নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ০১ জুন, ২০২০
করোনা সঙ্কটের সময় হঠাৎ করে চাঙ্গা হয়েছিল বিএনপি এবং দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ ২৫ মাস পর ৬ মাসের জন্য কারামুক্ত হয়েছেন। বিএনপি করোনা সঙ্কট নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বেশ সরব হয়েছে এবং সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ব্যর্থতা তুলে ধরছে বিএনপির নেতৃবৃন্দ। আর এসব কারণেই মনে করা হচ্ছিল বিএনপি চাঙ্গা হচ্ছে। কিন্তু সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, করোনা পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরার পরপরই বিএনপির উপর চড়াও হবে সরকার। বিশেষ করে বিএনপি এই করোনাকালীন সময়ে যে ‘অপকর্ম’ গুলো করেছে সেগুলোর একটি সুরাহা করা হবে।
সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, এই সময়ে বিএনপি যে কাজগুলো করেছে তা বিভ্রান্তিকর, হতাশাজনক এবং জনগণের বিরুদ্ধে এক ধরণের ষড়যন্ত্র। সরকারের সূত্রগুলো থেকে বলা হচ্ছে যে, বিএনপি নানারকম অপপ্রচার, বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও বিরোধী দলগুলো নানারকম মিথ্যাচার ছড়িয়েছে। আর এসব কারণে করোনা পরিস্থিতি যদি একটু অনুকূলে আসলে বিএনপির জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে এবং বিএনপির উপর নতুন স্টিম রোলার চালানো হতে পারে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সামনের দিনগুলোতে বিএনপিকে যে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হবে তাঁর মধ্যে রয়েছে-
১. বেগম খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে যে ৬ মাসের জামিন দেওয়া হয়েছে, তাঁর মধ্যে ২ মাসের বেশি সময় ইতিমধ্যে অতিবাহিত হয়ে গেছে। এখন আগামী ৪ মাস যদি বেগম খালেদা জিয়া কঠোরভাবে জামিনের শর্ত প্রতিপালন না করেন তাহলে সরকার জামিন বাতিল করবে। সরকারের একাধিক সূত্র বলছে, মূলত করোনা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটেই বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হয়েছিল এবং করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে তাঁকে আবার কারাবরণ করতে হবে। অবশ্য সরকারের একাধিক নেতা বলছেন যে, তাঁদের কাছে কিছু খবর রয়েছে যে, বেগম খালেদা জিয়া আস্তে আস্তে নিজেকে আবার রাজনীতির সঙ্গে জড়াতে শুরু করেছেন এবং এই ঈদের ছুটিতে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং সরকারের সমালোচনা করেছেন বলে কিছু তথ্য সরকারের হাতে রয়েছে। এটাকে বাড়তে দেওয়া যাবেনা এবং তিনি তিনি যদি এটা করতেই থাকেন তাহলে সরকার জামিন বাতিলের চিন্তা করবে।
২. বিএনপির একটি অংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানারকম অপপ্রচার, মিথ্যাচার এবং গুজব ছড়াচ্ছে এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। করোনা নিয়ে এই গুজব সন্ত্রাসের উৎস খুঁজতে গিয়ে সরকার দেখেছে যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই ধরণের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপির জড়িত। যারা এই ধরণের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত এবং যারা সরকারবিরোধী এইসব অপপ্রচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে। এই ব্যাপারে ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ চালু হতে পারে বলে সরকারের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
৩. বিএনপির নেতারা এই সময়ে বেশ উচ্চকণ্ঠেই সরকারের সমালোচনা করেছে এবং এমন সব কথা বলেছে যে, যেগুলো সত্যিকারের সমালোচনা নয়। বরং শুধুমাত্র সরকারকে দোষারোপ করার সংস্কৃতি। এই কারণে সরকার বিএনপিকে যে স্পেস দিয়েছিল, সেই স্পেসটুকুও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বিএনপির একাধিক নেতার বিরুদ্ধেই অনেক দূর্নীতির মামলা রয়েছে এবং এই মামলাগুলো কার্যত অচল রয়েছে। ইতিমধ্যে দূর্নীতি সমন কমিশন বলেছে যে, পরিস্থিতির উন্নতি হলেই বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে যে দূর্নীতির মামলাগুলো রয়েছে সেগুলো পুনরায় চালু করা হবে এবং এই মামলাগুলো যে বিএনপিকে ঘরে রাখার বড় ওষুধ তা বিএনপির অজানা নয়। তাই সামনের দিনগুলোতে করোনা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই বিএনপি গত দুই মাসে যা করেছে তাঁর প্রতিদান পাবে বলে মনে করছে সরকারের একাধিক মহল।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার মনে করেছে নির্বাচনের পর সংকট উতরে গেছে। তা হয়নি, বরং আরও বেড়েছে। সরকার দেশকে পরিকল্পিতভাবে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
রোববার
(১২ মে) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ
সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
গত
বুধবার অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন
করে বিএনপি।
বিএনপি
মহাসচিব বলেন, নির্বাচনের পূর্বে বহু নেতাকর্মীকে একতরফাভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে। এর
তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। এখনো গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতা কারাগারে
রয়েছেন। বিরাজনীতিকরণ করতে ২ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর মূল
উদ্দেশ্য হচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দল যেন না থাকে। মানুষের সর্বশেষ আশা ভরসারস্থল হচ্ছে
কোর্ট, কিন্তু সেখানেও কেউ কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না।
সাংবাদিকের
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ, এটি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র। সরকার দেশকে পরিকল্পিতভাবে
একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এটি অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। একটি রাষ্ট্র তখন
ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়, যখন অর্থনীতির মেরুদন্ড ভেঙে যায়, রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট
হয়ে যায়। গোটা রাষ্ট্র একটি নৈরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না। তাও আবার
ক্ষমতাসীন দলের ছাড়া সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা টাকা পাচার করে সেটি বিনিয়োগ করেছে বিদেশে, অথচ বাংলাদশের
মানুষের অবস্থা খারাপ।
ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে আসছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কে আসলো তাতে ইন্টারেস্ট নেই। জনগণই বিএনপির শক্তি। সরকার মনে করছে নির্বাচনের পর সংকট উতরে গেছে। কিন্তু সংকট আরও বেড়েছে। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য খুবই খারাপ। তাকে হাসপাতালে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টাই তিনি চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে আছেন।
মন্তব্য করুন
কুমিল্লায় তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চারটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র চার সংসদ সদস্যের চার স্বজন প্রার্থী হয়েছেন। ওই চার সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হলেও তাঁরা আওয়ামী লীগের নেতা। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও ভোটাররা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে কুমিল্লার চারটি আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় চার নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হন।
কুমিল্লা-২ (হোমনা ও মেঘনা) আসনের সংসদ সদস্য হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুল মজিদের স্ত্রী রেহানা বেগম হোমনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন। রেহানা বেগম কুমিল্লা উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
জানতে চাইলে রেহানা বেগম বলেন, ‘২০১৯ সালেও আমি চেয়ারম্যান হয়েছি নৌকা প্রতীক নিয়ে। এবার দল সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত রেখেছে। নেতা-কর্মীদের চাপে প্রার্থী হয়েছি।’
কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে আহসানুল আলম সরকার উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছেন। ২০১৯ সালেও আহসানুল চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক নিয়ে জয়ী হন। আহসানুল আলম সরকার মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (বর্তমানে বহিষ্কৃত) আবুল কালাম আজাদের ছোট ভাই মামুনুর রশিদ কুমিল্লা উত্তর জেলা যুবলীগের সদস্য। তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।
কুমিল্লা-৫ ( বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এম এ জাহেরের বড় ভাইয়ের ছেলে আবু তৈয়ব ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তৃতীয় ধাপে প্রার্থী হয়েছেন। আবু তৈয়ব কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন।
স্বজনদের প্রার্থী হওয়া বিষয়ে সংসদ সদস্য মো. আবদুল মজিদ ও জাহাঙ্গীর আলম সরকারে ভাষ্য, প্রার্থীরা গতবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন। তাই এবারও তাঁরা প্রার্থী।
সংসদ
সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, দল প্রার্থিতা সবার জন্য উন্মুক্ত রেখেছে। সারা দেশে বড়
নেতাদের ভাই, ছেলে, স্ত্রী, সন্তানেরা প্রার্থী হয়ে ইতিমধ্যে অনেকে জয়ী হয়েছেন। দেবীদ্বারের
তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মামুনুরকে চান। অনেকটা একই রকম বক্তব্য দিয়েছেন সংসদ সদস্য এম
এ জাহের।
মন্তব্য করুন
আগামী ১৪ ও ১৫ মে দুদিনের ঢাকা সফরে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। ভারত ও শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে তাঁর। গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফর নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা রকম গুঞ্জন বা এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করলেও এবার তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। রাজনীতিতে তেমন কোন উত্তেজনা বা আতঙ্কও নেই যেমনটি ছিল নির্বাচনের আগে আগে। তবে ডোনাল্ড লুর সফর ঘিরে নতুন করে আশার বুক বাঁধছে বিএনপি। রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে দলটির মধ্যে। এরই মধ্যে বিএনপি গত শুক্রবার ঢাকায় সমাবেশ করেছে। পাশাপাশি সরকারবিরোধী দেশের সব সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আবার আলোচনা শুরু করেছে দলটি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধ নিরসন না হতেই উপজেলা নির্বাচন ঘিরে তৃণমূল আওয়ামী লীগে বিভক্তি বাড়ছে, বাড়ছে সহিংসতা। এবার উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক নৌকায় নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এমনকি দলটি কেন্দ্রীয়ভাবেও কাউকে সমর্থন দেয়নি। এর ফলে নির্বাচনে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে যে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন। যদিও দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, কোন মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্যরা নির্বাচন করতে পারবে না। কিন্তু সে নির্দেশনা মানছেন আওয়ামী লীগের কেউই। বরং মন্ত্রী-এমপিরা তাদের পরিবারের সদস্য বা মাই ম্যানদের পক্ষে সরাসরি ভূমিকা রাখছে। এর ফলে তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে। আর যার ফলে বাড়ছে কোন্দল, বাড়ছে সহিংসতা। সংসদ নির্বাচনের পর পরই দলীয় প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে যেমন সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল উপজেলা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও একই রকম আশঙ্কা করা হচ্ছে।