নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৫ নভেম্বর, ২০১৯
গতকাল জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কিছু ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ যখনই উন্নয়ন এবং অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়, তখনই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো না কোনো ষড়যন্ত্র হয়। আবার দেশে নতুন করে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অবশ্য তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন যে, এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং আরও এগিয়ে যাবে।
বিভিন্ন অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে অন্তত ৫টি বিষয়ে সরকারের জনপ্রিয়তা নষ্ট করা এবং সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলার নীল নকশা প্রণীত হয়েছে। এই নীল নকশার অংশ হিসেবেই কিছু কর্মকাণ্ড হচ্ছে, যে কর্মকাণ্ডে জনগণ সরকারের ওপর অস্বস্তি এবং বিরক্তি প্রকাশ করেছে। ৫টি বিষয়ে জনমনে সরকারের ব্যাপারে জনগণের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হচ্ছে। সেগুলো হলো;
পেঁয়াজের দাম
পেঁয়াজের দাম এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, পেঁয়াজের দাম বাড়তে পারে। কিন্তু লাগামহীনভাবে এভাবে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি একটি সুস্পষ্ট সিন্ডিকেটের কারসাজি। একটি মহল সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার জন্যই পেঁয়াজ গুদামজাত করছেন, পেঁয়াজ পঁচিয়ে ফেলা হচ্ছে। তারপরেও পেঁয়াজ বাজারে না ছেড়ে কৃত্রিমভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যদি পেঁয়াজের সংকট থাকতো তাহলে বাজারে পেঁয়াজই পাওয়া যেতো না। পেঁয়াজ যেহেতু পাওয়া যাচ্ছে এবং সিন্ডিকেটের কারসাজিতে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে, তার মানে এর পিছনে একটি গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। যখন দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ে, তখন সাধারণ মানুষের ক্ষোভ এবং অসন্তোষ সরকারের ওপর গিয়েই বর্তায়। কারণ বাজার মনিটরিংসহ বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সরকারেরই। তাই একটি মহল সরকারকে সংকটে ফেলানোর জন্যই কৃত্রিমভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
চালের বাজার
পেঁয়াজের সঙ্গে সঙ্গে চালের বাজারও অস্থির হয়ে উঠছে। গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন রকম চালের দাম কেজিপ্রতি ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতেও সরকার মনে করছে যে, চালের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রেও একটি মহল কারসাজি করছে। কৃত্রিমভাবে চালের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, পেঁয়াজের পর চালের বাজারও যদি অস্থির করা যায় তাহলে সরকারকে আরও বেশি বেকায়দায় ফেলা সহজ হবে। এখানেও একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে।
রেল দুর্ঘটনা
পরপর দুটি রেল দুঘটনার পরে সরকারের টনক নড়েছে। সরকারের একাধিক মহল এগুলো নিছকই দুর্ঘটনা নাকি এর পিছনে অন্য কোনো রহস্য রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বলেছেন যে, রেল দুর্ঘটনার পিছনে কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। ধারণা করা হচ্ছে যে, বার বার দুর্ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা হতে পারে না। এর পিছনে অন্য কোনো রহস্য থাকতে পারে। তবে, রেল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই প্রতিটি দুর্ঘটনার জন্য ৫টি করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটিগুলোতে ষড়যন্ত্রের আলামত পেলে তা উদ্ধার হবে বলেও রেল কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছে।
দুর্নীতি
সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অভিযান পরিচালনা করেছেন, পরিচালনা সেই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হচ্ছে। এসমস্ত খবরের কারণে সরকারি অফিস আদালতগুলোতে কাজকর্মে একটা স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে সরকারের অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা চলছে। এখন উন্নয়ন বাজেট অনেক বেশি বড়। কিন্তু এই স্থবিরতা এবং সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভয় এবং অনীহার কারণে হঠাৎ করে উন্নয়ন পরিকল্পনা থমকে গেছে বলেও সরকারের বিভিন্ন মহলে বলা হচ্ছে। এমন একজন কর্মকর্তা বাংলা ইনসাইডারকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যে, কাজ করলেই তো দুর্নীতির অভিযোগ আসবে, কাজ করলেই দুদক ধরবে। এজন্য কাজ না করাটাই ভালো। এরকম মানসিকতা খুব সুপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হচ্ছে, যাতে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ থেকে নিজেদের গুটিয়ে ফেলেন। এর ফলে সরকারের উন্নয়ন তৎপরতাগুলো মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। এটাকেও ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের অনেক নীতিনির্ধারকেরা।
শুদ্ধি অভিযান নিয়ে বিভ্রান্তি
শেখ হাসিনা শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে যারা দলের ভেতর, দেশে যারা অপকর্ম করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অর্জনগুলোকে ম্লান করছে। কিন্তু এই শুদ্ধি অভিযানের মাঝপথে অভিযান নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তি এবং প্রশ্ন উঠেছে। শুদ্ধি অভিযানের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে কোনো আভাসও পাওয়া যাচ্ছে না। শুদ্ধি অভিযান কি থেমে আছে নাকি শুদ্ধি অভিযান আবার নতুন করে শুরু হবে, শুদ্ধি অভিযানের গতিপ্রকৃতি কোনদিকে যাবে- তা নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে। এসব প্রশ্নের উত্তর মেলাতে না পেরে জনগণের মধ্যে নানারকম চিন্তাভাবনা তৈরি হয়েছে, যেটা সরকারের জন্য ইতিবাচক নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, এই পঞ্চমুখী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে সরকারকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। আস্থা অর্জন করতে না পারলে সরকার যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো এগিয়ে নিচ্ছে, সেগুলো বাধাগ্রস্ত হবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ওবায়দুল কাদের শাজাহান খান
মন্তব্য করুন
শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যেটি চেয়েছিলেন যে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ উপজেলা নির্বাচন হবে, যে নির্বাচনে যে যার মতো করে অংশগ্রহণ করবেন এবং সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী বিজয়ী হবেন। সে রকম একটি নির্বাচন এখন দুরাশায় পরিণত হচ্ছে। আর এই দুরাশায় পরিণত হওয়ার প্রধান কারণ হল মন্ত্রীদের ক্ষমতার লোভ, এলাকায় তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এবং কোথাও কোথাও পরিবারতন্ত্র কায়েমের আগ্রাসী মনোভাব।
শেষ পর্যন্ত খোকনের ব্যাপারে পিছু হটল বিএনপি। তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হল না। বরং চা-নাস্তার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত তিন ঘণ্টার বৈঠকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ঠিকঠাক মতো কাজ করে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তিন ঘণ্টার বৈঠকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও যুক্ত হয়েছিলেন। তারেক জিয়ার সঙ্গেও মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং তার বিরুদ্ধ পক্ষের নেতা কায়সার কামাল কথা বলেন বলে জানা গেছে।