ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে জিয়ার অপতৎপরতা


Thumbnail

আজ থেকে তেতাল্লিশ বছর আগে, ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের খবরে কেবল আওয়ামী লীগ তাদের নেতা-কর্মীরাই নয়, দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষই খুশি হয়েছিল। তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে তখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একটি লিফলেট ছাপিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছিল।বাঙালী জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক/ সংগ্রামী নেত্রী/ শেখ হাসিনা ওয়াজেদের/ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আহ্বান:” শিরোনামে প্রচারিত সেই লিফলেটে লেখা ছিল: “প্রিয় ভাই বোনেরা, কঠিন দুঃসময়ের অন্ধকার পেরিয়ে আমরা আজ জাতীয় জীবনের এক মাহেন্দ্রক্ষণে উপনীত হয়েছি। আসছে ১৭ই মে লক্ষ শহীদের রক্তে কেনা বঙ্গবন্ধুহীন এই স্বদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করছেন তাঁর আদরের কন্যা সংগ্রামী নেত্রী শেখ হাসিনা। বাঙালীর মহান মুক্তি সংগ্রামের অঙ্গীকার নিয়ে জনতার মুক্তির পতাকা হাতে জনক-জননী, ভাই স্বজনের রক্তে ভেজা মাটিতে ফিরে আসছেন তিনি। জাতীয় জীবনের মহালগ্ন ১৭ই মে।

ওই লিফলেটে আরো লেখা ছিল: “আমাদের সকল ভরসার স্থল জাতির জনক আজ নেই। জনতার মুক্তির দ্বিতীয় বিপ্লবের সূচনাপর্বে তিনি বুকের রক্ত ঢেলে দিলেন সাম্রাজ্যবাদ দেশীয় প্রতিক্রিয়ার হিংস্র চক্রান্তে। কিন্তু মহামানবের মৃত্যু নেই, মুক্তির দিশারী বেঁচে থাকেন মুক্তি সংগ্রামের প্রাণশক্তিরূপে।...তিনি আমাদের কর্ম চেতনার হাতিয়াররূপে নির্মাণ করে গেলেন। বঙ্গবন্ধুর এই কর্মসূচীকে আমরা বহন করে চলেছি মানুষের মুক্তির মিছিলে। আর এই মিছিলের অগ্রসেনানী শেখ হাসিনা।

প্রচারপত্রে আরও বলা হয়েছিল: “...ক্ষমতার মোহে মদমত্ত একশ্রেণীর বন্দুকধারী তার চাটুকার রাজনৈতিক দলে চলছে বিলাসী উন্মত্ততা। ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা।...আজ এই সময়ের মুখোমুখি শেখ হাসিনার আগমন তাই আমাদের জীবনে তাৎপর্যমণ্ডিত। আমাদের প্রত্যাশাজনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের পথ প্রশস্ত করবে প্রত্যাবর্তন। বাঙালী জাতিকে তিনি নেতৃত্ব দেবেন জাতির জনকের আরাধ্য দ্বিতীয় বিপ্লবের মহান কর্মসূচী বাস্তবায়নে সৎ, বিপ্লবী, সুশৃঙ্খল, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীবাহিনীর সংগঠন গড়ে তুলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন শোষণমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার মহাসংগ্রামে। আর তাই প্রত্যাবর্তন হোক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা।

দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সারাদেশে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিপুল প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হলেও তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ স্বস্তিতে ছিল না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রাম তীব্রতর হওয়ার আশঙ্কায় সে সময়ের ক্ষমতাসীন দলের নেতারা শঙ্কিত বোধ করছিল। আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হবার পর থেকেই শেখ হাসিনার বিরূদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা ব্যাপক অপপ্রচার শুরু করে। ১৯৮১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বিএনপির এক সভায় শেখ হাসিনাকে বিদেশি শক্তির তল্পিবাহক বলে অভিহিত করা হয়। একই দিনে আরেকটি সভা থেকে বিএনপির নেতারা বলেছিলেন, বাকশালিরা ভারতের গোলাম। তারা বিদেশি সৈন্যের সহায়তায় ক্ষমতায় বসতে চায়। যে দলের প্রধান দিল্লিতে, সে দল জনগণের কল্যান করতে পারে না। সাতাশে ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর খুনী মুশতাক গংদের মুখপত্র সাপ্তাহিক ইত্তেহাদে বলা হয়েছিল, ইন্দিরার নীলনকশা এখন বাস্তবায়নের পথে এবং বাংলাকে সিকিম বানাবার জন্যই শেখ হাসিনাকে দেশে পাঠানো হচ্ছে। পত্রিকাটিতে আরো বলা হয়, “৭৫ এর পর তারা দিল্লি লন্ডনে বাংলাদেশ-বিরোধী প্রচেষ্টা চালায়। লন্ডনে জমে ওঠে দিল্লির সেবাদাসদের আড্ডা। তারাই আজ বাকশালী কমিটির ছত্রচ্ছায়ায় দেশে ফিরছে। সমস্ত কিছু ঠিক করে হাসিনাকে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে।

সে সময়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন সামরিক কর্মকর্তা থেকে রাষ্ট্রপতি বনে যাওয়া জিয়াউর রহমান। শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের খবরে সে সময়কার জিয়া সরকারের ভিতরে উদ্বিগ্নতার লক্ষণ দেখা দিয়েছিল। তার আগে আওয়ামী লীগ ব্রাকেটবন্দি হয়ে গিয়েছিল ; আওয়ামী লীগ (মালেক), আওয়ামী লীগ (মিজান)- ওরকমভাবেই পরিচালিত হচ্ছিল। বঙ্গবন্ধুর আর্দশের কর্মীরা দিশেহারা হয়ে যাচ্ছিলেন। তেমন একটি সময় ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ গঠিত হওয়াকে তৎকালীন জিয়া সরকার মোটেই ভাল চোখে দেখেনি। শেখ হাসিনার দেশে প্রত্যাবর্তন ঠেকানোর জন্য জিয়াউর রহমান সরকারের উদ্যোগে তাইশেখ হাসিনা আগমন প্রতিরোধ কমিটি গঠনকরা হয়েছিল, যার আহ্বায়ক ছিলেন তৎকালিন জাতীয় সংসদের স্পিকার মির্জা গোলাম হাফিজ। এর আগে শেখ হাসিনা দেশে ফিরছেন জানতে পেরে জিয়া সাপ্তাহিক ছুটির দিনে (তখন রবিবার) মে মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে দেওয়া হবে না

বৈঠক শেষে জিয়ার প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেনশেখ হাসিনার দেশে ফেরা নিয়ে আমরা দেশে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছি।পরদিন মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এএসএম মোস্তাফিজুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেনজননিরাপত্তার স্বার্থে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে দেওয়া হবে না এই মোস্তাফিজুর রহমান, যিনি একসময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন, তিনি তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে আইও (Interrogation Officer) ছিলেন। তার মূল দায়িত্ব ছিল অভিযুক্তদের কাছ থেকে নির্যাতনের মাধ্যমে জোরপূর্বক নানাভাবে স্বীকারোক্তি আদায় করা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা জানিয়ে দেন তাঁকে যদি হত্যা করার চেষ্টাও করা হয় তাহলেও তিনি দেশে ফিরবেন এবং তিনি ১৭ মে ১৯৮১ সালে ফিরেছিলেন গণআকাঙ্খার কাছে নতি স্বীকার করেশেখ হাসিনা আগমন প্রতিরোধ কমিটি গঠনশেখ হাসিনা আসার আগেই তাদের কর্মসূচি স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিল।

দীর্ঘ 'বছর বিদেশে অবস্থানের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে এলে লাখো জনতা অকৃপণ প্রাণঢালা অভ্যর্থনার মধ্যদিয়ে তাদের নেত্রীকে বরণ করে নেন। মধ্যাহ্ন থেকে লক্ষাধিক মানুষ কুর্মিটোলা বিমানবন্দর এলাকায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন কখন শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি অবতরণ করবে। বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে বিমানবন্দরে কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ঢাকা সেদিন মিছিলের শহরে পরিণত হয়েছিল। সকাল থেকেই শহরজুড়ে কেবলি মিছিল আর মিছিল। সেদিন শেখ হাসিনাকে সম্বর্ধনা জানাতে ঢাকা শহরে প্রায় ১৫ লাখ লোক উপস্থিত ছিলেন। সেদিনের ঢাকা ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি যেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানের বন্দীশালা থেকে ঢাকায় ফিরে এসেছিলেন, সেদিনটাকেই মনে করিয়ে দিচ্ছিল। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখার জন্য ঢাকায় মানুষের ঢল নেমেছিল। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শেরেবাংলানগর পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে। ফার্মগেট থেকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর পর্যন্ত ট্রাফিক বন্ধ ছিল প্রায় ছয় ঘন্টা।  বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের পর সমসাময়িক রাজনীতিতে ধরনের ঘটনা ছিল নজিরবিহীন।

কখন শেখ হাসিনাকে বহনকারী ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমান অবতরণ করবে সেদিকে নজর রেখে লক্ষাধিক মানুষ মধ্যাহ্ন থেকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর এলাকায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিলেন। বিকেল সাড়ে তিনটা থেকেই বিমানবন্দরে কোন নিয়মশৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হয় নি। হাজার হাজার মানুষ ভিআইপি লাউঞ্জের গেটে নিয়োজিত পুলিশের বেষ্টনী ভেদ করে প্রথমে দেয়ালের উপর ওঠে। একই সময়ে বিমানবন্দর ভবনের দোতলায় কন্ট্রোল টাওয়ারের যেখানে স্থান করা সম্ভব সেখানেই জনতা উঠে যায়। সবারই উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখা। পুলিশ বারবার চেষ্টা করেও তাদের সরাতে পারে নি। বিমানবন্দরের বাইরে অসংখ্য মানুষ অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন।

সাদা-কালো রঙের প্রিন্টের শাড়ি পরিহিতা শেখ হাসিনা যখন ৪টা ৩২ মিনিটে সিঁড়ি দিয়ে বিমান থেকে সজ্জিত ট্রাকে নামছিলেন; তখন লাখো জনতার কণ্ঠে গগনবিদারী স্লোগান উচ্চারিত হচ্ছিল ঠিক এভাবেই– 'শেখ হাসিনা তোমায় কথা দিলাম, মুজিব হত্যার বদলা নেব', 'শেখ হাসিনা, স্বাগত শুভেচ্ছা' 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' বিমান থেকে ভিআইপি লাউঞ্জ পর্যন্ত হাসিনাকে নিয়ে আসতে ট্রাকটির ১৫ মিনিট সময় লাগে। সবমিলিয়ে এক অভূতপূর্ব পরিবেশ তৈরি হয়। পরিবেশ উচ্ছ্বাসের, পরিবেশ আনন্দে অশ্রু ফেলার। বিমান থেকে নামার আগে দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক যখন শেখ হাসিনার গলায় মালা দিচ্ছেলেন, তখন তিনি অঝোরে কাঁদছিলেন। কলকাতা বিমানবন্দরে এবং ঢাকা আসার পথেও শেখ হাসিনা পাঁচ-ছয়বার অঝোরে কেঁদেছিলেন।

বিকেল চারটার দিকেই আকাশে কালো মেঘ ছিল। পৌনে পাঁচটায় শেখ হাসিনাকে নিয়ে মিছির শুরু হবার পরপরই চারিদিক অন্ধকার করে বৃষ্টি শুরু হয়। রাত আটটা পর্যন্ত সেদিন মুষলধারে বিরতীহীন বৃষ্টি ঝরেছিল। একদিকে প্রবল বর্ষণ, সেইসাথে তীব্র ঝড়। প্রকৃতি ভয়াল রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছিল। এরই মাঝে ট্রাকে রাস্তার দুপাশের জনতার কণ্ঠে ছিল গগনবিদারী শ্লোগান। বর্ষণসিক্ত শেখ হাসিনা ঝড়ের মাঝেও দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে যাচ্ছিলেন বনানী হয়ে শেরেবাংলানগরের সভাস্থলে। বনানী গোরস্থানে শেখ হাসিনার মা নিহত পরিজনের কবর জিয়ারত করেন। কবরস্থানে তিনি কান্নায় আকুল ভেঙ্গে পড়েছিলেন। কবরে শায়িত মাকে উদ্দেশ্য করে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেছিলেন, ‘মা, আমাকে কেন রেখে গেলে?’

