ উঠেছিল ‘কমিউনিস্ট’ খেদাও। আওয়ামী লীগ সংগঠনের মধ্যে ‘কমিউনিস্ট’রা অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে এসে ‘কমিউনিস্ট’রা আওয়ামী লীগ থেকে বিতারিত প্রায়। আওয়ামী লীগের মধ্যে হাতেগোণা যে কয়েকজন ‘কমিউনিস্ট’ আছেন তাঁরাও দলের মধ্যে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন। আওয়ামী লীগে যারা ছাত্র ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টি বা ন্যাপ থেকে যোগ দিয়েছেন তাদেরকেই আওয়ামী লীগের লোকজন ‘কমিউনিস্ট’ বলে। ২০০৮’র নির্বাচনের পর ছাত্র ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টি বা ন্যাপ থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া লোকজনের প্রভাব প্রতিপত্তি অনেক বেড়েছিল বলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন এবং ২০১৯ সালে এসে সেই ‘কমিউনিস্ট’ দূর্গের পতন হয়েছে বলে নেতাকর্মীরা মনে করেন।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘কমিউনিস্ট’ পার্টির সম্পর্ক ঐতিহাসিক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যখন সারাদেশ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছিল সেই মুক্তিযুদ্ধে কমরেড মনি সিংয়ের নেতৃত্বে ‘কমিউনিস্ট’ পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিল। সোভিয়েতপন্থি বামদলগুলো (কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ) তাঁরা সম্মিলিতভাবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সংগ্রাম করেছিল। ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ ‘কমিউনিস্ট’ দেশগুলো যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে দ্রুত সমর্থন দিয়েছিল এর পেছনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল এদেশের কমিউনিস্ট পার্টি এবং বাম ঘরানার দলগুলো। জাতির পিতার নেতৃত্বে এদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন, ন্যাপ স্লোগান তুলেছিল যে, ‘লাখো শহীদের মুক্ত স্বদেশ, এসো দেশ গড়ি বঙ্গবন্ধুর ডাকে।‘ তাঁরা এদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে কাজ করেছিল। ’৭৫ সালে জাতির পিতা যখন বাকশাল গঠন করে তখন কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ তাঁদের দল বিলোপ করে এই বাকশালে যোগ দিয়েছিল এবং বাকশাল গঠনের ক্ষেত্রে মস্কোপন্থি বামদলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল বলে রাজনৈতিক মহল মনে করেন। ৭৫ এর পর জাতির পিতার হত্যার যারা প্রতিবাদ করেছিল তাঁরা হলো এই মস্কোপন্থি রাজনৈতিক জোট ও বাম জোটগুলো। ৭৫ এর ১৫ই আগস্টের পর আওয়ামী লীগের ওপর যেমন জুলুম নিপীড়ন নেমে এসেছিল ঠিক তেমনিভাবে জুলুম নির্যাতন নেমে এসেছিল সিপিবি, ন্যাপসহ কমিউনিস্টপন্থি বামদলগুলোর ওপর। মস্কোপন্থি কমিউনিস্ট পার্টিকে জিয়াউর রহমান নিষিদ্ধও ঘোষণা করেছিল। এই সময়েও কমিউনিস্টদের সঙ্গে আওয়মী লীগের রাজনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট নয়নি বরং আরও প্রগাঢ় হয়েছে। যদিও কমিউনিস্টদের মধ্যে এই সময়ে বেশকিছু বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। তাঁরা জিয়াউর রহমানের খাল কাটা বিপ্লবেও অংশগ্রহণ করেছিল। কমিউনিস্ট পার্টি এবং ছাত্র ইউনিয়নের ওই সময়ের প্রাক্তন নেতৃবৃন্দ মনে করেন যে, এটা ছিল তাঁদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কৌশল। জিয়াউর রহমানের রোষানল থেকে বাঁচার জন্য তাঁরা এটা করেছিলেন। তবে কমিউনিস্ট পার্টি ও আওয়ামী লীগের এই সখ্যতার আড়ালে তাঁদের বিরোধেরও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। ১৯৭৪ সালে পয়লা জানুয়ারি ভিয়েতনামে মার্কিন আগ্রাসনের প্রতিবাদে ছাত্র ইউনিয়ন মার্কিন দূতাবাস ঘেরাওয়ের অভিযান পরিচালনা করলে সেখানে পুলিশ গুলি ছোড়ে এবং একজন মারা যায়। এরপর তৎকালীন ডাকসুর ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ডাকসু ভবনে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম মনে করেন যে, সেটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল। ৭৫’র ১৫ই আগস্টের পর মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমই হলেন প্রথম ব্যক্তিদের একজন যিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। ৭৫’র পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন তখন তাঁর বিশ্বস্ত মিত্র ছিল কমিউনিস্ট পার্টি। মোহাম্মদ ফরহাদের সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পর্যায়ক্রমে গড়ে ওঠে ১৪ দল এবং এই ১৪ দলের নেতৃত্বেই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন হয়। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ এবং কমিউনিস্ট পার্টিই ছিল সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং পরীক্ষিত মিত্র।
রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ২০০১ সাল থেকে সিপিবি, ছাত্র ইউনিয়ন, ন্যাপ থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করার সংখ্যা ছিল উল্লেখ করার মতো। ২০০৭ সালে যখন ওয়ান ইলেভেনের বিপর্যয় আসে তখন আওয়ামী লীগে যারা ‘কমিউনিস্ট’ হিসেবে পরিচিত তাঁদের ভূমিকাই ছিল বিস্বস্ততার এবং আস্থার। তাঁরাই মাইনাস ফর্মূলার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হয়েছিল।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভিন্ন পর্যায়ে, বিভিন্ন বাঁকে কমিউনিস্ট, ন্যাপ এবং ছাত্র ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ৭৫ এর ১৫-ই আগস্টের পরে মস্কোপন্থি বাম দলগুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি বড় অংশ আওয়ামী লীগে যোগ দেয়। এই প্রবাহ, ধারা বন্ধ হয়নি। বিভিন্ন সময়ে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ, আব্দুল মান্নান খানসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। এই নেতাকর্মীরাই ২০০৭ সালে যখন শেখ হাসিনার রাজনৈতিক নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, তথাকথিত মূল আওয়ামী লীগ যখন তাঁকে মাইনাস করার তত্ব হাজির করে তখন এই আওয়ামী লীগের কমিউনিস্টরাই সেটার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল। তখন মতিয়া চৌধুরী, আব্দুল মান্নান খান, নুরুল ইসলাম নাহিদসহ প্রমুখ বাম ঘরানা থেকে আসা নেতৃবৃন্দই শেখ হাসিনার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন। একারণেই ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে ‘কমিউনিস্ট’ থেকে আসা আওয়ামী লীগারদের জয়জয়কার দেখা যায়। এটা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্ষোভ এবং নানারকমের গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। এরপর আওয়ামী লীগ যখন দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয় তখন কমিউনিস্টিদের প্রভাব কিছুটা কমে গেলেও বেগম মতিয়া চৌধুরী, নুরুল ইসলাম নাহিদের মতো স্বীকৃত কমিউনিস্ট পার্টি এবং ছাত্র ইউনিয়ন করা লোকজন মন্ত্রিসভায় ছিলেন। মন্ত্রিসভায় ‘কমিউনিস্ট’ পার্টির যে প্রভাব সেটা মোটামুটি অক্ষুণ্ণ অবস্থায়ই ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে এসে মন্ত্রিসভায় শুধু না, তথাকথিত কমিউনিস্টদের অবস্থান সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামে একমাত্র মতিয়া চৌধুরী ছাড়া আর কোনো সদস্য নাই। তিনিও রাজনীতিতে অন্তিমলগ্নে আছেন। এবার তিনি মন্ত্রিসভাতে অন্তর্ভূক্ত হননি। ছাত্রইউনিয়ন এবং কমিউনিস্ট পার্টি থেকে আসা নুরুল ইসলাম নাহিদ এবার মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভূক্ত হননি। আব্দুল মান্নান খান প্রেসিডিয়ামে আছেন। কিন্তু তাঁর গুরুত্ব খুবই কম বলেই জানা গেছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে। ২০০৮এ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানের হার প্রায় শূন্যতে নেমে এসেছে। কমিউনিস্ট পার্টি এখন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবেই কাজ করছে। বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের কট্টর সমালোচক হিসেবেই কমিউনিস্ট পার্টি