ইনসাইড পলিটিক্স

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক দশক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:০১ এএম, ২৪ অক্টোবর, ২০১৮


Thumbnail

দশম জাতীয় সংসদের সর্বশেষ অধিবেশন শুরু হয়েছে গত রোববার। এই সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে দশম সংসদের পাঁচ বছর পূর্তি হবে এবং সমাপ্তি হবে আওয়ামী লীগ সরকারের ১০ বছরের শাসনকালের। আর এই সংসদ অধিবেশনের সমাপ্তির মধ্য দিয়েই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা ১০ বছর পূর্ণ করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

এর আগেও শেখ হাসিনা ১৯৯৬–২০০১ সাল মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থ্যাৎ সব মিলিয়ে মোট ১৫ বছর রাষ্ট্র প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বাধিক সময়ের জন্য শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার শাসনামলের ১০ বছর পূর্তিতে তাঁর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া ও রাষ্ট্র পরিচালনার সময়টা ফিরে দেখা যাক।

আজ থেকে ১০ বছর আগের কথা। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের অপশাসন আর ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের অনির্বাচিত সরকারের শাসনের অধীনে জীবনযাপন করে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের জনগণ। এমন সময় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের পক্ষে এক ঐতিহাসিক গণরায় প্রদাণ করে জনতা। জনগণের ভোট নিয়ে বিপুল ব্যবধানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিকে পরাজিত করে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ আর দ্বিতীয় বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেই দেশের উন্নয়ন ও জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে নিরলসভাবে পরিশ্রম করতে শুরু করেন। ১০ বছরের শাসনকালে নিজের দূরদৃষ্টি, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দক্ষ রাষ্ট্র চালনায় ইতিমধ্যেই বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে দিয়েছেন তিনি। । শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্জনের সংখ্যা এতটাই বেশি যে তার সব কটি উল্লেখ করা গণমাধ্যমের সীমিত পরিসরে মোটামুটি অসম্ভব। গত ১০ বছরে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, দেশে বেকারত্বের হার কমেছে, নাম লিখিয়েছে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের মধ্য দিয়ে মহাকাশে পৌঁছে যাওয়া, নৌবাহিনীর সাবমেরিন যুগে প্রবেশ কিংবা সমুদ্রসীমা বিজয়ের মতো ঘটনাগুলো ঘটেছে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কিংবা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারও সম্পন্ন হয়েছে শেখ হাসিনার শাসনামলে। দেশকে দক্ষ হাতে পরিচালনা করে দেশী-বিদেশী অজস্র স্বীকৃতিও পেয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০০৯ সালের ৩ জানুয়ারি শেখ হাসিনা সংসদনেতা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। শেখ হাসিনার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ২১ জানুয়ারি দীর্ঘ ১৯ বছর পর দেশে উপজেলা নির্বাচন হয়। এর মাত্র এক সপ্তাহ পরই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ২৯ জানুয়ারি কণ্ঠভোটে প্রস্তাব পাসের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় সংসদে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবটির পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় সাফল্যের একটি এই একাত্তরের মানবতাবিরোধী কার্যক্রম ও গণহত্যা সংগঠনকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা এবং প্রধান অপরাধীদের শাস্তি কার্যকর করা। ইতিমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামাতের শীর্ষনেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মতো যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধ ছাড়াও অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় প্রদান ও দণ্ড কার্যকর হয়েছে শেখ হাসিনার শাসনামলে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে সে বছরের ১৯ নভেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি ঘোষণা করে আদালত। এরপর ২০১০ সালের জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সাজা কার্যকর করা হয়।

২০০৪ সালে সংঘটিত বাংলাদেশের ইতিহাসের ভয়াবহতম ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ও হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই। চলতি বছরের ১০ অক্টোবর এই মামলার রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত হন, মৃত্যুদণ্ড হয় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের। এছাড়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রভাবশালী ব্যক্তি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির দায়ে বিচারের সম্মুখীন করাকেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।

বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক খাতে অভূতপুর্ব উন্নতি ঘটে বাংলাদেশের। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দেশকে দারিদ্রমুক্ত করার কৃতিত্ব শেখ হাসিনারই। শেখ হাসিনার শাসনামলেই `স্বল্পোন্নত` দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয় বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনার ১০ বছর মেয়াদে দেশের অর্থনীতির উল্লম্ফনের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। ২০০৭-০৮ অর্থবছরের জিডিপির (অর্থনীতির আকার) পরিমাণ ছিল চলতি মূল্যে ৬,২৮,৬৪২ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২২,৩৮,৪৯৮ কোটি টাকা। ২০০৭-০৮ অর্থবছর শেষে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ৪৩,৭১৯ টাকা। গত ১০ বছরে বেড়ে প্রায় তিনগুণ হয়েছে। ২০০৭ সালে জাতীয় দারিদ্র্যের হার যেখানে ছিল ৪০ শতাংশ, সেখানে ২০১৭ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৪.৩ শতাংশে।  ২০০৭-০৮ অর্থবছরের তুলনায় এই সময়টাতে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে রেমিটেন্স। ওই সময়ে ৫৪২ বিলিয়ন টাকা থেকে বেড়ে ১০১১ বিলিয়ন টাকায় উন্নীত হয়েছে। গত ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ছিল ১,৩৩,৬৫০ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ৩৩ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩,৪৯,১০০ কোটি টাকা। আর রপ্তানি ওই সময়ের মধ্যে বেড়েছে পঁয়ত্রিশ গুণ।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৃষ্টান্ত স্বরূপ ১০টি মেগা প্রকল্প যথা- পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প, পদ্মা রেলসেতু নির্মাণ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, চট্টগ্রাম দোহাজারী থেকে রামু কক্সবাজার এবং রামু ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ, ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প, পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল পাওয়ার প্রকল্প এবং মহেশখালীতে ভাসমান এলএমজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প এখন নির্মানাধীন রয়েছে। এর মধ্যে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের পরও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প নির্মানাধীন আছে কেবল শেখ হাসিনার সাহসিকতার ফলেই।

শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, শেখ হাসিনার দক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনায় কৃষি খাতেও অভূতপুর্ব উন্নয়ন হয়েছে গত ১০ বছরে। সরকারের কৃষি-বান্ধব কার্যক্রমের ফলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সময়োপযোগী পদক্ষেপ ও কৃষি খাতের উন্নয়নে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে গত দশ বছরে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি। হেক্টরপ্রতি ধানের উৎপাদন তিন গুণের বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সময়টাতেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ধান রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। বিশ্বে ফল উৎপাদন বৃদ্ধির হারও এখন বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি। সব মিলিয়ে, বাংলাদেশকে বিশ্বের দশম বৃহত্তম খাদ্য উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

নারী অধিকার সুরক্ষায়ও শেখ হাসিনা স্থাপন করেছেন অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত। ক্ষমতায় আসার পরপরই ২০১০ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৭ সালের নারী উন্নয়ন নীতি অনুমোদন করে। এছাড়া জেন্ডার ইক্যুটি ইনডেক্স অনুযায়ী নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ঈর্ষণীয় অবস্থানে রয়েছে।

শেখ হাসিনার দক্ষ দেশ চালনায় বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতিও হ্রাস পেয়েছে । ২০০১ থেকে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ যেখানে ছিল দুর্নীতিতে প্রথম, ২০১০ সালে দুনীতি ধারণাসূচকে বাংলাদেশ দুর্নীতির ক্ষেত্রে পিছিয়ে যায় দ্বাদশ স্থানে।

দরিদ্র ছিন্নমূল মানুষের ভাগ্যোন্নয়নেও কাজ করে চলেছেন শেখ হাসিনা। এই উদ্দেশ্যে ২০১২ সালে ৫০ হাজার ভূমিহীণ, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারকে পুনর্বাসন এবং সিডর ও আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার উন্নয়ন, উপজাতীয়দের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ গৃহ নির্মাণের লক্ষ্যে ১ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে আশ্রয়ন-২ প্রকল্প গ্রহণ করেছেন তিনি। ৪৮ হাজার দরিদ্র-অসহায় মানুষকে আইনী সহায়তাও প্রদান করা হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে। এছাড়া “গুচ্ছগ্রাম” প্রকল্পের আওতায় ১৬৩টি গুচ্ছগ্রামে ৭ হাজার ১৭২টি ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন ও রাজধানী ঢাকার বস্তিবাসী ও নিম্নবিত্তদের পুনর্বাসনে সরকারি জমিতে ১ হাজার ৬৩২টি ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগও গ্রহণ করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।

