নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২২ অক্টোবর, ২০১৮
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছে ঢাকাস্থ বিদেশি দূতাবাসগুলো। সম্প্রতি দূতাবাসগুলোর পক্ষ থেকে নেওয়া কয়েকটি পদক্ষেপে আশঙ্কার ব্যাপারটি জানা গেছে। আর এমন আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতেই সাম্প্রতিক সময়ে জামাতসহ বিএনপির বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই জামাত এবং বিএনপির একটি অংশ আবার ২০১৪ বা ২০১৫’র মতো সহিংস তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এ নিয়ে জামাত এবং বিএনপির একাধিক বৈঠকের খবর গোয়েন্দা সংস্থাদের হাতে আছে। তাঁদের মূল লক্ষ্য হলো, ঢাকার রাজপথে নেমে আসা এবং রাজধানী দখল করে নেওয়া। সহিংসতার মাত্রা এই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যেন সরকারের পক্ষে নির্বাচন করা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। জামাত এবং বিএনপির একটা অংশের মূল লক্ষ্য হলো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার বদল নয় বরং দেশে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যেন নির্বাচন না হয় এবং নির্বাচন না হওয়ার কারণে দেশে সাংবিধানিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়।
আরেকটি মহল বলছে, রাজপথ দখল করে এমন একটা পরিস্থিতি তাঁরা সৃষ্টি করতে চাইছে যেন সরকার দাবি মানতে বাধ্য হয়।
মার্কিন দূতাবাস গত রোববার ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। আগামী নভেম্বরে মার্কিন নাগরিকদের বাংলাদেশে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই মার্কিন দূতাবাস থেকে তাদের দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাংলাদেশ ভ্রমণে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
শুধু মার্কিন দূতাবাসই নয়, যুক্তরাজ্য থেকেও বাংলাদেশে নির্বাচনে রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কা করা হয়েছে এবং সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জার্মান দূতাবাস থেকেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
যদিও মনে করা হচ্ছিল, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং বিএনপি নির্বাচনমুখী। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে যখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল তখন তাঁরা অঙ্গীকার করেছিল নির্বাচনে যাওয়ার জন্য তাঁরা কোনো সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করবে না। তাঁরা জনগণকে সচেতন করার কর্মসূচির মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সভা সমাবেশের মধ্যেই তাঁদের কর্মসূচি সীমিত রাখবে। কিন্তু বিএনপির একটি বড় অংশ মনে করছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরেই সরকার দুর্বল হয়ে পড়বে। প্রশাসনের ওপর সরকারের কর্তৃত্ব শিথিল হয়ে পড়বে এবং সেই সুযোগটি তাঁরা কাজে লাগাতে চায়। সেই সুযোগে তাঁরা রাজনৈতিক মাঠ গরম করতে চায়।
বিএনপি এবং জামাত মনে করছে, রাজনৈতিক মাঠ গরম করতে হলে ঢাকা দখল করতে হবে। ঢাকা দখলের পরিকল্পনা নিয়েই তাঁরা এগুচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থাদের কাছে এরকম একাধিক তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, বিএনপি নেতাদের একটি বড় অংশ একাধিক বৈঠক করেছে যে, ঢাকার রাজপথগুলো তাঁরা কীভাবে দখল করে নেবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকাকে তাঁরা কীভাবে অচল করে দেবে সে পরিকল্পনা করেছে।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ২০১৪ বা ২০১৫’র মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। সহিংসতার আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতেই বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে কোন সংশয় নেই এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর যথাসময়েই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলা ইনসাইডার/জেডআই/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন