নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১২ এপ্রিল, ২০১৯
টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশ পরিচালনার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের ওপর থাকলে সর্বময় ক্ষমতা একজনের হাতেই থাকে। তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। মূলত দলে এবং সরকারে তার নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়েছে এবার নির্বাচনের পর যে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ওয়ান ইলেভেনের পর থেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্তৃত্ব আস্তে আস্তে নিরঙ্কুশ হতে থাকে। বর্তমানে দলের সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব তার ওপর। তার কথাই আওয়ামী লীগের শেষ কথা। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগে যে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাতে দলের সিনিয়র নেতারা অপাংক্তেয় হয়েছে। এক সময় যারা দলের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে পরিচিত ছিল। যারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে নীতি নির্ধারকের ভূমিকা পালন করতেন, সেই সমস্ত নেতা যেমন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিমের মতো নেতৃবৃন্দ এখন দলে অপাংক্তেয়। অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক বলেন, দলের কোন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে এখন তাদের নূন্যতম ভূমিকাও নেই। কেন এমন হলো? কি কারণে আওয়ামী লীগ থেকে দলের সিনিয়র নেতাদের গুরুত্ব হ্রাস পেল? কেনই বা সিনিয়র নেতারা দলের মধ্যে অপাংক্তেয় হলেন? কিভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলেন? এর কারণ বিশ্লেষন হওয়া প্রয়োজন। কারণ আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল যেখানে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি চর্চা থাকে এবং ২০০৭ সালের আগেও আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংগুলো ছিল ঝঞ্ঝা বিক্ষুদ্ধ। সেখানে নানা মত, নানা চিন্তা ধারার বিতর্ক হতো এবং যেকোন সিদ্ধান্তের চ্যালেঞ্জ হতো এবং এনিয়ে বিতর্ক হতো। এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এর কারণ কী? অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব দলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মূলত দলের সিনিয়র নেতাদের কিছু পদক্ষেপের কারণে এবং দলের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরঙ্কুশ জনপ্রিয়তার কারণে। আসুন দেখা যাক কিভাবে আওয়ামী লীগ এবং সরকারে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো এবং কেন সিনিয়র নেতারা দলের মধ্যে অপাংক্তেয় হলো?
১. ওয়ান ইলেভেন: ওয়ান ইলেভেনের আগের ও পরের চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। ওয়ান ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী বৈঠক ছিল অত্যন্ত আকর্ষনীয়। এখানে বিতণ্ডা হতো, বিতর্ক হতো এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির অনেক সিদ্ধান্তই সেখানে নাকোচ হয়ে যেত। সিনিয়র নেতারা তাদের নিজস্ব মতামত দিতে কার্পন্য করতো না। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের সময় দেখা গেলো যে দলের অধিকাংশ সিনিয়র নেতারা আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার জন্য এক ধরনের ‘ষড়যন্ত্রে’ লিপ্ত ছিল। যে ষড়যেন্ত্রর কারণে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতিকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। যে কারণে এই ওয়ান ইলেভেনের পর থেকেই সিনিয়র নেতাদের একটা দূরত্ব তৈরী হয়েছে। এই দূরত্বের কারণেই দলের নীতি নির্ধারনীর সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সরকার পুনর্বিন্যাস থেকে আস্তে আস্তে তাদের ঝেড়ে ফেলেছেন। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারী মন্ত্রিসভা গঠনের মাধ্যমে দলের সিনিয়র নেতাদের পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছে।
২. তৃনমূল এবং কর্মীদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা: প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন ১৯৮১ সালে। সে বছর ১৭ মে তিনি বাংলাদেশে ফেরেন। তিনি দেশে আসার পর দলের সিনিয়র নেতারা চেয়েছিলেন ইচ্ছেমতো দল পরিচালনা করতে। শেখ হাসিনা যেন তাদের মতে চলেন সেলক্ষ্যে তাদের চেষ্টার কমতি ছিল না। আস্তে আস্তে কর্মীদের ভালোবাসা এবং তৃনমূলের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা শক্তিশালি হতে থাকেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে তৃনমূল এবং কর্মীদের মাঝে শেখ হাসিনার বিপুল জনপ্রিয়তা প্রমানিত হয়। কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে তিনি নিরঙ্কুশ ছিলেন না। বরং ২০০১ সালে নির্বাচেনে বিপর্যয়ের পরে দলের সিনিয়র নেতারা তারা সমলোচনায় মুখর হয়েছিলেন। ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময়ও সিনিয়র নেতারা তার সমলোচনা করেছিলেন। মূলত সিনিয়র নেতাদের এই সমলোচনাগুলোই প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে দলের মধ্যে আরো নিরঙ্কুশ করে তোলে। তিনি নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নেতাকর্মীদের মধ্যে এই জনপ্রিয়তাই শেখ হাসিনাকে শক্তি জুগিয়েছে। যার ফলে তিনি দলে এবং সরকারে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হন।
৩. কর্মীদের বিশ্বাসের অভাব: সিনিয়র নেতারা দলের মধ্যে এক সময় প্রভাবশালী ছিলেন এবং সিনিয়র নেতারা অনেক নীতি নির্ধারনী সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। কিন্তু ক্রমশ দলের কর্মীদের মধ্যে এই ধারণা জন্মে গেছে একমাত্র শেখ হাসিনা ছাড়া তাদের কল্যানের জন্য বা তাদের অধিকারের বিষয়টি শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কেউ বিবেচনা করেন না। বরং সিনিয়র নেতারা দলের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করেন বলেও দলের সিংহভাগ কর্মীরা মনে করেন। এ কারণে ক্রমশ সিনিয়র নেতাদের প্রতি অনাস্থা এসেছে এবং শেখ হাসিনার প্রতি আস্থাশীল হয়েছে। তারা শেখ হাসিনার প্রতিই শুধুমাত্র বিপুল সমর্থন জানিয়েছে। সিনিয়র নেতাদের প্রতি সাধারণ কর্মীদের অনাস্থাই শেখ হাসিনাকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী করেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
৪ সিদ্ধান্ত গ্রহনে বিচক্ষণতা: আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনীতি করতে হয়েছে প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য থেকেই। ১৯৮১ সালে তিনি যখন রাজনীতিতে আসেন তখন এক বিরুপ রাজনীতির পরিবেশ তাকে মোকাবেলা করতে হয়। শুধু দলের বাইরে নয়, দলের ভিতরেও তাকে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল। শেখ হাসিনা তারা রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা এবং কৌশল দিয়েই অন্যদের পেছনে ফেলেছেন এবং সে কারণেই তিনি দলের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয় হয়েই সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী হয়েছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
৫. সততা এবং নিষ্ঠা: আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সততা এবং নিষ্ঠার কারণে তিনি দলের তরুণ এবং সাধারণের মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। সাধারণ কর্মী এবং তৃনমূলের নেতারা মনে করেন শেখ হাসিনার সততা প্রশ্নাতিত এবং তিনি দলের জন্য এবং দেশের জন্য ভাবেন। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নয়। সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ ধরনের ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে শেখ হাসিনা শুধু দেশের কথা চিন্তা করেন এবং দলের মঙ্গল কামনা করেন। সে কারণেই দলে এবং দলের বাইরে তার বিপুল জনপ্রিয়তা। বিপুল জনপ্রিয়তার কারণেই দল পরিচালনা এবং সরকার পরিচালনায় একক কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছেন। এখান থেকেই সিনিয়র নেতারা দলে অপাংক্তেয় হয়েছেন। রাষ্ট্রে পরিচালনায় তারা ভূমিকাহীন হয়েছেন এবং একটি নতুন পরিবেশের উন্মেষ ঘটেছে আওয়ামী লীগ এবং সরকারে।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া তারেক জিয়া বিএনপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
মন্তব্য করুন
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
তীব্র গরম মির্জা আব্বাস বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
ড. আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন শাজাহান খান
মন্তব্য করুন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুজনই দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা বিএনপি পরামর্শ দিয়ে আসছেন এমন গুঞ্জন দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কখনও মুখ খুলেননি বিএনপির কেউই। তবে এবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি জানিয়েছেন বিএনপি থেকে বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়াকে বাদ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে দল ভাবছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে দলের এমন ভাবনার কথা জানান বিএনপির এই নেতা।
উপজেলা নির্বাচন থেকে কঠোর অবস্থান থেকে ইউটার্ন নিলো বিএনপি। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আপাতত যারা উপজেলা নির্বাচন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে সব কিছু নির্ভর করবে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। যারা পরাজিত হবে তাদের ওপর নেমে আসবে শাস্তির খড়গ। আর যারা বিজয়ী হবেন তাদের বিষয়টি উপেক্ষা করা হবে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে ফেঁসে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান। তবে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেও নীতিমালার কারণে বেঁচে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।