নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৯ পিএম, ০৩ জুন, ২০২০
করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে আওয়ামী লীগ যেন নিষ্প্রভ হয়ে গেছে। দলের হাতেগোনা নেতার বিবৃতি এবং অনলাইন সংবাদ সম্মেলন ছাড়া আওয়ামী লীগের কার্যক্রম তেমন চোখে পড়ছে না। যদিও আওয়ামী লীগের তরফ থেকে বলা হচ্ছে যে, তৃণমূলের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে তাঁরা সক্রিয় রয়েছে, ধান কাঁটার সঙ্গে অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলো যুক্ত ছিল। তারপরেও আওয়ামী লীগের সবকাজই হচ্ছে, কিন্তু আওয়ামী লীগের কোন ছন্দ নেই। বেসুরো হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ, কিন্তু কেন? আওয়ামী লীগের ভেতরে কি কোন অস্বস্তি কাজ করছে? আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের মধ্যে কি সমন্বয়ের অভাব? এরকম প্রশ্নগুলো রাজনৈতিক মহলে উঠছে। তবে এই সংকটকালীন সময়ে আওয়ামী লীগকেই সবথেকে সরব থাকার কথা ছিল। কারণ টানা তিন মেয়াদে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিরাই সর্বত্র। কাজেই জনগণের কাছে যেমন তাঁদের দায়বদ্ধতা রয়েছে, পাশাপাশি তাঁদের সাংগঠনিক শক্তিমত্তা প্রদর্শন এবং জনগণের কাছে যাওয়ার এটাই সবথেকে বড় সুযোগ। তারপরেও সেই সুযোগকে আওয়ামী লীগ হেলায় নষ্ট করছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে। আওয়ামী লীগের এই ছন্দপতনের কারণগুলো বিশ্লেষণ করেছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কারণগুলো হলো এরকম-
১. সাধারণ সম্পাদক ঘরবন্দি
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে ঘিরেই আওয়ামী লীগ পরিচালিত হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেন সবকিছুর উর্ধ্বে, তিনি দলের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, দলের ঐক্যের প্রতীক। সাধারণ সম্পাদক হলেন দলের চালিকাশক্তি, তাঁকে ঘিরেই দল পরিচালিত হয় এবং তৃণমূলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ, বিভিন্ন নেতাকর্মীদের মাঠে নামানো ইত্যাদি কাজগুলো করতে হয় সাধারণ সম্পাদককে। কিন্তু করোনার জন্য যৌক্তিক কারণেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঘরবন্দি হয়ে রয়েছেন, ঘরে বসেই তিনি বিভিন্ন অনলাইন সংবাদ সম্মেলন করছেন। কিন্তু মাঠে ঘোরাফেরা করার নেতা যখন ঘরে থেকে বিবৃতি দিবেন, সেই বিবৃতি কতটা চিত্তাকর্ষক হবে বা কতটুকু আবেদন বহন করবে তা বলাই বাহুল্য। আর এই কারণেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের অবাধ বিচরণের অভাব বোধ করছে আওয়ামী লীগ।
২. উদ্যমহীন নেতৃবৃন্দ
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের অধিকাংশই অনুপস্থিত। বেগম মতিয়া চৌধুরীকে মাঝে মাঝে দলের কর্মকাণ্ডে দেখা যায়, বাকি সদস্যদের মধ্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান কিছুটা সক্রিয়। কিন্তু অন্যরা কোথায় আছেন বা কি করছেন তা নিয়ে জনমনে অনেক প্রশ্ন। শাজাহান খান যতটা না আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য তাঁর থেকে বেশি তিনি পরিবহন শ্রমিক নেতা। পরিবহন বিষয় ছাড়া তাঁকে খুব একটা দেখা যায় না। আর ড. আব্দুর রাজ্জাক সক্রিয় থাকলেও মন্ত্রণালয়ের কাজকে ঘিরেই তিনি ব্যস্ত রয়েছেন। দলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে সরব রয়েছেন ড. হাছান মাহমুদ। সারাক্ষণই তিনি কথা বলছেন। এখন পর্যন্ত দলের কণ্ঠস্বর হয়েই আছেন তিনি। কিন্তু অন্য যুগ্ন সাধারণ সম্পাদকরা রুটিন কাজেই ব্যস্ত। দলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল হানিফ মোটেও সক্রিয় নন। আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম দলীয় কর্মকাণ্ডে আছেন কিন্তু তিনি ঘরোয়া রাজনীতিতে যতটা পারঙ্গম, মাঠের রাজনীতিতে তিনি ততটাই নিঃস্পৃহ। অন্য যুগ্ন সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে ডা. দীপু মনি এখন মন্ত্রণালয়ের কাজ নিয়েই ব্যস্ত। ফলে দলের প্রেসিডিয়াম এবং যুগ্ন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে যেমন নেই সঙ্গবদ্ধ প্রয়াস, তেমনি এই সঙ্কটে তাঁরা জনগণকে আশ্বস্ত করবেন বা জনগণের বিষয়গুলো নিয়ে কথাবার্তা বলবেন এমনটা তাঁদেরকে খুব একটা দেখা যাচ্ছেনা। দলের হেভিওয়েট নেতারা, যেমন তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, মোহাম্মদ নাসিম- তাঁরা নিঃস্পৃহ এবং দলীয় কর্মকাণ্ডে তাঁদেরকে খুব একটা দেখা যায়না। এদের মধ্যে মোহাম্মদ নাসিম এখন অসুস্থ। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি এখন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অন্য দুই নেতাও দুরত্ব বজায় রেখেই কাজ করছেন।
৩. অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোতে প্রাণ নেই
আওয়ামী লীগের অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলো ছিল অত্যন্ত সরব এবং কর্মচাঞ্চল্যে ভরপুর। কিন্তু ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোর উপরে যে ঝড় এসেছে, তাতে সব লণ্ডভণ্ড। কার্যত কর্মকাণ্ডহীন অঙ্গসহযোগী সংগঠগুলো। করোনা সঙ্কটকালে এই সংগঠগুলোর তৎপরতা চোখে পড়ছে না। হাতেগোনা দু-একটি অঙ্গসহযোগী সংগঠন টুকটাক দু-একটি কাজ ছাড়া বাকি সবাই যেন হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে।
৪. অর্ধেক এমপি এলাকায় নেই
আওয়ামী লীগ তৃণমূলের সংগঠন, তৃণমূল হলো আওয়ামী লীগের রক্তপ্রবাহের মতো। কিন্তু তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে উঠছে দুর্নীতি, ত্রাণ আত্মসাতের অভিযোগ। আর দলের এমপিদের কেউ কেউ ভালো কাজ করলেও অর্ধেক এমপি এলাকাতেই যাচ্ছেন না। আর সবমিলিয়ে সঙ্কটকালে আওয়ামী লীগকে যেভাবে দেখা যায়, এবারের সঙ্কটে আওয়ামী লীগ সেভাবে নেই।
৫. ছন্দহীন আওয়ামী লীগ
তবে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন যে, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা রাজনীতির চেয়ে এখন সঙ্কট মোকাবেলা এবং রাষ্ট্রপরিচালনায় গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাঁর নির্দেশনা পেলে আওয়ামী লীগের ছন্দে ফেরা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রুহুল কবির রিজভী
মন্তব্য করুন
নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সিনিয়র সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার (১৯ মে) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আস-সামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।
এ মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন ইশরাক। আজ আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন বর্ধিত করার আবেদন করেন তিনি। শুনানি শেষে আদালত তার জামিন বাড়ানোর আবেদন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
নাশকতা মামলা বিএনপি ইশরাক হোসেন
মন্তব্য করুন
‘ব্যাংকে সাংবাদিক ঢুকবে কেন’-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন রুহুল কবির রিজভী। বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেছেন, ব্যাংকে সাংবাদিক ঢুকবে না, তাহলে কী মাফিয়া, মাস্তান, ঋণ খেলাপিরা ঢুকবে?
রোববার (১৯ মে) রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ প্রশ্ন রাখেন। এসময় গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের কালী মন্দিরে আগুনের ঘটনায় হামলায় নিহত ২ নির্মাণশ্রমিকের পরিবারকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পক্ষ থেকে সহায়তা প্রদান করা হয়।
রিজভী আরও বলেন, যারা ব্যাংকের টাকা লুটপাট করে সম্পদের মালিক হয়েছেন, দেশের বাইরে বাড়ি করেছেন তাদের কথা সাংবাদিকরা যেন না জানতে পারেন তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
‘ব্যাংক মাফিয়া মাস্তান ঋণখেলাপি
মন্তব্য করুন
সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভয়াবহ। সামনের সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। সে জন্যই সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা সরকারের একটা গণবিরোধী সিদ্ধান্ত এবং যা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত।
রোববার (১৯ মে) দুপুরে রংপুর সার্কিট হাউজে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে দুপুরে জিএম কাদের ঢাকা থেকে বিমানযোগে সৈয়দপুর বিমান বন্দরে যান। সেখান থেকে সরাসরি রংপুর সার্কিট হাউজে পৌঁছান। সেখানে জেলা প্রশাসক মোবাস্বের হাসান, পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলম চৌধুরী, মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির, জেলা সভাপতি আলাউদ্দিন মিয়াসহ প্রশাসনের ও পার্টির নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জিএম কাদের বলেন, সামনে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। দেশের রিজার্ভ এখন ১৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে, যা এ যাবৎ কালের সর্বনিম্ন।
তিনি আরও বলেন, সরকার যতই রির্জাভের কথা বলুক আসলে ১০ বিলিয়ন ডলারই আছে বলে আমার মনে হয় না। এসব আমাদের জন্য অশুভ সংকেত। দেশে টাকা নেই প্রতিদিন রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। দেশে বিনিয়োগ আসছে না। যে অর্থ আসে তা বিদেশে চলে যাচ্ছে। ফলে ডলারের এবং দেশীয় টাকার চরম অবমূল্যায়ন হচ্ছে। দিন দিন টাকার ভ্যালু কমে যাচ্ছে।
জিএম কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় বড় কথা বলে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে আমি রেসপেক্ট করি। কিন্তু তিনি যেসব কথা বলছেন এটা জনগণ আর বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ আগে জনগণকে ধারণ করলেও এখন তারা জনগণের ঘাড়ে চেপে বসেছে। আগে আওয়ামী লীগ একটা গাছের মতো ছিল। জনগণ যেখানে বিশ্রাম নিতো। এখন সেটা পরগাছা হয়ে গেছে। তারা দেশের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
মন্তব্য করুন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং একে অন্যের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি যেন কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। নির্বাচন পরবর্তী কোন্দল বন্ধে বিভিন্ন রকম উদ্যোগও ব্যবস্থা গ্রহণ করছে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই একাধিক বার দলীয় কোন্দল বন্ধের জন্য তাগাদা দিয়েছেন। কিন্তু কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। বরং আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সাংগঠনিক অবস্থা রীতিমতো ভেঙে পড়েছে। এই কোন্দল এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন বা অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই। দলের এই কোন্দল এতদিন তৃণমূল পর্যায় থাকলেও সেটি এখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেও শুরু হয়েছে।