নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২৪ জুলাই, ২০২১
দীর্ঘদিন পর বিএনপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করলেন বেগম খালেদা জিয়া। দেখায় অবশ্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে বেশ দূরেই ছিলেন স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে কয়েকজন ঈদের দিন রাতে ফিরোজায় গিয়েছিলেন বেগম জিয়া`র সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে একজন বলেছেন যে, এই বৈঠকটি ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎ, ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা। কিন্তু সৌজন্য সাক্ষাৎ হলে কি হবে এই বৈঠকে বেগম জিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা বলেছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। তার মূল বিষয় ছিল যে, তিনি মাঝে মাঝে একটা দুইটা বিষয়ে বিবৃতি দিতে পারেন কিনা। খালেদা জিয়া বিদেশ যাওয়ার চিন্তাভাবনা কি ইত্যাদিও জানতে চেয়েছেন নেতারা। বেগম খালেদা জিয়া এমনিতেই কম কথা বলেন কিন্তু সেদিন আরো কথা বলেননি শুধু রহস্যময় হাসি হেসেছেন।
বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন এরকম একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া সঙ্গে আমরা শুধু কুশল বিনিময় করেছি। তিনি সবাইকে জিজ্ঞেস করেছেন কেমন আছেন? এর বাইরে কোনো বিষয় নিয়েই তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। বিএনপি`র ওই নেতা বলেন, আমরাই উপযাচক হয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে বেগম খালেদা জিয়া শুধু রহস্যময় হাসি হেসেছেন, কোনো কথা বলেননি। বেগম খালেদা জিয়ার কাছে যে সমস্ত বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলেন বিএনপি নেতাদের মধ্যে তার মধ্যে, প্রথম বেগম খালেদা জিয়ার শরীর কেমন আছে এর উত্তরে বেগম খালেদা জিয়া মাথা নেড়ে হেসেছেন। দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল যে, তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান কিনা? এজন্য বিএনপি`র কিছু করণীয় আছে কিনা। বেগম খালেদা জিয়া এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি। বরং তিনি মাথা নেড়ে হেসেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার কাছে তৃতীয় প্রশ্ন ছিল যে, কোনো কোনাে বিষয়ে তিনি কিছু কিছু বিবৃতি দিতে পারেন কিনা। তিনি চাইলে তার পক্ষ থেকে দলের দপ্তর থেকে এ ধরনের বিবৃতিগুলো দেওয়া যেতে পারে।
বিশেষ দিবসে যেমন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদের শুভেচ্ছা বাণী ইত্যাদি দিতে সমস্যা আছে কিনা এবং বেগম খালেদা জিয়ার সম্মতি আছে কিনা। এই এরকম বিবৃতিগুলো দেয়া প্রয়োজন বলেও বিএনপি`র দুইজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম খালেদা জিয়ার কাছে বলেছেন। কিন্তু এর জবাবে বেগম খালেদা জিয়া কিছুই বলেননি। বেগম খালেদা জিয়া শুধু মৃদু হেসেছেন। ভবিষ্যতে বিএনপি কি করবে এবং বিএনপি কি আন্দোলনে যাবে কিনা বড় ধরনের। এরকম বিষয় নিয়েও বেগম খালেদা জিয়ার মতামত চাওয়া হয়েছিল ওই সৌজন্য সাক্ষাতে। কিন্তু সে ব্যাপারেও বেগম খালেদা জিয়া কোনো মুখ খোলেননি। বরং তিনি শুধু মৃদি হেসেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, তিনি কি রাষ্ট্রপতির কাছে দণ্ড মওকুফের কোনো চিন্তা-ভাবনা করছেন কিনা। সেটারও উত্তর বেগম খালেদা জিয়া দেননি। তার এই রহস্যময় হাসি এবং নীরবতা বিএনপিকে বিব্রত করেছে এবং বিএনপি নেতৃবৃন্দ মনে করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার এই রহস্যময় হাসি বিএনপিকে আরও দুর্বল করে তুলবে।
এমনিতেই বেগম খালেদা জিয়া গত বছরের ২৪ মার্চ থেকে মুক্ত অবস্থায় আছেন। এই মুক্ত অবস্থায় থাকার পরও তিনি কোনো বিষয়ে কোনো মন্তব্য, বক্তব্য, বিবৃতি দিচ্ছেন না। যেহেতু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া আসলে মুক্ত নন। তিনি শুধু কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফিরোজা এসে আছেন। এক রকম বন্দী জীবনযাপন করছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠলো বেগম খালেদা জিয়া যদি বন্দীই থাকবেন তাহলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা কিভাবে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। ঈদের দিন বেগম খালেদা জিয়া তার লন্ডন প্রবাসী পুত্র তারেক জিয়ার সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন, নাতি-নাতনীদের সাথে কথা বলেছেন। কথা বলেছেন কোকোর স্ত্রী এবং পুত্রের সঙ্গেও। আর এরকম একটি পরিস্থিতিতে বেগম খালেদা জিয়ার হাসি বিএনপিকে এক অজানা শঙ্কায় নিয়ে গেছে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রথম দফায় ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। যথারীতি বিরোধী দল বিহীন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় জয়কার। আওয়ামী লীগের নেতারাই অধিকাংশ উপজেলায় নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু তারপরেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সন্তুষ্টি নেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি এবং শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিরক্তি কাজ করছে।
নানা কারণে উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক ফলাফল আনতে পারেনি বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে উদ্বিগ্ন এবং দল ও গণতন্ত্রের জন্য সামনের দিনগুলোতে আরও সংকট অপেক্ষা করছে বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সামনে পাঁচটি সংকটকে উন্মোচন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে-
১. ভোটার উপস্থিতি কম: উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার এবার সর্বনিম্ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যতগুলো উপজেলা নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে এবার ভোট পড়েছে সবচেয়ে কম। ২০০৮ এর ভূমিধস বিজয়ের পর প্রথম আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হয় ২০০৯ সালে। সেই উপজেলা নির্বাচনে ৬৮ ভাগের বেশি ভোট পড়েছিল। দ্বিতীয় দফায় ৬১ ভাগ ভোটার উপজেলা নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। ২০১৯ সালে এই হার ছিল ৪০ শতাংশের বেশি।
কিন্তু এবার নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ ভোটার উপজেলা নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। এটি কখনোই স্বস্তি দেওয়ার খবর নয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাধারণত ভোটাররা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দেয়। কিন্তু এবার উপজেলা নির্বাচনে ভোটাররা উৎসাহ নেয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগের যে রিজার্ভ সমর্থক বলে যারা পরিচিত সেই ভোটাররাও ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত ছিল না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নেতা কর্মীদেরকে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা, তারা যেন ভোটকেন্দ্রে যায় সে জন্য উৎসাহিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশ মাঠে প্রতিফলিত হয়নি। ভোটার উপস্থিতি কম থাকার ফলে আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তির কারণ।
২. অভ্যন্তরীণ কোন্দল: আওয়ামী লীগের জন্য এই নির্বাচন ছিল অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানোর মাধ্যম। এ কারণেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, দলীয় প্রতীক উপজেলা নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে না। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আশা করেছিলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের যে কোন্দল এবং বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিয়েছিল তার কিছুটা হলেও অবসান ঘটবে।
কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগকে আরও বিভক্ত করেছে। বিশেষ করে যে সমস্ত স্থানে স্বতন্ত্রদের সাথে আওয়ামী লীগের বিরোধ ছিল, সেই বিরোধে গুলো আরও সহিংস রূপ নিয়েছে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি অশনী সংকেত।
৩. কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করার প্রবণতা: আওয়ামী লীগের জন্য উপজেলা নির্বাচনে একটি বড় অস্বস্তির বিষয় ছিল কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করা। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ মাঠে প্রতিফলিত হয়নি। দু একজন মন্ত্রী-এমপি ছাড়া অধিকাংশই তাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন এবং প্রভাব বিস্তার করে জিতিয়ে এনেছেন। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি সতর্কবার্তা। কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করার এই প্রবণতা যদি বাড়তে থাকে সেটি ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের জন্য একটি খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।
৪. এলাকায় এলাকায় জমিদারতন্ত্র-পরিবারতন্ত্র কায়েম: এবার উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিরা তাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে মনোনয়ন দিয়েছেন, তারা এলাকায় এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করছেন। এর ফলে বিভিন্ন এলাকায় একটি গোষ্ঠীতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র বা জমিদারতন্ত্র কায়েম হচ্ছে। এটিও আওয়ামী লীগের জন্য একটি খারাপ সংবাদ বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
৫. অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনে অনীহা: আওয়ামী লিগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার নেতাকর্মীদেরকে বলেছিলেন যে- অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু দেখা গেছে, নির্বাচনে যারা শক্তিশালী প্রার্থী হয়েছেন তারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন। পেশিশক্তির প্রয়োগ ঘটিয়েছেন, কালো টাকা ছড়িয়েছেন। আর এগুলো আওয়ামী লীগের ইমেজ নষ্ট করেছে এবং জনগণের কাছে ভুল বার্তা দিয়েছে। এই সমস্ত অস্বস্তিগুলো উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। এখন ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ কীভাবে এই সংকটগুলো কাটিয়ে উঠবে, সেটাই দেখার বিষয়।
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক উপজেলা নির্বাচন নোয়াখালী একরামুল করিম চৌধুরী
মন্তব্য করুন
প্রথম দফায় ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। যথারীতি বিরোধী দল বিহীন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় জয়কার। আওয়ামী লীগের নেতারাই অধিকাংশ উপজেলায় নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু তারপরেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সন্তুষ্টি নেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি এবং শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিরক্তি কাজ করছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তিনি। অত্যন্ত ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদ। টানা তিন বার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরেই আওয়ামী লীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মনে করা হয় ওবায়দুল কাদেরকে। কিন্তু তিনি এখন তাঁর এলাকায় পরবাসী হয়ে গেলেন। এলাকায় তার কর্তৃত্ব নড়বড়ে হয়ে গেল। নিজ এলাকায় তিনি এখন আগন্তুক এবং অপাংক্তেয় হয়ে যেতে পারে বলেও মনে করছেন এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।