ইনসাইড থট

দয়া করে অ-কার্যকর লকডাউনের নীতি আর নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ০৩ অগাস্ট, ২০২১


Thumbnail

আমি নিয়মিত ল্যানসেট এবং দ্য নেচার সহ পিয়ার রিভিউ জার্নালে প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক নিবন্ধগুলি পড়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংবাদপত্র, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ, রেকর্ডকৃত বাংলাদেশ টিভি সংবাদ এবং টক শো পড়ি এবং দেখি। বাংলাদেশের সংবাদপত্রে ইদানিং কালের প্রকাশিত কিছু নিবন্ধ আমাকে এই সংক্ষিপ্ত মতামত লিখতে আগ্রহী করেছে। অন্যদিন আমি প্রথম আলোর আনিসুল হকের একটি লেখা “কোরনা পরিস্তিতি নিয়ে আশার গল্প, শিক্ষার গল্প” পড়লাম এবং একই কাগজে লেখা “যেভাবে করোনা সংক্রমণ কমিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ” আনোয়ার হোসেনের লেখা এবং “এই সব ‘লকডাউনের’ অর্থ কী?” এ কে এম জাকারিয়ার লেখা আর “ এখন বিধিনিষেদ সফল হওয়া সম্ভব নয়” ডা: সৈয়দ আবদুল হামিদের সাক্ষাৎকার পড়লাম। মি: জাকারিয়া তার প্রবন্ধটিতে “আল্লার কসম গেটলক সিটিং সার্ভিস” লেখাটি পড়ে আমারও ভালো লেগেছে। যা আমরা আমাদের বাংলাদেশে লকডাউনের তৃতীয় সংস্করণের সাথে তুলনা করতে পারি, এবং আমরা বলতে পারি “আল্লার কসম এইবার এটি সবচেয়ে কঠোর লকডাউন”। আমি বাংলা ইনসাইডারে লেখা “কাল থেকে আবার হ-য-ব-র-ল লকডাউন” এবং বিডি নিউজ ২৪ বা জনকন্ঠ বা বাংলাদেশের প্রতিদিন পড়েছি এবং সময় বা ৭১ টিভির সংবাদ দেখেছি। সমস্ত কাগজপত্র এবং টিভি সাধারণ জনগণকে সময়মত সঠিক তথ্য জানানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। মাঝে মাঝে মনে হয় কেউ কেউ আবার আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। যেমন তানজিল রিমন priyo.com এর প্রবন্ধ “ভয়াবহ পরিবেশের দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ?” পড়ে তাই মনে হতে পারে। আমি পড়লাম প্রয়োগযোগ্য বা কার্যকরী কোনো প্রমাণ না দেখিয়ে তথাকথিত “আল্লার কসম লকডাউন” এর মেয়াদ আবার বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে ডিজিএইচএস!
 
আসুন এটি সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার জার্নালটিতে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে (১৬ই নভেম্বর ২০২০) ২২৬ দেশের ৬০৬৮টি পৃথক অ-ফার্মাসিউটিক্যাল হস্তক্ষেপের (Non Pharmaceutical Intervention, NPI এনপিআই) যেমন লক লকডাউন, মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, স্কুল বন্ধ, ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ পরিবর্তনের সামাজিক যোগাযোগ ইত্যাদির কার্যকারিতা মূল্যায়ন। পূর্বের জাতীয় লকডাউনের কার্যকারিতা সম্পর্কে পরিসংখ্যানগত গবেষণাগুলি মিশ্র সিদ্ধান্তে এসেছিল সেই মুল্যায়নে। জাতীয় লকডাউন একাধিক এনপিআইকে অন্তর্ভুক্ত করে (উদাহরণস্বরূপ, স্থল, সমুদ্র ও আকাশ সীমানা বন্ধ করা, স্কুল বন্ধ করা, অপরিহার্য দোকানপাট বন্ধ করা, ঘরের বাহিরে মানব চলাচল এবং যে কোন জমায়েত নিষিদ্ধ করা এবং নার্সিং হোম পরিদর্শন নিষিদ্ধ করা, অফিস আদালত এবং ব্যবসার শিল্পগুলো বন্ধ করা) যা ভিন্ন দেশগুলিতে ভিন্ন ভাবে ইতিমধ্যে কিছু অংশে গৃহীত হয়েছে। বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন জাতীয় লকডাউন জারি করেছে। কিছু দেশ কঠোর ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে, সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছে এবং কিছু দেশ লকডাউনের উপাদান বা লকডাউনের ছোট প্যাকেজ ব্যবহার করেছে। এই উপসংহারটি একটি প্রাথমিক ভাবে দেওয়া জাতীয় লকডাউনের কার্যকারিতা উড়িয়ে দেয় না (যা বাংলাদেশ ২০২০ সালের মার্চ মাসে কিছুটা সফলভাবে এবং সঠিকভাবে আরোপিত হয়েছিল) কিন্তু পরামর্শ দেয় যে এই ধরনের ব্যবস্থাগুলির ছোট প্যাকেজের একটি উপযুক্ত সংমিশ্রণ (ক্রম এবং বাস্তবায়নের সময়) কার্যকারিতার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ লকডাউনের বিকল্প হতে পারে যা সমাজ, অর্থনীতি, মানবিক প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা এবং পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে না। দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য সফল সরকারি খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি এবং অন্যান্য আর্থিক সহায়তাও অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। অতএব, এই ধরনের ব্যবস্থাগুলি কেবল আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রেই প্রভাবিত করে না বরং জনস্বাস্থ্যেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, সব শ্রেণীর মানুষের কোভিড পরীক্ষা করা সহজতর করা বা কোভিড রোগের কারনে স্ব-বিচ্ছিন্ন করার সময় তাদের চাকরি হারানোর ভয় বা বেতনের কিছু ভাগ না পাওয়ার ভয় দুর করার ফলে জনগনের সহযোগিতা বৃদ্ধি করে কোভিড সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করতে পারে। স্বতন্ত্র এনপিআইগুলির কার্যকারিতা ক্ষমতায় থাকা সরকারের দক্ষতা ও কার্যকারিতা এবং স্থানীয় প্রেক্ষাপট দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। এই স্থানীয় প্রেক্ষাপট গুলো হল মহামারীর পর্যায়, আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, এবং রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য এবং অন্তর্ভুক্ত পূর্বে বাস্তবায়িত অন্যান্য এনপিআই কার্যকারিতার এবং বজায় রাখার সক্ষমতার অতীত ইতিহাস। সবচেয়ে কার্যকরী ব্যবস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে বেশিরভাগ জনসমাবেশের জায়গা বন্ধ করা এবং সীমাবদ্ধ করা যেখানে মানুষ ছোট বা বড় সংখ্যায় বেশি সময় ধরে জড়ো হয় (বার, স্কুল, অভ্যন্তরীণ বা বহিরঙ্গন রাজনৈতিক বা ধর্মীয় সমাবেশ, পারিবারিক বা ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান ইত্যাদি)। স্থল সীমান্তের বিধিনিষেধ আরোপ করা, দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সরকারি সহায়তা এবং ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ পরিবর্তনের সামাজিক যোগাযোগ জনসাধারণকে স্বাস্থ্য পরামর্শ মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। এই ব্যবস্থাগুলি ব্যক্তি এবং পারিবারিক জীবনে কম অনুপ্রবেশকারী এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে খুব বেশী প্রভাবিত করে না। কম কঠোর ব্যবস্থাগুলি জনসংখ্যার কাছ থেকে আরও ভাল সম্মতি জোগাতে পারে এবং জনসাধারণ তা মেনে চলতে আগ্রহি হতে পারে। সংক্ষেপে, স্থানীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সম্পূর্ণ কঠোর লকডাউন কার্যকর বা পরামর্শযোগ্য নয়। মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব, সামাজিক নিরাপত্তা জাল নিশ্চিত করার সাথে সাথে অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত গনজমায়েতে নিষেধাজ্ঞার মতো কিছু সাধারণত বাস্তবায়নযোগ্য অ-ফার্মাসিউটিক্যাল হস্তক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত করুন যা জনসংখ্যার বেশিরভাগ দ্বারা কার্যকর এবং গ্রহণযোগ্য।
 
বাংলাদেশের স্থানীয় প্রেক্ষাপট মূল্যায়ন এবং বিবেচনা না করে যখন ডিজিএইচএস অ-প্রয়োগযোগ্য “আল্লার কসম” লোকডাউন আরও এক্সটেনশনের অনুরোধ করে, তখন আমি আরও অবাক হই।
 
আসুন আনসুল হক এবং আনোয়ার হোসেনের প্রবন্ধে ফিরে আসি যেখানে তারা পরোক্ষভাবে ভারত এবং চাঁপাই নোবাবগঞ্জে সংক্রমণ হ্রাস বা বন্ধ করতে লকডাউন সমর্থন করার চেষ্টা করছিল। এটা কি সত্যি?
 
বাংলাদেশের মতো, ভারতে সবচেয়ে কঠোর লকডাউনের পরে বিজয়ের আগাম ঘোষণা এবং পরবর্তীকালে বিশাল রাজনৈতিক সমাবেশ এবং গঙ্গায় বিশাল হিন্দু উৎসবের ফলে আমরা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর ব্যাপক বৃদ্ধি দেখতে শুরু করি। এই বিপর্যয় বন্ধ করতে তখন কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য কর্তৃপক্ষকে স্থানীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার দেয়। কিছু কিছু রাজ্য যখন দ্রুত কমিউনিটি ট্রান্সমিশন নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে তখন স্থানীয় লকডাউন আরোপ করে। কয়েক সপ্তাহ পরে আমরা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ধীরে ধীরে কম পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করি। কেন সংক্রমণ কমে আসলো, এটি লকডাউন বা অল্প কিছু লকডাউনের উপাদানগুলির জন্য যেমন সমস্ত অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত জমায়েত নিষিদ্ধ করা এবং সীমানা বন্ধ করা অথবা (যা আনসুল হক এবং আনোয়ার হোসেন উল্লেখ করেননি) ততক্ষণে জনসংখ্যার অধিকাংশ সংক্রামিত হয়েছে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে সে কারণেই। ICMR- এর সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যদিও টিকা কভারেজ এখনও খুব কম, তবুও ৬ বছরের উপরে বয়সের ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৭.৭% সংক্রমিত হয়েছে  এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে। ইদানিং কালের উচ্চ সংক্রমণের কারনে মাত্র কয়েক মাস আগের থেকে এটি নাটকীয় ভাবে বেড়েছে। ৮৫% স্বাস্থ্যকর্মীদের শরীর ইতিমধ্যে সংক্রমিত হওয়ার জ্ন্য অ্যান্টিবডি পাওয়া গিয়েছে। শিশুদের অর্ধেকেরও বেশি (৬ থেকে ১৭বছর বয়সী) সিরো-পজিটিভ হয়েছে। রোগ-বিস্তার গ্রামীণ এবং শহরাঞ্চলে একই রকম পাওয়া গিয়েছে। যদিও ৪০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এখনও ঝুঁকিপূর্ণ এবং সংক্রমণের মুখোমুখি। সুতরাং, আমাদের উপসংহারে যাওয়া উচিত নয় যে লকডাউন ভারতে সংক্রমণ কমিয়ে এনেছে।
 
চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিকে তাকানো যাক। ভারতে ২০২১ সালের এপ্রিলের শুরু থেকে, সংক্রামিত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ব্যাপক সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। ৫ই মে ভারতে সর্বাধিক সংখ্যক লোক ৪১২,৬১৪ জন কোভিড -১৯ এ সনাক্ত হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে ১৪ই মে সরকার সর্বাধিক সংখ্যক ৪৯৬৭ জনকে কোভিড -১৯ এর কারণে মারা গেছে বলে জানিয়েছে। চাপাইনবাবগঞ্জ একটি জেলা যেখানে প্রায় ২০০০০০০ বাসিন্দা বসবাস করে এবং ভারতের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত। মানুষ প্রতিদিন সীমাহীন সীমান্ত অতিক্রম করে। অনেক বাংলাদেশি ভারত থেকে ফিরে আসছিল। তবুও, আমরা এপ্রিল বা মে মাসের শুরুত স্থল সীমানা বন্ধ করিনি। ডেলটা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে এবং ২৫শে মে সময় টিভি সংবাদ অনুসারে পরীক্ষার জন্য আসা সকলের মধ্য ৬০% সংক্রমণের হার পাওয়া যায়। এর অর্থ ব্যাপকভাবে সংক্রমণ ইতিমধ্যে ভালভাবে শুরু হয়েছিল। ২৫শে মে যখন সীমান্ত বন্ধ করা এবং লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল সেই সময়কালে এবং পরের সপ্তাহ ধরে ব্যাপক সংক্রমণ চলছিল এবং সংক্রমণ কমানোর সেসময়ের লকডাউন তখন খুব কার্যকর কৌশল হতে পারে না। সুসংবাদ হল ১২ জুলাই পরীক্ষার জন্য যারা এসেছিল তাদের মধ্যে সংক্রমণের হার ১২% এ নেমে এসেছিল। প্রশ্ন হল এটাকি লকডাউনের কারণে হয়েছে? অথবা গণসমাবেশ বন্ধ করা বা সংখ্যাগরিষ্ঠ ইতিমধ্যে সংক্রমিত হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে তার কারনে হয়েছে? সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া আসুন পরম কোন সিদ্ধান্তে না আসি। আমরা স্থানীয় এপিডেমিওলজির উপর ভিত্তি করে পরামর্শ দিয়েছিলাম, সময়মতো এলাকাভিত্তিক লকডাউন যদি তাড়াতাড়ি করা হয় তাহলে হয়ত সেই কৌশল উপকারী হতে পারে। চাঁপাই নবাবগঞ্জে তা সময়মত করা হয়নি এবং ব্যাপক ক্ষতি ইতিমধ্যে ঘটেছে।
 
অন্যদিকে, সুইডেন যে দেশ লকডাউনের নিয়ম অনুসরণ করেনি এবং ব্যাপকভাবে লোকডাউন চাপেয়ে দেয়নি কিন্তু নির্ভরশীল বা নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের উপর নির্ভর করে স্বাস্থ্য পরামর্শ, মুখোশ, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, যতদূর সম্ভব বাড়ি থেকে কাজ করা সহ ৫০ জনের উপরের কোন সমাবেশ হতে দেয়নি। কঠোর লকডাউন আরোপ করতে অস্বীকার করার জন্য মিডিয়া কর্তৃক নিন্দিত হলেও সুইডেনের সম্পূর্ণ লকডাউন না দেওয়া, স্বাস্থ্য সংকটের কম অনুপ্রবেশমূলক পন্থা অবলম্বন করা ফল দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। হ্যাঁ, সুইডেনে অন্যান্য নর্ডিক দেশের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি মৃত্যু এবং সংক্রমণ ছিল এবং ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল। ৩১শে জুলাইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী কোভিডের কারণে মৃত্যু এখন শূন্য বা শূন্যের কাছাকাছি ঘুরছে। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) থেকে সদ্য প্রকাশিত তথ্য যা ডেল্টা স্ট্রেনকে আরও সংক্রমণযোগ্য এবং সম্ভাব্যভাবে আরও গুরুতর অসুস্থতার কারণ হতে পারে বলে প্রকাশ করে। প্রতিক্রিয়ায় মন্তব্য প্রকাশ করে সুইডেনের প্রধান মহামারী বিশেষজ্ঞ অ্যান্ডার্স টেগনেল শুক্রবার বলেছিলেন যে ডেল্টা সম্পর্কে "আমরা অনেক কিছুই জানি না" এবং করোনাভাইরাস এই স্ট্রেন সম্পর্কে "সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত" আঁকার ধারন করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেন। তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে ডেলটা বৈচিত্রটি সুইডেনে "বেশ কিছু সময়ের জন্য" প্রচলিত ছিল, কিন্তু তা সুইডেনে সামান্য প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে নার্সিং হোমের মতো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে।
 
কিছু বিশেষজ্ঞ পোশাক কারখানা, অন্যান্য রপ্তানিমুখী শিল্প খোলার বিপক্ষে। আমি জানতে চাই যে তারা কোন প্রমাণের ভিত্তিতে এটা বলছে? আমি কোনও গবেষণার ফলাফল বা প্রমাণ দেখিনি যা প্রমান করে যে সেই শিল্পগুলি সংক্রমণের হটস্পট এবং বিপুল সংখ্যক শ্রমিক সংক্রামিত হয়েছে এবং সংক্রমণের উচ্চ সংখ্যার কারণে কিছু শিল্পের বন্ধ হওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প ছিল না। ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বলেন “বিধিনিষেধের সফলতা নির্ভর করে স্থান, কাল ও পাত্রের ওপর। উন্নত বিশ্বের সমাজ-সংস্কৃতিতে বিধিনিষেধ সফল করা অনেক সহজ। যেমন ধরুন পাব, নাইট ক্লাব ও পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখলেই বিধিনিষেধ অনেকটা সফল হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা তো ভিন্ন। আর এটা না বুঝে বিধিনিষেধ দিলে তা তো সফল হওয়ার কথা নয়। আগেও বলেছি, দীর্ঘ মেয়াদে বিধিনিষেধ সফল করার সক্ষমতা সাধারণ মানুষ কিংবা বড়-ছোট কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেরই নেই। তৈরি পোশাকশিল্পসহ রপ্তানিমুখী খাত তো আরও স্পর্শকাতর, কেননা একবার বাজার হারালে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে তা ফিরে পাওয়া খুবই কঠিন। প্রথম দিকে অনেক দেশ বিধিনিষেধের মাধ্যমে সংক্রমণের বিস্তার রোধ করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতায় আমরা দেখতে পাচ্ছি, এখন বিধিনিষেধ সফল হওয়া সম্ভব নয়। তাহলে কেন বিধিনিষেধকেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের একমাত্র হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার পরামর্শ দেব?” গত কয়েক মাস ধরে ঐ কথাগুলো আমি এবং বাংলাইনসাডার বার বার বলেছি, দুর্ভাগ্য আমরা মনে করি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা না তা শুনছেন বা কোন মুল্য দিচ্ছেন।
 
মনে হচ্ছে বিশেষজ্ঞরা কেবল আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারেন। আমার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে আমরা কোন পৃথিবীতে বাস করছি? আমরা জানি যদি পোশাক শিল্প খোলা হয়, তাহলে চাকরি হারানোর ভয়ে বা মালিকদের হুমকির কারণে শ্রমিকরা যেভাবেই হোক ফিরে আসবে। তাহলে, কেন সেই বিশেষজ্ঞরা এবং আমলারা ন্যূনতম বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করে, পোশাক কারখানা খোলার ঘোষণা দেয়ার আগে সমস্ত পরিবহনের মাধ্যমকে কাজ করার অনুমতি দিলেন না, যেমনটি গত ঈদের সময় শিথিল করা হয়েছিল! কেন আমরা আবার সর্বনাশ ঘটতে দিলাম! ডেল্টা সংক্রমণ ইংল্যান্ডে বিপর্যয় ঘটাচ্ছিল কিন্তু সবকিছু খোলার পরেও কেন সংক্রমণ নেমে আসছে? আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। প্রাথমিক লকডাউনটি হয়তো কার্যকরী ছিল কিন্তু দু:খিত এটি আর কাজ করবে না, তবুও উচ্চস্বরের কিছু বিশেষজ্ঞরা এর জন্য চিৎকার করে বারবার চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। যান চলাচল বন্ধ করে রেখে পোশাক কারখানা খোলার ঘোষণা দিয়ে আবার, আমরা সুপার স্প্রেডার ইভেন্টটি হতে দিয়েছি, ক্ষতি হয়েছে। এটা আমাকে একটা কৌতুকের কথা মনে করিয়ে দেয়, “আপনি যখন ঘরের দরজা খোলা রেখে ঘুমাচ্ছেন চোর তখন আপনার ঘরে প্রবেশ করে ডাকাতি করছে, তখন তাহলে দরজা শক্ত করে লক করে কি লাভ”!! দয়া করে বিশাল ব্যাংক ব্যালেন্স নিয়ে এয়ারকন রুমে বসে অসম্ভবকে সম্ভব করার চেষ্টা করবেন না।
 
মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা; টেস্টিং এবং বিচ্ছিন্নতা সুবিধা (বিশেষ করে সমস্ত শিল্প এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে) প্রদান নিশ্চিত করার পাশাপাশি সমস্ত অভ্যন্তরীণ এবং বাইরে জনসমাগম নিষিদ্ধ করা; ভবিষ্যতে এখনও কিছু সময়ের জন্য ভারত এবং মিয়ানমার স্থল সীমানা কঠোরভাবে বন্ধ রাখা; উন্নত, এবং পর্যাপ্ত এবং মানসম্মত বাড়ি এবং হাসপাতালের যত্ন উন্নত করা; এবং কমিউনিটি ক্লিনিক, স্কুল, এবং শিল্প প্রাঙ্গন সহ সম্ভাব্য প্রতিটি পথ ব্যবহার করে দৈনিক টিকা দেওয়া মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এখন দরকার। দয়া করে আর স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করবেন না, যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে এটি খুলুন।
 
বাংলা ইনসাইডারে লেখা “অতিকথন আর সমন্বয়হীনতায় সমালোচিত সরকার” এবং “আর মানুষকে কষ্ট দেবেন না প্লিজ” প্রবন্ধ দুটি পড়ে সর্বশেষে বলতে চাই, এখন যখন আমাদের গর্বের সাথে বলা উচিত, খুনিরা আমাদের জাতির পিতাকে নির্মম ভাবে হত্যার পরও, যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সর্ব ক্ষেএে আমাদের অসাধারণ সাফল্য অনেক দেশকে ঈর্ষান্বিত করে। আমাদের এটা নিয়ে কথা বলা উচিত। কিন্তু স্বাস্থ্য নেতাদের চরম ব্যর্থতার কারণে, সমন্বয়ের ব্যর্থতা এবং কিছু সরকারী দলের নেতার আলগা কথা বলার কারণে সকল সেক্টরে আমাদের অসাধারণ সাফল্যগুলির কথা না বলে, তাদের ব্যর্থতার কথা উচ্চস্বরে বলে আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধের মানুষগুলো এটা উপভোগ করছে। এটা বন্ধ করতে হবে। সৌভাগ্যবশত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কারণে আমাদের এখন পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন রয়েছে এবং আমরা আর লকডাউন না দিয়ে, সর্বনিম্ন জীবন ও জীবিকার ক্ষতি স্বীকার করে এই মহামারীটি কাটিয়ে উঠব।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মা জীবনের প্রথম এবং বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক


Thumbnail

একটা গল্প দিয়ে শুরু করছি। এক প্রেমিকা তার প্রেমিককে পরীক্ষা করার জন্য বলল, তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে চাই আমি! প্রেমিক বলল, কী পরীক্ষা নেবে? সব পরীক্ষার জন্য আমি প্রস্তুত। প্রেমিকা বলল, তোমার মায়ের হৃৎপিণ্ডটা নিয়ে আসো। প্রেমে অন্ধ ছেলেটি ছুটল মায়ের কাছে! মাকে হত্যা করে তার হৃৎপিন্ড নিয়ে ছুটল প্রেমিকার কাছে, ভালোবাসার পরীক্ষায় পাস করতে। পথে হঠাৎ আছড়ে পড়ল, আর হাত থেকে ফসকে গেল মায়ের হৃৎপিন্ডটা। হাতে তুলে নিতেই হৃৎপিন্ড থেকে আওয়াজ এলো, “ব্যথা পেলি খোকা? তুই তো খুব পিপাসার্ত, ক্লান্ত। আমি যে দাঁড়াতে পারছি না, তোকে কীভাবে পানি পান করাব বাবা”। এরই নাম মা।

আজ বিশ্ব ‘মা’ দিবস। দিনটি কীভাবে, কবে...

কোথা থেকে এলো, কেন পালন করা হয়, এর গুরুত্ব কী, তা হয়তো অনেকের অজানা। দিনটি পালনে রয়েছে এক ইতিহাস। ১৯০৭ সালের ১২ মে আমেরিকার ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রাফটন শহরে প্রথমবার ‘মাদার্স ডে’ বা মা দিবস পালিত হয়। ভার্জিনিয়ায় অ্যান নামে এক সমাজকর্মী ছিলেন। তিনি নারী অধিকার নিয়ে কাজ করতেন এবং ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন। ছোট ছোট ওয়ার্ক ক্লাব বানিয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে নিতে চেষ্টা এবং তাদের স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করতেন। অ্যানের একটি মেয়ে ছিল। একদিন মেয়ের সামনেই প্রার্থনা করেছিলেন, “যেন কেউ একটা দিন মায়েদের জন্য উৎসর্গ করেন”। মায়ের সেই প্রার্থনা হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যায় তার মেয়েটির। অ্যানের মৃত্যুর পর সেই দিনটিকে সারা বিশ্বের প্রতিটি মায়ের উদ্দেশে উৎসর্গ করেন তার মেয়ে। আর এভাবেই মায়েদের প্রতি সম্মানে পালিত হয়ে আসছে মা দিবস। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে ‘মা দিবস’ ঘোষণা করেন। এর পর থেকে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়ে থাকে।

‘মা’ কথাটি সবচেয়ে ছোট, অথচ সবচেয়ে মধুর একটি শব্দ। মাত্র এক অক্ষরে শব্দটি হলেও এর ব্যাপকতা সাগরের চেয়েও বিশাল। মায়ের মতো এত মধুর আর আবেগী শব্দ পৃথিবীতে আর একটিও নেই। যে শব্দটিতে জড়িয়ে আছে স্নেহ-মায়া-মমতা-ভালোবাসা। ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, প্রতিটি সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা ও প্রেম স্বার্থহীন, সীমাহীন। সন্তানের জন্য মা বরাবরই নিঃস্বার্থ একজন মানুষ। মা হচ্ছেন মমতা-নিরাপত্তা-অস্তিত্ব, নিশ্চয়তা ও আশ্রয়। মা সন্তানের অভিভাবক, পরিচালক, ফিলোসফার, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও বড় বন্ধু। জীবনে সবচেয়ে বড় শ্রমজীবী হচ্ছেন মা, যার কর্মবিরতি নাই, মজুরি নাই, দাবি নাই, শর্ত নাই, স্বার্থ নাই, তিনি শুধু শ্রম দিয়েই যাচ্ছেন। তারই নাম মা। নিজের জীবনের চেয়েও সন্তানকে ভালোবাসেন, সন্তানের কথা ভাবেন। সন্তানের সামান্য ব্যথাতে ব্যথিত হন। মা সব রোগের চিকিৎসক। মায়ের কাছে সবকিছু চাওয়া যায়। ‘মা’ই একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর কাছে সবকিছু চাইলেই পাওয়া যায়। মা সবচেয়ে সেরা রাঁধুনি। মায়ের হাতের রান্না পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার। মা হলো সন্তানের প্রথম বন্ধু, সেরা বন্ধু, চিরকালের বন্ধু। মায়ের মতো পরম বন্ধু এ জীবনে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আরও পড়ুন: আজ বিশ্ব মা দিবস

গর্ভধারণের মুহূর্ত থেকেই সন্তানের সঙ্গে একজন মায়ের নিবিড় বন্ধন তৈরি হয়। বন্ধনটি আরও গভীর হয় যখন তিনি সন্তানকে তাঁর জঠরে মধ্যে বহন, উষ্ণতা, পুষ্টি এবং সুরক্ষা প্রদান করতে থাকেন। গর্ভাবস্থায় একজন মা তাঁর অনাগত সন্তানের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন, যা তুলনাহীন। এই গভীরতা অন্য কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। এরপর শিশুটি যখন ভূমিষ্ট হয়ে পৃথিবীতে আসে, তখন মা হয়ে যান তার প্রথম এবং সাবর্ক্ষণিক পরিচর্যাকারী। সন্তানের জন্য অগণিত রাতজাগা, সারাক্ষণ যত্ন নেওয়া, খাওয়ানো এবং আদরের আলিঙ্গনের মাধ্যমে তিনি সীমাহীন ধৈর্য প্রদর্শন করেন।

প্রতিটি মানুষের পৃথিবীতে আসা ও বেড়ে ওঠার পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করেন একজন মা। এজন্য শুধু মানুষ নয়, পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীই তার মায়ের কাছে ঋণী। এই ঋণ শোধ করার কোনো বিকল্প নাই। মা হলেন এমন একজন মানুষ, যিনি অন্য সবার স্থান নিতে পারেন কিন্তু তাঁর স্থান অন্য কেউ নিতে পারে না। চাওয়া-পাওয়ার এই পৃথিবীতে মায়ের ভালোবাসার সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা হয় না।

মাকে নিয়ে কিছু অসাধারণ উক্তি: মাকে নিয়ে পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তিরা হাজারো অসাধারণ উক্তি করেছেন।

(১) মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।”

(২) রবীন্দ্রনাথের গানে, “মধুর আমার মায়ের হাসি, চাঁদের মুখে ঝরে ..., সে যে জড়িয়ে আছে ছড়িয়ে আছে সন্ধ্যা রাতের তারায়, সেই যে আমার মা, বিশ্বভুবন মাঝে তাহার নেইকো তুলনা..., প্রদীপ হয়ে মোর শিয়রে কে জেগে রয়

দুঃখের ঘরে, সেই যে আমার মা সেই যে আমার মা। বিশ্বভুবন মাঝে তাহার নেইকো তুলনা, সেই যে আমার মা”।

(৩) আব্রাহাম লিংকন বলেছেন, “যার মা আছে, সে কখনোই গরিব নয়”।

(৪) বিখ্যাত ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাডোনা বলেছেন, “আমার মা মনে করেন আমিই সেরা, আর মা মনে করেন বলেই আমি সেরা হয়ে গড়ে উঠেছি”।

(৫) জর্জ ওয়াশিংটন বলেছেন, “আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী নারী হলেন আমার মা”। মায়ের কাছে আমি চিরঋণী। আমার জীবনের সব অর্জন তাঁরই কাছ থেকে পাওয়া নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা আর শিক্ষার ফল।

(৬) মাইকেল জ্যাকসন বলেছেন, “আমার মা বিস্ময়কর, আর আমার কাছে উৎকৃষ্টের আরেক নাম”।

(৭) কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, “মা হলো পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক, যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট জমা রাখি এবং বিনিময়ে নেই বিনা সুদে অকৃত্রিম ভালোবাসা”।

(৮) কবি কাদের নেওয়াজ বলেছেন, ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি, কিন্তু জেনো ভাই, ইহার চেয়ে নামটি মধুর, তিন ভুবনে নাই...”।

(৯) কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, “যেখানেতে দেখি যাহা, মা এর মত আহা, একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই, মায়ের মতন এত আদর সোহাগ সেতো, আর কোনোখানে কেহ পাইবে না ভাই”।

(১০) শিল্পী “ফকির আলমগীর এর ভাষায়, “মায়ের এক ধার দুধের দাম, কাটিয়া গায়ের চাম, পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না, এমন দরদি ভবে কেউ হবে না আমার মা গো”।

ইসলামে মায়ের সম্মান ও অধিকার : ইসলাম মাকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম করা হয়েছে মাকে। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। তাই জান্নাত পাওয়ার আকাক্সক্ষাকারী কোনো সন্তানই মাকে এড়িয়ে যেতে পারে না।

আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “তোমার পরওয়ারদেগার আদেশ করিয়াছেন, তোমরা তাহাকে ব্যতীত অন্য কাহারও এবাদত করিও না এবং তুমি মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করিও, যদি তোমার সম্মুখে তাঁহাদের একজন অথবা উভয়ে বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে তাহাদিগকে উহ পর্যন্তও বলিও না, আর তাঁহাদিগকে ধমক দিও না এবং তাঁহাদের সঙ্গে খুব আদবের সহিত কথা বলিও। এবং তাঁহাদের সম্মুখে করুণভাবে বিনয়ের সহিত নত থাকিবে, আর এইরূপ দোয়া করিতে থাকিবে, হে আমার পরওয়ারদেগার! তাঁহাদের উভয়ের প্রতি দয়া করুন, যেরূপ তাহারা আমাকে লালন-পালন করিয়াছেন শৈশবকালে” (সুরা বনি ইসরাইল, ২৩-২৪)।

আল্লাহ আরও বলেন, “আমি মানুষকে তাহার মাতা-পিতা সম্বন্ধে নির্দেশ দিয়াছি, তাহার মাতা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করিয়া তাহাকে গর্ভে ধারণ করিয়াছে এবং তাহার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে, যেন তুমি শোকর কর আমার” (সুরা লোকমান-১৪)।

অন্য এক আয়াতে আছে, “আর তোমরা আল্লাহতায়ালারই এবাদত কর, এবং তাঁহার সহিত কাহাকেও শরিক করিও না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করিও” (সুরা-নিসা-৩৬)। পিতা-মাতার অধিকার সম্পর্কে হাদিসেও বহু জায়গায় বর্ণনা এসেছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া অবশ্যই কবুল হয়; এতে কোনো সন্দেহ নেই। এক, মা-বাবার দোয়া তাঁর সন্তানের জন্য; দুই, মুসাফিরের দোয়া ও তিন, অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া অত্যাচারীর বিরুদ্ধে” (আবু দাউদ)।

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “মা-বাবাই হলো তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম” (ইবনে মাজাহ-মিশকাত)।

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, “যখন কোনো অনুগত সন্তান নিজের মা-বাবার দিকে অনুগ্রহের নজরে দেখে, আল্লাহ তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সাওয়াব দান করেন” (বায়হাকি-মিশকাত)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রসুল! কে আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি হকদার? তিনি বললেন তোমার মা; সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা; সে আবারও বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে পুনরায় বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা (বুখারি ও মুসলিম)।

একদিন হজরত মুয়াবিয়া ইবনে জাহিমা আসসালামি (রা.) রসুল (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে বললেন, ‘ইয়া রসুলাল্লাহ! আমি জিহাদ করতে ইচ্ছুক। এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী? জবাবে রসুল (সা.) বললেন, তোমার মা আছেন? তিনি বললেন, আছেন। রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকো, কেননা তার পায়ের নিচেই জান্নাত।’

উপরোক্ত আয়াতগুলোতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আল্লাহর পরেই মা-বাবার অধিকার।

রসুল (সা.)-এর জমানায় বিখ্যাত এক আশেকে রসুল ওয়াইস করনি (রা.) প্রিয় নবীজির কাছে এই মর্মে খবর পাঠালেন, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ (সা.), আপনার সঙ্গে আমার দেখা করতে মন চায়; কিন্তু আমার মা অসুস্থ। এখন আমি কী করতে পারি?’ নবীজি (সা.) উত্তর পাঠালেন, ‘আমার কাছে আসতে হবে না। আমার সাক্ষাতের চেয়ে তোমার মায়ের খেদমত করা বেশি জরুরি ও বেশি ফজিলতের কাজ।’

মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব : সন্তানের সব সময় মনে রাখা উচিত, মায়ের ত্যাগের কারণেই সে আজ সে এই সুন্দর পৃথিবীতে এসেছে। যদি সে মাকে ভুলে যায়, কষ্ট দেয় বা অবহেলা করে- তাহলে সবই মিছে। সন্তানের পর্বত সমান সফলতা তখন মূল্যহীন। কিন্তু অতি দুঃখের সঙ্গে লিখতে হচ্ছে, সেই মহান মায়ের প্রতি অনেক সন্তান আজকাল উদাসীন, অনেকে বেপরোয়া। এমনও শোনা যায়, সন্তান তার মাকে প্রহার করছেন, ঘর থেকে বের করে দিচ্ছেন, জঙ্গলে মাকে ফেলে এসেছেন, নিজে সুন্দর ঘরবাড়িতে বাস করে মাকে রেখেছেন রান্নাঘরে।

এমনও দেখা যায়, পিতা-মাতাকে সন্তান ঠিকমতো ভরণপোষণ দিচ্ছে না। তারা বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের বৃদ্ধাশ্রম নামক কারাগারে পাঠিয়ে দিচ্ছে। অথচ স্ত্রী-সংসার নিয়ে নিজেরা বেশ আরাম-আয়েশে থাকছে। তাদের পরিবারে বাবা-মা যেন বোঝা। যে সন্তানকে আদর যত্ন দিয়ে মানুষ করলেন, সেই সন্তান কীভাবে তার মায়ের অবদানকে ভুলে যায়? নাড়িছেঁড়া ধন একজন সন্তানের কাছ থেকে কোনোভাবেই এসব কাম্য নয়। এতে আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে; জমিন অভিশাপ দেয়। নিশ্চয় কঠিন কেয়ামতের দিন সেই সন্তানকে আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কী উপায় হবে সেদিন?

মা শ্রদ্ধার আধার, স্নেহের কান্ডারি। সব ধর্মেই মা আশীর্বাদস্বরূপ। তাই সন্তানের সর্ব প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে মাকে শ্রদ্ধা করা, অন্তরের শ্রেষ্ঠতম আসনে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করা, ভক্তি ও শ্রদ্ধায় মাকে অভিষিক্ত করা। সন্তানের কাছে মা-ই হলেন জগতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। তাই মায়ের সঙ্গে সর্বদা সম্মানজনক ও সহযোগিতামূলক ব্যবহার করতে হবে। তাঁর সঙ্গে কখনো কর্কশ ভাষায় কথা বলা উচিত নয়। মায়ের অবাধ্যতা অমার্জনীয় অপরাধ। মায়ের আদেশ পালন করা এবং তাঁর নির্দেশ মেনে চলা সন্তানের পবিত্র কর্তব্য। মায়ের ঋণ কোনো দিন কখনো কোনোভাবেই শোধ করা যাবে না।

পৃথিবীর সবচেয়ে আপন হলো মা। তাই আসুন আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, আমরা আমাদের কোনো আচরণে যেন মাকে কষ্ট না দিই। যাদের মা এখনো বেঁচে আছেন, সেই মায়ের জন্য জীবনের সর্বোচ্চটাই করার চেষ্টা করি। মা-বাবার সেবা-যত্ন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত অর্জন করি। আল্লাহ আমাদের সবাইর পিতা-মাতাকে ভালো রাখুন। তাদের উত্তম সেবা করার তৌফিক দান করুন।

 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আপাদমস্তক একজন বাম আদর্শের ব্যক্তিত্বের উদহারণ ছিলেন রনো ভাই


Thumbnail

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা হায়দার আকবর খান রনো না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন। শতভাগ বাম আদর্শে বিশ্বাসী একজন ব্যক্তি ছিলেন তিনি। আদর্শগতভাবে আমরা কখনোই এক আদর্শে বিশ্বাসী ছিলাম না। কিন্তু সেই ৬০ এর দশক থেকে রণ ভাইকে আমি চিনি। এবং ব্যক্তিগতভাবে তিনি আমার অগ্রজতুল্য।

বর্তমান যুগে বাম আদর্শের বা যেকোন আদর্শে শতভাগ বিশ্বাসী নির্ভেজাল লোক পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। সেখানে আপাদমস্তক একজন বাম আদর্শের ব্যক্তিত্বের উদহারণ ছিলেন রনো ভাই। তিনি যে লেখাগুলো লিখতেন তার অধিকাংশ লেখাগুলো আমি পড়েছি। তার বিশ্লেষণের ক্ষমতা, লেখার ধরণ প্রত্যেকটা জিনিসে বাম রাজনীতি এবং বাম আদর্শ ফুটে উঠতো। 

তিনি এমন একটি সময় আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন যখন বাংলাদেশে বাম দল কবরে যাওয়ার পথে। অথচ আমাদের দেশে এখনই বামদলের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কেননা, চরম ডানপন্থি দলগুলো অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য তারা চ্যালেঞ্জ। আবার ডান দলগুলোর মধ্যে যাদের মডারেট ডান বলা যায়, তারাও আজ শক্তিহীন। 

একমাত্র গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মধ্যম পন্থায় চলা আওয়ামী লীগ শক্তিশালী, আর মডারেট ডান হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিএনপির মতো যে দলগুলো আছে তারাও আজ নেই বললেই চলে। এমন একটা ক্রান্তিকাল যখন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষ একটি রাজনৈতিক দলকে সামনে নানা যারা চরম বামপন্থী বা চরম ডানপন্থী হবে না। ঠিক সেই সময় একজন আদর্শবান রনো ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। রনোভাইদের মতো যারা সত্যিকার বাম আদর্শে বিশ্বাস করতেন এমন ব্যক্তি বাস্তব ক্ষেত্রে খুঁজে পাওয়া যায় না। রনো ভাই ছিলেন রাজনৈতিক লড়াকু সৈনিক এবং পদ পদবীর কোন লোভ তার মধ্যে ছিল না। সবসময় আত্ম প্রচার থেকে দূরে থাকতেন তিনি। এমন একজন ব্যক্তির চলে যাওয়া মানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন আদর্শবান বাম সৈনিকের চলে যাওয়া। 

যারা বাম আদর্শে বিশ্বাস করেন তাদেরকে আমি বলবো, আপনারা রনো ভাইয়ের বিকল্প হতে পারবেন না, কিন্তু সকলে আপনারা এক হয়ে, রনো ভাইয়ের মতো আদর্শিক হয়ে এখনই যদি বাম দলকে সংগঠিত না করেন তাহলে আওয়ামী লীগের বিকল্প হবে তালেবানরা। এখন আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আওয়ামী লীগকে কি তালেবানের সাথে যুদ্ধে নামাবেন নাকি দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য নিজ দায়িত্বে বাম দলকে সুসংগঠিত করবেন।


সিপিবি   হায়দার আকবর খান রনো  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

দেশের গণতন্ত্রকে অনুসরণ করবে অন্যরা


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চতুর্থ মেয়াদের ক্ষমতার চার মাস পার করে দিয়েছেন। অনেকের ভেতরে আলাপ-আলোচনা শোনা যায় যে, বিশেষ করে যারা বেতনভোগী বুদ্ধিজীবী, বাইরের অনেক পত্রপত্রিকায় যারা লেখালেখি করেন তারা একটি প্রশ্ন তোলেন যে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আসলে এ বিষয়টি নিয়ে খুব বস্তুনিষ্ঠ এবং নির্মোহভাবে কোনো আলাপ-আলোচনা হয় না। আমি এ বিষয়টির কিছু ভাবনা প্রকাশ করতে চাই।

কদিন আগে স্টিভেন লেফেস্কি এবং ডেনিয়েল জিব্লাটের লেখা ‘হাউ ডেমোক্রেসি ডাই’ বইটি পড়ছিলাম। বইটি আমেরিকা থেকে প্রকাশিত এবং দেশে দেশে বহুল পঠিত। ২০১৮ সালে প্রকাশিত বইটি বেস্ট সেলার হিসেবেও বিবেচিত হয়েছে। কীভাবে ধীরে ধীরে গণতন্ত্র ক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে এবং দেশে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, সে বিষয়ে বইটির ২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে।

প্রথমেই যেটি বলা হয়েছে তা হলো, সংবিধানকে গণতন্ত্রবিরোধী সরকার মানে না সংবিধানকে কীভাবে দূরে সরিয়ে দেশ শাসন করা যায়, সেই চেষ্টা করে।

বাংলাদেশে নিয়মিত নির্বাচন হওয়ার ফলে সংবিধানবহির্ভূত ঘটনা শেখ হাসিনার শাসনামলে ঘটেনি। বলা যায় ১৯৮১ সালের ১৭ মে যেদিন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব নেন, সেদিনই কিন্তু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সূচনা শুরু হয়। সেদিনকে বলা চলে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শুভ যাত্রার দিন’। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, এ গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য তিনি দেশে এসেছেন এবং সর্বশেষ তিনিই গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছেন। তার আশার পরেই কারফিউ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন সামরিক একনায়ক জিয়া।

আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচন বর্জন বিএনপি কফিনের শেষ পেরেক

গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য যেসব কাজ করা হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচনকে যে কোনো প্রকারে বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা অনেক কঠিন অবস্থার মধ্যে থেকেও নিয়মিত নির্বাচন করে চলেছেন। একনায়কতন্ত্র যে গণতন্ত্রকে দুর্বল করে তার কোনো চিহ্ন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার মধ্যে নেই। বিরোধী দল যত গণতন্ত্র ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করেছেন, শেখ হাসিনা ততই গণতন্ত্র সুরক্ষার চেষ্টা করেছেন।

বইটিতে বলা হয়েছে, এসব একনায়ক সরকার কিছু কিছু সংগঠনকে বন্ধ করে দেয়। যেমন—মানবাধিকার কমিশন। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এ মানবাধিকারকে আরও উজ্জীবিত করেছেন। স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন তারই সৃষ্টি। এ ছাড়া এসব একনায়ক রাজনৈতিক দলকে বন্ধ করে দেয়। কিন্তু দেখা যায় দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলকে বন্ধ করেননি। বরং রাজনৈতিক দলগুলোকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।

বইটিতে আরেকটি বিষয়ে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয় আর তা হচ্ছে, সরকার দুর্বল হতে থাকলে এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সামরিক গোষ্ঠী ক্ষমতা দখল করে এবং সংবিধানকে বাতিল করে অথবা স্থগিত করে দেশ চালায়। সে হিসেবে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটা খুব সুশৃঙ্খল, শক্তিশালী এবং পেশাদার সামরিক বাহিনী গড়ে তুলেছেন। এখানে কোনো ধরনের নৈরাজ্য দেখা যাচ্ছে না, আজ পর্যন্ত ঘটেনি এবং ঘটারও সম্ভাবনা নেই। সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদ সংযোজন শেখ হাসিনার আরেকটি অসাধারণ উদ্যোগ। এটি গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। এর ফলে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয়েছে।

আরও পড়ুন: বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ

এ বইয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে তা হলো, যে কোনো নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে হৈচৈ হয়। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে আমাদের দেশে হৈচৈ হলেও সর্বশেষ নির্বাচনে এটি প্রমাণ হয় সবাই এ নির্বাচন গ্রহণ করে নিয়েছে। যারা বলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র দুর্বল হচ্ছে তাদের জন্য এ উদাহরণগুলো দিয়ে বলা যায় দুর্বল নয় বরং বাংলাদেশে দিন দিন গণতন্ত্র শক্তিশালী হচ্ছে। বলা যায়, দেশ এখন শুধু উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে। নির্বাচনে দেওয়া ইশতেহারগুলো সরকার পূরণ করে চলেছে। মানুষের যে মৌলিক অধিকার তা পূরণ করা হচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীনদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, পথশিশু এবং বস্তিবাসীর জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষকে করা হচ্ছে আত্মনির্ভর। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবার জন্য প্রতি ছয় হাজার জনগণের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তুলেছেন। আর এ কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ গত বছর ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত প্রচার করে তারাই মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা। তারাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার কোথায় কোথায় লঙ্ঘন হচ্ছে তার সূচক দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সূচক নেই। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে যে, গাজাতে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম অত্যাচার। আর এতে ইসরায়েলকে অস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে তারা। এ বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন তুঙ্গে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা এভাবেই প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু এবার যুক্তরাষ্ট্র এ আন্দোলনের বিষয়টি অন্যভাবে দমন করছে। শিক্ষার্থীদের অমানবিক কায়দায় নিপীড়ন করা হচ্ছে।

আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ এবং র‌্যাবের প্রতি আমার একটি আবেদন থাকবে, তারা যেন আন্দোলন দমনে যুক্তরাষ্ট্রের এ স্টাইল অনুসরণ না করে। কেননা তাদের এ স্টাইল যদি আমরা ফলো করি তাহলে আমাদের গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাবে। সুতরাং আমরা যারা সাধারণ জনগণ, আমরা আপনাদের প্রতি অত্যন্ত বিশ্বাসী এবং আপনাদের কাছে শ্রদ্ধায় মাথানত করি। আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য, আমাদের সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য অনেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য জীবন দিচ্ছেন। আমি জানি যে, আপনাদের জীবন অমূল্য, অনেকে এর জন্য তাদের সংসার ত্যাগ করছেন। আপনাদের প্রতি সহানুভূতি জানানোর দায়িত্ব হয়তো আমাদের নেই, কিন্তু দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আপনাদের দেখছেন। তাই কষ্ট হলেও আপনারা আপনাদের পথে থাকেন।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, আগামী ১০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র থাকবে কি না, তা নিয়ে ভাবনা হচ্ছে অনেকের। তাই বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে গণতন্ত্র শিখতে হবে না। আমরা তাদের কিছুতেই অনুসরণ করতে পারি না এবং অনুসরণ করে আমাদের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে পারি না। সুতরাং এ দেশে গণতন্ত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে এবং আমার বিশ্বাস গণতন্ত্রে আমরা বিশ্বে মডেল হব। যেমনটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ভ্যাক্সিনেশনে আমরা মডেল হয়েছি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়েও বিশ্বে মডেল হবেন। এজন্য আমাদের কাউকে অনুসরণ করার প্রয়োজন নেই।

লেখক: সভাপতি, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট


অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী   গণতন্ত্র   মানবাধিকার   কমিউনিটি ক্লিনিক   দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

উপজেলা নির্বাচন বর্জন বিএনপি কফিনের শেষ পেরেক


Thumbnail

আজকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেভাবে হয় তার সামান্যতম কোন ব্যতিক্রম হয়নি। ভোটাররা উৎসাহ নিয়ে ভোট দিয়েছে। কোথাও কোথাও অনেক ভোটার আছেন যারা মনে করেন যে, অমুকে তো অনেকে জনপ্রিয় প্রার্থী, তিনিই বিজয়ী হবেন। আমার ভোট না দিলেও হবে। এ রকম মনোভাব নিয়ে অনেকে ভোট দেয়নি। আর কিছু জায়গা আছে ছোট খাটো মারামারি হয়েছে। যা এদেশের স্থানীয় নির্বাচনের চরিত্র। 

নির্বাচনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সেটার প্রমাণ করছেন বারবার। সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রপতিও শেখ হাসিনার দার্শনিক ভিত্তি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, শেখ হাসিনার প্রতিটি সিদ্ধান্ত একেকটা দর্শন। এবং এর লম্বা প্রভাব রয়েছে। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আসলে সংগ্রামের মধ্যেই আছেন। এই যে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। তাকে হত্যার করার হুমকি থাকলেও তিনি দেশে এসেছেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন যে, আমাকে যখন দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে আমি সেটা মোকাবিলা করার জন্য দেশে যাব এবং তিনি দেশে এসেছেন। আমরা অনেক সময় অনেক কথা বলে আবার পিছিয়ে যাই। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটা করেননি। তিনি দেশে এসেছেন। তবে আল্লাহ একটা রহমত আছে তাঁর প্রতি। আল্লাহ মনে হয় তাকে সব সময় চাঁদর দিয়ে ঢেকে রক্ষা করেন অত্যন্ত বাংলাদেশের জন্য। না হলে বারবার তার ওপর যে রকম আঘাত এসেছে তাতে উনার বাঁচার কথা নয়। 

বাংলাদেশে বিরোধী দল বলতে এখনো জনগণ বিএনপিকেই বুঝে। এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। কারণ জাতীয় পার্টি এবং বাম দল তো এখন নাই। জাতীয় পার্টি মোটামুটি ভাবে শেষ হয়ে গেছে। এখন বিএনপিও শেষ হয়ে যেতে বসেছে। উপজেলা নির্বাচন হয়ে গেল। নির্বাচনে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন সেখানে হয়তো বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত কেউ কেউ থাকবেন। কিন্তু যারাই হোক না কেন তারা আর কেউ বিএনপির থাকবে না। বিএনপির একের পর এক নির্বাচন বর্জন করার ফলে দল হিসেবে নিশ্চিত হওয়ার পথে। এদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি খুব শঙ্কিত অনুভব করছি উপজেলা নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর। কারণ বিএনপি যে ধ্বংস হয়ে গেল তাতে গণতন্ত্রের যে ক্ষতি হয়ে যাবে এই ক্ষতি সহজে পূরণ করা যাবে না। কারণ একটি শক্তিশালী বিরোধী দল আমাদের দেশে থাকা দরকার। যেহেতু বাম রাজনীতি যারা করেন তারা একেবারে ক্ষমতাহীন। নিজেরা দাঁড়ালে এক হাজার ভোটও তারা পায় না। আর জাতীয় পার্টির অবস্থাও এখন একই রকম। আর এদেশে সন্ত্রাসের রাজনীতি আর চলবে না। সেটার মূল উৎপাটন করেছেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। সেটাও তাঁর দার্শন ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে। তিনি দেশে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কিন্তু ইসলামকে রাজনীতির জন্য ব্যবহার করেননি। তিনি সব সময় বলেন যে, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’ তিনি সেভাবে কাজও করছেন। সুতরাং আমাদের দেশে ধর্মান্ধ রাজনীতির কোন সুযোগ নাই। 

বাংলাদেশে এই যে গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এজন্য প্রধানত দায়ী আমেরিকা। কারণ আমেরিকা যেভাবে এবার তাদের দেশে ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলন প্রতিহত করছে তাতে যে উদারহণ তারা সৃষ্টি করলো এটা মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব রাখবে সারা বিশ্বে। তারা আর কাউকে বলতে পারবে না যে, তোমার দেশে মানবাধিকার নাই। মানবাধিকার এখন শুধু বাংলাদেশেই আছে বলে আমার মনে হয়।

বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগকে বাকশাল গঠন করার জন্য একটা বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য করছে। এটা আমরা চাই না। বাকশাল যখন করা হয় তখন দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে একটা আলাদা প্রেক্ষাপট ছিলো। কিন্তু এখন সেটা নেই। সুতরাং এখন গণতন্ত্রের মধ্যে জনগণকে থাকতে হবে। কিন্তু এই যে বিএনপি গণতন্ত্রের ক্ষতি করলো এই ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে আমার জানা নেই। এজন্যই আমার মনে হয় বিএনপি শুধু নিজের ক্ষতি করলো তা না, দল হিসেবে তারা তো শেষ হয়ে গেলো। সাথে সাথে বাংলাদেশের গণতন্ত্রে যে আঘাত তারা করলো সেটা মারাত্মক আঘাত এবং আমরা কেউই এই আঘাত চাইনি। এখন আওয়ামী লীগ ছাড়া কোন রাজনৈতিক দলের বাস্তব উপস্থিতি থাকলো না। বাকি দলগুলো তো নিজেরা নিজেদের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বাম দল তারা সাহস দেখাতে পারলো না। তারা সঠিক পন্থা অবলম্বন করতে পারলো না। এজন্য শেষ হয়ে গেলো। অন্যদিকে যারা সন্ত্রাস করে রাজনীতি করতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলোরেন্স নীতিতে তারা এখন ধ্বংস প্রায়। বিএনপি ঠিকে থাকতে পারতো কিন্তু তারা সেটা চেষ্টাও করলো না। বিএনপি আন্দোলন করতে পারেনি ঠিক কিন্তু তারা যদি শুধু প্রতিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতো তাহলেও এদেশে একটি রাজনৈতিক শক্তি থাকতো। ক্ষমতায় যাওয়াই রাজনৈতিক দলের একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত না। জনগণের সাথে যদি থাকেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এক সময় নিশ্চিত ক্ষমতায় যাবেন। অনেক দেশে এমন অনেক দল আছে যারা ক্ষমতায় নেই তবে তারা রাজনৈতিক ভাবে অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যায় না। ব্রিটেনের লেবার পার্টি অনেক দিন ধরে ক্ষমতায় নেই। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে জরিপে দেখা যাচ্ছে এবার তারা ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে। অথচ এক সময় তারেদর কোন সম্ভাবনাই ছিল না। তাই আমি বলবো শুধু লন্ডনের বুদ্ধিতে বিএনপি তাদের কফিনের শেষ পেরেকটাও মারলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে। সাথে সাথে বাংলাদেশের গণতন্ত্রেও তারা এই পেরেক বিদ্ধ করলো। এটা থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। বিএনপি তো আর পারবেই না। আমি আশা করি বাম দলগুলো যেন সেই উদ্যোগ নেয়।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

গোয়েবলসের বাড়ি কেনার জন্য তারেক জিয়াই যোগ্য ব্যক্তি


Thumbnail

মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের বাড়ি বিনা টাকায় বিক্রি করার জন্য কর্তৃপক্ষ আগ্রহী প্রার্থী পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মনে হলো যে, আমাদের একজন ভালো খরিদ্দার আছে এবং তার কাছে এই গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি করলে গোয়েবেলসের আদর্শটাও বেঁচে থাকবে এবং কর্তৃপক্ষেরও উপকার হবে। আর এ খরিদ্দার হচ্ছে বিএনপি এবং এবং লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বাড়িটি কিনতে পারেন। তিনি হচ্ছেন গোয়েবেলসের এই বাড়ির যোগ্য ব্যক্তি। কারণ তিনি গোয়েবেলসের ভাবশিষ্য। 

গোয়েবেলস যেভাবে জার্মানিকে তখন গেসকাভো বাহিনী দিয়ে হত্যা করা থেকে শুরু করে সবকিছু জাস্টিফাই করতো, যুদ্ধে হেরে যাওয়ার সময়ও বলতো জিততেছে। তার একটা বিখ্যাত থিওরি ছিলো, ‘একটা মিথ্যা বার বার বললে সেটা সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।’ এরকম বিভিন্ন দিকে গোয়েবেলস সম্বন্ধে পড়ে এবং দেখে বুঝেছি যে, বিএনপি এবং তারেক জিয়ার সাথে হিটলার বাহিনীর প্রচার মাধ্যম এবং আদর্শগত মিল সাংঘাতিক। হিটলার বাহিনী যেমন তখন ইহুদিদের হলোকাস্ট করেছে বিএনপিও যখন ২০০১ এ নির্বাচনে জিতে যায়, তখন তারা আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের হত্যা করেছে, শিশুদের শ্লিলতাহানী করেছে এবং এমন কোন অপকর্ম নেই যা করেনি। সুতরাং তারা এই হিটলার বাহিনীরই প্রতিনিধিত্ব করে এখন। 

আমার জানা মতে, তারা এই কাজটি যেহেতু ভালোভাবে করতে পেরেছে এই কারণেই এই বাড়িটি পাওয়ার সবচেয়ে যোগ্য হচ্ছে, বিএনপি এবং বিএনপির পক্ষে তারেক জিয়া। সুতরাং আমার মনে হয়, গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি হওয়ার আগেই তাদের যোগাযোগ করা প্রয়োজন, যাতে বাড়িটা বিনা পয়সায় নিয়ে জার্মানিতে স্থায়ীভাবে তারা এবং তাদের লোকজন মাঝে মাঝে গিয়ে থাকতে পারে। এতে তাদের কাজের খুব সুবিধা হবে।

স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিক কারণে জার্মান সরকার বাড়িটাকে ধ্বংস করতে চায় না। তাই তারা এতদিন বাড়িটাকে ঠিকঠাক করে রেখেছে। কারণ জার্মানের লোকজনের ভেতরে হিটলারের আদর্শ উপস্থিত আছে। আর হিটলারের আদর্শকে ধরে রাখার মতো যেহেতু বিএনপিকে পাওয়া গেছে, তারেক জিয়াকে পাওয়া গেছে। সুতরাং আমার মনে জার্মানির এই গোয়েবেলসের বাড়িটি পাওয়ার একমাত্র যোগ্য বিএনপি এবং তারেক জিয়া। এতে বিএনপি এবং হিটলারের বাহিনীর যে কোন পার্থক্য ছিলো না সেটিও জনগণ বুঝতে পারবে। সুতরাং আমি মনে করি বিএনপির জার্মানিতে গোয়েবেলসের এই বাড়িটি কিনা উচিত। 


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন