নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১৭ নভেম্বর, ২০১৮
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ ও এর শরিক দলগুলোর প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত। এই উদ্দেশ্যে গত দুদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব কাজ স্থগিত রেখে মনোনয়নের সমস্ত খুঁটিনাটির চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। মনোনয়ন ব্যস্ততায় গতকাল শুক্রবার এবং আজ শনিবার প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাৎ সূচিও সীমিত করেছেন বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো। গুরুত্বপূর্ণ এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া এ দুদিন তিনি কারও সঙ্গেই সাক্ষাৎ করেননি। এই কর্মব্যস্ততার পর ধারণা করা হচ্ছে, আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে। জানা গেছে, মহাজোটসহ শরিকদের জন্য মোটামুটি ৭০টি আসন ছেড়ে দিয়ে সংসদের ২০০ আসনে জয়ের টার্গেট করে মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ।
২০০ আসন টার্গেট করলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসনে বিজয় খুব একটা সহজ হবে না আওয়ামী লীগের জন্য। আগামী নির্বাচনে ৩০টি আসনকে দলটির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। এসব আসনে আওয়ামী লীগের জয়ের সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করছে দলটির হাইকমান্ড। কিন্তু আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ঝুঁকির মুখেই বিএনপির দুর্গে হানা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ চমকপ্রদ ভাবে মনোনয়ন বিন্যাস করেছে। বগুড়ার ৭টি আসন, জয়পুরহাটের ২টি আসন, ফেনীর ৩টি আসন, নোয়াখালীর ৬টি আসনের মধ্যে ৪টি আসন এবং লক্ষ্মীপুরের ৪টি আসনে বিএনপি প্রার্থীদের জয় একপ্রকার সুনিশ্চিত হওয়ায় এই নির্বাচনী এলাকাগুলোকে বিএনপির দুর্গ বলা হয়। তবে এবার এই আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ এমনভাবে মনোনয়ন বিন্যাস করছে যাতে বিএনপিকে ধরাশায়ী করা যায়। আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা হচ্ছে এমনভাবে মনোনয়ন বিন্যাস করা যাতে বিএনপি ধরেই নেবে এই আসনগুলোতে তাদের হারানোর সাধ্য কারো নেই এবং এই আসনগুলোতে যে কোনো প্রার্থী দিলেই তারা বিজয়ী হবে। অতিরিক্ত নির্ভাবনায় এসব আসনে বিএনপির অন্তর্দলীয় কোন্দল প্রবল। বিএনপির এই অন্তর্কোন্দলকেই কাজে লাগানোর কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ। তাছাড়া আওয়ামী লীগ মনে করছে, গত এক দশক রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালীন তারা এসব এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছে যা ভোটারদের ভিন্ন চিন্তাভাবনা করতে বাধ্য করবে। বিশেষ করে ফেনী, লক্ষ্মীপুর এবং নোয়াখালী অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে গত ১০ বছরে। এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে পুঁজি করে বিএনপির দুর্গ বলে পরিচিত নির্বাচনী এলাকাগুলো থেকে অন্তত ১০টি আসন নিতে চায় আওয়ামী লীগ।
বিএনপির দুর্গে হানা দেওয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নিজেদের দুর্গ সুরক্ষিত রাখার ব্যাপারেও যথেষ্ট তৎপর। গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, বাগেরহাট ও নড়াইলের আসনগুলো আওয়ামী লীগের সুনিশ্চিত আসন হিসেবে বিবেচিত। এই আসনগুলো যাতে হাতছাড়া না হয়ে যায় সে কথা মাথায় রেখেই মনোনয়ন চূড়ান্ত করছে দলটি।
আওয়ামী লীগ, বিএনপির দুর্গের বাইরে কিছু নির্বাচনী এলাকা আছে যেগুলো একেবারেই উন্মুক্ত। সেসব আসনে বারবার ভোটাররা একবার এই দলকে আরেকবার অন্য দলকে ভোট দিয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দোদুল্যমান ভোটারদের এলাকাকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। আর মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে গিয়ে এবার শুধু প্রার্থীর দিকেই নয়, সংশ্লিষ্ট আসনে প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থীর রেকর্ড, জনপ্রিয়তা প্রভৃতির দিকেও নজর দিয়েছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের আসনেই নয়, শরিকদের জন্য যে ৭০টি আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সেগুলোতেও বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়ায়। সে উদ্দেশ্যে যাঁরা গতবার মনোনয়ন পেয়েছিলেন তাঁদের অনেককেই এবার বাদ দেওয়া হয়েছে বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে। সর্বশেষ ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্টভাবে বলেছেন, মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা এবং নিজ এলাকায় তাঁর জয়ের সম্ভাবনাকেই কেবল প্রাধান্য দেওয়া হবে। প্রার্থী চূড়ান্তকরণে অন্য কোনো বিষয়কেই আমলে নেওয়া হবে না। সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য যে ২০০টি আসন টার্গেট করেছে আওয়ামী লীগ তার মধ্যে অন্তত ১৫১ টি আসন করায়ত্ত করে নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী এবং খুলনা- এই পাঁচটি বিভাগীয় শহরের আসনগুলোকে আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে এবং ধারণা করা হচ্ছে এই আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দল বন্ধ করতে না পারলে এসব আসনে দলটির ভালো ফল করার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেলেও এই স্পর্শকাতর আসনগুলোর মনোনয়ন বিষয়ে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত যে কোনো সময় পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে দলটির একাধিক সূত্র।
শেষ পর্যন্ত দুয়েকটি আসনে প্রার্থী বদল হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বিন্যাস মোটামুটি চূড়ান্ত। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনে করা হচ্ছে, যে আসনগুলোতে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে সেসব আসনে যদি অন্তর্কোন্দলের সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে না ওঠে তাহলে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগের জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ (শনিবার) সকালে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
কাদের বলেন, বিএনপি দাসত্ব করে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য, জনগণকে মূল বিষয় হিসেবে মনে করে না। বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করলে ক্ষমতায় যাওয়া যায়? এখনো তাদের দুরভিসন্ধি হচ্ছে বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করে কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায়?
তিনি আরও বলেন, বিএনপিকে গণতান্ত্রিক দল মনে করি না। তাদের ইতিহাসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো নজির নেই। তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, প্রহসনে পরিণত করেছে। গণতান্ত্রিক বিধিবিধান তারা দলের মধ্যেও কোনো দিন
মানেনি। তারা বড় বড় কথা বলে, তারা কবে দলীয় কাউন্সিল করেছে? তারা কোথায় দলীয় কাউন্সিল করেছে? ৭-৮ বছর আগে লা মেরিডিয়ানে কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এ দেশে সাধারণ মানুষের মাঝে যারা রাজনীতিকে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে জাতীয় নেতা শেরে বাংলা ছিলেন অন্যতম। সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেরে বাংলাকে গ্রাম বাংলার কৃষকরা কোনোদিনও ভুলতে পারবে না। তিনি চিরদিন তাদের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। প্রজাসত্ব ও ঋণ সালিশি বোর্ড গঠন করে সুদ খোর মহাজনদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করেছেন, তিনি সে জন্য এখনও স্মরণীয় হয়ে আছেন।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আজ আমাদের অঙ্গীকার বঙ্গবন্ধু, সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা লড়ে যাচ্ছি মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে। সেটাই শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের স্বপ্ন এবং সেটা আজ আমাদের অঙ্গীকার।
ওবায়দুল কাদের ক্ষমতায় বিদেশি দাসত্ব বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যেটি চেয়েছিলেন যে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ উপজেলা নির্বাচন হবে, যে নির্বাচনে যে যার মতো করে অংশগ্রহণ করবেন এবং সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী বিজয়ী হবেন। সে রকম একটি নির্বাচন এখন দুরাশায় পরিণত হচ্ছে। আর এই দুরাশায় পরিণত হওয়ার প্রধান কারণ হল মন্ত্রীদের ক্ষমতার লোভ, এলাকায় তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এবং কোথাও কোথাও পরিবারতন্ত্র কায়েমের আগ্রাসী মনোভাব।
শেষ পর্যন্ত খোকনের ব্যাপারে পিছু হটল বিএনপি। তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হল না। বরং চা-নাস্তার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত তিন ঘণ্টার বৈঠকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ঠিকঠাক মতো কাজ করে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তিন ঘণ্টার বৈঠকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও যুক্ত হয়েছিলেন। তারেক জিয়ার সঙ্গেও মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং তার বিরুদ্ধ পক্ষের নেতা কায়সার কামাল কথা বলেন বলে জানা গেছে।