নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ১০ জুলাই, ২০২০
‘আমরা বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেটা আসলে প্রত্যাশিত নয়, এখানে আমাদের আসার কথা ছিলো না। আমরা যদি মার্চ-এপ্রিলে সঠিকভাবে সাধারণ ছুটি পালন করতাম তাহলে আজকে আমরা বিশ্বের অনেক দেশের মতো করোনা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতাম। যেকোন বাস্তবতায় আমরা সেটা করতে পারিনি। বর্তমানে আমাদের আক্রান্তের হার বাড়ছে এবং আমরা লকডাউন শিথিল করে সাধারণ জীবনযাত্রায় ফিরে আসছি। তাই এটা আমাদের জন্যে এই মুহুর্তে কিছুটা ঝুকিপূর্ণ। সামনে ঈদ আসছে এবং এই ঈদে আবার লোকজন গ্রামের বাড়িতে যাবে, ঈদকে কেন্দ্র করে কোরবানির হাঁটেও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে। তাই এই মুহুর্তে আমরা খুব ভালো অবস্থানে নেই।’
বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় কথাগুলো বলছিলেন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেইফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিজ (এফডিএসআর)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন। যিনি নর্দার্ন ইউনিভার্সিটিতে পাবলিক হেলথ- এ অধ্যাপকের দায়িত্বও পালন করছেন।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতির পেছনের কারণ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্যর্থতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মহামারি ঠেকানোর জন্য জনসচেতনতা তৈরি করতে হয়। এর আগেও আমরা যতগুলো জনস্বাস্থ্যের সমস্যা নিয়ে কাজ করেছি, আমরা জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী নিয়ে কাজ করেছি। এবারে কিন্তু আমরা সেই কাজগুলো দেখেনি। তৃণমূল পর্যন্ত কমিউনিটি সচেতনতা তৈরির জন্য অতীতে যে কর্মসূচীগুলো নেওয়া হয়েছে, করোনার ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু সেগুলো দেখিনি। আমরা অনেক বেশি নির্ভরশীল ছিলাম ফেসবুক বা মোবাইল ফোনে একটা ক্ষুদে বার্তার উপরে, কিন্তু মানুষের আচরণ পরিবর্তন এবং জনসচেতনতা তৈরির জন্য যে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচীগুলো নেওয়া উচিত সেগুলো যথাযথভাবে নেওয়া হয়নি। কাজেই স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে যদি ব্যর্থতার কথা বলেন তাহলে সেটা অবশ্যই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।’
ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন মনে করেন, ‘করোনা একটি বহুমাত্রিক সমস্যা। এটা শুধু স্বাস্থ্যগত সমস্যা নয়। এর সঙ্গে অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সমাজনীতি জড়িত। যদি অর্থনৈতিক বিষয়গুলো দেখেন তাহলে আমি বলবো যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দক্ষতা এবং বিচক্ষনতার সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে সামাল দিয়েছে। এর সঙ্গে স্বাস্থ্যখাতকে ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রন করতে পারলে এখন আমরা অনেক ভালো অবস্থানে থাকতাম।’
স্বাস্থ্যখাতকে আমরা স্বাস্থ্যখাত হিসেবে দেখিনি বলে তিনি বলেন যে, আমরা মনে করতাম চিকিৎসক মানেই স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য মানেই চিকিৎসক। এই চিকিৎসাকেন্দ্রিক যত সমস্যা ছিল সবাই অভিযোগের আঙ্গুল চিকিৎসকদের দিকেই তুলতো। কিন্তু আরো দুই যুগ আগে থেকে পৃথিবীতে ‘হেলথ সিস্টেম এপ্রোচ’ চালু হয়েছে। যেখানে প্রথমেই খুব জরুরী হলো যে একজন লিডার থাকবেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এবং গভর্নেন্সটা খুব জরুরী। নেতৃত্ব এবং সুশাসন হলো স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের প্রধান শর্ত। নেতৃত্ব