নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ০২ অগাস্ট, ২০১৮
জরুরি কাজে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে প্রাইভেটকারে ধানমন্ডি থেকে সচিবালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন রহমান সাহেব। সিটি কলেজের কাছে পৌঁছানোর পর মোড়ে একদল শিক্ষার্থী তাঁর গাড়ি আটকে লাইসেন্স দেখতে চায়। লাইসেন্স ঠিকঠাক থাকায় গাড়িটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে তিনি লক্ষ্য করেন, স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের ভিড়ে মোটর সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন যুবক। যুবকদের অনেকের গালে হালকা দাঁড়ি, কারও কারও গালে নেই। এদের দেখলেই বোঝা যাচ্ছে এরা শিক্ষার্থী নয়। এই যুবকরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পানি দিচ্ছে, ছোট ছোট প্যাকেটে খাবার সরবরাহ করছে। কৌতুহলবশত গাড়ি ঘুরিয়ে যুবকদের সামনে আসলেন তিনি, জিজ্ঞেস করেন তাদের পরিচয়। জবাবে যুবকরা জানায়, তাঁরা শিক্ষার্থীদের অভিভাবক। কিন্তু যুবকদের ভাবগতিক দেখে যে কেউই বুঝতে পারবে, তাঁরা অভিভাবক নয়।
শুধু সিটি কলেজ এলাকায় নয়, রাজধানীর সব গুরুত্বপূর্ণ সড়কেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আশেপাশে অনেকগুলো মোটর সাইকেল ও যুবকদের দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, সংঘবদ্ধভাবে একটি চক্র শিক্ষার্থীদের উসকে দিতে মাঠে নেমেছে।
সচিবালয় থেকে বেরিয়ে রহমান সাহেব পান্থপথের দিকে গেলেন। সেখানেও তীব্র যানজট। বাসচাপায় শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের জেরে সারা শহরের মতো পান্থপথ এলাকাও অচল হয়ে পড়েছে। পান্থপথেও গাড়ির লাইসেন্স চেক করছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। শুধু পান্থপথ নয়, এয়ারপোর্টেও লাইসেন্স চেক করছে তারা। এয়ারপোর্ট থেকে পান্থপথের দূরত্ব অনেক। কিন্তু সব এলাকায় আন্দোলনকারীদের কার্যক্রমের ধরন একই হলো কী করে? রাজনৈতিকভাবে সচেতন প্রত্যেক ব্যক্তিই জানেন, স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে হঠাৎ করে রাস্তায় নেমে যাওয়া। কিন্তু বিভিন্ন ঘটনায় স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, এই আন্দোলনের কর্মকাণ্ডগুলো খুব সুসংগঠিত। তাই প্রশ্ন উঠছে, এই যে দাবি করা হচ্ছে এটি শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন, এই দাবির সত্যতা কতটুকু? এমন প্রশ্ন শুধু রহমান সাহেবের একার নয় তাঁর মতো অনেকেরই। জানা গেছে, আজ সাভারেও গাড়ির লাইসেন্স চেক করা হচ্ছে। এবং সেখানেও আছে অভিভাবকরূপী কিছু যুবকের উপস্থিতি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে নয় দফা দাবিও জানিয়েছে। এই নয় দফা কারা প্রণয়ন করল? স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা এসব দফা প্রণয়নে সক্ষম কী না তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। রাজধানীর সব জায়গায় একই সঙ্গে গাড়ির লাইসেন্স চেক করা, এত কঠিন সব দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়া তা এই বয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মানানসই নয়। এই থেকে বোঝা যায়, আন্দোলনের নাটাইটা অন্য কারও হাতে আছে। কিন্তু তাঁরা কে বা কারা? এই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে যদি চিহ্নিত না করা যায় তবে রাষ্ট্র আশু বিপদের সম্মুখীন হবে। আরেকটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, এই আন্দোলনের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থ্যাৎ এই আন্দোলকে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন হিসেবে বিবেচনা করার আর সুযোগ নেই।
শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় সরকার ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ঘাতক বাস জাবালে নূরের মালিক ও ঘাতক চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, নৌ পরিবহন মন্ত্রী নিজের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এছাড়া সর্বোচ্চ সাজার বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইন করার ঘোষণা দিয়েছেন আইনমন্ত্রী। আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ কার্যালয়ে নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রত্যেক পরিবারকে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রও অনুমোদন করেছেন। কিন্তু এখনো শিক্ষার্থীরা শান্ত হচ্ছে না। তাই একে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। ধারণা করা হচ্ছে, কেউ এই আন্দোলনে ইন্ধন যোগাচ্ছে। কোন পক্ষ থেকে এই ইন্ধন আসছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া না গেলেও ইন্ধনটি যে আসছে এবং এতে রহস্যময় মোটর সাইকেলের ভূমিকা আছে তা এক প্রকার নিশ্চিত।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, প্রকাশ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও তাঁরা দেশের বিভিন্ন শহরের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাগুলোতে নিজস্ব নামে অথবা বিভিন্ন সংগঠনের নামে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। শিবির দলে সদস্য অর্ন্তভুক্তি করে এমনকি শিশু বয়সীদের মধ্য থেকেও। এই উদ্দেশ্যে শিশু সংগঠন ফুলকুঁড়ি আসর পরিচালনা করে তাঁরা। রোভার স্কাউট ও বিএনসিসি কার্যক্রমেও ব্যাপকভাবে সক্রিয় শিবির কর্মীরা। এছাড়া স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সাথী শিক্ষাশিবির নামে এক ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে তারা। অর্থ্যাৎ স্কুল-কলেজেও কিন্তু ছাত্রশিবিরের নীতিতে বিশ্বাসী অনেক ছেলেমেয়ে আছে। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে শিবির ভাবধারার ছেলেমেয়েরা মিশে গিয়ে যদি আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে তবে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।
এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের উসকানি দেওয়ার ঘটনা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। কারা আন্দোলনে ইন্ধন যোগাচ্ছে, কারা কলকাঠি নাড়ছে তা যত দ্রুত সম্ভব খুঁজে বের করতে হবে। কারণ আন্দোলনে ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করতে না পারলে নিরাপদ সড়কের দাবি বাস্তবায়নে সরকার যতই পদক্ষেপ নিক, যতই প্রধানমন্ত্রী নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিক এই আন্দোলন কোনোভাবেই শান্ত হবে না। এই আন্দোলনটি যে আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নেই, আন্দোলনের চার দিনের মাথায় গিয়ে একথা পরিষ্কার হয়ে গেছে।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
বিএনপি
চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার
সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠকে তিনি দলের সার্বিক বিষয়ে দলীয় প্রধানকে অবগত করেছেন।
বৃহস্পতিবার
(২৫ এপ্রিল) রাতে চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাত ৮টা
২০ মিনিটে খালেদা জিয়ার বাসভবনে প্রবেশ করেন বিএনপির মহাসচিব। রাত সোয়া ৯টার দিকে
তিনি বের হয়ে আসেন।
বিএনপির
মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ
তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতেই মির্জা ফখরুল ফিরোজায় গিয়েছিলেন। তবে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া তারেক জিয়া বিএনপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
মন্তব্য করুন
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
তীব্র গরম মির্জা আব্বাস বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুজনই দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা বিএনপি পরামর্শ দিয়ে আসছেন এমন গুঞ্জন দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কখনও মুখ খুলেননি বিএনপির কেউই। তবে এবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি জানিয়েছেন বিএনপি থেকে বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়াকে বাদ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে দল ভাবছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে দলের এমন ভাবনার কথা জানান বিএনপির এই নেতা।
উপজেলা নির্বাচন থেকে কঠোর অবস্থান থেকে ইউটার্ন নিলো বিএনপি। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আপাতত যারা উপজেলা নির্বাচন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে সব কিছু নির্ভর করবে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। যারা পরাজিত হবে তাদের ওপর নেমে আসবে শাস্তির খড়গ। আর যারা বিজয়ী হবেন তাদের বিষয়টি উপেক্ষা করা হবে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।