নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ০৩ মার্চ, ২০১৯
শুক্রবার বিকেলে গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন কমিটির সভায় ওবায়দুল কাদের এলেন একটু আগেই। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্তে কিছুক্ষণ কথা বললেন। এসময় তাকে কিছুটা অসুস্থ মনে হচ্ছিল। সেসময় প্রধানমন্ত্রী তাকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বেশ কিছু পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘সবার আগে শরীর। শরীরের যত্ন নিতে হবে। তুমি একটু রুটিন করে চলো। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করো। অতিরিক্ত পরিশ্রম করো না।’
এমন পরামর্শ এবারই প্রথম নয়। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে ওবায়দুল কাদের ব্যস্ত সময় পার করেন। নির্বাচনের পরপরই প্রধানমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে বলেছিলেন তার পুরো স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য। তাকে বলেছিলেন, ‘ফুল হেলথ চেক আপ করিয়ে নাও। অনেক পরিশ্রম যাচ্ছে, ধকল যাচ্ছে। হেলথ চেকআপ খুবই জরুরি। এই বয়সে বছরে অন্তত দুইবার ফুল হেলথ চেকআপ করানো অপরিহার্য।’ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ শুনে তিনি হেসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন,‘আপা, আমি করবো।’
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শগুলো তিনি উপেক্ষা করেছিলেন। আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে হঠাৎ বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন এবং শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হচ্ছিল। এমন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠদের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর তাদের জীবনের রুটিন পাল্টে যায়। প্রতি রাতেই প্রায় দুইটা আড়াইটা পর্যন্ত তাকে কাজ করতে হতো। এরপর ভোরবেলা ফজরের নামাজ পড়ে আবারও দলীয় কর্মকাণ্ড ও মন্ত্রণালয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। মন্ত্রীদের মধ্যে তিনি এমন একজন যিনি কোনো ফাইল পেন্ডিং রাখতেন না। তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করতেন, দিক নির্দেশনা দিতেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সবসময় ব্যস্ত থাকতেন। মানুষ যখন এত পরিশ্রম করেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার পর্যাপ্ত বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সে বিশ্রামের সময়টুকু তিনি পেতেন না। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার তাকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে এরকমও বলেছিলেন,‘তুমি কিন্তু পড়ে যাবা। এভাবে শরীরে অবহেলা করো না।’
ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠরা বলেছেন, দলীয় বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও মন্ত্রণালয়ের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে প্রায় সময়ই তিনি মধ্যাহ্নভোজ ঠিকমতো করতে পারতেন না। প্রায়ই তিনি রাতের বেলা বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা বৈঠকে হালকা খাবার খেয়ে বাড়িতে ফিরতেন এবং প্রয়োজনীয় খাবার খেতেন না। তার স্ত্রী জানিয়েছেন, প্রতিদিন গড়ে তিনি ৫ ঘণ্টা ঘুমান কি না তাতেও সন্দেহ রয়েছে।
শেখ হাসিনার আমলে আওয়ামী লীগের যে কয়জন সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন তাদের মধ্যে ওবায়দুল কাদের সবচেয়ে কর্মঠ ও ব্যস্ত সাধারণ সম্পাদক বলে অনেকে মনে করেন। তিনি দলের কার্যক্রমে সবসময় উপস্থিত থাকতেন। সময় পেলেই তিনি দলীয় কার্যালয়ে যেতেন। মন্ত্রণালয়ের কাজেও তার কখনও কোন গাফিলতি ছিল না। অনেকেই মনে করছেন, সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণেই তার এই অসুস্থতা হয়েছে।
আমাদের দেশে যারা রাজনীতি করেন, তারা অনেক ব্যস্ত মানুষ। তারা অনেক সময় নিজেদের বয়স এবং শরীরের কথা ভুলে যান। প্রত্যেক রাজনীতিবিদই যে একজন সাধারণ মানুষ, তাদের শরীর ও বয়সের দিকে খেয়াল রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। ওবায়দুল কাদেরের হঠাৎ অসুস্থতা দিয়ে এই সত্যটা আবারও বেরিয়ে আসলো।
ওবায়দুল কাদের যদি প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনতেন এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতেন তাহলে তার হার্টের ব্লকগুলো হয়তো আগেই ধরা পড়তো। তার অবস্থা এতোটা খারাপ হতো না। রাজনীতিবিদরা আমাদের দেশের অমূল্য সম্পদ। তারাই দেশের মূল চালিকাশক্তি। কাজেই আকস্মিকভাবে যখন একজন ব্যস্ত রাজনীতিবিদ অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন সেটা শুধু ঐ রাজনৈতিক দলের জন্যই শুধু নয়, দেশের জন্যও দুর্যোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়। রাজনীতিবিদরা যদি তাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের ব্যাপারে একটু সচেতন হন তবেই দেশের মঙ্গল।
বাংলা ইনসাইডার/এমআর
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।