নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২৭ এএম, ২৩ জুন, ২০১৭
রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্র চর্চা হয় কিনা তা নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক চলছে। কোন দল কিভাবে চলে, দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চা হয় কিনা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে কিনা, নেতা নির্বাচন কিভাবে হয় অনেক আলোচনাই চলে। আমি আমার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কিভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলে সেটা নিয়ে আলোচনা করব।
২০০২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও কাউন্সিল করি। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ক্ষমতা দখল করে। নির্বাচনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থক ভোটারদের ওপর অমানবিক অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে।
আমি যে সমস্ত এলাকায় নির্যাতন হয়েছি সে সমস্ত এলাকায় সফর করি। অনেক বাধা আসে চারদলীয় জোট সরকারের পক্ষ থেকে। আমার দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগীতায় চারদলীয় জোটের সন্ত্রাসী বাহিনী আক্রমন চালাতে থাকে। এ অবস্থায় দলকে সংগঠিত করা একান্তভাবে প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
আমি যখন সরকারে ছিলাম তখন প্রত্যেক জেলা তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা করেছি। এক একদিন এক এক জেলার উপজেলা, ইউনিয়ন ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় করি। কেন্দ্রীয় কমিটি, সভাপতিম-লী, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত মতবিনিময়ের সভা করেছি। বিভাগীয় সম্মেলন করেছি। এই বিভাগীয় সম্মেলনে ইউনিয়ন, উপজেলা নেতারা বক্তব্য রেখেছে।
২০০১ সালের নির্বাচনের পর যে নির্যাতন চলছিল তার প্রতিবাদে একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন করা হয়। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ কনভেনশন উপলক্ষে সমগ্র দেশ থেকে নেতৃবৃন্দ ঢাকায় আসে ও অংশগ্রহণ করে। নির্যাতিতদের তথ্য সরবরাহ করে ও নির্যাতিতদের নিয়ে আসে।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিনিধিরা যোগদান করেন। কানাডা থেকে মানবাধিকার কর্মী মি: স্লোন, নেদারল্যান্ডের সাবেক মন্ত্রী ... যোগ দেন। পাকিস্তান থেকে আসমা জাহাঙ্গীরের আসার কথা ছিল কিন্তু বাংলাদেশ তাঁকে ভিসা দেয় নাই বলে আসতে পারেন নাই।
২০০২ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সমগ্র দেশ থেকে কাউন্সিলার ও ডেলিগেট পাঁচ হাজার এবং সেই সাথে নেতাকর্মী মিলে চল্লিশ হাজার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকে। প্রত্যেক জেলার পক্ষ থেকে কাউন্সিলার ও ডেলিগেটরা বক্তব্য রাখেন ও লিখিত প্রতিবেদন পেশ করেন। অত্যন্ত বৈরী পরিবেশ ও প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও সফল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী সম্মেলনের পূর্বে কতগুলো সাব কমিটি গঠন করা হয়। যেমন ১. গঠনতন্ত্র সাব কমিটি, ২. ঘোষণাপত্র সাব কমিটি, ৩. অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি, ৪. সম্মেলন পরিচালনা কমিটি, ৫. অভ্যর্থনা কমিটি, ৬. আপ্যায়ন কমিটি, ৭. অর্থ কমিটি, ৮. মঞ্চ কমিটি, ৯. প্রচার ও প্রকাশনা, ১০. নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি, ১১. সংস্কৃতি বিষয়ক কমিটি। কমিটিগুলো স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করে। তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। নির্বাচন পরিচালনা, নীতিমালা গ্রহণ ও সম্মেলনে নির্বাচনের দায়িত্ব এই কমিশনের। সমঝোতা না হলে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন হয়। এই নিয়মে আওয়ামী লীগের সম্মেলন কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে থাকে।
গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র এবং অর্থনৈতিক নীতিমালা কমিটির সুপারিশ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির কাছে পেশ করা হয়। এর পূর্বে প্রত্যেক জেলা কমিটির কাছ থেকেও মতামত সংগ্রহ করা হয়, তারই আলোকে কমিটি খসড়া প্রস্তাব কার্যকরী সংসদের কাছে পাঠায়। সেখানে বিস্তারিত আলাপ করে প্রস্তাব প্রস্তুত করা হয় কাউন্সিলের জন্য। যেকোনো সংশোধন কাউন্সিল পাস করবে। কেন্দ্রীয় সংসদ সংশোধনীর সুপারিশগুলো প্রস্তুত করবে। সেখানে কাউন্সিলারদের আপত্তি থাকলে তা আমলে নেওয়া হয়ে থাকে। সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী কাউন্সিলে আয় ও ব্যয়ের হিসাব দাখিল করতে হবে এবং বাজেট পাস করতে হবে। কেন্দ্রীয় সংসদ ও জাতীয় কমিটি বাজেট অনুমোদন করলে কাউন্সিলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই সকল নিয়ম যথাযথভাবে মানা হয়। গঠনতন্ত্র মেনেই সংগঠন পরিচালনা করা হয়। সদস্য সংগ্রহ অভিযান চালানো হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটা উপদেষ্টাম-লী আছে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বিশিষ্টজনদের সম্মতি সাপেক্ষে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য করা হয়। উপদেষ্টা পরিষদ নিয়মিত বৈঠক করে থাকে। সভানেত্রীর সভাপতিত্বে সাধারণত বছরে এক বা দুবার সভা হয়। ২০০২ সালের পর ছয়টা সভা করা হয়েছে। এসব সভায় উপদেষ্টাম-লীর সদস্যদের নিয়ে তিনটি সেল গঠন করা হয়। যথা
১. রাজনৈতিক সেল,
২. অর্থনৈতিক সেল ও
৩. সামাজিক সেল।
উপদেষ্টাম-লী থেকে একজন চেয়ারম্যান বাকি সবাই সদস্য। ২০০২ সালের কাউন্সিলের পর যে তিনটি সেল গঠন করি তার চেয়ারম্যান ছিলেন রাজনৈতিক সেল সামসুল হুদা হারুন (প্রয়াত), অর্থনৈতিক সেলÑ শাহ এ এম এস কিবরিয়া (নিহত) এবং সামাজিক সেল এ এস এইচ কে সাদেক (প্রয়াত)।
এসব সেলের কাজ হল সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করা, দলের করণীয় সম্পর্কে উপদেশ দান ও ভবিষ্যাৎ কর্মসূচী কি হবে, রাষ্ট্রে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিষয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও দলকে তা সরবরাহ করে থাকেন। এই সেলগুলোর মিটিং নিয়মিত করা হয়। লিখিত মন্তব্য, সুপারিশ দলকে দিয়ে থাকে।
কুড়িটা সাব কমিটি আছে। উপদেষ্টাম-লীর সদস্যদের মধ্য থেকে চেয়ারপারসন ও কো-চেয়ারপারনস নির্বাচন করা হয়। কার্যকরী সংসদের বিষয়ভিত্তিক সম্পাদক, সদস্যসচিব হিসেবে কাজ করেন। পার্লামেন্টারি পার্টির সদস্য, যিনি জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য তিনি সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য হবেন পদাধিকার বলে। যেমন জাতীয় সংসদের শিক্ষা বিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির যে সদস্য থাকবেন তিনি দলের এই সাব কমিটির সদস্য থাকবেন। এর ফলে দলের সাথে সংসদের গৃহীত কার্যক্রম ও দলের নীতিমালার আদান প্রদান সহজ হয়। দেশ ও জাতির উন্নয়নের কাজ দ্রুত করা যায়। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকে। কুড়িটা সাব কমিটি হচ্ছে:
১. অর্থ ও পরিকল্পনা,
২. আন্তর্জাতিক,
৩. আইন বিষয়ক,
৪. কৃষি ও সমবায়,
৫. তথ্য ও গবেষণা,
৬. ত্রাণ ও সামাজকল্যাণ,
৭. দপ্তর,
৮. ধর্ম,
৯. প্রচার ও প্রকাশনা,
১০. বন ও পরিবেশ,
১১. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি,
১২. মহিলা বিষয়ক,
১৩. মুক্তিযুদ্ধ,
১৪. যুব ও ক্রীড়া,
১৫. শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক,
১৬. শিল্প ও বাণিজ্য,
১৭. শ্রম ও জনশক্তি,
১৮. স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা,
১৯. সংস্কৃতি,
২০. স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন বিষয়ক।
২০০২ সালের কাউন্সিলের পর ২০০৬ পর্যন্ত যে সভাগুলো হয়েছে:
প্রেসিডিয়াম সভা-৫৫, কার্যকরী সংসদের নিয়মিত সাধারণ সভা-১৭, কার্যকরী সংসদের জরুরী সভা-৫১, সম্পাদকম-লীর সভা-১৭, মোট=১৪০।
উপদেষ্টাম-লী, তিনটি সেল ও সাব কমিটিগুলোর মিটিং, সেমিনার, গোলটেবিল বৈঠক অগণিত হয়েছে। দেশের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বা উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি সভা করে সুপারিশ কেন্দ্রকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে এবং করেছে। সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে নিয়মিত বৈঠক হয়েছে, মতবিনিময় হয়েছে।
সমমনা রাজনৈতিক দল বিশেষ করে ১৪ দলের সাথে নিয়মিত বৈঠক হয়েছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। কোন কোন সময় ইস্যুভিত্তিক বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তাদের সুনির্দ্দিষ্ট এজেন্ডা দেওয়া হয়েছে। যেমন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিল তখন কমিটি করে দুর্যোগ মোকাবিলার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
২০০৫ সালের ৩০ ও ৩১ আগস্ট চারদলীয় জোট সরকারের অত্যাচার, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে জাতীয় কনভেনশন করা হয়েছে। এই কনভেনশন চলার সময় নেতৃবৃন্দ তাদের মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ পেয়েছে।
আমি আমার দলের মনোনয়ন বিষয়ে ফিরে আসি।
২০০১ সালের নির্বাচনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সকল তথ্য সংগ্রহ করে নেই। এরূপ একজন সাবেক ভিসি ড. আলাউদ্দীন আহমেদ সংসদ সদস্যকে দায়িত্ব দেই। এর মধ্যে সকল ভোট কেন্দ্রের ফলাফল ডাটাবেজ করে রাখি। সেখান থেকে ৩০% ভাগের কম ভোট কোন কোন কেন্দ্রে আমরা পেয়েছি তা আলাদা করি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের সকল ভোট কেন্দ্রের ফলাফল থেকে ৩০% ভাগের কম ভোটপ্রাপ্ত কেন্দ্রের নামগুলো সংগ্রহ করি। এছাড়া কোন আসন, ইউনিয়নে কেন্দ্রে কি পরিমান ভোট বেড়েছে, কমেছে ইত্যাদি তথ্যও সংগ্রহ করে প্রত্যেক আসনের আলাদা ফাইল তৈরি করা হয়। ড. আলাউদ্দিন, কম্পিউটার পারদর্শী কয়েকজন কর্মী নিয়ে কাজ করেন।
এই ভোটারদের মধ্যে নারী ভোটার, পুরুষ ভোটার, প্রত্যেক উপজেলা ও ইউনিয়নের নামসহ সকল তথ্য সংগ্রহ করি। ২০০১ সালের পর থেকে প্রতি ছয় মাস পর পর সমগ্র বাংলাদেশে সার্ভে করাই, তথ্য সংগ্রহ করি। এই তথ্য সংগ্রহের কাজ এককভাবে কাউকে দেই নাই। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিয়ে টিম করে দেই। শিক্ষকরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টিমে ভাগ করে দেন, যাঁরা দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তারপর তারা ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, গ্রাম পর্যন্ত সফর করেন এবং তথ্য সংগ্রহ করেন। শিক্ষকদের এই একনিষ্ঠ, অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সহযোগিতার জন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। তাদের তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত থাকে।
আর একটা গ্রুপ করা হয় সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারা যাঁরা অবসরপ্রাপ্ত। বিভিন্ন সময় তাদের পূর্বের কর্মক্ষেত্র যার যেখানে ছিল সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আনেন। প্রাইভেট কোম্পানী-যারা তথ্য সংগ্রহ করার পেশায় নিয়োজিত এ ধরনের দুটো গ্রুপ একটা দেশি ও অন্যটা বিদেশি-এদের দ্বারাও তথ্য সংগ্রহ করাই। আমেরিকার একটা গ্রুপ তথ্য সংগ্রহ করেছিল সিট হিসেবে এলাকা ভিত্তিক। কোন দলের কোন সিটে সমর্থক বেশি, ভোটার বেশি ইত্যাদি সে তথ্যও সংগ্রহ করি।
কতকগুলো ফরম তৈরি করা হয়। কমপক্ষে পাঁচ জন প্রার্থীর নাম, দশটা প্রার্থী সম্পর্কে। মোট নম্বর ১০০ প্রত্যেক প্রশ্নের সাথে নম্বর নির্দ্দিষ্ট করা হয়। এভাবে কোন প্রার্থী কত নম্বর পেল তা তালিকা করা হয়।
দলের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদকের নামে একটা চিঠি জেলা, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত পাঠানো হয়। উপজেলাকে বলে দেওয়া হয় ইউনিয়ন থেকে মতামত সংগ্রহ করতে। তাদেরকে কতকগুলো প্রশ্ন পাঠানো হয় প্রশ্নগুলোরও সার্বিক অবস্থা বিশেষ করে যোগ্য প্রার্থীর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সকল তথ্য সংগ্রহ করে প্রথমেই আমি যে তিনশত প্রার্থীকে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছিলাম তাদের সাথে সভা করি। প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত ছোট ছোট গ্রুপ করে বসি। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের ভোটের পরিমাণ ও প্রতিদ্বন্দীর সাথে কম বা বেশি ব্যবধান এবং ৩০% ভাগের কম ভোট কোন কোন কেন্দ্রে পেয়েছেন তার তালিকাটা প্রার্থীকে সরবরাহ করি আলোচনার সুবিধার জন্য।
এই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত থাকতে পারতেন। তাঁরা কখনো থাকতেন কখনো থাকতেন না। সংশ্লিষ্ট এলাকার কেন্দ্রীয় নেতা এবং সাংগঠনিক সম্পাদককে উপস্থিত থাকতে হতো। তাঁরা সাক্ষাৎকার স্থানে অথবা পাশের কামরায় তাদের সুবিধমত থাকতেন। কোনো প্রশ্ন দেখা দিলে তথ্য সরবরাহ করে সাহায্য করতেন। প্রায় তিন থেকে চার মাস সময় লাগে এই সাক্ষাৎকারের। প্রতিটি প্রতিবেদন দিয়েও সাহায্য করেন। যা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয়। পরবর্তী বৈঠক শুরু করি প্রতিটি জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনের নেতাদের সাথে।
প্রতিদিন সকাল ৯টায় বৈঠক শুরু হতো কয়েকটা এলাকা নিয়ে। জেলা ও উপজেলার সংখ্যা হিসেবে।
২০০৬ সালের জুন মাসের ৩ তারিখ থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ধানমন্ডি ৩/এ সড়কের অফিসে সভা হয় ৪৮০ উপজেলা, পৌরসভাগুলো ও ৭৩টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে এ বৈঠক শুরু করি। যাতে সকলে মন খুলে কথা বলতে পারে তার জন্য ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে নেওয়া হয়। সভাপতিম-লীর মাননীয় সদস্যবৃন্দ, সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত থাকতেন। তাঁদের সময় ও সুযোগমতো যে যখন পারতেন থাকতেন। নিজ এলাকা হলে তাঁদের আগ্রহ বেশি থাকত। তবে অনেকে নিয়মিত থেকে আমাকে সহযোগিতা করেছেন। দিনের পর দিন এ বৈঠক চলে।
দশটা প্রশ্ন, কমপক্ষে পাঁচ জন প্রার্থীর নাম এবং কোন প্রার্থীকে কত নম্বর দিবেন তা উল্লেখ করে দশটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো। শুরুতেই নেতাদের হাতে ১০০ নম্বরের প্রশ্নপত্র দেওয়া হতো যা তারা পূরণ করে জমা দিতেন। এক ঘন্টা সময় ধরা হতো। কমপক্ষে পাঁচ জন প্রার্থী সম্পর্কে তথ্য ও নম্বর দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। এরপর পর্যায়ক্রমে সকলের বক্তব্য দেবার সুযোগ দেওয়া হতো এবং সকলেই মনখুলে বক্তব্য দিতেন। আমরা তা নোট করে নিতাম। চা, নাস্তা, দুপুরের খাবার বিকেলের চায়ের ব্যবস্থা থাকত।
সবাই মন খুলে সংগঠন, নির্বাচন, প্রার্থী, দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক অবস্থা সকল বিষয়েই আলোচনা করেছেন। এই সকল তথ্য সংগ্রহ করে কোন কোন এলাকায় কোন কোন প্রার্থী কত নম্বর পেল ইত্যাদি নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করা হয়।
একটা বিষয় খুবই লক্ষণীয় ছিল আমাদের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের প্রার্থী সম্পর্কে মূল্যায়ন যা পেয়েছিলাম আর বিভিন্ন পর্যায়ে সার্ভে করে যে রিপোর্ট পেয়েছি তা ৯০% ভাগের ওপর মিল ছিল।
সকল প্রতিবেদন তথ্য দ্বারা রিপোর্ট তৈরি করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টরি বোর্ডের নিকট উপস্থাপন করি। সাথে সাথে সকল রিপোর্টগুলোও হাতের কাছে রাখি। সকলের হাতেই একটা করে খাতা দিয়ে দেই যাতে বোর্ড সদস্যরা তাদের মতামত লিপিবদ্ধ করতে পারেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি বোর্ড বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মনোনয়ন প্রথমে ঠিক করে।
আগ্রহী প্রার্থীদের কাছে নির্বাচনী ফরম বিক্রি করা হয়। ফরম বিক্রি করা হয়। ফরম ক্রয় ও জমা দেওয়া হয়। প্রার্থী যাঁরা হতে চান তাঁদের ফরম কিনতে হয় টাকা জমা দিয়ে এবং রশিদ নিতে হয়। এভাবে প্রথমে নিজেদের দলের মনোনয়ন নির্দ্দিষ্ট করি।
১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এর নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে তিনশত আসনকে চারভাগে ভাগ করি।
এ, বি, সি ও ডি। এই চার ভাগে ভাগ করে রাখি এ কারণে যে নির্বাচনে ঐক্য করতে হলে কোন সিট কি অবস্থায় আছে তা জানতে সুবিধা হবে।
২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ ঐক্য, মহাজোট ঐক্যে সিট ভাগের সময় এই তথ্যগুলো কাজে আসবে। এই হিসাব বিবেচনায় রেখেই সিট ভাগ করা হয়েছিল। যে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি বোর্ড দলের মনোনয়ন ঠিক করে সেখানে মনোনয়ন বাণিজ্যের সুযোগ কোথায় ছিল? পার্লামেন্টারি বোর্ড এগারটা (১১) সভা করে। তারপর নিজ দলের আসনে প্রার্থী ঠিক করে। এরপর ঐক্য, মহাজোট ঐক্য করা হয়।
১৪ দলের থেকে রাশেদ খান মেনন, অধ্যাপক মোজাফফর আহম্মদ, হাসানুল হক ইনু, নুরুল ইসলাম, দিলীপ বড়–য়াসহ সকল নেতার নিজ নিজ দলের প্রার্থীদের তালিকা সরবরাহ করেন।
জাতীয় পার্টি ও এলডিপির কর্নেল অলির পক্ষেও তালিকা দেওয়া হয়। ঐক্যের সিট বন্টন জলিল সাহেবের বাসায় বসে করা হয়। সেখানে সকল তথ্যসহ ড. আলাউদ্দীনের টিমও সহযোগিতা করার জন্য উপস্থিত থাকতেন। শরীক দলের প্রতিনিধিরা মিলে মহাজোটের নমিনেশন ঠিক করে দেয়। এভাবে মহাজোটের নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ১/১১ পূর্বে যখন নমিনেশন ঠিক করা হয় তখন অবশ্য ড. কামাল হোসেন ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দলও এই মহাঐক্যজোটে নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা দেয়। তবে ২০০৮ এর নির্বাচনের ঐক্যে আর তাঁরা ছিলেন না।
প্রতিটি সভায় বক্তাদের বক্তব্যেও নোট নেয়া হতো। আমি নিজের নোট নিয়ে থাকি। সবসময়ে দলের একজন সমস্যা দ্বারা মিনিটস লেখা হয়। প্রদত্ত প্রতিবেদন, প্রশ্নের উত্তর থেকে প্রাপ্ত প্রার্থীর নাম ও প্রাপ্ত নম্বর নির্বাচনী এলাকা অনুযায়ী খাতায় লেখা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি বোর্ডেও সকল তথ্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে যা সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হয়। দলের কার্যকরী সংসদসহ সকল সভায় পূর্ব সভার মিনিটস অসুমোদন করাতে হয়। কোনো সংশোধন থাকলে তা উত্থাপন করা এবং সে বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দলটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে আর কোন কোন অরাজনৈতিক দল এত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয় কিনা তা জানতে ইচ্ছা করে।
কারাগার, ঢাকা
তারিখ : ৭ জুন ২০০৮
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
এসএসসি বা মাধ্যমিকের শিক্ষা সমাপ্তির মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা উচ্চতর শিক্ষার দুয়ারে প্রবেশ করে। ধীরে ধীরে প্রবেশ করে এক বিশাল জ্ঞানের রাজ্যে। একজন শিক্ষার্থীর ১০ বছরের পরিশ্রমের ফসল হিসেবে ধরা হয় এসএসসি পরীক্ষাকে। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। যা গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার বেড়েছে। এই পরীক্ষার ওপর তার শিক্ষা জীবনের অন্য স্তরের সফলতাও নির্ভরশীল। আর তাই এই এসএসসি পরিক্ষার পরের ধাপে ভর্তি হতে হয় একাদশ শ্রেণিতে। কিন্তু একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ভর্তিচ্ছুকরা বিশেষ কয়েকটি কলেজকে গুরুত্ব দিতে দেখা যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একাদশে ভর্তি পদ্ধতিটা ভিন্ন রকম হওয়ায় কোন শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল নিয়েও পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারছেনা আবার অনেক কলেজ পায়না ভালো শিক্ষার্থী। এই অসামঞ্জস্যতার ফলে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত অন্যদিকে কলেজগুলোতে থাকে শিক্ষার্থীশূণ্যতা।
গত কয়েক বছর ধরে চার্চ পরিচালিত রাজধানীর চারটি কলেজে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে থাকে। যার মধ্যে রয়েছে হলিক্রস, সেন্ট যোসেফ, সেন্ট গ্রেগরি এবং নটর ডেম কলেজ। এসব কলেজে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকে। অন্যদিকে ঢাকা কলেজসহ দেশেরে বিভিন্ন কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়না কিন্তু জিপিএর মাধ্যমে ভর্তি হতে হয় এবং পরীক্ষার নাম্বারের ভিত্তিতে যোগ্যতা যাচাই করা হয়। এই অসামঞ্জস্যতার ফলে অনেক শিক্ষার্থী কলেজ না পাওয়া বা ভর্তি হতে না পারার সম্ভাবনাই সেবচেয়ে বেশি। একশ্রেনীর ভর্তিচ্ছুকরা দেশের ভালো কলেজের ভর্তির জন্য ঝুঁকেও অনেকেই ভর্তি হতে পারেনা তাদের কাঙ্খিত কলেজে। আবার অন্যদিকে যেসব কলেজে পরীক্ষার নাম্বারের ভিত্তিতে ভর্তি করা হয় সেসব কলেজ ভর্তি নেওয়ার জন্য পায়না তেমন ভালো শিক্ষার্থী। এই অসামঞ্জস্যতার যেন দেখার কেউ নেই।
আরও পড়ুন: বিসিএস উন্মাদনায় তরুণ প্রজন্ম
ভর্তিপরীক্ষা দিয়ে উক্তির্ণ হয়ে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হতে হয় এমন কয়েকটি কলেজ ছাড়া দেশের বাকি কলেজ ও মাদ্রাসায় এবারও প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম অনুসরণ করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এ ক্ষেত্রে টেলিটকের মাধ্যমে আবেদন নেওয়া হবে। পরে বোর্ডে থাকা শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাতালিকা করা হবে। এবারও শিক্ষার্থীরা অনলাইনে সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।
সম্প্রতি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার গণমাধ্যমে বলেন, ‘একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ক্ষেত্রে আসনের কোনো সমস্যা নেই। সংকট হচ্ছে, অনেকেই হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চায়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পছন্দমতো ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম। এ কারণে যারা ভালো ফলাফল করেছেন কিছু প্রতিষ্ঠানে তাদের ভর্তির ক্ষেত্রে বেশি প্রতিযোগিতা করতে হবে’।
বিগত বছরগুলোতে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অভিবাবকরা তার সন্তানকে কোন কলেজের নাম দেখে ভর্তির জন্য আবেদন করেননা। কোনটির বিগত ফলাফল কি সেগুলো বিবেচনা করে ভর্তি করানো হয়। অনলাইনে ভর্তি পদ্ধতিতেই অনেকে ঝুঁকছেন। এছাড়াও একই মহল্লায় একাধিক কলেজ থাকে। কিন্তু কিছু অভিবাবক তাদের সন্তানের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আবার কিছু অভিবাবক কলেজের নাম এমনকি কিছু শিক্ষার্থীর অভিবাবকরা বিগত বছরগুলোর ফলাফল চিন্তা করে তাদের সন্তানদের ভর্থি করাতে চান। এতে করে একজন শিক্ষার্থী কোন কলেজে পড়লে তাদের পড়াশুনার বেঘাত হবে না বা সঠিক মানের কলেজে পড়ে সঠিক শিক্ষা অর্জনে শিক্ষার্থীদের এইচএসসির ধাপ সম্মন্ন করতে পারবে অভিবাবকদের কাছে সেটাই এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: কেন চাকরির বয়সসীমা ৩৫ করা উচিত নয়?
