নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৯ পিএম, ১৮ জুন, ২০১৮
সরকার জেনারেল আজিজ আহমেদকে দেশের ১৬তম সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। আগামী ২৫ জুন থেকে তাঁর এই নিয়োগ কার্যকর হবে। তিনি বর্তমান সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকের স্থলাভিষিক্ত হবেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৬ মাস আগে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর নিয়োগ। নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই, প্রধান বিরোধী দলসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি করে আসছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক বক্তব্যে, আগামী নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখনো দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। দেশের মানুষের অন্যতম আস্থার প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি পেশাদার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে দেশের রাজনৈতিক টানাপড়েনে ঘাত-প্রতিঘাতে সেনাপ্রধানদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়। অনেক সেনা প্রধান অবসরে গিয়ে রাজনীতিতে জড়ান।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম সেনা প্রধান এম এ জি ওসমানী। ১৯৭১ এ ১২ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি সেনাপ্রধান নিযুক্ত হন। ৬ এপ্রিল ১৯৭২ পর্যন্ত তিনি সেনাপ্রধান ছিলেন। পরবর্তীতে এম এ জি ওসমানী রাজনীতিতেও জড়িয়ে ছিলেন। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেনাপ্রধান ছিলেন মেজর জেনারেল কাজী এম সফিউল্লাহ। ৭ এপ্রিল ১৯৭২ সালে তিনি সেনা প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। দায়িত্বে ছিলেন ২৪ অগাস্ট ১৯৭৫ পর্যন্ত। তিনি সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট একদল বিপথগামী সেনা সদস্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব-পরিবারে হত্যা করে। অনেকেই মেজর জেনারেল সফিউল্লাহকে ব্যর্থ সেনাপ্রধান মনে করেন। কেউ কেউ তাঁকে `কাপুরুষ` হিসেবেও আখ্যায়িত করেন। সফিউল্লার পর সেনাপ্রধান হন জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান হন মূলত সামরিক ক্যুদেতার মাধ্যমে। তিনি সেনাপ্রধান হয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। সেনা পোশাকে বঙ্গভবন দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেন। সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে দল গঠন, অন্য রাজনৈতিক দল গঠন, সেনা অভ্যন্তরে হত্যা, ক্যু এর ধারা সূচনা করেন জেনারেল জিয়া। জিয়া ১৯৭৮ সালের ২৯ এপ্রিল হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদকে দেশের চতুর্থ সেনা প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। এরশাদও জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সেনাবাহিনীকে তাঁর ক্ষমতা দখলের কাজে ব্যবহার করেন। গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে দল গঠন করেন। এরশাদ পুরোদস্তুর রাজনীতিতে প্রবেশ করে সেনা প্রধানের পদ ছাড়েন। নতুন সেনা প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় লে. জেনারেল আতিকুর রহমানকে। জেনারেল আতিক ৩১ সে অগাস্ট ১৯৮৬ সালে সেনা প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে ৩০ অগাস্ট ১৯৯০ সালে অবসরে যান। বাংলাদেশের সেনা প্রধানদের মধ্যে তিনি প্রথম যিনি সেনাপ্রধান থেকে এবং অবসরে যাবার পরে রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। জেনারেল আতিকের পরে সেনাপ্রধান হন, লে. জেনারেল নুরুদ্দিন খান। ৩১ আগস্ট ১৯৯০ তে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরশাদের পতনের ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সেনাপ্রধান অবস্থায় তিনি রাষ্ট্রপতি এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এরশাদের প্রতি সেনা অনাস্থা জানান। এরপর এরশাদের পতন ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। জেনারেল নুরুদ্দিন অবসরে যাবার পরে, বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার দেশের সপ্তম সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন লে. জেনারেল আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিমকে। ৩১ আগস্ট ১৯৯৪ তে তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পান। কিন্তু বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জেনারেল নাসিম তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসের সঙ্গে বিতর্কে জড়ান। সেসময় সশস্ত্র বাহিনীর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী রাষ্ট্রপতি সেনাপ্রধানকে বরখাস্ত করেন। এসময় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিচক্ষণ হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ২০ মে নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান লে. জেনারেল মো. মাহাবুবুর রহমান। ২৩ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সালে জেনারেল মাহাবুব অবসরে যান। এর পরেই তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এখন তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য।
২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ প্রথম এবং দেশের ৯ম সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমানকে। জেনারেল মোস্তাফিজ সেনাপ্রধান ছিলেন ৩ বছর। ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সালে দায়িত্ব নিয়ে ২৩ ডিসেম্বর ২০০০ সালে তিনি অবসরে যান। এরপর তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগেই ছিলেন। দেশের ১০ম সেনাপ্রধান হন লে. জেনারেল এম. হারুন-অর-রশীদ। আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পেয়ে তিনি বিএনপি জামাত জোট সরকারের সময়ে ১৫ জুন ২০০২ সালে অবসরে যান। এরপর সেনাপ্রধান হন লে. জেনারেল হাসান মশহুদ চৌধুরী। ওয়ান ইলেভেনে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। এভাবেই সেনা রাজনীতি সম্পর্কে একটি বিযুক্তিকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু ২০০৫ সালের ১৬ জুন জেনারেল মঈন ইউ. আহমেদ সেনাপ্রধান হবার পর আবার রাজনীতিতে জড়িয়ে ফেলা হয় সেনাবাহিনীকে। জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ, ২২ জানুয়ারি ২০০৭ এর নির্বাচন বন্ধে এবং ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এসময় জেনারেল মঈন হয়ে ওঠেন ‘অঘোষিত’ সরকার প্রধান। তবে জিয়া বা এরশাদের মতো তিনি ক্ষমতা দখল করতে পারেননি। একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে ১৫ জুন ২০০৯ সালে তিনি অবসরে যান। জেনারেল মঈনের পর আরও তিনজন সেনাপ্রধান পেয়েছে দেশ। যারা তাঁদের পেশাদারিত্বে মান দিয়ে সেনাবাহিনীকে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলায় আত্মনিয়োগ নিয়োগ করেন। রাজনৈতিক বিতর্কের উর্ধ্বে নিয়ে যান সেনাবাহিনীকে। এরা হলেন জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল মুবিন, জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া এবং জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিকুল হক। এদের মধ্যে জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যে নির্বাচনে সেনাবাহিনী পেশাদারিত্বে এক কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। নির্বাচনের ৬ মাস আগে দায়িত্ব নিচ্ছেন নতুন সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ। নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কি হবে? তা নির্ধারণে নেতৃত্ব দেবেন নব নিয়োগপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
বিএনপি
চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার
সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার
(২৫ এপ্রিল) রাতে চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাত ৮টা
২০ মিনিটে খালেদা জিয়ার বাসভবনে প্রবেশ করেন বিএনপির মহাসচিব। রাত সোয়া ৯টার দিকে
তিনি বের হয়ে আসেন।
বিএনপির
মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ
তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা
গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতেই মির্জা ফখরুল ফিরোজায় গিয়েছিলেন। তবে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী
এই বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা
হয়েছে সে বিষয়ে বিএনপির
পক্ষ থেকে কিছু জানানো
হয়নি।
মিডিয়া
সেলের তথ্যমতে, রাত ৮টা ২০
মিনিটে খালেদা জিয়ার বাসভবনে প্রবেশ করেন মির্জা ফখরুল।
সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে রাত
সোয়া ৯টার পর বের
হন তিনি। বৈঠকে তিনি দলের সার্বিক
বিষয়ে দলীয় প্রধানকে অবগত করেছেন।
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া তারেক জিয়া বিএনপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
মন্তব্য করুন
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
তীব্র গরম মির্জা আব্বাস বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুজনই দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা বিএনপি পরামর্শ দিয়ে আসছেন এমন গুঞ্জন দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কখনও মুখ খুলেননি বিএনপির কেউই। তবে এবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি জানিয়েছেন বিএনপি থেকে বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়াকে বাদ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে দল ভাবছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে দলের এমন ভাবনার কথা জানান বিএনপির এই নেতা।
উপজেলা নির্বাচন থেকে কঠোর অবস্থান থেকে ইউটার্ন নিলো বিএনপি। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আপাতত যারা উপজেলা নির্বাচন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে সব কিছু নির্ভর করবে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। যারা পরাজিত হবে তাদের ওপর নেমে আসবে শাস্তির খড়গ। আর যারা বিজয়ী হবেন তাদের বিষয়টি উপেক্ষা করা হবে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।