নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:১৭ এএম, ০৪ অক্টোবর, ২০১৯
পুজোর আবেশ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। উৎসবমুখর করে তুলতে তাই চলছে নতুন জামা কেনার নানান সব বায়না। সাহা বংশের একমাত্র ছেলে শোভন সাহাও তাতে নেই পিছিয়ে। মাকে নিয়ে তাই চলে এসেছে শপিং মলে। টানা দেড় ঘন্টা পুরো শপিং মল ঘুরেও ৬ বছরের শোভন নিজের জন্য একটাও জামা সিলেক্ট করতে পারলোনা। পছন্দ হচ্ছে না, তা ঠিক নয়। ব্যাপারটা হচ্ছে সাইজে হচ্ছেনা। চিল্ড্রেন্স সেকশনের কোনো শার্টই সাহার গায়ে হচ্ছেনা। বড়দের সেকশনে আবার ডিজাইন পছন্দ হচ্ছেনা। শেষমেষ অপছন্দের এক জামা কিনে মুখ ভার করেই ফিরলো সে বাড়ি।
শোভনের মতো এমন মন খারাপ আপনার বাচ্চার হচ্ছে না তো? বয়সের তুলনায় অতিরিক্ত মুটিয়ে যায়নি তো? ভালো স্বাস্থের আড়ালে আপনার শিশু স্থুল নয়তো?
শিশুবিশেষজ্ঞ ডঃ হানিফের সাথে কথা বলে আমরা তাই জানাচ্ছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-
স্থুলতা ও পারিবারিক ভাবনা
শিশুর ওজন বৃদ্ধি নিয়ে এক এক পরিবারে এক এক রকম চিন্তা। অনেকে নিজের শিশুর বেড়ে ওঠাকে নেন আনন্দের সাথে, ভাবেন বাচ্চা খাওয়া দাওয়া করছে ভাল করে, স্বাস্থ্যবান হচ্ছে। আবার অনেক পরিবারে সামান্য ওজন বৃদ্ধিকেও মুটিয়ে যাওয়া ধরে নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে মানসিক অত্যাচারও করা হয় শিশুটিকে, যদিও এধরণের পরিবারের সংখ্যা কম।
তবে বেশিরভাগ পরিবারের মা-বাবাই শিশুদের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন নন। স্থূলতা ও ভাল স্বাস্থ্যের মধ্যে বিশাল ফারাক রয়েছে। একটি স্থূল শিশুর বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের সম্ভাবনা তো থাকেই, তার সামাজিক জীবনও বেশি সুখের হয় না, খেলাধুলার সময় বা বন্ধুদের কাছে তাদের হেনস্থা হতে হয় প্রায়ই।
স্থূলতা কাকে বলা যায় বা কত ওজন হলে একটা শিশু স্থূলতায় ভুগছে বলা যাবে? এটি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে শিশুর বয়স ও উচ্চতার উপর। একটি ১০ বছর বয়সী ৪ ফুট উচ্চতার বাচ্চার ওজন যদি ৬০-৭০ কেজি হয় তাহলে তাকে স্থূল বা ওবেস বলা যায়।
কী কারণে সাধারণত হয় স্থুলতা
শিশুদের খাদ্যাভ্যাস
বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের খাদ্যাভ্যাসে এসেছে বিরাট পরিবর্তন। ফুডি কালচার, রেস্টুরেন্টের সহজলভ্যতা, ক্যানড ফুড ও স্ন্যাকসের বাজার দখল, চিনি জাতীয় খাবারের আধিক্য ইত্যাদি কারণে শিশুদের বর্তমান ডায়েট চার্টের প্রায় পুরোটাই অস্বাস্থ্যকর খাবারে পরিপূর্ণ। শিশুরা সাধারণত যেসব খাবার অধিক পরিমাণে খাচ্ছে সেগুলো হল:
১। ফাস্টফুড; যেমন বার্গার, পাস্তা, পিৎজা, ফ্রাইস ইত্যাদি। এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে, যা সহজে বার্ন হতে চায় না সারাদিন পরিশ্রম করলেও। আর শুয়ে বসে থাকা আর ফাস্টফুড খাওয়া একসাথে চললে তো কথাই নেই।
২। কোমল পানীয় বা কোল্ড ড্রিঙ্কস; এসব পানীয়তে নিম্নমানের কার্বোহাইড্রেট ও চিনি থাকে।
৩। কেক, মিষ্টি, ডোনাট ইত্যাদি মিষ্টি ও চিনি জাতীয় খাবারের প্রতি শিশুদের আগ্রহ ছিল সবসময়ই। এখন এগুলো অনেক সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ার কারণে গ্রহণের পরিমাণও বেড়েছে।
হরমোন জনিত কারণ
প্রত্যেকটি স্থূল শিশুর পিছনেই তার খাদ্যাভ্যাস দায়ী নয়, অনেকেই হরমোন জনিত কারণে স্থূল হয়ে যায়। সেসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ভাল।
কি ধরণের রোগ হতে পারে স্থূলতা থেকে?
স্থূলতা থেকে হতে পারে বিভিন্ন ধরণের রোগ বালাই। শরীরে বাড়তি মেদ শরীরের স্বাভাবিক প্রায় সকল প্রক্রিয়া ব্যহত করে, তাই স্থূল শিশুরা দুর্বলতা, ক্লান্তি থেকে শুরু করে অনেক রকম সমস্যায় ভুগে থাকে যার জের প্রাপ্তবয়সে এসেও থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ রয়েছে যা স্থুলতার কারণে হয়ে থাকে।
১। রক্ত চলাচলের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যহত হয় মেদের কারণে, তাই ধমনী ও শিরার রোগ হতে পারে।
২। স্থূলতায় উচ্চ রক্তচাপ হওয়া স্বাভাবিক, শিশুদের মধ্যেও।
৩। লিভারে ফ্যাট জমে নন-অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার সিনড্রোম হতে পারে।
৪। পিত্তথলিতে পাথর জমতে পারে।
৫। অ্যাজমা বা ক্যান্সার হতে পারে।
৬। মেয়েদের ক্ষেত্রে ঋতুচক্র অনিয়মিত হতে পারে।
৭। আচরণগত বা মনস্তাত্বিক সমস্যাও দেখা যায়।
শিশুর স্থূলতায় করণীয়
স্থূলকায় শিশুর জীবন খুব সহজ হয় না। তাই তার জন্য সবার আগে প্রয়োজন পরিবারের সহযোগিতা। তার পরিবারের মানুষ যদি তার অবস্থা না বুঝতে পারে তাহলে তা একটি শিশুর জন্য প্রচন্ড মানসিক কষ্টেরও কারণ হতে পারে। এবং তারা যেহেতু শিশু, তাদের ভালমন্দের সিদ্ধান্ত প্রায় পুরোটাই বাবা-মাকেই নিতে হবে। শিশুর স্থূলতা সুস্থ উপায়ে কমিয়ে আনা পরিবারে একটি বিশাল প্রায়োরিটি হিসাবে দেখা উচিত।
১। স্থূল শিশুদের ভুলেও ক্র্যাশ ডায়েট, অল প্রোটিন/কার্ব ডায়েট বা অন্য ওজন কমানোর ডায়েট দেয়া যাবে না। শিশু বয়সে সবরকম পুষ্টির সমন্বয় দরকার খাদ্যে। তাই এধরণের ডায়েটে তাদের উচ্চতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ ব্যহত হতে পারে। তাদের ডায়েটের ব্যাপারে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কাজ করতে হবে, তবে কিছু জিনিস আগে থেকে জেনে নেয়া দরকার।
ফাস্টফুডের মূল বৈশিষ্ট্য কি? ফাস্টফুড আকারে ক্ষুদ্র হলেও এতে থাকে হাজার হাজার ক্যালরি। তাই শরীরে একগাদা ক্যালরির যোগান দিলেও তা পেট ভরাবে না, আরও খেতে ইচ্ছা করবে। কিন্তু শরীরে মেদ ও পেশীর পরিমাণ আবার নির্ধারিত হবে আমরা কি পরিমাণ ক্যালরি জমা রাখছি শরীরে যাকে বলে ক্যালরিক সারপ্লাস। ফাস্টফুডের ক্ষেত্রে ক্যালরিক সারপ্লাস অত্যন্ত বেশি হয়।
এক্ষেত্রে বিকল্প কি?
বিকল্প হচ্ছে শাক সবজি ও শস্য জাতীয় খাবার। এসব খাবারে ক্যালরি থাকে অনেক কম, তাই খুব বেশি করে খেলেও শরীরে ক্যালরিক সারপ্লাস ঘটবে না, কিন্তু পেটও ভরবে। একই সাথে এসব খাবারে খাদ্যগুণও থাকে প্রচুর পরিমাণে। তাই শিশুদের শাক সবজি খেতে উৎসাহিত করতে হবে। সাধারণত শিশুরা শাক সবজি খেতে পছন্দ করে না। তাদের একবারে জোর না করে আস্তে আস্তে বিভিন্ন শাক সবজির মজাদার খাবার রান্না করে শাক সবজির প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে।
২। প্রোটিনের উৎস হিসেবে মাছ, মাংস, দুধ ইত্যাদি চলতে পারে, তবে এসব যেন বেশি চর্বিযুক্ত না হয়। এবং শাক সবজির সাথে অনুপাতে খানিকটা কম করে এসব খাবার দেয়া উচিত স্থূল শিশুকে, প্রথমাবস্থায়। কারণ শরীর প্রোটিন বার্ন করে সবচেয়ে দ্রুত, তাই প্রোটিন ইনটেক বেশি হলে শরীরের ফ্যাট বার্ন হবে না সহজে।
৩। ফাস্টফুড, ড্রিংকস, চিনি জাতীয় খাবার ইত্যাদি পুরোপুরি বাদ দেয়া উচিত, কিন্তু একবারে বাদ দিলে তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তার চেয়ে আস্তে আস্তে কমিয়ে আনুন। সপ্তাহে একবার, মাসে একবার এভাবে কমিয়ে আনুন এসব খাবারের অভ্যাস।
৪। তাদের বাইরে খেলার অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করুন, সময় পেলে নিজে খেলুন তার সাথে, তাতে আপনার স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। এছাড়া পরিবারে সবাই একত্রে হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন প্রতিদিন, যা পরিবারে সম্পর্ক ভালো রাখতেও খুব উপকারী।
৫। শিশুকে মোবাইল, পিসি, টিভি ইত্যাদি অতিরিক্ত ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করুন। তাকে বিভিন্ন জায়গায় যেমন পার্কে বা লেকে বেড়াতে নিয়ে যান। বাইরের খোলা বাতাসের স্বাদ পেলে তার ঘরকুনো হয়ে থাকার অভ্যাস কমে যাবে অচিরেই। তবে ভুলেও তার থেকে তার গ্যাজেট কেড়ে নেবেন না। সবই যেন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়, কারণ সে শিশু, তার উপর জোর খাটানো যাবে না।
এভাবে খানিকটা সুস্থ নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তুললে আপনার শিশু আর স্থূল থাকবে না, কোন রকম রোগের শিকারও হবে না। এতে আপনার শিশুটির মানসিক অবস্থা ও পরিবারের সাথে তার সম্পর্কের উন্নতিও ঘটবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড টিকা গ্রহণের কারণে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়
ভুগে বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে এই
টিকা যারা নিয়েছেন তাদের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে কি না, তা খুঁজে দেখতে স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
বুধবার (৮ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সার্বজনীন
স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে টিকাদান কর্মসূচিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আয়োজিত সভায়
মন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন।
সামন্ত লাল সেন বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। কিছু দেশে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানা গেছে। আমরাও যেহেতু অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা গ্রহণ করেছি, আমাদের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে কি না, তা খুঁজে দেখতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে এই বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা
মন্তব্য করুন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত
দুরারোগ্য ব্যাধি। এ রোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি তাৎপর্যপূর্ণ অবদান
রেখে চলেছে। বাংলাদেশে এই রোগের জিন বাহকের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। বাহকের সংখ্যা দিন
দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের সার্বিক সুস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বাহকে-বাহকে
বিয়ে হলে দম্পতির সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বিধায় বিয়ের আগে এই
রোগের জিন বাহক কি না তা জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
বুধবার (৮ মে) বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে
তিনি এই আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বাস্থ্য খাতে ‘রূপকল্প-২০৪১’
বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা সক্ষম হব,
ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাসহ
বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা
পৌঁছে দিতে এবং জনসাধারণকে সুলভে মানসম্মত স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার কল্যাণ (এইচএনপি)
সেবা দেওয়ার মাধ্যমে একটি সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার লক্ষ্যে আওয়ামী
লীগ সরকার ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। আমরা একটি গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি
প্রণয়ন করে যুগোপযোগী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন নতুন হাসপাতাল, নার্সিং
ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে হাসপাতালগুলোর শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধিসহ
চিকিৎসক, নার্স, সাপোর্ট স্টাফের সংখ্যাও বৃদ্ধি করেছি। গ্রামপর্যায়ে জনগণের দোরগোড়ায়
স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সারা দেশে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন
স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের
মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ফ্রি স্বাস্থ্য, পরিবার কল্যাণ ও পুষ্টি সেবা দেওয়া হচ্ছে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোন ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা
চালু করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্য
খাতের উন্নয়নে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, মানুষের
গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ মাতৃমৃত্যু, নবজাতকের মৃত্যু ও অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশুমৃত্যু হার,
অপুষ্টি, খর্বতা, কম ওজন ইত্যাদি হ্রাসে ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা
থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এমডিজি লক্ষ্য অর্জনে অসাধারণ সফলতা দেখিয়েছে।
২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টগুলো (এসডিজি) অর্জনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মন্তব্য করুন
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সমাজের সচেতন নাগরিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে
থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার (৮ মে) বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে
তিনি এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি এবং অনেক
ক্ষেত্রেই তা জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তাই এ রোগ প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার
বিকল্প নেই। থ্যালাসেমিয়া বিস্তার রোধে বাহকদের এবং আত্মীয়ের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ককে
নিরুৎসাহিত করতে হবে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রে সন্তান ধারণের পর প্রয়োজনীয় সতর্কতা
অবলম্বন করতে হবে।
বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি কর্তৃক ‘বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস’
উদযাপনের উদ্যোগকে রাষ্ট্রপতি স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘সবাই মিলে থ্যালাসেমিয়া মুক্ত বাংলাদেশ
গড়ব-এটাই হোক এবারের বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবসের অঙ্গীকার।’
তিনি বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি জিনবাহিত রোগ যা বাহকের মাধ্যমে ছড়ায়।
স্বামী-স্ত্রী উভয়ই থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হলে সন্তানদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা
থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধে থ্যালাসেমিয়া জিনবাহক নারী-পুরুষের
মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়ে থাকে। এজন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ
হওয়ার আগেই পরীক্ষার মাধ্যমে পুরুষ বা নারী কেউ এ রোগের বাহক কিনা তা নির্ণয় করা জরুরি।
এছাড়া রক্তস্বল্পতাজনিত ভয়াবহ এ রোগটি প্রতিরোধে জনসচেতনতা গড়ে তোলাও প্রয়োজন।
রাষ্ট্রপতি ‘বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সব কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন থ্যালাসেমিয়া
মন্তব্য করুন
গত পাঁচ বছরে চিকিৎসাসেবা খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের ৩৫ শতাংশ
নিষ্পত্তি করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। অন্যদিকে ৬৫ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন
বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
অভিযোগ নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রতার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আগ্রহে ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করেন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামালউদ্দিন আহমেদ।
আরও পড়ুন: অসুস্থতা নিয়েও পুরুষের তুলনায় বেশিদিন বাঁচে নারী: গবেষণা
বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে চিকিৎসাসেবাসংক্রান্ত
৬৬টি অভিযোগ নিয়ে কাজ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এ সময় নিষ্পত্তি হয়েছে ২৩টি অভিযোগ।
সে হিসাবে ৩৫ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে ৪৩টি অভিযোগ,
যা মোট অভিযোগের ৬৫ শতাংশ।
এর মধ্যে ২০২৩ সালে চিকিৎসাসেবা সংক্রান্ত ২৫টি অভিযোগ নিয়ে কাজ
করেছে মানবাধিকার কমিশন, যা গত পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ। চলতি বছরের ৩১ মার্চ বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে ২০২৩ সালের (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) বার্ষিক প্রতিবেদন হস্তান্তর
করেন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামালউদ্দিন আহমেদ।
এদিকে ২০২৩ সালের ২৫টি অভিযোগের মধ্যে ভুক্তভোগী কর্তৃক দায়ের করা
অভিযোগ দুটি।
অন্যদিকে কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমটো) হয়ে গ্রহণ করা অভিযোগের
সংখ্যা ২৩, যা এ সময় কমিশন কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন সুয়োমটো অভিযোগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ।
ভুক্তভোগীদের দায়ের করা দুটি অভিযোগ নিষ্পত্তি হলেও কমিশন কর্তৃক গৃহীত ২৩টি অভিযোগের
মধ্যে মাত্র তিনটি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে।
নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে আরও ২০টি অভিযোগ। সে হিসাবে গত বছর চিকিৎসাসেবা
সংক্রান্ত অভিযোগের ৮০ শতাংশ নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
এদিকে, ২০২০ সালে করোনাকালীন সর্বনিম্ন দুটি অভিযোগ নিয়ে কাজ করেছে
কমিশন।
এর মধ্যে একটি অভিযোগ জমা পড়ে আর কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দায়ের
করে অন্যটি। ওই বছর কোনো অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়নি।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন ২০০৯-এর ধারা ১২ অনুযায়ী, দেশের নাগরিকরা কমিশনে চিকিৎসাসেবা খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবা খাতের অব্যবস্থাপনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এসবের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করে সংস্থাটি। প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে কমিশন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট তদারকি কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। প্রতিবেদন পাওয়ার পর কোন কোন ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন তার গুরুত্ব বিবেচনা করে উচ্চ আদালতে রিট করে কমিশন।
আরও পড়ুন: করোনা টিকা ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
চিকিৎসাসেবা খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতার
জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আগ্রহের ঘাটতিকে দায়ী করছেন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামালউদ্দিন
আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘যেসব অভিযোগ কমিশনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট
কর্তৃপক্ষের কাছে জমা পড়েছে, সেগুলো নিষ্পত্তির জন্য আমরা নিয়মিত তাগিদ দিয়ে থাকি।
চিকিৎসাসেবা খাতের অভিযোগগুলো নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আরো বেশি আগ্রহী
হতে হবে।’
এ খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতে কমিশন
অনেক ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসাসেবা নিতে এসে অনিয়মের শিকার রোগীদের
অভিযোগ জমা পড়তে পড়তে পাহাড় হয়েছে। আবার ভুল চিকিৎসা, সেবা নিতে গিয়ে অনিয়মের শিকার
হয়েছেন এমন অভিযোগও অনেক। স্বাস্থ্যসেবার প্রকৃত চিত্র শিগগিরই পরিসংখ্যানের মাধ্যমে
তুলে ধরবে কমিশন। এরপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘জনসাধারণকে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে মনে করে কমিশন। গত বছর আমরা জরায়ু ক্যান্সারের ভুয়া ভ্যাকসিন, হাসপাতালের শয্যা নিয়ে বাণিজ্য, ওষুধের মোড়ক পরিবর্তন করে বিদেশি ওষুধ বলে বিক্রি, অনুমোদন ছাড়া ক্লিনিক এবং বেসরকারি হাসপাতাল বন্ধে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি। তবে আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে পারে না কমিশন। এ জন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে কার্যকর ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে প্যারিস নীতিমালার আলোকে আইনের সংশোধন জরুরি।’
চিকিৎসাসেবা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
মন্তব্য করুন
অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড টিকা গ্রহণের কারণে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগে বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে এই টিকা যারা নিয়েছেন তাদের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে কি না, তা খুঁজে দেখতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত দুরারোগ্য ব্যাধি। এ রোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশে এই রোগের জিন বাহকের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। বাহকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের সার্বিক সুস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বাহকে-বাহকে বিয়ে হলে দম্পতির সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বিধায় বিয়ের আগে এই রোগের জিন বাহক কি না তা জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।