কুর্মিটোলা বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত আট মাইল রাস্তা অতিক্রম করতে সময় লাগার কথা খুব বেশি হলে ত্রিশ মিনিট। প্রায় তিনঘন্টায় শেখ হাসিনা শেরেবাংলা নগরের সভাস্থলে পৌছিয়েছিলেন। তখনও চারদিক অন্ধকার, মুষলধারে বৃষ্টি। একদিকে প্রবল বর্ষণ, সেই সঙ্গে কালবৈশাখী ঝড়। ঝড়বৃষ্টিতে নগরজীবন তখন প্রায় বিপন্ন, রাস্তাঘাটে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে গেছে। কিন্তু ঝড়বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সভাস্থলে তখনো লক্ষ লক্ষ লোক উপস্থিত।  শেখ হাসিনাকে তারা দেখবেনই। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় তিনি গণসম্বর্ধনা সভার মঞ্চে এলেন।

লাখো লাখো জনতার উপস্থিতিতে আয়োজিত সমাবেশে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, "বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য আমি দেশে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।"

বক্তৃতাদানের এক পর্যায়ে নিজেকে আর সংবরণ করতে পারেননি শেখ হাসিনা। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, "আজকের জনসভায় লাখো চেনা মুখ আমি দেখছি। শুধু নেই আমার প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাইয়েরা এবং আরও অনেক প্রিয়জন। ভাই রাসেল আর কোনোদিন ফিরে আসবে না, আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন।"

বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী বলেন, “আপনাদের ভালোবাসা পাথেয় করে আমি আগামীদিনের যাত্রা শুরু করতে চাই। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত চার রাষ্ট্রীয় নীতি বাস্তবায়ন শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য আমি জীবন উৎসর্গ করে দেবো।

১৭ মে রাতে শেখ হাসিনা ছোট ফুপুর বাসায় ছিলেন। সেই সময়েও শেখ হাসিনাকে কেউ বাসা ভাড়া দিতে চাইতো না। বাধ্য হয়েই তিনি তখন কিছুদিন ছোট ফুপুর বাসায়, কিছুদিন মেঝো ফুপুর বাসায় থাকতেন। দেশে ফিরে তিনি ধানমন্ডিতে নিজেদের বাসায় গেলে সেখানে তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয় নি। যে কারণে বাড়ির বাইরের সামনের চত্বরে বসে পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া মিলাদ পড়েন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যার পর ১৯৮১ সালের ১০ জুন পর্যন্ত ধানমন্ডির বাসাটা সামরিক কর্তৃপক্ষের অধীনে ছিল। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু পরিবারের কোন সদস্যকেই বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি।

১৮ মে সকালে শেখ হাসিনা দলীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় জেলা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মিলিত হন এবং পরে জাতীয় স্মৃতিসৌধ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্জন করেন। ওইদনই বিকেলে তিনি পিতা শেখ মুজিবের কবর জিয়ারত করতে টুঙ্গিপাড়া গিয়েছিলেন। টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে তিনি খুব আবেগপ্রবন হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর বাড়ির গ্রামবাসীরা তাঁকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ক্রন্দনরত শেখ হাসিনাকে অনেকে সান্ত্বনা দেন। তিনি সেখানে সমাধিস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের  মাজার  জিয়ারত করেন শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

২০ মে গোপালগঞ্জের ঈদগাঁ ময়দানে মেখ হাসিনার সম্মানার্থে এক গণসম্বর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল।   সেই সভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “আমি সামান্য মেয়ে। সক্রিয় রাজনীতির দূরে থেকে আমি ঘর-সংষার করছিলাম। আপনাদের ডাকে সবকিছু ছেড়ে এসেছি। বাংলার দুঃখী মানুষের সেবায় আমি আমার জীবর দান করতে চাই।তিনি আরো বলেছিলেন, “গত ছয় বছরে দেশের মানুষের কোনরকম উন্নতি তো আমি দেখি নি। মানুষ চরম দুর্দশার মধ্যে নিপতিত হয়েছে। কৃষক-শ্রমিক তার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কৃষক তার উৎপাদিত কৃষিপণ্যের মূল্য পাচ্ছে না।তিনি উত্তাল জসমুদ্রের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, “তবে কেন বঙ্গবন্থু, শেখ মনি চার নেতাকে হত্যা করা হলো?”

লেখক: . আবুল হাসনাৎ মিল্টন: সভাপতি, অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগ।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এখুনি না বলি, সাবাস মায়ের দোয়ার দল!


Thumbnail

টি-২০ ফরম্যাটে যে কোন দল অন্য দলকে হারাতে পারে। তাই বলে র‌্যাংকিং এর ৮৮ নম্বরের একেবারে তলানির দল ক্রোয়েশিয়া, এক নম্বর দল ভারতকে হারাবে সেটি নিশ্চয়ই কেউ বিশ্বাস করবে না। ব্যতিক্রম যে হয় না, তা নয়। যেমন ৭ নম্বর দল পাকিস্তান সেদিন ১৭ নম্বর দল আমেরিকার কাছে হেরেছে। সেসব ব্যতিক্রম সব সময় হয় না, কালে ভদ্রে হয়।  

র‌্যাংকিং এ বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৯ নম্বরে (রেটিং ২২৬)। এবারের টি-২০ বিশ্বকাপ আসরে তারা খেলছে ৫ নম্বর দল সাউথ আফ্রিকা (রেটিং ২৪৯), ৮ নম্বর দল শ্রীলংকা (রেটিং ২৩০), ১৫ নম্বর দল নেদারল্যান্ড (রেটিং ১৮৫) ও ১৮ নম্বর দল নেপালের সাথে (রেটিং  ১৭০)। বাংলাদেশ সাউথ আফ্রিকার সাথে  হারবে, নেদারল্যান্ড ও নেপালের সাথে  জিতবে, সেটা স্বাভাবিক। এটির ব্যতিক্রম হলে সেটা অস্বাভাবিক, সেটা কারো জন্য চমক, কারো জন্য দুর্ভাগ্য। র‌্যাংকিং এ বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা সমানে সমান, ৮ আর ৯। রেটিং ব্যবধান মাত্র ৪। শ্রীলংকার সাথে জিতেছে, প্ৰশংসা করা যায়। তবে তাতে মাথায় তোলার মত কিছু হয়নি।