যদি দক্ষ এবং স্বপ্নচারী না হয় তাহলে স্বাস্থ্যখাতকে বের করা কষ্টকর। এখানে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি যোগ করেন,‘স্বাস্থ্যখাতের ৬ টি কম্পোনেন্ট আছে। তাঁর মধ্যে একটি হলো ওয়ার্কফোর্স। এই ওয়ার্কফোর্সে হচ্ছে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা। বাকি পাঁচটি কম্পোনেন্ট নিয়ে আমরা খুব কম কথা বলি। আমরা শুধু চিকিৎসকদের নিয়ে কথা বলি। সুতরাং স্বাস্থ্যখাতের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক যে দর্শন সেই দর্শনে একটি ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতিটা দলগতভাবে সরকারের ভেতরেও রয়েছে। কারণ আপনি যদি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার দেখেন, তাহলে সেখানে দেখবেন যে, শিক্ষা, ডিজিটালাইজেশন ইত্যাদি নিয়ে খুব বিস্তারিত লেখা আছে। কিন্তু স্বাস্থ্য নিয়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নিয়ে মাত্র ১ পৃষ্ঠার মতো দায়সারা গোছের দিয়ে রেখেছে। অর্থাৎ আমরা স্বাস্থ্যখাতকে সিস্টেম হিসেবে কখনো অনুধাবন করতে পারেনি এবং এই সীমাবদ্ধতা আমাদের সবার। সেখান থেকেই স্বাস্থ্যখাতকে আমরা চিকিৎসক কেন্দ্রিক দেখি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা যদি সঠিক না হয় তাহলে কিনতি দুর্নীতিসহ অন্যান্য বিষয় চলে আসে। যার সঙ্গে জড়িত সুশাসনও। এমনিভাবে আমরা স্বাস্থ্যখাতকে কখনো সামগ্রিকভাবে দেখিনি। এই সমস্যা কিন্তু নতুন নয়। শুধু করোনার কারণে এটা উন্মোচিত হয়েছে। এই সমস্যাটা শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের নয়, এটা দশকের পর দশক থেকে বাড়তে বাড়তে আজ এই অবস্থায় এসেছে।’
সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্যখাতে অবাধ দুর্নীতির কারণ হিসেবে সুশাসনের ঘাটতিকে দায়ি করছেন ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন। তিনি বলেন যে, অসংখ্য অধিদপ্তর থাকার পরেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতো অগোছালো অধিদপ্তর আরেকটা পাওয়া যাবেনা। এখানে ব্যবস্থাপক হিসেবে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন অধ্যাপক বা চিকিৎসকদের। যারা হয়তো শিক্ষক ছিলেন। তাই তাঁদের তো ব্যবস্থাপনার দীর্ঘ যে প্রশিক্ষণ তা নেই। এজন্য আমরা বলি যে, স্বাস্থ্যখাতের ক্যাডারটাকে দুইভাগে ভাগ করা উচিত। একটি ক্লিনিক্যাল ক্যাডার, যারা রোগী দেখবেন, শিক্ষকতা করবেন। আরেকটি ব্যবস্থাপনা ক্যাডার। যারা এডমিনেস্ট্রশন দেখবেন, অধিদপ্তর চালাবেন, সিভিল সার্জন হবেন, উপজেলা হেলথ অফিসার হবে এবং জনস্বাস্থ্যের বিষয়টিও দেখবেন। আমরা যদি এভাবে স্বাস্থ্যখাতকে দুইটি বা তিনটি ক্যাডারে ভাগ করতে পারি যেমন ক্লিনিক্যাল ক্যাডার, ব্যবস্থাপনা ক্যাডার এবং আরো বিস্তারিত করলে হেলথ এডুকেশন। অর্থাৎ আমাদের একটি ব্যবস্থাপক গ্রুপ চিকিৎসকদের ভেতর থেকে করতে হবে। আপনি যদি বাইরে থেকে কাউকে এনে এডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে বসান তাহলেও সমস্যা। এটা তো খুব টেকনিক্যাল বিষয়, তাই বাইরে থেকে যত দক্ষ আমলাই আপনি নিয়ে আসুন না কেন, সে এটাকে ভালো বুঝতে পারবে না। কারণ এমন একজন ব্যবস্থাপক লাগবে যিনি টেকনিক্যাল বিষয়টিও বোঝেন।’
পাশের দেশ ভারতের তামিনাড়ুর উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন যে, সেখানে এই পদ্ধতি খুব আগে থেকে চলে আসছে। চিকিৎসকরা যখন শুরুতে সরকারি চাকরিতে ঢোকে তখন তাঁরা দুটো ভাগে ঢোকে। এডমিন এবং অন্যটি ক্লিনিক্যাল সাইডে। সেক্ষেত্রে এই ম্যানেজমেন্টগুলো ভালো হয়। আর দুর্নীতি তো অনেক দিন যাবৎ আছে। এটা একটি শিল্পের পর্যায়ে চলে গেছে। আবার দুর্নীতি নিয়ে কিছু কিছু অতিকথনও রয়েছে। এখন এমন একটি অবস্থা হয়েছে যে, যা কিছু হয় আমরা দুর্নীতির কথাই ভাবি। দুর্নীতি আছে এবং কিছু কিছু সিন্ডিকেটের কথা যে আমরা শুনি তা আছে এবং তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এটা ব্যবস্থাপনা, সুশাসনের ঘাটতি এর অন্যতম কারণ।’
