নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০১ পিএম, ২৪ অগাস্ট, ২০১৮
গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এবং বিকল্প ধারা বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী যুক্তফ্রন্টের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। এখন নিজেদের সঙ্গে থাকা দলগুলো ছাড়াও যারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় তাদের নিয়ে একটি বৃহত্তর ঐক্য মঞ্চের উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। এই ঐক্য মঞ্চ বা সব রাজনৈতিক দলের প্লাটফর্মের নাম অবশ্য জাতীয় ঐক্য হচ্ছে না। একইভাবে ঐক্যের নাম যুক্তফ্রন্টও হবে না।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বামফ্রন্ট, সিপিবি, ন্যাপসহ জাতীয় ঐক্য ও যুক্তফ্রন্টের বাইরে থাকা দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন ড. কামাল ও বি. চৌধুরী। এছাড়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মধ্যে থাকা জামাত বাদে এলডিপি, বিজেপিসহ দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন তাঁরা। আর এসব বৈঠকের মাধ্যমেই ঐক্য প্রক্রিয়ার সমঝোতা হবে এবং একটি সম্মিলিত বিরোধী দলীয় জোটের আবির্ভাব ঘটবে। এরই মধ্যে ড. কামাল ও বি. চৌধুরীর সম্মিলিত বিরোধী দলের জন্য নূন্যতম ৭টি দফা নির্ধারণ করেছেন। সম্মিলিত ঐক্য এসব দফার বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করবে। দফাগুলো হলো:
১. সাত দফার প্রথম দাবিই হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল সংক্রান্ত বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ে বলা হয়েছিল, পরবর্তী দুটি নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা। এই রায়ের আলোকেই নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করবে সম্মিলিত বিরোধী ঐক্য।
২. দ্বিতীয় দফা হলো নির্বাচনের ৯০ দিন আগে বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া।
৩. বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন।
৪. নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনকে দল-নিরপেক্ষ করতে সেখানে থাকা দলবাজ, দলীয় লোকজনকে বাদ দেওয়া। এর মাধ্যমে দল-নিরপেক্ষ প্রশাসন নিশ্চিত করা।
৫. নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন।
৬. নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে, সকল রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ সুবিধা দেওয়া।
৭. সর্বশেষ দফাটি হলো, সব বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষককে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের যথেষ্ট সুযোগ করে দেওয়া।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ৭ দফা দাবি নিয়ে এরই মধ্যে ড. কামাল ও বি. চৌধুরী বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (জামান) বাসদের সভাপতি খালেকুজ্জামান ভূঁইয়াসহ বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন ড. কামাল ও বি. চৌধুরী। তবে সম্মিলিত বিরোধী ঐক্যে হেফাজতে ইসলাম, জামাতের মতো দলগুলোর কোনো স্থান হবে না বলেই জানা গেছে। এদের বাদ দিয়ে সেক্যুলার মনোভাবাপন্ন দলগুলো নিয়েই ঐক্য হবে। তবে, ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে কথা বলতে অনিচ্ছুক ড. কামাল-বি. চৌধুরী। একই সঙ্গে তাঁরা কথা বলবেন না আওয়ামী লীগের সঙ্গেও।
অতিসম্প্রতি ৭ দফা দাবি নিয়ে নীলফামারীতে অবস্থানরত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কথা বলেছেন ড. কামাল। এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৭ দফা দাবির প্রতি সমর্থন দেন। কিন্তু মির্জা ফখরুল আহ্বান জানান আরও কয়েকটি দাবি সংযুক্তের, যার মধ্যে আছে, দুর্নীতির দায়ে কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার দেশে ফেরা এবং বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার ও দণ্ডিত বিএনপি নেতাদের মুক্তি। মির্জা ফখরুল বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়টি ৭ দফায় অন্তর্ভুক্তের ওপর বিশেষ জোর দেন। তবে মির্জা ফখরুলের এসব দাবি ৭ দফায় অন্তর্ভুক্তিতে রাজি নন ড. কামাল। বিএনপি মহাসচিবকে তিনি বলেন, এসব দাবি নয়, এখন তারা শুধু নির্বাচনের ইস্যুগুলো নিয়েই কাজ করতে চান। তারা যে ঐক্য করছেন সেখানে বেগম জিয়ার মুক্তি, তারেকের দেশে ফেরার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করলে জনগণের মধ্যে ভুল বার্তা যেতে পারে।
ড. কামাল ও বি. চৌধুরীর বিরোধী দলগুলোর ঐক্য প্রক্রিয়ার নাম যেমন ঠিক হয়নি। তেমনি নেতৃত্বের বিষয়েও প্রশ্ন রয়ে গেছে। ঐক্যের নেতৃত্ব কার হাতে- ড. কামাল নাকি বি. চৌধুরীর তা এখনো ঠিক হয়নি বলেই জানা গেছে। তবে, একটি সূত্র বলছে, ড. কামাল ও বি. চৌধুরীর যৌথ নেতৃত্বেই চলবে সম্মিলিত বিরোধী ঐক্য। দুজনের পক্ষ থেকেই এমন বার্তা পাওয়া গেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে সম্মিলিত বিরোধী দলের ঐক্য প্রক্রিয়ায় প্রাথমিকভাবে থাকা বি. চৌধুরীর বিকল্প ধারা, ড. কামালের গণফোরাম, আ স ম রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগ ও মাহামুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের নেতাদের নিয়ে আগামী ২৭ আগস্ট বৈঠক হবে। যেখানে ৭ দফা সহ ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হবে। এর আগে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য নিয়ে সমাবেশ করার কথা ছিল, যা বাতিল হয়। ২৭ আগস্টের বৈঠকেই পরবর্তী সমাবেশের দিনক্ষণ ঠিক করা হবে। আর এর মধ্যে দিয়ে ৭ দফা ঘোষণার ওপর জাতীয় সংলাপের প্রক্রিয়া উন্মুক্ত হবে বলে মনে করছেন ঐক্য সংশ্লিষ্ট নেতারা।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ওবায়দুল কাদের শাজাহান খান
মন্তব্য করুন
শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যেটি চেয়েছিলেন যে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ উপজেলা নির্বাচন হবে, যে নির্বাচনে যে যার মতো করে অংশগ্রহণ করবেন এবং সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী বিজয়ী হবেন। সে রকম একটি নির্বাচন এখন দুরাশায় পরিণত হচ্ছে। আর এই দুরাশায় পরিণত হওয়ার প্রধান কারণ হল মন্ত্রীদের ক্ষমতার লোভ, এলাকায় তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এবং কোথাও কোথাও পরিবারতন্ত্র কায়েমের আগ্রাসী মনোভাব।
শেষ পর্যন্ত খোকনের ব্যাপারে পিছু হটল বিএনপি। তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হল না। বরং চা-নাস্তার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত তিন ঘণ্টার বৈঠকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ঠিকঠাক মতো কাজ করে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তিন ঘণ্টার বৈঠকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও যুক্ত হয়েছিলেন। তারেক জিয়ার সঙ্গেও মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং তার বিরুদ্ধ পক্ষের নেতা কায়সার কামাল কথা বলেন বলে জানা গেছে।