নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১১ অগাস্ট, ২০১৯
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দ্বিখণ্ডিত করে উত্তর-দক্ষিণ করা এবং দুই মেয়রের নেতৃত্বে সিটি কর্পোরেশন পরিচালনার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত একাধিক পরামর্শকদের পর্যালোচনা এবং মূল্যায়নে বলা হয়েছে যে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়র তত্ত্ব অচল। বরং এক মেয়রের অধীনে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে পরিচালিত করে কাউন্সিলরদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং কাউন্সিলরদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার মধ্য দিয়ে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যায়।
উল্লেখ্য যে, ২০১১ এর ডিসেম্বরে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে ভেঙে দুটি সিটি কর্পোরেশনে পরিণত করা হয়েছিল। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ একক মেয়র নির্বাচিত হয়েছিল ২০০২ সালে। সেই মেয়র নির্বাচনে সাদেক হোসেন খোকা প্রায় বিনাভোটেই মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেও দুইবছর মেয়রপদে খোকা অধিষ্ঠিত ছিলেন কোনো নির্বাচন ছাড়াই। এরপরে আওয়ামী লীগ সরকার দুই মেয়রের তত্ত্ব নিয়ে আসে। ঢাকার উন্নয়ন এবং অগ্রযাত্রা অব্যহত রাখা, কাজের সুবিধার জন্য দুই মেয়রের নেতৃত্বে সিটি কর্পোরেশন পরিচালনার উদ্যোগ নেয়। এ সংক্রান্ত একটি বিল ২০১১ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদে পাশ হয়। এই বিল পাশের পর মামলা এবং বিভিন্ন জটিলতার কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি। ২০১৫ এর এপ্রিলে এসে প্রথমবারের মতো দুই সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে উত্তর থেকে আনিসুল হক এবং দক্ষিণ থেকে সাইদ খোকন নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০১৫ সালে দুই ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নবযাত্রার পর প্রথমদিকে ভালোই চলছিল। বিশেষ করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনী কর্মপরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন নগরবাসীকে আশান্বিত করেছিল। কিন্তু আনিসুল হকের অকাল মৃত্যুর পর ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশনই প্রায় উদ্ভাবনহীন, গতানুগতিক এবং অক্ষম প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বরং বিভিন্ন বিষয়ে জলাবদ্ধতা, ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন বিষয়ে শুধুমাত্র দোষারোপের রাজনীতি করে দুই সিটি কর্পোরেশন ব্যর্থতা অন্যের ঘাড়ে চাপানোর যারপরনাই চেষ্টা করেছে।
কিন্তু সাধারণ মানুষ এই সমস্ত অজুহাতে আশ্বস্ত হতে পারেনি। তারা মনে করছে যে সিটি কর্পোরেশন তার অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংক সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দুই সিটি কর্পোরেশনের বাস্তবতা এবং দুই সিটি কর্পোরেশন কতোটা কার্যকর, সে ব্যাপারে একাধিক গবেষণা পরিচালনা করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে। এরকম একাধিক গবেষণা এবং পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যে দুই সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্ব ঢাকার বাস্তবতায় যৌক্তিক নয়। বরং একটা সিটি কর্পোরেশন রেখে সিটি কর্পোরেশনের যে ওয়ার্ডগুলো রয়েছে সেই ওয়ার্ডে নির্বাচিত কমিশনারদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করলে ঢাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
পাশাপাশি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ‘সিটি গভর্নেস’ করারও পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত পরামর্শক পর্যালোচনার মূল্যায়ন প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে যে দুটি সিটি কর্পোরেশন থাকার কারণে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে, কাজের অসামঞ্জস্যতা তৈরি হচ্ছে, অনেকগুলো কাজেরই সমন্বয় সাধন করা দুরূহ হয়ে পড়ছে। তারা উদাহরণ দিয়েই বলেছেন যে, যেমন কাওরান বাজারের মধ্যবর্তী সড়কটিই দুই সিটি কর্পোরেশনকে বিভক্ত করেছে। অথচ এই কাওরান বাজার এবং হাতিরঝিল এলাকার জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। এরকম তারা উদাহরণ দিয়ে আরও অন্তত ১০টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে যেখানে সিটি কর্পোরেশনের বিভক্তির ফলে সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, ২০১১ সালে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে আওয়ামী লীগ সিটি কর্পোরেশনকে দ্বিখণ্ডিত করেছিল। এর ভেতরে উন্নয়ন ভাবনার যে আওয়াজটা ছিল তা আদতে ছিল একটি রাজনৈতিক স্লোগান। কারণ সেসময় সিটি নির্বাচনে সাদেক হোসেন খোকা ছিলেন একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। আর সেসময় আওয়ামী লীগে সার্বজনীন একজন নেতার অভাব ছিল যিনি সিটি কর্পোরেশনের একক দায়িত্ব নিতে পারবেন। এই প্রেক্ষিতেই এসেছিল বিভক্তির চিন্তা বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র দাবি করেছে। কিন্তু এখন বাস্তবতা ভিন্ন হয়ে গেছে। তাছাড়া গত ৮ বছরে দেখা গেছে যে সিটি কর্পোরেশনের কাজে গতিশীলতা আনার জন্য একজন ভালো নেতার কোনো বিকল্প নেই যিনি পুরো ঢাকাকে এগিয়ে নিতে পারবেন। এরকম বিবেচনা থেকেই আবার এক মেয়রের পথে আওয়ামী লীগ সরকার হাঁটবে কিনা তা নিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা বলেছেন, এটি শুধুমাত্র একটি গবেষণা রিপোর্ট। এই রিপোর্ট গ্রহণ করা না করা সরকারের এখতিয়ার। তবে সরকারের মধ্যে ইতিমধ্যেই নানারকম কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে যে একক মেয়রের কর্তৃত্বে ঢাকাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। তাহলে ঢাকার উন্নয়নগুলো সমন্বিত হবে, অপরিকল্পিত এবং বিচ্ছিন্নভাবে যে কাজগুলো হচ্ছে সেগুলো বন্ধ হবে। ঢাকাকে একক সিটি কর্পোরেশনের আওতায় নিয়ে আসার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো একক নেতৃত্ব। এরকম কি একজন নেতা পাওয়া যাবে যিনি এককভাবে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে চালাতে পারবে?
এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সামনে এখন বেশকিছু বিকল্প আছে বলে দলের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। জাহাঙ্গীর কবির নানকের কথা ভাবা হচ্ছে, আসছে সাবের হোসেন চৌধুরীর নাম, এমনকি ফজলে নূর তাপসের কথাও একক মেয়র হিসেবে ভাবা হচ্ছে। এরা সবাই দলের ডাকসাইটে নেতা। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতাই মেয়র হতে চান। তবে দ্বিখণ্ডিত ঢাকার মেয়র হতে রাজি নন কেউই। ঢাকাকে বাসযোগ্য, উন্নত এবং আধুনিক একটি শহর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একজন ভালো নেতার কোনো বিকল্প নেই। এই উপলব্ধি গত ৮ বছরে আওয়ামী লীগের হয়েছে। বিশেষ করে আনিসুল হক যে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারপর থেকে বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে একজন ভালো মেয়র ঢাকা শহরকে বদলে দিতে পারে। সেই বিবেচনা থেকে আওয়ামী লীগ হয়তো এই গবেষণা, পর্যালোচনাগুলোর আলোকে ঢাকাকে আবার একক মেয়রের যুগে ফিরিয়ে নিতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে প্রধান বিবেচনা হবে যে সকলের জন্য গ্রহণযোগ্য এবং সার্বজনীন নেতা খুঁজে পাওয়া। যদি এরকম নেতা খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে একক মেয়রের নেতৃত্বে ঢাকাকে ফিরিয়ে নেওয়া অবাস্তব চিন্তা নয়।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ (শনিবার) সকালে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
কাদের বলেন, বিএনপি দাসত্ব করে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য, জনগণকে মূল বিষয় হিসেবে মনে করে না। বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করলে ক্ষমতায় যাওয়া যায়? এখনো তাদের দুরভিসন্ধি হচ্ছে বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করে কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায়?
তিনি আরও বলেন, বিএনপিকে গণতান্ত্রিক দল মনে করি না। তাদের ইতিহাসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো নজির নেই। তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, প্রহসনে পরিণত করেছে। গণতান্ত্রিক বিধিবিধান তারা দলের মধ্যেও কোনো দিন
মানেনি। তারা বড় বড় কথা বলে, তারা কবে দলীয় কাউন্সিল করেছে? তারা কোথায় দলীয় কাউন্সিল করেছে? ৭-৮ বছর আগে লা মেরিডিয়ানে কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এ দেশে সাধারণ মানুষের মাঝে যারা রাজনীতিকে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে জাতীয় নেতা শেরে বাংলা ছিলেন অন্যতম। সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেরে বাংলাকে গ্রাম বাংলার কৃষকরা কোনোদিনও ভুলতে পারবে না। তিনি চিরদিন তাদের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। প্রজাসত্ব ও ঋণ সালিশি বোর্ড গঠন করে সুদ খোর মহাজনদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করেছেন, তিনি সে জন্য এখনও স্মরণীয় হয়ে আছেন।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আজ আমাদের অঙ্গীকার বঙ্গবন্ধু, সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা লড়ে যাচ্ছি মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে। সেটাই শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের স্বপ্ন এবং সেটা আজ আমাদের অঙ্গীকার।
ওবায়দুল কাদের ক্ষমতায় বিদেশি দাসত্ব বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যেটি চেয়েছিলেন যে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ উপজেলা নির্বাচন হবে, যে নির্বাচনে যে যার মতো করে অংশগ্রহণ করবেন এবং সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী বিজয়ী হবেন। সে রকম একটি নির্বাচন এখন দুরাশায় পরিণত হচ্ছে। আর এই দুরাশায় পরিণত হওয়ার প্রধান কারণ হল মন্ত্রীদের ক্ষমতার লোভ, এলাকায় তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এবং কোথাও কোথাও পরিবারতন্ত্র কায়েমের আগ্রাসী মনোভাব।
শেষ পর্যন্ত খোকনের ব্যাপারে পিছু হটল বিএনপি। তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হল না। বরং চা-নাস্তার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত তিন ঘণ্টার বৈঠকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ঠিকঠাক মতো কাজ করে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তিন ঘণ্টার বৈঠকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও যুক্ত হয়েছিলেন। তারেক জিয়ার সঙ্গেও মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং তার বিরুদ্ধ পক্ষের নেতা কায়সার কামাল কথা বলেন বলে জানা গেছে।