ইনসাইড ইকোনমি

চামড়ার কারবারিদের ভবিষৎ অন্ধকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯:০৩ এএম, ২৫ অগাস্ট, ২০১৯


Thumbnail

স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এ বছর কাঁচা  চামড়ার দর পতনে রেকর্ড গড়েছে। চামড়ার দাম কমায় সংশ্লিষ্ট চামড়ার কারবারিদের ব্যবসার সমীকরণ মোড় নিয়েছে অন্য দিকে। বিগত সাত বছরে চামড়ার দাম কমতে কমতে এখন এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে, এই ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা শত বছরের অধিক সময় ধরে বংশ পরম্পরায় করে আসা পৈতৃক পেশা বদলে অন্য পেশা বা কর্মে মনোযোগী হচ্ছে। 

দেশের কাঁচা চামড়া প্রাথমিকভাবে সংরক্ষণ করার জন্য একমাত্র স্থান  হচ্ছে রাজধানী ঢাকার লালবাগ থানার পোস্তা এলাকা। এই এলাকায় শত বছরেরো অধিক সময় ধরে বংশ পরম্পরায় চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ব্যাবসার সাথে জড়িত ছিলো প্রায় দুই হাজারের অধিক পরিবার। যা কমতে কমতে এখন এসে দাঁড়িয়েছে ২৮৫ পরিবারে। এই এলাকায় মূলত চামড়ার কারবারিরা দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ হচ্ছে নিজেদের গোডাউনে চামড়া সংরক্ষণ করে ট্যানারী মালিকদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এদের চামড়া ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় থাকলেও এড়া মূলত এই ব্যাবসার মধ্যস্তভোগী। বিগত ত্রিশ বছর ধরে এই অংশটির সংখ্যা ছিলো ২০০ জন কিন্তু এখন সক্রিয়ভাবে ব্যবসা করছেন মাত্র ৮০ জন। অপর দিকে অন্য ভাগটি হচ্ছে স্থানীয় ভাষায় ফড়িয়া। এই অংশটিই দেশের প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ী। এরা  নিজেদের গাটের টাকা দিয়ে প্রান্তিক পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া কিনে এনে গোডাউনের মালিক বা মধ্যস্তভোগীদের কাছে সংরক্ষণ করেন। এই ফরিয়াদের সংখ্যা ছিলো প্রায় সতের শতের মতো কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন অধিকাংশই। সতের শত থেকে কমতে কমতে এই অংশটির সংখ্যা এখন এসে দাড়িয়েছে সর্বচ্চ দেড় শত জনে। 

পোস্তার চামড়া ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টদের কেন এমন অবস্থা? জানতে কথা হয় একশত বছরের পুরনো চামড়া সংরক্ষণ ও মধ্যস্তভোগী প্রতিষ্টান আব্দুর রাজ্জাক এ্যান্ড সন্সের সহকারী ব্যবস্থাপক ফিরোজ আহমদের সাথে। প্রায় পয়ত্রিশ বছর থেকে এই ব্যবসার সাথে যুক্ত ফিরোজ বাংলা ইনসাইডারের সাথে আলাপকালে জানান, এর জন্যে সব থেকে বেশি দায়ী ট্যানারী মালিকরা। তিনি বলেন, হাজারিবাগের ট্যানারী মালিকদের কাছে পোস্তার ১৩৫ টি মধ্যস্তভোগী প্রতিষ্ঠান চারশত কোটি টাকার উপরে পাওনা আছে। এই টাকাগুলো কিন্তু এক দিনে জমা হয়নি তাদের কাছে। এগুলো কম করে হলেও বিশ বছর ধরে আটকা আছে। ট্যানারীর মালিকদের ইচ্ছের উপর নির্ভর করে এই টাকাগুলো কবে পাবে মধ্যস্তভোগীরা। কোরবানির ঈদের আগে চারশত কোটি পাওনা টাকার মধ্যে পাঁচ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, যা গড় হিসেব করলে প্রত্যেকে পাওনা টাকার শতকরা পাঁচ ভাগও পায়নি। শুধু এ্যাপেক্স,আজিজ আর সুপার ট্যানারী নিয়মিত ও নগদ টাকা পরিশোধ করে বলে জানান তিনি।

এই ব্যবসার সিস্টেম হলো, ফড়িয়ারা নিজেদের টাকা দিয়ে চামড়া কিনে এনে আমাদের এখানে সংরক্ষণ করতে দেয় এবং আমরা সংরক্ষণ করে সেগুলো ট্যানারীর মালিকদের কাছে বিক্রি করে  দেই। বিক্রির পরে ট্যানারী মালিকরা আমাদের যে টাকা দেয় সেই টাকা থেকে সংরক্ষণ ও মধ্যস্ততার কমিশন রেখে বাকি টাকাটা আমরা ফড়িয়াদের দেই। ওই টাকাটা নিয়ে তারা আবার কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে। কিন্তু দেখেন, যখন যুগের পর যুগ টাকা আটকে থাকে ট্যানারির মালিকদের কাছে তখন ফড়িয়ারা আর কত দিন নিজেদের টাকা দিয়ে মাল কিনে ফেলে রাখবে। ব্যবসায় পুঁজি খাটিয়ে যদি সেই পুঁজি আটকে থাকে তখন সেখানে আর নতুন করে পুঁজি খাটাতে চায় না অনেকে। আবার অনেকে পুঁজি খাটাতে খাটাতে নিঃস্ব হয়ে গেছে এমন নজিরও আছে। 

উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, আমাদের আব্দুর রাজ্জাক এ্যাণ্ড সন্স পোস্তার পাঁচটা চামড়া সংরক্ষণ ও মধ্যস্তভোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য একটা। আমরাই ট্যানারী মালিকদের কাছে পাওনা আছি বিশ কোটি টাকা অথচ কোরবানির ঈদের আগে আমাদের দেওয়া হলো মাত্র ৩১ লাখ টাকা। এখন এই টাকা দিয়ে আমরা ফড়িয়াদের পাওনা পরিশোধ করবো না কি কোরবানির সময় নতুন চামড়া কিনবো? সব কিছু হিসেব করে আমরা ফড়িয়াদের পাওনা সাধ্যমতো পরিশোধ করেছি এবং টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় কোরবানীতে কোন চামড়া আমরা কিনি নাই। অথচ সারা বছরে আমাদের লভ্যাংশের পঞ্চাশ ভাগ কিন্তু আসে এই কোরবানির চামড়া থেকেই। এই অবস্থা এক দিনে সৃষ্টি হয়নি, ধাপে ধাপে এই অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে আমাদের ব্যবসা। গত পাঁচ থেকে সাত বছর থেকে আমরা এমন লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। বিগত কয়েক বছরে আমাদের প্রতিষ্ঠান ব্যবসার পরিধী ব্যাপক কমিয়ে ফেলেছে। শুধু আমরাই না এক সময় পোস্তায় দাপুটে প্রতিষ্ঠান ছিলো এমডি এন্টারপ্রাইস, সম্রাট এন্টারপ্রাইস, হাজী সিকান্দার ইন্টারপ্রাইসসহ মাহবুব এ্যান্ড সন্স।

এখন এই প্রতষ্ঠানগুলো কয়েকটা বন্ধ আর কিছু বন্ধের পথে। এসব প্রতিষ্টানের মালিক দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে আছে। সামাজিক ভাবে হেয়প্রতিপন্ন হবার আগেই অনেকেই ১ কোটি টাকার বাড়ি ৮০ লাখে বিক্রি করে দিতে চাইছেন। যিনি বাড়ি বিক্রি করতে চাইছেন ৮০ লাখ টাকায় তার ঋণ রয়েছে ৯০ লাখ টাকা। আবার অনেকেই চামড়ার গোডাউন বাদ দিয়ে সেগুলো প্ল্যাস্টিক ফ্যাক্টরির কাছে ভারা দিয়ে দিয়েছেন। কেও কেও বাবা-দাদার এই ব্যবসা গুঁটিয়ে নিয়ে শুরু করেছেন অন্য ব্যবসা। 

এতো গেলো মধ্যস্তভোগীদের কথা  কিন্তু যারা ফড়িয়া তাদের অবস্থা আরো করুণ। ফিরোজ আরো জানান, অনেকেই আটকে থাকা পুঁজি উঠাতে না পেরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। চোখের সামনে অনেককেই নিঃস্ব হয়ে পান-বিড়ি,সিগারেটের দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করতে দেখতেছি। 

তাহলে দেশে এই ব্যবসা আর প্রাথমিক পর্যায়ের সংশ্লিষ্টদের ভবিষ্যৎ কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এক কথা উত্তর দিয়ে বলেন, অন্ধকার। আসলে যেভাবে চলছে সেভাবে চললে পুরো দেশের চামড়া ব্যবসাই বন্ধ হয়ে যাবে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্যানারী মালিকদের সদিচ্ছা আর সরকারের সঠিক পদক্ষেপই পারে চামড়া শিল্পেকে এই বেহাল দশা থেকে বাঁচাতে। উদাহারণ টেনে তিনি বলেন, সরকার যখন কাঁচা চামড়া রপ্তানী করার কথা ঘোষণা দিলো তখন কিন্তু ট্যানরী মালিকরা উচিৎ মূল্যে চামড়া কিনতে শুরু করেছে, ঈদের এক দিন পরে যেই চামড়া বিনামূল্যে দিলেও কেও নেয় নাই সেই চামড়া এখন ট্যানারী মালিকরা  এগারশত থেকে তেরশত টাকায় কিনছে।

উল্লেখ্য, এবারের কোরবানী ঈদে জবাই করা পশুর কাঁচা চামড়ার দাম গরুর প্রতি বর্গফুট সরকারি ভাবে নির্ধারোন করে দেওয়া হয়েছিলো ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা আর ছাগলের চামড়া প্রতি বর্গফুট নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিলো ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা। কিন্তু ফড়িয়াদের হাতে টাকা না থাকায় চামড়া কেনার মতো মানুষ না পেয়ে দেশের নীলফামারি,বগুড়া,চট্টগ্রামসহ সিলেটের বেশ কিছু এলাকায় কাঁচা চামড়া মাটিতে পুতে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে।              



মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

নতুন করে রিজার্ভ চুরির সংবাদ, যা জানাল বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশ: ১০:২৮ পিএম, ১৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার চুরি করে নিয়েছে ভারতীয় হ্যাকাররা। দেশটির এক সংবাদপত্রে প্রকাশিত এ খবরটি সত্য নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মঙ্গলবার (১৪ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রের দপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, নিউইয়র্ক ফেডের সঙ্গে লেনদেনে নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে বর্তমানে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নীতি চালু রয়েছে। এর ফলে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, তা ভুয়া (ফেক)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, রিজার্ভ চুরির কোনো ঘটনা ঘটেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার চুরি করে নিয়েছে ভারতীয় হ্যাকাররা। মঙ্গলবার দেশটির এক সংবাদপত্রে এমন একটি খবর প্রকাশিত হয়। এতে সারাদেশে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। বিষয়টির সত্যতা জানতে অনেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে প্রতিবেদনটির সত্যতা নাকচ করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৬ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়ে যায়। ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলাটি দায়ের করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা। ১৬ মার্চ মামলাটি তদন্ত করে সিআইডিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। মামলাটিতে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ৪ ধারাসহ তথ্য ও প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ৫৪ ও ৩৭৯ ধারায় করা মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি। ২০১৬ সালের রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বর্তমানে মামলা চলছে।

ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে অপরাধীরা। চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় চলে যাওয়া দুই কোটি ডলার উদ্ধার করা হয়েছে। চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ডলার উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার এখনো ফেরত পাওয়া যায়নি।

রিজার্ভ চুরি   বাংলাদেশ ব্যাংক   নিউইয়র্ক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

দুর্বল ব্যাংকের ঋণ প্রদান বন্ধ করতে হবে: সাদিক আহমেদ

প্রকাশ: ০৯:৪৩ পিএম, ১৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে দুর্বল ও সমস্যাযুক্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদান বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ। 

মঙ্গলবার (১৪ মে) রাজধানীর গুলশানে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) আয়োজিত ‘সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও এর চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সাদিক আহমেদ। 

তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে কমিয়ে আনার আগপর্যন্ত দুর্বল ব্যাংকগুলোকে নতুন ঋণ দেওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। এটিই খেলাপি ঋণ কমানোর সবচেয়ে প্রত্যক্ষ ও টেকসই উপায়।

সাদিক আহমেদ বলেন, এ সময় পর্যন্ত ১৬টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বিতরণ করা মোট ঋণের ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। এর মধ্যে ৯টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ছিল ২০ শতাংশের বেশি। এই সমস্যাযুক্ত ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগই ব্যাংকিং পরিচালনা রীতি (ব্যাসেল ৩ নিয়মের আওতায় মূলধন পর্যাপ্ততার শর্ত) পূরণ করেনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে দীর্ঘমেয়াদি অগ্রগতি হচ্ছিল, তা গত চার বছরে একাধিক বাহ্যিক ধাক্কায় হুমকির মুখে পড়েছে। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, তবে এর ফলাফল এখন পর্যন্ত আশানুরূপ নয়। বর্তমানে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী রয়েছে। বিনিয়োগ ও রপ্তানি বৃদ্ধির হারও কম।

বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে উদ্বেগগুলোর মধ্যে চলতি হিসাবে ঘাটতিকে প্রথম স্থানে রাখেন সাদিক আহমেদ। তিনি বলেন, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে আমদানি ব্যয় বাড়ায় বড় ধরনের বাণিজ্য ও চলতি হিসাবের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সরকার আমদানি কমিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করেনি। ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রিজার্ভ কমেছে। মাত্র ১১ মাসে ৪৪ শতাংশ বা ২১ বিলিয়নের বেশি রিজার্ভ কমেছে। এটা বড় ধরনের চাপ।

সাদিক আহমেদের মতে, বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় দ্বিতীয় উদ্বেগ হচ্ছে রিজার্ভ কমে যাওয়া ও টাকার অবমূল্যায়ন। তিনি বলেন, আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও শুল্ক বৃদ্ধির পরও সরকার রিজার্ভের ক্ষতি রোধ করতে পারেনি। সরকার দীর্ঘদিন যাবৎ বিনিময় হার এক জায়গায় বেঁধে রেখেছিল। এখন টাকার অবমূল্যায়ন করে বিনিময় হার সমন্বয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে বর্তমান মূল্যস্ফীতির জন্য টাকার অবমূল্যায়নকে নয়, বরং বিনিময় হার ধরে রাখাকে দোষ দিতে হবে।

পিআরআই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দেশে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের আগস্টে বৃদ্ধি পেয়ে ৯ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছায়। এরপর থেকে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের আশপাশে থাকছে। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে কর-জিডিপি হার বাড়ছে না। এসব বিষয়ে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তবে আশ্চর্যজনকভাবে কোনো উদ্যোগই কাজ করেনি।

দুর্বল ব্যাংক   ঋণ খেলাপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

অর্থনৈতিক সংকট কাটবে কীভাবে?

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

অর্থনৈতিক সংকট ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। বাজারে তীব্র ডলার সংকট। সবকিছু মিলিয়ে ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথমবারের মত বড় ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার। অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠাটাই এখন সরকারের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ১৩ বিলিয়নের কিছু কম। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুর মার্চ-এপ্রিল মাসে দায় মেটানোর পর মোট রিজার্ভ কমে ২ হাজার ৩৭৭ কোটি ডলার বা ২৩ দশমিক ৭৭ বিলিয়নে নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর হিসাব পদ্ধতিতে বিপিএম-৬ অনুযায়ী বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন এক হাজার ৮৩২ কোটি ডলার বা ১৮.৩২ বিলিয়ন। প্রকৃত বা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারের কিছু কম। আকুর বিল পরিশোধ করা হয়েছে ১৬৩ কোটি ডলার। এর ফলে রিজার্ভ কমে যায়।

আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ১১ কোটি মার্কিন ডলার। এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আইএমএফ ১ হাজার ৪৭৫ কোটি ডলারে নামিয়েছে। যদিও এখন তা ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের কম। প্রতি মাসে দেশের আমদানি দায় মেটাতে এখন প্রায় ৫০০ কোটি ডলার প্রয়োজন হচ্ছে। আর এই অবস্থায় অর্থনৈতিক সংকট ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠেছে।

এপ্রিলে মুদ্রাস্ফীতি আরও বেড়েছে এবং তা ১০ শতাংশ ছুঁইছুঁই। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যের মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশ অতিক্রম করছে। এই অবস্থা উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। এছাড়া বাজারে ডলারের দাম এ লাফে ৭ টাকা বাড়ানোর ফলে এখন ডলার সংকট দেখা দিয়েছে। ডলারের জন্য হাহাকার ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে আমদানির ক্ষেত্রে। এই রকম অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করতে গিয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে সরকারকে এক ধরনের কৃচ্ছতা সাধন এবং সংকোচন নীতি অনুসরণ করতে হচ্ছে। তবে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য তারা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন যে ডলারের মূল্য ৭ টাকা বৃদ্ধির ফলে এখন প্রবাসী আয় বাড়বে। এই মাসে প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে তারা আশা করছেন। তাছাড়া রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ব্যাপারেও তারা আশাবাদী।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী নিজে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টি বিবেচনা করছেন এবং সেই কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক বৃদ্ধির একটি বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে। যে সমস্ত দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশি বাণিজ্য রয়েছে, যেমন- ভারত, চীন; সেগুলোতে ডলারের পরিবর্তে সে দেশীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করার বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। আভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির জন্য সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ২০২৬ সাল নাগাদ বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে অর্থনৈতিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। তবে সরকার মনে করছে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রস্তুতি চলছে, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং এ ধরনের ব্যবস্থাগুলোর সুফল আগামী অর্থবছরে পাওয়া যাবে।


ডলার   বাংলাদেশ ব্যাংক   অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার বাংলাদেশ   আইএমএফ   রিজার্ভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোমল পানীয়র করভার বাড়ার সম্ভবনা

প্রকাশ: ১১:১৭ এএম, ১৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কোমল পানীয় বা কার্বোনেটেড বেভারেজের বিক্রি থেকে প্রাপ্ত আয়ের ওপর কর (টার্নওভার ট্যাক্স) ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। 

এই হার চলতি অর্থবছরের বাজেটেও প্রস্তাব করেছিল সংস্থাটি। পরে কোম্পানিগুলোর দাবিতে এনবিআর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। এর আগে এই করহার ছিল শূন্য দশমিক ছয় শতাংশ। 

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বিষয়টির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কার্বোনেটেড বেভারেজের ওপর ৫ শতাংশ করহার করার পরিকল্পনা নিচ্ছে এনবিআর। যদিও চলতি অর্থবছরেও এই প্রস্তাব ছিল আয়কর বিভাগের। পরে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। তবে আগামী অর্থবছরে এই করহার ৫ শতাংশ করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী সবুজ সংকেতও দিয়েছেন। অর্থাৎ রোববার এনবিআরের সঙ্গে বৈঠকে এই করহারের বিষয়ে সায় দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তবে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বাজেটের সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর বাংলাদেশের পানীয় শিল্পের প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে। কোমল পানীয়ের খাত থেকে বর্তমানে জাতীয় কোষাগারে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা আসে। প্রস্তাবিত টার্নওভার কর বেড়ে যাওয়ার সরাসরি ফলাফল হিসেবে এটি ব্যাপকভাবে কমে যাবে। 


কোমল পানীয়   করভার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

মূল্যস্ফীতি ফের ১০ শতাংশ ছাড়াল

প্রকাশ: ০৭:১৬ পিএম, ১৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

এপ্রিলে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০ শতাংশের ঘরে উঠেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে এখন ১০ দশমিক ২২ শতাংশে। অর্থাৎ ৪ মাস পর খাদ্য মূল্যস্ফীতি আবার দশ শতাংশ ছাড়াল। আগের মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

সোমবার (১৩ মে) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। যা এপ্রিলে ১০ দশমিক ২২ শতাংশে দাঁড়ায়। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অন্যদিকে, খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি গত মার্চের তুলনায় এপ্রিলে সাত বেসিস পয়েন্ট কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ হয়েছে। মার্চে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ।

অন্যদিকে, গ্রামে শহরের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি। গত এপ্রিলে গ্রামে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। শহরে এই হার ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। পাশাপাশি গ্রামে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত খাতে এই হার ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি   বিবিএস  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন