নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৩ জুলাই, ২০২০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদের বাজেট অধিবেশনে বলেছিলেন, ‘করোনায় আতংক নয়, বরং আত্মবিশ্বাস থাকা উচিৎ।’ তিনি স্পষ্টভাবেই বলেছিলেন, ‘আমাদের মৃত্যুর আগে মরে যাওয়া উচিৎ হবে না।’ ‘বাংলা ইনসাইডারে’ প্রকাশিত আমার আগের ‘গুজব ছড়ানো এবং আতঙ্ক সৃষ্টি বন্ধ করুন’ মতামতে আমি এই বিষয়টিই বলেছিলাম যে, বাংলাদেশে আমাদের সচেতন হওয়া দরকার, আতঙ্কিত নয়। যদি আমরা প্রত্যেকে একত্রে কাজ করি, তবে আমরা এই করোনা যুদ্ধে জয়ী হতে পারবো। করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে যেসব কারণে আতঙ্কিত হওয়া উচিত নয়, সেগুলো আমি এখানে একটু উল্লেখ করছি-
১. কোভিড-১৯ সম্পর্কে আমরা এখন অনেক কিছুই জানি
চীনের উহানে গুরুতর নিউমোনিয়া অস্বাভাবিকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, এমন রিপোর্ট আসার ৭ দিন পর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রথম এই ভাইরাসটি সম্পর্কে জানতে পারে। এর তিন দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর এই ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স পাওয়া যায়। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন পরীক্ষাগারে কোভিড-১৯ পরীক্ষার কিট, এই রোগ সংক্রমণের প্রকৃতি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা শুরু হয়। আমরা জানতে পারি যে, এটা প্রাকৃতিক ভাইরাস এবং বাদুড়ে পাওয়া ভাইরাসের সাথে এর মিল রয়েছে। এই ভাইরাসের সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানতে বাংলাদেশেও এর জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে।
২. আমাদের নির্ভরযোগ্য কৌশল ও পরীক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে
অর্থনৈতিক নানা সমস্যা সত্ত্বেও বাংলাদেশ করোনা সংকট নিরসনের প্রচেষ্টা হিসেবে পরীক্ষা করা, বিচ্ছিন্ন করা এবং কন্টাক্ট ট্রেসিং এর কৌশল গ্রহণ করেছে। যদিও বাংলাদেশে শুরুতে আমাদের প্রতিটি জেলা বা হাসপাতালে পরীক্ষার সুবিধা ছিল না, খুব কম জায়গাতেই টেস্ট করা হতো। কিন্তু বাংলাদেশ দ্রুত পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়িয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষার সরঞ্জাম ও সুবিধার জালিয়াতির খবর পাওয়া সত্ত্বেও, বাংলাদেশে এখন নির্ভরযোগ্য পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। তবুও এখনও অনেক কিছু করা দরকার। আমি বিশ্বাস করি, দেশব্যাপী সাধারণ জনগণের কাছে পরীক্ষার সুবিধা আরও সহজ করতে সরকার আরও বরাদ্দ দিচ্ছে। এটি বাংলাদেশকে বর্তমান মহামারীর পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেকোনো মহামারী প্রতিরোধে প্রস্তুত রাখতে পারবে। আমাদের মনে রাখা দরকার এবং গর্বিত হওয়া উচিৎ এজন্য যে, বাংলাদশের এখন ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় মৃত্যু ও দুর্যোগ প্রতিরোধের অনন্য সক্ষমতা রয়েছে। আমি নিশ্চিত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব এবং দূরদৃষ্টি আমাদের বর্তমান যুদ্ধেও করবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যে কোনও মহামারী প্রতিরোধেও আমাদের প্রস্তুত করবে।
৩. এটাকে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব
আমরা জানি প্রথম দিকে সব কিছু অবরুদ্ধ করলে সংক্রামক রোগের সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব হয়। চীন, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এর বড় প্রমাণ। তাদের কঠোর নেতৃত্ব এবং প্রাথমিক পর্যায়ে কঠোর পদক্ষেপের কারণে এই রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে তারা সফল হয়েছে। আমরা শুরুতে ইতালি থেকে আগতদের কোয়ারেন্টাইন করতে পারিনি। তাদের মাধ্যমে দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। তবে বাংলাদেশ চীন ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভ্রমণ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল। চীন থেকে যারা ফিরে এসেছিল তাদেরও সফলভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। সেই সাথে যেসব চীনা নির্মাণকর্মী ও কর্মকর্তারা বাংলাদেশে কাজ করছে, তারাও সরকারের সমস্ত নির্দেশ মেনে চলেছে। এজন্য আমাদের সবার উচিৎ তাদের ধন্যবাদ দেওয়া।
মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে, অনেক পশ্চিমা দেশ এবং ভারতের আগে, দেশব্যাপী লকডাউনের সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। আমাদের এ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত এবং অনেক কথা থাকতে পারে তবে আমি দৃড়ভাবে বিশ্বাস করি যে তাড়াতাড়ি লকডাউন ভাইরাসের তাৎক্ষণিক বিস্তৃতি ঠেকাতে এবং সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিল। এর ফলে করোনা প্রতিরোধে প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া গিয়েছিল। এটি জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করেছিল।
এখন, সক্রিয় নজরদারি ব্যবস্থা চালু রেখে সীমিত আকারে সব খুলে দেওয়া হয়েছে। এলাকা ভিত্তিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যার ফলে সংক্রমণ সীমাবদ্ধ থাকবে, আবার অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়বে না। অর্থাৎ করোনা এবং অর্থনীতি সবই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে।
৪. মানুষ সচেতন হচ্ছে, ফলে সংক্রমণ সহজে বাড়ছে না
যদিও সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং জীবিকার কারণে অনেকেই লকডাউন ব্যবস্থা কঠোরভাবে অনুসরণ করা বা সামাজিক দূরত্ব অনুসরণ করতে পারেনি, তবুও আমাদের অবশ্যই বাংলাদেশের সাধারণ জনগণকে কুর্নিশ করা উচিৎ। কারণ সংকট থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ মানুষ সরকারী পদক্ষেপ অনুসরণ করেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক বাইরে যাওয়া সীমাবদ্ধ করছে। বেশিরভাগ মানুষই মসজিদে যাওয়ার বদলে বাসায় বসে প্রর্থনা করছে। এমনকি ঈদের সময়ও মানুষ ঘরে থেকেছে। অনেকে এ বছর কোরবানি পালন না করার বিষয়টিও বিবেচনা করছেন। বেশিরভাগ মানুষ, পরিবার, অফিস, শিল্পক্ষেত্র ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। মানুষ বাড়ির বাইরে বেরোনোর সময় মাস্ক ব্যবহার করছে। গণ জমায়েত এড়িয়ে চলছে। ফলস্বরূপ, আমরা দেখতে পাই, দৈনিক সংক্রমণের হার ১৯-২৪ শতাংশের মধ্যে রয়েছে এবং বাড়ছে না। অর্থাৎ সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এখন তুলনামূলকভাবে কঠিন হয়ে পড়ছে। আমি আশা করছি, আগামী দিনগুলোতে সংক্রমণের হার ধীরে ধীরে কমতে থাকবে।
৫. বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষণগুলো মৃদু বা উপসর্গহীন হয়
চীনে করোনায় ৮০ শতাংশের বেশি সংক্রমণের ক্ষেত্রে খুব হালকা লক্ষণ বা একেবারে উপসর্গহীন ছিল। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ হয় উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গযুক্ত। এই পরিস্থিতি সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। কিন্তু যেহেতু এটা মানুষ ইতিমধ্যেইও জেনে গেছে এবং সচেতন হচ্ছে। সেভাবে তারা তাদের জীবন যাপন এবং আচরণও নিয়ন্ত্রণ করছে। আক্রান্ত ব্যক্তি উপসর্গহীন হতে পারে জেনে মানুষ আরও বেশি সচেতন হচ্ছে। এটা সংক্রমণ ছড়াতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
৬. মৃত্যুর হার কম এবং সুস্থতার হার বেশি
বাংলাদেশে আশ্চর্যজনকভাবে গুরুতর ও জটিল রোগী এবং মৃত্যুর হার খুবই কম, যা মাত্র ১.১ -১.৪ শতাংশের মধ্যে। ইনফেকশন ফ্যাটালিটি রেট আরও কম। আমি মোটামুটি সাহস করে অনুমান করে বলতে পারি, এটা ০.৫ শতাংশের নীচে। সেই তুলনায় সুস্থতার হার অনেক বেশি, প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ বা তারও বেশি। এটা জনগণের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। বাংলাদেশে ওষুধসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী বিক্রি বা কেনায় তেমন কোনো বিধি নিষেধ নেই। ফলে অনেকেই বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন, বাসায় বসেই ওষুধ পথ্য খাচ্ছেন এবং সুস্থও হয়ে উঠছেন। এদিক দিয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীতে অনন্য বলা চলে। কারণ অনেক দেশেই ওষুধপত্র, চিকিৎসা সামগ্রীতে নিয়ন্ত্রণমূলক বিধিনিষেধের কারণে এসব মানুষ চিকিৎসকের লিখিত অনুমতি ছাড়া বাসায় নিতে পারে না।