বর্তমান করোনা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে তিনি বলেন, এখন আমাদের লকডাউন দেওয়ার মতো বাস্তবতা নেই। এখন আমাদের দরকার জনসচেতনতা বাড়ানো। একদম তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত জনসচেতনতা বাড়ানোর ক্যাম্পেইন করতে হবে। সেই ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য হবে যে, আমরা প্রতিটি মানুষ যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করি। আমরা যদি নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারি তাহলে লকডাউন না করেও এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব। সেখানে কিছু ঝুঁকিও অবশ্য থাকবে। কিছু মানুষ অসুস্থ হবে এবং কিছু মানুষের হয়তো জটিল অবস্থা সৃষ্টি হবে, কিন্তু সবার আগে আমাদের নিজেদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এই মুহুর্তে স্লোগান হবে, ‘নিজে বাঁচুন এবং অন্যকে বাঁচান’। অন্যান্য জনস্বাস্থ্যের সমস্যায় আমরা দেখেছি যে, একটি মসজিদের ইমাম, একজন শিক্ষক, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ইত্যাদি সোশ্যাল এলিটদের মাধ্যমে যদি তৃণমূল পর্যন্ত প্রতিটি বাড়ি বাড়ি এই বার্তাটা পৌঁছে দিতে পারি, হাতে হাতে লিফলেট দেওয়া, বিলবোর্ডে ছেয়া ফেলা এবং নিশ্চিত করি যে সবাই যেন মাস্ক পরে, সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে। আরেকটি কর্মসূচী যেটা রাজনৈতিক দলগুলোর নেওয়া উচিত তা হলো বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ। কারণ মাস্ক নিয়ে আমাদের দীর্ঘদিন চলতে হবে যতদিন না আমরা ভ্যাকসিন পাই বা একটি সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পাই। তবে বর্তমান বাস্তবতায় আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং অন্যান্য অসুখের মতো কোভিড-১৯ কে সাথে নিয়েই আমাদের চলতে হবে।’
মন্তব্য করুন
দেশজুড়ে বিশেষ করে ঢাকা শহরে ডেঙ্গু একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক তথ্যও ডেঙ্গু আক্রান্তের তীব্রহারের ইঙ্গিত দেয়। ইতোমধ্যে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাফল্য দেখিয়েছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও কলকাতা মডেল। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও মশা গবেষক অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার কেবি (কবিরুল বাশার) মডেল নামে একটি মডেল তৈরি করেছেন। বুধবার (১৫ মে) বাংলা ইনসাইডারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মডেল সম্পর্কে বিস্তারিত জানান।
বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণ খুব সফলভাবে মোকাবেলা করেছে। মানুষ থেকে মানুষের ছড়ানো এই ভাইরাসটি মোকাবেলা করা খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে করোনার বিরুদ্ধে জয়ী হতে পেরেছে বাংলাদেশ।
দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা পরিচিত শত্রু এডিস মশা এবং তার দ্বারা সংক্রমিত রোগ ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া। ২০০০ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় প্রতিবছরই কমবেশি ডেঙ্গু হয়েছে। ডেঙ্গু এবং এর বাহক মশা সম্বন্ধে আমরা সকলেই অবগত এবং এর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও আমাদের জানা। তারপরেও আমরা কেন ব্যর্থ হচ্ছি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে?
গত কয়েকদিন ধরে
প্রতিদিন গড়ে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে প্রায় আড়াই হাজারের বেশী মানুষ। ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। কোনভাবেই যেন ঠেকানো যাচ্ছে না এডিস মশা এবং তার ডেঙ্গু সংক্রমণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ২৩ হাজার মানুষ ডেঙ্গু রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। যদিও এই পরিসংখ্যানটি সম্পূর্ণ নয়। কারণ এটি শুধুমাত্র যে সকল হাসপাতালগুলোও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে রিপোর্টিং করে তাদের তথ্য। এছাড়াও অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে যার তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাতে পৌঁছায় না। আবার অনেক রোগী বাসায় থেকেও চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব গবেষণাগার সবসময়ই মশা ও মশা বাহিত রোগ নিয়ে গবেষণা করে। আমরা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, মাঠ পর্যায়ের এডিস মশার ঘনত্ব, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আদ্রতা এই কয়েকটি বিষয়কে নিয়ে মাল্টিভেরিয়েট এনালাইসিস করে ফোরকাস্টিং মডেল তৈরি করি। যার মাধ্যমে ডেঙ্গু সম্বন্ধে আগাম ধারণা দিতে পারি। আমাদের গবেষণাগার থেকে এ পর্যন্ত আমরা যে আগাম তথ্য দিয়েছি তার সবগুলোই সঠিক হয়েছে।
আমাদের বর্তমান ফোরকাস্টিং মডেল বলছে আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হবে।
শুধুমাত্র ঢাকায় নয় বাংলাদেশের সব জায়গায় ডেঙ্গু আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যাবে।
বাংলাদেশের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা একটি মডেল তৈরি করেছি।
এই মডেলটি অনুযায়ী পাঁচ বছর কার্যক্রম চালাতে পারলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ হবে বলে আমি নিশ্চিত করতে পারি। ধারণা করা হয় এবছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আমার এই মডেলটি বাস্তবায়নে যে ব্যয় হবে তা মোট নিয়ন্ত্রণ ব্যয়ের চাইতে অনেক কম হবে। মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। বাংলাদেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রস্তাবিত ”কেবি মডেল” রুপরেখা নিম্নরূপ।
১. স্বাস্থ্যকর্মী: প্রতি এক হাজার হোল্ডিং বা বাড়ির জন্য একজন করে স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দিতে হবে। আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে এই জনবল নিয়োগ করা যেতে পারে। এই স্বাস্থ্যকর্মী কাছে প্রতিটি বাড়ির মালিকের ফোন নাম্বার এবং ঠিকানা থাকবে। বাড়ির মালিকের সাথে তার নিয়মিত যোগাযোগ থাকবে। ওই বাড়িতে কারো কোনরকম জ্বর হয়েছে কিনা সেই তথ্য নিয়মিতভাবে তার কাছে থাকতে হবে। প্রতি ১৫ দিনে একদিন তার নির্ধারিত বাড়িতে গিয়ে বাড়ির মালিকপক্ষের কাউকে নিয়ে সম্পূর্ণ বাড়ি এবং বাড়ির আঙিনা ঘুরে দেখতে হবে কোথাও কোন পাত্রে পানি জমা আছে কিনা, যেখান থেকে ডেঙ্গুর বাহক এইডিস মশার প্রজনন হতে পারে। যদি ওই বাড়িতে এইডিস মশার জন্মাতে পারে বা জন্মেছে এমন কোন ধরনের পাত্র পাওয়া যায় তাহলে সেই বাড়ির লোককে দিয়ে সেইটি ব্যবস্থাপনা করতে হবে। তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে কিভাবে এই কাজটি করতে হয়। নিয়মিতভাবে তাদের এই কাজ করার জন্য অনুরোধ করতে হবে। যদি কোন বাড়িতে ডেঙ্গুর বাহক এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় তাহলে সেই বাড়ির মালিককে মশার লার্ভা সম্পর্কে সম্মুখ জ্ঞান প্রদান করতে হবে। লার্ভা প্রাপ্ত বাড়ির মালিককে সর্তকতা নোটিশ প্রদান করতে হবে যেন ভবিষ্যতে আর না পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে লার্ভা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সেই নোটিশে উল্লেখ থাকতে হবে।
বাড়ি ভিজিট করার সঙ্গে সঙ্গে প্রাপ্ত তথ্য এবং উপাত্ত ডেঙ্গু নিধন অ্যাপে এন্ট্রি দিতে হবে। এন্টি দেওয়ার পরেই কেন্দ্রীয় টিম,জিআইএস টিম, র্যাপিড রেসপন্স টিম সেটি দেখতে পাবে। যদি কোন বাড়িতে ডেঙ্গু রোগী থাকে এবংএইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় তাহলে কেন্দ্রীয় র্যাপিড রেসপন্স টিম দ্রুত ওই বাড়ি এবং তার আশেপাশে মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিবে। মশা নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে সেটিও অনলাইন অ্যাপে এন্ট্রি দিতে হবে যেন কেন্দ্রীয় টিম সেটি সহজেই মনিটরিং করতে পারে। স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে তিন ধরনের স্টিকার থাকবে;
সবুজ, হলুদ এবং লাল। যদি বাড়িতে কোন ধরনের পানি জমা না থাকে তাহলে সেই বাড়িতে সবুজ স্টিকার লাগানো, এইডিস মশার প্রজনন স্থল আছে কিন্তু লার্ভা নেই এমন বাড়িতে হলুদ আর যদি লার্ভা পাওয়া যায় তাহলে সেই বাড়িতে লাল স্টিকার লাগিয়ে দিতে হবে। বাড়ির মালিককে জানাতে হবে যে সে কোন কারণেই এই স্টিকার তুলে ফেলতে পারবে না। স্টিকার তুলে ফেললে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে ডেঙ্গু টেস্ট করার কিট থাকতে হবে।
ওই বাড়ির কারো জ্বর থাকে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করিয়ে দিতে হবে। যদি কোন বাড়িতে ডেঙ্গু পজেটিভ পাওয়া যায় তাহলে সিটি কর্পোরেশনের চিকিৎসকের সাথে তার সংযোগ করিয়ে দিতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের চিকিৎসক নিয়মিতভাবে তার খোঁজখবর রাখবেন এবং চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দিবেন। তার অধীনে থাকা প্রতিটি বাড়ির প্রতিবার পর্যবেক্ষণের পূর্ণাঙ্গ তথ্য ছবিসহ অ্যাপে আপলোড করতে হবে।
শুধুমাত্র আবাসিক এলাকা নয় একজন স্বাস্থ্যকর্মীর অধীনে তার এলাকার নির্ধারিত সমস্ত হোল্ডিং গুলোই থাকবে। সেটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল বা অফিস আদালতও হতে পারে। স্বাস্থ্যকর্মীকে ১৫ দিনে একদিন যেতেই হবে এবং সেই বাড়ির সমস্ত তথ্য অনলাইনে আপলোড করতে হবে। এ জাতীয় ডাটা ম্যানেজমেন্ট এর জন্য বিভিন্ন ধরনের ফ্রি অ্যাপস আছে। অথবা সিটি কর্পোরেশন নিজেরাও এই অ্যাপ তৈরি করে নিতে পারে।
২. ক্লিনার: প্রতিটি ব্লকে একজন করে ক্লিনার থাকবে। ক্লিনারের কাজ হচ্ছে আটকে যাওয়া ড্রেন, ডোবা, নর্দমার পানি প্রবাহিত রাখা। কারণ আবদ্ধ পানিতে মশা জন্ম হয়। সাথে সাথে তার ব্লকের বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকা পাত্র যেখানে এডিস মশা জন্মানোর সম্ভাবনা আছে সেগুলো পরিষ্কার রাখা।
৩. মশককর্মী: প্রতিটি ব্লকে দুজন করে মশককর্মী থাকবে যারা সকালে লার্ভিসাইড এবং বিকালে এডাল্টিসাইড স্প্রে করবে। প্রতি তিন দিন পর পর অবশ্যই একটি এলাকাতে লার্ভিসাইড এবং এডাল্টিসাইড স্প্রে নিশ্চিত করতে হবে। আর এই নিশ্চিতকরণের দায়িত্বে থাকবে একজন ওয়ার্ড সুপারভাইজার। ওয়ার্ড সুপারভাইজার আঞ্চলিক কীটতত্ত্ববিদকে রিপোর্ট করবেন।
৪. সুপারভাইজার: একটি
ওয়ার্ড এর জন্য একজন সুপারভাইজার থাকবে। তিনি তার ওয়ার্ডের সমস্ত স্বাস্থ্য কর্মী মশককর্মীদের নিয়মিত কাজ নিশ্চিত করবেন। তার স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজের মাসিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন ওয়ার্ড কমিটিকে প্রদান করবেন।
তার ওয়ার্ড এ প্রতিটি বাড়ির মশা বাহিত রোগের খবরা খবর রাখবেন। তার ব্লকে কোথায় মশা জন্মানোর স্থান আছে সেটি কিউলেক্স মশা না এডিস মশা তার রেকর্ড তার কাছে থাকতে হবে। সাথে সাথে তার ব্লকের জনগণকে সচেতন করা এবং মশা নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করার দায়িত্ব তার থাকবে। তার অধীনে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত মোবাইল অ্যাপে এন্ট্রি দিচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করবেন।
৫. সহকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা: প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে চিকিৎসক সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে থাকবেন। তিনি সুপারভাইজারের কাছ থেকে ডেঙ্গুর বাহক এইডিস মশা, তার প্রজনন স্থল, ঘনত্ব, ডেঙ্গু রোগী ইত্যাদি সমস্ত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করবেন। তার ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা ও খবরাখবর রাখবেন। তিনি তার আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে নিয়মিত মাসিক সভায় প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন: পৃথিবীতে কোন নাগরিকের সম্পৃক্ততা ছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণ করা কখনোই সম্ভব নয়। নাগরিকদেরকে মশা নিয়ন্ত্রণে সম্পৃক্ত করার জন্য পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে আইন রয়েছে। সেরকম একটি আইন বাংলাদেশে তৈরি করে তার বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। কোন ব্যক্তি যেন তার নিজ জায়গায় মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করে অপরের ক্ষতি করতে না পারে তা রোধ করাই এই আইনের উদ্দেশ্য।
মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশকের পর্যাপ্ততা: মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত কীটনাশক জনগণের হাতের নাগালে আনতে হবে। তেলাপোকা এবং ইদুর মারার কীটনাশক এর মত মশা নিয়ন্ত্রণের কীটনাশক মানুষের কাছে সহজলভ্য হতে হবে। যেন মানুষ সহজেই এ কীটনাশক কিনে তার বাড়ি এবং আশেপাশে ব্যবহার করতে পারে।
কীটনাশক রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজীকরণ: আমাদের দেশে একটি কীটনাশক বাজারজাত করতে গেলে যে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া রয়েছে সেটিতে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা যায়। একটি কীটনাশক রেজিস্ট্রেশন এর জন্য আবেদন করার পরে সর্বোচ্চ ৩ মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা প্রয়োজন।
মশক নিয়ন্ত্রণ বা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য নিম্নলিখিত কমিটি করা যেতে পারে:
কেন্দ্রীয় কমিটি, কমিটির সদস্য: মেয়র, উপদেষ্টা বা পরামর্শক, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা, উপ প্রধান স্বাস্থ্যকর্মকর্তা, স্বাস্থ্যকর্মকর্তা,আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, কীটতত্ত্ববিদ, জিআইএস এক্সপার্ট ও কাউন্সিলর।
কাজ: প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর ডেঙ্গু পরিস্থিতি ও মশক সমস্যা বিষয়ক মূল্যায়ন সভা। প্রতিটি ওয়ার্ডকে লিখিত আকারেপরবর্তী দিকনির্দেশনা প্রদান। মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক,
লোকবল, এবং সরঞ্জামাদি নিশ্চিত করা।
জি আই এস টিম, কমিটির সদস্য: প্রধান জিআইএস এক্সপার্ট, কীটতত্ত্ববিদ,স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
কাজ: স্বাস্থ্যকর্মীরা যে তথ্য উপাত্ত অ্যাপে এন্ট্রি দিচ্ছে তা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ ও ম্যাপে রূপান্তর। ডেঙ্গুর হট স্পট নির্ধারণ। হটস্পট অনুযায়ী র্যাপিড রেসপন্স টিমের কাছে বাড়ির ঠিকানা ও তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করা। র্যাপিড রেসপন্স টিমের কার্যক্রম নিশ্চিত করা।
মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন টিম, কমিটির সদস্য: এটি সিটি কর্পোরেশনের বাইরের কোন অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদ বা প্রতিষ্ঠান দিয়ে করিয়ে নিতে হবে।
কাজ: দুই মাস অন্তর অন্তর প্রতিটি ওয়ার্ডের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ও মশক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করবেন। প্রতিটি ওয়ার্ডের মশার ঘনত্ব ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করবেন। তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনলাইনে এন্ট্রি করবেন। এতে স্পষ্ট হবে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে যে কার্যক্রম করা হয়েছে সেটি আসলে ফলাফল দিয়েছে কিনা। ওয়ার্ড কমিটির কার্যক্রম কতটা ফলপ্রসু হলো তা এই মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন টীম এর তথ্য উপাত্ত থেকে তুলনামূলক চিত্র পাওয়া যাবে
এবং এটি সরাসরি অনলাইনে দেখা যাবে। মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন টিম তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সরবরাহ করবে এবং এই প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় কমিটির পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
র্যাপিট রেসপন্স টিম, কমিটির সদস্য: কীটতত্ত্ববিদ,মশক সুপারভাইজার, স্প্রেম্যান, ফগারম্যান, ক্লিনার, ড্রাইভার।
কাজ: জিআই স্টিমের তথ্য উপাত্ত অনুযায়ী কোথাও ডেঙ্গুর রোগী পাওয়া গেলে সেই বাড়ির ৪০০ গজের মধ্যে উড়ন্ত মশা নিধন নিশ্চিত করা। কোথাও এইডিস মশার ঘনত্ব বেশি পাওয়া গেলে সেইখানেও মশা নিধন নিশ্চিত করা। তাদের কার্যক্রম সম্পন্ন করে মোবাইল অ্যাপে এন্ট্রি দেওয়া।
আঞ্চলিক কমিটি, কমিটির সদস্য: সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি অঞ্চলে একটি করে আঞ্চলিক কমিটি থাকতে হবে। আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা,কীটতত্ত্ববিদ,মশক সুপারভাইজার।
কাজ: তার অঞ্চলে মশক নিধন কার্যক্রম তদারকি করা। কেন্দ্রীয় কমিটিকে অবহিত করা। প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর প্রতিটি ওয়ার্ডের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ও মশক সমস্যা বিষয়ক মূল্যায়ন সভা। প্রতিটি ওয়ার্ডকে লিখিত আকারেপরবর্তী দিকনির্দেশনা প্রদান। মশা নিয়ন্ত্রণে তার অঞ্চলে কীটনাশক, লোকবল, এবং সরঞ্জামাদি নিশ্চিত করা।
ওয়ার্ড কমিটি, কমিটির সদস্য: সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ওয়ার্ড কমিটি থাকতে হবে। কাউন্সিলর, সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা,মশক সুপারভাইজার।
কাজ: তার ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম তদারকি করা। আঞ্চলিক কমিটিকে অবহিত করা। প্রতি মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ও মশক সমস্যা বিষয়ক মূল্যায়ন সভা। মশক সুপারভাইজার কে লিখিত আকারেপরবর্তী দিকনির্দেশনা প্রদান। মশা নিয়ন্ত্রণে তার ওয়ার্ডে কীটনাশক, লোকবল, এবং সরঞ্জামাদি নিশ্চিত করা।
এ কাজগুলোকে বাস্তবায়নের জন্য অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদ দিয়ে আধুনিক এবং সময় উপযোগী গাইডলাইন তৈরি করে নিতে হবে। মশা নিয়ন্ত্রণের আধুনিক সরঞ্জামাদি এবং আধুনিক কীটনাশক নির্দেশিকা এই গাইডলাইন থাকবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সারা দেশের মশা এবং অন্যান্য বাহক নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি স্বতন্ত্র সেন্টার তৈরি করতে পারে। যেটির নাম হতে পারে বাংলাদেশ ভেক্টর কন্ট্রোল রিসার্চ সেন্টার। এই সেন্টারের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের মশা এবং অন্যান্য বাহক নিয়ন্ত্রণ হতে পারে। এই সেন্টারে বছরব্যাপী মশা, অন্যান্য বাহক ও কীটনাশক নিয়ে গবেষণা হবে এবং তারাই নির্দেশনা দিবে কখন কোন কীটনাশক কোন বাহক এর জন্য ব্যবহৃত হবে। বাহকের আচরণ এবং নতুন নতুন বাহক এর ক্ষেত্রে কি ধরনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে সেটির দায়িত্ব তাদের উপর থাকবে। এই সেন্টারে অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ দিতে হবে। এই সেন্টার দেশব্যাপী মশা ও অন্যান্য বাহক নিয়ন্ত্রণের অভিভাবক হিসেবে কাজ করবে। এই প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদদের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সেক্টরের জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদেরকে বাহকের আচরণ, প্রজনন এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ প্রদান করবে। সাথে সাথে মশা নিয়ন্ত্রণের আধুনিক সরঞ্জাম ও কীটনাশক সরবরাহ করবে।
ডেঙ্গু যেহেতু এখন সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই তাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোকে মশক নিধনে যুগোপযোগী করে তুলতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং জেলা পরিষদ প্রতিটি জায়গায় তাদের মশক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
প্রতিটি জেলাতে জেলা কীটতত্ত্ববিদ এর একটি পদ রয়েছে। কোন কোন জেলাতে এপদে কর্মকর্তা রয়েছে। যেসব জেলাতে পদগুলি ফাঁকা রয়েছে সেসব জেলাতে এই পথ গুলো পূরণ করে এই মশা নিয়ন্ত্রণ কাজ জোরদার করা প্রয়োজন।
এই মুহূর্তে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নাজুক। আগামী দুটি মাস পরিস্থিতি খারাপ থাকবে। তাই এই মুহূর্তে একে অপরকে দোষারোপ না করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এবং জনগণকে যার যার অবস্থান থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভালো হয়ে গেলে নীতি নির্ধারকরা ভুলে যাবেন না। আগামী বছরগুলোর জন্য একটি টেকসই পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য উদ্যোগী হবেন নিশ্চয়ই।
জাহাঙ্গীরনগর প্রাণিবিদ্যা মশা গবেষক অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
দেশজুড়ে বিশেষ করে ঢাকা শহরে ডেঙ্গু একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক তথ্যও ডেঙ্গু আক্রান্তের তীব্রহারের ইঙ্গিত দেয়। ইতোমধ্যে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাফল্য দেখিয়েছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও কলকাতা মডেল। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও মশা গবেষক অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার কেবি (কবিরুল বাশার) মডেল নামে একটি মডেল তৈরি করেছেন। মঙ্গলবার (১৫ মে) বাংলা ইনসাইডারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মডেল সম্পর্কে বিস্তারিত জানান।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেছেন, এপ্রিল মাসে তীব্র তাপদাহ যাচ্ছে। এটা একটু কষ্টদায়ক বটে। তবে মে মাসেও তো আবহাওয়া এমন থাকবে এবং সে সময় প্রচন্ড গরম থাকবে। কিন্তু তাই বলে তো আর স্কুল, কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এত লম্বা সময় ধরে বন্ধ রাখা যায় না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, যারা দলের নির্দেশনা মানতে পারেননি, তারা তো না পারার দলে। দল থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, কোন মন্ত্রী-এমপির পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন না। এটা ছিল দলের বৃহত্তর স্বার্থে। সেজন্য সেটা পালন করা সবাই নৈতিক দায়িত্ব ছিল। কিন্তু যখন কেউ কেউ সেই নির্দেশ মান্য করেননি সেটার দায়-দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হবে। দলের প্রতি তাদের কমিটমেন্ট নিয়ে আমার বড় প্রশ্ন রয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে স্বজনদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এর মধ্য দিয়ে একটি স্পষ্ট হয়েছে যে, রাজনীতির মধ্য দিয়েই প্রধানমন্ত্রীর উত্থান হয়েছে এবং তিনি যে দল ও ত্যাগী নেতাদের ভালোবাসেন, তাদের প্রতি যে তার মমত্ববোধ সেটি প্রকাশ পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই সিদ্ধান্তের কারণে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা রাজনীতিতে নতুন আলোর সঞ্চার দেখছেন এবং তারা নিঃসন্দেহে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তারা আশ্বস্ত হয়েছেন যে, রাজনীতি রাজনীতিবিদদের কাছেই থাকবে।