তথ্য বলছে, এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশে ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ শিক্ষার্থী পাস করেছে।। দেশের কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে প্রায় ২৫ লাখ। আর মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন রয়েছে আরও কয়েক লাখ। সবমিলে এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে প্রায় ২৮ লাখ। সে হিসেবে এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা কলেজে ভর্তি হওয়ার পরও প্রায় ১১ লাখ আসন ফাঁকা থাকবে। তবে দেশে ভালো মানের কলেজ রয়েছে সর্বোচ্চ ২০০। আর এসব কলেজে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে সর্বোচ্চ ১ লাখ। ভালোমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্র করে ভর্তিচ্ছুদের বাড়ছে আগ্রহ। অথচ সারা দেশে এসএসসি ও সমমানে সর্বোচ্চ ফলাফল জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ শিক্ষার্থী। জিপিএ ৪ থেকে ৫ এর নিচে পেয়েছেন এমন শিক্ষার্থী রয়েছেন ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৯৪৯ জন। তাহলে সর্বোচ্চ ভালো ফল করেও প্রায় ১ লাখ ছাত্রছাত্রী তাদের পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবেন না। অন্যান্য বছরের মত এবারেও তিন ধাপে ভর্তি সম্পন্ন করা হতে পারে।
গত তিন বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তিন ধাপে ভর্তি শেষ করতে চাইলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক সময় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরাও তিন ধাপে ভর্তির আবেদন শেষে কোনো কলেজ বরাদ্দ পান না। কারণ হিসেবে ভর্তি কার্যক্রমে যুক্ত শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, আবেদনের সময় শিক্ষার্থীরা ১০টি কলেজ পছন্দক্রম দেওয়ার সুযোগ পায়। তারা বারবার পছন্দের কলেজগুলো পছন্দের তালিকায় রাখে। ওই কলেজগুলোতে তাদের নম্বর অনুযায়ী আসন মেলে না। এতে একেবারে শেষ ধাপ পর্যন্ত কিছু শিক্ষার্থী ভালো ফল করেও কলেজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।
কলেজ শিক্ষার্থী শিক্ষা ব্যবস্থা
মন্তব্য করুন
দেশের শিক্ষিত তরুণ তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে সরকারি চাকরি। আর তাই
সরকারির চাকরির মধ্যে এক নম্বরে পছন্দের বিসিএস ক্যাডার হওয়া। আর এ ক্যাডার হওয়ার
জন্য চলে রীতিমতো পড়াশোনার যুদ্ধ। শিক্ষার্থীদের মনের মধ্যে প্রচন্ড এক জেদে এগিয়ে
যাবার দৃঢ় প্রত্যয়। শুধু যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা বিসিএসের পেছনে
ছুটছেন তাই না প্রকৌশল বা মেডিকেল কলেজের অনেক শিক্ষার্থীও এখন ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং
ছেড়ে ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ হতে চাচ্ছেন।
বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষা বাংলাদেশে সরকারি পদে চাকরি অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এবং সেই পরিক্ষার সহায়ক হওয়া জন্য শিক্ষার্থীরা একাধিক কারণে এই পথে যেতে চায়, যেমন সরকারি সেবা, সামাজিক সেবা, ক্যারিয়ার সুযোগ, সামরিক ও আর্থিক সুরক্ষাসহ নানান অর্জনের দৌড়ে বর্তমান তারুণ্যরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিরাপদ জীবিকা নির্বাহের মোহে শিক্ষার্থীরা বিসিএসের পেছনে ছুটছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের প্রধান লক্ষ্য, যে করে হোক বিসিএস ক্যাডার হতে হবে। না হতে পারলে জীবন বৃথা। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক এমন পেশাজীবীর মর্যাদাও নিশ্চিত করতে হবে। অন্য পেশায় জীবন নিশ্চিত করতে না পারলে চাকরিপ্রার্থীরা বিসিএসের পেছনে ছুটবেন এটিই স্বাভাবিক।
আরও পড়ুন: কেন চাকরির বয়সসীমা ৩৫ করা উচিত নয়?
এদিকে দেশের প্রায় ৪১ শতাংশ তরুণ নিষ্ক্রিয়। অর্থাৎ তারা পড়াশোনায় নেই, কিংবা কর্মসংস্থানে নেই। এমনকি কোনো কাজের জন্য প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন না। মেয়েদের মধ্যে নিষ্ক্রিয়তার হার বেশি, ৬১ দশমিক ৭১ শতাংশ। ছেলেদের মধ্যে এ হার কম, ১৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ। দিন দিন এই ধরনের তরুণের সংখ্যা বাড়ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসের ২০২২ প্রতিবেদনে বিবিএস নিষ্ক্রিয় তরুণের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ধরেছে ১৫ থেকে ২৪ বছর। তাদের হার ধরে হিসাব করে দেখা যায়, নিষ্ক্রিয় তরুণের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৯ লাখ।
প্রতিবছর বিসিএস পরীক্ষায় প্রার্থী বেড়ে যাওয়ায় এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা। যে তরুণরা কেন বিসিএস মুখী হচ্ছে তার যৌক্তিক কিছু কারণও কিছু খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন নীতিমালা, নতুন নতুন পে-স্কেলে সরকারি চাকরীজীবি সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি।
এছাড়াও আরও কিছু কারণ উঠে এসেছে। যেমন, সামাজিক মর্যাদা, বর্তমান সরকারের আমলে বড় রকমের ঝুটঝামেলা ছাড়া স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া, মেধার মূল্যায়ন, বেতন বেসরকারি চাকরির প্রায় সমান, সরকারি চাকরিতে নিরাপত্তা, পারিবারিক চাপের কারণে, ক্ষমতার জন্য, বিয়ের বাজারে বিসিএস চাকরিজীবীর কদর বেশি, সরকারি চাকরি হতে অবসর গ্রহণের পর পেনশন ও গ্রাইচুটি সুবিধা, তরুণদের পড়াশোনা শেষ করে উদ্যোক্তা হবার মত পুঁজির অভাব এ ব্যাপারে পরিবারের সাপোর্ট না থাকাসহ নানাবিধ কারণে শিক্ষিত তরুণরা সরকারি চাকরির দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
শুধু কি স্ফীত বেতন ও লোভনীয় পেনশনের আকর্শনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আকৃষ্ট হয়! তরুন সম্প্রদায় সর্বত্তম নিদর্শন হিসেবে বেছে নেয় বিসিএস। কারণ তারা শাসন কার্যে নিজেদের নিয়োজিত করতে চায়। যে শাসন দেশের দাসত্বকে করে দৃঢ়মূল, দারিদ্রকে করে ক্রম বর্ধমান।
বিসিএস একটা নিছক চাকরির পরীক্ষা নয়, এটা হল একটা ‘লাইফ স্টাইল’ চয়েজ করার মতো। এই লাইফস্টাইল চয়েজ অনেকের পছন্দ না। বাংলাদেশে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা গৎবাঁধা সরকারি চাকরির পেছনে না দৌড়িয়ে চ্যালেঞ্জিং, সৃজনশীল আর স্বাধীন জীবন যাপনের প্রতি আকর্ষণবোধ করে থাকেন। এ কারণে অনেকে উচ্চ বেতনের বেসরকারি চাকরি, নিজস্ব ব্যবসা বা পারিবারিক ব্যবসায় নিয়োজিত হতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন। এছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিসিএসে অংশগ্রহন করার প্রবণতা কম থাকে। অনেকের আবার সৃজনশীল অথবা টেকনিকাল কাজে আগ্রহ বেশি থাকায় তারা সরকারি চাকরির দিকে কম ঝুঁকে।
আরও পড়ুন: জিপিএ-৫ পেয়েও ‘নামি’ কলেজে ভর্তি কঠিন!