৭. ভ্যাকসিন তৈরিতেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ
আমাদের অবশ্যই গর্বিত হওয়া উচিৎ এ কারণে যে, বিশ্বের অনেক দেশ যখন ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালাচ্ছে, তখন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজস্ব ভ্যাকসিন তৈরি করছে। এটা মনে রাখতে হবে যে, পশ্চিমা দেশগুলোতে তৈরি ভ্যাকসিন বাংলাদেশে বা অন্য অনেক উন্নয়নশীল দেশে কাজ করতে বা আসতে সময় লাগবে। অনেক পশ্চিমা দেশ ইতিমধ্যে তার নিজস্ব জনগণের জন্য সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের প্রি-অর্ডার করে ফেলেছে। এমনকি টাকাও পরিশোধ করেছে। বিশ্বব্যাপী ৭ বিলিয়ন ডোজ উৎপাদনের জন্য আরও সময় এবং অর্থের প্রয়োজন। এ কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নাও পেতে পারে। এক্ষেত্রে সুখবর হলো ভ্যাকসিন তৈরির পথে বাংলাদেশও সাফল্যের সাথে এগিয়ে চলেছে। আমি বিশ্বাস করি, সরকার এর উন্নয়ন ও উত্পাদনের জন্য সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয় সকল সহায়তাও দিচ্ছে। খুব তাড়াতাড়িই হয়তো আমরা আমাদের নিজ দেশে তৈরি ভ্যাকসিন ব্যবহার করতে পারবো।
৮. করোনা চিকিৎসার ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে এবং এগুলো আরও কার্যকর করার কাজ চলছে
বিশ্বব্যাপী করোনা চিকিৎসার বিভিন্ন ওষুধ ক্লিনিকাল ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কয়েকটি ওষুধ অসুস্থতা নিরসনে কিছুটা সফলও হয়েছে। আর বাংলাদেশে ওষুধ উন্নয়ন ও উত্পাদনের অনন্য সক্ষমতা রয়েছে। তাছাড়া কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত বেশিরভাগ ওষুধ অনেক কম এবং সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়। দেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ফলে এখন বেশিরভাগ বাংলাদেশী প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো খুব সহজেই কিনতে পারে। ফলে করোনা জটিল রোগীরা বিনা ওষুধে বা বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না।
এটা মনে রাখুন এবং গর্বিত হোন, কারণ এটা কেউ আর বলার সাহস পাবে না যে, বাংলাদেশ "তলাবিহীন ঝুড়ি"। সবাই এখন বাংলাদেশের সাফল্য দেখে শিখবে।
৯. বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ফলাফল বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশ হচ্ছে, খুব সহজেই এগুলো পাওয়া যাচ্ছে
এখন বাংলাদেশে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সুযোগ-সুবিধা এবং মানসম্পন্ন জিনিসপত্র রয়েছে। বিস্তৃত মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সুবিধার কারণে সাধারণ জনগণ খুব সহজেই বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও এর ফলাফল জানতে পারছে। বাড়িতে বসেই মানুষ এখন বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য এবং মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করছে। এটা তাদের করোনা সম্পর্কিত তথ্যসহ বিভিন্ন তথ্য পেতে সাহায্য করছে। কিছু মানুষ বাদে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণই অসত্য সংবাদের ব্যাপারে সচেতন এবং তারা এ ধরনের সংবাদ ছড়ায় না।
আমি শুনছি, অনেক পণ্ডিতরা বলছেন, সীমিত পরীক্ষার কারণে আমরা জানি না যে বাংলাদেশে করোনার প্রকৃত অবস্থাটা আসলে কী। এ বিষয়ে আমি আন্তরিকভাবেই বলতে চাই যে, প্রকৃত অবস্থার তথ্য দিয়ে আমরা কতটুকু, কী করতে পারতাম? সেই তথ্য কীভাবে আমাদের করোনার সংক্রমণ বন্ধ করবে? বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি যদি আমরা বিবেচনা করি, তাহলে করোনার সেই প্রকৃত অবস্থার তথ্য কীভাবে আমাদের দেশের মানুষের দুর্ভোগ এবং করোনায় মৃত্যু কমাবে?
উদাহরণস্বরূপ, তর্কের খাতিরে বলছি, বাংলাদেশ যদি আগামীকালের মধ্যে বড় অংকের টাকা খরচ করে ২ লাখ পরীক্ষা করে বলে যে, এর মধ্যে ৪০ হাজার আক্রান্ত। এদের মধ্যে বেশিরভাগই উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গবাহী। এখন এই ৪০ হাজার লোকের আইসোলেশন, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা কীভাবে করবো?
আমরা জানি যে, আমাদের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বিস্তৃত হচ্ছে। তাই বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা দরকার তা হলো মানুষের মধ্যে সচেতনতা, খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়া, জনসমাবেশ এড়িয়ে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, করোনা পজিটিভ এবং উপসর্গযুক্ত মানুষের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বা সেলফ কোয়ারেন্টাইন কঠোরভাবে প্রতিপালন করা, মাস্ক ব্যবহার করা এবং ঘন ঘন হাত ধোয়া।
আমাদের দেশে অর্থনৈতিক সমস্যা হ্রাস করা এবং জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। মানুষের দুর্ভোগ কমানো এবং অর্থনৈতিক কষ্ট দূর করতে সরকারী যে প্রচেষ্টা তা অব্যহত রাখতে জনগণের সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। চারপাশের সবকিছুর ব্যবস্থাপনা ছাড়া শুধুমাত্র পরীক্ষা করা কার্যকর কোনো কৌশল নয়। তবে একটা কঠোর নজরদারি ব্যবস্থা বাংলাদেশে খুব বেশি প্রয়োজন।
করোনা বাতাসের মাধ্যমেও ছড়ায়, এটা নিয়ে আজকাল ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে এবং মানুষ আতঙ্কিতও হয়ে পড়ছে। যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, সচেতন হই, তাহলে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়াক বা বাতাসের মাধ্যমে ছড়াক, স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং সচেতন হওয়া ছাড়া এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ বা আটকে রাখার কোনো উপায় আপাতত নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং প্রশংসিত। রোগব্যাধি, বর্তমানের পরিসংখ্যান, জনভোগান্তি এবং অর্থনৈতিক পরিণতি সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন তিনি। সবকিছু বিবেচনা করেই তিনি দূরদর্শী নির্দেশনা প্রদান করছেন। জীবন জীবিকার ভারসাম্য বজায় রাখতে তিনি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটিই নিয়েছেন। সম্ভাব্য সমস্ত রোগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বজায় রাখা এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখার ফলে করোনায় বাংলাদেশে মানুষের মৃত্যুহার যেমন কম, তেমনি ক্ষুধার জ্বালায় কোনো মৃত্যু ঘটছে না।
আতঙ্ক সৃষ্টি এবং অসত্য সংবাদ জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি করবে, যা করোনা যুদ্ধে আমাদের পরাজিত করবে। মনে রাখবেন, মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে অনেক প্রচেষ্টা এবং সময়ের দরকার হয়। তবে এটাকে নষ্ট করতে কেবল কয়েকটি ভুয়া খবর, কয়েকটি মিথ্যা এবং কিছু দুর্নীতিই যথেষ্ঠ। সরকার সব জায়গায়, সমস্ত কিছু করতে পারে না। বর্তমান পরিস্থিতিটা হচ্ছে একটা যুদ্ধ এবং সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই এই যুদ্ধে জয় পাওয়া সম্ভব।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১১:১১ পিএম, ০৮ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ০৫ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
আজকাল গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগনের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি নিয়ে প্রায়শঃ খবর প্রকাশিত হতে দেখছি। আমিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কোন কোন গণমাধ্যমের খবরে আমার নামটিও রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে এই লেখা। লেখাটির শিরোনাম কি দেব বুঝতে পারছি না। অগত্যা ‘একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত’ এই নাম দিয়েই লেখাটি শুরু করলাম।
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেয়ার পর পরই ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার দায়িত্ব পালনের প্রথম দিকে প্রায় এক/দেড় বছর ছিল করোনাকাল। সে সময় আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনই দু’বার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম। করোনাকালে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যয় এই বিশ্ববিদ্যলয়েও কম-বেশী সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও উপাচার্যের অফিস চলতো প্রায় স্বাভাবিক সময়ের মত। এসময়ে আমাদের প্রধান চেষ্টা ছিল অনলাইন এবং পরবর্তীতে অনলাইন-অফলাইন সমন্বিত মোডে কি করে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখা যায়। আমার একটি তৃপ্তির অনুভূতি যে, তখন থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষনা কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে অব্যহত রয়েছে; নানারকম প্রতিকুলতা সত্বেও ক্লাস-পরীক্ষা একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি কিম্বা তেমন কোন অস্থিরতাও তৈরী হয়নি।
গত এক/দেড় বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করেছে। এখানে বিশেষ করে কিছু সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা কম-বেশী সব আমলে উপাচার্যের প্রীতিভাজন হয়ে প্রশাসনকে কব্জায় নিয়ে নিজেদের মত করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে চান। এমনটি না হলে সাধারনতঃ কোন উপাচার্যই তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ করতে সক্ষম হন না। জন্মকাল থেকে ১৩ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত এক/দু’জন উপাচার্য কেবল মেয়াদ শেষ করতে পেরেছেন। যাহোক এই শিক্ষকগণের কেউ কেউ সুবিধা করতে না পেরে অন্তত এক-দু’জন শিক্ষক আমাকে এমনও বলেছেন যে, পূর্বে কম-বেশী সকল উপাচার্য তাদের নিয়ে চলেছেন, অথছ আমার সময়ে তিনি/তারা একটু ঝাড়ুদারের দায়িত্বও পাচ্ছেন না। এরপর থেকে দিনে দিনে শুরু হয়েছে অনলাইন ও বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার আর অপপ্রাচারের প্লাবন। একটি একটি করে তা’ পাঠকের জন্য তুলে ধরতে চাই।
প্রায় দেড় বছর পূর্বে হঠাৎ করে একদিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভ্যানে মাইক লাগিয়ে আমার কণ্ঠ-সাদৃশ্য বাক্যাংশের একটি অডিও বাজিয়ে কে বা কারা প্রচার করতে থাকে যে, উপাচার্য হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্য করছি। মূলত : ঘটনাটি ছিল এমন যে, ওই সময়ে শিক্ষক শুন্য একটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল। সেখানে মাত্র তিনটি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল এবং নিয়োগ পরীক্ষায় দু’জন প্রার্থী উপস্থিত হয়েছিলেন। আমরা প্রার্থী স্বল্পতার জন্য ওই পরীক্ষা বাতিল করে পুনঃবিজ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নেই। এর কয়েকদিন পর আমি আমার এক ছাত্রকে (যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও বটে) অনুরোধ করি যে, তোমরা ঢাকায় থাকো, আমাদের শিক্ষক দরকার। তুমি আমাদের একটু সাহায্য করো- তোমার বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতজনদের বলো তারা যেন এখানে দরখস্তকরে। উত্তরে সে জানায় যে, স্যার ওখানে কেউ যেতে চায় না। তাছাড়া একটা দরখস্ত করতে গেলে ৫/৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়-তাই কেউ দরখস্ত করতেও উৎসাহি হয় না। আমি তখন জবাবে বলি-ওরা তোমাদেরই বন্ধুবান্ধব, প্রয়োজনে টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করে তাদের দরখস্তকরতে একটু উদ্বুদ্ধ করো। এই কথোপকথনের ‘টাকা-পয়সা দিয়ে’ এই বাক্যাংশটুকু নিয়ে কিভাবে তারা একটি অডিও বানিয়ে প্রচার আরম্ভ করে যে, উপাচার্য নিয়োগ বানিজ্য করছেন। শুনেছি এভাবে তারা একাধিক অডিও [যা’ শুধুমাত্র একজন অর্থাৎ আমার কন্ঠ সাদৃশ্য এবং তা’ মিথ্যা, বানোয়াট, খÐিত, এক পক্ষীয় (অন্য প্রান্তে কে কি বলছেন তার কোন হদিস নেই) এবং হয়তোবা সুপার এডিটেড] বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে উপাচার্যকে কিভাবে হেনস্থা করে তাদের অপ-ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করানো যায় সে চেষ্টাই তারা অনবরত করে যাচ্ছে।
আমি আমার কণ্ঠ সদৃশ্য আরও একটি অডিও’র বক্তব্য শুনেছি। এটিও ছিল এক পক্ষীয় এবং খÐিত। আমার আলাপন সেখানে পূর্ণাঙ্গ নেই। অপর প্রান্তে কে কথা বলছেন তারও কোন অস্তিত্ব নেই। অডিও’র বিষয়টি হলো-আমি কোন একজনকে বলছি যে, ‘আপনার নির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন’ ....................আমি দেখবো। সাধারণত: কোন নিয়োগের আগে অনেকেই অনুরোধ করেন যাতে তার প্রার্থীকে যেন একটা চাকুরী দেয়া হয়। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধিগণ অথবা কোন রাজনীতিক/সামাজিক ব্যক্তিত্ব ১টি পদের জন্য কখনও কখনও ৩/৪ জন প্রার্থীর রোল নম্বর পাঠিয়েও এ ধরনের অনুরোধ করেন। ধরা যাক, এদের মধ্যে একজনেরই চাকুরিটি হয়েছে। অধিকাংশ সময়ে সে ফিরে গিয়ে তার জন্য অনুরোধকারীকে সুখবরটি জানায় কি-না তা’ আমার জানা নেই। কিšদ প্রায়শ এমনটি ঘটে যে, বাকী যাদের চাকারী হয় না তারা গিয়ে তাদের স্ব-স্ব নেতা বা অনুরোধককারীকে এই বলে বিষিয়ে তোলে যে, উপাচার্য আপনার অনুরোধের কোন দামই দিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে মন খারাপ করে জনপ্রতিনিধিগণ বা রাজনৈতিক/সামাজিক নেতৃবৃন্দ টেলিফোন করে আমাকে হয়তো বলে থাকেন-আপনি আমার একটা অনুরোধ রাখলেন না। এমতপরিস্থিতিতে আমাকে জবাব দিতে হয় যে, এরপর তাহলে আপনার সুনির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার সাথে দেখা করতে বলবেন ............. আমি দেখবো। এই ‘দেখা করতে বলা’ কি নিয়োগ বানিজ্যের সাথে যায়? এভাবে একটি গোষ্ঠী কেবলই মিথ্যাচার করে উপাচার্য হিসেবে আমাকে নাজেহাল করার অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে আমি নতি স্বীকার করে তাদের হাতের পুতুল হয়ে কাজ করি। মিথ্যার কাছে নতি স্বীকার করে চেঁচে থাকার ইচ্ছে বা অভিপ্রায় আমার নেই।
আমার বিরুদ্ধে না-কি অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজে আমি অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে ৬ থেকে ৮ কোটি টাকার বিল বানিয়ে অর্থ-আত্মসাৎ করেছি বা করার চেষ্টা করেছি। রুচিহীন এবং উদ্ভট এসব অভিযোগের জবাব দিতেও আমি ইতস্তবোধ করছি। উল্লেখ্য নির্মাণ কাজের বাস্তব অগ্রগতি পরিমাপ করে ৩/৪ মাস অন্তর পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর বিল ঠিকাদারের প্রদান করা হয়। এই কাজে বিভিন্ন পর্যায়ে সাইট ইঞ্ছিনিয়ার-সহকারী ইঞ্জিনিয়ার-নির্বাহী বা তত্ত¡াবধায়ক ইঞ্জিনিয়ার-প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক প্রমুখ কর্তৃক পরীক্ষিত ও নীরিক্ষিত কাজের পরিমাপ এবং প্রস্তাবিত বিল ঠিক থাকলে তা’ চলে যায় ট্রেজারার মহোদয়ের কাছে। তখন তাঁর নেতৃত্বে গঠিত ভিজিলেন্স টিম সরেজমিনে সাইট পরিদর্শন করে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে তা’ উপাচার্যের নিকট অনুমোদনের জন্য উপাস্থাপন করা হয়। বর্নিত ক্ষেত্রে আমার নিকট ফেবরিকেটেড ওই বিল অনুমোদনের জন্য কোন ফাইলই উপস্থাপিত হয়নি। বরং ৪/৫ মাস পূর্বে আমার দপ্তরে একটি বেনামী চিঠি আসে যে, নির্মান কাজ বেশী দেখিয়ে আট কোটি টাকার একটি বিল প্র¯দত করে তা’ প্রক্রিয়া করা হয়েছে। এই চিঠির সাথে ফটোকপিকৃত কিছু ডকুমেন্ট ছিল যা’ দেখে অভিযোগের সত্যতা থাকতে পরে বলে আমার কাছে মনে হয়েছিল। আমি তাৎক্ষনিকভাবে এই চিঠির ভিত্তিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে আহবায়ক এবং খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। ইতোমধ্যে কমিটি তাদের রিপোর্ট প্রদান করেছে। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় তা’ উপস্থাপিত হবে এবং সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে উপচার্য হিসেবে আমি কি দূর্নীতি করেছি আশাকরি পাঠকবর্গ তা’ উপলব্ধি করতে পারছেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে দু’একটি অনলাইন পত্রিকায় নিউজ করানো হচ্ছে যে, প্রকল্প সাইটে মাটির নিচে পাইলিং এর জন্য যে রড ঢোকানো হয়েছে সেখানেও না-কি উপাচার্য হিসেবে আমি দূর্নীতি বা অনিয়ম করেছি। যেকোন নির্মাণে পাইলিংয়ের জন্য মাটির নিচে রড কতটুকু ঢুকাতে হবে তা’ নির্ভর করে সয়েল টেস্ট রিপোর্টের উপর। আমি উপাচার্য হিসেবে যোগদানের বহু পূর্বেপ্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় সয়েল টেস্ট করে প্রকল্প দলিল প্রনীত ও অনুমোদিত হয়েছিল।
আমার সময়ে এসে প্রকল্পের কাজ শুরুর পর যখন পাইলিং আরম্ভ হয় তখন সংবাদকর্মীদের মাধ্যামে আমি জানতে পারি যে, প্রকল্প দলিল অনুযায়ী মাটির নিচে যে পর্যন্ত রড ঢোকানোর কথা (ধরা যাক ৫০’) তার চেয়ে কম গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আমি সাথে সাথে প্রধান প্রকৌশলীকে বিষয়টি দেখতে বলি এবং ভিজিলেন্স টীম পাঠিয়ে তাদের ব্যবস্থা নিতে বলি। ভিজিলেন্স টীমের সদস্য এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসের কর্মকর্তাগণ আমাকে এসে রিপোর্ট করেন যে, সয়েল টেস্টিং এর ভিত্তিতে যেভাবে পাইলিং এর রড প্রকল্প অনুযায়ী মাটির নিচে ঢোকানোর কথা বাস্তবে তা’ ঢোকানো যাচ্ছে না। রড ঢুকছে তার কম (কম-বেশী ৪০’)। এ পর্যায়ে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে পুনরায় সয়েল টেস্ট ও তা’ ভেটিং করিয়ে টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী সেই গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর কাজ করা হয়েছে। এই বিষয়টি প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির (যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, আই এম ই ডি, ইউ জি সি-র প্রতিনিধিগণ থাকেন) সভায় অবহিত করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য কিভাবে রড কম গভীরতায় ঢুকিয়ে দূর্নীতি বা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন সে বিবেচনার ভার পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম।
আমি প্রায়শঃ শুনি যে, আমার বিরুদ্ধে না-কি আরও একটি অভিযোগ যে, আমি অবৈধভাবে কর্মকর্তাদের উচ্চতর বেতন স্কেল প্রদান করেছি। বিষয়টি আমি নিচেয় ব্যাখ্যা করছি। তার আগে বলে রাখা দরকার যে, এটি ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার জন্য একটি আর্থিক সুবিধা প্রদানের বিষয়। এটি প্রদানের ক্ষেত্রে আর্থিক নিয়মের কোন ব্যত্বয় ঘটলে ইউ জি সি অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বছরে একাধিকবার অডিট করেন তারা আপত্তি উত্থাপন করতে পারেন। কিন্তু উপাচার্যের দূর্নীতির উপাদান এখানে কি থাকতে পারে তা’ আমার বোধগম্য নয়।
ঘটনাটি ছিল এমন যে, ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে একধাপ উচ্চতর স্কেলে বেতন উন্নীত করে তা’ প্রদান করা হতো। ২০১৫ সালের বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পর এই সুযোগ রহিত করা হয়। আমি ২০২০ সালের শেষ দিকে করোনাকালে যখন এখানে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করি তার কয়েকদিনের মধ্যে ওই পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি অংশ এসে আমার সাথে দেখা করে দাবী জানায় যে, এই স্কেল উন্নীতকরণ ঘটবে উপ-রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার ক্ষেত্রে। কিšদ পূর্বের প্রশাসন ২০১৯ সালে বেছে বেছে তাদের অনুগত কর্মকর্তাদের এই সুযোগ প্রদান করেছেÑ কাজেই অবশিষ্টদেরও এটি দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ২০২২ সালের দিকে তারা একটি বড় আন্দোলন গড়ে তোলে এবং প্রায় ২ মাস ধরে কর্মবিরতি পালন করে। এক পর্যায়ে গিয়ে এবিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দেখতে পায় এই সুবিধাটি ২০১৫ সালের পে-স্কেলের সময় রহিত করা হলেও ঢাকাসহ রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীর নগর, মওলানা ভাষানী বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি তখনও চালু রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুবিধা পূর্বে অলরেডি কর্মকর্তাদের একটি অংশকে দেয়া হয়েছে এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনও এই সুবিধা প্রদান বহাল রয়েছে। এই বিবেচনায় কর্মকর্তাদের আর একটি অংশ যাতে বঞ্চিত না হয় (অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনকার পরিস্থিতি) সেসব বিবেচনায় নিয়ে কমিটি বঞ্চিতদের জন্য স্কেল উন্নীত করণের সুপারিশ করে। এই সুপারিশ ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটে এই শর্তে অনুমোদন দেয়া হয় যে, এব্যাপারে ভবিষ্যতে কখনও যদি অডিট আপত্তি উত্থাপি হয় তাহলে এই উন্নীতকরণ বাতিল হবে এবং কর্মকর্তাদের দেয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে। বিষয়টি সে সময় এভাবে ফয়সালা করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য হিসেবে আমার দূর্নীতির জায়গাটি কোথায় তা’ আমার বোধগম্য নয়। আমি মনে করি এটি বড়জোর একটি অডিট আপত্তি/অনাপত্তির বিষয়। ব্যক্তি বা সামস্টিক দূর্নীতির সংগার সাথে এটি যায়-কি?
উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ সম্পর্কে দু’একটি অনলাইন পত্রিকা এবং নষ্ট-ভ্রষ্ট ওই গোষ্ঠীর প্রচার-প্রপাগাÐা থেকে জেনেছি যে, আমি আমার ঢাকার বাসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় সিকিউরিটি নিয়োগ দিয়েছি। এটি সর্বৈব মিথ্যা রটনা। ঢাকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। সেখানে মাত্র ২ জন কর্মী (একজন কুক, একজন সাধারণ) কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫/২০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা (কখনও কখনও তাদের পরিবার-বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য) ঢাকায় গিয়ে রেস্ট হাউজে অবস্থান করেন। উল্লেখ্য এসময়ে বেশ কয়েকমাস ধরে রেস্ট হাউজ ভবনের সংস্কার কাজ চলছিল। রেস্ট হাউজে ইবি পরিবারের সদস্যগণ দিনে-রাতে (কোন ধরাবাধা সময় নেই) যাতায়াত করেন। তাদের জন্য বার বার গেট খোলা এবং লাগানোর মত কোন জনবলই সেখানে ছিল না। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী স্থায়ী জনবল নিয়োগেরও তেমন কোন সুযোগ ছিল না। সেসময় এস্টেট অফিস থেকে আমাকে জানানো হয় যে, ঢাকা রেস্ট হাউজে কিছু সিকিউরিটি ডেপুট (নিয়োগ নয়) করা দরকার। ইবি ক্যাম্পাসের কয়েকজন আনসার দিয়ে সেটা করা যায় কি-না সে ব্যাপারে এস্টেট অফিস আমাকে অবহিত করে যে, আনসার ডেপুট করা অনেক খরচের ব্যাপার এবং বারো জনের নিচেয় আনসার কর্তৃপক্ষ জনবল দিবে না। বিকল্প হিসেবে স্বল্প সংখ্যক (৫/৬ জন) জনবল বরং সিকিউরিটি সংস্থা থেকে ডেপুট করা যায়। সে অনুযায়ী যথাযথ বিধি বিধান প্রতিপালন করে ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিয়ে ঢাকা রেস্ট হাউজের জন্য ছয়জন সিকিউরিটির সেবা হায়ার করা হয়েছে। উপাচার্য হিসেবে প্রায়শ আমাকে শিক্ষা মন্ত্রনালয়, ইউ জি সি, ধর্ম মন্ত্রনালয় (ইসলামী ফাউন্ডেশন), এ ইউ বি-র সভা এবং গুচ্ছের সভাসমূহে যোগাযোগসহ প্রভৃতি কারণে ঢাকায় যেতে হয়। সেকারণে শিফট অনুযায়ী সিকিউরিটি সদস্য যারা রেস্ট হাউজে ডিউটি করে তাদের একজন রেস্ট হাউজে এবং একজনকে উপাচার্যের বাসায় ডিউটি বন্টন করা হয়েছে মাত্র। উপাচার্যের বাসার জন্য কোন সিকিউরিটি সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। উপাচার্যের বাসার জন্য সিকিউরিটি নিয়োগ দেয়া হয়েছে এটাও একটি মিথ্যা প্রচারণা।
প্রকৃতপক্ষ আমি জানিনা উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আর কি কি অভিযোগ রয়েছে? অভিযোগগুলো কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে? অভিযোগগুলো কারা করেছে তা’ও আমার জানা নেই। যাহোক একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রচার প্রপাগান্ডার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ইউ জি সি-কে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করিয়েছে। কমিটির সদস্যবৃন্দ আমাকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে লিখিত মতামত/বক্তব্য দিতে বলেছিলেন। আমি তাঁদের নিকট লিখিত ভাবে (ডকুমেন্টসহ) আমার বক্তব্য প্রেরণ করেছি।
আশাকরি পাঠকবৃন্দ বিষয়সমূহ অবহিত হয়ে একজন উপাচার্যকে কিভাবে কেবল রসালো, মিথ্যা, বানোয়াট এবং বস্তনিষ্ঠহীন অভিযোগ তুলে তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তা’ উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। উপাচার্য এবং ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমি শুধু এতটুকুই বলবোÑআমি কোন দূর্নীতি করে উপাচার্যের এই চেয়ারকে কলুসিত করিনি; আমি স্বার্থান্বেষী নষ্ট-ভ্রষ্ট কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে মাথা নত করবো না।
অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম
উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক
ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার
লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন।
দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য
মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন
আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি
আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন
যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা
বিরোধী। আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি
করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার
অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে
বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ
লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি
হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের
মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে
আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।
পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের
আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে
বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট
না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা
অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না,
সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।
পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে
ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায়
ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।
লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
আজকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেভাবে হয় তার সামান্যতম কোন ব্যতিক্রম হয়নি। ভোটাররা উৎসাহ নিয়ে ভোট দিয়েছে। কোথাও কোথাও অনেক ভোটার আছেন যারা মনে করেন যে, অমুকে তো অনেকে জনপ্রিয় প্রার্থী, তিনিই বিজয়ী হবেন। আমার ভোট না দিলেও হবে। এ রকম মনোভাব নিয়ে অনেকে ভোট দেয়নি। আর কিছু জায়গা আছে ছোট খাটো মারামারি হয়েছে। যা এদেশের স্থানীয় নির্বাচনের চরিত্র।
মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের বাড়ি বিনা টাকায় বিক্রি করার জন্য কর্তৃপক্ষ আগ্রহী প্রার্থী পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মনে হলো যে, আমাদের একজন ভালো খরিদ্দার আছে এবং তার কাছে এই গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি করলে গোয়েবেলসের আদর্শটাও বেঁচে থাকবে এবং কর্তৃপক্ষেরও উপকার হবে। আর এ খরিদ্দার হচ্ছে বিএনপি এবং এবং লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বাড়িটি কিনতে পারেন। তিনি হচ্ছেন গোয়েবেলসের এই বাড়ির যোগ্য ব্যক্তি। কারণ তিনি গোয়েবেলসের ভাবশিষ্য।
আজকাল গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগনের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি নিয়ে প্রায়শঃ খবর প্রকাশিত হতে দেখছি। আমিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কোন কোন গণমাধ্যমের খবরে আমার নামটিও রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে এই লেখা। লেখাটির শিরোনাম কি দেব বুঝতে পারছি না। অগত্যা ‘একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত’ এই নাম দিয়েই লেখাটি শুরু করলাম।
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।