ইনসাইড থট

যুক্তরাষ্ট্রের ভিত্তিহীন অভিযোগ

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১২ ডিসেম্বর, ২০২১


Thumbnail যুক্তরাষ্ট্রের ভিত্তিহীন অভিযোগ

পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, আইন ও তথ্যসহ বাংলাদেশ সরকারের সকল মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তটি অযৌক্তিক। অভিযোগের তীর ‘র‍্যাব’ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দিকে নিক্ষেপ করা হয়েছে যা সত্যিই অবান্তর। কারণ শেখ হাসিনা সরকারের সময় ‘র‍্যাব’ সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে চলেছে এবং ‘মাদক পাচারের’ বিরুদ্ধে জড়িতদের আইনের অধীনে এনেছে। যা মার্কিন প্রশাসনেরও অন্যতম লক্ষ্য। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হল অবৈধ মানবপাচার এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপ বন্ধ করা। ‘র‍্যাব’ প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকেই বাংলাদেশে কার্যকর করে তুলছে।

আমরা জানি, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং উত্তম প্রশিক্ষিত নিরাপত্তা বাহিনী থাকা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ৬ লাখের বেশি লোক নিখোঁজ হয়।এমনকি যুক্তরাষ্ট্র তাদের পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। অথচ FBI, CIA, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইত্যাদির মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংস্থার প্রধানদের মানুষ নিখোঁজের জন্য শাস্তি দেওয়া হয় না। কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘন, ছয়’শত জন নিখোঁজ ইত্যাদির জন্য বাংলাদেশে ‘র‍্যাব’ দায়ী বলে মিথ্যা অভিযোগে কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।অথচ তারা মানবাধিকার রক্ষায় ও নির্ভয়ে একটি সুস্থ জীবনযাপনের অধিকার সমুন্নত রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন। আসলে র‍্যাবের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান প্রধানকে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী হিসেবে চিহ্নিত করে, মার্কিন প্রশাসন অপরাধী এবং সন্ত্রাসীদের উৎসাহিত করছে যা তাদের মানবাধিকার রক্ষার লক্ষ্যের বিপরীত।

২. ১০ ডিসেম্বর(২০২১) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) সাবেক ও বর্তমান ছয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ রয়েছেন। তিনি এখন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। বেনজীর আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের নিষেধাজ্ঞার আওতায়ও পড়েছেন তিনি।এ ছাড়া র‌্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ দপ্তর সরকারের এক নির্বাহী আদেশের (নম্বর ১৩৮১৮) আওতায় এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ আদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত ব্যক্তির সম্পদ বাজেয়াপ্তের কথা বলা হয়েছে।রাজস্ব বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে র‍্যাবকে একটি বিদেশি সংস্থা হিসেবে মার্কিন সরকারের নির্বাহী আদেশের অধীনে রাখা হয়েছে। এর ফলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে র‍্যাবও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে।যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বিভিন্ন দেশের ১৫ ব্যক্তি এবং ১০ প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, মিয়ানমার ও উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। চীনের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে জিনজিয়াংয়ে উইঘুরসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের কারণে।যুক্তরাষ্ট্রের মতে, যারা নিপীড়ন চালাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করবে, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র কথা বলবে।

৩. যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নিয়ে মানবাধিকারের চিন্তা পুরোটাই হাস্যকর। কারণ তাদের নিজেদের দেশেই রয়েছে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ। ২০২০ সালের জুন মাসে আমেরিকার মিনিয়াপোলিসে পুলিশের নির্মমতায় প্রাণ হারানো কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু ছিল সেদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘৃণ্য ঘটনা।সেসময় যখন দেশটির নানা জায়গায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে, তখন সেসব বিক্ষোভের সময়ও পুলিশি নির্মমতার বেশ কিছু ভিডিও মানুষকে স্তম্ভিত করেছে।মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও পাকিস্তানের মতো জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ।আর আমেরিকার বন্দিদের প্রতি আচরণের কথা তো বিশ্ববাসী জানে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূ-খণ্ডের বাইরে কিউবার দক্ষিণ-পূর্ব পাশে ক্যারিবীয় সাগরে স্থাপিত(২০০২) গুয়ানতানামো কারাগার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কারাগার যা বন্দীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত। এই কারাগারে বন্দীদের বিনাবিচারে আটক রাখা হয় এবং তথ্য আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে বন্দীদের ওপর যৌন অত্যাচার, 'ওয়াটার বোর্ডিং'-সহ বিবিধ আইনবহির্ভূত উপায়ে নির্যাতন চালানো হয়।নির্যাতনের প্রকার ও মাত্রা এতই বেশি যে এই কারাগারকে ‘মর্ত্যের নরক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ সত্ত্বেও এই কারাগারটিকে অব্যাহতভাবে নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করতে থাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে একে মার্কিনীদের ‘লজ্জা’ হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডব্লিউ মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করে চলেছে প্রতিনিয়ত। এক প্রতিবেদনে তারা বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গ উভয় বর্ণের মানুষ সমপরিমাণে মাদক সংক্রান্ত অপরাধে জড়িত রয়েছে। এ সত্ত্বেও মাদক সংক্রান্ত অপরাধের দায়ে কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকহারে আটক এবং বিচার করা হয়।আমেরিকার জনসংখ্যার মাত্র ১২ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী হলেও মাদক সংক্রান্ত অপরাধের দায়ে আটক ব্যক্তিদের ২৯ শতাংশই কৃষ্ণাঙ্গ। আমেরিকায় সাদাদের তুলনায় কালো মানুষদের ছয় গুণ বেশি আটকের ঘটনা ঘটে। পুলিশের হাতে অধিক হারে নিরস্ত্র আফ্রিকান-আমেরিকান হত্যার বিষয়টিও যুক্তরাষ্ট্রের জঘন্য ঘটনা।

আসলে নানা অপকর্মর জন্য মার্কিনীদের ‘লজ্জা’থাকলেও তারা অপর দেশের সমস্যা নিয়ে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করে হরহামেশায়। ১০ ডিসেম্বরে(২০২১) তারা আসলে মানবাধিকারের কথা বলতে গিয়ে ‘‘র‌্যাব’কে টার্গেট করেছে।মনে রাখা দরকার যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাব নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে বিশ্ববাসীকে ভুল বার্তা দিতে চেয়েছিল।যেমন, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার রায়ের পর বাংলাদেশ সরকারের ‘র‌্যাব’ বিলুপ্ত করা উচিত বলে মন্তব্য করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। র‌্যাবকে তারা ‘ইন হাউজ ডেথ স্কোয়াড’ বলেছিল এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও গুমের ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সরকারের ভূমিকারও সমালোচনা করেছিল। অথচ নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের দায়ে এই বাহিনীর ২৫ সদস্য শাস্তি পেয়েছে। তাদের মধ্যে ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং নয় সদস্যের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে। ফলে ১২ বছরে অর্জিত র‌্যাব-এর বিভিন্ন সাফল্যকে ছোট করে দেখার প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছিল। কিন্তু এই সংস্থাটির ব্যর্থতার পাল্লার চেয়ে সাফল্যের দৃষ্টান্ত বেশি। এজন্য র‌্যাব একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। 

কারণ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন ‘র‌্যাব’ বাংলাদেশ পুলিশেরই অপরাধ ও সন্ত্রাস বিরোধী ‘এলিট ইউনিট’ হিসেবে ইতোমধ্যে দেশের জনগণের আস্থাশীল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ গঠিত র‌্যাবের সদস্য হিসেবে সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীসহ পুলিশ, আনসার, বর্ডার গার্ড (বিজিবি) নিযুক্ত করা হয়। একই বছর ১৪ এপ্রিল থেকে কার্যক্রম শুরু করে র‌্যাব শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দেশের আইনশৃঙ্খলাসহ আমাদের নিরাপত্তার সামগ্রিক দায়িত্বে প্রশংসনীয় অনেক অবদান রেখেছে। আমেরিকা, জার্মান, চীন, ইসরাইল প্রভৃতি দেশের তৈরি আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত র‌্যাব সদস্যরা ব্যাটনও ব্যবহার করে থাকেন উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজনে। অভ্যন্তরীণ ৯টি বিভাগ নিয়ে র‌্যাবের প্রধান দপ্তর তাদের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। ডগ স্কোয়াড, বোমা নিষ্ক্রিয় ইউনিটসহ গোয়েন্দা শাখাগুলো রাষ্ট্র ও সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে সর্বদা তৎপর। ‘লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং’ জনগণকে তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত করে; অপারেশনের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দিয়ে থাকে। র‌্যাব সদস্যদের সন্ত্রাস প্রতিরোধে ট্রেনিং গ্রহণ বাধ্যতামূলক। তাদের ইন্টেলিজেন্স ও ইনভেস্টিগেশন কোর্সের বেসিক পাঠ, প্রাথমিক ড্রাইভিং, কম্পিউটার ও নেটওয়ার্কিং-এর জ্ঞান অর্জন করতে হয়। এছাড়া ফরেনসিক বিভাগ তাদের তদন্ত প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে। দেশজুড়ে র‌্যাবের ১২টি ব্যাটেলিয়নের মধ্যে ৫টিরই অবস্থান রাজধানীতে। মূলত র‌্যাব দেশের সকল এলাকা থেকে অপরাধীদের তথ্য সংগ্রহ করে। প্রাপ্ত তথ্য তাদের ইন্টেলিজেন্স উইং নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই ও নিশ্চিত করার পর দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে। র‌্যাবের দায়িত্ব ও কর্তব্য দিন দিন আরও বাড়ছে। কারণ ধর্মীয় জঙ্গিবাদ দমনে র‌্যাবের সাফল্যের পাশেই রয়েছে নতুন নতুন সন্ত্রাসী তৎপরতা। আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের সঙ্গে দেশীয় জঙ্গিদের সম্পর্কের বিষয়ে সাইবার-ক্রাইম সংঘটিত হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, স্থান ও ব্যাটলিয়নসমূহের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় তাদের নিয়মিত টহল ডিউটি রয়েছে। এই টহল আরও বিস্তৃত করার সময় এসেছে। কারণ তাদের ওপর সরকারসহ সাধারণ জনগণের আস্থা রয়েছে। এমনকি সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারের অভিযানে গোলাগুলির মধ্যে পড়ে গত ১৭ বছরে অনেক র‌্যাব সদস্য নিহত এবং পাঁচ’শরও বেশি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ বিষয়ে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক খান মোহাম্মদ (কেএম) আজাদ বলেছেন, ‘‘আমরা কখনো মানবাধিকার লঙ্ঘন করি না। সব সময় মানবাধিকার রক্ষা করি।তিনি বলেন, যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, খুন করে ধর্ষণ করে মাদক ব্যবসা চালায়, দেশ এবং জনগণের স্বার্থেই আমরা তাদের আইনের আওতায় আনি। অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা যদি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়ে থাকে, তাহলে দেশের স্বার্থে এই মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে আমাদের আপত্তি নেই।’’

৪. ‘র‌্যাবে’র কাজ আইনশৃঙ্খলার বিধান বলবৎ ও কার্যকর করা। দেশের বিচারব্যবস্থার কাছে অপরাধীকে তুলে দেওয়া। দেশকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের কবল থেকে মুক্ত রাখা। সাইবার-ক্রাইম রোধ করা। সহিংসতা রোধে মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় তাদের সব সময় আইনের পথে পরিচালিত হতে হয়। বলা হয়ে থাকে, দোষী ব্যক্তিকে আইনের মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করলে অপরাধ কমে যাবে; নির্মূল হবে অরাজকতা। আইন-কানুনের বৈধতা দিয়ে অপরাধীকে কারারুদ্ধ করলে সমাজ থেকে অপরাধ ক্রমান্বয়ে অপসৃত হবে। র‌্যাবের ভিশন হলো সকল নাগরিককে বসবাস ও কাজের সুন্দর এবং নিরাপদ আঙিনা তৈরি করে দেওয়া। এ কাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, নাগরিকদের নিরাপত্তা ও জানমাল রক্ষা করা, অপরাধ রোধ করা, অপরাধীকে বিচারের সম্মুখীন করা তাদের প্রধান কাজ। জনজীবনে শান্তি ও সুখ আনয়নে এ সমস্ত ব্যবস্থাকে সর্বদা গুরুত্ব দিতে বাধ্য তারা। মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে আইনশৃঙ্খলা ভালো হতে হবে সেই ব্যবস্থা বহাল রাখার জন্য র‌্যাবের ভূমিকা অনন্য। দুর্ধর্ষ অভিযানে গিয়ে সন্ত্রাসী মারা পড়লে কিংবা বোমা ও বিস্ফোরক উদ্ধারে জীবন বাজি রেখে অপারেশন চালালে তার প্রশংসা পান না তারা। অথচ র‌্যাব সদস্যরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্যপ্রযুক্তি অপরাধীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হচ্ছেন। সমাজে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য তাদের কৃতিত্ব অনেক বেশি। অপরাধ দমন করে মানুষকে নিরাপদ জীবন নির্বাহ করার অক্লান্ত পরিশ্রম সার্থক হবে তাদের প্রতি আস্থার জায়গাটি চির জাগরুক থাকলে।

এজন্যই র‍্যাব ও তার ছয় কর্মকর্তার ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।কারণ এদেশের র‌্যাব-পুলিশ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত না। লেখাবাহুল্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বস্তুনিষ্ঠভাবে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। তারা অতিরঞ্জিত সংবাদের ওপর ভিত্তি করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কারণ এদেশের পুলিশ কখনো কাউকে ক্রসফায়ার বা বিচার বহির্ভূত হত্যা করে না। বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা চ্যালেঞ্জিং। তবু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সুন্দরভাবেই সেই দায়িত্ব পালন করছে।তাঁর মতে, এদেশে অপরাধীদের মৃত্যুর বড় একটা কারণ, যখন সন্ত্রাসীদের ধরতে যাওয়া হয় তখন তারা সারেন্ডার করে না। তখন আত্মরক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি ছুঁড়তেই হয়। তারপরও পুলিশ গুলি ছুড়লে সেটার তদন্তভার একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে দেয়া হয়। তদন্তে কোনো গাফিলতি ধরা পড়লে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়।বাংলাদেশ পুলিশ আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ আইন মেনে নিজেদের পরিচালনা করে আসছে। নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তির বিরুদ্ধে ১৯৮৪ সালের জাতিসংঘ কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী হিসেবে, বাংলাদেশ তার দেশীয় আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেছে।কনভেনশনের অধীনে তার বাধ্যবাধকতা। এক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনে আইন প্রয়োগকারী কর্মীদের জড়িত থাকা প্রমাণিত হলে, আইন নিজস্ব গতিপথ গ্রহণ করে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

আসলে পুলিশ এবং এলিট ফোর্স র‌্যাবের দীর্ঘ অর্জিত ইমেজ ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ করতে শুরু হয়েছে নানামুখী ষড়যন্ত্র। ইতোমধ্যেই সেই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের নকশায় র‌্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর কথিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বানোয়াট এক অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র।

৫. মার্কিনীদের মানবাধিকারের বুলিকে ফুঁৎকারে উড়িয়ে রীতিমতোন তাদের ধুয়ে দেওয়া হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। বলা হচ্ছে, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পুলিশ নির্বিচারে সাধারণ মানুষ এবং শিশুদের হত্যা করছে।জাতিগত বৈষম্য, ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা, এবং পররাষ্ট্রনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে আমেরিকায় মানবাধিকার লঙ্ঘন স্পষ্ট।দেশটির পুলিশের হাতে আফ্রিকান-আমেরিকানদের হত্যা এবং আটক করার ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন ওপেন সিক্রেট। এমন দেশটির মুখে মানবাধিকারের ‘ছবক’ একেবারেই বেমানান। ইতোপূর্বে চীনও মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভণ্ডামির অভিযোগ তুলেছে।যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয়, বর্তমান সরকারের সঠিক দিক-নির্দেশনায় দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এবং জাতির সংকটকালীন আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখায় ‘র‌্যাবে’র অবদান আজ অনস্বীকার্য। কারণ অস্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমাদের উন্নতির পথে অন্যতম বাধা। এজন্য অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, অবৈধ অস্ত্র-গোলাবারুদ, বিস্ফোরক এবং এই ধরনের ক্ষতিকারক দ্রব্য উদ্ধার, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা প্রদান, যে কোনো সংঘটিত অপরাধ ও অপরাধীদের সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য প্রদান, সরকারি আদেশ অনুসারে অপরাধের তদন্ত করাসহ অন্যান্য সরকারি দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে ‘র‌্যাব’ সর্বদা নিয়োজিত।

বস্তুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাহসিকতা, বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা ও জনসেবার জন্য স্বাধীনতা পুরস্কারসহ নানা স্বীকৃতি পেয়েছে ‘র‌্যাব’।র‌্যাবের কর্মকর্তাগণ পেয়েছেন নানান পদক। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। এজন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখা। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যার জন্ম তার জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। দেশটি বারবার মানবাধিকার রক্ষায় তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। গত ১২ বছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করতে আইনের শাসন এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের উন্নতিতে এদেশ অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় আমাদের দরজা খোলার মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে মানবাধিকারের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার প্রমাণিত হয়েছে।এটা দুর্ভাগ্যজনক যে যুক্তরাষ্ট্র পক্ষপাতমূলক আচরণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ শেখ হাসিনা সরকার মানবাধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সকল সমালোচনা মোকাবেলা করে সরকার এক্ষেত্রে আরো কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।এজন্য ‘র‌্যাব’-এর মতো সংস্থাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ অযৌক্তিক।বরং মানবাধিকারের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের অগ্রগতি তারা বিবেচনা করবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক: ইউজিসি পোস্ট ডক্টোরাল ফেলো, বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

যুক্তরাষ্ট্র  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

উপজেলায় ভোটার কম কেন?


Thumbnail

#সবচেয়ে বেশি ক্ষেতলালে ৭৩ ভাগ
#শতকরা মাত্র ১৭ ভাগ মিরসরাইতে

১৩৯ টি উপজেলার মধ্যে ৩০টি উপজেলায় শতকরা ৩০ ভাগের কম ভোট পড়েছে। আর শতকরা ৫০ ভাগের বেশি ভোট পড়েছে মাত্র ২৩ টি উপজেলায়। সবচেয়ে হতাশাজনক হচ্ছে ইভিএমে ভোট নেয়া উপজেলাগুলোতে। ২০টি উপজেলায় ইভিএমে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কোনোটিতেই ৫০ ভাগ ভোটও পড়েনি। ইভিএমে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে পাবনার সুজানগর উপজেলায়, শতকরা ৪৯.৭৮ ভাগ। এখানে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আব্দুল ওয়াহাব, তার প্রাপ্ত ভোট ৬২ হাজার ৭৫২। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী শাহীনুজ্জামান পেয়েছেন ৫৮ হাজার ৪৪১। মাত্র ৪ হাজার ৩১১ ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হওয়ায় বলা যায় ভোটের লড়াই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। কারণ প্রথম ধাপের খুব কম উপজেলাতেই প্রতিদ্বন্ধীতামূলক নির্বাচন হয়েছে, অন্তত ভোটের ফলাফল তাই বলে। ইভিএমে সবচেয়ে কম শতকরা মাত্র ২২.৭০ভাগ ভোট পড়েছে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায়। এখানে বিজয়ী মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন পেয়েছেন ৪৭ হাজার ৮০৭ ভোট। আর মাত্র ৩ হাজার ৮২৩ ভোটে হেরেছেন মো. রাশেদ ইউসুফ। ভোটের লড়াই ভালো হলেও হতাশার ব্যাপার হচ্ছে এখানকার ৪ লাখ ৫৬ হাজার ২২২ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১ লাখ ৩ হাজার ৫৫৬ জন। কেন এতো কম ভোটার? প্রশ্নের জবাব কে খুজবে নির্বাচন কমিশন, দলীয়ভাবে আনুষ্ঠানিক প্রার্থী না দিয়ে অংশগ্রহনকারী ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল নাকি অন্য কেউ ? দেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষাথীরা কি গবেষণা করবেন?    

সবচেয়ে বেশি শতকরা ৭৩.১৬ ভাগ ভোট পড়েছে জয়পুরহাট ক্ষেতলাল উপজেলায়। এখানে ৯৫ হাজার ১৯১ ভোটের মধ্যে পড়েছে ৬৯ হাজার ৬৩৯টি। জয়ী দুলাল মিয়া সরকার পেয়েছে ৩০ হাজার ৪০০ ভোট আর নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী তাইফুল ইসলাম তালুকদার ২২ হাজার ৯০০ ভোট। এখানে তৃতীয় হয়েছেন সর্বশেষ উপজেলা চেয়ারম্যান মুস্তাকিম মন্ডল। যিনি পেয়েছেন ১৪ হাজার ৯২৮ ভোট। এই তিনজনই আওয়া লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নাকি আরেকজনও ছিলেন, নাজ্জাষী ইসলামের ভোট নাকি পেয়েছেন নামমাত্র ভোট,টেকেনি জামানতও। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেলো প্রার্থীরা ভোটারদের জয়ী দুলাল মিয়া ক্ষেতলাল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি। আর তাইফুল ইসলাম এর আগে ১৯৯০ ও ২১০ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। এখন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। মুস্তাকিম মন্ডল ২০১৮ সালে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এখানে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ ছিল, কারণ বর্তমান ও সাবেক দুজন চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেও দুলাল মিয়ার প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে প্রথম থেকেই। তিনি জয়ী হলেও অন্য দুজনও ভালো ভোট পেয়েছেন। টাকা খরচেও নাকি কেউ কারো চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন না। এই এলাকার সাংসদ জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন প্রত্যক্ষভাবে কারো পক্ষে নেননি বলেই জানালেন জয়পুরহাটের দুজন সাংবাদিক। তবে প্রথম দিকে তার একজনের প্রতি পরোক্ষ সমর্থন থাকলেও পরবর্তীতে দলের নেতাকর্মী বা ভোটারদের কোনো একজন প্রার্থীকে ভোট দিতে তিনি এমপি হিসেবে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেননি। আর সুষ্ঠু ভোটের জন্য কয়েকজন প্রশংসা করলেন জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলমের। হায় অন্য উপজেলাগুলোতে এমন হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে “ ভোটারহীন নির্বাচনের’’ অপবাদ সইতে হতো না। আওয়ামী লীগ প্রধান যে বিএনপি ছাড়া নির্বাচনের কৌশল হিসেবে দলের নেতাদের মধ্যেই উপজেলা পরিষদের নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্ধিতামূলক করতে চেয়েছিলেন তাও সফল হতো, যদি প্রথম ধাপের নির্বাচনের মধ্যে ৭০ টির অবস্থা ক্ষেতলাল উপজেলার মত হতো। তবে উল্লেখ করতেই হয় ক্ষেতলালে ভোটের হার বেশি হলেও ভোটারের উপস্থিতি অনুযায়ী খুবই খারাপ ভোট হয়েছে একই জেলার আক্কেলপুর উপজেলায়। ভোট পড়েছে মাত্র শতকরা ১৯.৯৩ ভাগ। ১ লাখ ২২ হাজার ৮৪২ ভোটের মধ্যে ভোটার হাজির হয়েছিলেন ২৪ হাজার ৪৮৮ জন। যার মধ্যে মোকসেদ আলি মন্ডল ১৯ হাজার ৫৩৯ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী নুরন্নবী আরিফ ভোট পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ১৮৮। বলা যায় নূন্যতম প্রতিদ্বন্ধিতা হয়নি এখানে। এই জেলার অন্য একটি উপজেলা কালাইতে ভোট পড়েছে ৬৯.৭৫ ভাগ। 

এবার বলি সবচেয়ে কম, শতকরা মাত্র ১৭ ভাগ ভোট পড়া চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার কথা। এখানে মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন নয়ন ৩৩ হাজার ৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত, আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী শেখ মোহাম্মদ আতাউর রহমান পেয়েছেন ২০ হাজার ৭৬৭ ভোট। এখানে আরো তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। এদের মধ্যে ফেরদৌস হোসেন আরিফ ৩ হাজার ৪৩৪, উত্তম কুমার র্শমা ৩ হাজার ৩৪৬ এবং মোহাম্মদ মোস্তফা ৬৬৫ ভোট পেয়েছেন। এই উপজেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা  ৩ লাখ ৭২ হাজার ২৫৭টি । এই উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের এলাকা। গত সংসদ নির্বাচনে তিনি নিজের ছেলে মাহবুব উর রহমান রুহেলকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য সুপারিশ করে দলের মনোনয়নে তাকে এমপি করতে পেরেছেন। তখন উপজেলা আওয়ামী লীগের যারা তার জন্য কাজ করেছেন তারা এবারের উপজেলা নির্বাচনে সরাসরি কোনো চেয়ারম্যান প্রার্থীর জন্য প্রচারে নামেননি। আর প্রতিদ্বান্ধতা হয়েছে যে দুজনের মধ্যে তাদের দুজনই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নেতা। এনায়েত হোসেন নয়ন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আর শেখ আতাউর রহমান সাধারন সম্পাদক । তিনি কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেলো মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একএম জাহাঙ্গীর ভূইয়ারি একটি বিতর্কিত বক্তব্য নির্বাচনে দারুণভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। স্থানীয় পত্রিকার খবর অনুযায়ী তিনি ২৯ এপ্রিল একটি সমাবেশে শেখ আতাউর রহমানের পক্ষে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছিলেন, “ আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রিয়নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ‍সুযোগ্য সন্তান মাহবুব উর রহমান রুহেলকে জিতানোর জন্য আমরা অনেক অপকর্ম করেছি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো অপকর্ম ছাড়া ভোট কেন্দ্র খোলা রাখবো।’’ এই বক্তব্যের জন্য তাকে কেন্দ্র থেকে শোকজ করা হয়েছে। আবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবীর নিজেই উপজেলা নির্বাচনে আগ্রহী ছিলেন। স্থানীয় দুজন সাংবাদিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে বর্তমান সাংসদের পরোক্ষ সমর্থন নাকি ছিল এনায়েত হোসেন নয়নের পক্ষেই। ফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বুঝতে পারেনি দল কাকে চায়, আর যেহেতু দলীয় প্রতীকও ছিল না, তাই তারা ভোট কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী ছিল না। আর মাঠের বিরোধীদল বিএনপি বর্জন করেছে, জাতীয় পার্টি উপজেলা নির্বাচনে থেকেও নাই। ফলে ৩ লাখ ৭২ হাজার ভোটারের মাত্র ৬৩ হাজার ২৬৬ ভোট দিয়েছেন মিরসরাইয়ের উপজেলা নির্বাচনে। 
কেন ভোটারের উপস্থিতি কম? তা নিয়ে কারো মাথা-ব্যাথা নেই। সাধারন মানুষের ভাবনা এমন যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে তাদের ভোট দেয় না দেয়ায় কিছুই আসে যায় না। দেশের দুই বড় দলের একটি আওয়ামী লীগ অংশ নিলেও তারা দলীয় প্রার্থী না দিয়ে উন্মুক্ত করেছে,দেয়নি প্রতীকও। বিএনপি আছে বর্জনে। জাতীয় পার্টি নিজেরাই বিপর্যস্ত। একটি পৌরসভায় স্থানীয় মানুষ যেভাবে তার সেবা পায়,উপজেলা পরিষদ থেকে নাগরিক সেবা কম,উন্নয়নের কাজও বেশি হয় ইউনিয়ন পরিষদে। ফলে ভোটারের আগ্রহ কম। তারই প্রতিফলন পড়েছে উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্বের ভোটে। এখন দেখা যায় দ্বিতীয় পর্বে কাল ২১ মে ভোটে কেমন ভোটার আসে ভোট কেন্দ্রে?


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আমার চোখে দেখা ১৭ মে, ১৯৮১


Thumbnail

আমি ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিলেতে এফআরসিএস ডিগ্রি লাভ করার প্রায় এক বছর পর দেশে ফিরি। ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ফেরার পরে তখন আমি একধরনের দোটানায় ছিলাম। কারণ বঙ্গবন্ধুকে ষড়যন্ত্রকারীরা হত্যা করেছে। যার কাছে আমার নিয়মিত যাতায়াত ছিল তিনি নেই। তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা বেঁচে আছেন, তারাও দেশে নেই। আমি জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এর সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করি। আমি হাসপাতালে যাই, কাজ করি। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা তখন জেলে। যারা বাইরে ছিলেন তারা আমার কাছে আসতেন। তাদের সঙ্গে আলাপ হয়। ছাত্রলীগ ও বিএমএ’র জুনিয়র ডাক্তারদের সাথেই তখন আমার সময় কাটে। ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এর নেতৃত্বে অনেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মী আমার বাসায় আসতো। তাদের সাথে কথা বলে অন্তত পক্ষে এটা মনে হতো যে, ঠিকই দেশে ফিরেছি। কিন্তু তারপরও একটা অপূর্ণতার ভাব ছিল। 

শেখ হাসিনাকে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয় এবং ১৭ মে তিনি দেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তখন দেশের ভেতরে বিভিন্ন আলাপ আলোচনায় যা শুনতাম তাতে আমার নিজের মনে হতো, তিনি বোধহয় দেশে না আসলেই ভালো হতো। কারণ, আমার মনে একটা বদ্ধমূল ধারণা তখন উৎপন্ন হয়েছিল। আর এই ধারণাটি ছিল, আসার সাথে সাথে তাকে গুলি করে হত্যা করা হবে! তাই ভাবলাম অন্তত বিদেশে বঙ্গবন্ধুর কন্যা বেঁচে থাকুক এটাই বড় কথা। কিসের রাজনীতি, কিসের কি? বঙ্গবন্ধু নেই। সত্যিকার অর্থে বলা চলে আমি একপ্রকার রাজনীতিবিমুখ ছিলাম তখন।
 
তারপর যখন ১৭ মে আসলো তখন আমি ভাবলাম, এয়ারপোর্টে যাই। এয়ারপোর্টে আমাকে একজন বুদ্ধি দিল, একটু দূরে গাড়ি রেখে হেটে যাওয়ার জন্য। আমি তাই করলাম। তখন প্রথমদিকে খুব বেশি লোকজন নজরে পড়েনি। কিন্তু যখন বিমান নামলো এবং নেত্রী শেখ হাসিনা বিমান থেকে নামলেন তখন চতুর্দিকে হঠাৎ দেখি লক্ষ লক্ষ লোক। আমার তখন চোখ দিয়ে তখন পানি। এখনও তাহলে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা, বঙ্গবন্ধুর কন্যাদের প্রতি ভালোবাসা মানুষের যায়নি। 

এর আগে আমার মনে হতো যে, আমরা স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছি। আর স্বপ্ন দেখতে যদি কেউ ভুলে যায় তাহলে সে মানুষের বেঁচে থাকা আর মৃত্যুর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আমার সত্যিকার মানসিক অবস্থা তখন এমনই স্বপ্নহীন ছিল। স্বপ্ন দেখতেই ভুলে গেছিলাম। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কন্যার প্রতি লক্ষ লক্ষ মানুষের এমন ভালোবাসা দেখে আমার তখন মনে হলো এই বুঝি আবার জীবিত হলাম। তখনও শেখ হাসিনার সাথে আমার দেখা করার সুযোগ হয়নি। কারণ সেই সময় তাঁর কাছে যাওয়ার ক্ষমতা আমার ছিল না। তাই আমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলাম। 

মানুষের ভিতরে যে ভাবাবেগ তা পরদিন মানুষের সঙ্গে মিশে বুঝলাম। তখন একটা সুক্ষ্ম মিল আমি খুঁজে পেলাম। তাহলো, বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি যখন পাকিস্তান কারাগার থেকে ফিরে আসেন, তখন আমরা সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত জনগণ যেমন আনন্দিত হয়েছিলাম, আমাদের স্বাধীনতা সম্পূর্ণতা পেল। ঠিক তেমনি একটা ভাব আমার মনে হল। তখন মাত্র শেখ হাসিনা এসেছেন। শুধুমাত্র তাকে দেখার ফলে জনগণের মধ্যে একটা উজ্জ্বীবিত ভাব এলো। যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতারা এদের সবার ভেতরে একটি গণজোয়ারের ভাব লক্ষ্য করা গেল। 

এত বছর পরে আজ আমি বলছি, সেদিন আমি ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি এই শেখ হাসিনা নেত্রী শেখ হাসিনা হবেন, দার্শনিক শেখ হাসিনাতে রূপান্তরিত হবেন। এবং তাঁর দর্শন দ্বারা বাংলাদেশে সোনার বাংলা হিসেবে গঠন করতে পারবে। সেদিন আমার মধ্যে আবেগ ছিলোৎ কিন্তু এই চিন্তাগুলো ছিল না। তারপর ধীরে ধীরে তিনি কীভাবে দেশ গড়েছে তা সমস্ত লোকই জানে। সেই ১৭ মে যে জনসাধারণ তাকে একটু দেখবার জন্য গিয়েছিল, তাদের মনের ভাষা, মুখের ভাব এসব যদি অনুভব করা যায় তাহলে বোঝা যায়, সত্যি বাংলাদেশ একটি নতুন যুগে সেদিন প্রবেশ করেছিল। এবং পরবর্তীতে শেখ হাসিনা তিনি তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শীতা এবং দার্শনিক ভিত্তির কারণে জনগণের আশা আকাঙ্খাকে পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেন এবং বাংলাদেশকে আজ সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করার দারপ্রান্তে। 

সেই ১৭ মে’র কথা যদি চিন্তা করি, তখন অন্তত আমি ব্যক্তিগতভাবে এতোদূর পর্যন্ত দেশকে তিনি এগিয়ে নিয়ে যাবে তা চিন্তা করিনি। এখন যেমন তিনি সমস্ত বিশ্বে নন্দিত বিশ্বনেতা। সেই তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে। সেই ১৭ মে’র কথা আজকে মনে পড়ে। আমি প্রার্থনা করি দার্শনিক শেখ হাসিনাকে যেন সৃষ্টিকর্তা ভালো রাখেন এবং দেশ গড়ার সুযোগ যেন তিনি অনেকদিন পান।  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

প্রত্যাবর্তনের পর সেদিন তিনি যা বলেন


Thumbnail

কাঁদতে কাঁদতে আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত বিপ্লবী সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরেন ১৯৮১ সালের ১৭ মে। দিল্লী থেকে কলকাতা হয়ে ঢাকায় আসেন বিকেল চারটা বত্রিশ মিনিটে । যাত্রা বিরতিতে কলকাতা বিমান বন্দরে বসে অঝোরে কেঁদেছেন। বিমানে কেঁদেছেন পাঁচ ছয় বার। এয়ারক্রাফট থেকে নামার আগে আব্দুর রাজ্জাক যখন তাঁকে ফুলের মালা দেন, তখনও  তিনি কাঁদছিলেন।  

প্রকৃতিও সেদিন অঝোরে কেঁদেছিল।  পৌনে পাঁচটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি ঝরিয়ে প্রকৃতি তাঁর কষ্টের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছিল। কুর্মিটোলা থেকে তিনি যান বনানী গোরস্থানে। সেখানে যেয়ে আবার তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। বনানী থেকে তিনি যান শেরে বাংলা নগরে। সেখানে ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে লক্ষ লক্ষ জনতা অপেক্ষা করছিল। কান্না ভেজা কণ্ঠে তিনি বক্তব্য রাখেন।

কি বলেছিলেন তিনি লাখ লাখ জনতার সমাবেশে? হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া ফলাও করে এসব খবর সেদিন কোন পত্রিকা বিস্তারিত প্রকাশ করেনি। ৪৩ বছর আগের সে সব পত্রিকা খুঁজে পাওয়াও আজ কষ্টসাধ্য। সেদিনের ভাষণের যতটুকু উদ্ধার করা গেছে তা বাংলা ইনসাইডারের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।  

আজকের জনসভায় লাখো চেনা মুখ আমি দেখছি। শুধু নেই প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাই বোন, আরো অনেক প্রিয়জন।  ভাই রাসেল, আর কোনদিন ফিরে আসবে না। আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন। স্বামী সংসার ছেলে রেখে আমি আপনাদের কাছে এসেছি।

বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য আমি এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেতা নেতা হবার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসাবে, মেয়ে হিসাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসাবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।

আমি বঙ্গবন্ধুর হত্যাসহ পরবর্তীকালের বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। বিচার চাই বাংলার মানুষের কাছে, আপনাদের কাছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার বিচার করবে না। ওদের কাছে বিচার চাইবো না। ক্ষমতাসীনরা বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবার পরিজন হত্যা করে বলেছিল, জিনিসপত্রের দাম কমানো ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আজকে দেশের অবস্থা কি? নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বী। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। শ্রমিক তার ন্যায্য পাওনা পাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। দিনে দুপুরে মানুষ খুন করা হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম দরিদ্র দেশে পরিণত হয়েছে।  সাধারণ মানুষ খেতে পারছে না, আর একশ্রেণীর লোক প্রচুর সম্পদের মালিক হচ্ছে।

ক্ষমতার গদি পাকাপোক্ত করার জন্য ওরা আগামী দিনে বাংলাকে শ্মশানে পরিণত করবে। আবার বাংলার মানুষ শোষণের শৃংখলে আবদ্ধ হচ্ছে। আমি চাই বাংলার মানুষের মুক্তি। শোষণের মুক্তি। বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করেছিলেন। আজ যদি বাংলার মানুষের মুক্তি না আসে, তবে আমার কাছে মৃত্যুই শ্রেয়। আমি আপনাদের পাশে থেকে সংগ্রাম করে মরতে চাই।

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু যে সিস্টেম চালু করতে চেয়েছিলেন তা যদি বাস্তবায়িত হতো, তবে বাংলার মানুষের দুঃখ আর থাকতো না। সত্যিকার অর্থেই বাংলা সোনার বাংলায় পরিণত হতো। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি বাস্তববায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করে দিতে চাই। আমার আর কিছু পাবার নেই। সব হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি; আপনাদের ভালবাসা নিয়ে, পাশে থেকে বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য। আপনারা আমার সাথে শপথ করুন, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি বাস্তবায়ন, শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য নেতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ করবো।  

স্বাধীন সার্বভৌম জাতি হিসাবে বেঁচে থাকার জন্য স্বাধীনতাযুদ্ধে বাঙালি জাতি রক্ত দিয়েছে। কিন্তু আজ স্বাধীনতা বিরোধীদের কাছে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সংগ্রাম করি।

আপনাদের ভালবাসার আশা নিয়ে আমি আগামী দিনের যাত্রা শুরু করতে চাই। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত চার রাষ্ট্রীয় নীতি বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।

(তথ্যসূত্র: সংবাদপত্রে শেখ হাসিনার বক্তৃতা: ১৯৮১-১৯৮৬; প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ, প্রকাশকাল: সেপ্টেম্বর ২০২৩)


প্রত্যাবর্তন   আওয়ামী লীগ   শেখ হাসিনা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে জিয়ার অপতৎপরতা


Thumbnail

আজ থেকে তেতাল্লিশ বছর আগে, ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের খবরে কেবল আওয়ামী লীগ তাদের নেতা-কর্মীরাই নয়, দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষই খুশি হয়েছিল। তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে তখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একটি লিফলেট ছাপিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছিল।বাঙালী জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক/ সংগ্রামী নেত্রী/ শেখ হাসিনা ওয়াজেদের/ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আহ্বান:” শিরোনামে প্রচারিত সেই লিফলেটে লেখা ছিল: “প্রিয় ভাই বোনেরা, কঠিন দুঃসময়ের অন্ধকার পেরিয়ে আমরা আজ জাতীয় জীবনের এক মাহেন্দ্রক্ষণে উপনীত হয়েছি। আসছে ১৭ই মে লক্ষ শহীদের রক্তে কেনা বঙ্গবন্ধুহীন এই স্বদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করছেন তাঁর আদরের কন্যা সংগ্রামী নেত্রী শেখ হাসিনা। বাঙালীর মহান মুক্তি সংগ্রামের অঙ্গীকার নিয়ে জনতার মুক্তির পতাকা হাতে জনক-জননী, ভাই স্বজনের রক্তে ভেজা মাটিতে ফিরে আসছেন তিনি। জাতীয় জীবনের মহালগ্ন ১৭ই মে।

ওই লিফলেটে আরো লেখা ছিল: “আমাদের সকল ভরসার স্থল জাতির জনক আজ নেই। জনতার মুক্তির দ্বিতীয় বিপ্লবের সূচনাপর্বে তিনি বুকের রক্ত ঢেলে দিলেন সাম্রাজ্যবাদ দেশীয় প্রতিক্রিয়ার হিংস্র চক্রান্তে। কিন্তু মহামানবের মৃত্যু নেই, মুক্তির দিশারী বেঁচে থাকেন মুক্তি সংগ্রামের প্রাণশক্তিরূপে।...তিনি আমাদের কর্ম চেতনার হাতিয়াররূপে নির্মাণ করে গেলেন। বঙ্গবন্ধুর এই কর্মসূচীকে আমরা বহন করে চলেছি মানুষের মুক্তির মিছিলে। আর এই মিছিলের অগ্রসেনানী শেখ হাসিনা।

প্রচারপত্রে আরও বলা হয়েছিল: “...ক্ষমতার মোহে মদমত্ত একশ্রেণীর বন্দুকধারী তার চাটুকার রাজনৈতিক দলে চলছে বিলাসী উন্মত্ততা। ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা।...আজ এই সময়ের মুখোমুখি শেখ হাসিনার আগমন তাই আমাদের জীবনে তাৎপর্যমণ্ডিত। আমাদের প্রত্যাশাজনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের পথ প্রশস্ত করবে প্রত্যাবর্তন। বাঙালী জাতিকে তিনি নেতৃত্ব দেবেন জাতির জনকের আরাধ্য দ্বিতীয় বিপ্লবের মহান কর্মসূচী বাস্তবায়নে সৎ, বিপ্লবী, সুশৃঙ্খল, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীবাহিনীর সংগঠন গড়ে তুলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন শোষণমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার মহাসংগ্রামে। আর তাই প্রত্যাবর্তন হোক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা।

দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সারাদেশে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিপুল প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হলেও তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ স্বস্তিতে ছিল না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রাম তীব্রতর হওয়ার আশঙ্কায় সে সময়ের ক্ষমতাসীন দলের নেতারা শঙ্কিত বোধ করছিল। আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হবার পর থেকেই শেখ হাসিনার বিরূদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা ব্যাপক অপপ্রচার শুরু করে। ১৯৮১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বিএনপির এক সভায় শেখ হাসিনাকে বিদেশি শক্তির তল্পিবাহক বলে অভিহিত করা হয়। একই দিনে আরেকটি সভা থেকে বিএনপির নেতারা বলেছিলেন, বাকশালিরা ভারতের গোলাম। তারা বিদেশি সৈন্যের সহায়তায় ক্ষমতায় বসতে চায়। যে দলের প্রধান দিল্লিতে, সে দল জনগণের কল্যান করতে পারে না। সাতাশে ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর খুনী মুশতাক গংদের মুখপত্র সাপ্তাহিক ইত্তেহাদে বলা হয়েছিল, ইন্দিরার নীলনকশা এখন বাস্তবায়নের পথে এবং বাংলাকে সিকিম বানাবার জন্যই শেখ হাসিনাকে দেশে পাঠানো হচ্ছে। পত্রিকাটিতে আরো বলা হয়, “৭৫ এর পর তারা দিল্লি লন্ডনে বাংলাদেশ-বিরোধী প্রচেষ্টা চালায়। লন্ডনে জমে ওঠে দিল্লির সেবাদাসদের আড্ডা। তারাই আজ বাকশালী কমিটির ছত্রচ্ছায়ায় দেশে ফিরছে। সমস্ত কিছু ঠিক করে হাসিনাকে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে।

সে সময়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন সামরিক কর্মকর্তা থেকে রাষ্ট্রপতি বনে যাওয়া জিয়াউর রহমান। শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের খবরে সে সময়কার জিয়া সরকারের ভিতরে উদ্বিগ্নতার লক্ষণ দেখা দিয়েছিল। তার আগে আওয়ামী লীগ ব্রাকেটবন্দি হয়ে গিয়েছিল ; আওয়ামী লীগ (মালেক), আওয়ামী লীগ (মিজান)- ওরকমভাবেই পরিচালিত হচ্ছিল। বঙ্গবন্ধুর আর্দশের কর্মীরা দিশেহারা হয়ে যাচ্ছিলেন। তেমন একটি সময় ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ গঠিত হওয়াকে তৎকালীন জিয়া সরকার মোটেই ভাল চোখে দেখেনি। শেখ হাসিনার দেশে প্রত্যাবর্তন ঠেকানোর জন্য জিয়াউর রহমান সরকারের উদ্যোগে তাইশেখ হাসিনা আগমন প্রতিরোধ কমিটি গঠনকরা হয়েছিল, যার আহ্বায়ক ছিলেন তৎকালিন জাতীয় সংসদের স্পিকার মির্জা গোলাম হাফিজ। এর আগে শেখ হাসিনা দেশে ফিরছেন জানতে পেরে জিয়া সাপ্তাহিক ছুটির দিনে (তখন রবিবার) মে মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে দেওয়া হবে না

বৈঠক শেষে জিয়ার প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেনশেখ হাসিনার দেশে ফেরা নিয়ে আমরা দেশে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছি।পরদিন মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এএসএম মোস্তাফিজুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেনজননিরাপত্তার স্বার্থে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে দেওয়া হবে না এই মোস্তাফিজুর রহমান, যিনি একসময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন, তিনি তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে আইও (Interrogation Officer) ছিলেন। তার মূল দায়িত্ব ছিল অভিযুক্তদের কাছ থেকে নির্যাতনের মাধ্যমে জোরপূর্বক নানাভাবে স্বীকারোক্তি আদায় করা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা জানিয়ে দেন তাঁকে যদি হত্যা করার চেষ্টাও করা হয় তাহলেও তিনি দেশে ফিরবেন এবং তিনি ১৭ মে ১৯৮১ সালে ফিরেছিলেন গণআকাঙ্খার কাছে নতি স্বীকার করেশেখ হাসিনা আগমন প্রতিরোধ কমিটি গঠনশেখ হাসিনা আসার আগেই তাদের কর্মসূচি স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিল।

দীর্ঘ 'বছর বিদেশে অবস্থানের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে এলে লাখো জনতা অকৃপণ প্রাণঢালা অভ্যর্থনার মধ্যদিয়ে তাদের নেত্রীকে বরণ করে নেন। মধ্যাহ্ন থেকে লক্ষাধিক মানুষ কুর্মিটোলা বিমানবন্দর এলাকায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন কখন শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি অবতরণ করবে। বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে বিমানবন্দরে কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ঢাকা সেদিন মিছিলের শহরে পরিণত হয়েছিল। সকাল থেকেই শহরজুড়ে কেবলি মিছিল আর মিছিল। সেদিন শেখ হাসিনাকে সম্বর্ধনা জানাতে ঢাকা শহরে প্রায় ১৫ লাখ লোক উপস্থিত ছিলেন। সেদিনের ঢাকা ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি যেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানের বন্দীশালা থেকে ঢাকায় ফিরে এসেছিলেন, সেদিনটাকেই মনে করিয়ে দিচ্ছিল। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখার জন্য ঢাকায় মানুষের ঢল নেমেছিল। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শেরেবাংলানগর পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে। ফার্মগেট থেকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর পর্যন্ত ট্রাফিক বন্ধ ছিল প্রায় ছয় ঘন্টা।  বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের পর সমসাময়িক রাজনীতিতে ধরনের ঘটনা ছিল নজিরবিহীন।

কখন শেখ হাসিনাকে বহনকারী ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমান অবতরণ করবে সেদিকে নজর রেখে লক্ষাধিক মানুষ মধ্যাহ্ন থেকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর এলাকায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিলেন। বিকেল সাড়ে তিনটা থেকেই বিমানবন্দরে কোন নিয়মশৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হয় নি। হাজার হাজার মানুষ ভিআইপি লাউঞ্জের গেটে নিয়োজিত পুলিশের বেষ্টনী ভেদ করে প্রথমে দেয়ালের উপর ওঠে। একই সময়ে বিমানবন্দর ভবনের দোতলায় কন্ট্রোল টাওয়ারের যেখানে স্থান করা সম্ভব সেখানেই জনতা উঠে যায়। সবারই উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখা। পুলিশ বারবার চেষ্টা করেও তাদের সরাতে পারে নি। বিমানবন্দরের বাইরে অসংখ্য মানুষ অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন।

সাদা-কালো রঙের প্রিন্টের শাড়ি পরিহিতা শেখ হাসিনা যখন ৪টা ৩২ মিনিটে সিঁড়ি দিয়ে বিমান থেকে সজ্জিত ট্রাকে নামছিলেন; তখন লাখো জনতার কণ্ঠে গগনবিদারী স্লোগান উচ্চারিত হচ্ছিল ঠিক এভাবেই– 'শেখ হাসিনা তোমায় কথা দিলাম, মুজিব হত্যার বদলা নেব', 'শেখ হাসিনা, স্বাগত শুভেচ্ছা' 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' বিমান থেকে ভিআইপি লাউঞ্জ পর্যন্ত হাসিনাকে নিয়ে আসতে ট্রাকটির ১৫ মিনিট সময় লাগে। সবমিলিয়ে এক অভূতপূর্ব পরিবেশ তৈরি হয়। পরিবেশ উচ্ছ্বাসের, পরিবেশ আনন্দে অশ্রু ফেলার। বিমান থেকে নামার আগে দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক যখন শেখ হাসিনার গলায় মালা দিচ্ছেলেন, তখন তিনি অঝোরে কাঁদছিলেন। কলকাতা বিমানবন্দরে এবং ঢাকা আসার পথেও শেখ হাসিনা পাঁচ-ছয়বার অঝোরে কেঁদেছিলেন।

বিকেল চারটার দিকেই আকাশে কালো মেঘ ছিল। পৌনে পাঁচটায় শেখ হাসিনাকে নিয়ে মিছির শুরু হবার পরপরই চারিদিক অন্ধকার করে বৃষ্টি শুরু হয়। রাত আটটা পর্যন্ত সেদিন মুষলধারে বিরতীহীন বৃষ্টি ঝরেছিল। একদিকে প্রবল বর্ষণ, সেইসাথে তীব্র ঝড়। প্রকৃতি ভয়াল রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছিল। এরই মাঝে ট্রাকে রাস্তার দুপাশের জনতার কণ্ঠে ছিল গগনবিদারী শ্লোগান। বর্ষণসিক্ত শেখ হাসিনা ঝড়ের মাঝেও দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে যাচ্ছিলেন বনানী হয়ে শেরেবাংলানগরের সভাস্থলে। বনানী গোরস্থানে শেখ হাসিনার মা নিহত পরিজনের কবর জিয়ারত করেন। কবরস্থানে তিনি কান্নায় আকুল ভেঙ্গে পড়েছিলেন। কবরে শায়িত মাকে উদ্দেশ্য করে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেছিলেন, ‘মা, আমাকে কেন রেখে গেলে?’

কুর্মিটোলা বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত আট মাইল রাস্তা অতিক্রম করতে সময় লাগার কথা খুব বেশি হলে ত্রিশ মিনিট। প্রায় তিনঘন্টায় শেখ হাসিনা শেরেবাংলা নগরের সভাস্থলে পৌছিয়েছিলেন। তখনও চারদিক অন্ধকার, মুষলধারে বৃষ্টি। একদিকে প্রবল বর্ষণ, সেই সঙ্গে কালবৈশাখী ঝড়। ঝড়বৃষ্টিতে নগরজীবন তখন প্রায় বিপন্ন, রাস্তাঘাটে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে গেছে। কিন্তু ঝড়বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সভাস্থলে তখনো লক্ষ লক্ষ লোক উপস্থিত।  শেখ হাসিনাকে তারা দেখবেনই। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় তিনি গণসম্বর্ধনা সভার মঞ্চে এলেন।

লাখো লাখো জনতার উপস্থিতিতে আয়োজিত সমাবেশে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, "বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য আমি দেশে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।"

বক্তৃতাদানের এক পর্যায়ে নিজেকে আর সংবরণ করতে পারেননি শেখ হাসিনা। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, "আজকের জনসভায় লাখো চেনা মুখ আমি দেখছি। শুধু নেই আমার প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাইয়েরা এবং আরও অনেক প্রিয়জন। ভাই রাসেল আর কোনোদিন ফিরে আসবে না, আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন।"

বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী বলেন, “আপনাদের ভালোবাসা পাথেয় করে আমি আগামীদিনের যাত্রা শুরু করতে চাই। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত চার রাষ্ট্রীয় নীতি বাস্তবায়ন শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য আমি জীবন উৎসর্গ করে দেবো।

১৭ মে রাতে শেখ হাসিনা ছোট ফুপুর বাসায় ছিলেন। সেই সময়েও শেখ হাসিনাকে কেউ বাসা ভাড়া দিতে চাইতো না। বাধ্য হয়েই তিনি তখন কিছুদিন ছোট ফুপুর বাসায়, কিছুদিন মেঝো ফুপুর বাসায় থাকতেন। দেশে ফিরে তিনি ধানমন্ডিতে নিজেদের বাসায় গেলে সেখানে তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয় নি। যে কারণে বাড়ির বাইরের সামনের চত্বরে বসে পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া মিলাদ পড়েন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যার পর ১৯৮১ সালের ১০ জুন পর্যন্ত ধানমন্ডির বাসাটা সামরিক কর্তৃপক্ষের অধীনে ছিল। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু পরিবারের কোন সদস্যকেই বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি।

১৮ মে সকালে শেখ হাসিনা দলীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় জেলা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মিলিত হন এবং পরে জাতীয় স্মৃতিসৌধ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্জন করেন। ওইদনই বিকেলে তিনি পিতা শেখ মুজিবের কবর জিয়ারত করতে টুঙ্গিপাড়া গিয়েছিলেন। টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে তিনি খুব আবেগপ্রবন হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর বাড়ির গ্রামবাসীরা তাঁকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ক্রন্দনরত শেখ হাসিনাকে অনেকে সান্ত্বনা দেন। তিনি সেখানে সমাধিস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের  মাজার  জিয়ারত করেন শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

২০ মে গোপালগঞ্জের ঈদগাঁ ময়দানে মেখ হাসিনার সম্মানার্থে এক গণসম্বর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল।   সেই সভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “আমি সামান্য মেয়ে। সক্রিয় রাজনীতির দূরে থেকে আমি ঘর-সংষার করছিলাম। আপনাদের ডাকে সবকিছু ছেড়ে এসেছি। বাংলার দুঃখী মানুষের সেবায় আমি আমার জীবর দান করতে চাই।তিনি আরো বলেছিলেন, “গত ছয় বছরে দেশের মানুষের কোনরকম উন্নতি তো আমি দেখি নি। মানুষ চরম দুর্দশার মধ্যে নিপতিত হয়েছে। কৃষক-শ্রমিক তার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কৃষক তার উৎপাদিত কৃষিপণ্যের মূল্য পাচ্ছে না।তিনি উত্তাল জসমুদ্রের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, “তবে কেন বঙ্গবন্থু, শেখ মনি চার নেতাকে হত্যা করা হলো?”

লেখক: . আবুল হাসনাৎ মিল্টন: সভাপতি, অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগ।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাৎপর্যপূর্ণ


Thumbnail

আজ ১৭ মে, প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৪৩তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধার এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যেদিন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়, শেখ হাসিনা তখন তার ছোটবোন শেখ রেহানা এবং দুই সন্তানসহ স্বামীর কর্মস্থল পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন। ফলে তারা খুনিদের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যান।

পশ্চিম জার্মানি থেকে সেই সময় ভারত সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন শেখ হাসিনার স্বামী পরমানু বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়া। ২৪ আগস্ট সকালে ভারতীয় দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা তাদের ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরে নিয়ে যান। ২৫ আগস্ট সকালে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে দিল্লি পৌছান শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, ওয়াজেদ মিয়া এবং তাদের দুই সন্তান।

বিমানন্দর থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লির ডিফেন্স কলোনির একটি বাসায়। সেখানে কারো সঙ্গে যোগাযোগ এবং পরিচয় না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল তাদের। সেই সময় ভারতীয় পত্রিকায় বাংলাদেশ সম্পর্কে তেমন কোন খবরাখবর ছাপা হচ্ছিল না। তাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে একরকম অন্ধকারে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে। দিল্লিতে পৌছানোর দুই সপ্তাহ পর ওয়াজেদ মিয়া এবং শেখ হাসিনা ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাসায় যান। সেখানে শেখ হাসিনা ১৫ আগস্টের পুরো ঘটনা জানতে পারেন।

১৯৭৯ ১৯৮০ সালে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বিভিন্ন সময়ে দিল্লিতে যান তাদের খোঁজখবর নিতে। আব্দুর রাজ্জাক কাবুলে যাওয়ার সময় এবং সেখান থেকে ফেরার সময় তাদের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর আওয়ামী লীগ নেতা জিল্লুর রহমান, আব্দুস সামাদ আজাদ, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবং যুবনেতা আমির হোসেন আমু দিল্লিতে যান। তাদের সবার উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নিতে রাজি করানো।

পরবর্তী সময়ে ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ১৬ ফেব্রয়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এর এক সপ্তাহ পরে হঠাৎ ২৪ ফেব্রæয়ারি আব্দুল মালেক উকিল, . কামাল হোসেন, জিল্লুর রহমান, আব্দুল মান্নান, আব্দুস সামাদ, এম কোরবান আলী, বেগম জোহরা তাজউদ্দীন, গোলাম আকবর চৌধুরী, সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, আইভি রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ ঢাকা থেকে দিল্লিতে পৌছান। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২৮ ফেব্রয়ারি পর্যন্ত কয়েকটি বৈঠক করেন তারা।

দেশের গণতন্ত্র আর প্রগতিশীলতার রাজনীতি ফেরাতে রাতে দুই শিশুসন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোটবোন শেখ রেহানার কাছে রেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। তখনকার রাজনীতির মতোই প্রকৃতিও সেদিন ছিল ঝঞ্চা-বিক্ষুব্ধ। ১৯৮১ সালের ১৭ মে ছিল কালবৈশাখী হাওয়া, বেগ ছিল ঘন্টায় ৬৫ মাইল। প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টি আর দুর্যোগও সেদিন গতিরোঘ করতে পারেনি গণতন্ত্রকামী লাখ লাখ মানুষের মিছিল।

মুষলধারে বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে তারা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন নেত্রী কখন আসবেন এই প্রতীক্ষায়। অবশেষে বিকাল ৪টায় কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে জনসমুদ্রের জোয়ারে এসে পৌছান শেখ হাসিনা। তাকে একনজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত রাস্তাগুলো রূপ নিয়েছিল জনসমুদ্রে।

তখন স্বাধীনতার অমর শ্লোগান জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনীতে প্রকম্পিত হয় বাংলার আকাশ-বাতাস। জনতার কন্ঠে বজ্রনিনাদে ঘোষিত হয়েছিল-পিতৃহত্যার বদলা নিতে/লক্ষ ভাই বেঁচে আছে, শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই।

দেশের মাটিতে পা দিয়ে লাখ লাখ জনতার সংবর্ধনায় আপ্লুত শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।

আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল-সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই।

তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই। তিনি আরো বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি নিতেই হয়, মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত¡ থেকে বঞ্চিত হয়। দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার; বঙ্গবন্ধু হত্যা জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের হৃত গণতান্ত্রীক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন মানবতার জননী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে; যা মোটেও সহজ কাজ নয়। এসব একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে সম্ভব হচ্ছে।

দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নের প্রস্তুতিসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গসমতা, কৃষিতে ব্যাপক উন্নয়ন, দারিদ্রসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক বৃদ্ধি প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি পরিশ্রমের ফসল। এরই মধ্যে উদ্বোধন হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ পায়রা তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র, বহুল কাঙ্খিত পদ্মা সেতু এবং ঢাকা মেট্রোরেল। এছাড়া চলমান রয়েছে দেশের মেগা সব প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বানে আসুন আমরা দল-মত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যা হবে জাতির জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নপূরণের একমাত্র পথ।

১৯৮১ সালের ১৭ মে তার দুঃসাহদী সিদ্ধান্তের কারণেই আওয়ামী লীগ আজ দল হিসেবে অনেক বেশি শক্তিশালী। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৭ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বাংলাদেশে এর আগে কেউ এত বছর সরকারপ্রধান হতে পারেননি। এর বাইরে ১১ বছরেরও বেশি সময় তিনি ছিলেন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। দলটি আজ তার নেতৃত্বে সামরিক শাসনের স্মৃতি পেছনে ফেলে দেশকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছে। তার দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে, জাতি হিসেবে বাঙালিকে এবং দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে এক ভিন্ন উচ্চতায়।


শেখ হাসিনা   স্বদেশ প্রত্যাবর্তন   সমৃদ্ধ বাংলাদেশ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন