ইনসাইড থট

গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এবং মানবাধিকার- এ নিয়ে কথা বলার অধিকার কার আছে?

প্রকাশ: ১০:০১ এএম, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১


Thumbnail গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এবং মানবাধিকার- এ নিয়ে কথা বলার অধিকার কার আছে?

(দ্বিতীয় পর্বে)
আমি দেখলাম, যখন বাইডেন সরকার তাদের তথাকথিত ভার্চুয়াল টক শো "গণতন্ত্রের জন্য শীর্ষ সম্মেলনে” বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি, তখন কিছু বাংলাদেশি আঙুল তোলা শুরু করলেন এই বলে যেহেতু তাদের বড় ভাইয়ের দেশ বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ করেনি তা প্রমাণ করে বাংলাদেশে কোন গণতন্ত্র নেই। কেউ কেউ নির্লজ্জভাবে গর্বিত বোধ করাও শুরু করেন।

গত ১০ বছরে, আরব বসন্তে (Arab spring) আমেরিকান এবং ইউরোপীয় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে যে কেন বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের কারণের সাথে পশ্চিমা গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করা যায় না। ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা এবং চাকরির জন্য আরব অভ্যুত্থানের জন্য সংক্ষিপ্ত উত্তেজনার পরে, পশ্চিমা শক্তিগুলি, তাদের স্বাভাবিক তুষ্টিতে ফিরে এসে আবার আরব স্বৈরশাসকদের তাদের সমর্থন এবং নিরাপত্তা দেয়। মিশরে সেনাবাহিনীর জেনারেল বন্দুক দিয়ে দেশের নির্বাচিত প্রধানকে অপসারণ করে এবং হাজার হাজার প্রতিবাদকারী মানুষকে হত্যা করে, পশ্চিমারা এটিকে তার অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে। সুতরাং, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের "গণতন্ত্রের জন্য শীর্ষ সম্মেলন", এই অঞ্চলে এবং এর বাইরেও সংশয়ের মুখোমুখি হয়েছে। আঘাতের সাথে অপমান যোগ করার জন্য, বাইডেন প্রশাসন আমন্ত্রণ ইস্যু করার জন্য নির্বাচনী মানদণ্ড প্রয়োগ করেছে, যা "গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চেয়ে আমেরিকান রাজনীতিকে বেশি" প্রতিফলিত করে।

মধ্যপ্রাচ্য থেকে, শুধুমাত্র ইরাক এবং ইসরায়েলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, একটি পছন্দ যা দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়। ইরাক, যা গত ২০ বছর ধরে মার্কিন দখলদারিত্বের অধীনে ভুগছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ফ্রিডম হাউস দ্বারা "মুক্ত নয়" বলে বিবেচিত হয়েছে। ইসরায়েল তার অস্তিত্বের বেশিরভাগ সময় ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার অস্বীকার করেছে, নির্মমভাবে একটি বর্ণবাদ ব্যবস্থা চালাচ্ছে, আর ফিলিস্তিনদের ধ্বংস এবং দখলে ইসরায়েল তার উন্নতি বৃদ্ধি করেছে।

পাকিস্তান হল আরেকটি আমন্ত্রিত দেশ, যে দেশ স্বাধীনতার পর থেকে বেশিরভাগ সময় সেনা জেনারেলদের দ্বারা শাসিত হয়েছে, সেনা জেনারেল ক্ষমতা দখলের পর গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে ফাঁসিতে ঝুলায় এবং যে দেশে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারে না বা তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে না সেনা জেনারেলদের নির্বোধ অনুমোদন ছাড়া। যদিও পাকিস্তান আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে এবং যোগ দেয়নি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, যখন জাতিসংঘ তৈরি করা হয়েছিল, তখন জাতিসংঘ সনদ প্রতিটি দেশকে (ছোট বা বড়, শক্তিশালী বা শক্তিহীন) সমান ভোট দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়ার ফলে পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলো অন্য দেশের ওপর তাদের কর্তৃত্ব আরোপ করার ক্ষমতা হারায় (জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যেখানে পাঁচটি বড় শক্তি তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র ক্ষমতা ধরে রেখেছে)। যদি কোন দেশ শক্তিশালী পশ্চিমা দেশগুলোর ক্ষমতা অস্বীকার করার সাহস করে এবং স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস করে তাদের শাস্তি ও পরাস্ত করতে, পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলো তাদের ইচ্ছামতো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা, মানবাধিকার ও বাক-স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখার তথাকথিত মাপকাঠি ব্যাবহার করে এবং সেই অনুযায়ী বিচার করে একতরফা বিভিন্ন ব্যক্তিগত, অস্ত্র এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। একটি লাতিন আমেরিকান দেশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মার্কিন স্পন্সর রেজুলেশনের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার পরে, মার্কিন প্রতিনিধি এই বলে হুমকি দেয় যে "এটি একটি খুব ব্যয়বহুল ভোট আপনার দেশ কখনও ভোট দিয়েছে"।

শক্তিশালী পশ্চিমা দেশগুলো তাদের ঔপনিবেশিক আমলের অতীত শতাব্দীর (এমনকি বর্তমানেও) মানবাধিকারের কঠোর অপব্যবহার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন, দাস ব্যবসা, গণহত্যা বা আদিবাসী জনগণের দমন/বশীভূত করা, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের পতন, জাতীয় নেতাদের হত্যার কথা মনে হয় ভুলে গেছে! সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর (চীন তখন তাদের অর্থনীতি তৈরিতে ব্যস্ত ছিল), সমস্ত ক্ষমতা চলে যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তিতে পরিণত হয়। একমাত্র পরাশক্তির সহায়তায় পশ্চিমা দেশগুলো নিরাপত্তা পরিষদে (রাশিয়া ও চীন তাদের ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করার সাহস করেনি) মিথ্যা ও প্রতারণার মাধ্যমে দেশের পর দেশ আক্রমণ করেছে, কার্পেট বোমা হামলা করে সেসব দেশকে ধ্বংস করেছে, হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। বিশ্বে ডলার এবং সুইফট (SWIFT) লেনদেন সুবিধার আধিপত্যের সুবিধায় কারণে, তারা কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে সক্ষম এবং তা বলবৎকরণ শুরু করে। আমাদের নীরব পর্যবেক্ষক হয়ে তাদের মেনে চলা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প ছিল না। সময় বদলে যাচ্ছে। এখন রাশিয়া তার দাঁত দেখাতে শুরু করেছে এবং চীন খুব শীঘ্রই অর্থনীতিতে হয়ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে – তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলি তাদের ইউনিপোলার শক্তি হারানোর চরম ভয়ে ভুগছেন। তাই এখন অনেকেই প্রশ্ন করছেন যে "গণতন্ত্রের জন্য শীর্ষ সম্মেলন" এর উদ্দেশ্য গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার এবং ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা নাকি সারা বিশ্বে আমেরিকার বিশ্বাসযোগ্যতা এবং প্রভাব বৃদ্ধি করা এবং চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে তার শক্তির প্রতিযোগিতায় ওয়াশিংটনের অবস্থান উন্নত করা? অনেক দেশ, বিশেষ করে এশিয়ান টাইগাররা তাদের বিশাল জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ক্রমবর্ধমান ক্রয় ক্ষমতার সাথে পশ্চিমা দেশগুলোর একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ক্রমবর্ধমান সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাদের জন্য সমস্যাজনক হয়ে উঠছে এবং তারা আমাদের বশীভূত করার জন্য নানা উপায় খুঁজছে বলে আমন্ত্রণ না পেয়ে দুঃখিত না হয়ে গর্বিত বোধ করা উচিত। আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আমি বলবো আমি গর্বিত বোধ করি কারণ আমাদের অগ্রগতি অনেকের নজরে আসছে এবং আমাদের সম্মান প্রদর্শন করতে বীতিমত বাধ্য হচ্ছে।

এরপর খবর আসে, বাংলাদেশের কয়েকজন আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা। দুঃখজনকভাবে, আমরা দেখলাম যে কিছু লোক তাদের কৃতিত্বে আমাদের সার্বভৌমত্ব, জাতি হিসাবে আমাদের গর্ব এবং আমাদের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিকে ক্ষুণ্ণ করায় এত খুশি হয়েছে। আমরা সবাই আজীবন মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য লড়াই করব কেউ আমাদের বাধ্য করছে বলে নয়, বরং একটি গর্বিত জাতি হিসাবে এবং আমাদের সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্য।

সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ এবং দৃঢ় হচ্ছে। আমরা যখন মরিয়া হয়ে কোভিড ভ্যাকসিন খুঁজছিলাম, তখন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ভ্যাকসিন পাঠায়। তাহলে হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্রের এইসব পদক্ষেপের কারণ কি? কারা দরজার পিছনে বসে নোংরা খেলা খেলছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করছে? যাই হোক সর্বশেষে তাদের সিদ্ধান্তের জন্য বাইডেন সরকারই এককভাবে দায়ী।

আশ্চর্যজনকভাবে, কর্নেল চৌধুরী ফজলুল বারী ২০০৫ সালে র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। উইকিলিকস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত গোপন নথি থেকে জানা যায় তিনি মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কাউন্সিলরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তারা দুজন একান্ত আলাপচারিতায় এই অভিমত প্রকাশ করেন যে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে ক্রসফায়ার বা এনকাউন্টার বৈধ। বিদ্রুপাত্বকভাবে কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ নয়, চৌধুরী ফজলুল বারী এখন বেশ আরামে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।

অন্যদিকে, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এই সরকারের প্রচেষ্টার কারণে, বাংলাদেশের একটি আদালত নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহরে সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৬ জন র‍্যাব কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে তাদের অপকর্ম আর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেয়। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহত হন। থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও এসআই নন্দদুলাল সহ এই মামলায় বর্তমানে ৭ জন আসামি কারাগারে রয়েছেন। এগুলি এমন কিছু উদাহরণ যা দেখায় যে বর্তমান সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সহ্য করবে না। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা দেখছি কিছু লোক উল্লাসিত হয়ে, সরকারকে দোষারোপ করে সরকারকে অগণতান্ত্রিকভাবে পতনের দিবাস্বপ্ন দেখছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং প্রচেষ্টার এই হস্তক্ষেপে খুশি বোধ করছে। তাদের কোন লজ্জাবোধ নেই যে অন্য একটা দেশ আমাদের অসম্মান করার চেষ্টা করছে এবং আমাদের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ণ করছে দেখে।

প্রথম আলোতে মারুফ মল্লিক লিখেছেন “ যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন জোটে যোগ দিলে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়গুলোর ব্যাপারে বাংলাদেশকে ছাড় দিতে পারে। কিন্তু নদীর জল মনে হয় অনেকটাই গড়িয়েছে”। তার মতামত থেকে এটা স্পষ্ট যে এটা রাজনীতি, তাদের বশ্যতা স্বীকার করার কৌশল, গণতন্ত্র বা মানবাধিকার সমুন্নত করার উদ্যোগ নয়। তিনি আমাদেরকে ক্রীতদাসের মতো নতজানু হয়ে আত্মসমর্পণের পরামর্শ দিচ্ছেন!

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের কড়া সমালোচনা করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, “এই সরকারের অবস্থানটা হচ্ছে, কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতির সমালোচনা করা যাবে না, সারাক্ষণ প্রশংসা ও বন্দনা করতে হবে। এখন আমরা যে শাসনের মধ্যে আছি, সেটিও জেনারেল শাসনের মতোই। সামরিক শাসন হলেও এখনকার চেয়ে আলাদা কিছু হতো না”।

রিজভী সাহেব বলেন “কেন তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিষিদ্ধ করেছে? তারা তো চোখ বন্ধ করে নেই। বাংলাদেশে কি হচ্ছে তারা সবাই দেখছে। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ অনেকে গুম হয়েছেন। তারা কি জানে না, কেন গুম হয়েছে, কে গুম করেছে? আপনারা (আওয়ামী লীগ নেতারা) ম‌নে ক‌রে‌ছেন, চোখ বন্ধ করলে প্রলয় বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু চোখ বন্ধ করলে প্রলয় বন্ধ হয় না, সেটা এখন শুরু হয়েছে। এর জন্য দায়ী কে? এর জন্য দায়ী আপনি (প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনা”।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, "কী লজ্জা; আমাদের পুলিশ প্রধান, আমাদের র‍্যাব প্রধান তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটা দেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কী কারণে এই নিষেধাজ্ঞা, তাঁরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। বেআইনিভাবে মানুষকে হত্যা করেছেন। সুতরাং জনগণের কাছে এর জবাব তো দিতেই হবে"। তিনি আরো বলেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ প্রধান ও র‍্যাব প্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এটাকে আমি চমক মনে করি না। আমি মনে করি, এটি অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। এটাই তাঁদের পরিণতি। এই ধরনের যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেন, যারা মানুষের অধিকার কেড়ে নেন, যারা জনগণকে হত্যা করেন, তাঁদের পরিণতি এমনই হয়।"

আমীর খসরু সাহেব বলেছেন, "যারা জোর করে ক্ষমতায় থাকতে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করেছে, এই নিষেধাজ্ঞার জন্য তারাই দায়ী।"

যারা এই নিষেধাজ্ঞার জন্য খুব গর্বিত, তারা কখনও তাদের বড় ভাইয়ের রেকর্ডের দিকে তাকায়নি এবং তাদের মানবাধিকারের অপব্যবহার বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার নৈতিক অধিকার আছে কিনা তা বিবেচনা করেনি। সম্প্রতি আফগানিস্তানে ড্রোন হামলার মাধ্যমে তারা একটি পরিবারের ১০ সদস্যকে হত্যা করেছে যাদের বেশিরভাগই (৭ জন) শিশু সন্তান কিন্তু তারা সেই হত্যাকাণ্ডকে ন্যায্যতা দিয়ে বলে যে এটি একটি ভুল ছিল এবং সেই হত্যাকাণ্ডে কেউ দায়ী নয়।

একাধিক বর্তমান এবং প্রাক্তন সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, একটি একক শীর্ষ-গোপন আমেরিকান স্ট্রাইক সেল সিরিয়ায় হাজার হাজার বোমা এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, কিন্তু একটি দুষ্ট শত্রুকে আঘাত করার প্রক্রিয়ায়, ছায়াময় বাহিনী সুরক্ষার পাশ কাটিয়ে বারবার বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে। কাউকে বিচারিক আদালতে অনুমোদন বা বিচার করা হয়নি।

আমেরিকায় প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ পুলিশের হাতে নিহত হয় যা তারা বিচার বিভাগীয় তদন্ত ছাড়াই ন্যায্য হত্যা বলে বর্ণনা করে। কেউ প্রশ্ন করেনি বা তাদের অফিস প্রধানের বিরুদ্ধে অনুমোদনের সুপারিশ করেনি। দেশে এবং বিদেশে আমরা তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার শত সহস্র উদাহরণ উদ্ধৃত করতে পারি। আমরা এটাও জিজ্ঞাসা করতে পারি কেন তারা আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত বা বিচার আদালতে স্বাক্ষর করেনি। প্রশ্নটি আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই যে আমাদেরকে বিচার করার জন্য তাদের কী নৈতিক কর্তৃত্ব রয়েছে এবং কেন আমরা নির্লজ্জভাবে তার জন্য খুশি হব?

হ্যাঁ, মিঃ রিজভী, মিঃ ফকরুল, মিঃ সারওয়ার, মিঃ আমির খসরু, আপনারা আমাদের দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রীকে দোষ দিতে পারেন। কারণ প্রধানমন্ত্রীর দোষ তিনি একজন গর্বিত বাঙালি এবং বাংলাদেশি। দোষ হল তিনি অক্ষয়, আপনি তাকে কলুষিত করতে পারবেন না; দোষ হল উনি আপামর বাংলাদেশের মানুষকে ভালবাসেন এবং তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির জন্য নিদ্রাহীন এবং অক্লান্ত চেষ্টা করছেন; দোষ হল সর্বশক্তিমান বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করার সাহস করেন এবং দেশের নিজস্ব অর্থ ব্যবহার করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর দোষ হল তিনি তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্র সচিবকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এবং প্রাকৃতিক গ্যাস বাণিজ্যে একমত হননি। দোষ উনি বাংলাদেশের অবকাঠামো, সড়ক, রেল, এয়ারওয়ে, টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট, ওয়েব ভিত্তিক সংযোগ, বিদ্যুৎ, জাতীয় ও অর্থনীতি বিনির্মাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের উন্নতি করছেন; দোষ হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন এবং সকল ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করছেন; দোষ হলো তার প্রচেষ্টায় মানুষ বেশিদিন বাঁচছে, খাবার অভাবে ও ক্ষুধার কারণে একজনও মারা যাচ্ছে না; হাজারে শিশু ও মা পরিহারযোগ্য কারণে মারা যাচ্ছে না। দোষ হল আজ লাখ লাখ মেয়ে আর ছেলেরা স্কুলে যাচ্ছে, উচ্ছ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে; তার দোষ ভারত, চীন, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইউরোপীয় এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলি থেকে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য একটি আইনি, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছেন। তার দোষ হল কোভিড মহামারী সত্ত্বেও, তিনি দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, জীবন ও জীবিকা বাঁচিয়েছেন, অর্থনৈতিক চাকা সচল রেখেছেন। তার দোষ হল তিনি তার নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সফল করার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছেন। তার দোষ হল "সবার বন্ধু, কারো সাথে শত্রু নয়" এই পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করেছেন। দোষ হলো একটি সার্বভৌম পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করা, চীনের রাষ্ট্রদূতের চতুর্মুখী নিরাপত্তা সংলাপে (QUAD) উদ্যোগে বাংলাদেশের যোগদান করা উচিত নয় এমন মর্মান্তিক মন্তব্যকে ধমক দিতে দ্বিধা না করা। দোষ হলো সম্প্রতি আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলির বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র দপ্তরে কল করার জন্যও অপেক্ষা না করা। আপনি প্রধানমন্ত্রীকে তার উপরোক্ত সব দোষের জন্য দোষারোপ করতে পারেন, কিন্তু যারা একজন বাঙালি এবং বাংলাদেশি হিসেবে গর্বিত, আমরা তাকে স্যালুট করি, ভালোবাসি, সন্মান করি এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে আগামী দশকের জন্য জাতির এখন প্রয়োজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার, এর কোন বিকল্প নেই।

আমি উজবেকিস্তানে এইচআইভি/এইডস পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য যেয়ে একজন মার সাথে তার বাড়িতে কথা বলেছিলাম। আমি তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে তাদের স্বাধীনতা সম্পর্কে কী ভাবেন (যদিও উজবেকিস্তান তখন নৃশংস স্বৈরশাসক ইসলাম করিমভ রাষ্ট্রপতি ছিলেন)। তিনি বললেন, "হ্যাঁ, আমি এখন অনেক কথা বলতে পারি, কিন্তু আমার বাচ্চাদের ভাল খাবার বা কাপড় দেওয়ার এবং তাদের স্কুলে রাখার সামর্থ্য আমার নেই। শীতে আমার ঘর গরম করতে পারি না। আজকাল, যখন আমার মেয়ে সময়মতো বাড়ি ফিরে না, আমি ভয় পাই। আগে আমাকে সেসব নিয়ে ভাবতে হয়নি, যদিও তখন আমি যা চাই তা বলতে পারতাম না।" বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ডব্লিউএইচও, জেনেভাতে তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন, “ভারতে খুব বেশি গণতন্ত্র রয়েছে, কেন্দ্র রাজ্যগুলির জন্য সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণে মানব ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, গরিবরা আরও গরীব হচ্ছে। কিন্তু চীনের দিকে তাকান, কেন্দ্রীভূত সিদ্ধান্ত এটিকে বিশ্ব অর্থনৈতিক শক্তিশালীতে পরিণত করেছে”। আমি ভাবি যদি আমরা একজন কৃষক, একজন রিকশাচালক বা একজন চা বিক্রেতা বা ফুটপাথের বিক্রেতাদের, কারখানার শ্রমিক বা ছোট ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসা করি যে তারা কী চান -.অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা যাতে তাদের পরিবার প্রতি রাতে খাবার পায়, বাচ্চাদের ভালো কাপড় এবং জুতা পায়, এবং স্কুলে যেতে পারে, তারা ভবিষ্যতে উপযুক্ত চাকরি পায়, তাদের ঘরে বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা, তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাওয়া অথবা তার পরিবর্তে শুধু বাক স্বাধীনতা, তারা কোনটি বেছে নেবে? গরীবের দরিদ্রতা, অন্নের অভাব, বাসস্থান, পানি, বিদ্যুৎ, স্কুল ও স্বাস্থ্যের সুযোগ, নিরাপত্তা না থাকা, সন্তান প্রসবের সময় নারী মারা যাওয়া কি তাদের মানবাধিকার, তাদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন নয়? আমি ভাবছি কোনটি প্রথম অর্থনৈতিক উন্নয়ন অথবা বাক স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র? অথবা পাশাপাশি এবং ধীরে ধীরে উভয়ই পথে আমাদের চলতে হবে? ভাবছি গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং বাকস্বাধীনতার নামে বিচার ও অনুমোদন আরোপ করার ক্ষমতা কে বা কারা রাখেন? আজ বাংলাদেশের জনগণ ক্ষমতা দখলের জন্য সন্ত্রাসীদের দ্বারা হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও, হত্যা এবং সম্পত্তি ধ্বংস হতে দিতে চায় না। এইতো সেইদিন, সিঙ্গাপুর একটি কঠোর স্বৈরশাসক দ্বারা শাসিত ছিল, আর তার নেতৃত্বে ধীরে ধীরে ধনী এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠে। আজ অর্থনীতি বৃদ্ধির সাথে সাথে, মানুষ দরিদ্র নয় এবং তাদের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এবং মানবাধিকার (অভিবাসী শ্রমিক বাদে) ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চিতভাবে অনেকটা নিশ্চিত। বাংলাদেশেও পরিবর্তন ঘটছে এবং এই পরিবর্তন দমন করা যাবে না। কেউ এটা থামাতে পারবে না। নিষেধাজ্ঞা বা কোনো অনুমোদন, বা কোনো হুমকি তা তরান্বিত করতে পারবে না। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। আমরা নিজেরাই কোন বহিরাগত হুমকি বা নিষেধাজ্ঞা ছাড়া সেগুলি অর্জন করবো। নিজেকে আর নিজের শক্তির উপর বিশ্বাস করতে শুরু করুন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মা জীবনের প্রথম এবং বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক


Thumbnail

একটা গল্প দিয়ে শুরু করছি। এক প্রেমিকা তার প্রেমিককে পরীক্ষা করার জন্য বলল, তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে চাই আমি! প্রেমিক বলল, কী পরীক্ষা নেবে? সব পরীক্ষার জন্য আমি প্রস্তুত। প্রেমিকা বলল, তোমার মায়ের হৃৎপিণ্ডটা নিয়ে আসো। প্রেমে অন্ধ ছেলেটি ছুটল মায়ের কাছে! মাকে হত্যা করে তার হৃৎপিন্ড নিয়ে ছুটল প্রেমিকার কাছে, ভালোবাসার পরীক্ষায় পাস করতে। পথে হঠাৎ আছড়ে পড়ল, আর হাত থেকে ফসকে গেল মায়ের হৃৎপিন্ডটা। হাতে তুলে নিতেই হৃৎপিন্ড থেকে আওয়াজ এলো, “ব্যথা পেলি খোকা? তুই তো খুব পিপাসার্ত, ক্লান্ত। আমি যে দাঁড়াতে পারছি না, তোকে কীভাবে পানি পান করাব বাবা”। এরই নাম মা।

আজ বিশ্ব ‘মা’ দিবস। দিনটি কীভাবে, কবে...

কোথা থেকে এলো, কেন পালন করা হয়, এর গুরুত্ব কী, তা হয়তো অনেকের অজানা। দিনটি পালনে রয়েছে এক ইতিহাস। ১৯০৭ সালের ১২ মে আমেরিকার ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রাফটন শহরে প্রথমবার ‘মাদার্স ডে’ বা মা দিবস পালিত হয়। ভার্জিনিয়ায় অ্যান নামে এক সমাজকর্মী ছিলেন। তিনি নারী অধিকার নিয়ে কাজ করতেন এবং ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন। ছোট ছোট ওয়ার্ক ক্লাব বানিয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে নিতে চেষ্টা এবং তাদের স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করতেন। অ্যানের একটি মেয়ে ছিল। একদিন মেয়ের সামনেই প্রার্থনা করেছিলেন, “যেন কেউ একটা দিন মায়েদের জন্য উৎসর্গ করেন”। মায়ের সেই প্রার্থনা হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যায় তার মেয়েটির। অ্যানের মৃত্যুর পর সেই দিনটিকে সারা বিশ্বের প্রতিটি মায়ের উদ্দেশে উৎসর্গ করেন তার মেয়ে। আর এভাবেই মায়েদের প্রতি সম্মানে পালিত হয়ে আসছে মা দিবস। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে ‘মা দিবস’ ঘোষণা করেন। এর পর থেকে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়ে থাকে।

‘মা’ কথাটি সবচেয়ে ছোট, অথচ সবচেয়ে মধুর একটি শব্দ। মাত্র এক অক্ষরে শব্দটি হলেও এর ব্যাপকতা সাগরের চেয়েও বিশাল। মায়ের মতো এত মধুর আর আবেগী শব্দ পৃথিবীতে আর একটিও নেই। যে শব্দটিতে জড়িয়ে আছে স্নেহ-মায়া-মমতা-ভালোবাসা। ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, প্রতিটি সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা ও প্রেম স্বার্থহীন, সীমাহীন। সন্তানের জন্য মা বরাবরই নিঃস্বার্থ একজন মানুষ। মা হচ্ছেন মমতা-নিরাপত্তা-অস্তিত্ব, নিশ্চয়তা ও আশ্রয়। মা সন্তানের অভিভাবক, পরিচালক, ফিলোসফার, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও বড় বন্ধু। জীবনে সবচেয়ে বড় শ্রমজীবী হচ্ছেন মা, যার কর্মবিরতি নাই, মজুরি নাই, দাবি নাই, শর্ত নাই, স্বার্থ নাই, তিনি শুধু শ্রম দিয়েই যাচ্ছেন। তারই নাম মা। নিজের জীবনের চেয়েও সন্তানকে ভালোবাসেন, সন্তানের কথা ভাবেন। সন্তানের সামান্য ব্যথাতে ব্যথিত হন। মা সব রোগের চিকিৎসক। মায়ের কাছে সবকিছু চাওয়া যায়। ‘মা’ই একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর কাছে সবকিছু চাইলেই পাওয়া যায়। মা সবচেয়ে সেরা রাঁধুনি। মায়ের হাতের রান্না পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার। মা হলো সন্তানের প্রথম বন্ধু, সেরা বন্ধু, চিরকালের বন্ধু। মায়ের মতো পরম বন্ধু এ জীবনে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আরও পড়ুন: আজ বিশ্ব মা দিবস

গর্ভধারণের মুহূর্ত থেকেই সন্তানের সঙ্গে একজন মায়ের নিবিড় বন্ধন তৈরি হয়। বন্ধনটি আরও গভীর হয় যখন তিনি সন্তানকে তাঁর জঠরে মধ্যে বহন, উষ্ণতা, পুষ্টি এবং সুরক্ষা প্রদান করতে থাকেন। গর্ভাবস্থায় একজন মা তাঁর অনাগত সন্তানের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন, যা তুলনাহীন। এই গভীরতা অন্য কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। এরপর শিশুটি যখন ভূমিষ্ট হয়ে পৃথিবীতে আসে, তখন মা হয়ে যান তার প্রথম এবং সাবর্ক্ষণিক পরিচর্যাকারী। সন্তানের জন্য অগণিত রাতজাগা, সারাক্ষণ যত্ন নেওয়া, খাওয়ানো এবং আদরের আলিঙ্গনের মাধ্যমে তিনি সীমাহীন ধৈর্য প্রদর্শন করেন।

প্রতিটি মানুষের পৃথিবীতে আসা ও বেড়ে ওঠার পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করেন একজন মা। এজন্য শুধু মানুষ নয়, পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীই তার মায়ের কাছে ঋণী। এই ঋণ শোধ করার কোনো বিকল্প নাই। মা হলেন এমন একজন মানুষ, যিনি অন্য সবার স্থান নিতে পারেন কিন্তু তাঁর স্থান অন্য কেউ নিতে পারে না। চাওয়া-পাওয়ার এই পৃথিবীতে মায়ের ভালোবাসার সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা হয় না।

মাকে নিয়ে কিছু অসাধারণ উক্তি: মাকে নিয়ে পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তিরা হাজারো অসাধারণ উক্তি করেছেন।

(১) মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।”

(২) রবীন্দ্রনাথের গানে, “মধুর আমার মায়ের হাসি, চাঁদের মুখে ঝরে ..., সে যে জড়িয়ে আছে ছড়িয়ে আছে সন্ধ্যা রাতের তারায়, সেই যে আমার মা, বিশ্বভুবন মাঝে তাহার নেইকো তুলনা..., প্রদীপ হয়ে মোর শিয়রে কে জেগে রয়

দুঃখের ঘরে, সেই যে আমার মা সেই যে আমার মা। বিশ্বভুবন মাঝে তাহার নেইকো তুলনা, সেই যে আমার মা”।

(৩) আব্রাহাম লিংকন বলেছেন, “যার মা আছে, সে কখনোই গরিব নয়”।

(৪) বিখ্যাত ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাডোনা বলেছেন, “আমার মা মনে করেন আমিই সেরা, আর মা মনে করেন বলেই আমি সেরা হয়ে গড়ে উঠেছি”।

(৫) জর্জ ওয়াশিংটন বলেছেন, “আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী নারী হলেন আমার মা”। মায়ের কাছে আমি চিরঋণী। আমার জীবনের সব অর্জন তাঁরই কাছ থেকে পাওয়া নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা আর শিক্ষার ফল।

(৬) মাইকেল জ্যাকসন বলেছেন, “আমার মা বিস্ময়কর, আর আমার কাছে উৎকৃষ্টের আরেক নাম”।

(৭) কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, “মা হলো পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক, যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট জমা রাখি এবং বিনিময়ে নেই বিনা সুদে অকৃত্রিম ভালোবাসা”।

(৮) কবি কাদের নেওয়াজ বলেছেন, ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি, কিন্তু জেনো ভাই, ইহার চেয়ে নামটি মধুর, তিন ভুবনে নাই...”।

(৯) কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, “যেখানেতে দেখি যাহা, মা এর মত আহা, একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই, মায়ের মতন এত আদর সোহাগ সেতো, আর কোনোখানে কেহ পাইবে না ভাই”।

(১০) শিল্পী “ফকির আলমগীর এর ভাষায়, “মায়ের এক ধার দুধের দাম, কাটিয়া গায়ের চাম, পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না, এমন দরদি ভবে কেউ হবে না আমার মা গো”।

ইসলামে মায়ের সম্মান ও অধিকার : ইসলাম মাকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম করা হয়েছে মাকে। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। তাই জান্নাত পাওয়ার আকাক্সক্ষাকারী কোনো সন্তানই মাকে এড়িয়ে যেতে পারে না।

আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “তোমার পরওয়ারদেগার আদেশ করিয়াছেন, তোমরা তাহাকে ব্যতীত অন্য কাহারও এবাদত করিও না এবং তুমি মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করিও, যদি তোমার সম্মুখে তাঁহাদের একজন অথবা উভয়ে বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে তাহাদিগকে উহ পর্যন্তও বলিও না, আর তাঁহাদিগকে ধমক দিও না এবং তাঁহাদের সঙ্গে খুব আদবের সহিত কথা বলিও। এবং তাঁহাদের সম্মুখে করুণভাবে বিনয়ের সহিত নত থাকিবে, আর এইরূপ দোয়া করিতে থাকিবে, হে আমার পরওয়ারদেগার! তাঁহাদের উভয়ের প্রতি দয়া করুন, যেরূপ তাহারা আমাকে লালন-পালন করিয়াছেন শৈশবকালে” (সুরা বনি ইসরাইল, ২৩-২৪)।

আল্লাহ আরও বলেন, “আমি মানুষকে তাহার মাতা-পিতা সম্বন্ধে নির্দেশ দিয়াছি, তাহার মাতা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করিয়া তাহাকে গর্ভে ধারণ করিয়াছে এবং তাহার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে, যেন তুমি শোকর কর আমার” (সুরা লোকমান-১৪)।

অন্য এক আয়াতে আছে, “আর তোমরা আল্লাহতায়ালারই এবাদত কর, এবং তাঁহার সহিত কাহাকেও শরিক করিও না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করিও” (সুরা-নিসা-৩৬)। পিতা-মাতার অধিকার সম্পর্কে হাদিসেও বহু জায়গায় বর্ণনা এসেছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া অবশ্যই কবুল হয়; এতে কোনো সন্দেহ নেই। এক, মা-বাবার দোয়া তাঁর সন্তানের জন্য; দুই, মুসাফিরের দোয়া ও তিন, অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া অত্যাচারীর বিরুদ্ধে” (আবু দাউদ)।

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “মা-বাবাই হলো তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম” (ইবনে মাজাহ-মিশকাত)।

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, “যখন কোনো অনুগত সন্তান নিজের মা-বাবার দিকে অনুগ্রহের নজরে দেখে, আল্লাহ তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সাওয়াব দান করেন” (বায়হাকি-মিশকাত)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রসুল! কে আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি হকদার? তিনি বললেন তোমার মা; সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা; সে আবারও বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে পুনরায় বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা (বুখারি ও মুসলিম)।

একদিন হজরত মুয়াবিয়া ইবনে জাহিমা আসসালামি (রা.) রসুল (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে বললেন, ‘ইয়া রসুলাল্লাহ! আমি জিহাদ করতে ইচ্ছুক। এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী? জবাবে রসুল (সা.) বললেন, তোমার মা আছেন? তিনি বললেন, আছেন। রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকো, কেননা তার পায়ের নিচেই জান্নাত।’

উপরোক্ত আয়াতগুলোতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আল্লাহর পরেই মা-বাবার অধিকার।

রসুল (সা.)-এর জমানায় বিখ্যাত এক আশেকে রসুল ওয়াইস করনি (রা.) প্রিয় নবীজির কাছে এই মর্মে খবর পাঠালেন, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ (সা.), আপনার সঙ্গে আমার দেখা করতে মন চায়; কিন্তু আমার মা অসুস্থ। এখন আমি কী করতে পারি?’ নবীজি (সা.) উত্তর পাঠালেন, ‘আমার কাছে আসতে হবে না। আমার সাক্ষাতের চেয়ে তোমার মায়ের খেদমত করা বেশি জরুরি ও বেশি ফজিলতের কাজ।’

মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব : সন্তানের সব সময় মনে রাখা উচিত, মায়ের ত্যাগের কারণেই সে আজ সে এই সুন্দর পৃথিবীতে এসেছে। যদি সে মাকে ভুলে যায়, কষ্ট দেয় বা অবহেলা করে- তাহলে সবই মিছে। সন্তানের পর্বত সমান সফলতা তখন মূল্যহীন। কিন্তু অতি দুঃখের সঙ্গে লিখতে হচ্ছে, সেই মহান মায়ের প্রতি অনেক সন্তান আজকাল উদাসীন, অনেকে বেপরোয়া। এমনও শোনা যায়, সন্তান তার মাকে প্রহার করছেন, ঘর থেকে বের করে দিচ্ছেন, জঙ্গলে মাকে ফেলে এসেছেন, নিজে সুন্দর ঘরবাড়িতে বাস করে মাকে রেখেছেন রান্নাঘরে।

এমনও দেখা যায়, পিতা-মাতাকে সন্তান ঠিকমতো ভরণপোষণ দিচ্ছে না। তারা বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের বৃদ্ধাশ্রম নামক কারাগারে পাঠিয়ে দিচ্ছে। অথচ স্ত্রী-সংসার নিয়ে নিজেরা বেশ আরাম-আয়েশে থাকছে। তাদের পরিবারে বাবা-মা যেন বোঝা। যে সন্তানকে আদর যত্ন দিয়ে মানুষ করলেন, সেই সন্তান কীভাবে তার মায়ের অবদানকে ভুলে যায়? নাড়িছেঁড়া ধন একজন সন্তানের কাছ থেকে কোনোভাবেই এসব কাম্য নয়। এতে আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে; জমিন অভিশাপ দেয়। নিশ্চয় কঠিন কেয়ামতের দিন সেই সন্তানকে আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কী উপায় হবে সেদিন?

মা শ্রদ্ধার আধার, স্নেহের কান্ডারি। সব ধর্মেই মা আশীর্বাদস্বরূপ। তাই সন্তানের সর্ব প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে মাকে শ্রদ্ধা করা, অন্তরের শ্রেষ্ঠতম আসনে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করা, ভক্তি ও শ্রদ্ধায় মাকে অভিষিক্ত করা। সন্তানের কাছে মা-ই হলেন জগতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। তাই মায়ের সঙ্গে সর্বদা সম্মানজনক ও সহযোগিতামূলক ব্যবহার করতে হবে। তাঁর সঙ্গে কখনো কর্কশ ভাষায় কথা বলা উচিত নয়। মায়ের অবাধ্যতা অমার্জনীয় অপরাধ। মায়ের আদেশ পালন করা এবং তাঁর নির্দেশ মেনে চলা সন্তানের পবিত্র কর্তব্য। মায়ের ঋণ কোনো দিন কখনো কোনোভাবেই শোধ করা যাবে না।

পৃথিবীর সবচেয়ে আপন হলো মা। তাই আসুন আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, আমরা আমাদের কোনো আচরণে যেন মাকে কষ্ট না দিই। যাদের মা এখনো বেঁচে আছেন, সেই মায়ের জন্য জীবনের সর্বোচ্চটাই করার চেষ্টা করি। মা-বাবার সেবা-যত্ন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত অর্জন করি। আল্লাহ আমাদের সবাইর পিতা-মাতাকে ভালো রাখুন। তাদের উত্তম সেবা করার তৌফিক দান করুন।

 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আপাদমস্তক একজন বাম আদর্শের ব্যক্তিত্বের উদহারণ ছিলেন রনো ভাই


Thumbnail

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা হায়দার আকবর খান রনো না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন। শতভাগ বাম আদর্শে বিশ্বাসী একজন ব্যক্তি ছিলেন তিনি। আদর্শগতভাবে আমরা কখনোই এক আদর্শে বিশ্বাসী ছিলাম না। কিন্তু সেই ৬০ এর দশক থেকে রণ ভাইকে আমি চিনি। এবং ব্যক্তিগতভাবে তিনি আমার অগ্রজতুল্য।

বর্তমান যুগে বাম আদর্শের বা যেকোন আদর্শে শতভাগ বিশ্বাসী নির্ভেজাল লোক পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। সেখানে আপাদমস্তক একজন বাম আদর্শের ব্যক্তিত্বের উদহারণ ছিলেন রনো ভাই। তিনি যে লেখাগুলো লিখতেন তার অধিকাংশ লেখাগুলো আমি পড়েছি। তার বিশ্লেষণের ক্ষমতা, লেখার ধরণ প্রত্যেকটা জিনিসে বাম রাজনীতি এবং বাম আদর্শ ফুটে উঠতো। 

তিনি এমন একটি সময় আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন যখন বাংলাদেশে বাম দল কবরে যাওয়ার পথে। অথচ আমাদের দেশে এখনই বামদলের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কেননা, চরম ডানপন্থি দলগুলো অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য তারা চ্যালেঞ্জ। আবার ডান দলগুলোর মধ্যে যাদের মডারেট ডান বলা যায়, তারাও আজ শক্তিহীন। 

একমাত্র গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মধ্যম পন্থায় চলা আওয়ামী লীগ শক্তিশালী, আর মডারেট ডান হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিএনপির মতো যে দলগুলো আছে তারাও আজ নেই বললেই চলে। এমন একটা ক্রান্তিকাল যখন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষ একটি রাজনৈতিক দলকে সামনে নানা যারা চরম বামপন্থী বা চরম ডানপন্থী হবে না। ঠিক সেই সময় একজন আদর্শবান রনো ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। রনোভাইদের মতো যারা সত্যিকার বাম আদর্শে বিশ্বাস করতেন এমন ব্যক্তি বাস্তব ক্ষেত্রে খুঁজে পাওয়া যায় না। রনো ভাই ছিলেন রাজনৈতিক লড়াকু সৈনিক এবং পদ পদবীর কোন লোভ তার মধ্যে ছিল না। সবসময় আত্ম প্রচার থেকে দূরে থাকতেন তিনি। এমন একজন ব্যক্তির চলে যাওয়া মানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন আদর্শবান বাম সৈনিকের চলে যাওয়া। 

যারা বাম আদর্শে বিশ্বাস করেন তাদেরকে আমি বলবো, আপনারা রনো ভাইয়ের বিকল্প হতে পারবেন না, কিন্তু সকলে আপনারা এক হয়ে, রনো ভাইয়ের মতো আদর্শিক হয়ে এখনই যদি বাম দলকে সংগঠিত না করেন তাহলে আওয়ামী লীগের বিকল্প হবে তালেবানরা। এখন আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আওয়ামী লীগকে কি তালেবানের সাথে যুদ্ধে নামাবেন নাকি দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য নিজ দায়িত্বে বাম দলকে সুসংগঠিত করবেন।


সিপিবি   হায়দার আকবর খান রনো  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

দেশের গণতন্ত্রকে অনুসরণ করবে অন্যরা


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চতুর্থ মেয়াদের ক্ষমতার চার মাস পার করে দিয়েছেন। অনেকের ভেতরে আলাপ-আলোচনা শোনা যায় যে, বিশেষ করে যারা বেতনভোগী বুদ্ধিজীবী, বাইরের অনেক পত্রপত্রিকায় যারা লেখালেখি করেন তারা একটি প্রশ্ন তোলেন যে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আসলে এ বিষয়টি নিয়ে খুব বস্তুনিষ্ঠ এবং নির্মোহভাবে কোনো আলাপ-আলোচনা হয় না। আমি এ বিষয়টির কিছু ভাবনা প্রকাশ করতে চাই।

কদিন আগে স্টিভেন লেফেস্কি এবং ডেনিয়েল জিব্লাটের লেখা ‘হাউ ডেমোক্রেসি ডাই’ বইটি পড়ছিলাম। বইটি আমেরিকা থেকে প্রকাশিত এবং দেশে দেশে বহুল পঠিত। ২০১৮ সালে প্রকাশিত বইটি বেস্ট সেলার হিসেবেও বিবেচিত হয়েছে। কীভাবে ধীরে ধীরে গণতন্ত্র ক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে এবং দেশে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, সে বিষয়ে বইটির ২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে।

প্রথমেই যেটি বলা হয়েছে তা হলো, সংবিধানকে গণতন্ত্রবিরোধী সরকার মানে না সংবিধানকে কীভাবে দূরে সরিয়ে দেশ শাসন করা যায়, সেই চেষ্টা করে।

বাংলাদেশে নিয়মিত নির্বাচন হওয়ার ফলে সংবিধানবহির্ভূত ঘটনা শেখ হাসিনার শাসনামলে ঘটেনি। বলা যায় ১৯৮১ সালের ১৭ মে যেদিন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব নেন, সেদিনই কিন্তু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সূচনা শুরু হয়। সেদিনকে বলা চলে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শুভ যাত্রার দিন’। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, এ গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য তিনি দেশে এসেছেন এবং সর্বশেষ তিনিই গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছেন। তার আশার পরেই কারফিউ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন সামরিক একনায়ক জিয়া।

আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচন বর্জন বিএনপি কফিনের শেষ পেরেক

গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য যেসব কাজ করা হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচনকে যে কোনো প্রকারে বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা অনেক কঠিন অবস্থার মধ্যে থেকেও নিয়মিত নির্বাচন করে চলেছেন। একনায়কতন্ত্র যে গণতন্ত্রকে দুর্বল করে তার কোনো চিহ্ন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার মধ্যে নেই। বিরোধী দল যত গণতন্ত্র ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করেছেন, শেখ হাসিনা ততই গণতন্ত্র সুরক্ষার চেষ্টা করেছেন।

বইটিতে বলা হয়েছে, এসব একনায়ক সরকার কিছু কিছু সংগঠনকে বন্ধ করে দেয়। যেমন—মানবাধিকার কমিশন। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এ মানবাধিকারকে আরও উজ্জীবিত করেছেন। স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন তারই সৃষ্টি। এ ছাড়া এসব একনায়ক রাজনৈতিক দলকে বন্ধ করে দেয়। কিন্তু দেখা যায় দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলকে বন্ধ করেননি। বরং রাজনৈতিক দলগুলোকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।

বইটিতে আরেকটি বিষয়ে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয় আর তা হচ্ছে, সরকার দুর্বল হতে থাকলে এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সামরিক গোষ্ঠী ক্ষমতা দখল করে এবং সংবিধানকে বাতিল করে অথবা স্থগিত করে দেশ চালায়। সে হিসেবে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটা খুব সুশৃঙ্খল, শক্তিশালী এবং পেশাদার সামরিক বাহিনী গড়ে তুলেছেন। এখানে কোনো ধরনের নৈরাজ্য দেখা যাচ্ছে না, আজ পর্যন্ত ঘটেনি এবং ঘটারও সম্ভাবনা নেই। সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদ সংযোজন শেখ হাসিনার আরেকটি অসাধারণ উদ্যোগ। এটি গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। এর ফলে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয়েছে।

আরও পড়ুন: বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ

এ বইয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে তা হলো, যে কোনো নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে হৈচৈ হয়। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে আমাদের দেশে হৈচৈ হলেও সর্বশেষ নির্বাচনে এটি প্রমাণ হয় সবাই এ নির্বাচন গ্রহণ করে নিয়েছে। যারা বলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র দুর্বল হচ্ছে তাদের জন্য এ উদাহরণগুলো দিয়ে বলা যায় দুর্বল নয় বরং বাংলাদেশে দিন দিন গণতন্ত্র শক্তিশালী হচ্ছে। বলা যায়, দেশ এখন শুধু উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে। নির্বাচনে দেওয়া ইশতেহারগুলো সরকার পূরণ করে চলেছে। মানুষের যে মৌলিক অধিকার তা পূরণ করা হচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীনদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, পথশিশু এবং বস্তিবাসীর জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষকে করা হচ্ছে আত্মনির্ভর। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবার জন্য প্রতি ছয় হাজার জনগণের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তুলেছেন। আর এ কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ গত বছর ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত প্রচার করে তারাই মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা। তারাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার কোথায় কোথায় লঙ্ঘন হচ্ছে তার সূচক দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সূচক নেই। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে যে, গাজাতে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম অত্যাচার। আর এতে ইসরায়েলকে অস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে তারা। এ বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন তুঙ্গে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা এভাবেই প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু এবার যুক্তরাষ্ট্র এ আন্দোলনের বিষয়টি অন্যভাবে দমন করছে। শিক্ষার্থীদের অমানবিক কায়দায় নিপীড়ন করা হচ্ছে।

আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ এবং র‌্যাবের প্রতি আমার একটি আবেদন থাকবে, তারা যেন আন্দোলন দমনে যুক্তরাষ্ট্রের এ স্টাইল অনুসরণ না করে। কেননা তাদের এ স্টাইল যদি আমরা ফলো করি তাহলে আমাদের গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাবে। সুতরাং আমরা যারা সাধারণ জনগণ, আমরা আপনাদের প্রতি অত্যন্ত বিশ্বাসী এবং আপনাদের কাছে শ্রদ্ধায় মাথানত করি। আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য, আমাদের সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য অনেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য জীবন দিচ্ছেন। আমি জানি যে, আপনাদের জীবন অমূল্য, অনেকে এর জন্য তাদের সংসার ত্যাগ করছেন। আপনাদের প্রতি সহানুভূতি জানানোর দায়িত্ব হয়তো আমাদের নেই, কিন্তু দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আপনাদের দেখছেন। তাই কষ্ট হলেও আপনারা আপনাদের পথে থাকেন।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, আগামী ১০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র থাকবে কি না, তা নিয়ে ভাবনা হচ্ছে অনেকের। তাই বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে গণতন্ত্র শিখতে হবে না। আমরা তাদের কিছুতেই অনুসরণ করতে পারি না এবং অনুসরণ করে আমাদের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে পারি না। সুতরাং এ দেশে গণতন্ত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে এবং আমার বিশ্বাস গণতন্ত্রে আমরা বিশ্বে মডেল হব। যেমনটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ভ্যাক্সিনেশনে আমরা মডেল হয়েছি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়েও বিশ্বে মডেল হবেন। এজন্য আমাদের কাউকে অনুসরণ করার প্রয়োজন নেই।

লেখক: সভাপতি, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট


অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী   গণতন্ত্র   মানবাধিকার   কমিউনিটি ক্লিনিক   দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

উপজেলা নির্বাচন বর্জন বিএনপি কফিনের শেষ পেরেক


Thumbnail

আজকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেভাবে হয় তার সামান্যতম কোন ব্যতিক্রম হয়নি। ভোটাররা উৎসাহ নিয়ে ভোট দিয়েছে। কোথাও কোথাও অনেক ভোটার আছেন যারা মনে করেন যে, অমুকে তো অনেকে জনপ্রিয় প্রার্থী, তিনিই বিজয়ী হবেন। আমার ভোট না দিলেও হবে। এ রকম মনোভাব নিয়ে অনেকে ভোট দেয়নি। আর কিছু জায়গা আছে ছোট খাটো মারামারি হয়েছে। যা এদেশের স্থানীয় নির্বাচনের চরিত্র। 

নির্বাচনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সেটার প্রমাণ করছেন বারবার। সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রপতিও শেখ হাসিনার দার্শনিক ভিত্তি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, শেখ হাসিনার প্রতিটি সিদ্ধান্ত একেকটা দর্শন। এবং এর লম্বা প্রভাব রয়েছে। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আসলে সংগ্রামের মধ্যেই আছেন। এই যে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। তাকে হত্যার করার হুমকি থাকলেও তিনি দেশে এসেছেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন যে, আমাকে যখন দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে আমি সেটা মোকাবিলা করার জন্য দেশে যাব এবং তিনি দেশে এসেছেন। আমরা অনেক সময় অনেক কথা বলে আবার পিছিয়ে যাই। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটা করেননি। তিনি দেশে এসেছেন। তবে আল্লাহ একটা রহমত আছে তাঁর প্রতি। আল্লাহ মনে হয় তাকে সব সময় চাঁদর দিয়ে ঢেকে রক্ষা করেন অত্যন্ত বাংলাদেশের জন্য। না হলে বারবার তার ওপর যে রকম আঘাত এসেছে তাতে উনার বাঁচার কথা নয়। 

বাংলাদেশে বিরোধী দল বলতে এখনো জনগণ বিএনপিকেই বুঝে। এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। কারণ জাতীয় পার্টি এবং বাম দল তো এখন নাই। জাতীয় পার্টি মোটামুটি ভাবে শেষ হয়ে গেছে। এখন বিএনপিও শেষ হয়ে যেতে বসেছে। উপজেলা নির্বাচন হয়ে গেল। নির্বাচনে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন সেখানে হয়তো বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত কেউ কেউ থাকবেন। কিন্তু যারাই হোক না কেন তারা আর কেউ বিএনপির থাকবে না। বিএনপির একের পর এক নির্বাচন বর্জন করার ফলে দল হিসেবে নিশ্চিত হওয়ার পথে। এদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি খুব শঙ্কিত অনুভব করছি উপজেলা নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর। কারণ বিএনপি যে ধ্বংস হয়ে গেল তাতে গণতন্ত্রের যে ক্ষতি হয়ে যাবে এই ক্ষতি সহজে পূরণ করা যাবে না। কারণ একটি শক্তিশালী বিরোধী দল আমাদের দেশে থাকা দরকার। যেহেতু বাম রাজনীতি যারা করেন তারা একেবারে ক্ষমতাহীন। নিজেরা দাঁড়ালে এক হাজার ভোটও তারা পায় না। আর জাতীয় পার্টির অবস্থাও এখন একই রকম। আর এদেশে সন্ত্রাসের রাজনীতি আর চলবে না। সেটার মূল উৎপাটন করেছেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। সেটাও তাঁর দার্শন ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে। তিনি দেশে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কিন্তু ইসলামকে রাজনীতির জন্য ব্যবহার করেননি। তিনি সব সময় বলেন যে, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’ তিনি সেভাবে কাজও করছেন। সুতরাং আমাদের দেশে ধর্মান্ধ রাজনীতির কোন সুযোগ নাই। 

বাংলাদেশে এই যে গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এজন্য প্রধানত দায়ী আমেরিকা। কারণ আমেরিকা যেভাবে এবার তাদের দেশে ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলন প্রতিহত করছে তাতে যে উদারহণ তারা সৃষ্টি করলো এটা মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব রাখবে সারা বিশ্বে। তারা আর কাউকে বলতে পারবে না যে, তোমার দেশে মানবাধিকার নাই। মানবাধিকার এখন শুধু বাংলাদেশেই আছে বলে আমার মনে হয়।

বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগকে বাকশাল গঠন করার জন্য একটা বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য করছে। এটা আমরা চাই না। বাকশাল যখন করা হয় তখন দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে একটা আলাদা প্রেক্ষাপট ছিলো। কিন্তু এখন সেটা নেই। সুতরাং এখন গণতন্ত্রের মধ্যে জনগণকে থাকতে হবে। কিন্তু এই যে বিএনপি গণতন্ত্রের ক্ষতি করলো এই ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে আমার জানা নেই। এজন্যই আমার মনে হয় বিএনপি শুধু নিজের ক্ষতি করলো তা না, দল হিসেবে তারা তো শেষ হয়ে গেলো। সাথে সাথে বাংলাদেশের গণতন্ত্রে যে আঘাত তারা করলো সেটা মারাত্মক আঘাত এবং আমরা কেউই এই আঘাত চাইনি। এখন আওয়ামী লীগ ছাড়া কোন রাজনৈতিক দলের বাস্তব উপস্থিতি থাকলো না। বাকি দলগুলো তো নিজেরা নিজেদের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বাম দল তারা সাহস দেখাতে পারলো না। তারা সঠিক পন্থা অবলম্বন করতে পারলো না। এজন্য শেষ হয়ে গেলো। অন্যদিকে যারা সন্ত্রাস করে রাজনীতি করতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলোরেন্স নীতিতে তারা এখন ধ্বংস প্রায়। বিএনপি ঠিকে থাকতে পারতো কিন্তু তারা সেটা চেষ্টাও করলো না। বিএনপি আন্দোলন করতে পারেনি ঠিক কিন্তু তারা যদি শুধু প্রতিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতো তাহলেও এদেশে একটি রাজনৈতিক শক্তি থাকতো। ক্ষমতায় যাওয়াই রাজনৈতিক দলের একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত না। জনগণের সাথে যদি থাকেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এক সময় নিশ্চিত ক্ষমতায় যাবেন। অনেক দেশে এমন অনেক দল আছে যারা ক্ষমতায় নেই তবে তারা রাজনৈতিক ভাবে অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যায় না। ব্রিটেনের লেবার পার্টি অনেক দিন ধরে ক্ষমতায় নেই। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে জরিপে দেখা যাচ্ছে এবার তারা ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে। অথচ এক সময় তারেদর কোন সম্ভাবনাই ছিল না। তাই আমি বলবো শুধু লন্ডনের বুদ্ধিতে বিএনপি তাদের কফিনের শেষ পেরেকটাও মারলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে। সাথে সাথে বাংলাদেশের গণতন্ত্রেও তারা এই পেরেক বিদ্ধ করলো। এটা থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। বিএনপি তো আর পারবেই না। আমি আশা করি বাম দলগুলো যেন সেই উদ্যোগ নেয়।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

গোয়েবলসের বাড়ি কেনার জন্য তারেক জিয়াই যোগ্য ব্যক্তি


Thumbnail

মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের বাড়ি বিনা টাকায় বিক্রি করার জন্য কর্তৃপক্ষ আগ্রহী প্রার্থী পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মনে হলো যে, আমাদের একজন ভালো খরিদ্দার আছে এবং তার কাছে এই গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি করলে গোয়েবেলসের আদর্শটাও বেঁচে থাকবে এবং কর্তৃপক্ষেরও উপকার হবে। আর এ খরিদ্দার হচ্ছে বিএনপি এবং এবং লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বাড়িটি কিনতে পারেন। তিনি হচ্ছেন গোয়েবেলসের এই বাড়ির যোগ্য ব্যক্তি। কারণ তিনি গোয়েবেলসের ভাবশিষ্য। 

গোয়েবেলস যেভাবে জার্মানিকে তখন গেসকাভো বাহিনী দিয়ে হত্যা করা থেকে শুরু করে সবকিছু জাস্টিফাই করতো, যুদ্ধে হেরে যাওয়ার সময়ও বলতো জিততেছে। তার একটা বিখ্যাত থিওরি ছিলো, ‘একটা মিথ্যা বার বার বললে সেটা সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।’ এরকম বিভিন্ন দিকে গোয়েবেলস সম্বন্ধে পড়ে এবং দেখে বুঝেছি যে, বিএনপি এবং তারেক জিয়ার সাথে হিটলার বাহিনীর প্রচার মাধ্যম এবং আদর্শগত মিল সাংঘাতিক। হিটলার বাহিনী যেমন তখন ইহুদিদের হলোকাস্ট করেছে বিএনপিও যখন ২০০১ এ নির্বাচনে জিতে যায়, তখন তারা আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের হত্যা করেছে, শিশুদের শ্লিলতাহানী করেছে এবং এমন কোন অপকর্ম নেই যা করেনি। সুতরাং তারা এই হিটলার বাহিনীরই প্রতিনিধিত্ব করে এখন। 

আমার জানা মতে, তারা এই কাজটি যেহেতু ভালোভাবে করতে পেরেছে এই কারণেই এই বাড়িটি পাওয়ার সবচেয়ে যোগ্য হচ্ছে, বিএনপি এবং বিএনপির পক্ষে তারেক জিয়া। সুতরাং আমার মনে হয়, গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি হওয়ার আগেই তাদের যোগাযোগ করা প্রয়োজন, যাতে বাড়িটা বিনা পয়সায় নিয়ে জার্মানিতে স্থায়ীভাবে তারা এবং তাদের লোকজন মাঝে মাঝে গিয়ে থাকতে পারে। এতে তাদের কাজের খুব সুবিধা হবে।

স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিক কারণে জার্মান সরকার বাড়িটাকে ধ্বংস করতে চায় না। তাই তারা এতদিন বাড়িটাকে ঠিকঠাক করে রেখেছে। কারণ জার্মানের লোকজনের ভেতরে হিটলারের আদর্শ উপস্থিত আছে। আর হিটলারের আদর্শকে ধরে রাখার মতো যেহেতু বিএনপিকে পাওয়া গেছে, তারেক জিয়াকে পাওয়া গেছে। সুতরাং আমার মনে জার্মানির এই গোয়েবেলসের বাড়িটি পাওয়ার একমাত্র যোগ্য বিএনপি এবং তারেক জিয়া। এতে বিএনপি এবং হিটলারের বাহিনীর যে কোন পার্থক্য ছিলো না সেটিও জনগণ বুঝতে পারবে। সুতরাং আমি মনে করি বিএনপির জার্মানিতে গোয়েবেলসের এই বাড়িটি কিনা উচিত। 


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন