নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ০৩ অক্টোবর, ২০১৮
১০ অক্টোবরের পর কি শেষ হয়ে যাচ্ছে তারেক জিয়ার রাজনৈতিক অধ্যায়? বিএনপির নেতারাই এখন তাঁকে ‘ঝামেলা’ মনে করছে। বাইরে যাই বলুক না কেন, ভেতরে ভেতরে বিএনপি নেতারাও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের অপেক্ষায়। বিএনপির একজন নেতা খোলামেলা ভাবেই বললেন ‘এই রায়টা হয়ে গেলে আমরা তাঁকে নেতৃত্বে থেকে বাদ দেওয়ার সুযোগ পাই।’
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের পর বিএনপির রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হতে পারে। এই রায়ের আগেই রাস্তায় বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলার যে নির্দেশ লন্ডনে থেকে তারেক জিয়া দিয়েছিলেন তা প্রতিপালিত হয়নি। বরং সরকারের নতুন করে মামলা এবং ধরপাকড় বিএনপিকে আরও ব্যাকফুটে নিয়ে গেছে। ফলে, নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতৃবৃন্দ নতুন কোন ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। বিএনপিতে এখন স্পষ্টত:ই দুই ধারা। একটি বেগম জিয়ার ধারা। অন্যটি তারেক জিয়ার ধারা। বেগম জিয়া গতকালও জেল থেকে বার্তা পাঠিয়েছেন যে, শত প্রতিকূলতার মধ্যেও নির্বাচনে যেতে হবে। এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ারও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। সবথেকে বড় কথা, বেগম জিয়া গ্রেপ্তার হবার পর থেকেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের দিকে জোর দিচ্ছেন। দলের মহাসচিবকে তিনি বলেছেন, ‘কোনো রকম উসকানিতে পা না দিতে’। বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, ‘বেগম জিয়া গ্রেপ্তার হবার পর প্রায় ৮ মাস অতিবাহিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমরা একটি গাড়িও ভাঙিনি। এটা কি আমরা পারতাম না? পারতাম, কিন্তু ম্যাডামের কঠোর নির্দেশের জন্যই আমরা এটা করিনি।’
অন্যদিকে, তারেক জিয়া চান একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। সন্ত্রাস, সহিংসতার মাধ্যমে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে। যাতে সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয় বা তৃতীয় পক্ষ ক্ষমতা দখল করতে পারে’। একাধিক সূত্র বলছে, অক্টোবর থেকেই তারেক এরকম নাশকতা সৃষ্টির নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এরকম পরিস্থিতি যারা সৃষ্টি করতে পারেন, তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধেও নাশকতার মামলা দিয়েছেন। যদিও আজ বুধবার তাঁরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন, কিন্তু এখন তারাই ‘সতর্ক’ যেন কোনো সহিংসতা না হয়, সে ব্যাপারে। ফলে, তারেক জিয়ার মামলার রায় নিয়ে বিএনপি সাংগঠনিক ভাবে বড় ধরনের কর্মসূচি গ্রহণের ব্যাপারে আগ্রহী না। গত কয়েক মাস ধরেই তারেক জিয়াকে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে বাদ দেওয়ার চাপ বাড়ছে। কূটনৈতিক চাপ তো আছেই, তারেক জিয়া জাতীয় ঐক্যের পথেও বড় বাধা বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা। তাই, বিএনপি নেতৃবৃন্দ মনে করছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা বিএনপির সামনে এক বিরাট সুযোগ এনে দিয়েছে। বিএনপির একটি সূত্র বলছে, রায়ে তারেক জিয়া দণ্ডিত হলেই তাঁকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে বলা হবে, যেহেতু তিনি বিদেশে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নাই, তাই রায়ের পর তিনি নেতৃত্ব থেকে সরে গেলেই বিএনপির জন্য মঙ্গলজনক। অবশ্য অন্য একটি সূত্র বলছে, তারেক দণ্ডিত হলে বিএনপির একটি অংশ তারেক জিয়াকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য আদালতের নির্দেশনা চাইতে পারে। এই অংশ মনে করছে, দণ্ডিত হলে তাঁর দলের নেতৃত্বে থাকা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।