আবির্ভূত হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগের যে গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল ধারা সেই ধারাকে অক্ষুণ্ণ রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়নসহ বাম প্রগতিশীল দলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বিভিন্ন সময়ে বাম প্রগতিশীল ঘরানার দলগুলো থেকে আওয়ামী লীগে যারা যোগদান করেছিল তাঁরাই আওয়ামী লীগকে প্রগতিশীল এবং সমাজতান্ত্রিক ধারায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এখন তাঁদের এই যোগদানের ধারা কমে গেলে আওয়ামী লীগ ক্রমশ দক্ষিণপন্থিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে কিনা এনিয়েও জল্পনা কল্পনা রয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামসহ দক্ষিণপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর সখ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, আওয়ামী লীগ কি তাঁর প্রগতিশীল শক্তি হারিয়ে ফেলেছে? সেজন্যই কি বাম ঘরানা থেকে আসা আওয়ামী লীগারদের কদর কমে গেছে দলে?
বাংলা ইনসাইডার/এসআর
মন্তব্য করুন
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
আজিজ আহমেদ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের একটি বক্তব্যকে নিয়ে বিএনপির উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে সাম্প্রতিক সময়ে আম আদমি পার্টির জামিনে মুক্তি পাওয়া এই নেতার একটি বক্তব্য বিএনপি তাদের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে শেয়ার করেছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল বক্তার বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ তুলেছেন। তিনি রাশিয়ার উদাহরণ দিয়েছেন। রাশিয়া নির্বাচনে পুতিন একচ্ছত্রভাবে বিরোধী দল দমন করে বিজয়ী হয়েছেন বলে অরবিন্দ কেজরিওয়াল উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের নির্বাচনে শেখ হাসিনা সকল বিরোধী দলের নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বলেও অরবিন্দ কেজরিওয়াল দাবি করেছেন। তিনি পাকিস্তানে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করে তার দলের প্রতীক কেড়ে নিয়ে নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা বিজয়ী হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল আসলে সমালোচনার তীর ছুড়েছেন নরেন্দ্র মোদীর দিকে। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশকে অনুসরণ করে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চান বলেও আম আদমি পার্টির এই নেতা তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। আর এই বক্তব্য নিয়েই বিএনপির মধ্যে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। বিএনপির নেতারা শুধু ইউটিউবেই এটি রিপোস্ট করেনি, তারা তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এবং টুইটারেও এই বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিএনপির মধ্যে এক ধরনের ভারত বিরোধী প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। ভারতের সমালোচনা করা এবং ভারত এই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে এমন বক্তব্য বিএনপি নেতাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছিল। যদিও ইন্ডিয়া জোটের প্রধান শরিক কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন এবং সম্পর্ক আরও গভীর করার বার্তা দিয়েছেন। ভারতের অন্য একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেসও আওয়ামী লীগ এবং বর্তমান সরকারের সমর্থক। বিজেপি গত এক দশকে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। এরকম অবস্থায় ভারতের নির্বাচনে যে ফলাফলই হোক না কেন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তেমন কোন ব্যত্যয় হবে না বলেই কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
