নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৫৭ এএম, ২০ নভেম্বর, ২০২০
আফগানিস্তান এর রাজধানী কাবুল। আর সেখান থেকে আসা কাবুলিওয়ালাকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর লেখা গল্প থেকে বাংলাদেশের মানুষ কম বেশি জানে। কারণ মিনিকে নিয়ে লেখা এই গল্পটি আমাদের পাঠ্যসূচিতে ছিল এবং এখনো সেটা ৭ম শ্রেণীতে আছে। কাবুলিওয়ালার আফগানিস্তান ভুল রাজনীতির কারণে সুন্দর আধুনিক ইরানের মতো এক সময় হয়ে গেলো কট্টরপন্থী তালেবানদের রাজ্য। ১৯৭৫ সালের শেষ থেকে বাংলাদেশও জয় বাংলা ছেড়ে জিন্দাবাদের পাল তুললো। তালেবানরা অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সামরিক শিক্ষা পেয়েছিলো গণতন্ত্রের সূতিকাগার বলে পরিচিত মানব ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ধারক যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সমালোচকদের মতে তালেবানদের ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষ রাশিয়াকে দাবিয়ে আর ভারতকে চাপিয়ে রাখা। তালেবানদের পাশে সে সময় ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্র পাকিস্তানও ছিল । আজ যে চীনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈরিতা সেই চীনও যুক্তরাষ্ট্রের সরকারগুলোর বন্ধু ছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে ধর্মীয় স্বাধীনতাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এর একটি সুফল আছে। আর সেটা হলো গণতন্ত্র ও ধর্ম একসঙ্গে চলতে পারে। ধর্ম নিরপেক্ষতা রাষ্ট্রকে ধর্মীয় পৃষ্টপোষকতা থেকে দূরে রাখে। সেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা অন্য ধর্মকে সন্মান করবার পাশাপাশি অধিকাংশ মানুষের গণতান্ত্রিক দাবিকে পূরণ করা সম্ভব হয়। যেমন বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রীয় ভাবে ইসলাম ধর্ম শিক্ষার ও চর্চার জন্য অর্থ ব্যয় করতে পারে। এবং ইসলাম ধর্মের পৃষ্টপোষকতাও করতে পারে। আর যদি এর বিপরীত কিছু করে তবে গণতন্ত্র নিচের চাপা পড়ে। চাপা পড়া গণতন্ত্র হয় হলুদ ঘাসের মত। তাতে গরুর উদরপূর্তি হয় বটে তবে মনোরম সবুজের সৌন্দর্য থাকে না। সেই সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে সংলাপ জরুরি।
প্রথম দিকে তালেবানরা পাকিস্তানে সেনানিবাসে ছিল। ১৯৮৪ সালে লাহোর শহর থেকে সোয়াত বেড়াতে যাবার সময় তাদেরকে আমি প্রথম দেখতে পেয়েছিলাম। দামি ও ভারী অস্ত্রে ১৯৭১ সালেও দেখতে পেয়েছি পাকহানাদারদের এবং ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত জিয়ার আমলে ,১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত লেজেহোমো এরশাদের সামরিক শাসন আমলে। হটাৎ করে ২০০১ সালের শেষ দিকে তালেবানরা যুক্তরাষ্ট্র ও তার বন্ধুদের নজর কাড়লো বিশেষ ভাবে- সেটা রাশিয়ার কূটনীতিতে । আবার অনেকেই মনে করে বুশ একটি ডিফেক্টিভ নির্বাচনে জিতে স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। সুতরাং , যুদ্ধের দামামায় সকলের দৃষ্টি আটকিয়ে দেয়া একটি পথ তিনি খুঁজছিলেন। আর এভাবে আফগানিস্তান , কুয়েত, ইরাক হয়ে উঠলো নতুন যুদ্ধ ক্ষেত্র। ৯/১১-এ ধসে পড়লো টুইন টাওয়ার। নির্বাচনের আগেই অবশ্য বুশ মুসলিমদেরকে দেখবেন এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যেমনটি বিগত ৪ বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প করে যাচ্ছেন। মুসলিমদেরকে প্রতিনিধিত্ব করে যে দল ও দেশ গুলো তারা এবার ট্রাম্প ও বাইডেন উভয়ের কাছে গেছেন। তারা একটু যত্ন সেখানে পেয়েছেন হয়তো। সুতরাং, তারা সেটা জানান দেবেন নানা ভাবে। ভাস্কৰ্য নিয়ে ফতোয়া কিংবা ধর্ষণ নিয়ে আন্দোলন তারা করছেন কেন সেটা সহজে অনুমেয়। ২০০১ সালে তারা ঐরকম লবি করতে পেরেছিলেন বলে অনেক ভাল কাজ করেও আওয়ামী লীগ কিন্তু জিততে পারেনি। মুক্তি যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে দেশ স্বাধীন করা দলটির কাছ থেকে ১৯৭৫ সালে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে অবৈধভাবে ২১ বছর তারা শাসন করেছে। সেই খুনি ডালিম -রশিদ -মোশতাক -জিয়ার দোসররা বিদেশে বসে প্রকাশ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সামরিক বাহিনীকে উস্কানি দিচ্ছে।
অভূতপূর্ব উন্নয়ন করে আওয়ামী লীগ নেতারা এখন হয়তো অনেক কনফিডেন্ট। নেতারা হয়তো ভাবছেন ২০০১ সালের মতো কেউ ক্ষমতা কেড়ে নিতে পারবে না। এরকম নিচ্চিত ডোনাল ট্রাম্পও ছিলেন কিন্তু । বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে। সেই বাস্তবতাকে মোকাবেলার জন্য আরও সতর্ক পদচারণার দরকার আছে। ফস করে কিছু একটা বলে বা করে ফেললে বিপদ আসতে পারে। যেভাবে মিথ্যে প্রচারণা চলছে এবং যেভাবে নিজের দলের লোক চুপচাপ হয়ে যাচ্ছে সেটা ভেবে দেখতে হবে। চারপাশে বঞ্চনার হা হুতাশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই যেমনটি মাননীয় সাংসদ কাজী ফিরোজ রশিদ করেছেন। এরকম আরও অভিমত সহযোগী দলগুলোর নেতাদের মুখে শোনা যায়।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বেলুচি সেনারা সকালে ফজরের আজান শুনে হতবাক হয়েছিল নাকি। বাংলাদেশে হত্যাযজ্ঞ শুরুর প্রাক্কালে তাদের বলা হয়েছিলো পূর্বপাকিস্তান নাকি হিন্দুদের দখলে চলে গেছে। তেমনি যুক্তরাষ্ট্র ও তার বন্ধুদের সৈনিকরা আফগানিস্তানে এসে দেখলো ভিন্ন চিত্র। ইরাকে কোথাও তারা নিউ নিউক্লেয়ার বোমার অস্তিত্ব পেলোনা। দিনে দিনে তারা যুক্ত হয়ে গেলো অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। গত কয়েকদিন আগে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন জানালেন অনেক অস্ট্রেলিয়ার সৈনিক যুদ্ধ অপরাধ করছেন। আজকের পত্রিকায় এসেছে অস্ট্রেলিয়ার সৈনিকরা অন্ততঃ ৩৯ জনকে হত্যা করেছে। আর গতকাল জানতে পারলাম ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে সৈনিক সরিয়ে নিচ্ছে এবং সেটা তার প্রস্থানের আগে শুন্যের ঘরে নিয়ে আসবেন। আমরা আরও জানছি আফগানিস্তানে নাকি ৩ ট্রিলিয়ন খনিজ সম্পদের ঠিকানা পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সমালোচকরা বলছেন সেটাই ছিল আফগানিস্তানে সৈন্য প্রেরণের উদ্দেশ্য। সেগুলোর ভাগাভাগি ও আহরণ যাতে বাঁধাহীন হয় সেজন্য তালেবাদেরকে আবার আপন করে নেয়া হচ্ছে কি ? এমন করে আপন করে আরও অনেকের ক্ষমতায়নের সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে কি? প্রশ্ন হলো যে মায়ের সন্তান আফগানিস্তানে গিয়ে যুদ্ধ অপরাধী হলো তার দায় কার ? তারা যে সব মায়ের বুক খালি করে কান্নার রোল উঠিয়েছিলো তাদের জন্য কে পাশে দাঁড়াবে?
খবর হলো তালেবানরা আবার ফিরে আসছে আফগানিস্তানের রাজনীতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির পথ ধরে। এই তালেবানদের বন্ধু শিবির বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্র বানাবার স্লোগান দিয়েছিলো। এটা একটি ভয়ংকর ঘোষণা ছিল বলে বাংলাদেশে ও বিশ্ব রাজনীতির মাঠে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সেই পরিবর্তন আবার ভিন্ন আরেকটি পথ খুলেছে- যেকারণে মোদিরা গদি পেয়েছেন, এবং ভারতের রাজনীতিতেও এখন ধর্মের গন্ধ। মোদী -ট্রাম্পের কূটনীতির কারণে কি সেই গন্ধ আবার বাংলাদেশেও পাওয়া যাচ্ছে কি ? ভারতে হয়তো পরিবর্তন আসতে পারে কারণ মোদী সরকারকে মনে প্রাণে অমর্ত্য সেনের মত ভারতীয়রা মেনে নেয় নি। আর কমলা -বাইডেন ভারতীয় শিবিরে কিছুনা কিছু প্রমিজ করেছেন যা পরিবর্তনের উদ্দীপক হতে পারে।
বাংলাদেশে দিন দিন ধর্মভিত্তিক চেতনা বিভিন্ন বিষয়কে নিয়ন্ত্রণ করছে। এবং তার সর্বশেষ প্রকাশ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিষয়ে ফতোয়া। যে আফগানিস্তানের কিশোরীরা স্কার্ট পরে ১৯৭৪ সালে স্কুল যেত তা যেমন অনেক বদলে গেছে। ২০০১ সালে যে তালেবানরা বৌদ্ধ মূর্তি ভেঙে বিশ্ব নেতাদের নজর করেছিল- সেখানে তালেবানরা আবার রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পাচ্ছে। তেমনি কি বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ? ধর্ষণের কারণ পোশাক -একটি স্বতঃসিদ্ধে পরিণত হতে চলেছে তাদের ফতোয়ায় । অনুভব করেছেন কি?
আফগানিস্তানে বহিরাগত সৈনিক আসায় বাংলার মিনিরা উদ্বেগের সঙ্গে হয়তো কাবুলিওয়ালার মুখখানা কল্পনা করতো। এখন সেই বাংলার মিনিরা এক মহাবিপদ দেখতে পাচ্ছে আগামী বাংলাদেশে। তাদেরকে হয়তো বোরখা পরে চলতে হবে আশংকা। আরো অনেক শংকা আছে। আর সেজন্য আমাদের রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিদের দায় কোন অংশে কম নয়। একসময় আমরা ধর্মনিরপেক্ষতা , সমাজতন্ত্র , গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ নিয়ে দেশ গড়বার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু এই মূল্যবোধগুলো কেন জানি অবহেলিত এবং এগুলো যেন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা যেন পরস্পর বিরোধী হয়ে উঠছে দিন দিন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত কয়েকদিন আগে দুটি উপনির্বাচন হয়ে গেলো দেশে । সংবাদপত্রের অভিমত সেখানে গণতন্ত্র নির্মমভাবে পরাজিত।
তবে গণতন্ত্র খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই হোঁচট খাচ্ছে। আল গোর, হিলারির কাছ থেকে বিজয় কেঁড়ে নিয়ে তারা এতো উন্মাদ হয়েছে যে কিছুতেই স্বচ্ছভাবে নির্বাচিত ৪৬ তম প্রেসিডেন্টকে একটি পক্ষ মেনে নিতে চাইছে না। খুবই শঙ্কার বিষয় বিশ্ববাসীর জন্য। সারা বিশ্ব বিশ্বাস করে যা তাকে অস্বীকার করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা ভীষণ বিব্রত তাদের প্রেসিডেন্টের কথায়। তিনি আগেই আমাদেরকে ফিনাইল কিংবা বিলিচিং দিয়ে করোনা মুক্ত করতে পরামর্শ দিয়ে বিশ্ববাসীর হাসির খোরাক হয়েছেন।এখন একটি মিথ্যেকে সত্য বানাবার চেষ্টা করছেন। আমরা যে আগামী প্রজন্মকে স্বপ্ন ও আদর্শ দিতে ব্যর্থ হচ্ছি সেটা স্বীকার করা যেমন জরুরি, তেমনি এখনই সময় আরেকটি রূপরেখা রচনা দরকার যেমনটি ১৯৯০ সালের ১৯ নভেম্বর রাজনীতিবিদরা দিতে সমর্থ হয়েছিলেন। আমাদের নির্বাচন কমিশন স্পষ্টতঃই যে পথ হারিয়েছে সেটা আর বলবার অবকাশ নেই। তাদের ব্যর্থতায় ১১ টি বাস পোড়ানো হয়েছে মানতে হবে। যদিও সত্য মানতে পারা খুবই কঠিন। একজন ৭৫ হাজার ভোট পায় আর আরেকজন ৫ হাজার সেটা কেন তা খুঁজতে হবে। পত্রিকার পাতায় রাজনীতিবিদরাও বলছেন আমলারা সকল অর্জন ধ্বংস করে দিচ্ছে। ধ্বংস করেছে নির্বাচন ব্যবস্থাও। ওই আমলা সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হতে হবে। কিন্তু কিভাবে ?
তদবিরে যাকে-তাকে ‘কী পয়েন্টে’ বসিয়ে দিচ্ছেন কি ?
সরকারের বিরুদ্ধে মাননীয় সাংসদ জনাব কাজী ফিরোজ রশিদ অভিযোগটির যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। তিনি বলেছেন: “আমলাদের মধ্য থেকে তদবিরে যাকে-তাকে ‘কী পয়েন্টে’বসিয়ে দিচ্ছেন।“ অভিযোগটা আরও কঠোর হতো যদি তিনি বলতেন - ১৯৭৫ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত বিগত ২৬ বছর যারা ক্ষমতায় থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ,নাম নিশানা মুছে দিতে চেয়েছে- তাদেরকেই সরকার ‘কী পয়েন্টে’বসিয়ে দিচ্ছেন । যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও হত্যাকারীদের দোসর তারা ১/১১ র সময় দুর্নীতির মিথ্যা মামলা দিয়ে মাইনাস করতে চেয়েছে- তারাই আছে বিগত ১২ বছর মহাসুখে। আর যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে জাতির পিতার হত্যার বিচারের দাবিতে রাজপথে থেকে নিপীড়িত হয়েছে তারা অনেকে দফায় দফায় নিপীড়নের শিকার হয়েছে বিগত ১২ বছর। যাদেরকে কি পয়েন্টে ১২ বছর বসানো হয়েছে- আমরা লক্ষ্য করেছি তিনি একটু জামাত বিএনপি কিংবা বাম ঘেঁষা। এবং তারা সুযোগ পেলে জামাত -শিবির -বিএনপি বামদেরকে সুযোগ করে দিয়ে এবং সরকারের পরীক্ষিত লোকদেরকে বঞ্চিত করে সরকারকে দুর্বল করে দিচ্ছেন। তারা বেশ “ওদের” কাছে প্রিয়। আর যারা আদর্শ মেনে চলে তারা হয়ে যায় দলীয় এবং অগ্রহণযোগ্য।
আমরা হয়তো ভুলে গেছি ওই আদর্শবাদীরাই লড়াই করে ১/১১ র নাগপাশ থেকে মুক্ত করেছে গণতন্ত্র। সম্ভব হয়েছে জাতির পিতার হত্যার বিচার , বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশের যাত্রা। যদি ওই ত্যাগী নিপীড়িতদের এভাবে দিনের পর দিন অবহেলা করা হয় তবে ‘সে বিচার আল্লাহ করবেন’ বলে যে দীর্ঘ নিঃস্বাস মানুষটি ত্যাগ করবে তা কিন্তু লেগে যেতে পারে ! বিচার একটি কঠিন কাজ। আল্লাহ বিচার করেন। সেই বিচারে পার পাওয়া খুবই কঠিন। ফুলসুরাত – যা কিনা একটি চুলের চেয়েও চিকন সেই পথে পার হতে হবে সকল মানুষকে। অবিচার আরও আছে। কেউ একপাত খাওয়ার পর আরেকপাত খেতে থালা ধরে। এবং ওরা সৌভাগ্যবানও। তাদের দ্বিতীয়, তৃতীয় মেয়াদে নিয়োগ দেয়া হয়। এমনকি তাদের পদোন্নতিও হয় কিংবা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও হয়ে যায়। তারা অবশ্য অনেক কনফিডেন্ট। জেনারেল সফিউল্লাহর এক্সটেনশন, জেনারেল এরশাদের এক্সটেনশন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। একজনকে এক্সটেনশন দিলে অন্যের পদোন্নতি ও স্বপ্ন মিলিয়ে যায় এবং সেটি যে অবিচার সেটা মানতে অনেকেই রাজি নন। স্বাস্থ্য মহাপরিচালক দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তার পরিনাম কি হল তা এই মাত্র দেখলাম। আবার যাকে দেয়া হয়েছে তার এক্সটেনশন নিয়ে আলোচনা চলছে। এই এক্সটেনশনের সংস্কৃতিও কিন্তু বিপদজনক এবং অবিচার- সেটা বলা যাবে কি? বললে পত্রিকা হয়তো ছাপবে না। "ঘাড় মটকানোর " ঘোষনাতো হয়েই গেছে!
তবে, মিথ্যা বললে কিংবা একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম থাকলে সুবিধা আছে। যেমন সাংসদ ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহান সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে বলে চলেছেন সুললিত কণ্ঠে বুলেট ট্রেনের গতিতে। ছোটখাটো ভুলগুলোই বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। আর বিশ্বাসভঙ্গ ওই পাশের মানুষগুলোই করে যেমন ডালিম-মোশতাক করেছে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে, শিখ সেনা করেছে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে, বেল্টুরা করেছে ১/১১ র সময়। । জনাব কাজী ফিরোজ রশিদ ঠিকই বলেছেন- মানুষ চিনতে ভুল করলে আবার জাতির জীবনে অমানিশার অন্ধকার নেমে আসবে। প্রশাসনের আমলারা সবচে মেধাবী ডাক্তার -ইঞ্জিনিয়ারদেরকে যেভাবে কোনঠাসা করে রেখেছে তার মূল্য কিন্তু একদিন দিতে হবে জাতিকে। আমরা সেই বিভীষিকাময় যুগে(১৯৭৫-১৯৯৬ ০ ২০০১ থেকে ২০০৯ ) আর চাই কি ?
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিতর্ক তৈরী না করে আমার অভিমত হলো প্রতিটি ইউনিয়নে একটি পাঠাগার করা যায়। সেখানে বঙ্গবন্ধুর একটি মুরাল কিংবা ভাস্কর্য থাকতে পারে। আর কথা বলার সময় যেন আমরা ‘শালীনতা’ শব্দটার মান রাখতে চেষ্টা করি। আমাদের গ্রামে গ্রামে মাদক, পর্ণ ও দুর্নীতি ছড়িয়ে গেছে। সবগুলোকে মোকাবেলা করতে হলে প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐক। এবং সেটা করতে হলে এখনই বসতে হবে। যেভাবে ২০১৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে বসেছিলেন সেভাবে আবার বসতে হবে। বিদ্যমান সিস্টেম যে কাজ করছেনা সেটা কেবল উপলব্ধি করলেই হচ্ছে না। সেটা ঠিক করবার প্রয়োজন। আর মিডিয়া এখানে একটি সহায়ক শক্তি হতে পারে। সেজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আরো সহনীয় করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে একটি পক্ষ একটি মত দিয়েছে তার প্রতিক্রিয়া "ঘাড় মটকানো" আগুনকে উসকে দেবে অনুমান করা যায়। তালেবানদের পাশে যেমন মানুষ আছে তেমনি আছে ওদের পাশে।
এ মুহুর্তে বাঙালি চেতনার আলোকে একটি সামাজিক উন্নয়নের রূপরেখা নির্মাণ একান্ত জরুরি। যেখানে সামাজিক ন্যায্যতা ও সাম্য কেন্দ্রবিন্দুটিতে থাকতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গ্রাম হবে শহর -স্বপ্নটির সঙ্গে ‘পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য আমরা’ যুক্ত হতে পারে কর্মপরিকল্পনায়। এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারেন বাঙালি বলতে আমি কি বুঝি? আমার কাছে বাঙালি মানে মিনি, হৈমন্তী, পোস্টমাস্টার-রতন, রবীন্দ্রনাথ , নজরুল এবং জসীমউদ্দীনের "৩০ বছর ভিজিয়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।" আমার কাছে বাঙালি মানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। বাঙালি মানে সমতা ও মিলে -মিশে বাস করা। বাঙালি মানে ঈদ, বাঙালি মানে হালখাতা। বাঙালি মানে শাপলা -ইলিশ , বাঙালি মানে বাংলাদেশ। বাঙালি মানে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সুশাসন। বাঙালি মানে অন্যের মঙ্গল কামনা করা। এভাবে বাঙালিত্বকে বিস্তৃত করেই হতে পারে আমাদের আগামী প্রজন্মের স্বপ্ন যাত্রা
মন্তব্য করুন
একটা গল্প দিয়ে শুরু করছি। এক প্রেমিকা তার প্রেমিককে পরীক্ষা করার
জন্য বলল, তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে চাই আমি! প্রেমিক বলল, কী পরীক্ষা নেবে? সব
পরীক্ষার জন্য আমি প্রস্তুত। প্রেমিকা বলল, তোমার মায়ের হৃৎপিণ্ডটা নিয়ে আসো। প্রেমে
অন্ধ ছেলেটি ছুটল মায়ের কাছে! মাকে হত্যা করে তার হৃৎপিন্ড নিয়ে ছুটল প্রেমিকার কাছে,
ভালোবাসার পরীক্ষায় পাস করতে। পথে হঠাৎ আছড়ে পড়ল, আর হাত থেকে ফসকে গেল মায়ের হৃৎপিন্ডটা।
হাতে তুলে নিতেই হৃৎপিন্ড থেকে আওয়াজ এলো, “ব্যথা পেলি খোকা? তুই তো খুব পিপাসার্ত,
ক্লান্ত। আমি যে দাঁড়াতে পারছি না, তোকে কীভাবে পানি পান করাব বাবা”। এরই নাম মা।
আজ বিশ্ব ‘মা’ দিবস। দিনটি কীভাবে, কবে...
কোথা থেকে এলো, কেন পালন করা হয়, এর গুরুত্ব কী, তা হয়তো অনেকের
অজানা। দিনটি পালনে রয়েছে এক ইতিহাস। ১৯০৭ সালের ১২ মে আমেরিকার ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার
গ্রাফটন শহরে প্রথমবার ‘মাদার্স ডে’ বা মা দিবস পালিত হয়। ভার্জিনিয়ায় অ্যান নামে এক
সমাজকর্মী ছিলেন। তিনি নারী অধিকার নিয়ে কাজ করতেন এবং ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা
করেন। ছোট ছোট ওয়ার্ক ক্লাব বানিয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে নিতে চেষ্টা এবং
তাদের স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করতেন। অ্যানের একটি মেয়ে ছিল। একদিন মেয়ের সামনেই প্রার্থনা
করেছিলেন, “যেন কেউ একটা দিন মায়েদের জন্য উৎসর্গ করেন”। মায়ের সেই প্রার্থনা হৃদয়ে
নাড়া দিয়ে যায় তার মেয়েটির। অ্যানের মৃত্যুর পর সেই দিনটিকে সারা বিশ্বের প্রতিটি মায়ের
উদ্দেশে উৎসর্গ করেন তার মেয়ে। আর এভাবেই মায়েদের প্রতি সম্মানে পালিত হয়ে আসছে মা
দিবস। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে
‘মা দিবস’ ঘোষণা করেন। এর পর থেকে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবস হিসেবে
উদযাপন করা হয়ে থাকে।
‘মা’ কথাটি সবচেয়ে ছোট, অথচ সবচেয়ে মধুর একটি শব্দ। মাত্র এক অক্ষরে শব্দটি হলেও এর ব্যাপকতা সাগরের চেয়েও বিশাল। মায়ের মতো এত মধুর আর আবেগী শব্দ পৃথিবীতে আর একটিও নেই। যে শব্দটিতে জড়িয়ে আছে স্নেহ-মায়া-মমতা-ভালোবাসা। ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, প্রতিটি সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা ও প্রেম স্বার্থহীন, সীমাহীন। সন্তানের জন্য মা বরাবরই নিঃস্বার্থ একজন মানুষ। মা হচ্ছেন মমতা-নিরাপত্তা-অস্তিত্ব, নিশ্চয়তা ও আশ্রয়। মা সন্তানের অভিভাবক, পরিচালক, ফিলোসফার, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও বড় বন্ধু। জীবনে সবচেয়ে বড় শ্রমজীবী হচ্ছেন মা, যার কর্মবিরতি নাই, মজুরি নাই, দাবি নাই, শর্ত নাই, স্বার্থ নাই, তিনি শুধু শ্রম দিয়েই যাচ্ছেন। তারই নাম মা। নিজের জীবনের চেয়েও সন্তানকে ভালোবাসেন, সন্তানের কথা ভাবেন। সন্তানের সামান্য ব্যথাতে ব্যথিত হন। মা সব রোগের চিকিৎসক। মায়ের কাছে সবকিছু চাওয়া যায়। ‘মা’ই একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর কাছে সবকিছু চাইলেই পাওয়া যায়। মা সবচেয়ে সেরা রাঁধুনি। মায়ের হাতের রান্না পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার। মা হলো সন্তানের প্রথম বন্ধু, সেরা বন্ধু, চিরকালের বন্ধু। মায়ের মতো পরম বন্ধু এ জীবনে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আরও পড়ুন: আজ বিশ্ব মা দিবস
গর্ভধারণের মুহূর্ত থেকেই সন্তানের সঙ্গে একজন মায়ের নিবিড় বন্ধন
তৈরি হয়। বন্ধনটি আরও গভীর হয় যখন তিনি সন্তানকে তাঁর জঠরে মধ্যে বহন, উষ্ণতা, পুষ্টি
এবং সুরক্ষা প্রদান করতে থাকেন। গর্ভাবস্থায় একজন মা তাঁর অনাগত সন্তানের জন্য অনেক
ত্যাগ স্বীকার করেন, যা তুলনাহীন। এই গভীরতা অন্য কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। এরপর শিশুটি
যখন ভূমিষ্ট হয়ে পৃথিবীতে আসে, তখন মা হয়ে যান তার প্রথম এবং সাবর্ক্ষণিক পরিচর্যাকারী।
সন্তানের জন্য অগণিত রাতজাগা, সারাক্ষণ যত্ন নেওয়া, খাওয়ানো এবং আদরের আলিঙ্গনের মাধ্যমে
তিনি সীমাহীন ধৈর্য প্রদর্শন করেন।
প্রতিটি মানুষের পৃথিবীতে আসা ও বেড়ে ওঠার পেছনে প্রধান ভূমিকা
পালন করেন একজন মা। এজন্য শুধু মানুষ নয়, পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীই তার মায়ের কাছে ঋণী।
এই ঋণ শোধ করার কোনো বিকল্প নাই। মা হলেন এমন একজন মানুষ, যিনি অন্য সবার স্থান নিতে
পারেন কিন্তু তাঁর স্থান অন্য কেউ নিতে পারে না। চাওয়া-পাওয়ার এই পৃথিবীতে মায়ের ভালোবাসার
সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা হয় না।
মাকে নিয়ে কিছু অসাধারণ উক্তি: মাকে নিয়ে পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তিরা হাজারো
অসাধারণ উক্তি করেছেন।
(১) মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের
বেহেশত।”
(২) রবীন্দ্রনাথের গানে, “মধুর আমার মায়ের হাসি, চাঁদের মুখে ঝরে
..., সে যে জড়িয়ে আছে ছড়িয়ে আছে সন্ধ্যা রাতের তারায়, সেই যে আমার মা, বিশ্বভুবন মাঝে
তাহার নেইকো তুলনা..., প্রদীপ হয়ে মোর শিয়রে কে জেগে রয়
দুঃখের ঘরে, সেই যে আমার মা সেই যে আমার মা। বিশ্বভুবন মাঝে তাহার
নেইকো তুলনা, সেই যে আমার মা”।
(৩) আব্রাহাম লিংকন বলেছেন, “যার মা আছে, সে কখনোই গরিব নয়”।
(৪) বিখ্যাত ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাডোনা বলেছেন, “আমার মা মনে করেন
আমিই সেরা, আর মা মনে করেন বলেই আমি সেরা হয়ে গড়ে উঠেছি”।
(৫) জর্জ ওয়াশিংটন বলেছেন, “আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী নারী হলেন
আমার মা”। মায়ের কাছে আমি চিরঋণী। আমার জীবনের সব অর্জন তাঁরই কাছ থেকে পাওয়া নৈতিকতা,
বুদ্ধিমত্তা আর শিক্ষার ফল।
(৬) মাইকেল জ্যাকসন বলেছেন, “আমার মা বিস্ময়কর, আর আমার কাছে উৎকৃষ্টের
আরেক নাম”।
(৭) কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, “মা হলো পৃথিবীর একমাত্র
ব্যাংক, যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট জমা রাখি এবং বিনিময়ে নেই বিনা সুদে অকৃত্রিম
ভালোবাসা”।
(৮) কবি কাদের নেওয়াজ বলেছেন, ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি, কিন্তু জেনো
ভাই, ইহার চেয়ে নামটি মধুর, তিন ভুবনে নাই...”।
(৯) কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, “যেখানেতে দেখি যাহা, মা এর
মত আহা, একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই, মায়ের মতন এত আদর সোহাগ সেতো, আর কোনোখানে কেহ
পাইবে না ভাই”।
(১০) শিল্পী “ফকির আলমগীর এর ভাষায়, “মায়ের এক ধার দুধের দাম, কাটিয়া
গায়ের চাম, পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না, এমন দরদি ভবে কেউ হবে না আমার মা গো”।
ইসলামে মায়ের সম্মান ও অধিকার : ইসলাম মাকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। জান্নাতে
যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম করা হয়েছে মাকে। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের
বেহেশত। তাই জান্নাত পাওয়ার আকাক্সক্ষাকারী কোনো সন্তানই মাকে এড়িয়ে যেতে পারে না।
আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “তোমার পরওয়ারদেগার আদেশ করিয়াছেন, তোমরা
তাহাকে ব্যতীত অন্য কাহারও এবাদত করিও না এবং তুমি মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করিও,
যদি তোমার সম্মুখে তাঁহাদের একজন অথবা উভয়ে বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে তাহাদিগকে উহ পর্যন্তও
বলিও না, আর তাঁহাদিগকে ধমক দিও না এবং তাঁহাদের সঙ্গে খুব আদবের সহিত কথা বলিও। এবং
তাঁহাদের সম্মুখে করুণভাবে বিনয়ের সহিত নত থাকিবে, আর এইরূপ দোয়া করিতে থাকিবে, হে
আমার পরওয়ারদেগার! তাঁহাদের উভয়ের প্রতি দয়া করুন, যেরূপ তাহারা আমাকে লালন-পালন করিয়াছেন
শৈশবকালে” (সুরা বনি ইসরাইল, ২৩-২৪)।
আল্লাহ আরও বলেন, “আমি মানুষকে তাহার মাতা-পিতা সম্বন্ধে নির্দেশ
দিয়াছি, তাহার মাতা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করিয়া তাহাকে গর্ভে ধারণ করিয়াছে এবং তাহার
দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে, যেন তুমি শোকর কর আমার” (সুরা লোকমান-১৪)।
অন্য এক আয়াতে আছে, “আর তোমরা আল্লাহতায়ালারই এবাদত কর, এবং তাঁহার
সহিত কাহাকেও শরিক করিও না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করিও” (সুরা-নিসা-৩৬)।
পিতা-মাতার অধিকার সম্পর্কে হাদিসেও বহু জায়গায় বর্ণনা এসেছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“তিন ব্যক্তির দোয়া অবশ্যই কবুল হয়; এতে কোনো সন্দেহ নেই। এক, মা-বাবার দোয়া তাঁর সন্তানের
জন্য; দুই, মুসাফিরের দোয়া ও তিন, অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া অত্যাচারীর বিরুদ্ধে”
(আবু দাউদ)।
রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “মা-বাবাই হলো তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম”
(ইবনে মাজাহ-মিশকাত)।
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, “যখন কোনো অনুগত সন্তান নিজের মা-বাবার
দিকে অনুগ্রহের নজরে দেখে, আল্লাহ তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের
সাওয়াব দান করেন” (বায়হাকি-মিশকাত)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসুল
(সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রসুল! কে আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি
হকদার? তিনি বললেন তোমার মা; সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা; সে আবারও বলল,
তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে পুনরায় বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা
(বুখারি ও মুসলিম)।
একদিন হজরত মুয়াবিয়া ইবনে জাহিমা আসসালামি (রা.) রসুল (সা.)-এর
খেদমতে হাজির হয়ে বললেন, ‘ইয়া রসুলাল্লাহ! আমি জিহাদ করতে ইচ্ছুক। এ ব্যাপারে আপনার
পরামর্শ কী? জবাবে রসুল (সা.) বললেন, তোমার মা আছেন? তিনি বললেন, আছেন। রসুল (সা.)
ইরশাদ করেন, মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকো, কেননা তার পায়ের নিচেই জান্নাত।’
উপরোক্ত আয়াতগুলোতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আল্লাহর পরেই মা-বাবার
অধিকার।
রসুল (সা.)-এর জমানায় বিখ্যাত এক আশেকে রসুল ওয়াইস করনি (রা.) প্রিয়
নবীজির কাছে এই মর্মে খবর পাঠালেন, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ (সা.), আপনার সঙ্গে আমার দেখা করতে
মন চায়; কিন্তু আমার মা অসুস্থ। এখন আমি কী করতে পারি?’ নবীজি (সা.) উত্তর পাঠালেন,
‘আমার কাছে আসতে হবে না। আমার সাক্ষাতের চেয়ে তোমার মায়ের খেদমত করা বেশি জরুরি ও বেশি
ফজিলতের কাজ।’
মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব : সন্তানের সব সময় মনে রাখা উচিত, মায়ের
ত্যাগের কারণেই সে আজ সে এই সুন্দর পৃথিবীতে এসেছে। যদি সে মাকে ভুলে যায়, কষ্ট দেয়
বা অবহেলা করে- তাহলে সবই মিছে। সন্তানের পর্বত সমান সফলতা তখন মূল্যহীন। কিন্তু অতি
দুঃখের সঙ্গে লিখতে হচ্ছে, সেই মহান মায়ের প্রতি অনেক সন্তান আজকাল উদাসীন, অনেকে বেপরোয়া।
এমনও শোনা যায়, সন্তান তার মাকে প্রহার করছেন, ঘর থেকে বের করে দিচ্ছেন, জঙ্গলে মাকে
ফেলে এসেছেন, নিজে সুন্দর ঘরবাড়িতে বাস করে মাকে রেখেছেন রান্নাঘরে।
এমনও দেখা যায়, পিতা-মাতাকে সন্তান ঠিকমতো ভরণপোষণ দিচ্ছে না। তারা
বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের বৃদ্ধাশ্রম নামক কারাগারে পাঠিয়ে দিচ্ছে। অথচ স্ত্রী-সংসার
নিয়ে নিজেরা বেশ আরাম-আয়েশে থাকছে। তাদের পরিবারে বাবা-মা যেন বোঝা। যে সন্তানকে আদর
যত্ন দিয়ে মানুষ করলেন, সেই সন্তান কীভাবে তার মায়ের অবদানকে ভুলে যায়? নাড়িছেঁড়া ধন
একজন সন্তানের কাছ থেকে কোনোভাবেই এসব কাম্য নয়। এতে আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে; জমিন অভিশাপ
দেয়। নিশ্চয় কঠিন কেয়ামতের দিন সেই সন্তানকে আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কী উপায়
হবে সেদিন?
মা শ্রদ্ধার আধার, স্নেহের কান্ডারি। সব ধর্মেই মা আশীর্বাদস্বরূপ।
তাই সন্তানের সর্ব প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে মাকে শ্রদ্ধা করা, অন্তরের শ্রেষ্ঠতম আসনে তাঁকে
প্রতিষ্ঠা করা, ভক্তি ও শ্রদ্ধায় মাকে অভিষিক্ত করা। সন্তানের কাছে মা-ই হলেন জগতের
শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। তাই মায়ের সঙ্গে সর্বদা সম্মানজনক ও সহযোগিতামূলক ব্যবহার করতে হবে।
তাঁর সঙ্গে কখনো কর্কশ ভাষায় কথা বলা উচিত নয়। মায়ের অবাধ্যতা অমার্জনীয় অপরাধ। মায়ের
আদেশ পালন করা এবং তাঁর নির্দেশ মেনে চলা সন্তানের পবিত্র কর্তব্য। মায়ের ঋণ কোনো দিন
কখনো কোনোভাবেই শোধ করা যাবে না।
পৃথিবীর সবচেয়ে আপন হলো মা। তাই আসুন আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, আমরা আমাদের কোনো আচরণে যেন মাকে কষ্ট না দিই। যাদের মা এখনো বেঁচে আছেন, সেই মায়ের জন্য জীবনের সর্বোচ্চটাই করার চেষ্টা করি। মা-বাবার সেবা-যত্ন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত অর্জন করি। আল্লাহ আমাদের সবাইর পিতা-মাতাকে ভালো রাখুন। তাদের উত্তম সেবা করার তৌফিক দান করুন।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১১ মে, ২০২৪
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা হায়দার আকবর খান রনো না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন। শতভাগ বাম আদর্শে বিশ্বাসী একজন ব্যক্তি ছিলেন তিনি। আদর্শগতভাবে আমরা কখনোই এক আদর্শে বিশ্বাসী ছিলাম না। কিন্তু সেই ৬০ এর দশক থেকে রণ ভাইকে আমি চিনি। এবং ব্যক্তিগতভাবে তিনি আমার অগ্রজতুল্য।
বর্তমান যুগে বাম আদর্শের বা যেকোন আদর্শে শতভাগ বিশ্বাসী নির্ভেজাল লোক পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। সেখানে আপাদমস্তক একজন বাম আদর্শের ব্যক্তিত্বের উদহারণ ছিলেন রনো ভাই। তিনি যে লেখাগুলো লিখতেন তার অধিকাংশ লেখাগুলো আমি পড়েছি। তার বিশ্লেষণের ক্ষমতা, লেখার ধরণ প্রত্যেকটা জিনিসে বাম রাজনীতি এবং বাম আদর্শ ফুটে উঠতো।
তিনি এমন একটি সময় আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন যখন বাংলাদেশে বাম দল কবরে যাওয়ার পথে। অথচ আমাদের দেশে এখনই বামদলের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কেননা, চরম ডানপন্থি দলগুলো অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য তারা চ্যালেঞ্জ। আবার ডান দলগুলোর মধ্যে যাদের মডারেট ডান বলা যায়, তারাও আজ শক্তিহীন।
একমাত্র গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মধ্যম পন্থায় চলা আওয়ামী লীগ শক্তিশালী, আর মডারেট ডান হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিএনপির মতো যে দলগুলো আছে তারাও আজ নেই বললেই চলে। এমন একটা ক্রান্তিকাল যখন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষ একটি রাজনৈতিক দলকে সামনে নানা যারা চরম বামপন্থী বা চরম ডানপন্থী হবে না। ঠিক সেই সময় একজন আদর্শবান রনো ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। রনোভাইদের মতো যারা সত্যিকার বাম আদর্শে বিশ্বাস করতেন এমন ব্যক্তি বাস্তব ক্ষেত্রে খুঁজে পাওয়া যায় না। রনো ভাই ছিলেন রাজনৈতিক লড়াকু সৈনিক এবং পদ পদবীর কোন লোভ তার মধ্যে ছিল না। সবসময় আত্ম প্রচার থেকে দূরে থাকতেন তিনি। এমন একজন ব্যক্তির চলে যাওয়া মানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন আদর্শবান বাম সৈনিকের চলে যাওয়া।
যারা বাম আদর্শে বিশ্বাস করেন তাদেরকে আমি বলবো, আপনারা রনো ভাইয়ের বিকল্প হতে পারবেন না, কিন্তু সকলে আপনারা এক হয়ে, রনো ভাইয়ের মতো আদর্শিক হয়ে এখনই যদি বাম দলকে সংগঠিত না করেন তাহলে আওয়ামী লীগের বিকল্প হবে তালেবানরা। এখন আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আওয়ামী লীগকে কি তালেবানের সাথে যুদ্ধে নামাবেন নাকি দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য নিজ দায়িত্বে বাম দলকে সুসংগঠিত করবেন।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১১ মে, ২০২৪
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চতুর্থ মেয়াদের ক্ষমতার চার মাস পার করে দিয়েছেন। অনেকের ভেতরে আলাপ-আলোচনা শোনা যায় যে, বিশেষ করে যারা বেতনভোগী বুদ্ধিজীবী, বাইরের অনেক পত্রপত্রিকায় যারা লেখালেখি করেন তারা একটি প্রশ্ন তোলেন যে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আসলে এ বিষয়টি নিয়ে খুব বস্তুনিষ্ঠ এবং নির্মোহভাবে কোনো আলাপ-আলোচনা হয় না। আমি এ বিষয়টির কিছু ভাবনা প্রকাশ করতে চাই।
কদিন আগে স্টিভেন লেফেস্কি এবং ডেনিয়েল জিব্লাটের লেখা ‘হাউ ডেমোক্রেসি ডাই’ বইটি পড়ছিলাম। বইটি আমেরিকা থেকে প্রকাশিত এবং দেশে দেশে বহুল পঠিত। ২০১৮ সালে প্রকাশিত বইটি বেস্ট সেলার হিসেবেও বিবেচিত হয়েছে। কীভাবে ধীরে ধীরে গণতন্ত্র ক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে এবং দেশে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, সে বিষয়ে বইটির ২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে।
প্রথমেই যেটি বলা হয়েছে তা হলো, সংবিধানকে গণতন্ত্রবিরোধী সরকার মানে না সংবিধানকে কীভাবে দূরে সরিয়ে দেশ শাসন করা যায়, সেই চেষ্টা করে।
বাংলাদেশে নিয়মিত নির্বাচন হওয়ার ফলে সংবিধানবহির্ভূত ঘটনা শেখ হাসিনার শাসনামলে ঘটেনি। বলা যায় ১৯৮১ সালের ১৭ মে যেদিন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব নেন, সেদিনই কিন্তু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সূচনা শুরু হয়। সেদিনকে বলা চলে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শুভ যাত্রার দিন’। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, এ গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য তিনি দেশে এসেছেন এবং সর্বশেষ তিনিই গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছেন। তার আশার পরেই কারফিউ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন সামরিক একনায়ক জিয়া।
আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচন বর্জন বিএনপি কফিনের শেষ পেরেক
গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য যেসব কাজ করা হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচনকে যে কোনো প্রকারে বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা অনেক কঠিন অবস্থার মধ্যে থেকেও নিয়মিত নির্বাচন করে চলেছেন। একনায়কতন্ত্র যে গণতন্ত্রকে দুর্বল করে তার কোনো চিহ্ন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার মধ্যে নেই। বিরোধী দল যত গণতন্ত্র ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করেছেন, শেখ হাসিনা ততই গণতন্ত্র সুরক্ষার চেষ্টা করেছেন।
বইটিতে বলা হয়েছে, এসব একনায়ক সরকার কিছু কিছু সংগঠনকে বন্ধ করে দেয়। যেমন—মানবাধিকার কমিশন। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এ মানবাধিকারকে আরও উজ্জীবিত করেছেন। স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন তারই সৃষ্টি। এ ছাড়া এসব একনায়ক রাজনৈতিক দলকে বন্ধ করে দেয়। কিন্তু দেখা যায় দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলকে বন্ধ করেননি। বরং রাজনৈতিক দলগুলোকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।
বইটিতে আরেকটি বিষয়ে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয় আর তা হচ্ছে, সরকার দুর্বল হতে থাকলে এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সামরিক গোষ্ঠী ক্ষমতা দখল করে এবং সংবিধানকে বাতিল করে অথবা স্থগিত করে দেশ চালায়। সে হিসেবে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটা খুব সুশৃঙ্খল, শক্তিশালী এবং পেশাদার সামরিক বাহিনী গড়ে তুলেছেন। এখানে কোনো ধরনের নৈরাজ্য দেখা যাচ্ছে না, আজ পর্যন্ত ঘটেনি এবং ঘটারও সম্ভাবনা নেই। সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদ সংযোজন শেখ হাসিনার আরেকটি অসাধারণ উদ্যোগ। এটি গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। এর ফলে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয়েছে।
আরও পড়ুন: বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ
এ বইয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে তা হলো, যে কোনো নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে হৈচৈ হয়। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে আমাদের দেশে হৈচৈ হলেও সর্বশেষ নির্বাচনে এটি প্রমাণ হয় সবাই এ নির্বাচন গ্রহণ করে নিয়েছে। যারা বলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র দুর্বল হচ্ছে তাদের জন্য এ উদাহরণগুলো দিয়ে বলা যায় দুর্বল নয় বরং বাংলাদেশে দিন দিন গণতন্ত্র শক্তিশালী হচ্ছে। বলা যায়, দেশ এখন শুধু উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে। নির্বাচনে দেওয়া ইশতেহারগুলো সরকার পূরণ করে চলেছে। মানুষের যে মৌলিক অধিকার তা পূরণ করা হচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীনদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, পথশিশু এবং বস্তিবাসীর জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষকে করা হচ্ছে আত্মনির্ভর। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবার জন্য প্রতি ছয় হাজার জনগণের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তুলেছেন। আর এ কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ গত বছর ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত প্রচার করে তারাই মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা। তারাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার কোথায় কোথায় লঙ্ঘন হচ্ছে তার সূচক দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সূচক নেই। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে যে, গাজাতে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম অত্যাচার। আর এতে ইসরায়েলকে অস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে তারা। এ বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন তুঙ্গে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা এভাবেই প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু এবার যুক্তরাষ্ট্র এ আন্দোলনের বিষয়টি অন্যভাবে দমন করছে। শিক্ষার্থীদের অমানবিক কায়দায় নিপীড়ন করা হচ্ছে।
আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ এবং র্যাবের প্রতি আমার একটি আবেদন থাকবে, তারা যেন আন্দোলন দমনে যুক্তরাষ্ট্রের এ স্টাইল অনুসরণ না করে। কেননা তাদের এ স্টাইল যদি আমরা ফলো করি তাহলে আমাদের গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাবে। সুতরাং আমরা যারা সাধারণ জনগণ, আমরা আপনাদের প্রতি অত্যন্ত বিশ্বাসী এবং আপনাদের কাছে শ্রদ্ধায় মাথানত করি। আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য, আমাদের সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য অনেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য জীবন দিচ্ছেন। আমি জানি যে, আপনাদের জীবন অমূল্য, অনেকে এর জন্য তাদের সংসার ত্যাগ করছেন। আপনাদের প্রতি সহানুভূতি জানানোর দায়িত্ব হয়তো আমাদের নেই, কিন্তু দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আপনাদের দেখছেন। তাই কষ্ট হলেও আপনারা আপনাদের পথে থাকেন।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, আগামী ১০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র থাকবে কি না, তা নিয়ে ভাবনা হচ্ছে অনেকের। তাই বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে গণতন্ত্র শিখতে হবে না। আমরা তাদের কিছুতেই অনুসরণ করতে পারি না এবং অনুসরণ করে আমাদের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে পারি না। সুতরাং এ দেশে গণতন্ত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে এবং আমার বিশ্বাস গণতন্ত্রে আমরা বিশ্বে মডেল হব। যেমনটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ভ্যাক্সিনেশনে আমরা মডেল হয়েছি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়েও বিশ্বে মডেল হবেন। এজন্য আমাদের কাউকে অনুসরণ করার প্রয়োজন নেই।
লেখক: সভাপতি, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী গণতন্ত্র মানবাধিকার কমিউনিটি ক্লিনিক দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১১:১১ পিএম, ০৮ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ০৫ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
একটা গল্প দিয়ে শুরু করছি। এক প্রেমিকা তার প্রেমিককে পরীক্ষা করার জন্য বলল, তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে চাই আমি! প্রেমিক বলল, কী পরীক্ষা নেবে? সব পরীক্ষার জন্য আমি প্রস্তুত। প্রেমিকা বলল, তোমার মায়ের হৃৎপিণ্ডটা নিয়ে আসো। প্রেমে অন্ধ ছেলেটি ছুটল মায়ের কাছে! মাকে হত্যা করে তার হৃৎপিন্ড নিয়ে ছুটল প্রেমিকার কাছে, ভালোবাসার পরীক্ষায় পাস করতে। পথে হঠাৎ আছড়ে পড়ল, আর হাত থেকে ফসকে গেল মায়ের হৃৎপিন্ডটা। হাতে তুলে নিতেই হৃৎপিন্ড থেকে আওয়াজ এলো, “ব্যথা পেলি খোকা? তুই তো খুব পিপাসার্ত, ক্লান্ত। আমি যে দাঁড়াতে পারছি না, তোকে কীভাবে পানি পান করাব বাবা”। এরই নাম মা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চতুর্থ মেয়াদের ক্ষমতার চার মাস পার করে দিয়েছেন। অনেকের ভেতরে আলাপ-আলোচনা শোনা যায় যে, বিশেষ করে যারা বেতনভোগী বুদ্ধিজীবী, বাইরের অনেক পত্রপত্রিকায় যারা লেখালেখি করেন তারা একটি প্রশ্ন তোলেন যে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আসলে এ বিষয়টি নিয়ে খুব বস্তুনিষ্ঠ এবং নির্মোহভাবে কোনো আলাপ-আলোচনা হয় না। আমি এ বিষয়টির কিছু ভাবনা প্রকাশ করতে চাই।
আজকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেভাবে হয় তার সামান্যতম কোন ব্যতিক্রম হয়নি। ভোটাররা উৎসাহ নিয়ে ভোট দিয়েছে। কোথাও কোথাও অনেক ভোটার আছেন যারা মনে করেন যে, অমুকে তো অনেকে জনপ্রিয় প্রার্থী, তিনিই বিজয়ী হবেন। আমার ভোট না দিলেও হবে। এ রকম মনোভাব নিয়ে অনেকে ভোট দেয়নি। আর কিছু জায়গা আছে ছোট খাটো মারামারি হয়েছে। যা এদেশের স্থানীয় নির্বাচনের চরিত্র।
মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের বাড়ি বিনা টাকায় বিক্রি করার জন্য কর্তৃপক্ষ আগ্রহী প্রার্থী পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মনে হলো যে, আমাদের একজন ভালো খরিদ্দার আছে এবং তার কাছে এই গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি করলে গোয়েবেলসের আদর্শটাও বেঁচে থাকবে এবং কর্তৃপক্ষেরও উপকার হবে। আর এ খরিদ্দার হচ্ছে বিএনপি এবং এবং লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বাড়িটি কিনতে পারেন। তিনি হচ্ছেন গোয়েবেলসের এই বাড়ির যোগ্য ব্যক্তি। কারণ তিনি গোয়েবেলসের ভাবশিষ্য।