অস্বাভাবিক "সম্মান" এর লোভে তরুণরা এখন এই ক্যাডার সার্ভিসে ঝুঁকছে। যেখানে সার্ভিসে আসার মূল কারণ হওয়া উচিত ছিল দেশের সেবা করা। সেটার বদলে এখন সার্ভিসে আসলে নিজের আখের গোছানো সুবিধা তাই সবাই আসতে চায়। এই মেন্টালিটি নিয়ে যারা সার্ভিসে ঢুকবে তাদের কাছ থেকে আপনি কি সার্ভিস আশা করবেন? কোরায় একজন ক্যাডারের লেখা দেখেছিলাম সে একদম সরাসরি বলছে যে অন্য কাজের ভ্যালু নাই শুধু বিসিএসই একমাত্র যোগ্য চাকরি দেশের সেবার জন্য। ভেবে দেখেনতো তাহলে, তারা কি চিন্তা নিয়ে সার্ভিসে ঢুকছে!
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দেশের প্রাইভেট সেক্টরের ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ের CSE, EEE, IT এর মতন ডিমান্ডিং বিষয়ে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরাও অনেক সময় মনমতো চাকরি পেতে হিমশিম খায়। এমনকি একদল তরুণ যাচ্ছে বিদেশে আরেক দল যাচ্ছে বিসিএস এ, দেশের কাজ তাই চায়না ইন্ডিয়া থেকে বেশি টাকা দিয়ে লোক এনে করানো লাগতেসে। তাই এতে স্পষ্ট সমস্যাটা বহুমাত্রিক।
তবে এটার ফলাফল হচ্ছে দেশ এমন একটা নিউ জেনারেশন পাচ্ছে যারা এনালিটিকাল
ক্ষমতার বদলে মুখস্ত ক্ষমতায় দক্ষ বেশি হচ্ছে। যাদের সায়েন্স, টেকনোলজি, ফিলোসফি বা
ইকোনমিক্সের বদলে MP3 পড়ায় বেশি আগ্রহ। বিসিএসমুখী পড়ালেখার কারণে শিক্ষার্থীরা গুরুত্ব
দিয়ে পড়ালেখা করেন। যার ফলে তারা বিষয়ভিত্তিক পড়ালেখায় যথাযথ মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হন।
ফলে উচ্চশিক্ষার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের।
বিসিএস বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস তরুণ প্রজন্ম বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
একটি জাতির মেরুদণ্ড হল শিক্ষা। যা কিনা জাতি গঠনের প্রধান উপাদান। স্বমহিমায় নিজেদের উদ্ভাসিত করতে কেবল শিক্ষত জাতিই পারে। বিবেকবান মানুষ, সুনাগরিক, কর্তব্যপরায়ণ, দায়িত্ববান ও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষার বিকল্প নেই। সে জন্য প্রয়োজন শিশুকাল থেকেই শিক্ষা অর্জন। স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য অনেকেই পারি দেন বিদেশে।
শিক্ষার সূচনা পরিবারের থেকে হলেও জ্ঞান অর্জনের বাল্যকালের বিশেষ ধাপ মনে করা হয় প্রাইমারি থেকে এসএসসি পর্যন্ত। আর এই এসএসসি পরিক্ষার ফলাফলে চলতি বছরে দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে পাসের গড় হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪। যা গতবারের (২০২৩ সালে) চেয়ে বেড়েছে। গেল বছর পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। কিন্তু এবারের এসএসসি তে মোট পাসের হারের মধ্যে ছাত্রীদের পাসের হার ৮৪.৪৭ আর অন্যদিকে ছাত্রদের পাসের হার ৮১.৫৭ শতাংশ। এর নেপথ্যের কারণ কি? কেনইবা ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পাসের হার এগিয়ে?
রোববার (১২ মে) এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর এক সংবাদে সম্মেলনে পরিক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা কম দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেন ছেলেরা পিছিয়ে তা জানতে শিক্ষা বোর্ড প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ অনুযায়ী এসএসসি ফলাফলে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা কেন এগিয়ে তার কিছু সুনির্দিষ্ট দিক থেকে শিক্ষার্থীদের বেড়ে উঠা, তাদের প্রতি পরিবারে দায়িত্ব ইত্যাদি নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি যে..
সাধারণত পড়াশোনার ক্ষেত্রে ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার পেছনে মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত সময় ব্যয় করা প্রধানত দায়ী হতে পারে। ছেলেরা বাইরে ঘোরাঘুরির পাশাপাশি বাসায় ফিরে মোবাইল ফোনে ডুবে যাচ্ছে। স্কুলপড়ুয়ারা অতি মাত্রায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করায় পড়ালেখায় মনোযোগী হতে পারছে না। এমনকি ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা মোবাইল ফোন ব্যবহারের বেশি সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি কিশোর অপরাধে জড়িয়ে পড়াও ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। ছাত্রীদের মধ্যে তারা পড়াশোনায় বেশি আগ্রহ দেখছেন। আর ছেলে সন্তানদের চেয়ে মেয়েরা পড়াশোনায় আগ্রহী হয়ে ওঠায় তাদের পড়াশোনায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বাবা-মাও। এমনকি মেয়েদের লেখাপড়ায় অভিভাবকরা বেশি ব্যয় করতেও দ্বিধা করছেন না।
সচেতন মহল মনে করছেন, স্কুলপড়ুয়া ছেলেটার হাতে বাবা-মা মোবাইল তুলে দিচ্ছে। কিন্তু মেয়েটার হাতে দিচ্ছে না। হয়তো অন্য কোনো চিন্তা থেকে দিচ্ছে না। তাতে মেয়েটা পড়াশোনায় মনোযোগ দিচ্ছে। আর ছেলেটা ফেসবুক, গেমিংয়ে সেটা ব্যবহার করছে। এভাবে ছেলেরা পড়ালেখায় ক্রমে চরম অমনোযোগী হয়ে পড়ছে।’ অতি মাত্রায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে।
মেয়েরা কেন এগিয়ে
মেয়েরা পড়ালেখায় মনোযোগি হতে পারে কারণ তারা আগ্রহশীল, সাহায্যকারী, মনোযোগী, এবং সমর্থনশীল হতে পারেন। তাদের প্রকৃতি বিশেষভাবে পড়াশোনার ক্ষেত্রে উত্সাহী এবং অনুশাসিত হয়। মেয়েদের পড়ালেখায় মনোযোগের আরও কিছু কারণ হতে পারে, যেমন..
সামাজিক প্রতিফলন: সাধারণ সমাজে শিক্ষার প্রতিফলন মেয়েদের হাতেই। তাই তারা নিজেকে সমাজের মধ্যে সাবাস করার জন্য শিক্ষালোভী হতে চায়।
প্রতিযোগিতামূলক: মেয়েদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষার আগ্রহ অনেক। আর তাই তারা শিক্ষা অর্জন ও পড়াশোনার মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারে।
সামর্থ্য ও উদারতা: মেয়েদের অনেকে সামর্থ্য ও উদারতা দেখানোর চাপে থাকে, যা তাদের পড়ালেখায় মনোযোগিতা বৃদ্ধি করে।
পরিবারের সমর্থন: পরিবারের সদস্যরা মেয়েদের উত্সাহ দিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগিতা বৃদ্ধি করে। এতে করে মেয়েদের ফলাফল আসে সাফল্যের।
এছাড়াও সম্পূর্ণ সমাজে মেয়েদের উপলব্ধি ও প্রতিযোগিতামূলক স্বাধীনতা দেওয়া উচিত, যা তাদের পড়ালেখায় আরও মনোযোগিতা বৃদ্ধি করে। এই সমস্ত কিছু কারণে মেয়েদের পড়ালেখায় মনোযোগিতা বৃদ্ধি হয় তার তাই তারা পরিক্ষার ফলাফলে অর্জন করে সাফল্য।
সাধারণত আদর্শ ছাত্রের বৈশিষ্ট্য হিসেবে আমরা জানি: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত থাকা, নিয়মিত পড়াশোনা করা, সহপাঠদের (জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণী নির্বেশেষে) সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা, নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলা, মাদক থেকে দূরে থাকা, প্রলোভন থেকে বিরত থাকা, এমনকি সমাজ ও রাষ্ট্র বিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকা।
যা করা উচিৎ
সম্প্রসারণ ও সমর্থন: পরিবারের সদস্যরা ছাত্রদের শিক্ষামূলক প্রক্রিয়ার সমর্থক করতে হবে এবং তাদের পক্ষ থেকে প্রশংসা ও সমর্থন প্রদান করতে হবে।
প্রোত্সাহন ও সমর্থন: পারিবারিক সদস্যরা ছাত্রদের এমন কার্যকলাপে উৎসাহিত করতে হবে যা ছাত্রদের শিক্ষামূলক ও ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ছাত্রদের প্রেরণা ও মনোনিবেশ: ছাত্র প্রোত্সাহন ও প্রেরণা প্রদানের মাধ্যমে তারা উচ্চ লক্ষ্য স্থাপন করতে পারে এবং নিজেদের উন্নতিতে মনোনিবেশ করতে পারে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ:
এছাড়া ছাত্র-ছাত্রী উভয়কেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন ক্যারিয়ার প্লানিং, দারিদ্র্য সহায়তা, নৈতিক শিক্ষা, ব্যক্তিগত উন্নতি ইত্যাদির জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। কেননা পারিবারিক শিক্ষাব্যবস্থা সামাজিক, মানসিক ও ব্যাক্তিগত উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি ছাত্র-ছাত্রীদের সুস্থ ও সমৃদ্ধ রেখে তাদের পড়ালেখা করতে উৎসাহিত করে। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরে মেধা বৃদ্ধি হতে পড়াশোনায় মনোযোগি হবে। এবংকি পরিক্ষার ফলাফল অগ্রগতি হবে। জাতি হবে শিক্ষিত। প্রজন্ম গড়বে শিক্ষিত মেধাযুক্ত।
মন্তব্য করুন
বর্তামানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের জীবনকে করেছে সহজ থেকে সহজতর। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করেই জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতি বা ‘শিল্প বিপ্লব’ গড়ে উঠেছে। জ্ঞানের সমৃদ্ধি, সংরক্ষণ ও ব্যবহার তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে। কিন্তু তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধাটি যখন একদল অসৎ ও অপরাধপ্রবণ ব্যক্তির দ্বারা নেতিবাচকভাবে ব্যবহৃত হয় তখনই এর অপব্যবহারে বিপন্ন হয় সমাজ তথা প্রজন্ম।
প্রজন্মের ধারাবাহিকতায়
ক্রমেই তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছে তরুণীরা। যুগের বিবর্তন এবং সরকারের সুক্ষ পরিকল্পনায়
একদিকে তরুণীরা যেমন তাদের স্বাধীনা অর্জন করেছে অন্যদিকে সেই স্বাধীনতা রক্ষা করার
নামে এই তরুণীদের অনেকেই বিষর্জন দিচ্ছে তাদের অস্তিত্ব ব্যক্তিত্ব কিংবা স্বতিত্ব।
জনশুমারি ও গৃহগণনা
২০২২’-এর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন পুরুষ, ৮ কোটি
৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন তরুণী। যেখানে পুরুষের চেয়ে তরুণীদের সংখ্যা বেশি সেখানে তরুণীদের
সমাজের সচেতনতা অবলম্বন করে তাদের স্বাধীনতা রক্ষা করা জরুরী।
তরুণীরা ভার্চুয়াল
ব্যবহারে সচেতন না হলে পড়তে পারে বিপদজনক পরিস্থিতিতে। অনলাইনে যদি কোন সম্পর্কে ব্যক্তিগত
তথ্য শেয়ার করতে হলে প্রাইভেসি নিশ্চিততা হানির ঝুঁকি থাকে। এটি তরুণীকে নিজের গোপনীয়তা
সংরক্ষণ না করে বিপদে ফেলতে পারে। অনলাইনে যে সম্পর্ক এবং বার্তা পাঠানো হয়, তা যদি
নিয়মিত হয় তাহলে মনের অপরিচিত মানুষের সাথে সমস্যা হতে পারে। যেমন, অবাঞ্ছিত মেসেজ
বা ব্লক করা প্রবলেম হতে পারে। এছাড়াও অনলাইনে অসময়ে নেগেটিভ বা হানিকর কোনও সম্পর্কে
পড়তে পারে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এমনকি ঝুঁকি থাকতে পারে
অপরাধী হানির। অপরাধী হানির শিকার হতে পারে কিছু তরুনী, যেমন সাইবার বুলিং, অনলাইন
নির্যাতন, কাইবার সাথে পার্সনাল তথ্যের অপসারণ ইত্যাদি।
এদিকে বিবিএস
জানায়, এক দশকে দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে ২ কোটি ১১ লাখ ১৪ হাজার ৯১৯ জন। সর্বশেষ ২০১১
সালের জনশুমারি অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭। ক্রমাগত
ভাবে বৃদ্ধি হচ্ছে দেশের জনসংখ্যা। সরাকারের নানান উদ্যেগ বাল্যবিবাহ থেকে পরিবার পরিকল্পনার
নির্দেশনায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হলেও বেশিভাগই হচ্ছে না তরুণীসচেতনতা অবলম্বন না
করাতে।
অন্যদিকে সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার কিংবা ‘ভার্চুয়াল অ্যাডিক্টেড’ এর অসচেতনার ফলে সময় অপচয়
হয় পর্যাপ্ত পরিমাণ। অনলাইনে সময় অপচয় একটি বিশেষ ধরণের সমস্যা কেননা দৈনন্দিন জীবনের
কাজে অসুবিধা তৈরি করতে পারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অহেতুক পদ্ধতিতে সময় ব্যায় করা।
প্রত্যেক তরুণীকেই নিজের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সংরক্ষণস্বার্থে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
কেননা, বর্তমান প্রজন্মের তরুণী কিংবা তরুণীরাই পরিবর্তন করতে পারে দেশ কিংবা জাতীকে।
যুগের বিবর্তনে
প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের
ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে তরুণীদেরও ভূমিকা চোখে
পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা তরুণীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে
রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর
পরিপূর্ণতা পাবে সমাজ, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র, এবং তরুণীদের সঠিক অধিকার।
ভার্চুয়াল অ্যাডিকশন তরুণী সচেতনতা প্রজন্ম
মন্তব্য করুন
এসএসসি বা মাধ্যমিকের শিক্ষা সমাপ্তির মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা উচ্চতর শিক্ষার দুয়ারে প্রবেশ করে। ধীরে ধীরে প্রবেশ করে এক বিশাল জ্ঞানের রাজ্যে। একজন শিক্ষার্থীর ১০ বছরের পরিশ্রমের ফসল হিসেবে ধরা হয় এসএসসি পরীক্ষাকে। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। যা গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার বেড়েছে। এই পরীক্ষার ওপর তার শিক্ষা জীবনের অন্য স্তরের সফলতাও নির্ভরশীল। আর তাই এই এসএসসি পরিক্ষার পরের ধাপে ভর্তি হতে হয় একাদশ শ্রেণিতে। কিন্তু একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ভর্তিচ্ছুকরা বিশেষ কয়েকটি কলেজকে গুরুত্ব দিতে দেখা যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একাদশে ভর্তি পদ্ধতিটা ভিন্ন রকম হওয়ায় কোন শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল নিয়েও পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারছেনা আবার অনেক কলেজ পায়না ভালো শিক্ষার্থী। এই অসামঞ্জস্যতার ফলে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত অন্যদিকে কলেজগুলোতে থাকে শিক্ষার্থীশূণ্যতা।
দেশের শিক্ষিত তরুণ তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে সরকারি চাকরি। আর তাই সরকারির চাকরির মধ্যে এক নম্বরে পছন্দের বিসিএস ক্যাডার হওয়া। আর এ ক্যাডার হওয়ার জন্য চলে রীতিমতো পড়াশোনার যুদ্ধ। শিক্ষার্থীদের মনের মধ্যে প্রচন্ড এক জেদে এগিয়ে যাবার দৃঢ় প্রত্যয়। শুধু যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা বিসিএসের পেছনে ছুটছেন তাই না প্রকৌশল বা মেডিকেল কলেজের অনেক শিক্ষার্থীও এখন ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ হতে চাচ্ছেন।
বাংলাদেশের চাকরির বাজারের প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়ার জনপ্রিয়তা সবচাইতে বেশি। চাকরিপ্রত্যাশীদের মতে সরকারি চাকরির মত পেশাগত নিরাপত্তা আর কোথাও নেই। আর সেজন্যই অনেক দেশে বেশি বয়সে সরকারি চাকরির আবেদনের সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশে এর সীমাবদ্ধতা ৩০ বছরে রয়েছে। সরকারি চাকরির কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতার দরকার হয়। সেই দক্ষতা অর্জনের জন্য বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া চাকরির আবেদনের বয়স যতই থাকুক না কেন, পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ অনির্দিষ্ট হয় না। একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ৫ বা ৭ বার সিভিল সার্ভিসের জন্য আবেদন করতে পারেন। আমাদের দেশেও যেকোন যুক্তিতে বয়স বাড়াতে গেলে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত।
একটি জাতির মেরুদণ্ড হল শিক্ষা। যা কিনা জাতি গঠনের প্রধান উপাদান। স্বমহিমায় নিজেদের উদ্ভাসিত করতে কেবল শিক্ষত জাতিই পারে। বিবেকবান মানুষ, সুনাগরিক, কর্তব্যপরায়ণ, দায়িত্ববান ও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষার বিকল্প নেই। সে জন্য প্রয়োজন শিশুকাল থেকেই শিক্ষা অর্জন। স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য পারি দেন বিদেশে। শিক্ষার সূচনা পরিবারের থেকে হলেও জ্ঞান অর্জনের বাল্যকালের বিশষ ধাপ মনে করা হয় প্রাইমারি থেকে এসএসসি পর্যন্ত। আর এই এসএসসি পরিক্ষার ফলাফলে চলতি বছরে দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে পাসের গড় হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪। যা গতবারের (২০২৩ সালে) চেয়ে পাসের হার বেড়েছে। গেল পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। কিন্তু এবারের এসএসসি তে মোট পাসের হারের মধ্যে ছাত্রীদের পাসের হার ৮৪.৪৭ আর অন্যদিকে ছাত্রদের পাসের হার ৮১.৫৭ শতাংশ। এর নেপথ্যের কারণ কি? কেনইবা ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পাসের হার এগিয়ে?
বর্তামানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের জীবনকে করেছে সহজ থেকে সহজতর। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করেই জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতি বা ‘শিল্প বিপ্লব’ গড়ে উঠেছে। জ্ঞানের সমৃদ্ধি, সংরক্ষণ ও ব্যবহার তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে। কিন্তু তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধাটি যখন একদল অসৎ ও অপরাধপ্রবণ ব্যক্তির দ্বারা নেতিবাচকভাবে ব্যবহৃত হয় তখনই এর অপব্যবহারে বিপন্ন হয় সমাজ তথা প্রজন্ম।