নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১
কাজী নজরুল ইসলামের ‘হিন্দু-মুসলমান’ কবিতার বিখ্যাত একটি লাইন ‘মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান’। অন্তরে যা-ই থাক, মাহফুজ আনামসহ সব শ্রেণি- পেশার মানুষই নিজের সুবিধা মতো এ লাইনটি আওড়ায়। নজরুল সুস্থ্ থাকার শেষদিন পর্যন্ত আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন হিন্দু-মুসলমানের মিলন ঘটাতে, কিন্তু পারেননি তিনি। ব্যর্থ হয়েছিলেন। ভেতরে ফাঁকা, বাইরে লেবাসের যুগে জন্ম নেয়া এই মহান কবির সব চেষ্টা বিফলে যেতো এখনকার মাহফুজ আনাম গংদের মতো কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে। তারা নিজেদের কারবার বাড়ানোর জন্য সব সময়ই চাইতেন ‘হিন্দু-মুসলমান’ সমস্যাটি জিইয়ে থাক। তাতে ফায়দা বেশি তাদেরই।
নজরুল ইসলামের পরাধীন এ অঞ্চলে শুরু হওয়া এ সমস্যা স্বাধীন দেশে যেখানে সুরাহা হওয়ার কথা ছিল, সেখানে সেটা না হয়ে বরং উল্টোটা হচ্ছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে হিন্দু আইন পরিবর্তন প্রতিরোধ সম্মিলিত পরিষদ ও এর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করা ৪৩টি সংগঠন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে এক সংবাদ সম্মেলন করে। এ সময় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বলেন, সনাতনী সমাজে বিবাহ চুক্তি নয়, এটি একটি পবিত্র ব্রত। বিবাহের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী শাস্ত্রবিধি ও হিন্দু আইন অনুযায়ী অবিচ্ছেদ্যভাবে একাত্ম হয়ে যান। তারা পরিবারের সম্পদ-সম্পত্তিও যৌথভাবে ভোগ করে থাকেন। যুগ যুগ ধরে শাস্ত্রীর বিধানের ঐশীবন্ধনে হিন্দু সম্প্রদায়ের তথা সনাতনী সমাজের পরিবারগুলো শান্তিময়-ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় চলমান। কতিপয় এনজিওসহ একটি বিশেষ মহলের কারসাজিতে তা বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র চলছে।
মাহফুজ আনাম কী চাচ্ছেন আসলে?
একজন সম্পাদক, একজন ডোরকিপারের বিরুদ্ধে যখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঐক্যে চিড় ধরানোর চেষ্টা করার অভিযোগ ওঠে, তখন পেছনে ফেরা অনিবার্য হয়ে ওঠে। কেননা একজন সম্পাদকের ভালো করেই জানা দেশে সংখ্যালঘুর প্রতি সংখ্যাগুরু সুযোগ পেলে যে ধরণের কুৎসিত নিপীড়ন চালায় তার সঙ্গে কোনো নিপীড়নের তুলনা চলে না। কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছিলেন, ‘রাইত ভর ঘুমাইতে পারিনা’ !/ ‘ওরা আবার কহন আহে’ / ‘যশোর মালোপাড়া, অভয়নগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, কক্সবাজারের রামু’। এছাড়াও খবরের আঁড়ালে চাপা পড়েছে নাম না জানা অসংখ্য দৈন্যতার উদাহরণ। পাশাপাশি খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাত গবেষণা করে দেখিয়েছেন যে, ২০০১-১৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রতিদিন ৭৭৪ জন হিন্দু দেশ ত্যাগ করেছেন। এই হার আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এরকম একটি পরিস্থিতিতে যেখানে আমরা হিন্দুদের কনফিডেন্সে আনতে পারছি না সেখানে ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলব আনাম ও তার স্ত্রী বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম হিন্দু সম্প্রদায়কে উসকাচ্ছেন। মাহফুজ আনাম কী চাচ্ছেন আসলে? সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা? নাকি মাৎস্যন্যায় পরিস্থিতির সৃষ্টি? নাকি আরেকটি এক-এগারো?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, মাহফুজ আনাম যা চাচ্ছেন তা খুবই ভয়ানক এবং একই সঙ্গে সংক্রমিত সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পের পুনরুত্থান। এ খাতে বিনিয়োগও আসে মোটা অঙ্কের। পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। মানুষকে তার মূলে ফিরতে হয়। ফলে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়া ছাড়া আমাদের কোনো গতি নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ইতিহাস
চলতি সময়ের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পেছনে ফিরে তাকানোর নামই ইতিহাস। ইতিহাসের এ সংজ্ঞাকে কেন্দ্র করে বলা হয়ে থাকে যে, মনুষ্য সকলেই ইতিহাসের সন্তান। ইতিহাস বলে, হাজার বছর ধরে সমৃদ্ধির সঙ্গে বসবাস করে আসা বাংলা অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এক মহান ঐতিহ্য। দুঃখের দহনে পোড়া এ অঞ্চলের মানুষেরা প্রাচীনকাল থেকে বাঁচার প্রয়োজনে সন্ধান করেছে অতি প্রাকৃত শক্তির উৎস এবং আস্থা স্থাপন করেছে পরিচিত শক্তির ওপর। জমিনে ফসল ফলানো এ কৃষক শ্রেণীর অধিকাংশই বার বার ধর্মান্তরিত হয়েছে সত্য তবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তাদের চলাফেরা, সন্তানদের নাম রাখা থেকে শুরু করে কথা-বার্তা ছিল প্রায় অভিন্ন।
বর্তমানে বাঙালি মুসলমানদের অনেকে নিজেদের মুসলমানিত্ব নিয়ে নতুন নতুন উপাখ্যান হাজির করলেও বঙ্গভঙ্গের আগে অর্থাৎ উনিশের শতক পর্যন্ত চিত্রপট ছিল ভিন্ন। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ১৮৭১ থেকে ১৮৭৫ পর্যন্ত বরিশাল বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হেনরি বেভারিজ বা এইচ বেভারিজ রচিত ‘দি ডিস্ট্রিক্ট অব বাকেরগঞ্জ: ইটস হিস্ট্রি এন্ড স্ট্যাটিস্টিকস’ বইটিতে। ধর্মীয় ভিত্তিতে বাংলা অঞ্চলের মানুষদের আলাদা করে চিনতে না পেরে ১৮৭৬ সালে প্রকাশিত এ বইটিতে তিনি লেখেন, ‘বাকেরগঞ্জবাসীর দিকে তাকালে বুঝা যায় না এদের মধ্যে কে হিন্দু আর কে মুসলমান। তারা মুসলমান বা হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ার আগে বাঙ্গালি ছিল, এখনও বাঙ্গালি আছে। তাদেঁর সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সত্য হল তারা বাঙ্গালি জাতিভুক্ত।’
ইসলাম ধর্মের সঙ্গে দেশীয় সংস্কৃতির সমন্বয়
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর বাঙালির আদি বিশ্বাস, আচার আচরণ, প্রথা ইত্যাদিতে খুব একটা বদল ঘটেনি। প্রাচীনকাল থেকে বসবাসের ফলে বংশানুক্রমে উত্তরাধিকার সূত্রে যে জীবনাচার বাঙালিরা লাভ করেছেন তা পালন করেও নতুন ধর্ম পালন করা সম্ভব হয়ে উঠে তাঁদের পক্ষে। ধর্মান্তরিত হলেও বাঙালি সমাজের ধারাবাহিকতা ও জীবনযাত্রা প্রণালীর ব্যাপক রদবদল ঘটেনি সেসময়।
নামের মিল
আজকের দিনে যদিও নাম শুনেই বলা যায় কে হিন্দু আর কে মুসলমান, কিন্তু আগে এমনটা ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও গবেষক রাফিউদ্দিন আহমেদের ‘দ্যা বেঙ্গল মুসলিমস ১৮৭১-১৯০৬’ বইটিতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, সেসময় ছেলে-মেয়েদের নাম রাখার ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য ছিল না স্থানীয় হিন্দু বা মুসলমান পরিবারগুলোর। সে সময় স্থানীয় হিন্দু- মুসলিম ছেলে মেয়েদের যে সব নাম রাখা হত: ছেলে- হারাধন মণ্ডল, বাঘা, মিচু প্রামণিক, নারায়ণ তরফদার, জরু সরকার, মণ্ডল সরকার, হাবলা ইত্যাদি। মেয়ে- শোভানী, মান্দী, শাবানী, জাহুরী, গেন্দী, বাতাসী, জিরা ইত্যাদি।
ফান্ডামেন্টালের নামে পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এ দেশকে একটি ধর্ম-রাষ্ট্রে পরিণত করার দিবাস্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে একদল ধর্মান্ধ লোক ও কয়েকটি সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল। বিএনপিসহ সুবিধাবাদী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও তাদের সখ্যতা তুঙ্গে। এমনকি কিছু ছদ্মবেশী বুদ্ধিজীবীও প্রগতিশীলতার মুখোশ পরে তাদের এই প্রচেষ্টার সঙ্গে সামিল আছেন। তাদের এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেই ধরে নেয়া যায়। কিন্তু বাঙালি সংস্কৃতির যে হাজার বছরের ইতিহাস তাতে নিশ্চিত করেই বলা যায়, একে পরাজিত করা যাবে না। এ দেশের মানুষের মনোজগতে আছে শান্তি-সম্প্রীতি-ভ্রাতৃত্ব-মানবতা ও সাম্যের প্রতি দায়। এ অঞ্চল নজরুলের, এ অঞ্চল রবীন্দ্রনাথের। কোনও মৌলবাদী গোষ্ঠী তত্ত্ব দিয়ে এ বন্ধন ছিন্ন করতে পারেনি। বাঙালি তার সংস্কৃতিকে চিরকাল অপরাজেয় রূপে দেখতে চেয়েছে বলেই পরাজিত হতে দেয়নি। তাই এই এতকাল পর এসে আমাদেরকে পরাজিত করার কথা কোনও মূর্খ ছাড়া আর কে-ই বা ভাববে!
মন্তব্য করুন
জাল ভোট নির্বাচনী কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
ডোনাল্ড লু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
লক্ষ্মীপুরের ২ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন চলছে ভোট গণনা। এই দুই উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে কমলনগর উপজেলায় জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে মেহেদী হাসান নামে একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া রামগতি উপজেলার এক প্রিজাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে জাল ভোট প্রদানে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া আর কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
বুধবার (৮ মে) দুপুরে উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের হাজিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে তাকে আটক করা হয়। মেহেদী হাসান ওই কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি কমলনগর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
এদিকে সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুই উপজেলার ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে, এখন চলছে ভোট গণনা।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, ‘জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে রাখা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ইউএনও।’
এদিকে রামগতি উপজেলার পূর্ব চর মেহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসার মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে জাল ভোটে সহায়তা করার অভিযোগ উঠেছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, কমলনগর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এ ছাড়া এ উপজেলায় ৪ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ৩ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন। এখানে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৭ জন।
এদিকে রামগতি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এ উপজেলায় ১০ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ৩ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন। এখানে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪২ হাজার ৯২২ জন।
উপজেলা নির্বাচন ভোট গ্রহণ জাল ভোট প্রিজাইডিং অফিসার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আবার বাংলাদেশ সফরে আসছেন। নানা কারণে ডোনাল্ড লু বাংলাদেশে অত্যন্ত আলোচিত একটি নাম। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে তাঁর তৎপরতা বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছিল। ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেওয়ার পর তিনি একাধিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন এবং বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাঁর সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং বেশ কিছু কথাবার্তা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
লক্ষ্মীপুরের ২ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন চলছে ভোট গণনা। এই দুই উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে কমলনগর উপজেলায় জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে মেহেদী হাসান নামে একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া রামগতি উপজেলার এক প্রিজাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে জাল ভোট প্রদানে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া আর কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।