ইনসাইড আর্টিকেল

জন্মদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মের ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০১ জুলাই, ২০১৯


Thumbnail

আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক স্বপ্ন পূরণের দিন ছিল ৯৭ বছর আগের এক পহেলা জুলাই। সেদিন ১৯২১ সালের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় এদেশের শ্রেষ্ঠতম বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের এই সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা নিয়ে আমাদের সেকালের নেতৃবৃন্দের যে কত ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তা আজকের দিনে কল্পনা করাও সম্ভব নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায় পুরো পূর্ববঙ্গের ইতিহাসে এই বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা একটি জায়গা দখল করে আছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িয়ে আছে বঙ্গভঙ্গ রদের ঘটনা। এরপরে সময়ের সাথে পাকিস্তান আমলে বাঙালী জাতীয়তাবাদের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠে এই বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরেও হাজারো আন্দোলন সংগ্রামের বীজ বপন করা হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায়।

১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে ‘পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশ’ বিলুপ্ত হয়, পূর্ববাংলায় অনেক সোনালী স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়ে। বঙ্গভঙ্গ রদের পরে ১৯১২ সালে পূর্ব বাংলা ও আসাম সফরে এসে ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঘোষণা করেছিলেন,‘গত কয়েক বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে পূর্ব বাংলার যে অগ্রগতি হয়েছে তাতে ভারত সরকার আনন্দিত হয়েছে এবং ভারত সচিবের কাছে তারা ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পূর্ব বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থায় উন্নতির জন্য একজন বিশেষ অফিসার নিয়োগের সুপারিশ করবে।’ 

বাধা বিপত্তি ও বিরোধিতা:

কলকাতার কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীরা উদ্ভট যুক্তিতে প্রতিবাদ জানায় যে, পূর্ববঙ্গের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান চাষাভুষা, তাই তাদের উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন নেই। তারা ইংরেজ সরকারের কাছে সভা-সমাবেশ, মেমোরেন্ডাম প্রভৃতির মাধ্যমে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদ জানাতে থাকে। ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে তিনটি যুক্তি তখন বড়ভাবে দেখানো হয়। তিনটি যুক্তিই খুব অদ্ভুত। প্রথমত: ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে নাকি শিক্ষার মান ক্ষুণ্ণ হবে। দ্বিতীয়ত: ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় হলে শিক্ষা-সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বিভাজন সৃষ্টি হবে। তৃতীয়ত: ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হবে উলুবনে মুক্তা ছড়ানোর শামিল। কারণ পূর্ববঙ্গের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান চাষাভুষা, তাই তাদের উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কোনো প্রয়োজন নেই।

লর্ড হার্ডিঞ্জের ঢাকা সফর শেষে কলকাতা ফিরে যাওয়ার পরে ১৯১২ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি ড. রাশবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা করে স্মারকলিপি দেয়। রাশবিহারী ঘোষের সাথে একমত ছিলেন বিপিন চন্দ্র পাল, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, সুরেন্দ্রনাথ সমাজপতি, ব্যারিস্টার ব্যোমকেশ চক্রবর্তী, পেয়ারী মোহন মুখোপাধ্যায়, অম্বিকা চরণ মজুমদারের মতো নেতারা। ভাইসরয় তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেটি কোনো মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় হবে না, বরং সবার জন্য উন্মুক্ত সাধারণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে।

ইতিহাস

বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ার পর ঢাকার স্থানীয় মুসলিম নেতারা বিশেষ করে ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ।

১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয় নাথান কমিটির ইতিবাচক রিপোর্ট এবং সে বছরের ডিসেম্বর মাসেই সেটি অনুমোদিত হয়। ১৯১৭ সালে গঠিত স্যাডলার কমিশনও ইতিবাচক প্রস্তাব দিলে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইন সভা পাস করে দ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট (অ্যাক্ট নং-১৩) ১৯২০।

১৯১৭ সালের মার্চ মাসে ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সরকারের কাছে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল পেশের আহ্বান জানান। ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল এ বিলে সম্মতি দেন। এ আইনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ভিত্তি। এ আইনের বাস্তবায়নের ফলাফল হিসেবে ১৯২১ সালের ১ জুলাই যাত্রা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উন্মুক্ত হয় ১৯২১ সালের ১ জুলাই। সে সময়ে ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর পূর্ববঙ্গ, আসাম প্রদেশের পরিত্যক্ত ভবনাদি এবং ঢাকা কলেজের (বর্তমান কার্জন হল) ভবনগুলোর সমন্বয়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার এই দিনটি প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

লর্ড হার্ডিঞ্জ, যাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভুলবে না:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অন্যতম বড় বাঁধা ছিলো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার তার ‘ঢাকার স্মৃতি’ নামক একটি প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ‘ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ স্যার ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ব্যাপারে ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’

মুসলিম হল, ঢাকা হল আর জগন্নাথ হলে যথাক্রমে ১৭৮ জন, ৩৮৬ জন এবং ৩১৩ জন নিয়ে যাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের, আনুষ্ঠানিক কাজ। ১৯২১ সালের জুলাই মাসের এক তারিখ শুরু হয়। ভাইস চ্যান্সেলার হিসেবে দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক রেজিস্টার ফিলিপ হার্টগ।

নবাব সলিমুল্লাহর অবদান:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জমির ব্যাপারে একটি জনপ্রিয় ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জমির একটি বড় অংশই নাকি ঢাকার নবার পরিবারের দান করা। নবাব সলিমুল্লাহর নামটি জোরেশোরেই শোনা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা আসার পরেই নাকি তিনি ৬০০ একর জমি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু কাগজে-কলমে সেই ধরনের কোনো হিসেব পাওয়া যায় না। বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুরু হয়েছিল সরকারি খাস জমিতে। রাজধানীর অবকাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজনে যে ভবনগুলো নির্মিত হয়েছিল, সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়। এই ভবনগুলোর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে টাকাও কেটে রাখা হয়। ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ১৯১০ সাল থেকে বাজেটে আলাদা করে টাকা রাখা শুরু করে। ১৯২০-২১ এ এই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০ লক্ষ টাকা। সেই টাকার পুরোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আসেনি, ভবন বরাদ্দ দেওয়া বাবদ সেই টাকার বিপুল অংশ কেট রাখা হয়। আর রমনা এলাকায় যে জমিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোড়াপত্তন তার পুরোটাই খাস জমি। সেটেলমেন্ট রিপোর্টের দলিল দস্তাবেজে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। নবাব পরিবার নিজেই ছিলো ঋণের বোঝায় ক্লান্ত। তবে ঢাকার অনেক ধনী ব্যক্তি সেই আমলে মারা যাওয়ার পরে তাদের সম্পত্তি নবাব পরিবারের নামে ওয়াকফ করে দিয়ে যেত। নবাব পরিবারের জমির অন্যতম উৎস ছিল এটি। তাই নবাব পরিবারের পক্ষে এই বিপুল পরিমাণ জমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করে যাওয়া ছিল অসম্ভব ব্যাপার। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম হাল ধরেছিলেন যারা: 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুটা হয়েছিল একদল প্রতিভাবান আর কর্মদক্ষ শিক্ষক দিয়ে, এদের অনেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে ছিলেন জগৎবিখ্যাত। প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক রেজিস্টার পি. জে. হার্টগ। তার নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণচঞ্চল হতে থাকে ধীরে ধীরে। সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগে যোগ দেন  হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, তার সাথে ছিলেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এবং রাধাগোবিন্দ বসাক। ইতিহাস বিভাগে ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার এবং স্যার এ. এফ. রহমান। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে সত্যেন্দ্রনাথ বসু আর রসায়নে ড. জ্ঞানচন্দ্র। অধ্যাপক নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত ছিলেন আইন বিভাগের প্রধান। উপাচার্য হার্টগ সারা ভারতের সেরা শিক্ষক দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালকে সত্যিকার একটি ‘নক্ষত্রের মেলা’ করতে চেয়েছিলেন।

অবস্থান:  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজধানী ঢাকা শহরের প্রায় কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এর উত্তর দিকে নিউ এলিফ্যান্ট রোড। পশ্চিমে ইডেন কলেজ, দক্ষিণে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), পূর্বে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ।

শুরুতে অনুষদ ও বিভাগ:

তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। কলা, বিজ্ঞান ও আইন অনুষদের অন্তর্ভুক্ত ছিল বাংলা, ইংরেজি, শিক্ষা, ইতিহাস, আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারসি ও উর্দু, দর্শন, অর্থনীতি ও রাজনীতি, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত ও আইন।

প্রথম শিক্ষাবর্ষে ছাত্র-ছাত্রী: 

প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন এবং শিক্ষকসংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ জন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী লীলা নাগ (ইংরেজি বিভাগ; এমএ-১৯২৩)।

গৌরবময় ভূমিকা:

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। স্বাধীনতাযুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়। এতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্রছাত্রীসহ শহীদ হয়েছেন বহুজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ১৯৬১ সালে স্বৈরাচার আইয়ুব খানের সরকার প্রবর্তিত অর্ডিন্যান্স বাতিলের জন্য ষাটের দশক থেকে শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতার পর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ওই অর্ডিন্যান্স বাতিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ জারি করে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় এই অধ্যাদেশে পরিচালিত হয়ে আসছে।

বর্তমানে অনুষদ:  

দেশের সর্বপ্রাচীন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৩টি অনুষদ, ৭৭টি বিভাগ ১১টি ইনস্টিটিউট ও ৫১টি গবেষণাকেন্দ্র রয়েছে।

বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ



মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

অসামঞ্জস্যতায় কিছু কলেজ পূর্ণ, কোথাও আবার শূণ্য

প্রকাশ: ০৫:০৩ পিএম, ১৬ মে, ২০২৪


Thumbnail

এসএসসি বা মাধ্যমিকের শিক্ষা সমাপ্তির মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা উচ্চতর শিক্ষার দুয়ারে প্রবেশ করে। ধীরে ধীরে প্রবেশ করে এক বিশাল জ্ঞানের রাজ্যে। একজন শিক্ষার্থীর ১০ বছরের পরিশ্রমের ফসল হিসেবে ধরা হয় এসএসসি পরীক্ষাকে। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। যা গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার বেড়েছে। এই পরীক্ষার ওপর তার শিক্ষা জীবনের অন্য স্তরের সফলতাও নির্ভরশীল। আর তাই এই এসএসসি পরিক্ষার পরের ধাপে ভর্তি হতে হয় একাদশ শ্রেণিতে। কিন্তু একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ভর্তিচ্ছুকরা বিশেষ কয়েকটি কলেজকে গুরুত্ব দিতে দেখা যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একাদশে ভর্তি পদ্ধতিটা ভিন্ন রকম হওয়ায় কোন শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল নিয়েও পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারছেনা আবার অনেক কলেজ পায়না ভালো শিক্ষার্থী। এই অসামঞ্জস্যতার ফলে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত অন্যদিকে কলেজগুলোতে থাকে শিক্ষার্থীশূণ্যতা।

গত কয়েক বছর ধরে চার্চ পরিচালিত রাজধানীর চারটি কলেজে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে থাকে। যার মধ্যে রয়েছে হলিক্রস, সেন্ট যোসেফ, সেন্ট গ্রেগরি এবং নটর ডেম কলেজ। এসব কলেজে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকে। অন্যদিকে ঢাকা কলেজসহ দেশেরে বিভিন্ন কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়না কিন্তু জিপিএর মাধ্যমে ভর্তি হতে হয় এবং পরীক্ষার নাম্বারের ভিত্তিতে যোগ্যতা যাচাই করা হয়। এই অসামঞ্জস্যতার ফলে অনেক শিক্ষার্থী কলেজ না পাওয়া বা ভর্তি হতে না পারার সম্ভাবনাই সেবচেয়ে বেশি। একশ্রেনীর ভর্তিচ্ছুকরা দেশের ভালো কলেজের ভর্তির জন্য ঝুঁকেও অনেকেই ভর্তি হতে পারেনা তাদের কাঙ্খিত কলেজে। আবার অন্যদিকে যেসব কলেজে পরীক্ষার নাম্বারের ভিত্তিতে ভর্তি করা হয় সেসব কলেজ ভর্তি নেওয়ার জন্য পায়না তেমন ভালো শিক্ষার্থী। এই অসামঞ্জস্যতার যেন দেখার কেউ নেই।

আরও পড়ুন: বিসিএস উন্মাদনায় তরুণ প্রজন্ম

ভর্তিপরীক্ষা দিয়ে উক্তির্ণ হয়ে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হতে হয় এমন কয়েকটি কলেজ ছাড়া দেশের বাকি কলেজ ও মাদ্রাসায় এবারও প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম অনুসরণ করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এ ক্ষেত্রে টেলিটকের মাধ্যমে আবেদন নেওয়া হবে। পরে বোর্ডে থাকা শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাতালিকা করা হবে। এবারও শিক্ষার্থীরা অনলাইনে সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।

সম্প্রতি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার গণমাধ্যমে বলেন, ‘একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ক্ষেত্রে আসনের কোনো সমস্যা নেই। সংকট হচ্ছে, অনেকেই হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চায়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পছন্দমতো ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম। এ কারণে যারা ভালো ফলাফল করেছেন কিছু প্রতিষ্ঠানে তাদের ভর্তির ক্ষেত্রে বেশি প্রতিযোগিতা করতে হবে’।

বিগত বছরগুলোতে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অভিবাবকরা তার সন্তানকে কোন কলেজের নাম দেখে ভর্তির জন্য আবেদন করেননা। কোনটির বিগত ফলাফল কি সেগুলো বিবেচনা করে ভর্তি করানো হয়। অনলাইনে ভর্তি পদ্ধতিতেই অনেকে ঝুঁকছেন। এছাড়াও একই মহল্লায় একাধিক কলেজ থাকে। কিন্তু কিছু অভিবাবক তাদের সন্তানের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আবার কিছু অভিবাবক কলেজের নাম এমনকি কিছু শিক্ষার্থীর অভিবাবকরা বিগত বছরগুলোর ফলাফল চিন্তা করে তাদের সন্তানদের ভর্থি করাতে চান। এতে করে একজন শিক্ষার্থী কোন কলেজে পড়লে তাদের পড়াশুনার বেঘাত হবে না বা সঠিক মানের কলেজে পড়ে সঠিক শিক্ষা অর্জনে শিক্ষার্থীদের এইচএসসির ধাপ সম্মন্ন করতে পারবে অভিবাবকদের কাছে সেটাই এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরও পড়ুন: কেন চাকরির বয়সসীমা ৩৫ করা উচিত নয়?

তথ্য বলছে, এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশে ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ শিক্ষার্থী পাস করেছে।। দেশের কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে প্রায় ২৫ লাখ। আর মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন রয়েছে আরও কয়েক লাখ। সবমিলে এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে প্রায় ২৮ লাখ। সে হিসেবে এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা কলেজে ভর্তি হওয়ার পরও প্রায় ১১ লাখ আসন ফাঁকা থাকবে। তবে দেশে ভালো মানের কলেজ রয়েছে সর্বোচ্চ ২০০। আর এসব কলেজে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে সর্বোচ্চ ১ লাখ। ভালোমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্র করে ভর্তিচ্ছুদের বাড়ছে আগ্রহ। অথচ সারা দেশে এসএসসি ও সমমানে সর্বোচ্চ ফলাফল জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ শিক্ষার্থী। জিপিএ ৪ থেকে ৫ এর নিচে পেয়েছেন এমন শিক্ষার্থী রয়েছেন ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৯৪৯ জন। তাহলে সর্বোচ্চ ভালো ফল করেও প্রায় ১ লাখ ছাত্রছাত্রী তাদের পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবেন না। অন্যান্য বছরের মত এবারেও তিন ধাপে ভর্তি সম্পন্ন করা হতে পারে।

গত তিন বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তিন ধাপে ভর্তি শেষ করতে চাইলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক সময় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরাও তিন ধাপে ভর্তির আবেদন শেষে কোনো কলেজ বরাদ্দ পান না। কারণ হিসেবে ভর্তি কার্যক্রমে যুক্ত শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, আবেদনের সময় শিক্ষার্থীরা ১০টি কলেজ পছন্দক্রম দেওয়ার সুযোগ পায়। তারা বারবার পছন্দের কলেজগুলো পছন্দের তালিকায় রাখে। ওই কলেজগুলোতে তাদের নম্বর অনুযায়ী আসন মেলে না। এতে একেবারে শেষ ধাপ পর্যন্ত কিছু শিক্ষার্থী ভালো ফল করেও কলেজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।


কলেজ   শিক্ষার্থী   শিক্ষা ব্যবস্থা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

বিসিএস উন্মাদনায় তরুণ প্রজন্ম

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ১৬ মে, ২০২৪


Thumbnail

দেশের শিক্ষিত তরুণ তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে সরকারি চাকরি। আর তাই সরকারির চাকরির মধ্যে এক নম্বরে পছন্দের বিসিএস ক্যাডার হওয়া। আর এ ক্যাডার হওয়ার জন্য চলে রীতিমতো পড়াশোনার যুদ্ধ। শিক্ষার্থীদের মনের মধ্যে প্রচন্ড এক জেদে এগিয়ে যাবার দৃঢ় প্রত্যয়। শুধু যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা বিসিএসের পেছনে ছুটছেন তাই না প্রকৌশল বা মেডিকেল কলেজের অনেক শিক্ষার্থীও এখন ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ হতে চাচ্ছেন।

বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষা বাংলাদেশে সরকারি পদে চাকরি অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এবং সেই পরিক্ষার সহায়ক হওয়া জন্য শিক্ষার্থীরা একাধিক কারণে এই পথে যেতে চায়, যেমন সরকারি সেবা, সামাজিক সেবা, ক্যারিয়ার সুযোগ, সামরিক ও আর্থিক সুরক্ষাসহ নানান অর্জনের দৌড়ে বর্তমান তারুণ্যরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিরাপদ জীবিকা নির্বাহের মোহে শিক্ষার্থীরা বিসিএসের পেছনে ছুটছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের প্রধান লক্ষ্য, যে করে হোক বিসিএস ক্যাডার হতে হবে। না হতে পারলে জীবন বৃথা। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক এমন পেশাজীবীর মর্যাদাও নিশ্চিত করতে হবে। অন্য পেশায় জীবন নিশ্চিত করতে না পারলে চাকরিপ্রার্থীরা বিসিএসের পেছনে ছুটবেন এটিই স্বাভাবিক।

আরও পড়ুন: কেন চাকরির বয়সসীমা ৩৫ করা উচিত নয়?

এদিকে দেশের প্রায় ৪১ শতাংশ তরুণ নিষ্ক্রিয়। অর্থাৎ তারা পড়াশোনায় নেই, কিংবা কর্মসংস্থানে নেই। এমনকি কোনো কাজের জন্য প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন না। মেয়েদের মধ্যে নিষ্ক্রিয়তার হার বেশি, ৬১ দশমিক ৭১ শতাংশ। ছেলেদের মধ্যে এ হার কম, ১৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ। দিন দিন এই ধরনের তরুণের সংখ্যা বাড়ছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসের ২০২২ প্রতিবেদনে বিবিএস নিষ্ক্রিয় তরুণের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ধরেছে ১৫ থেকে ২৪ বছর। তাদের হার ধরে হিসাব করে দেখা যায়, নিষ্ক্রিয় তরুণের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৯ লাখ।

প্রতিবছর বিসিএস পরীক্ষায় প্রার্থী বেড়ে যাওয়ায় এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা। যে তরুণরা কেন বিসিএস মুখী হচ্ছে তার যৌক্তিক কিছু কারণও কিছু খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন নীতিমালা, নতুন নতুন পে-স্কেলে সরকারি চাকরীজীবি সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি।

এছাড়াও আরও কিছু কারণ উঠে এসেছে। যেমন, সামাজিক মর্যাদা, বর্তমান সরকারের আমলে বড় রকমের ঝুটঝামেলা ছাড়া স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া, মেধার মূল্যায়ন, বেতন বেসরকারি চাকরির প্রায় সমান, সরকারি চাকরিতে নিরাপত্তা, পারিবারিক চাপের কারণে, ক্ষমতার জন্য, বিয়ের বাজারে বিসিএস চাকরিজীবীর কদর বেশি, সরকারি চাকরি হতে অবসর গ্রহণের পর পেনশন ও গ্রাইচুটি সুবিধা, তরুণদের পড়াশোনা শেষ করে উদ্যোক্তা হবার মত পুঁজির অভাব এ ব্যাপারে পরিবারের সাপোর্ট না থাকাসহ নানাবিধ কারণে শিক্ষিত তরুণরা সরকারি চাকরির দিকে ঝুঁকে পড়ছে।

শুধু কি স্ফীত বেতন ও লোভনীয় পেনশনের আকর্শনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আকৃষ্ট হয়! তরুন সম্প্রদায় সর্বত্তম নিদর্শন হিসেবে বেছে নেয় বিসিএস। কারণ তারা শাসন কার্যে নিজেদের নিয়োজিত করতে চায়। যে শাসন দেশের দাসত্বকে করে দৃঢ়মূল, দারিদ্রকে করে ক্রম বর্ধমান।

বিসিএস একটা নিছক চাকরির পরীক্ষা নয়, এটা হল একটা ‘লাইফ স্টাইল’ চয়েজ করার মতো। এই লাইফস্টাইল চয়েজ অনেকের পছন্দ না। বাংলাদেশে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা গৎবাঁধা সরকারি চাকরির পেছনে না দৌড়িয়ে চ্যালেঞ্জিং, সৃজনশীল আর স্বাধীন জীবন যাপনের প্রতি আকর্ষণবোধ করে থাকেন। এ কারণে অনেকে উচ্চ বেতনের বেসরকারি চাকরি, নিজস্ব ব্যবসা বা পারিবারিক ব্যবসায় নিয়োজিত হতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন। এছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিসিএসে অংশগ্রহন করার প্রবণতা কম থাকে। অনেকের আবার সৃজনশীল অথবা টেকনিকাল কাজে আগ্রহ বেশি থাকায় তারা সরকারি চাকরির দিকে কম ঝুঁকে।

আরও পড়ুন: জিপিএ-৫ পেয়েও ‘নামি’ কলেজে ভর্তি কঠিন!

অস্বাভাবিক "সম্মান" এর লোভে তরুণরা এখন এই ক্যাডার সার্ভিসে ঝুঁকছে। যেখানে সার্ভিসে আসার মূল কারণ হওয়া উচিত ছিল দেশের সেবা করা। সেটার বদলে এখন সার্ভিসে আসলে নিজের আখের গোছানো সুবিধা তাই সবাই আসতে চায়। এই মেন্টালিটি নিয়ে যারা সার্ভিসে ঢুকবে তাদের কাছ থেকে আপনি কি সার্ভিস আশা করবেন? কোরায় একজন ক্যাডারের লেখা দেখেছিলাম সে একদম সরাসরি বলছে যে অন্য কাজের ভ্যালু নাই শুধু বিসিএসই একমাত্র যোগ্য চাকরি দেশের সেবার জন্য। ভেবে দেখেনতো তাহলে, তারা কি চিন্তা নিয়ে সার্ভিসে ঢুকছে!

অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দেশের প্রাইভেট সেক্টরের ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ের CSE, EEE, IT এর মতন ডিমান্ডিং বিষয়ে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরাও অনেক সময় মনমতো চাকরি পেতে হিমশিম খায়। এমনকি একদল তরুণ যাচ্ছে বিদেশে আরেক দল যাচ্ছে বিসিএস এ, দেশের কাজ তাই চায়না ইন্ডিয়া থেকে বেশি টাকা দিয়ে লোক এনে করানো লাগতেসে। তাই এতে স্পষ্ট সমস্যাটা বহুমাত্রিক।

তবে এটার ফলাফল হচ্ছে দেশ এমন একটা নিউ জেনারেশন পাচ্ছে যারা এনালিটিকাল ক্ষমতার বদলে মুখস্ত ক্ষমতায় দক্ষ বেশি হচ্ছে। যাদের সায়েন্স, টেকনোলজি, ফিলোসফি বা ইকোনমিক্সের বদলে MP3 পড়ায় বেশি আগ্রহ। বিসিএসমুখী পড়ালেখার কারণে শিক্ষার্থীরা গুরুত্ব দিয়ে পড়ালেখা করেন। যার ফলে তারা বিষয়ভিত্তিক পড়ালেখায় যথাযথ মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হন। ফলে উচ্চশিক্ষার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের।


বিসিএস   বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস   তরুণ   প্রজন্ম   বিশ্ববিদ্যালয়  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

কেন চাকরির বয়সসীমা ৩৫ করা উচিত নয়?

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৫ মে, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের চাকরির বাজারের প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়ার জনপ্রিয়তা সবচাইতে বেশি। চাকরিপ্রত্যাশীদের মতে সরকারি চাকরির মত পেশাগত নিরাপত্তা আর কোথাও নেই। আর সেজন্যই অনেক দেশে বেশি বয়সে সরকারি চাকরির আবেদনের সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশে এর সীমাবদ্ধতা ৩০ বছরে রয়েছে। সরকারি চাকরির কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতার দরকার হয়। সেই দক্ষতা অর্জনের জন্য বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া চাকরির আবেদনের বয়স যতই থাকুক না কেন, পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ অনির্দিষ্ট হয় না। একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ৫ বা ৭ বার সিভিল সার্ভিসের জন্য আবেদন করতে পারেন। আমাদের দেশেও যেকোন যুক্তিতে বয়স বাড়াতে গেলে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত।

চাকরিপ্রত্যাশী অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশে পড়াশোনা বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা উচ্চশিক্ষা শেষ করে বের হন তাদের সেশন জটের কারণে ২৬-২৭ বছর লেগে যায়। সেক্ষেত্রে ৩০ বছরের বয়সসীমা তাদের জন্য অন্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় বৈষম্যমূলক। বিশ্বের অনেক দেশেই চাকরির বয়সসীমা নেই। বাংলাদেশে বয়সসীমার বাধাটিও বৈষম্যেরই সামিল। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি নেই। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণত চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে যাদের বয়স একটু বেশি থাকে তারাই আবেদনের বয়সসীমা বাড়ানোর আন্দোলন করে থাকেন। দুই দশক ধরে এ রকম আন্দোলন নিয়মিতভাবে সংবাদমাধ্যমে আসতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীদের যুক্তি-বিভিন্ন দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ থেকে ৫৯ বছর পর্যন্ত দেখা যায়। সুতরাং, বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েটরা কেন এই সুযোগ পাবেন না? তাদের মতে, বয়স নয়, যোগ্যতাই হতে পারে একজন প্রার্থী বাছাইয়ের প্রধান বিবেচ্য। তাছাড়া মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারটিও তারা উল্লেখ করেন।

সম্প্রতি জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়টি নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও আলাপ-আলোচনা করবেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আপাতত বয়সসীমা বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত সরকারের নেই। গত ১৫ বছরে সরকার অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চাকরির বয়স ছিল ২৭ বছর সেখান থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সেটা ৩২ বছর করা হয়েছে। চাকরি থেকে অবসরের বয়স ৫৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়েছে। আমরা সবসময় যুগের সাথে তাল মিলিয়ে জনবল কাঠামো ও নিয়োগ প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন করে থাকি। যুগের সাথে সম্পর্ক রেখে আমরা পরিবর্তনও করে থাকি।

সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরের বয়স বেশি বাড়ানোর প্রধান অসুবিধা হিসেবে ওপরে সরকারি চাকরিতে তারুণ্যের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেটি ছাড়াও একটি সামাজিক সমস্যা রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পদবিন্যাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো খোলা (ওপেন) বা পরিবর্তনশীল (ডাইনামিক) নয়; এখানকার পদবিন্যাস প্রায় স্থির। বয়োজ্যেষ্ঠদের অবসরে যাওয়ার ফলে এখানে অপেক্ষাকৃত তরুণ চাকরিজীবীদের পদপ্রাপ্তি তথা পদোন্নতির সুযোগ তৈরি হয়। বয়োজ্যেষ্ঠরা দীর্ঘদিন পদ ধরে রাখলে তরুণেরা আরও বেশি দিন পদোন্নতিবঞ্চিত থাকবেন। এতে বয়োজ্যেষ্ঠরা ঘটনাক্রমে বয়ঃকনিষ্ঠদের বিরক্তির কারণ হতে পারেন।

বাংলাদেশে চাকরির বয়সসীমা ৩০ কেন উপযুক্ত বয়স? কারণ, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে তরুণদের কাজে লাগাতে চায় কর্তৃপক্ষ। তরুণরা যাতে তাদের মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে। এমনকি চাকরিতে প্রবেশের একটা মানসিক বয়সও রয়েছে। সাধরণত সামরিক বাহিনীতে চাকরির ক্ষেত্রে যেমন শারীরিক সক্ষমতার বিষয় থাকে, বেসামরিক চাকরিতে সেটা না থাকলেও মানসিক সক্ষমতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চাকরিতে প্রবেশের পর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় পিক-আপ (গ্রহণ) করা এবং সে অনুযায়ী সার্ভিস বা সেবাদান ঠিক রাখতে হলে একটা নির্দিষ্ট বয়স দরকার হয়। এছাড়া ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার বিষয়টি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হতে পারে। চাকরিতে ‘কন্ট্রিবিউট’ করা বা অবদান রাখতে হলেও একটা নির্দিষ্ট বয়সের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ সে যাতে অবদান রাখতে পারে তার জন্যও পর্যাপ্ত সময় দরকার হয়।

বাংলাদেশে সাধারতণ চাকরির ক্ষেত্রে বর্তমানে অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর। দেরীতে চাকরিতে প্রবেশ করলে অবদান রাখার সময়ও কমে আসতে পারে। বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি বাংলাদেশে কর্ম কমিশন (বিসিএস) এর আওতাধীন নিয়োগ পরীক্ষাসমূহ। এই পরীক্ষার মাধ্যমে একজন চাকরিপ্রত্যাশীর সম্পূর্ণ নিয়োগ পেতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগে। ৩০ বছর বয়সে কেউ এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া পেরিয়ে চাকরি শুরু করতে হলে তার বয়স অন্তত ৩৩-৩৪ বছর হয়ে যায়। ফলে তার অবদান রাখার সময়সীমা এমনিতেই কমে যায়। এতে করে যেই সেক্টরে একজন ব্যক্তি চাকরি করেন সেখানে চাকরিতে তার সম্পূর্ণটা দিতে সক্ষম হন না। ফলে দেশের একাংশ ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। 

বিবেচনা করলে দেখা যায়, কোন ব্যক্তি ২৫ বছর বয়সে চাকরিতে যোগদান করলে তার পিক-আপ করার সক্ষমতা যত থাকবে, ৩৪ বছর বয়সী একজনের সেই সক্ষমতা একই হবে না, এসব বিষয় মাথায় রেখেই বয়স নির্ধারণ করা হয় হতে পারে। একজন ব্যক্তি ২৫ বছরে চাকরিতে প্রবেশ করলে সে অপেক্ষাকৃত তরুণ থাকে এবং প্রশিক্ষণসহ নানা ধরণের কর্মসূচীতে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে তার কোন পিছুটান থাকে না। কিন্তু বয়স বেশি হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিয়ে, অন্য চাকরির মতো পিছুটান তৈরি হয় যা নতুন চাকরি, প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য কর্মসূচীতে বাধার সৃষ্টি করতে পারে।

এছাড়া কর্মক্ষেত্রে যারা সহকর্মী হিসেবে কাজ করবেন সেখানেও, বয়সের পার্থক্য খুব বেশি যাতে না হয় বা একটা নির্দিষ্ট বয়সের ধারা বজায় রাখার প্রতিও নজর দেয়া হয় বলে মনে করেন সমাজের বিশিষ্টজনরা। এমনকি বাংলাদেশে চাকরির সংকটের কারণগুলোও বিবেচনা করা কে তা বিশেষ ভাবে পর্যালোচনা করে সংকট মোকাবিলায় কাজ করা হয়।

দেশের তরুণদের চাকরির সংকটের নানা কারণে হতে পারে বিশষে করে চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতার অভাব। ২০১৯ সালে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক, বিআইজিডি ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা-জরিপ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতায় মারাত্মকভাবে পিছিয়ে আছেন বাংলাদেশের তরুণেরা। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করেও তাঁরা কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন না। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার চাকরির নিয়োগের সময়ে এই ব্যাপারটি দেখা যায়। তাই তরুণদের দক্ষ ও যোগ্য করে তোলার জন্য বাজারের চাহিদার দিকে নজর রেখে নানা ধরনের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া যায়।

সুতরাং সব দিক ভেবে যুবসম্প্রদায়ের প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র ও সময় প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ এবং অবসরের বয়সের একটি সাম্যতা দরকার। আর একই সঙ্গে বয়োজ্যেষ্ঠদের সেবা একটি যৌক্তিক বয়স পর্যন্ত পেতে এবং নতুন প্রজন্মের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে চাকরি থেকে অবসরের বয়স এক বছর বাড়িয়ে ৬০ বছর করাই বাঞ্ছনীয়।

কিন্তু চাকরি থেকে অবসরের দিক থেকে যদি দেখা হয়, সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও অবসর গ্রহণের সময়সীমা সক্রিয়ভাবে নির্ধারন করা হয়েছে। বিচারকদের অবসর গ্রহণের বয়স ৬৭ বছর এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫ রাখা হয়েছে। এমনকি একজন ডাক্তারও বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগদান করে তাকে ৫৯ বছর বয়সে অবসরগ্রহণ করতে হয়। কিন্তু একই ডাক্তার যদি কোন মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসরের চাকরি করেন তাহলে তাকে ৬৫ বছরে অবসরে যেতে হয়। তাহলে সাম্যতা কোথায়? যদি চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে বয়সের সিমাবদ্ধতা দরকার হয় তাহলে চাকরি থেকে অবসরের সময়ও নির্দিষ্ট সিমাবদ্ধতা দরকার।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

পরীক্ষার ফলাফলে কেন ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে?

প্রকাশ: ০৮:০৩ এএম, ১৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

একটি জাতির মেরুদণ্ড হল শিক্ষা। যা কিনা জাতি গঠনের প্রধান উপাদান। স্বমহিমায় নিজেদের উদ্ভাসিত করতে কেবল শিক্ষত জাতিই পারে। বিবেকবান মানুষ, সুনাগরিক, কর্তব্যপরায়ণ, দায়িত্ববান ও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষার বিকল্প নেই। সে জন্য প্রয়োজন শিশুকাল থেকেই শিক্ষা অর্জন। স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য অনেকেই পারি দেন বিদেশে।

শিক্ষার সূচনা পরিবারের থেকে হলেও জ্ঞান অর্জনের বাল্যকালের বিশেষ ধাপ মনে করা হয় প্রাইমারি থেকে এসএসসি পর্যন্ত। আর এই এসএসসি পরিক্ষার ফলাফলে চলতি বছরে দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে পাসের গড় হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪। যা গতবারের (২০২৩ সালে) চেয়ে বেড়েছে। গেল বছর পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। কিন্তু এবারের এসএসসি তে মোট পাসের হারের মধ্যে ছাত্রীদের পাসের হার ৮৪.৪৭ আর অন্যদিকে ছাত্রদের পাসের হার ৮১.৫৭ শতাংশ। এর নেপথ্যের কারণ কি? কেনইবা ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পাসের হার এগিয়ে?

রোববার (১২ মে) এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর এক সংবাদে সম্মেলনে পরিক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা কম দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেন ছেলেরা পিছিয়ে তা জানতে শিক্ষা বোর্ড প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ অনুযায়ী এসএসসি ফলাফলে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা কেন এগিয়ে তার কিছু সুনির্দিষ্ট দিক থেকে শিক্ষার্থীদের বেড়ে উঠা, তাদের প্রতি পরিবারে দায়িত্ব ইত্যাদি নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি যে..

সাধারণত পড়াশোনার ক্ষেত্রে ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার পেছনে মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত সময় ব্যয় করা প্রধানত দায়ী হতে পারে। ছেলেরা বাইরে ঘোরাঘুরির পাশাপাশি বাসায় ফিরে মোবাইল ফোনে ডুবে যাচ্ছে। স্কুলপড়ুয়ারা অতি মাত্রায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করায় পড়ালেখায় মনোযোগী হতে পারছে না। এমনকি  ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা মোবাইল ফোন ব্যবহারের বেশি সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি কিশোর অপরাধে জড়িয়ে পড়াও ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। ছাত্রীদের মধ্যে তারা পড়াশোনায় বেশি আগ্রহ দেখছেন। আর ছেলে সন্তানদের চেয়ে মেয়েরা পড়াশোনায় আগ্রহী হয়ে ওঠায় তাদের পড়াশোনায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বাবা-মাও। এমনকি মেয়েদের লেখাপড়ায় অভিভাবকরা বেশি ব্যয় করতেও দ্বিধা করছেন না।

সচেতন মহল মনে করছেন, স্কুলপড়ুয়া ছেলেটার হাতে বাবা-মা মোবাইল তুলে দিচ্ছে। কিন্তু মেয়েটার হাতে দিচ্ছে না। হয়তো অন্য কোনো চিন্তা থেকে দিচ্ছে না। তাতে মেয়েটা পড়াশোনায় মনোযোগ দিচ্ছে। আর ছেলেটা ফেসবুক, গেমিংয়ে সেটা ব্যবহার করছে। এভাবে ছেলেরা পড়ালেখায় ক্রমে চরম অমনোযোগী হয়ে পড়ছে।’ অতি মাত্রায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে।

মেয়েরা কেন এগিয়ে 

মেয়েরা পড়ালেখায় মনোযোগি হতে পারে কারণ তারা আগ্রহশীল, সাহায্যকারী, মনোযোগী, এবং সমর্থনশীল হতে পারেন। তাদের প্রকৃতি বিশেষভাবে পড়াশোনার ক্ষেত্রে উত্সাহী এবং অনুশাসিত হয়। মেয়েদের পড়ালেখায় মনোযোগের আরও  কিছু কারণ হতে পারে, যেমন..

সামাজিক প্রতিফলন: সাধারণ সমাজে শিক্ষার প্রতিফলন মেয়েদের হাতেই। তাই তারা নিজেকে সমাজের মধ্যে সাবাস করার জন্য শিক্ষালোভী হতে চায়।

প্রতিযোগিতামূলক: মেয়েদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষার আগ্রহ অনেক। আর তাই তারা শিক্ষা অর্জন ও পড়াশোনার মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারে।

সামর্থ্য ও উদারতা: মেয়েদের অনেকে সামর্থ্য ও উদারতা দেখানোর চাপে থাকে, যা তাদের পড়ালেখায় মনোযোগিতা বৃদ্ধি করে।

পরিবারের সমর্থন: পরিবারের সদস্যরা মেয়েদের উত্সাহ দিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগিতা বৃদ্ধি করে। এতে করে মেয়েদের ফলাফল আসে সাফল্যের।

এছাড়াও সম্পূর্ণ সমাজে মেয়েদের উপলব্ধি ও প্রতিযোগিতামূলক স্বাধীনতা দেওয়া উচিত, যা তাদের পড়ালেখায় আরও মনোযোগিতা বৃদ্ধি করে। এই সমস্ত কিছু কারণে মেয়েদের পড়ালেখায় মনোযোগিতা বৃদ্ধি হয় তার তাই তারা পরিক্ষার ফলাফলে অর্জন করে সাফল্য।

সাধারণত আদর্শ ছাত্রের বৈশিষ্ট্য হিসেবে আমরা জানি: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত থাকা, নিয়মিত পড়াশোনা করা, সহপাঠদের (জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণী নির্বেশেষে) সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা, নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলা, মাদক থেকে দূরে থাকা, প্রলোভন থেকে বিরত থাকা, এমনকি সমাজ ও রাষ্ট্র বিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকা।

যা করা উচিৎ

সম্প্রসারণ ও সমর্থন: পরিবারের সদস্যরা ছাত্রদের শিক্ষামূলক প্রক্রিয়ার সমর্থক করতে হবে এবং তাদের পক্ষ থেকে প্রশংসা ও সমর্থন প্রদান করতে হবে।

প্রোত্সাহন ও সমর্থন: পারিবারিক সদস্যরা ছাত্রদের এমন কার্যকলাপে উৎসাহিত করতে হবে যা ছাত্রদের শিক্ষামূলক ও ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ছাত্রদের প্রেরণা ও মনোনিবেশ: ছাত্র প্রোত্সাহন ও প্রেরণা প্রদানের মাধ্যমে তারা উচ্চ লক্ষ্য স্থাপন করতে পারে এবং নিজেদের উন্নতিতে মনোনিবেশ করতে পারে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ:

এছাড়া ছাত্র-ছাত্রী উভয়কেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন ক্যারিয়ার প্লানিং, দারিদ্র্য সহায়তা, নৈতিক শিক্ষা, ব্যক্তিগত উন্নতি ইত্যাদির জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। কেননা পারিবারিক শিক্ষাব্যবস্থা সামাজিক, মানসিক ও ব্যাক্তিগত উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি ছাত্র-ছাত্রীদের সুস্থ ও সমৃদ্ধ রেখে তাদের পড়ালেখা করতে উৎসাহিত করে। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরে মেধা বৃদ্ধি হতে পড়াশোনায় মনোযোগি হবে। এবংকি পরিক্ষার ফলাফল অগ্রগতি হবে। জাতি হবে শিক্ষিত। প্রজন্ম গড়বে শিক্ষিত মেধাযুক্ত।


পরীক্ষা   ছেলে   মেয়ে  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

বাড়ছে ‘ভার্চুয়াল অ্যাডিকশন’, তরুণীদের সচেতনতা কোথায়?

প্রকাশ: ১০:৪২ এএম, ১৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

বর্তামানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের জীবনকে করেছে সহজ থেকে সহজতর। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করেই জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতি বা ‘শিল্প বিপ্লব’ গড়ে উঠেছে। জ্ঞানের সমৃদ্ধি, সংরক্ষণ ও ব্যবহার তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে। কিন্তু তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধাটি যখন একদল অসৎ ও অপরাধপ্রবণ ব্যক্তির দ্বারা নেতিবাচকভাবে ব্যবহৃত হয় তখনই এর অপব্যবহারে বিপন্ন হয় সমাজ তথা প্রজন্ম।

প্রজন্মের ধারাবাহিকতায় ক্রমেই তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছে তরুণীরা। যুগের বিবর্তন এবং সরকারের সুক্ষ পরিকল্পনায় একদিকে তরুণীরা যেমন তাদের স্বাধীনা অর্জন করেছে অন্যদিকে সেই স্বাধীনতা রক্ষা করার নামে এই তরুণীদের অনেকেই বিষর্জন দিচ্ছে তাদের অস্তিত্ব ব্যক্তিত্ব কিংবা স্বতিত্ব।

জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’-এর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন পুরুষ, ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন তরুণী। যেখানে পুরুষের চেয়ে তরুণীদের সংখ্যা বেশি সেখানে তরুণীদের সমাজের সচেতনতা অবলম্বন করে তাদের স্বাধীনতা রক্ষা করা জরুরী।

তরুণীরা ভার্চুয়াল ব্যবহারে সচেতন না হলে পড়তে পারে বিপদজনক পরিস্থিতিতে। অনলাইনে যদি কোন সম্পর্কে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করতে হলে প্রাইভেসি নিশ্চিততা হানির ঝুঁকি থাকে। এটি তরুণীকে নিজের গোপনীয়তা সংরক্ষণ না করে বিপদে ফেলতে পারে। অনলাইনে যে সম্পর্ক এবং বার্তা পাঠানো হয়, তা যদি নিয়মিত হয় তাহলে মনের অপরিচিত মানুষের সাথে সমস্যা হতে পারে। যেমন, অবাঞ্ছিত মেসেজ বা ব্লক করা প্রবলেম হতে পারে। এছাড়াও অনলাইনে অসময়ে নেগেটিভ বা হানিকর কোনও সম্পর্কে পড়তে পারে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এমনকি ঝুঁকি থাকতে পারে অপরাধী হানির। অপরাধী হানির শিকার হতে পারে কিছু তরুনী, যেমন সাইবার বুলিং, অনলাইন নির্যাতন, কাইবার সাথে পার্সনাল তথ্যের অপসারণ ইত্যাদি।

এদিকে বিবিএস জানায়, এক দশকে দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে ২ কোটি ১১ লাখ ১৪ হাজার ৯১৯ জন। সর্বশেষ ২০১১ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭। ক্রমাগত ভাবে বৃদ্ধি হচ্ছে দেশের জনসংখ্যা। সরাকারের নানান উদ্যেগ বাল্যবিবাহ থেকে পরিবার পরিকল্পনার নির্দেশনায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হলেও বেশিভাগই হচ্ছে না তরুণীসচেতনতা অবলম্বন না করাতে।

অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার কিংবা ‘ভার্চুয়াল অ্যাডিক্টেড’ এর অসচেতনার ফলে সময় অপচয় হয় পর্যাপ্ত পরিমাণ। অনলাইনে সময় অপচয় একটি বিশেষ ধরণের সমস্যা কেননা দৈনন্দিন জীবনের কাজে অসুবিধা তৈরি করতে পারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অহেতুক পদ্ধতিতে সময় ব্যায় করা। প্রত্যেক তরুণীকেই নিজের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সংরক্ষণস্বার্থে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, বর্তমান প্রজন্মের তরুণী কিংবা তরুণীরাই পরিবর্তন করতে পারে দেশ কিংবা জাতীকে।

যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে তরুণীদেরও ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা তরুণীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর পরিপূর্ণতা পাবে সমাজ, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র, এবং তরুণীদের সঠিক অধিকার।


ভার্চুয়াল অ্যাডিকশন   তরুণী   সচেতনতা   প্রজন্ম  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন