নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৯
প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রিসভায় ব্যাপক পরিবর্তন এবং চমক আনলেও তার উপদেষ্টা পরিষদ আগেরটাই বহাল রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরিষদে পরিবর্তন হলো না কেন? এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক প্রশ্ন। উল্লেখ্য যে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রীর বড় চমক ছিল শক্তিশালি একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা। সে সময় বেতনভুক পূর্ণকালীন উপদেষ্টা করা হয়েছিল সাত জনকে। উপদেষ্টাদের ক্ষমতা অনেকক্ষেত্রে মন্ত্রীদের চেয়েও বেশি ছিল। এ নিয়ে তখন সরকারের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছিল। অনেক সিনিয়র নেতা সংসদের উপদেষ্টাদের সাংগঠনিক কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। ঐ উপদেষ্টা পরিষদকে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার বৈঠক এবং একনেকের বৈঠকেও অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছিলেন। সে সময় প্রশ্ন উঠেছিল, যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা শপথ নেননি। কাজেই মন্ত্রিসভার গোপনীয় বিষয় তাদের সামনে আলোচনা হতে পারে কিনা। পর্যায়ক্রমে অবশ্য উপদেষ্টাদের মন্ত্রিসভায় উপস্থিতি অনিয়মিত হয়ে গেলেও একনেকের বৈঠকে বেশকজন উপদেষ্টা নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন।
২০১৪ এর নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী তার উপদেষ্টাদের পদত্যাগ করান। নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠনের পর দুজন উপদেষ্টা বাদ পড়েন। এরা হলেন ড. আলাউদ্দীন এবং অধ্যাপক সৈয়দ ডা. মোদাচ্ছের আলী। ড. আলাউদ্দীন ছিলেন রাজনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা এবং ড. মোদাচ্ছের আলী ছিলেন স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা। বাকি পাঁচ উপদেষ্টাদের দায়িত্ব অব্যাহত থাকে। তবে এইচটি ইমামের উপদেষ্টার দায়িত্বের পরিবর্তন হয়। এইচটি ইমাম প্রথমে ছিলেন জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা। পরে তাকে রাজনৈতিক উপদেষ্টা করা হয়। তৃতীয় মেয়াদে এবার গত মেয়াদের যে পাঁচজন উপদেষ্টা ছিলেন, তাদেরকেই বহাল রাখা হয়েছে। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে মন্ত্রিসভায় হেভিওয়েট রাজনীতিবিদরা থাকায় উপদেষ্টাদের ক্ষমতা খর্ব হয়ে যায়। এবং উপদেষ্টাদের কাজগুলো রুটিন কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। এ সময় অধিকাংশ উপদেষ্টাই প্রায় বেকার এবং কর্মহীন জীবন যাপন করেছেন। কিন্তু এখন আবার নতুন মন্ত্রিসভায় উপদেষ্টাদের ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব আবার বাড়বে বলে জানা গেছে।
বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামকে নির্বাচনের সময় থেকে বেশ সরব দেখা যাচ্ছে। যেহেতু নতুন অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তাই অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের কর্তৃত্ব অর্থমন্ত্রনালয়ে বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। আবার ড. গওহর রিজভী দ্বিতীয় মেয়াদেও অনেক ক্ষমতাবান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করতেন বলে জানা গেছে। প্রশ্ন হল যে, প্রধানমন্ত্রী তাঁর পুরাতন উপদেষ্টা পরিষদকে কেন বহাল রাখছেন? প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রথমত যেহেতু উপদেষ্টারা প্রধানমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত পরামর্শদাতা এবং প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন কাজে সহায়তা করেন, সেজন্যে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ব্যাক্তিগত টিমটিকে পরিবর্তন করতে চাননি। দ্বিতীয়ত হচ্ছে এই উপদেষ্টাদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর একটি টিম ওয়ার্ক হয়েছে এবং এই টিম ওয়ার্কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী এই উপদেষ্টা পরিষদে পরিবর্তন করতে চাননি। তৃতীয়ত যেহেতু এবারের মন্ত্রীসভায় অনেকেই নতুন মন্ত্রী হয়েছে, কাজেই উপদেষ্টাদের অনেক পরামর্শ এবং নির্দেশনা নতুন মন্ত্রীসভার জন্য গুরুত্বপূর্ন হতে পারে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী অভিজ্ঞ উপদেষ্টারা যারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজে দক্ষ এবং পরিক্ষিত তাদেরকে পরিবর্তন করতে চাননি। চতুর্থত, যে পাঁচজন উপদেষ্টা আছেন তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর অত্যান্ত আস্থাভাজন এবং সবচেয়ে বিশ্বস্ত রাজনৈতিক সহকর্মীদের মধ্যে অন্যাতম। তাই প্রধানমন্ত্রী এই বিশ্বস্ত এবং আস্থাভাজন ব্যাক্তিদেরকে সরিয়ে উপদেষ্টা হিসেবে নতুন কাউকে নিতে চাননি।
আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলছেন, উপদেষ্টা মণ্ডলীরা প্রধানমন্ত্রীকে উপদেশ দেন, তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মন্ত্রণালয়ের নয়, কাজেই প্রধানমন্ত্রী যাদের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তাদেরকেই উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজের মধ্যে দিয়ে যেহেতু তাদের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য কর্ম সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তাই প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা পদে পরিবর্তন আনতে আগ্রহী হন নাই।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।