এর মধ্যে আম আদমি পার্টির বক্তব্য নিয়ে বিএনপির উচ্ছ্বাস নিয়ে অনেকেই নানারকম টীকা-টিপ্পনি কেটেছেন। কেউ কেউ মনে করেন যে, এর আগে যখন কংগ্রেসকে হারিয়ে নরেন্দ্র মোদী প্রথমবার ক্ষমতায় এসেছিলেন তখনও বিএনপির মধ্যে উৎসব উৎসব ভাব সৃষ্টি হয়েছিল। বিএনপি নেতারা মিষ্টিমুখ করিয়েছিলেন। তাদের ধারণা ছিল যে, কংগ্রেস চলে গেলেই আওয়ামী লীগের উপর চাপ সৃষ্টি হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, বিজেপির সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। এখন কেজরিওয়ালের নির্বাচনের মাঠের বক্তব্যকে নিয়ে বিএনপি আশায় বুক বেঁধে আছে। মুখে মুখে ভারত বিরোধীতা করলেও ভারতের অনুগত এবং ভারতের আস্থাভাজন হওয়ার জন্য বিএনপি কম চেষ্টা করেনি।
আর এখনও বিএনপি যে ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চায় তার প্রমাণ পাওয়া গেল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বক্তব্যকে নিজেদের দলের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করে। কিন্তু বিএনপি নেতারা ভুলে গেলেন যে, একজন রাজনৈতিক নেতার রাজনৈতিক বক্তব্য, আর ক্ষমতায় এসে তার প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড- দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেউলিয়া রাজনীতির কারণে বিএনপি সবসময় অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকে আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করার জন্য। সাম্প্রতিক সময়ে কেজরিওয়ালের বক্তব্য বিএনপির ইউটিউবে ছাড়ার মধ্য দিয়ে সেই দেউলিয়াত্ব আরেকবার প্রকাশিত হল বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অরবিন্দ কেজরিওয়াল রুহুল কবির রিজভী
মন্তব্য করুন
কিছুদিন আগেও বিএনপি যুক্তরাষ্ট্র বলতে অন্ধ থাকত। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে ফোন আসলে বিএনপির নেতারা নাওয়া খাওয়া ভুলে ছুটে যেতেন। এমনকি কোনদিন সকালে মার্কিন দূতাবাসে প্রাতরাশ, রাতে নৈশভোজেও দেখা গেছে বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তারা অবতার হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশে গণতন্ত্র এনে দেবে, যুক্তরাষ্ট্রই এই সরকারের পতন ঘটাবে এমন একটা স্থির বিশ্বাস ছিল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। কিন্তু বিএনপির মধ্যে সেই মোহভঙ্গ ঘটেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনাগ্রহী বিএনপি। এটা যেন অনেকটা আঙুল ফল টকের মতো ঘটনা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ইতোমধ্যে তিনি একটি হ্যাটট্রিক করেছেন। টানা তিন তিনবার আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই একমাত্র যিনি আওয়ামী লীগের তিনবার বা তার বেশি সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। এখন ওবায়দুল কাদেরও আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সাধারণ সম্পাদক। এবার তিনি আরেক রকম হ্যাটট্রিক করলেন।
আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের একটি বক্তব্যকে নিয়ে বিএনপির উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে সাম্প্রতিক সময়ে আম আদমি পার্টির জামিনে মুক্তি পাওয়া এই নেতার একটি বক্তব্য বিএনপি তাদের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে শেয়ার করেছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল বক্তার বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ তুলেছেন। তিনি রাশিয়ার উদাহরণ দিয়েছেন। রাশিয়া নির্বাচনে পুতিন একচ্ছত্রভাবে বিরোধী দল দমন করে বিজয়ী হয়েছেন বলে অরবিন্দ কেজরিওয়াল উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের নির্বাচনে শেখ হাসিনা সকল বিরোধী দলের নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বলেও অরবিন্দ কেজরিওয়াল দাবি করেছেন। তিনি পাকিস্তানে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করে তার দলের প্রতীক কেড়ে নিয়ে নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা বিজয়ী হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।