নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৪ এএম, ০৭ নভেম্বর, ২০২১
খালেদ মোশাররফ যখন সেনাপ্রধান হওয়ার জন্য বঙ্গভবনে দেনদরবার করছিলেন, তাহের তখন বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে যোগযাযোগ রেখে চলেছিলেন। জাসদের পার্টি ফোরাম এ সময় একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্তটি ছিল ৯ নভেম্বর থেকে লগাতার হরতাল দেওয়া এবং ঢাকায় ব্যাপক শ্রমিক-ছাত্র-জনতার সমাবেশের আয়োজন করে একটি গণ-অভ্যূত্থান ঘটানো। জাসদের মূল রাজনৈতিক তত্ত্বের সঙ্গে এই অভ্যুত্থান পরিকল্পনা ছিল সামঞ্জস্যপূর্ণ। অন্য পিকিংপন্থী দলগুলোর মতো তাঁরা ‘মুক্ত এলাকার বিস্তার ঘটিয়ে রাজধানী অবরোধ করার’ কৌশলে বিশ্বাস করতেন না।
৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় সাজদের পার্টি ফোরামের ইমার্জেন্সি ষ্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক বসে ঢাকার কলাবাগানের একটি বাসায়। এই কমিটির সদস্য ছিলেন সিরাজুল আলম খান, আখলাকুর রহমান, মোহাম্মদ শাজাহান, হারুনুর রশীদ, মনিরুল ইসরাম, হাসানুল হক ইনু ও খায়ের এজাজ মাসুদ। সভায় হারুনুর রশীদ ও মোহাম্মদ শাজাহান উপস্থিত ছিলেন না। মো. শাজাহান তখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী। সভায় উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচন চলছিল। কর্নেল তাহের সভায় এসে উপস্থিত হন। সরকারি চাকরিতে থাকার কারণে তাঁকে কোনো কমিটিতে রাখা হতো না। তবে তিনি ষ্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়ে অংশ নিতে পারতেন। তাহের উপস্থিত সবাইকে জানান, জিয়াউর রহমান টেলিফোনে তাঁকে বাঁচানোর অনুরোধ করেছেন।
কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনীর একজন তরুণ কর্মকর্তা আসেন অসামরিক পোষাকে। তিনি তাহেরকে ফিসফিস করে কিছু বলেন এবং তাঁর হাতে দুটো চিরকুট দেন। ওই ব্যক্তি চলে যাওয়ার পর তাহের একটি চিরকুট পড়ে শোনান। এটা জিয়ার হাতের লেখা:
আই অ্যাম ইনটার্নড, আই ক্যান্ট টেক দ্যা লিড। মাই মেন আর দেয়ার। ইফ ইউ টেক দ্যা লিড, মাই মেন উইল জয়েন ইউ (আমি বন্দী, আমি নেতৃত্ব নিতে পারছি না। আমার লোকেরা তৈরি। তুমি যদি নেতৃত্ব দাও, আমার লোকেরা তোমার সঙ্গে যোগ দেবে)।
তাহের প্রস্তাব দিলেন, জিয়াকে সামনে রেখে অভ্যুত্থান ঘটাতে হবে। আখলাকুর রহমান বেঁকে বসলেন। সভাবসুলভ কণ্ঠে বললেন, ‘ইতা কিতা কন? তাইনরে আমরা চিটি না।’ সভায় আর যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, বাস্তবিকই তাঁরা কেউই জিয়াউর রহমানকে চেনেন না, তাঁর সঙ্গে কোন দিন আলাপ হয়নি। সবার মুখে প্রশ্ন, জিয়াকে কি বিশ্বাস করা যায়? তাহের বললেন, ‘আপনারা যদি আমাকে বিশ্বাস করেন, ত াহেল জিয়াকেও বিশ্বাস করতে পারেন। হি উইল বি আন্ডা মাই ফিট’ ( সে আমার পায়ের নিচে থাকবে)। তাহের আরও বললেন, তিনি ইতিমদ্যে সৈনিক সংস্থার লোকদের অভ্যুত্থান ঘটানোর নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন। তাহেরকে অনুরোধ করা হলো এই নির্দেশ প্রত্যাহার করার জন্য। কারণ, অন্যদের তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই। তাহের জানালেন, ‘এটা ওয়ানওয়ে কমিউনিকেশন। আমার লোকেরা যোগাযোগ না করলে আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারব না।’ তিনি দ্বিতীয় চিরকুকটা বের করলেন। বললেন, এটা বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার গোয়েন্দা শাখা থেকে পাঠানো হয়েছে এবং এটু খুবই জরুরি বার্তা, তাকে লেখা:
খালেদ মোশাররফ’স মেন আর মুভিং ফাষ্ট। দ্যা আয়রন ইজ ট্যু হট। ইট ইজ টাইম টু হিট (খালেদ মোশাররফের লোকেরা খুব তৎপর। লোহা খুবই গরম। এটাই আঘাত করার উপযুক্তত সময়)
আখলাকুর রহমান তবু আপত্তি করছিলেন। তাহের বলশেভিক বিপ্লবের প্রসঙ্গ টেনে লেনিনীয় কায়দায় বললেন, ‘টু লাইট আর নেভার’ (আজ রাতে অথবা কখনোই নয়)। সিরাজুল আলম খান হ্যাঁ-না কিছুই বললেন না। তাহের হাসানুল হক ইনুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। সভা শেষ হয়ে গেল। আখলাকুর রহমান রওনা হয়ে গেলেন ব্রাহ্মনবাড়িয়োর আখাউড়ার কাছে খড়মপুরে কল্লা শাহর মাজরেরর উদ্দেশে। তাঁর মাজারে মাজের ঘোরার বাতিক ছিল।
খায়ের এজাজ মাসুদের কাছে পুরো বিষয়টাই ‘বালখিল্য’ মনে হয়েছিল। তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এফ রহমান হলে চলে এলেন। এটাই ছিল তাঁর কমান্ড হেডকোয়ার্টার।
আবু তাহেরের নির্দেশিত অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার কথা ৭ নভেম্বরের প্রথম প্রহরে, রাত একটায়। অভ্যুত্থানের সাতটি লক্ষ্য ছিল:
১. খালেদ মোশাররফ চক্রকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা;
২. বন্দিদশা থেকে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করা;
৩. একটি বিপ্লবী মিলিটারি কমান্ড কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা;
৪. দলনির্বিশেষে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেওয়া;
৫. রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করা;
৬. বাকশাল বাদে সব দলকে নিয়ে একটি গণতান্ত্রিক জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা; এবং
৭. বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার বারো দফা দাবি বাস্তবায়ন করা।
নির্দেশনা ছিল রাত একটায় সুবেদার মাহবুব ফাঁকা গুলি ছুড়ে সংকেত দেবেন। তখন সৈনিকেরা অস্ত্রাগার ভেঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র নেবে এবং ‘বিপ্লব’ শুরু করে দেবে। উত্তেজনার বশে সময় ঠিক রাখা যায়নি। এক ঘন্টা আগেই গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। একদল সৈন্য জিয়ার বাসায় গিয়ে জানান, তিনি মুক্ত, বিপ্লব হয়ে গেছে। জিয়া বেরিয়ে এলে সৈনিকেরা তাঁকে টু-ফিল্ড রেজিমেন্টের অফিসে নিয়ে আসেন।
তাহেরের লোকেরা ঢাকা বেতারের নিয়ন্ত্রন নেন। এঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, গায়ে খাকি শার্ট-প্যান্ট, কাঁধে রাইফেল। তাড়াহুড়োয় টুপি ও বুট জোগাড় হয়নি। স্পঞ্জের স্যান্ডেল পরেই চলে এসেছেন তাঁরা। এঁদের একজন ছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সূর্য সেন হলের ছাত্রলীগ নেতা মো. শফিকুল ইসলাম। শফিকের মনে হয়েছিল, ‘বিপ্লব হয়ে গেছে, কিন্তু কী করতে হবে কেউ জানে না। পায়ে বুট না স্যান্ডেল-এটা দেখার মতো হুঁশ কারও ছিল না। ভোরবেলায় বেতারে একটা ঘোষণা দেওয়া হয়, বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ও বিপ্লবী গণবাহিনীর নেতৃত্বে সিপাহি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। ঘোষণায় তাহের কিংবা জাসদের পরিচিত কোনো নেতার নাম উল্লেখ করা হয়নি। ঘোষক তাঁর নামটিও বলেননি।
ভোরে তাহের ও ইনু সেনানিবাসে যান এবং জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। জিয়া জানতে চান, সিরাজুল আলম খান কোথায়? জিয়া জাসদের মূল নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। সিরাজুল আরম খান তখন কোথায়, তা কেউ জানেন না। তাঁর এই হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া নিয়ে ধারণা করা হয়, তাহেরের এই উদ্যোগ সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই এবং তিনি এর সঙ্গে নিজেকে জড়াতে চাননি।
তাহের জিয়াকে ভোরে বেতারকেন্দ্রে নিয়ে আসতে এবং তাঁকে দিয়ে একটি ভাষণ দেওয়াতে চেয়েছিলেন। জিয়া তাহেরের সঙ্গে কোথাও যেতে চাননি। কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা পরামর্শ দেন, সেনাপ্রধানের বেতারকেন্দ্রে যাওয়ার কী দরকার? ভাষণ তো এখানেই রেকর্ড করা যায়? এ প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর ওই সময়ের অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল কর্নেল মইনুল হোসেন চৌধুরীর বক্তব্য উল্লেখ করা যেতে পারে। ততাঁর বর্ণনামতে, ‘ লে. কর্নেল তাহের একটি বেসামরিক জিপে করে দু-তিনজন লোকসহ সেখানে এসে উপস্থিত হন। এসেই তিনি জিয়াকে রেডিও ষ্টেশনে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। আমরা জিয়াকে রেডিও ষ্টেশনে যেতে বারণ করি। এ সময় লে. কর্নেল আমিনুল হক ও তাহেরর মদ্যে ঝগড়া বেধে যায়। একপর্যায়ে আমিনুল হক তাহেরকে বলে বসেন, “আপনারা (জাসদ) তো ভারতের বি-টিম।” ফলে তাহের রাগান্বিত হয়ে সেখান থেকে চলে যান। শেষ পর্যন্ত জিয়ার ভাষণ সেনানিবাসেই রেকর্ড করা হয়। ৭ নভেম্বর সকালে এই ভাষণ প্রচার করা হয়। ভাষটি নিচে উদ্বৃত করা হলো:
প্রিয় দেশবাসী,
আসসালামু আলাইকুম।
আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, আনসার এবং অন্যদের অনুরোধে আমাকে সাময়িকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের চিফ মার্শাল ল অ্যাডমিনিষ্ট্রেটর ও সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হয়েছে। এ দায়িত্ব ইনশা আল্লাহ আমি সুষ্ঠুভাবে পালন করতে যথাসাস্য চেষ্টা করব। আপনারা সকলে শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করুন। দেশের সর্বস্থানে-অফিস-আদালত, যানবাহন, বিমানবন্দর, নৌবন্দর ও কলকারখানা পূর্ণভাবে চালূ থাকবে। আল্লাহ আমাদের সকলের সহায় হোন। খোদা হাফেজ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
জিয়ার এই ভাষণে কোথাও জাসদ, গণবাহিনী বা তাহেরের উল্লেখ নেই। ভোরেই ‘সিপাহি বিপ্লবের’ ঘন্টা বেজে গিয়েছিল। এই ভাষণ ‘বিপ্লবের’ কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দিল।
ঢাকা নগর গণবাহিনীর উদ্যোগে সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল এবং জিয়া ও তাহেরের সেখানে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। জিয়া সেনানিবাসের বাইরে আসতে অস্বীকার করেন। তিনি জানান, একজন সৈনিক হিসেবে তিনি কোনো জনসমাবেশে গিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার পক্ষপাতী নন। ততক্ষণে জিয়ার আশপাশে অনেক সেনা কর্মকর্তা উপস্থিত হয়েছেন। জিয়া তখন অনেকটা স্বচ্ছন্দ ও ভারমুক্ত।
ছাত্রলীগ-গণবাহিনীর সদস্যরা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চত্বরে শ্লোগান দিচ্ছেন, জিয়া-জলিল জিন্দাবাদ, জিয়া-তাহের জিন্দাবাদ। শহীদ মিনারে সকাল নয়টার দিকে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে আবুল হাসিব খান সবাইকে সমবেত হওয়ার জন্য ডাকাডাকি করছিলেন। রাস্তায় বেশ কিছু ট্রাক দেখা গেল। ট্রাকে দাঁড়িয়ে সৈনিক ও অসামরিক জনতা মুহুর্মুহু শ্লোগান দিচ্ছেন, ‘জিয়া-মোশতাক জিন্দাবাদ’, ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহ আকবর’। কোনো কোনো ট্রাকে খন্দকার মেশাতাকের ছবি। ছাত্রলীগের ঢাকা নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম একটা ট্রাকে মোশতাকের ছবি ছিঁড়ে ফেলতে গেলে সৈনিকরা সালামের ওপর চড়াও হন। তাঁরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। সমাবেশ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরপর তাঁরা সবাই শহীদ মিনার চত্বর থেকে সরে যান এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সায়েন্স অ্যানেক্স ভবনের সামনে জড়ো হন।
হাসিব খানকে লালবাগ থানা দখল করার অনুরোধ জানান আনোয়ার হোসেন। হাসিবকে তিনি বলেন, ‘পুলিশ হাসিনী ডিসব্যান্ড করা হয়েছে। আপনি থানা দখল করুন।’ হাসিব রাখি হননি। তাঁর কথা হলো, ‘আগে রেডিওতে পুলিশ ডিসব্যান্ড করার ঘোষণা দেন। তারপর দেখা যাবে।’ মোহাম্মদপুর-ধানমন্ডি ইউনিট গণবাহিনীকে বলা হয় মোহাম্মদপুর থানা দখল করতে। দেশে যদি বিপ্লব হয়ে থাকে, তাহলে আলাদা করে থানা দখল করার কী প্রয়োজন, এটা বোঝা গেল না। তবু গণবাহিনীর একটা দল মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে পুলিশ সদস্যদের বলল, ‘আমরা বিপ্লব করেছি। আনারা আমাদের সাথে আছেন তো?’ এর কয়েক দিন পর ওই দলের এক সদস্য খোকনকে একা পেয়ে মোহাম্মমদপুর থানার কয়েকজন পুলিশ বেধড়ক পেটায়। খোকন ছিলেন প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক ধীর আলী মিয়ার ছেলে।
৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি সায়েম সন্ধ্যায় বেতার ও টেলিভিশনে একটা ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি বলেন:
রাষ্ট্রপতির পদে জনাব খন্দকার মোশতাক আহমদের পুনর্বহাল হওয়ার পক্ষে স্বতঃস্ফূর্ত দাবি সত্ত্বেও তাঁরই অনুরোধক্রমে আমি রাষ্ট্রপতি দায়িত্বভার চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছি। জনাব খন্দকার মোশতাক আহমদের দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও তিনি ক্ষমতা হস্তান্তরের যে মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন, তা যেকোনো উন্নয়নশীল দেশে বিরল এবং সেই দেশের জনগনের জন্য গর্বের বিষয়।...
পরিবর্তত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন পরিচালনার জন্য আমরা কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।... এই কাঠামোতে রাষ্ট্রপতি স্বয়ং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হবেন। এতে তিনজন উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক থাকবেন। তাঁরা হচ্ছেন সেনাবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেরল জিয়াউর রহমান, নৌবাহিনীর প্রধান কমোডর মোশাররফ হোসেন খান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এম জি তাওয়াব।... জননেতাদের সমন্বয়ে একটা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হবে।... রাজনৈতিক আদর্শগত কারণে যেসব জননেতা আটক আছেন, তাঁদের অবিরম্বে মুক্তি দেওয়া হবে।
বিচারপতি সায়েমের ভাষণের পরপরই খন্দকার মোশতাক আহমদের একটি ভাষণ প্রচার করা হয়। ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখার জন্য যে অভূতপূর্ব বিপ্লব সংঘটিত হয়েছৈ’, ভাষণে তিনি সে জন্য দেশের সেনাবাহিনী, বিমানবাহনী, সকল নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী ও সর্বস্তরের জনগনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় জিয়া ঢাকা বেতার কেন্দ্রে যান। তাহের সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা একসঙ্গে বসে নতুন ও বিদায়ী রাষ্ট্রপতির ভাষণ শোনেন। উত্তেজিত সৈনিকেরা লিখিতভাবে তাঁদের বারো দফা দাবির একটি কাগজে জোর করে জিয়ার সই নেন। বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় জিয়াকে।
সূত্র: জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক
ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার
লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন।
দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য
মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন
আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি
আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন
যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা
বিরোধী। আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি
করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার
অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে
বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ
লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি
হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের
মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে
আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।
পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের
আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে
বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট
না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা
অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না,
সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।
পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে
ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায়
ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।
লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।