নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০১ পিএম, ০১ অক্টোবর, ২০২০
বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। কিন্তু সেই কারণে তিনি আলোচিত নন। তিনি আলোচনায় আসেন স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিলো এরশাদকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ একজন ব্যক্তির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
ওই নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তির অধীনে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তীব্র গণ আন্দোলনের মুখে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগের পর কে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হবে, তা নিয়ে তিন জোট আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রিত আট দলীয় জোট, বিএনপি নিয়ন্ত্রিত সাত দলীয় জোট এবং বামদের নিয়ে পাঁচ দলীয় জোট এক বৈঠকে বসে। তারা অল্প সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করা হবে।
কিন্তু এখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সংবিধান। এর পর উদ্যোগ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে টেলিফোন করেন। জাতির এই ক্রান্তিকালে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। শেখ হাসিনা আশ্বস্ত করেন নির্বাচনের পর সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পদকে বৈধতা দেয়া হবে। বিচারপতি শাহাবুদ্দিন এ সময় শর্ত জুড়ে দেন। যদি তাকে আবার প্রধান বিচারপতি পদে ফিরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন। শেখ হাসিনা সেই শর্ত মেনে নেন।
এরপর বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ‘৯১ সালের ফ্রেরুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অভাবনীয়ভাবে বিএনপি জামাত জোট বিজয়ী হয়। এরপর সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে শাহাবুদ্দিনকে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান থেকে প্রধান বিচারপতির পদে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক ইতিহাসে এটি আরেকটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ অবসরে যাওয়ার পর ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পরই নতুন রাষ্ট্রপতি কে হবে তা নিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু হয়। সেই সময় বিএনপি নিয়ুক্ত রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের বাসায় যান এবং তাকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করার আহবান জানান।
আওয়ামী লীগ সভাপতি চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি পদটিকে সমুন্নত রাখতে। দল নিরপেক্ষ একজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি করতে। কিন্তু বিচারপতি শাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরই নানা রকম বির্তক শুরু করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ান। বিভিন্ন মন্তব্য করা, বিভিন্ন বিল নিয়ে আপত্তি করার মাধ্যমে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারকে এক বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেন।
যেহেতু বিচারপতি শাহাবুদ্দিন প্রধান বিচারপতি ছিলেন, সেজন্য আওয়ামী লীগ আশা করেছিলো যে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারকে ত্বরানিত করা, হাইকোর্ট এবং আপীল বিভাগে যেন দ্রুত বিচারটি নিম্পত্তি হয়; সেজন্য বিচারপতি শাহাবুদ্দিন উদ্যোগ নেবেন।
কিন্তু সেই উদ্যোগ তিনি নেননি বরং তার কিছু কিছু বক্তব্য আওয়ামীকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। ২০০১ সালের জুলাই মাসে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন লতিফুর রহমান হন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান। রাষ্ট্রপতি থাকেন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন অনুয়ায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা থাকে অনেক বেশি। আর সে সময় রাষ্ট্রপতি অনেক কিছু করতে পারেন।
কিন্তু বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ ২০০১ সালের নির্বাচনে যে ভূমিকা পালন করেছেন, সেটি সম্পূর্ণভাবেই বিএনপি জামাতের পক্ষে। এমনকি লতিফুর রহমানকে তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রধান করা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ইত্যাদি সবই প্রশ্নবিদ্ধ। এরপর ২০০১ এর অক্টোবরের নির্বাচনে বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের পাতানো ফাঁদেই পা দেয় আওয়ামী লীগ। একটি পরিকল্পিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভোট বেশি পেয়েও পরাজিত হয় শোচনীয়ভাবে।
অনেকেই মনে করেন, ওই নির্বাচনের যে নাটক সে নাটকের অন্যতম কুশীলব ছিলেন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ। বিদেশি বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং সরকারের বিভিন্ন মহল একাট্টা হয়ে আওয়ামী লীগকে হারানোর এক নীলনকশা তৈরি করেছিল। যে নীল নকশার অন্যতম রুপকার ছিলেন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ, বলে মনে করেন অনেকে। ওই নির্বাচনের পর বিচারপতি শাহাবুদ্দিন নেপথ্যে চলে যান এবং কোন রকম কর্মকান্ডেই তাকে আর দেখা যায় না। এখনও তিনি নিভূতে, নীরবে অবসর জীবন যাপন করছেন।
কিন্তু ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তার বিতর্কিত ভূমিকার জন্য এখনও তিনি সমালোচিত। তার ভূমিকা কেন ওই রকম ছিলো- সেটিও একটি গবেষণার বিষয়।
মন্তব্য করুন
কাউন্সিল বিএনপি তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়া
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
চার ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত (তৃতীয় ধাপ) ২০৪ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এরমধ্যে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের ৫৫ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। আর প্রথম ধাপে ভোটের জন্য ৮০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৬৯ জনকে বহিষ্কার করে দলটি।
বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলাসহ কোনো নির্বাচনে অংশ না নিচ্ছে না বিএনপি। গত ১৬ এপ্রিল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই। তাই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না দল।
দেশে চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী, গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়। এই ধাপের নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত ৭ জন চেয়ারম্যান পদে, ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করে বলেও জানা যায়।
দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে। তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।
মন্তব্য করুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরে যেতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এই বিষয়টি নিয়ে তাকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে তারেক জিয়া এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেননি বলে জানা গিয়েছে। বরং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরকে তারেক জিয়া জানিয়েছেন, কাউন্সিলের আগে বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়। তবে বিএনপির কাউন্সিল কবে, কীভাবে হবে- এ সম্পর্কে কোন বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। তারা সাম্প্রতিক সময়ে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। তবে এসব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলা হলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকার বিরোধী কোন জোট করতে রাজি নয়। ২০ দলীয় জোট আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাওয়ার পর বিএনপি এখন পর্যন্ত জোটগত ভাবে কোন আন্দোলন করেনি। তবে বিভিন্ন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রেখেছে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। এখন আবার নতুন করে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে না।