নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৩ মার্চ, ২০১৯
শুধু সরকার নয়, দলীয় নেতাদের উপরও চটেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। আজ তিনি কারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি চিকিৎসাও নেবেন না, আদালতেও যাবেন না। তিনি এককভাবে আন্দোলন করতে চান বলে কারা কর্তৃপক্ষের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আজ বেগম খালেদা জিয়ার একটি মামলার শুনানির নিষ্পত্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি আদালতে যেতে অস্বীকৃতি জানান। কয়েকদিন আগে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হলেও তিনি তাতে অস্বীকৃতি জানান। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, খালেদা জিয়া সেসময় জানিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর তার আস্থা নেই। তিনি সেখানে চিকিৎসা নেবেন না। যার ফলে খালেদা জিয়া চিকিৎসাও নিচ্ছেন না, আদালতেও যাচ্ছেন না। তিনি জেল কর্তৃপক্ষকে হুমকি দিয়েছেন তাকে বেসরকারী ইউনাইটেড হাসপাতালে না নেয়া হলে তিনি প্রয়োজনে কারাগারে অনশন করবেন।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, শুধু সরকার নয়, বিএনপির নেতাদের উপরও তিনি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নাইকো দুর্নীতির মামলার শুনানির দিনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তখন তিনি তার জামিনে মুক্তির ব্যাপারে তৎপর হওয়ার জন্য মির্জা ফখরুলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বিএনপির ৫ নেতাসহ মির্জা ফখরুল দেখা করেন। সেখানে তিনি খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবি জানান ফখরুল। তিনি, খালেদাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে জানিয়ে দেন, আদালতের রায় অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের চিকিৎসকদের বোর্ডের অধীনে তার চিকিৎসা করাতে হবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নেয়া হয়।
বেগম খালেদা জিয়া মনে করছেন, বিএনপির নেতারা সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে তার মুক্তি এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার বিষয়টি নিয়ে জোরালো দাবি উত্থাপন করছেন না। খালেদা জিয়ার সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না বলেও তিনি আজ কারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। তিনি মনে করছেন যে, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সরকারের একটি গোপন আঁতাত হয়েছে। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে তারা গ্রেপ্তার এড়াতে এবং ব্যবসায়-বাণিজ্য যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় গেছে। এ কারণেই তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি তাদের কাছে এখন মুখ্য নয়। তারা নিজেদের বাঁচানোর জন্যই সবকিছু করছেন। এটা খালেদা জিয়াকে ক্ষুব্ধ করেছে বলে কারাগারের একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে ৫৪টির বেশি মামলা রয়েছে। সবগুলো মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন এবং মামলাগুলোর কোন তৎপরতা নেই। শুধু খালেদা জিয়া নন, বিএনপিতে যারা খালেদাপন্থী এবং নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন তারাও প্রশ্ন তুলেছেন মির্জা ফখরুলের মামলা এগোয় না কেন? ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা শেষ পর্যায়ে শুনানীতে থাকলেও হঠাৎ করে সেটি অদৃশ্য ইশারায় থমকে গেছে। বিএনপির একাধিক নেতা মনে করেন যে, মির্জা ফখরুল চুপ থাকার বিনিময়ে এসব মামলাকে হিমঘরে পাঠিয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রায় সকল সদস্য সরকারের সঙ্গে একটি সম্পর্ক রেখে চলছেন। এই সম্পর্ক রক্ষার জন্যই খালেদা জিয়ার মু্ক্তির ব্যাপারে তারা আন্তরিক নয় বলে মনে করেন খালেদা জিয়া। তিনি কারা কর্তৃপক্ষকে বলেছন, বিএনপি নেতারা যদি তার মুক্তির ব্যাপারে ন্যূনতম চাপ সৃষ্টি করতো তাহলে হয়তো তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা হতো।
কারা কর্তৃপক্ষের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বেগম খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা না নেয়ার ব্যাপারে তিনটি যুক্তি দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন:
১. বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মানসম্মত নয়। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুতে যদি ভাল চিকিৎসা হবে তাহলে ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হবে কেন?
২. খালেদা জিয়া মনে করছেন, তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা না করানো হলে তার ভুল চিকিৎসা হবে এবং শারীরিকভাবে তিনি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
৩. তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের ফিজিওথেরাপি সুবিধা আধুনিক ও মানসম্মত নয়।
তিনি তার যুক্তিগুলো জেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, যেহেতু হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে বেগম খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে চিকিৎসা হবে এবং এই বোর্ডটি হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত হয়েছে, কাজেই নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ তাদের নেই।
খালেদা জিয়ার পারিবারিক সূত্রগুলো বলছে, বেগম জিয়া একক আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণের চিন্তাভাবনা করছেন। গত শুক্রবার বেগম খালেদা জিয়ার সদস্যরা তার সঙ্গে দেখা করলে তিনি তাদের বলেন, কেউ যদি আন্দোলন না করে তাহলে তিনি একাই তার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য আন্দোলন করবেন। তবে বেগম খালেদা জিয়া কিভাবে জেল থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করবে তা স্পষ্ট করে বলেননি খালেদা জিয়ার ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী।
তবে আজ খালেদা জিয়া আদালতে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছেন,‘চিকিৎসা নেয়া বন্ধ করেছি, কোর্টে যাবো না। দরকার হলে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেবো।’ যদিও জেল কর্তৃপক্ষ বলছে, বেগম জিয়া প্রায়ই এমন উত্তেজিত ও উত্তপ্ত আচরণ করেন। এটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা। গত এক বছরে এ অভিজ্ঞতা তাদের হয়েছে। পরিস্থিতি সব ঠিক হয়ে যাবে এবং বেগম জিয়া খুব শিগগিরই তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে যেতে রাজি হবেন।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ (শনিবার) সকালে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
কাদের বলেন, বিএনপি দাসত্ব করে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য, জনগণকে মূল বিষয় হিসেবে মনে করে না। বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করলে ক্ষমতায় যাওয়া যায়? এখনো তাদের দুরভিসন্ধি হচ্ছে বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করে কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায়?
তিনি আরও বলেন, বিএনপিকে গণতান্ত্রিক দল মনে করি না। তাদের ইতিহাসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো নজির নেই। তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, প্রহসনে পরিণত করেছে। গণতান্ত্রিক বিধিবিধান তারা দলের মধ্যেও কোনো দিন
মানেনি। তারা বড় বড় কথা বলে, তারা কবে দলীয় কাউন্সিল করেছে? তারা কোথায় দলীয় কাউন্সিল করেছে? ৭-৮ বছর আগে লা মেরিডিয়ানে কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এ দেশে সাধারণ মানুষের মাঝে যারা রাজনীতিকে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে জাতীয় নেতা শেরে বাংলা ছিলেন অন্যতম। সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেরে বাংলাকে গ্রাম বাংলার কৃষকরা কোনোদিনও ভুলতে পারবে না। তিনি চিরদিন তাদের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। প্রজাসত্ব ও ঋণ সালিশি বোর্ড গঠন করে সুদ খোর মহাজনদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করেছেন, তিনি সে জন্য এখনও স্মরণীয় হয়ে আছেন।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আজ আমাদের অঙ্গীকার বঙ্গবন্ধু, সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা লড়ে যাচ্ছি মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে। সেটাই শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের স্বপ্ন এবং সেটা আজ আমাদের অঙ্গীকার।
ওবায়দুল কাদের ক্ষমতায় বিদেশি দাসত্ব বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যেটি চেয়েছিলেন যে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ উপজেলা নির্বাচন হবে, যে নির্বাচনে যে যার মতো করে অংশগ্রহণ করবেন এবং সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী বিজয়ী হবেন। সে রকম একটি নির্বাচন এখন দুরাশায় পরিণত হচ্ছে। আর এই দুরাশায় পরিণত হওয়ার প্রধান কারণ হল মন্ত্রীদের ক্ষমতার লোভ, এলাকায় তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এবং কোথাও কোথাও পরিবারতন্ত্র কায়েমের আগ্রাসী মনোভাব।
শেষ পর্যন্ত খোকনের ব্যাপারে পিছু হটল বিএনপি। তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হল না। বরং চা-নাস্তার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত তিন ঘণ্টার বৈঠকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ঠিকঠাক মতো কাজ করে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তিন ঘণ্টার বৈঠকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও যুক্ত হয়েছিলেন। তারেক জিয়ার সঙ্গেও মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং তার বিরুদ্ধ পক্ষের নেতা কায়সার কামাল কথা বলেন বলে জানা গেছে।