স্বাস্থ্য খাতেও শেখ হাসিনা সরকারের অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। শিশু মৃত্যুর হারের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সফলতা দেখিয়েছে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। ২০০৭ সালে দেশে যেখানে শিশু মৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজার জীবিত জন্মে ৬৫ জন সেখানে এই হার ২০১৩ সালে ৩৬ জনে হ্রাস পায়। এছাড়া বাংলাদেশে সার্ক দেশসমূহের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯১ শতাংশ স্যানিটেশন কভারেজ অর্জিত হয়েছে। দেশের প্রান্তিক-দরিদ্র রোগীদের সেবাদানের জন্য গৃহীত কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পও গত ১০ বছরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন।

গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সহনশীলতা প্রদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর শাসনামলে ত্রিশের অধিক টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়া অবাধ তথ্য প্রবাহ এবং  জনগণের তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন এবং দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে তথ্য ও সেবাকেন্দ্র চালুর মতো উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে শেখ হাসিনার শাসনামলেই।

এছাড়া মানবাধিকার সংক্রান্ত জাতিসংঘ স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড `প্যারিস পিন্সিপল` এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠা এবং জাতিসংঘে বিশ্বশান্তির মডেল উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করে দিয়েছেন মানবাধিকারে বিশ্বাসী অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় একজন রাজনীতিবিদ তিনি।

শিক্ষা ও গবেষণা খাতকেও অসম্ভব গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ২৩ জন শিক্ষকের চাকুরী জাতীয়করণ করেছিলেন। ৪০ বছর পর বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত ১ লক্ষ ৩ হাজার ৮৪৫ জন শিক্ষকের চাকুরী জাতীয়করণ করেন। বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে একদল গবেষকের পাটের জীবন-রহস্য উন্মোচন করেন ২০১০ সালেও। এছাড়া দেশীয় ব্র্যান্ডের দোয়েল ল্যাপটপ বাজারজাতকরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্য নিন্দুকও স্বীকার করবে। এরই মধ্যে স্থাপিত সব কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে হয়েছে ১৬ হাজার ৪৬ মেগাওয়াট। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৯০ শতাংশই এখন বসবাস করে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায়। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারের তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন কার্যক্রমের ফলে বিদ্যুৎ খাতে এ সাফল্য এসেছে।

ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের অমীমাংসীত সমস্যা ছিটমহল বিনিময় ও ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সমুদ্র সীমার বিরোধের নিষ্পত্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক দক্ষতার আরেকটি উদাহরণ।

এছাড়া ২০১৮ সালের ১১ মে মহাকাশে উৎক্ষেপণ বহুল প্রতিক্ষীত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইন- ১ উৎক্ষেপনের মাধ্যমে বিশ্বের স্যাটেলাইটের মালিক দেশের এলিট ক্লাবে প্রবেশ করে বাংলাদেশ।  যুক্তরাষ্ট্রের  ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেস এক্সের ফ্যালকন রকেটে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হয়।

কৃষি থেকে মহাকাশ, শিক্ষা থেকে সমুদ্রতল সবকিছুতেই এখন বাংলাদেশের জয়জয়কার। বাংলাদেশের এই ইতিবাচক রূপান্তরের পেছনে মূল কৃতিত্বটা বর্তায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ওপরই। কিন্তু উন্নয়নের পথে এই অগ্রযাত্রা সহজ ছিল না। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে তুলে আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জঙ্গিবাদ, দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র, শরনার্থী সমস্যার মতো বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেল আকরতে হয়েছে।

এর মধ্যে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া ছিল শেখ হাসিনার অন্যতম সাহসী সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ জনবহুল দেশ। তারপরও ২০১৭ সালেকয়েক মাসের ব্যবধানে ১০ লাখের বেশি  রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গ জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়ের পাশাপাশি ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে বিশ্বে নজির সৃষ্টি করেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার পরিচয় দিয় শেখ হাসিনা ‘মাদার অব ইউম্যানিটি’ হিসেবেও স্বীকৃতি পান বিশ্বব্যাপী।

এছাড়া শেখ হাসিনার শাসনামলেই হলি আর্টিজানে ও শোলাকিয়া ঈদগাহে জঙ্গি হামলা সংঘটিত হয়। কিন্তু শেখ হাসিনা সকল জঙ্গি তৎপরতা কঠোর হস্তে দমন করেন। চলতি বছরেই আবার সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ক্যামোফ্লেজে রাষ্ট্রবিরোধী ও সরকার বিরোধী চক্র মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বের কারণে সফল হতে পারেনি দুর্বৃত্তরা।

আর ক্ষমতায় আসার পরপরই সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহ তিনি যেভাবে ঠান্ডা মাথায় দমন করেছিলেন তার প্রশংসা না করে পারা যায় না। দ্রুততম সময়ে বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেছিলেন শেখ হাসিনা। বর্তমানে এই মামলার রায়ও হয়ে গেছে।

এই অবদানগুলোর কারণে গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশী ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, শিশু মৃত্যু হ্রাসসংক্রান্ত MDG-4  অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১০ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অ্যাওয়ার্ড, বিশ্বখ্যাত ‘ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পদক ২০০৯’, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নারী ও শিশু মৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড ২০১১: ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট হেলথ, বাংলা অ্যাকাডেমির সম্মাননা সূচক ফেলোশিপ প্রভৃতি।

প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কারের তালিকা কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ইউনেস্কোর কালচারাল ডাইভারসিটি পদক ও শান্তিবৃক্ষ পদক (Peace Tree Award), জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকি মোকাবিলায় সাফল্য প্রদর্শনের জন্য জাতিসংঘের চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ, প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’, গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারের মতো পুরস্কারও আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঝুলিতে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সমৃদ্ধ ও আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন কিন্তু অকালে ঘাতকের বুলেটে নির্মমভাবে নিহত হওয়ায় সে স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। বর্তমানে পিতার সেই অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণেই কাজ করে চলেছেন শেখ হাসিনা। গত ১০ বছরে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের সব সেক্টরে যে অভূতপুর্ব উন্নতি হয়েছে তাতে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বজায় রাখতে শেখ হাসিনাকে আবার তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ করে দিতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি



মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফখরুল: খালেদার ‘হ্যাঁ’, তারেকের জন্য অপেক্ষা

প্রকাশ: ০২:০০ পিএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ফিরোজায় তিনি যান রাত ৮: ২০ মিনিটে। সেখানে এক ঘণ্টা অবস্থান করেছেন। যথারীতি মির্জা ফখরুল ফিরোজা থেকে বেরিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। 

বেগম জিয়ার পারিবারিক সূত্র বলছে যে, তার স্বাস্থ্যের অবস্থা জানার জন্যই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বাসভবনে গিয়েছেন। কিন্তু দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে যে, বিএনপির নেতৃত্বের পরিবর্তন এবং গণতন্ত্রের বিষয়টি চূড়ান্ত করতেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়ার কাছে গিয়েছিলেন। 

বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন করেন এবং খালেদা জিয়া তাকে বাসায় যেতে বলেছেন বলে জানান। এর পরপরই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, দুটি বিষয় নিয়ে তাদের আলাপ হতে পারে। প্রথমত, দীর্ঘদিন ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের মহাসচিব পদ ছাড়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছেন। সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে এসে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি দলের মহাসচিব পদ ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। অন্য কাউকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য তিনি বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি আহবান জানান। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মহাসচিব পদ ছাড়ার পিছনে দুটি কারণ উল্লেখ করা হচ্ছে। প্রথমত, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ, হার্টের সমস্যা সহ বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি পূর্ণ সময় দলের নেতৃত্ব পালন করার মতো অবস্থায় নেই। দ্বিতীয়ত, তার স্ত্রী ক্যান্সারে আক্রান্ত। তার স্ত্রীকে সময় দেওয়া প্রয়োজন। এই কারণেও তিনি বিএনপির মহাসচিবের পদ ছেড়ে একজন সাধারণ কর্মীর মতো দায়িত্ব পালন করতে চান। তবে সেসময় বেগম খালেদা জিয়া তাকে অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকেও একই রকম আগ্রহ বা একই রকম বক্তব্য দিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব। কিন্তু তারেক জিয়াও তাকে এ ব্যাপারে কোন ইতিবাচক সম্মতি দেননি বলেই জানা গেছে। এরপর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যেই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহল থেকে বিএনপির ওপর এক ধরনের চাপ এসেছে যে, তারা যেন বিএনপির নেতৃত্ব পরিবর্তন করে। দেশের বাইরে থাকে বা দণ্ডিত কোন ব্যক্তি বিএনপির নেতৃত্বে থাকুক এটি পশ্চিমা দেশগুলো চায় না। বিশেষ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে এখন যারা নেতৃত্বে আছেন তারা কোন ইতিবাচক সাড়া দিতে পারেন না। আর একারণেই কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যারা দেশে রাজনীতি করছেন, তাদের মধ্যে থেকে আপাতত কাউকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়া যেন আপাতত উপদেষ্টা বা আলঙ্কারিক পদে থাকেন। এটি নিয়ে বিএনপিতে এখন ভালোই আলোচনা চলছে। 

