নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০৩ এএম, ১১ এপ্রিল, ২০২১
আর দুমাস বাঁচলেই প্রিন্স ফিলিপের বয়স এক শ বছর হতো। তখন ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ—যিনি তাঁর স্ত্রীও, তিনি এ দেশের প্রথানুযায়ী তাঁর শতবর্ষজীবী স্বামীর জন্মদিবসের জন্য জন-শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাতেন। এ প্রথা তিনি রানি হওয়ার পর থেকেই প্রায় ৭০ বছর ধরে চলছে। সে যত সাধারণ মানুষই হোন না কেন শতবর্ষ বেঁচে থাকার জন্য এদিন ডাকঘর থেকে তাঁর কাছে রানির চিঠি আসে। বাকিংহাম প্যালেস থেকে আসা সাদা মাখনের মতো সে খামের ওপরে থাকে অ্যাম্বুশ করা রানির মুকুটের সোনা রং ধোয়া ছবি। আমি জানি! ওই খাম দেখে আমারও হৃৎকম্প হয়েছিল। না আমার এক শ হয়নি। তবে আমি কেন পেয়েছিলাম তা বলছি একটু পরে। কারণ, তাতেই আমি প্রিন্স ফিলিপকে ওই বাকিংহাম প্যালেসেই অত্যন্ত কাছে থেকে দেখেছি। তাঁর পাশে ফিরোজা রঙের ড্রেস পরা রানিকে কত্ত ছোট আর নরম লাগছিল। মনে হচ্ছিল তিনি প্রায় আমার উচ্চতাসম্পন্ন। আরও মনে হয়েছিল, রানির কি বয়সের কারণে হাড় ক্ষয়ে ক্ষয়ে উচ্চতা কমে গেছে!
রাজবাড়ির মানুষের অনেক আয়ু হয়! এঁরা খান ভালো, অনিয়ম করেন না, পরেন ভালো, তাই বাঁচেন ভালো। তাঁদের হাড়–হাড্ডি, অন্ত্রতন্ত্র বদল হয়। রানিমাতা প্রথম এলিজাবেথ এক শ এক বছর বেঁচেছিলেন। নিয়ম ভঙ্গ করেছিলেন রানির ভগ্নি মার্গারেট, তিনি রানির ছোট বোন হয়েও আগেই মৃত্যুবরন করেন। ভেবেছিলাম আরও মাত্র দুমাস বাঁচলে ফিলিপ যখন রানির চিঠি পাবেন, সে ভারি মজার হবে। কিন্তু তা আর হলো না। রানির স্বামী গতকাল শুক্রবার সকালে রাজভবন উইন্ডসর ক্যাসলে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। এক মাস হাসপাতালে থাকার পর সেখানেই ফিরেছিলেন। বালমোরাল নয়, বাকিংহাম প্যালেস নয় তাঁর পছন্দ ছিল উইন্ডসোর। সেখানেই গেল তাঁর অন্তিম সময়।
তাঁর মৃত্যুর পর সেই থেকে সেই যে তাঁকে নিয়ে সবগুলো গণমাধ্যম মেতে আছে, তাতে আর থামাথামি নেই। এমনটা হওয়ারই কথা। তাঁর চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক যুগের ইতি হলো। কয়েকটি প্রজন্ম তিনি একসঙ্গে দেখে গেছেন। রাজবাড়ির সবচেয়ে বড় বিপদ ও আনন্দ অবলোকন করে পরামর্শ দিয়েছেন। ৯৯ বছরের একজন মানুষ তার তো নানান অসুখ–বিসুখ থাকারই কথা। তাঁর সে রকম ছিল না, তিনি ভালোই ছিলেন। কোনো দিন হুইলচেয়ারে দেখিনি, দেখিনি লাঠি হাতে। ঋজু দেহধারী সাবেক নাবিক রাজা সেই প্রথম থেকেই এক শক্ত মানুষ।
প্রিন্স ফিলিপ গ্রিক আইল্যান্ডের কর্ফুতে জন্মগ্রহণ করেন। সে ছিল ১৯২১ সালের ১০ জুন। তাঁর জন্ম বংশধারা গ্রিস ও ডেনমার্কের, হেলেনের রাজা প্রথম জর্জের ছোট ছেলে। তাঁর মা প্রিন্সেস অ্যালিস ছিলেন লর্ড লুই মাউন্ট ব্যাটেনের মেয়ে, কুইন ভিক্টোরিয়ার নাতনি।
এদিকে রানি কুইন ভিক্টোরিয়ার নাতনি। সেদিক থেকে তাঁরা সম্পর্কে কাজিন ছিলেন। রাজবাড়িরই এক অনুষ্ঠানে তাঁদের প্রথম দেখা এবং ভালো লাগা। ১৯৪৭ সালে তাঁকে বিয়ে করার পর মাত্র পাঁচ বছর তিনি এলিজাবেথের সঙ্গে আর দশটা স্বামীর মতো সংসার করতে পেরেছিলেন। কিন্তু ১৯৫২ সালে হয়ে গেলেন ইংল্যান্ডের ‘রানির স্বামী’। বিশাল কোহিনূর বসানো মুকুট পরা স্ত্রীর পেছনে শত পারিষদ, তাদের হাতে হাতে সোনা–রুপার ঝান্ডা চলছে, তারই এক অনুষঙ্গ তিনি, আরও একখণ্ড অলংকার মাত্র। রাজ পরিবারে বিয়ে করলে এঁরা একটু সাম্রাজ্য পান। তিনিও পেলেন, হলেন ডিউক অব এডিনবরা। মরিয়া হয়ে সেখানে এডিনবরা বৃত্তি চালু করে একবার নজর কাড়লেন। আরেকবার বন্য প্রাণী রক্ষা নিয়ে কথাবার্তা তুলে নিজে খবর হলেন আর শেষবার ইরানে যুদ্ধরত ব্রিটিশ সৈনিকদের সঙ্গে একা দেখা করতে চলে গেলেন। ঢাকা পড়ল ডায়ানার কীর্তিকলাপ কি না, কে জানে!
প্রায় ৭০ বছর তাঁর প্রধান পরিচয় ছিল রানির চার সন্তানের পিতা ও সঙ্গী হিসেবে এবং সেটাই এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। এমনকি ফিলিপ নাকি রানির শক্তি, রানির বল হয়ে এক অনুপম উদাহরণের সৃষ্টি করেছেন। তিনি নাকি রাজকীয় ডিউটিতে কষ্টকর সব ভারী পোশাক পরে সদা হাজির থেকেছেন। এমনকি কিছুদিন আগেই রানিও তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, ডিউক কীভাবে তাঁর সব কাজকর্মের পেছনে সাহায্য করেছেন। কথা হলো, এই পৃথিবীতে কত শত রানি তাঁদের রাজা মশাইয়ের পেছনে পেছনে একই কাজ করে করে মরে গেছেন, কিন্তু তা নিয়ে কোনো প্রশংসাবাক্য হয়নি, হয়নি কথা।
স্বামীর পেছনে অলংকারের মতো তাঁর স্ত্রীরই তো থাকারই কথা! বাইরে তাঁরা রানি হতে পারেন কিন্তু ছেলেমেয়ের দায়িত্ব রানিরই! আর সে রকম ঘটনায় আমরা জানিও না কাজটি কত কঠিন। একজন পুরুষ করেছে বলেই ঢোলে পড়েছে ঘা। বছরের পর বছর শত রকমের আচার–অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতাই যে তাঁর জন্য ছিল প্রধান কাজ। এ নাকি এক বিরল গুণ! আমরা সবাই সেভাবেই তাঁকে দেখেছি। এমনকি রানির সুবর্ণজয়ন্তীতে নৌবিহারে নদীপাড়ে জমায়েত হওয়া শত শত মানুষকে হাত নেড়ে নেড়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা রানির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরের দিন তাঁর খাটাখাটুনি উঠে গেল পত্রিকায়।
তাঁর বদ মেজাজ নিয়ে কত গল্প শুনেছি। যাহা রটে তাহা কিছু বটে। তিনি নাকি মাইকেল জ্যাকসনের পিতার মতোই মহা কড়া ছিলেন। পৌত্র–পৌত্রিদের কদাচিৎ কোলে নিলেও নিজ সন্তানকে নেননি। তাঁর প্রবল শাসনে কম্পমান যুবরাজ চার্লস কামিলাকে বিয়ে করতে পারেননি।
কামিলা তাঁর সঙ্গে গোপন সম্পর্ক রেখেছেন আর এদিকে ফিলিপের বকা খেয়ে ভয়ে ডায়ানাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছেন চার্লস।
চীনে বেড়াতে গিয়ে ফিলিপ সে দেশের মানুষের চোখ ছোট ছোট বলে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন। আর আমাদের মতো এশিয়ানরা তাঁর চোখে ছিলেন বহিরাগত অভিবাসী! এটাও নিউজ থেকে জানি। তবে ১০ জন নাতি-নাতনি হলে পরে একটু নমনীয় হয়েছিলেন। আমি ভাবছি রানির কথা। রানি হোন আর নাই হোন। ফিলিপ ছিলেন তাঁরই স্বামী এবং রানি যে কত নরম তা আমি দেখেছিলাম।
২০১৩ সাল। ডাকবাক্স খুলে দেখি সোনালি মুকুট জলছাপে আমার নামে রানির চিঠি। বিলেতে বসবাসরত কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলো থেকে বাছাই করা শ খানেকের মধ্যে আমিও একজন। শিল্পী–সাহিত্যিক ও সৃষ্টিশীল মানুষদের বাকিংহাম প্যালেসে দাওয়াত। তাতে লেখা ছিল ‘দ্য মাস্টার অব দ্য হাউসহোল্ড হ্যাজ রিসিভড হার ম্যাজিস্ট্রস কম্যান্ড টু ইনভাইট মিসেস শামীম আজাদ টু আ কমনওয়েলথ রিসেপ্সহন টু বি গিভেন অ্যাট বাকিংহ্যাম প্যালেস বাই দ্য কুইন অ্যান্ড ডিউক অব এডিনবরা’। চিঠি পেয়ে যেমন মাথা খারাপ হয়েছিল, গিয়েও ভীষণ শিহরিত হয়েছিলাম। কারণ, আমি ভেবেছিলাম বিশাল এক হলে নামধাম দেখিয়ে বসব আর রানি এসে একটা বক্তৃতা দিয়ে চলে যাবেন। আমরা ফ্যা ফ্যা করে খুদ–কুড়া খাব।
কিন্তু তা হলো না। বরং হালকা স্ন্যাক্স ও পানীয়র পর দুই দফায় রাজা-রানি এবং চার্লস-কমিলা এ চারজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো। প্রথম দফায় আমাদের অভ্যাগতদের এক এক করে রাজকীয় চিৎকার সহযোগে লেজওয়ালা কালো কোট পরা একজন পরিচয় করিয়ে দিলেন-আমি স্বদেশের মহিমায়, বুকে ‘বাংলাদেশি অথার’ লেখা তকমা নিয়ে উদ্ভাসিত হয়ে ওঁদের চারজনের সঙ্গে করমর্দন করার, কথা বলার সুযোগ পেলাম। এ পর্ব শেষ হলে এবার তাঁরা তাঁদের ম্যান ইন ওয়েটিং বা লেডি ইন ওয়েটিংসহ ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে গল্প করে গেলেন।
আমি রানির হাত ধরেছি তো ধরেছি। ছাড়াছাড়ি নেই। নরম, মাখনদলার মতো মানুষটির ছোঁয়ার মধ্যে থেকে প্রথম বলেছিলাম, ‘আমার অবিশ্বাস্য লাগছে যে আমি হে মহামান্য রানি, আমি সত্যি আপনার সঙ্গে এখন করমর্দনরত!’ তিনি মিষ্টি হাসলেন, হাত ছাড়ালেন না। বললেন, ‘সত্যিই তো...সত্যি...।’ এতে প্রিন্স ফিলিপ ঝুঁকে আমার নামটা বানান করে পড়ে ভুরু কুচকে বললেন, ‘বাংলাদেশের!’ —আমি বললাম, ‘জি’। তিনি একটি শব্দ করলেন, ‘অ!’ কিন্তু কথা চালিয়ে গেলাম মহামান্যার সঙ্গেই। ২০১২ অলিম্পিকের সমাপনীতে তিনি যে জেমস বন্ডের এক ভূমিকায় মুগ্ধ করা তিন মিনিট দিয়েছিলেন, সে প্রসঙ্গ এনে বললাম, ‘মাননীয়া, আপনিই আমার দেখা বেস্ট বন্ডগার্ল!’ রানি এবার বড় হাসি দিলেন। আমার প্রতি স্নেহার্দ্রতায় চোখেমুখে কৌতুক নিয়ে এলেন। এবার রাজা মশাই ওই উঁচু দেহ বেঁকিয়ে ঝুঁকে শুনতে এলেন রানি কেন হাসছেন। সেদিন তাঁদের দেখে একটা অদ্ভুত রসায়ন দেখলাম। যে রসায়ন পরস্পর বোঝাপড়া আছে তেমন স্ত্রী ও স্বামীর মধ্যেই থাকে। ডিউকের মৃত্যু সংবাদের পর শুধু রানির মায়াময় সেই কোমল অবয়বখানা মনে পড়ছে। মনে হচ্ছে ‘যার যায় তারই যায়’।
লেখাটি সংগৃহীত, প্রিন্স ফিলিপকে নিয়ে লিখেছেন শামীম আজাদ, একজন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সাহিত্যিক।
মন্তব্য করুন
একটা গল্প দিয়ে শুরু করছি। এক প্রেমিকা তার প্রেমিককে পরীক্ষা করার
জন্য বলল, তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে চাই আমি! প্রেমিক বলল, কী পরীক্ষা নেবে? সব
পরীক্ষার জন্য আমি প্রস্তুত। প্রেমিকা বলল, তোমার মায়ের হৃৎপিণ্ডটা নিয়ে আসো। প্রেমে
অন্ধ ছেলেটি ছুটল মায়ের কাছে! মাকে হত্যা করে তার হৃৎপিন্ড নিয়ে ছুটল প্রেমিকার কাছে,
ভালোবাসার পরীক্ষায় পাস করতে। পথে হঠাৎ আছড়ে পড়ল, আর হাত থেকে ফসকে গেল মায়ের হৃৎপিন্ডটা।
হাতে তুলে নিতেই হৃৎপিন্ড থেকে আওয়াজ এলো, “ব্যথা পেলি খোকা? তুই তো খুব পিপাসার্ত,
ক্লান্ত। আমি যে দাঁড়াতে পারছি না, তোকে কীভাবে পানি পান করাব বাবা”। এরই নাম মা।
আজ বিশ্ব ‘মা’ দিবস। দিনটি কীভাবে, কবে...
কোথা থেকে এলো, কেন পালন করা হয়, এর গুরুত্ব কী, তা হয়তো অনেকের
অজানা। দিনটি পালনে রয়েছে এক ইতিহাস। ১৯০৭ সালের ১২ মে আমেরিকার ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার
গ্রাফটন শহরে প্রথমবার ‘মাদার্স ডে’ বা মা দিবস পালিত হয়। ভার্জিনিয়ায় অ্যান নামে এক
সমাজকর্মী ছিলেন। তিনি নারী অধিকার নিয়ে কাজ করতেন এবং ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা
করেন। ছোট ছোট ওয়ার্ক ক্লাব বানিয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে নিতে চেষ্টা এবং
তাদের স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করতেন। অ্যানের একটি মেয়ে ছিল। একদিন মেয়ের সামনেই প্রার্থনা
করেছিলেন, “যেন কেউ একটা দিন মায়েদের জন্য উৎসর্গ করেন”। মায়ের সেই প্রার্থনা হৃদয়ে
নাড়া দিয়ে যায় তার মেয়েটির। অ্যানের মৃত্যুর পর সেই দিনটিকে সারা বিশ্বের প্রতিটি মায়ের
উদ্দেশে উৎসর্গ করেন তার মেয়ে। আর এভাবেই মায়েদের প্রতি সম্মানে পালিত হয়ে আসছে মা
দিবস। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে
‘মা দিবস’ ঘোষণা করেন। এর পর থেকে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবস হিসেবে
উদযাপন করা হয়ে থাকে।
‘মা’ কথাটি সবচেয়ে ছোট, অথচ সবচেয়ে মধুর একটি শব্দ। মাত্র এক অক্ষরে শব্দটি হলেও এর ব্যাপকতা সাগরের চেয়েও বিশাল। মায়ের মতো এত মধুর আর আবেগী শব্দ পৃথিবীতে আর একটিও নেই। যে শব্দটিতে জড়িয়ে আছে স্নেহ-মায়া-মমতা-ভালোবাসা। ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, প্রতিটি সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা ও প্রেম স্বার্থহীন, সীমাহীন। সন্তানের জন্য মা বরাবরই নিঃস্বার্থ একজন মানুষ। মা হচ্ছেন মমতা-নিরাপত্তা-অস্তিত্ব, নিশ্চয়তা ও আশ্রয়। মা সন্তানের অভিভাবক, পরিচালক, ফিলোসফার, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও বড় বন্ধু। জীবনে সবচেয়ে বড় শ্রমজীবী হচ্ছেন মা, যার কর্মবিরতি নাই, মজুরি নাই, দাবি নাই, শর্ত নাই, স্বার্থ নাই, তিনি শুধু শ্রম দিয়েই যাচ্ছেন। তারই নাম মা। নিজের জীবনের চেয়েও সন্তানকে ভালোবাসেন, সন্তানের কথা ভাবেন। সন্তানের সামান্য ব্যথাতে ব্যথিত হন। মা সব রোগের চিকিৎসক। মায়ের কাছে সবকিছু চাওয়া যায়। ‘মা’ই একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর কাছে সবকিছু চাইলেই পাওয়া যায়। মা সবচেয়ে সেরা রাঁধুনি। মায়ের হাতের রান্না পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার। মা হলো সন্তানের প্রথম বন্ধু, সেরা বন্ধু, চিরকালের বন্ধু। মায়ের মতো পরম বন্ধু এ জীবনে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আরও পড়ুন: আজ বিশ্ব মা দিবস
গর্ভধারণের মুহূর্ত থেকেই সন্তানের সঙ্গে একজন মায়ের নিবিড় বন্ধন
তৈরি হয়। বন্ধনটি আরও গভীর হয় যখন তিনি সন্তানকে তাঁর জঠরে মধ্যে বহন, উষ্ণতা, পুষ্টি
এবং সুরক্ষা প্রদান করতে থাকেন। গর্ভাবস্থায় একজন মা তাঁর অনাগত সন্তানের জন্য অনেক
ত্যাগ স্বীকার করেন, যা তুলনাহীন। এই গভীরতা অন্য কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। এরপর শিশুটি
যখন ভূমিষ্ট হয়ে পৃথিবীতে আসে, তখন মা হয়ে যান তার প্রথম এবং সাবর্ক্ষণিক পরিচর্যাকারী।
সন্তানের জন্য অগণিত রাতজাগা, সারাক্ষণ যত্ন নেওয়া, খাওয়ানো এবং আদরের আলিঙ্গনের মাধ্যমে
তিনি সীমাহীন ধৈর্য প্রদর্শন করেন।
প্রতিটি মানুষের পৃথিবীতে আসা ও বেড়ে ওঠার পেছনে প্রধান ভূমিকা
পালন করেন একজন মা। এজন্য শুধু মানুষ নয়, পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীই তার মায়ের কাছে ঋণী।
এই ঋণ শোধ করার কোনো বিকল্প নাই। মা হলেন এমন একজন মানুষ, যিনি অন্য সবার স্থান নিতে
পারেন কিন্তু তাঁর স্থান অন্য কেউ নিতে পারে না। চাওয়া-পাওয়ার এই পৃথিবীতে মায়ের ভালোবাসার
সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা হয় না।
মাকে নিয়ে কিছু অসাধারণ উক্তি: মাকে নিয়ে পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তিরা হাজারো
অসাধারণ উক্তি করেছেন।
(১) মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের
বেহেশত।”
(২) রবীন্দ্রনাথের গানে, “মধুর আমার মায়ের হাসি, চাঁদের মুখে ঝরে
..., সে যে জড়িয়ে আছে ছড়িয়ে আছে সন্ধ্যা রাতের তারায়, সেই যে আমার মা, বিশ্বভুবন মাঝে
তাহার নেইকো তুলনা..., প্রদীপ হয়ে মোর শিয়রে কে জেগে রয়
দুঃখের ঘরে, সেই যে আমার মা সেই যে আমার মা। বিশ্বভুবন মাঝে তাহার
নেইকো তুলনা, সেই যে আমার মা”।
(৩) আব্রাহাম লিংকন বলেছেন, “যার মা আছে, সে কখনোই গরিব নয়”।
(৪) বিখ্যাত ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাডোনা বলেছেন, “আমার মা মনে করেন
আমিই সেরা, আর মা মনে করেন বলেই আমি সেরা হয়ে গড়ে উঠেছি”।
(৫) জর্জ ওয়াশিংটন বলেছেন, “আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী নারী হলেন
আমার মা”। মায়ের কাছে আমি চিরঋণী। আমার জীবনের সব অর্জন তাঁরই কাছ থেকে পাওয়া নৈতিকতা,
বুদ্ধিমত্তা আর শিক্ষার ফল।
(৬) মাইকেল জ্যাকসন বলেছেন, “আমার মা বিস্ময়কর, আর আমার কাছে উৎকৃষ্টের
আরেক নাম”।
(৭) কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, “মা হলো পৃথিবীর একমাত্র
ব্যাংক, যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট জমা রাখি এবং বিনিময়ে নেই বিনা সুদে অকৃত্রিম
ভালোবাসা”।
(৮) কবি কাদের নেওয়াজ বলেছেন, ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি, কিন্তু জেনো
ভাই, ইহার চেয়ে নামটি মধুর, তিন ভুবনে নাই...”।
(৯) কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, “যেখানেতে দেখি যাহা, মা এর
মত আহা, একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই, মায়ের মতন এত আদর সোহাগ সেতো, আর কোনোখানে কেহ
পাইবে না ভাই”।
(১০) শিল্পী “ফকির আলমগীর এর ভাষায়, “মায়ের এক ধার দুধের দাম, কাটিয়া
গায়ের চাম, পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না, এমন দরদি ভবে কেউ হবে না আমার মা গো”।
ইসলামে মায়ের সম্মান ও অধিকার : ইসলাম মাকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। জান্নাতে
যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম করা হয়েছে মাকে। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের
বেহেশত। তাই জান্নাত পাওয়ার আকাক্সক্ষাকারী কোনো সন্তানই মাকে এড়িয়ে যেতে পারে না।
আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “তোমার পরওয়ারদেগার আদেশ করিয়াছেন, তোমরা
তাহাকে ব্যতীত অন্য কাহারও এবাদত করিও না এবং তুমি মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করিও,
যদি তোমার সম্মুখে তাঁহাদের একজন অথবা উভয়ে বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে তাহাদিগকে উহ পর্যন্তও
বলিও না, আর তাঁহাদিগকে ধমক দিও না এবং তাঁহাদের সঙ্গে খুব আদবের সহিত কথা বলিও। এবং
তাঁহাদের সম্মুখে করুণভাবে বিনয়ের সহিত নত থাকিবে, আর এইরূপ দোয়া করিতে থাকিবে, হে
আমার পরওয়ারদেগার! তাঁহাদের উভয়ের প্রতি দয়া করুন, যেরূপ তাহারা আমাকে লালন-পালন করিয়াছেন
শৈশবকালে” (সুরা বনি ইসরাইল, ২৩-২৪)।
আল্লাহ আরও বলেন, “আমি মানুষকে তাহার মাতা-পিতা সম্বন্ধে নির্দেশ
দিয়াছি, তাহার মাতা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করিয়া তাহাকে গর্ভে ধারণ করিয়াছে এবং তাহার
দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে, যেন তুমি শোকর কর আমার” (সুরা লোকমান-১৪)।
অন্য এক আয়াতে আছে, “আর তোমরা আল্লাহতায়ালারই এবাদত কর, এবং তাঁহার
সহিত কাহাকেও শরিক করিও না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করিও” (সুরা-নিসা-৩৬)।
পিতা-মাতার অধিকার সম্পর্কে হাদিসেও বহু জায়গায় বর্ণনা এসেছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“তিন ব্যক্তির দোয়া অবশ্যই কবুল হয়; এতে কোনো সন্দেহ নেই। এক, মা-বাবার দোয়া তাঁর সন্তানের
জন্য; দুই, মুসাফিরের দোয়া ও তিন, অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া অত্যাচারীর বিরুদ্ধে”
(আবু দাউদ)।
রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “মা-বাবাই হলো তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম”
(ইবনে মাজাহ-মিশকাত)।
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, “যখন কোনো অনুগত সন্তান নিজের মা-বাবার
দিকে অনুগ্রহের নজরে দেখে, আল্লাহ তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের
সাওয়াব দান করেন” (বায়হাকি-মিশকাত)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসুল
(সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রসুল! কে আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি
হকদার? তিনি বললেন তোমার মা; সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা; সে আবারও বলল,
তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে পুনরায় বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা
(বুখারি ও মুসলিম)।
একদিন হজরত মুয়াবিয়া ইবনে জাহিমা আসসালামি (রা.) রসুল (সা.)-এর
খেদমতে হাজির হয়ে বললেন, ‘ইয়া রসুলাল্লাহ! আমি জিহাদ করতে ইচ্ছুক। এ ব্যাপারে আপনার
পরামর্শ কী? জবাবে রসুল (সা.) বললেন, তোমার মা আছেন? তিনি বললেন, আছেন। রসুল (সা.)
ইরশাদ করেন, মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকো, কেননা তার পায়ের নিচেই জান্নাত।’
উপরোক্ত আয়াতগুলোতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আল্লাহর পরেই মা-বাবার
অধিকার।
রসুল (সা.)-এর জমানায় বিখ্যাত এক আশেকে রসুল ওয়াইস করনি (রা.) প্রিয়
নবীজির কাছে এই মর্মে খবর পাঠালেন, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ (সা.), আপনার সঙ্গে আমার দেখা করতে
মন চায়; কিন্তু আমার মা অসুস্থ। এখন আমি কী করতে পারি?’ নবীজি (সা.) উত্তর পাঠালেন,
‘আমার কাছে আসতে হবে না। আমার সাক্ষাতের চেয়ে তোমার মায়ের খেদমত করা বেশি জরুরি ও বেশি
ফজিলতের কাজ।’
মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব : সন্তানের সব সময় মনে রাখা উচিত, মায়ের
ত্যাগের কারণেই সে আজ সে এই সুন্দর পৃথিবীতে এসেছে। যদি সে মাকে ভুলে যায়, কষ্ট দেয়
বা অবহেলা করে- তাহলে সবই মিছে। সন্তানের পর্বত সমান সফলতা তখন মূল্যহীন। কিন্তু অতি
দুঃখের সঙ্গে লিখতে হচ্ছে, সেই মহান মায়ের প্রতি অনেক সন্তান আজকাল উদাসীন, অনেকে বেপরোয়া।
এমনও শোনা যায়, সন্তান তার মাকে প্রহার করছেন, ঘর থেকে বের করে দিচ্ছেন, জঙ্গলে মাকে
ফেলে এসেছেন, নিজে সুন্দর ঘরবাড়িতে বাস করে মাকে রেখেছেন রান্নাঘরে।
এমনও দেখা যায়, পিতা-মাতাকে সন্তান ঠিকমতো ভরণপোষণ দিচ্ছে না। তারা
বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের বৃদ্ধাশ্রম নামক কারাগারে পাঠিয়ে দিচ্ছে। অথচ স্ত্রী-সংসার
নিয়ে নিজেরা বেশ আরাম-আয়েশে থাকছে। তাদের পরিবারে বাবা-মা যেন বোঝা। যে সন্তানকে আদর
যত্ন দিয়ে মানুষ করলেন, সেই সন্তান কীভাবে তার মায়ের অবদানকে ভুলে যায়? নাড়িছেঁড়া ধন
একজন সন্তানের কাছ থেকে কোনোভাবেই এসব কাম্য নয়। এতে আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে; জমিন অভিশাপ
দেয়। নিশ্চয় কঠিন কেয়ামতের দিন সেই সন্তানকে আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কী উপায়
হবে সেদিন?
মা শ্রদ্ধার আধার, স্নেহের কান্ডারি। সব ধর্মেই মা আশীর্বাদস্বরূপ।
তাই সন্তানের সর্ব প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে মাকে শ্রদ্ধা করা, অন্তরের শ্রেষ্ঠতম আসনে তাঁকে
প্রতিষ্ঠা করা, ভক্তি ও শ্রদ্ধায় মাকে অভিষিক্ত করা। সন্তানের কাছে মা-ই হলেন জগতের
শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। তাই মায়ের সঙ্গে সর্বদা সম্মানজনক ও সহযোগিতামূলক ব্যবহার করতে হবে।
তাঁর সঙ্গে কখনো কর্কশ ভাষায় কথা বলা উচিত নয়। মায়ের অবাধ্যতা অমার্জনীয় অপরাধ। মায়ের
আদেশ পালন করা এবং তাঁর নির্দেশ মেনে চলা সন্তানের পবিত্র কর্তব্য। মায়ের ঋণ কোনো দিন
কখনো কোনোভাবেই শোধ করা যাবে না।
পৃথিবীর সবচেয়ে আপন হলো মা। তাই আসুন আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, আমরা আমাদের কোনো আচরণে যেন মাকে কষ্ট না দিই। যাদের মা এখনো বেঁচে আছেন, সেই মায়ের জন্য জীবনের সর্বোচ্চটাই করার চেষ্টা করি। মা-বাবার সেবা-যত্ন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত অর্জন করি। আল্লাহ আমাদের সবাইর পিতা-মাতাকে ভালো রাখুন। তাদের উত্তম সেবা করার তৌফিক দান করুন।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১১ মে, ২০২৪
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা হায়দার আকবর খান রনো না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন। শতভাগ বাম আদর্শে বিশ্বাসী একজন ব্যক্তি ছিলেন তিনি। আদর্শগতভাবে আমরা কখনোই এক আদর্শে বিশ্বাসী ছিলাম না। কিন্তু সেই ৬০ এর দশক থেকে রণ ভাইকে আমি চিনি। এবং ব্যক্তিগতভাবে তিনি আমার অগ্রজতুল্য।
বর্তমান যুগে বাম আদর্শের বা যেকোন আদর্শে শতভাগ বিশ্বাসী নির্ভেজাল লোক পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। সেখানে আপাদমস্তক একজন বাম আদর্শের ব্যক্তিত্বের উদহারণ ছিলেন রনো ভাই। তিনি যে লেখাগুলো লিখতেন তার অধিকাংশ লেখাগুলো আমি পড়েছি। তার বিশ্লেষণের ক্ষমতা, লেখার ধরণ প্রত্যেকটা জিনিসে বাম রাজনীতি এবং বাম আদর্শ ফুটে উঠতো।
তিনি এমন একটি সময় আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন যখন বাংলাদেশে বাম দল কবরে যাওয়ার পথে। অথচ আমাদের দেশে এখনই বামদলের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কেননা, চরম ডানপন্থি দলগুলো অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য তারা চ্যালেঞ্জ। আবার ডান দলগুলোর মধ্যে যাদের মডারেট ডান বলা যায়, তারাও আজ শক্তিহীন।
একমাত্র গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মধ্যম পন্থায় চলা আওয়ামী লীগ শক্তিশালী, আর মডারেট ডান হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিএনপির মতো যে দলগুলো আছে তারাও আজ নেই বললেই চলে। এমন একটা ক্রান্তিকাল যখন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষ একটি রাজনৈতিক দলকে সামনে নানা যারা চরম বামপন্থী বা চরম ডানপন্থী হবে না। ঠিক সেই সময় একজন আদর্শবান রনো ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। রনোভাইদের মতো যারা সত্যিকার বাম আদর্শে বিশ্বাস করতেন এমন ব্যক্তি বাস্তব ক্ষেত্রে খুঁজে পাওয়া যায় না। রনো ভাই ছিলেন রাজনৈতিক লড়াকু সৈনিক এবং পদ পদবীর কোন লোভ তার মধ্যে ছিল না। সবসময় আত্ম প্রচার থেকে দূরে থাকতেন তিনি। এমন একজন ব্যক্তির চলে যাওয়া মানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন আদর্শবান বাম সৈনিকের চলে যাওয়া।
যারা বাম আদর্শে বিশ্বাস করেন তাদেরকে আমি বলবো, আপনারা রনো ভাইয়ের বিকল্প হতে পারবেন না, কিন্তু সকলে আপনারা এক হয়ে, রনো ভাইয়ের মতো আদর্শিক হয়ে এখনই যদি বাম দলকে সংগঠিত না করেন তাহলে আওয়ামী লীগের বিকল্প হবে তালেবানরা। এখন আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আওয়ামী লীগকে কি তালেবানের সাথে যুদ্ধে নামাবেন নাকি দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য নিজ দায়িত্বে বাম দলকে সুসংগঠিত করবেন।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১১ মে, ২০২৪
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চতুর্থ মেয়াদের ক্ষমতার চার মাস পার করে দিয়েছেন। অনেকের ভেতরে আলাপ-আলোচনা শোনা যায় যে, বিশেষ করে যারা বেতনভোগী বুদ্ধিজীবী, বাইরের অনেক পত্রপত্রিকায় যারা লেখালেখি করেন তারা একটি প্রশ্ন তোলেন যে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আসলে এ বিষয়টি নিয়ে খুব বস্তুনিষ্ঠ এবং নির্মোহভাবে কোনো আলাপ-আলোচনা হয় না। আমি এ বিষয়টির কিছু ভাবনা প্রকাশ করতে চাই।
কদিন আগে স্টিভেন লেফেস্কি এবং ডেনিয়েল জিব্লাটের লেখা ‘হাউ ডেমোক্রেসি ডাই’ বইটি পড়ছিলাম। বইটি আমেরিকা থেকে প্রকাশিত এবং দেশে দেশে বহুল পঠিত। ২০১৮ সালে প্রকাশিত বইটি বেস্ট সেলার হিসেবেও বিবেচিত হয়েছে। কীভাবে ধীরে ধীরে গণতন্ত্র ক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে এবং দেশে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, সে বিষয়ে বইটির ২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে।
প্রথমেই যেটি বলা হয়েছে তা হলো, সংবিধানকে গণতন্ত্রবিরোধী সরকার মানে না সংবিধানকে কীভাবে দূরে সরিয়ে দেশ শাসন করা যায়, সেই চেষ্টা করে।
বাংলাদেশে নিয়মিত নির্বাচন হওয়ার ফলে সংবিধানবহির্ভূত ঘটনা শেখ হাসিনার শাসনামলে ঘটেনি। বলা যায় ১৯৮১ সালের ১৭ মে যেদিন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব নেন, সেদিনই কিন্তু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সূচনা শুরু হয়। সেদিনকে বলা চলে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শুভ যাত্রার দিন’। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, এ গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য তিনি দেশে এসেছেন এবং সর্বশেষ তিনিই গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছেন। তার আশার পরেই কারফিউ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন সামরিক একনায়ক জিয়া।
আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচন বর্জন বিএনপি কফিনের শেষ পেরেক
গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য যেসব কাজ করা হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচনকে যে কোনো প্রকারে বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা অনেক কঠিন অবস্থার মধ্যে থেকেও নিয়মিত নির্বাচন করে চলেছেন। একনায়কতন্ত্র যে গণতন্ত্রকে দুর্বল করে তার কোনো চিহ্ন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার মধ্যে নেই। বিরোধী দল যত গণতন্ত্র ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করেছেন, শেখ হাসিনা ততই গণতন্ত্র সুরক্ষার চেষ্টা করেছেন।
বইটিতে বলা হয়েছে, এসব একনায়ক সরকার কিছু কিছু সংগঠনকে বন্ধ করে দেয়। যেমন—মানবাধিকার কমিশন। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এ মানবাধিকারকে আরও উজ্জীবিত করেছেন। স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন তারই সৃষ্টি। এ ছাড়া এসব একনায়ক রাজনৈতিক দলকে বন্ধ করে দেয়। কিন্তু দেখা যায় দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলকে বন্ধ করেননি। বরং রাজনৈতিক দলগুলোকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।
বইটিতে আরেকটি বিষয়ে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয় আর তা হচ্ছে, সরকার দুর্বল হতে থাকলে এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সামরিক গোষ্ঠী ক্ষমতা দখল করে এবং সংবিধানকে বাতিল করে অথবা স্থগিত করে দেশ চালায়। সে হিসেবে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটা খুব সুশৃঙ্খল, শক্তিশালী এবং পেশাদার সামরিক বাহিনী গড়ে তুলেছেন। এখানে কোনো ধরনের নৈরাজ্য দেখা যাচ্ছে না, আজ পর্যন্ত ঘটেনি এবং ঘটারও সম্ভাবনা নেই। সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদ সংযোজন শেখ হাসিনার আরেকটি অসাধারণ উদ্যোগ। এটি গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। এর ফলে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয়েছে।
আরও পড়ুন: বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ
এ বইয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে তা হলো, যে কোনো নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে হৈচৈ হয়। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে আমাদের দেশে হৈচৈ হলেও সর্বশেষ নির্বাচনে এটি প্রমাণ হয় সবাই এ নির্বাচন গ্রহণ করে নিয়েছে। যারা বলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র দুর্বল হচ্ছে তাদের জন্য এ উদাহরণগুলো দিয়ে বলা যায় দুর্বল নয় বরং বাংলাদেশে দিন দিন গণতন্ত্র শক্তিশালী হচ্ছে। বলা যায়, দেশ এখন শুধু উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে। নির্বাচনে দেওয়া ইশতেহারগুলো সরকার পূরণ করে চলেছে। মানুষের যে মৌলিক অধিকার তা পূরণ করা হচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীনদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, পথশিশু এবং বস্তিবাসীর জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষকে করা হচ্ছে আত্মনির্ভর। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবার জন্য প্রতি ছয় হাজার জনগণের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তুলেছেন। আর এ কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ গত বছর ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত প্রচার করে তারাই মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা। তারাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার কোথায় কোথায় লঙ্ঘন হচ্ছে তার সূচক দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সূচক নেই। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে যে, গাজাতে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম অত্যাচার। আর এতে ইসরায়েলকে অস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে তারা। এ বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন তুঙ্গে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা এভাবেই প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু এবার যুক্তরাষ্ট্র এ আন্দোলনের বিষয়টি অন্যভাবে দমন করছে। শিক্ষার্থীদের অমানবিক কায়দায় নিপীড়ন করা হচ্ছে।
আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ এবং র্যাবের প্রতি আমার একটি আবেদন থাকবে, তারা যেন আন্দোলন দমনে যুক্তরাষ্ট্রের এ স্টাইল অনুসরণ না করে। কেননা তাদের এ স্টাইল যদি আমরা ফলো করি তাহলে আমাদের গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাবে। সুতরাং আমরা যারা সাধারণ জনগণ, আমরা আপনাদের প্রতি অত্যন্ত বিশ্বাসী এবং আপনাদের কাছে শ্রদ্ধায় মাথানত করি। আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য, আমাদের সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য অনেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য জীবন দিচ্ছেন। আমি জানি যে, আপনাদের জীবন অমূল্য, অনেকে এর জন্য তাদের সংসার ত্যাগ করছেন। আপনাদের প্রতি সহানুভূতি জানানোর দায়িত্ব হয়তো আমাদের নেই, কিন্তু দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আপনাদের দেখছেন। তাই কষ্ট হলেও আপনারা আপনাদের পথে থাকেন।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, আগামী ১০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র থাকবে কি না, তা নিয়ে ভাবনা হচ্ছে অনেকের। তাই বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে গণতন্ত্র শিখতে হবে না। আমরা তাদের কিছুতেই অনুসরণ করতে পারি না এবং অনুসরণ করে আমাদের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে পারি না। সুতরাং এ দেশে গণতন্ত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে এবং আমার বিশ্বাস গণতন্ত্রে আমরা বিশ্বে মডেল হব। যেমনটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ভ্যাক্সিনেশনে আমরা মডেল হয়েছি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়েও বিশ্বে মডেল হবেন। এজন্য আমাদের কাউকে অনুসরণ করার প্রয়োজন নেই।
লেখক: সভাপতি, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী গণতন্ত্র মানবাধিকার কমিউনিটি ক্লিনিক দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১১:১১ পিএম, ০৮ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ০৫ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
একটা গল্প দিয়ে শুরু করছি। এক প্রেমিকা তার প্রেমিককে পরীক্ষা করার জন্য বলল, তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে চাই আমি! প্রেমিক বলল, কী পরীক্ষা নেবে? সব পরীক্ষার জন্য আমি প্রস্তুত। প্রেমিকা বলল, তোমার মায়ের হৃৎপিণ্ডটা নিয়ে আসো। প্রেমে অন্ধ ছেলেটি ছুটল মায়ের কাছে! মাকে হত্যা করে তার হৃৎপিন্ড নিয়ে ছুটল প্রেমিকার কাছে, ভালোবাসার পরীক্ষায় পাস করতে। পথে হঠাৎ আছড়ে পড়ল, আর হাত থেকে ফসকে গেল মায়ের হৃৎপিন্ডটা। হাতে তুলে নিতেই হৃৎপিন্ড থেকে আওয়াজ এলো, “ব্যথা পেলি খোকা? তুই তো খুব পিপাসার্ত, ক্লান্ত। আমি যে দাঁড়াতে পারছি না, তোকে কীভাবে পানি পান করাব বাবা”। এরই নাম মা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চতুর্থ মেয়াদের ক্ষমতার চার মাস পার করে দিয়েছেন। অনেকের ভেতরে আলাপ-আলোচনা শোনা যায় যে, বিশেষ করে যারা বেতনভোগী বুদ্ধিজীবী, বাইরের অনেক পত্রপত্রিকায় যারা লেখালেখি করেন তারা একটি প্রশ্ন তোলেন যে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আসলে এ বিষয়টি নিয়ে খুব বস্তুনিষ্ঠ এবং নির্মোহভাবে কোনো আলাপ-আলোচনা হয় না। আমি এ বিষয়টির কিছু ভাবনা প্রকাশ করতে চাই।
আজকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেভাবে হয় তার সামান্যতম কোন ব্যতিক্রম হয়নি। ভোটাররা উৎসাহ নিয়ে ভোট দিয়েছে। কোথাও কোথাও অনেক ভোটার আছেন যারা মনে করেন যে, অমুকে তো অনেকে জনপ্রিয় প্রার্থী, তিনিই বিজয়ী হবেন। আমার ভোট না দিলেও হবে। এ রকম মনোভাব নিয়ে অনেকে ভোট দেয়নি। আর কিছু জায়গা আছে ছোট খাটো মারামারি হয়েছে। যা এদেশের স্থানীয় নির্বাচনের চরিত্র।
মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের বাড়ি বিনা টাকায় বিক্রি করার জন্য কর্তৃপক্ষ আগ্রহী প্রার্থী পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মনে হলো যে, আমাদের একজন ভালো খরিদ্দার আছে এবং তার কাছে এই গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি করলে গোয়েবেলসের আদর্শটাও বেঁচে থাকবে এবং কর্তৃপক্ষেরও উপকার হবে। আর এ খরিদ্দার হচ্ছে বিএনপি এবং এবং লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বাড়িটি কিনতে পারেন। তিনি হচ্ছেন গোয়েবেলসের এই বাড়ির যোগ্য ব্যক্তি। কারণ তিনি গোয়েবেলসের ভাবশিষ্য।