গত রাতে ৯ নম্বর বাংলাদেশ দল যখন ১৫ নম্বর দল নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলছিল, তখন ভয় আতংকে গা হাত পা কাঁপছিল। এক পর্যায়ে উইন প্রিডিক্টর বলছিল, নেদারল্যান্ডের জেতার সম্ভাবনা ৫৭ শতাংশ। সেটি হলে, তা হতো নেদারল্যান্ডের জন্য চমক, বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্য।  

গা হাত পা কাঁপাকাপি শেষে ঘুমের পর সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখি আমরা প্রায় বিশ্বকাপ পেয়ে গেছি। দেশীয় মিডিয়াতে দেখি বাংলাদেশ কি সব অর্জন করেছে। ক্রিকেটে অর্জনের যেন কিছু আর বাকি নেই। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে নেপালের সাথে জেতার পর জাতির পা আর মাটিতে পড়বে না, এভারেস্টের চূড়ায় উঠে যাবে। 

জাতি হিসাবে আমরা আসলে অল্পতে তুষ্ট। যে দুটি খেলায় জেতার কথা, সে দুটোতে জিতলে আমরা আবার শান্তদের মাথায় তুলবো।  তাসকিনদের বেতন বাড়াবো। হাতুরীদের সুযোগ সুবিধা বাড়াবো, চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করব। ছাদখোলা বাসে সম্বর্ধনা দিব। সাকিবরা দেশে ফিরে এমপি মন্ত্রী হবে। খেলা বাদে সব কিছুই করবে। তাই আমাদের ক্রিকেটে উন্নতি হয় না। বিশ বছর আগে যা ছিল, এখনো তাই। এখনো তাদের খেলা দেখতে বসলে সমস্ত শরীর কাঁপে। প্রেসারের ওষুধ খেতে হয়। নিজেরা দোয়া পড়ি।  মায়েদের দোয়া করতে অনুরোধ করি। মায়েদের দোয়ায় কাজ যে হয় না, তা নয়। হয়। দোয়ায় দোয়ায় র্যাংকিং এর নিচের দলকে মায়ের দোয়ার দলটি হারিয়েছে সৌম্য শান্তর উপর্যুপুরি একক ব্যর্থতার পরও।  

মায়ের দোয়ার দলটির উন্নতি চাইলে র‌্যাংকিং এর নিচের দলকে হারালে অতি তুষ্টতা পরিহার করা উচিত। অভিনন্দনের মধ্যেই থাকি, মাথায় না তুলি। পার্শবর্তী সব ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলো থেকে আমার অনেক সহকর্মী রয়েছে। স্বাভাবিক জয়ের পর তাদের মধ্যে কখনোই উচ্ছাস দেখি না। উদ্বেলিত হয় বিশ্বকাপ জিতলে। তবে হাঁ, আমরা যদি র্যাংকিং এর উপরের কোন দলকে হারাই, তবেই বলি, সাবাস বাংলাদেশ। সাবাস মায়ের দোয়ার দল। 

লেখক: প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট 


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

দূর-নিরীক্ষণ স্বাস্থ্য সেবা


Thumbnail

আজ থেকে চার বছর আগে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মোকাবেলায় প্রায় সব দেশেই জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছিল যার জের আজও চলছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের মাত্রা এতোই তীব্র যে, কে কখন আক্রান্ত হয়েছে বা কে নীরব আক্রান্তের ঝুঁকির মধ্যে আছে তা তাৎক্ষণিক যাচাই করাও কঠিন ছিল। পরীক্ষার সীমিত ব্যবস্থাদি বা সুযোগের সীমাবদ্ধতার প্রধান কারণ সবগুলো দেশ প্রায় একই সাথে আক্রান্ত হয়েছে ও পরীক্ষার কীট ও যন্ত্রপাতি সব দেশে সমান্তরাল রীতিতে বিতরণ নিশ্চিত করা যাচ্ছিল না। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্যে এই সঙ্কট আরও জটিল কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সময়োচিত পদক্ষেপ নেয়ার ফলে বাংলাদেশ পরিস্থিতিকে আয়ত্তাধীন রাখতে সক্ষম হয়েছে।  

কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের সাধারণ স্বাস্থ্য ও হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার নিয়মগুলো সঠিকভাবে বজায় রাখা। কোভিড ও নন-কোভিডের পার্থক্য নিরূপণ প্রথম শর্ত না কি মানুষের স্বাস্থ্য জটিলতার আপাত নিরসণ কাম্য – এই নিয়ে সরব তর্ক চলেছে দেশ জুড়ে। কিন্তু আমাদের চিকিৎসক সমাজকে সংখ্যানুপাতে বেশী মানুষের সেবা দিতে হয় ও তাঁদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ঝুঁকিও কোন অংশে কম নয়। শুধু চিকিৎসকই নয়, স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত অন্যান্য জনশক্তির সংখ্যা সামর্থ্যও আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত একটি বিপুল জনগোষ্ঠী ও অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের পরিবারের সদস্যগণও আক্রান্ত হয়েছেন। অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী মারাও গেছেন যা বাংলাদেশের জন্যে অপূরণীয় ক্ষতি। আমাদের এ-ও বিবেচনায় রাখতে হবে পরিবারের কোন সদস্য আক্রান্ত হলে বা দুর্ভাগ্যবশত মারা গেলে সমগ্র পরিবারেই তার প্রভাব পড়ে ফলে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মীদের পারিবারিক দুর্গতি ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। 

ফলে আমরা চিকিৎসা কেন্দ্রে তখন রোগী কম দেখে বা চিকিৎসকদের একটি নিয়মের মধ্যে সেবা দিতে দেখে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে বলে যে হইচই করেছি তা বাস্তবসম্মত ছিল না। যেমন ধরুন, করোনা পরিস্থিতির আগে আমাদের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর যে উপচে পড়া ভিড়ের চিত্র আমরা দেখেছি শেষের দিকে তা ছিল না। এর অন্যতম প্রধান কারণ আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়েছে ও বেশিরভাগ মানুষ উপসর্গ অনুযায়ী বাড়ি বসে চিকিৎসা নিয়েছে ও যথাসম্ভব ভালো থেকেছে। সামান্য উপসর্গে মানুষের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার যে সাধারণ প্রবণতা তা অনেক কমে এসেছে ও তাতে চিকিৎসকদের উপর চাপও কমেছে। আমার বন্ধু চিকিৎসকদের অনেকেই বলেছেন তখন শান্তিতে অন্তত মনোযোগ দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে পেরেছি, আগে এতো ভিড়ের চাপে রোগী সামলানো কঠিন ছিল। সবচেয়ে বড়ো কথা, চিকিৎসকগণ সানন্দে এগিয়ে এসেছেন যাতে সাধারণ মানুষ ঘরে বসেই ফোনের মাধ্যমে তাঁদের পরামর্শ সেবা পেয়ে ভালো থাকেন। বাংলাদেশের অনেক চিকিৎসক বিনামূল্যে এই সেবা দিয়েছেন এমন কি মোবাইল ফোনের ভিডিওতেও রোগীর সাথে কথা বলে, লক্ষণের সামগ্রিক বিবরণ শুনে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন ও ফলো-আপ করছেন। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে রোগীকে চিকিৎসা কেন্দ্রে যাবার পরামর্শও দিয়েছেন।

এই বাস্তবতা মাথায় রেখে আমাদের বুঝতে হবে চিকিৎসা কেন্দ্রে বেশী মানুষের উপস্থিতি চিকিৎসার মান মোটেও নিশ্চিত করে না বা ব্যবস্থাপনার সাফল্য নির্দেশ করে না। অসুস্থ বা রোগপ্রায় মানুষ চিকিৎসা সেবা পেয়ে ও যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিতে পেরে যুগপৎ জনসাধারণ ও চিকিৎসক সমাজ  কতখানি নিশ্চিত বোধ করছেন সেখানেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাফল্য নির্ভর করে। ফলে আমাদের সেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখন নিশ্চিত করতে হবে যেখানে দেশের সব মানুষ সেবার আওতায় আসবে। আমার বিশ্বাস গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে দূর-নিরীক্ষণ পরামর্শ সেবা তা নিশ্চিত করতে পারে যা মোবাইল ফোন, ভিডিও কথোপকথন ওই ইন্টারনেটের অন্যান্য সুবিধা দিয়ে নিশ্চিত করা যায়।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পরামর্শ সেবার বহির্বিভাগের চাপ কমাতে আরও বিনিয়োগ না বাড়িয়েও আমরা খুব সহজে ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা সম্প্রসারণ করতে পারি কারণ সরকারের উদ্যোগে এখন প্রায় সব গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়েছে। একটি গ্রামের প্রশিক্ষিত ও সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত স্বাস্থ্যকর্মী ইন্টারনেট পরিষেবায় শারীরিক লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ তৈরি করিয়ে দিতে পারে (শুধু লক্ষ্য রাখতে হবে সেসব চিকিৎসক যেন সরকার স্বীকৃত নিবন্ধনপ্রাপ্ত হয় নতুবা এই সেবায় এক শ্রেণীর ফড়িয়া চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণাও করতে পারে)। একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ থেকে চিকিৎসকের তথ্য নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে সারা দেশে প্রাথমিক পরামর্শ সেবা ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব। আর এই সেবার বাস্তবায়ন, তত্ত্বাবধান ও মনিটরিং-এর দায়িত্ব দেয়া যাবে নানা স্তরে- কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোকে। 

ইন্টারনেট ব্যবহার করে স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় এরকম একটি দূর-নিরীক্ষা চিকিৎসা পরামর্শ সেবা ২০০৯ সাল থেকে চালু আছে খুলনা ও বাগেরহাটের গ্রামাঞ্চলে। ‘আমাদের গ্রাম’ পরিচালিত এই প্রকল্পটি ইতোমধ্যে দেশে বিদেশে একটি মডেল হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। পরামর্শের জন্যে আগত সকল রোগীর বিস্তারিত তথ্য একটি নির্ধারিত ইন্টারনেটভিত্তিক সফটওয়্যারে সংরক্ষিত থাকে। এরকম ক্ষেত্রে কেবল চিকিৎসার দ্বিতীয় ধাপে সন্দেহভাজন বা সম্ভাব্য রোগীকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের এরকম আরও অনেক অভিজ্ঞতা দেশের নানা স্থানে ছড়িয়ে আছে যেগুলো পর্যবেক্ষণ করে ও আধুনিক ভাবনার সাথে মিলিয়ে আমরা একটি নতুন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি। এখানে একটি বিষয় হয়তো সামনে আসবে সে হলো চিকিৎসার নৈতিক শর্ত যা হলো রোগীকে উপস্থিত স্পর্শ করে পরীক্ষা করা যাকে আমরা ‘ইন্টারমেডিয়ারী’ বলি তা কেমন করে নিশ্চিত হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে প্রযুক্তির হাতে তাপমাত্রা নিরীক্ষণ বা নাড়ী নিরীক্ষণ-সহ অনেক চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা অনেক আগেই আমরা ছেড়ে দিয়েছি। সে ক্ষেত্রে একজন প্রশিক্ষিত ও নিবন্ধিত স্বাস্থ্য কর্মী শর্ত অনুযায়ী যেটুকু নিরীক্ষা করা সঙ্গত তার একটি প্রাথমিক নীতিমালা/গাইডলাইন নিশ্চয়ই আমরা তৈরি করে নিতে পারি।

দেশের বেশিরভাগ মানুষের জন্যে একটি উপযুক্ত দূর-নিরীক্ষণ প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রক্রিয়া গঠন ও তা মানসম্মত উপায়ে সমুন্নত রাখা এখন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। সদাশয় সরকার ও আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা পরিকল্পনার সাথে যুক্ত সকলে মিলে এই ভাবনার বাস্তব ও নীতিসঙ্গত উপায় তৈরি করে নেয়া এখন জরুরি। আশা করি সংশ্লিষ্ট সবাই বিষয়টি ভেবে দেখবেন।    


--রেজা সেলিম

পরিচালক, আমাদের গ্রাম গবেষণা প্রকল্প



দূর-নিরীক্ষণ   স্বাস্থ্য সেবা   রেজা সেলিম   মতামত   মাটির টানে  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের আম্পায়ারিং


Thumbnail

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরু হয়েছে। প্রথমবারের মত টুর্নামেন্টটি চলছে আমেরিকায়। এবারই প্রথম সবচেয়ে বেশি ২০টি দল খেলছে এ টুর্নামেন্টে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে দুটি খেলেছে। একটিতে জয়। আরেকটিতে হার। জয়টি নিয়ে যতটা না আলোচনা, হারটি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা তার চেয়ে ঢের বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষের খেলাটির আম্পায়ারিং নিয়ে তুমুল সমালোচনা। আম্পায়ার কেন মাহমুদউল্লাহকে আউট দিল। ভুল আউট টি না দিলে বাংলাদেশ চার রান পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় না। চার রান পেলে বাংলাদেশ ম্যাচটি জিতে যেত। আম্পায়ার কেন কয়েকটি ওয়াইডও দেয়নি যা ওয়াইড ছিল। এসবের মধ্যে আরেকটি ক্রিকেট ম্যাচ দেখলাম ছিন্নমূল, ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের মাঝে দলিলসহ জমি-ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে। অন্যান্য ক্রিকেট ম্যাচের মত এ অনুষ্ঠানটিও টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছিল। সেখানেও ছিল বিতর্কিত আম্পায়ারিং ।

জমি-ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানটিতে গণভবন থেকে সরাসরি অনলাইন কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একপ্রান্তে গণভবন। আরেক প্রান্তে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ থানার মহিষামুড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প। ম্যাচটিতে আম্পায়ার ছিলেন স্থানীয় টিএনও। আশ্রয়ণ প্রকল্পের খেলোয়াড় (বক্তা) টিএনও ঠিক করে রেখেছিলেন কি না জানিনা। তবে এসব অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসন সাধারণত আগে থেকে বক্তা ঠিক করে রাখেন।

ক্রিকেট খেলার কিছু মহান ঐতিহ্য রয়েছে। এমনই একটি ঐতিহ্য হল একজন খেলোয়াড়ের আবেদন করার পদ্ধতি। প্রায়ই খেলোয়াড়দের "হাউজাট" বলে চিৎকার করতে দেখা যায়। কখনও কখনও যতটা জোরে পারেন, ডাকেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এর মানে কি? হাউজাট (Howzat) শব্দটি হাউ ইজ দ্যাট (How's that) এর একটি সংক্ষিপ্ত রূপ, যা একজন ব্যাটসম্যান আউট হয়েছে কি না তা একজন আম্পায়ারকে জিজ্ঞাসা করার একটি উপায় হিসাবে বিবেচিত হয়। আপিল ছাড়া একজন আম্পায়ার কিছু কিছু ক্ষেত্রে একজন ব্যাটসম্যানকে আউট দিতে পারে না। ক্রিকেটের আপীল সংক্রান্ত প্রবিধান ৩১ নম্বর অনুচ্ছেদে এমনটা উল্লেখ আছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, ফিল্ডিং দলকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আম্পায়ারের কাছে আবেদন করতে হবে। সেজন্য বোলার, কিপার এবং ফিল্ডিং দলের অন্যান্য সদস্যরা 'হাউজাট' বলে চিৎকার করেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রান্তিক জনগণের কথা শুনতে পছন্দ করেন। সেদিন তিনি খুব মনযোগের সাথে শুনছিলেন মহিষামুড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিধবা বৃদ্ধা শাহেরুন এর কথা। বৃদ্ধা খুবই আবেগের সাথে নিজের দুঃখ দুর্দশার কথা বলছিলেন। মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী বৃদ্ধার মর্মস্পর্শী বক্তব্য হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করছিলেন। বক্তব্য শেষে বৃদ্ধা মোনাজাত ধরলেন। এরই মধ্যে আম্পায়ার আউট দিয়ে দিলেন। বৃদ্ধা তো আর 'হাউজাট' জানেন না। তিনি আপীল করেন। ডান হাতের মাইক্রোফোন বা হাতে নিয়ে আপীলের জানান দেন। আম্পায়ার নাছোড়বান্দা। তিনি বৃদ্ধার কাছ থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে আবার আউট দিলেন।

এ ঘটনায় অনলাইনে সরাসরি যুক্ত থাকা প্রধানমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করেন। তিনি বলে ওঠেন ‘এটা কী, একজন মানুষ মোনাজাত করছেন, আর হাত থেকে সেটা (মাইক্রোফোন) কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। হোয়াট ইজ দিস। এটা কী?’ প্রধানমন্ত্রী আবারও বলেন, 'এই এই এটা কী করো, এটা কেমন কথা হলো। মোনাজাত করছে আর তার হাত থেকে মাইক্রোফোনটি কেড়ে নিল। হোয়াট ইজ দিস?' এ সময় প্রধানমন্ত্রী যা বলেন, তা ক্রিকেটীয় পরিভাষায় বললে দাঁড়ায়, হাউজাট বা হাউ ইজ দ্যাট। প্রধানমন্ত্রী ক্রিকেট খেলা দেখেন। সময় পেলে দেশের ক্রিকেট সরাসরি দেখেন। এমনকি মাঝে মাঝে তাঁকে স্টেডিয়ামে যেয়েও খেলা দেখতে দেখা যায়। তিনি ক্রিকেটীয় পরিভাষার 'হাউ ইজ দ্যাট' বোঝেন। কিন্তু তিনি সেদিন দাপ্তরিক পরিভাষায় 'হোয়াট ইজ দিস’ বলেন। বারবার আপিল করাতে আম্পায়ার আউটটি বাতিল করেন। বৃদ্ধা শাহেরুন মাইক্রোফোন ফিরে পেয়ে মোনাজাত সম্পন্ন করে তার ইনিংস শেষ করেন।

ক্রিকেটের সৌন্দর্য আম্পায়ারিং এ। আম্পায়ারিং ভাল না হলে খেলাটি তার সৌন্দর্য হারায়। খেলায় ছন্দপতন হয়। জয় পরাজয় নির্ধারণে স্বাভাবিকতা থাকে না। তেমনি আম্পায়ারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ছিন্নমূল, ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের লাইভ অনুষ্ঠানটি দৃষ্টিকটু লেগেছে। এসব আম্পায়ারদের আরো বেশি দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন 'আম্পায়ারিং' এর উপর আরো বেশি বেশি প্রশিক্ষণ। 

লেখক: প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট

আশ্রয়ণ প্রকল্প   বিতর্ক   আম্পায়ারিং  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

১১ জুন আমাদের দেশ গড়ার শিক্ষা দেয়


Thumbnail

আজ ১১ জুন। এদিন দীর্ঘ ১১ মাস জেল খাটার পর দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা জেল থেকে মুক্তি পান। এই মুক্তিটি অনেক অর্থ বহন করে। এই ১১ মাসে তাকে মূলত যে মানসিক কষ্ট দেয়া হয়েছে তা চিন্তার বাইরে। সেসময় তাকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে ফেলার সমস্ত রকমের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তিনি অত্যন্ত সুদৃঢ় ছিলেন এবং বিশ্বাস করতেন তিনি কোন অন্যায় করেননি এবং করেন না। জনগণের মঙ্গলের জন্যই তিনি কাজ করেছেন এবং কাজ করে চলেছেন।

আমরা যখন জেলাখানায় তাকে দেখতে যেতাম সেসময় তিনি আমাদের মুখ কালো দেখলেই বলতেন, ‘আপনাদের মুখ কালো কেন?’ এরকমভাবেই তিনি আমাদের উজ্জীবিত করতেন। আমি অবাক হয়ে তখন ভাবতাম, তিনি জেলে থাকার কারণে আমাদের মন খারাপ আর উল্টো তিনি আমাদের সৎ সাহস দিচ্ছেন যে তিনি সৎ পথে আছেন তার কিছুই হবে না এবং তিনি কারামুক্ত হবেন। এজন্য কারামুক্তি দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি জেলে থাকতেই তার দার্শনিক চিন্তাকে কিভাবে বাস্তবে রূপান্তরিত করবেন সেই সব বিষয়গুলো ঠিক করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন তাঁর কারামুক্তির পরই নির্বাচন হবে এবং নির্বাচনে কাদের মনোনয়ন দিবেন সেটির চিন্তাও তিনি সেসময় করে রেখেছিলেন। তাছাড়া ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ থেকে শুরু করে বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, কমিউনিটি ক্লিনিক, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ গুলোর মতো জনবান্ধব কর্মসূচির  চিন্তা তিনি জেলে থাকতেই ঠিক করে রেখেছিলেন।

২০০৮ সালের ১১ জুন থেকে ২০২৪ সালের ১১ জুন পর্যন্ত যদি চিন্তা করি তাহলে একটি জিনিস খুবই পরিষ্কার হয়ে যায়। তাহলো আজকের বাংলাদেশের অপর নাম শেখ হাসিনা। এটি তিনি রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছেন। একারণেই ১১ জুন বারবার মনে করা দরকার। এবং এটি মনে করে আমাদের নতুনভাবে উজ্জীবিত হয়ে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার প্রতিটি কাজে অত্যন্ত আন্তরিক এবং সততার সাথে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করতে হবে। না হয় আমরা আমাদের বিবেকের কাছে অপরাধী হবো। অপরাধী হবো বঙ্গবন্ধুর কাছে এবং  বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে। কেননা আমরা দাবি করি, আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করি এবং আমাদের চলার পথে পাথেয় হচ্ছেন শেখ হাসিনা। এই যদি বলি তাহলে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দর্শনকে এড়িয়ে ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য নিয়ে চলি তাহলে আমরা আমাদের বিবেকের কাছে দায়ী।

জিল্লুর রহমান, মতিয়া চৌধুরী, আতাউর রহমান খান কায়সার, সৈয়দ আশরাফ, হাছান মাহমুদ থেকে শুরু করে অনেকেই সেসময় দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য চেষ্টা করে গেছেন। আর অনেকেই ভেবেছিল, বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনাকে অন্ধকার টানেলের ভেতরে ফেলে দিতে সক্ষম হয়েছে যেখান থেকে তিনি আর বেরোতে পারবেন না। তারা যে সংস্কারবাদী হয়েছিল সেটি ষড়যন্ত্রের অংশ। তারা হয়তো ভেবেছিল কোন দিন শেখ হাসিনা আর আলোর মুখ দেখবে না।

সেই সকল ভেতরের ষড়যন্ত্র, বাইরের ষড়যন্ত্র, ভবিষ্যতের দেশ গড়ার যে পরিকল্পনা সমস্ত কিছুই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একা সামলেছেন। আমি বিশ্বাস করি ১১ জুন আমাদের শিক্ষা দেয় দেশ গড়ার যদি মানসিকতা থাকে এবং মনের দৃঢ়তা থাকে তাহলে কোন বাধায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। দেশ গড়ার জন্য শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। অর্থাৎ মানুষের মৌলিক যে চাহিদা তার প্রত্যেকটির ব্যবস্থা করেছেন। এটিই হচ্ছে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বড় প্রাপ্তি। যদিও তিনি বলেন, এগুলো জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি উৎসর্গ করেন। সেজন্য আমি বলবো, আজকের বাংলাদেশের অপর নাম শেখ হাসিনা।


কারামুক্তি দিবস   শেখ হাসিনা   এক এগারো   ওয়ান ইলাভেন   দেশ গড়ার শিক্ষা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

চুপচাপ গভর্নর, অন্যরাও কি বিব্রত হননি?

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ০৯ জুন, ২০২৪


Thumbnail

বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকেও একটি কথাও বলেননি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এমন নয় যে সেই সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংক নিয়ে কোনো প্রসঙ্গ ছিল না। কিন্তু গভর্নর কোনো কথা বলেননি কারণ অর্থমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই অর্থ-বাণিজ্য বিষয়ক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকনোমিক রিপোর্টাস ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি জানিয়ে দেন সাংবাদিকরা গভর্নরের বক্তব্য বয়কট করবেন। ওসমানি মিলনায়তনের সংবাদ সম্মেলনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। সে জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা কেউ তাঁর বক্তব্য শুনব না। তিনি যেন কোনো বক্তব্য না দেন, সে বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বক্তব্য দিলে আমরা তা বয়কট করব।’ 

মাঠের রিপোর্টার হিসেবে অনেকদিন বাজেটত্তোর সংবাদ সম্মেলন কাভার করেছি, সেখানে কোনো দিনই এমন ঘটনা ঘটেনি। আরো অদ্ভুত যে অর্থমন্ত্রী গত শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে সূচনায় হাসিমুখে থাকলেও একের পর এক অস্বস্তিকর প্রশ্নে মেজাজ হারিয়েছেন। এমনকি এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের “ম্যাচিউরিটি” নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আর শেষেতো বলেই ফেললেন যে সাংবাদিকরা বাজেট বইটি পর্যন্ত পুরোটা ভালো করে পড়ে আসেননি। কিন্তু ইআরএফ নেতা যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে বর্জনের কথা বললেন, সে সম্পর্কে একটা শব্দও বলেননি সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং কর্মজীবনের শুরুতেই অর্থনীতির শিক্ষক অর্থমন্ত্রী আবুল হাান মাহমুদ আলী। দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পুরো সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেননি গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নানা বিষয় নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেন অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারসহ অন্যরা। সংবাদ সম্মেলনের বেশির ভাগ সময় গভর্নরকে গালে হাত দিয়ে চুপচাপ বসে থাকতে দেখা যায়।’

এবারের বাজেটের আগে সবচেয়ে আলোচনায় ছিল মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক ঋণের সুদহার, ডলারের দাম এবং রিজার্ভের ক্ষয়। সংবাদ সম্মেলনে এ সম্পর্কিত অনেক প্রশ্নই হয়তো ছিল, যার জবাব আমরা শুনতে পারতাম গভর্নরের কাছ থেকে। কিন্তু জাতি তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এটা ঠিক যে বাংলাদেশ ব্যাংক গণমাধ্যম কর্মীদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করলেও রিজার্ভ সংকটসহ কোনো খবরই কিন্তু অপ্রকাশিত থাকছে না। বরং সেই সুযোগে এমন গুজব ভিত্তিক খবরও প্রচার হয়েছে যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আবারো অর্থ চুরি হয়েছে। সেই গুজবের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংক যে ব্যাখ্যা দিয়েছিল তাও কিন্তু গণমাধ্যমগুলো জাতীয় দায়িত্ব হিসেবেই প্রচার করেছে। গত শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনেও কিন্তু আইআরএফ-এর সভাপতি স্পষ্টভাবে বলেছেন সকল মন্ত্রীসহ অন্যান্যদের বক্তব্য প্রচার করলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কোনো বক্তব্য দিলে তারা তা বয়কট করবেন।

সুধীসমাজে আলোচনা আছে বর্তমান সরকারের আর্থিক নীতি নির্ধারকদের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি আব্দুর রউফ তালুকদার। ২০২২ সালের ১২ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হওয়ার আগে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দিয়েছিলেন রউফ তালুকদার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ এবং যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উন্নয়ন ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নেয়া এই দক্ষ আমলা দীর্ঘ অর্থ মন্ত্রণালয়ে কাজ করলেও একজন আমলা হিসেবে তার পরিচিতি সংরক্ষণবাদী হিসেবেই। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে তিনি দায়িত্ব নেবার পর মতিঝিলের সুরম্য অট্টালিকায় সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা নেমে আসায় অবাক হইনি। কিন্তু মাঠের রিপোর্টারদের সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানের এমন সম্পর্কহানি কাম্য নয়। একথা ঠিক যে রাজনীতিক মন্ত্রীদের মত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হরহামেশাই গণমাধ্যম্যের মুখোমুখি হবে তা হয়তো আশা করা ঠিক নয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপত্র নিয়োগ এবং প্রাথমিকভাবে তার বক্তব্য নিয়েই সাংবাদিকরা সন্তুষ্ট ছিল, আর এটাও ঠিক যে খুব যে অবাধভাবে যাতায়াত করা যেতো তাও কিন্তু নয়। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আর তা নিয়ে যখন ইআরএফের নেতারা যখন গভর্নরের সাথে দেন-দরবার করতে গেলেন তখন কিন্তু তারা প্রত্যাশিত সম্মান পাননি। তখন থেকেই গভর্নরকে বয়কটের বিষয় চলে আসছে। সর্বশেষ বাজেটত্তোর সংবাদ সম্মেলনে যা ঘটলো তাতো শুধু একজন আমলা নন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মত সরকারের সর্বোচ্চ আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবেও সরকারের জন্যই বিব্রতকর হলো ঘটনাটি। কিন্তু হতাশার বিষয় হলো সংবাদ সম্মেলনের পরও ওসমানি মিলনায়তনে উপস্থিত মন্ত্রিসভার কেউই কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বললেন না। বা জানতে চাইলেন না, কি পর্যায়ে এসে ইকোনমিক রিপোর্টার ফোরাম এমন অবস্থান নিল?

গভর্নরের সাথে সাংবাদিকদের যে অস্বস্তিকর অবস্থা চলে আসছে কিছুদিন থেকে তা নিরসনেরও কিন্তু কোনো উদ্যোগ রাজনীতিক এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীও নেননি। যিনি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পাবার আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবং তার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে অর্থ-বাণিজ্যের মাঠ পর্যায়ের রিপোর্টার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মধ্যে যে সংকটের সৃষ্টি সেব্যাপারে অর্থমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। সর্বশেষ গত ২৫ এপ্রিল ইআরএফের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে একটি আলোচনা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিয়ে অচলাবস্থার নিরসন হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ইআরএফ নেতৃবৃন্দ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকের বিষয়টি তথ্য প্রতিমন্ত্রীকেও অবহিত করা হয়েছে বলে জানালেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষই তাদের বিষয়টি নিয়ে বা সৃষ্ট সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে সর্বশেষ একটি বিব্রতকর ঘটনা ঘটলো গত শুক্রবার অর্থমন্ত্রীর বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে। বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা আশা করতেই পারি যে অর্থ মন্ত্রণালয়, দ্বিতীয়ত তথ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে ইআরএফের নেতাদের সাথে কথা বলতে পারে। আর একটি উদ্যোগ নিতে পারে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বিষয়টি দ্রুত সুরাহা হওয়া দরকার বলেই, বিষয়টি নিয়ে লিখলাম। আশা করি সংশ্লিষ্টরা খোলা মনে বিষয়টি বিবেচনায় নিবেন। 

লেখক: প্রণব সাহা
সম্পাদক, ডিবিসি নিউজ


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন