নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২৭ মার্চ, ২০১৯
উপজেলা নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং আওয়ামী লীগের ফলাফলে হতাশ ও ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পরবর্তী ধাপের উপজেলা নির্বাচন গুলোতে যেকোনভাবে অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছেন বলে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে। এখানে প্রশাসনের নিরপেক্ষতার উপরও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। উল্লেখ্য এ পর্যন্ত তিন পর্বে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, ৩১৬ টি উপজেলা নির্বাচনে ৭৮টিতে বিদ্রোহী প্রার্থী জয় পেয়েছে, ১৬ টিতে অন্যান্য দলের প্রার্থীরা জিতেছে, ৩ টিতে জিতেছে বিএনপি। বাকি সব উপজেলায় জিতেছে আওয়ামী লীগ। ৫৫টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। এখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এই উপজেলা নির্বাচনের কয়েকটি বিষয়ে সরকারের নীতি নির্ধারক মহল অত্যন্ত হতাশ এবং অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে প্রথমত, এই উপজেলা নির্বাচনে যারা আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পেয়েছেন তারা প্রশাসন এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেছেন। এই সমস্ত মনোনিত প্রার্থীরাই অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। দ্বিতীয়ত, সরকারের নীতিনির্ধারকরা লক্ষ্য করেছেন, উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল অত্যন্ত কম। ভোটাররা ভোটের ব্যাপারে নিরুৎসাহী ছিল। তৃতীয়ত, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। প্রায় প্রত্যেকটি স্থানেই বিদ্রোহ প্রার্থীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সংঘর্ষ গোলযোগের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গোপালগঞ্জের উপজেলা নির্বাচনে কাউকেই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়নি এখানে সকলে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাড়িয়েছিলেন। যিনি বিজয়ী হয়েছেন, তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সড়ক অবরোধসহ নানা রকম আন্দোলনের কর্মসূচীও গ্রহণ করেছেন। সরকার এই ঘটনাগুলোতে অত্যন্ত বিভ্রত। আওয়ামী লীগ মনে করে যে, আওয়ামী লীগই দেশে জনগনের ভোটার অধিকার নিশ্চিত করেছিল। তাই এখন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এ ধরনের নৈরাজ্য কোনভাবেই বরদাস্ত করা উচিত নয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এর মধ্যে প্রথমত, যেখানে প্রধান কোনো বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেনি, সেখানে প্রশাসন বিশেষ ব্যক্তি বা বিশেষ পক্ষ এজন্য কোনো পক্ষপাতিত্ব করবে কেন? দ্বিতীয়ত আওয়ামী লীগের যেখানে সারাদেশে ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ সমর্থক রয়েছে সেখানে ভোটার উপস্থিতি হার কম হবে কেন? তৃতীয়ত, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যারা পেয়েছেন তারা কেনই বা ধরে নেবেন যে বিজয় তাদের সুনিশ্চিত? তারা কেন জনগণের কাছে ভোট চাইবেন না? ভোট না চেয়ে তারা প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার চেষ্টা করবেন কেন? এই বিষয়গুলো নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনগুলোতে এই বিষয়গুলোকে কঠোরভাবে দমনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে খুব শিগগিরই প্রশাসনের কাছে বার্তা যাচ্ছে যে উপজেলা নির্বাচন বা পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে প্রশাসন যেন কোনো প্রার্থীর পক্ষে হস্তক্ষেপ না করে। বরং উৎসবমুখর নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। একাধিক উপজেলা নির্বাচনে অভিযোগ উঠেছে যে, সেখানে প্রশাসন যারা দলীয় নৌকা প্রতীক পেয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করেছে। এর ফলে, জনগণ মনে করেছে যে এই নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারিত। কাজেই তারা নির্বাচন থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। নির্বাচনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম, জাল ভোটের ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ এসেছে। এ সমস্ত বিষয়ের প্রেক্ষিতে আগামীতে উপজেলা নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এবং প্রয়োজনে এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও পদক্ষেপ নেবে বলে জানা গেছে। অবশ্য আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের সময়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং তার ফলাফলও পাওয়া গেছে। প্রথম দুটি ধাপের তুলনায় তৃতীয় ধাপের নির্বাচন অনেক বেশি অবাধ, সুষ্ঠু এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে।
প্রশাসনের মধ্যে একটা ধারণা রয়েছে যে যেকোনো মূল্যেই সরকারি দলকে বিজয়ী করা হবে। কিন্তু এই ধারণা ভুল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছেন উপজেলা নির্বাচনে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা উচিৎ হয়নি। কারণ এখানে যারাই বিজয়ী হোক না কেন তারা আওয়ামী লীগের হয়েই কাজ করবেন। কাজেই এই নির্বাচনে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলোর পুনরাবৃত্তি পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে না হয় সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থান গ্রহণ করছে। শিগগিরই এই ব্যাপারে দলীয় পর্যায় থেকেও নির্দেশনা এবং অনুশাসন জারি করা হবে।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ (শনিবার) সকালে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
কাদের বলেন, বিএনপি দাসত্ব করে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য, জনগণকে মূল বিষয় হিসেবে মনে করে না। বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করলে ক্ষমতায় যাওয়া যায়? এখনো তাদের দুরভিসন্ধি হচ্ছে বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করে কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায়?
তিনি আরও বলেন, বিএনপিকে গণতান্ত্রিক দল মনে করি না। তাদের ইতিহাসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো নজির নেই। তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, প্রহসনে পরিণত করেছে। গণতান্ত্রিক বিধিবিধান তারা দলের মধ্যেও কোনো দিন
মানেনি। তারা বড় বড় কথা বলে, তারা কবে দলীয় কাউন্সিল করেছে? তারা কোথায় দলীয় কাউন্সিল করেছে? ৭-৮ বছর আগে লা মেরিডিয়ানে কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এ দেশে সাধারণ মানুষের মাঝে যারা রাজনীতিকে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে জাতীয় নেতা শেরে বাংলা ছিলেন অন্যতম। সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেরে বাংলাকে গ্রাম বাংলার কৃষকরা কোনোদিনও ভুলতে পারবে না। তিনি চিরদিন তাদের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। প্রজাসত্ব ও ঋণ সালিশি বোর্ড গঠন করে সুদ খোর মহাজনদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করেছেন, তিনি সে জন্য এখনও স্মরণীয় হয়ে আছেন।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আজ আমাদের অঙ্গীকার বঙ্গবন্ধু, সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা লড়ে যাচ্ছি মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে। সেটাই শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের স্বপ্ন এবং সেটা আজ আমাদের অঙ্গীকার।
ওবায়দুল কাদের ক্ষমতায় বিদেশি দাসত্ব বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যেটি চেয়েছিলেন যে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ উপজেলা নির্বাচন হবে, যে নির্বাচনে যে যার মতো করে অংশগ্রহণ করবেন এবং সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী বিজয়ী হবেন। সে রকম একটি নির্বাচন এখন দুরাশায় পরিণত হচ্ছে। আর এই দুরাশায় পরিণত হওয়ার প্রধান কারণ হল মন্ত্রীদের ক্ষমতার লোভ, এলাকায় তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এবং কোথাও কোথাও পরিবারতন্ত্র কায়েমের আগ্রাসী মনোভাব।
শেষ পর্যন্ত খোকনের ব্যাপারে পিছু হটল বিএনপি। তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হল না। বরং চা-নাস্তার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত তিন ঘণ্টার বৈঠকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ঠিকঠাক মতো কাজ করে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তিন ঘণ্টার বৈঠকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও যুক্ত হয়েছিলেন। তারেক জিয়ার সঙ্গেও মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং তার বিরুদ্ধ পক্ষের নেতা কায়সার কামাল কথা বলেন বলে জানা গেছে।