গত বুধবার বিএনপির একজন নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ডিবিসির রাজকাহনে স্বীকার করেছেন যে, এ নিয়ে বিএনপিতে আলাপ আলোচনা চলছে, যেন বেগম জিয়া বা তারেক জিয়ার বাইরে তারা তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে সেটি এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। 

বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে যে, এই বিষয়টি চূড়ান্ত করার জন্যই বেগম জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলামকে ডেকে নিয়েছিলেন। তিনি আপাতত বিএনপির নেতৃত্বে থাকতে চান না। ভারপ্রাপ্ত জেয়ারম্যান তারেক জিয়া যেহেতু লন্ডনে অবস্থান করছেন তিনিও বিএনপির নির্বাহী নেতৃত্বে থাকুক এটি বেগম জিয়া এখন চান না। আর এ কারণেই শেষ পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার বিষয়টি নিয়ে বেগম জিয়া ভাবছেন বলে গতকাল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জানানো হয়েছে। 

তবে এ ব্যাপারে তারেকের কোন সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। তারেকের সিদ্ধান্তের আগ পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে না যে, আসলে শেষ পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হবেন কিনা। তবে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে, যদি শেষ পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান না হতে পারেন তাহলে তিনি মহাসচিব পদেও থাকবেন না।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর   বিএনপি   তারেক জিয়া   শামীম ইস্কান্দার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে বিএনপি: কাদের

প্রকাশ: ০১:৫১ পিএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল উন্নয়ন দেখতে পায় না। তারা দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে। দেশের উন্নয়ন নিয়ে হীন মনোবৃত্তির পরিচয় দিচ্ছে তারা।  

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের যে উন্নতি ও উচ্চতা, এটা দেখে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ লজ্জিত হন। পূর্ব পাকিস্তানকে তাদের কাছে মনে হতো বোঝা। এখন সে বোঝাই উন্নয়নে এগিয়ে গেছে। সে উন্নয়ন দেখে তিনি লজ্জিত হন। বিএনপির শাহবাজ শরিফের বক্তব্য থেকে শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু আছে।

বিশ্বে চলমান যুদ্ধ প্রসঙ্গে কাদের বলেন, সকল প্রকার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ও এ যুদ্ধকে না বলার জন্য বিশ্বের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন-হামাস পৃথিবীকে উত্তপ্ত করে রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের নেত্রী যুদ্ধের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান ও কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী প্রমুখ।


বিএনপি   আওয়ামী লীগ   ওবায়দুল কাদের  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি গঠন

প্রকাশ: ০১:০৪ পিএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

প্রায় ৩ মাস পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের ৫ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সকালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

ওলামা দলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে আলহাজ্ব মাওলানা মো. সেলিম রেজা এবং সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাওলানা কাজী আবুল হোসেন। কমিটির অন্যারা হলেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব মাওলানা মো. আলমগীর হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব মাওলানা ক্বারী গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মো. দেলোয়ার হোসেইন।

প্রসঙ্গ, গত ২৫ জানুয়ারি বিএনপির অনুমতি না নিয়েই ওলামা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মো. সেলিম রেজাকে কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব করাসহ ১৬ জনকে বিভিন্ন পদে রদবদল করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে মাওলানা মো. নেছারুল হককের নেতৃত্বাধীন কমিটির বিরুদ্ধে। পরে গত পহেলা ফেব্রুয়ারি ওলামা দলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে বিএনপি।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৫ এপ্রিল মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হককে আহ্বায়ক এবং মাওলানা মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারকে সদস্য সচিব করে ওলামা দলের ১৭১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছিল বিএনপি।

এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কাজী মো. সেলিম রেজা বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখে দায়িত্ব দিয়েছেন আমি তা পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি অবিলম্বে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সহ গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।


জাতীয়তাবাদী ওলামা দল   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির তৃণমূলে বাড়ছে ভোটমুখী প্রবণতা

প্রকাশ: ১২:৫০ পিএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপি বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলের ভোটমুখী নেতাদের ঠেকানো যাচ্ছে না। বহিষ্কারের মতো সাংগঠনিক সর্বোচ্চ শাস্তির পরও দলটির তৃণমূলে বাড়ছে নেতাদের ভোটমুখী প্রবণতা। কেন্দ্রীয়ভাবে বর্জনের ঘোষণা দিলেও ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও দল এবং দল-সংশ্লিষ্ট অনেক নেতা ভোটে রয়েছেন।

অবশ্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের পেছনে পারিবারিক ধারা, আঞ্চলিকতার হিসাবনিকাশ, দীর্ঘদিনের জনবিচ্ছিন্নতা কাটানোসহ নানা যুক্তির কথা বলা হচ্ছে। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, ক্ষমতাসীনদের চাপ ও ফাঁদে পড়ে দলের কেউ কেউ প্রার্থী হয়েছেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা নির্বাচন করবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ, যে কোনো মূল্যে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা হবে।

দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সিদ্ধান্ত অমান্য করে জাতীয়সহ স্থানীয় সরকারের ভোট করায় গত কয়েক বছরে দল ও অঙ্গসংগঠনের পদধারী চারশ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এর মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা শতাধিক নেতা রয়েছেন। বাকিরা সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বহিষ্কৃত হয়েছেন।

এ ছাড়া সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিভিন্ন সময় দলটির আরও কিছু নেতাকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। পরে তাদের মধ্যে দলে ফিরতে ভুল স্বীকার করে শতাধিক নেতা আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ১৫-২০ জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে। এ ছাড়া খুলনার নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের আরও ২৫ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির।

জানা গেছে, দলের বহিষ্কৃত অন্য নেতাদের জন্য সহসাই খুলছে না বিএনপির দরজা। বরং এ সংখ্যা আরও বাড়ছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় সম্প্রতি দলের আট নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। আর দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের ভোটে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশ নেওয়া ৬৩ নেতাকে ইতোমধ্যে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হলে কিংবা কেউ জবাব না দিলে তাদের দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে জানিয়েছে দলটি। প্রথম ধাপের নির্বাচনে ১৫২টি উপজেলার মধ্যে ৩৪টিতে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির পদধারী নেতারা মাঠে আছেন।

জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপে ভোট করতে বিএনপি ও দল-সংশ্লিষ্ট অন্তত ৩৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এই ধাপে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ২১ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৩০ এপ্রিল। নির্বাচন থেকে সরে আসতে কেন্দ্রীয় এবং জেলা নেতাদের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে সাংগঠনিক সর্বোচ্চ শাস্তির বার্তাও। প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সাংগঠনিক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ৩০ এপ্রিলের পর প্রথমে তাদের শোকজ নোটিশ দেওয়া হবে।

তৃতীয় ধাপের তপশিল অনুযায়ী, মনোনয়ন ফরম জমার শেষ তারিখ ২ মে এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১২ মে। চতুর্থ ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন। শেষ ধাপের এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৯ মে এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ১৯ মে পর্যন্ত।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে থাকা বিএনপি নেতাদের বিষয়ে করণীয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘এই নির্বাচন নিয়ে দলে তো আগেই সিদ্ধান্ত ছিল এবং সেটিই বহাল আছে। সুতরাং সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ নির্বাচন করলে দল তার ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দল থেকে বিভিন্ন সময় বহিষ্কৃতদের ব্যাপারে আমরা এখনো চিন্তা করিনি’।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির স্থানীয় নেতারা অংশগ্রহণ করেছিলেন। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে প্রথম দিকে অংশ নিলেও ভোটে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় সব স্থানীয় নির্বাচন বর্জন করে আসছে বিএনপি। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় কুমিল্লার মনিরুল হক সাক্কু, নারায়ণগঞ্জের তৈমূর আলম খন্দকারসহ অনেককে দলীয় পদ-পদবি থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।

এদিকে দ্বাদশ সংসদের মতো উপজেলা নির্বাচনেও ভোটারদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে বিএনপি।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) নরসিংদী সদর উপজেলা থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জেলা বিএনপি কার্যালয়ে জেলার কর্মিসভা শেষে জনগণের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ।

এসময় তিনি বলেন, জনগণকে আমরা বিগত জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদের নির্বাচনও বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছি। এ লক্ষ্যে আমরা নরসিংদীতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেছি। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। আমাদের প্রত্যাশা, ভোটাররা জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলার ভোটও বর্জন করবে।

বিএনপির কুমিল্লার (সাংগঠনিক) বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, কুমিল্লা উত্তর জেলার মেঘনা উপজেলায় আজ শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) কর্মিসভা ও লিফলেট বিতরণের মধ্য দিয়ে জনগণকে ভোট বর্জনের আহ্বান জানানো হবে।

এর মধ্য দিয়ে কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগে জনগণকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করার কার্যক্রম শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে বিভাগের সব উপজেলায় লিফলেট বিতরণ করা হবে।


বিএনপি   উপজেলা নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

ভোটের মাঠ ছেড়ে দল গোছাতে তৎপর জামায়াত

প্রকাশ: ১১:৩২ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আপাতত ভোটের মাঠ ছেড়ে দল গোছাতে সারা দেশে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে দলটি। প্রায় এক যুগ ধরে কোণঠাসা হয়ে থাকলেও এবার রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে চায় তারা। অবশ্য সরকারের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে এখনো তাদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জামায়াত নেতারা।

জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের খড়্গ নেমে আসে। অধিকাংশ শীর্ষ নেতাকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার ও কারাবন্দি করা হয়। সারা দেশে কেন্দ্র, মহানগর ও জেলা পর্যায়ে ৮৭টি দলীয় কার্যালয় থাকলেও এর প্রায় সবই বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখনো সেগুলো তালাবন্ধ অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করতে ডিজিটাল মাধ্যমকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রকাশ্য কর্মসূচির সংখ্যা বাড়ানোর দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচন বর্জন করলেও বসে নেই জামায়াতে ইসলামী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই সারা দেশে সংগঠন চাঙ্গা করার দিকে নজর দিয়েছে দলটি। সেই লক্ষ্যে এরই মধ্যে মহানগর, থানা ও উপজেলা পর্যায়ে রুকন (সদস্য) সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। গত তিন মাসে সম্মেলন হয়েছে ৩০টিরও বেশি সাংগঠনিক জেলায়।

এ ছাড়া নবাগত ও অগ্রসর কর্মীদের জন্য কয়েকটি শিক্ষা শিবির, সহযোগী সদস্যদের সভা ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা এবং নির্বাহী পরিষদের একাধিক সভা ও বিশেষ রুকন সম্মেলনও হয়েছে। ঈদুল ফিতরের পর চলছে ঈদ পুনর্মিলনী। সম্প্রতি জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলসহ প্রায় সব কেন্দ্রীয় নেতা জামিনে কারামুক্ত হওয়ায় সাংগঠনিক তৎপরতা আরও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

জানা গেছে, গত ১৯ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের উদ্যোগে জুম, ইউটিউব ও ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে ১৫ দিনব্যাপী ঈদ পুনর্মিলনী ও গণসংযোগ পক্ষের উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় আমির ডা. শফিকুর রহমান। এর আগে গত রমজানে দীর্ঘ ৮ বছর পর ঢাকায় বড় পরিসরে ইফতার মাহফিল হয়েছে। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে কর্মসূচি ঘোষণারও পরিকল্পনা করছে জামায়াত। দলটির নীতিনির্ধারকরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও সংকট নিরসনের দাবিতে কর্মসূচির কথা ভাবছেন বলে জানা গেছে।

২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সরকার। ট্রাইব্যুনালের বিচারে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকায় জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে ২০১৩ সালে রায় দেন আদালত।

এরপর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে রাজনৈতিক দল বা সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার শুরু করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগও নেওয়া হয়।

মূলত এসব কারণে প্রায় এক যুগ ধরে রাজনীততে কোণঠাসা হয়ে আছে জামায়াত। শীর্ষ নেতাদের বেশ কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পাশাপাশি কেউ কেউ দেশত্যাগ করেন। একটি অংশ জামায়াত ছেড়ে নতুন দল গঠন করেন।

অনেকে আবার রাজনীতি ছেড়েছেন। এসব সত্ত্বেও নানা কৌশলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছে জামায়াত। দীর্ঘ বিরতির পর ২০২৩ সালের ১০ জুন প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করে দলটি। এরপর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আবারও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধিতে মনোযোগী হয়েছেন দলের নেতারা।

সম্প্রতি জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমির ডা. শফিকুর রহমান এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘যতই বাধা আসুক, আমরা ইকামাতে দ্বীনের (দ্বীন প্রতিষ্ঠার) কাজ চালিয়ে যাব। অনলাইনের পরিবর্তে আমাদের প্রকাশ্যে প্রোগ্রাম করতে হবে। কারণ অনলাইনে আরামপ্রিয় জনশক্তি তৈরি হবে। বিজয়ের জন্য বিপ্লবী কর্মী তৈরি হবে না।’

তিনি বলেন, ‘মানুষের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াতে হবে। জনকল্যাণমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। তাহলেই আমাদের দাওয়াত কার্যকর হবে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত তিন মাসে বিভিন্ন পর্যায়ে নানামুখী সাংগঠনিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে জামায়াত। বড় জেলাগুলোতে একক সম্মেলন করা হয়েছে। আবার উপজেলা, থানা ও ছোট জেলাগুলোর কয়েকটি একত্র করে একই জায়গায় সম্মেলন করা হয়েছে। পাশাপাশি কর্মী প্রশিক্ষণের জন্য করা হয়েছে শিক্ষা শিবির। অগ্রসরমান ও নবাগত কর্মীদের জন্য অনুষ্ঠিত হয়েছে সহযোগী সম্মেলন। এসব অনুষ্ঠানের কয়েকটি হয়েছে সশরীরে, আবার কয়েকটি হয়েছে ভার্চুয়াল মাধ্যমে।

জেলা-উপজেলা ও থানা পর্যায়ে কর্মীরা সশরীরে উপস্থিত হলেও কেন্দ্রীয় নেতারা ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন। দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সশরীরে কিংবা ভার্চুয়ালি অংশ নিচ্ছেন। দলটির শীর্ষ নেতারা নানাভাবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করছেন। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যমকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

তবে জামায়াত নেতাদের দাবি, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যেই জামায়াতে ইসলামীর জনপ্রিয়তা ও শক্তি বেড়েছে। জামায়াত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।

জানা গেছে, সারা দেশের জামায়াতের ৮৭টি সাংগঠনিক জেলা শাখা ও কার্যালয় রয়েছে। এর প্রায় সবই বর্তমানে তালাবদ্ধ। অবশ্য উপজেলা পর্যায়ে কোনো কোনো এলাকায় দলীয় কার্যালয় চালু রয়েছে। ২০১১ সালে ঢাকার মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও পুরানা পল্টন কার্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ সারা দেশে শতাধিক নেতাকর্মী এখনো কারাগারে আছেন। দীর্ঘ প্রায় ১৫ মাস পর গত ১১ মার্চ কারামুক্ত হন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তার আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ছাড়া পান সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। প্রায় আড়াই বছর পর ছাড়া পেয়েছেন নায়েবে আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিনসহ আরও বেশকিছু নেতাকর্মী কারামুক্ত হয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের নেতাকর্মীরা হামলা-মামলায় জর্জরিত। এখনো শতাধিক নেতাকর্মী কারাগারে বন্দি। কয়েকদিন আগেও রাজশাহীতে ১০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে সারা দেশে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে কর্মী শিবির, শিক্ষা শিবির, অগ্রসরমান কর্মীদের নিয়ে সেমিনারসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে।’


জামায়াত   উপজেলা নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন