নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৩ অগাস্ট, ২০২০
যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। আলোচিত, সমালোচিত ও বিতর্ক মাথায় নিয়ে তিনি যুবলীগ থেকে সরে গেছেন। নতুন যুবলীগের চেয়ারম্যান এসেছেন। এখন ওমর ফারুক চৌধুরীর খবর নেয় না কেউই। টেলিফোন করা হলে তিনি বলেন, তার ছোটখাট টুকটাক ব্যবসা বাণিজ্য নিয়েই তিনি ব্যস্ত। তার বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগগুলো আনা হয়েছে সেগুলো তদন্ত শেষ হয়েছে। অভিযোগের সময় যেমন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছিল, অভিযোগগুলো যখন মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, তখন আর গণমাধ্যমে এই নিয়ে কোন খবর প্রকাশিত হয়নি।
ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়েছিল। ব্যাংক হিসাব তদন্ত করে দেখা গেছে তার কাছে অপ্রত্যাশিত কোন স্ফীত অর্থ নেই। তাঁর আয় ব্যয়ের সামঞ্জস্যহীনতা নেই। এমনকি তাঁর আয়কর ফাঁকিরও কোন অভিযোগ নেই। এসব বিষয়ে তদন্ত শেষে এনবিআর রিপোর্টও দিয়েছে এবং তাঁর ব্যাংক একাউন্টও এখন পুনরায় চালু করা হয়েছে।
তাহলে ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো হয়েছিল সেই অভিযোগ গুলো সত্য নয়? কিন্তু এই অভিযোগগুলো উঠেই তাকে মিডিয়া ট্রায়াল করা হয়েছিল এবং তিনি শাস্তিও পেয়েছিলেন। কার পাপের শাস্তি পেলেন ওমর ফারুক চৌধুরী এবং কি তার অপরাধ? এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই।
আওয়ামীলীগ সরকার টানা তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় এসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করে। সেই শুন্য সহিষ্ণুতা নীতির অংশ হিসেবেই ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরু হয়েছিল গত বছর। সেই অভিযানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতিসহ আরও কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হন। এই রকম বিতর্কের মুখেই যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। নতুন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দিয়েই যুবলীগের কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় এবং শেখ ফজলে শামস পরশ যুবলীগের চেয়ারম্যান হন।
সেই সময়ে ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল। এসব অভিযোগের মধ্যে ছিল তিনি ক্যাসিনো হোতাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে তিনি টাকা পেতেন। তিনি কমিটি বাণিজ্য করেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। এই প্রেক্ষিতে তার ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয় এবং তদন্ত করা হয়। তদন্ত শেষে তার ব্যাংক একাউন্ট খুলে দেওয়া হয়েছে এবং দেখা গেছে যে তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত কোন অর্থ সম্পদ নেই।
যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর রাজনৈতিক উত্থান ধাপে ধাপে। তিনি হঠাৎ করে বনে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা নন। বলা যেতে পারে পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ। তৃণমূলের রাজনীতি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করার কাজ করেছেন। কঠিন সংকটে সবসময় আওয়ামী লীগ সভাপতির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় তিনি আলোচিত হন। ওই সময় যখন মাইনাস ফর্মুলা নিয়ে আওয়ামী লীগে সংস্কারপন্থীদের হুংকার, আহাজারি সে সময় তিনি পাদপ্রদীপে আসেন এবং আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার পুরষ্কার তিনি পান। যুবলীগের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক যখন মন্ত্রী হলেন, ওমর ফারুক চৌধুরী প্রথমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। পরবর্তীতে তিনি কাউন্সিলে যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। যুবলীগের চেয়ারম্যান হয়ে তিনি কতগুলো মৌলিক কাজ করেছিলেন। দেয়াল লিখন, ব্যানার ফেস্টুন এসব বন্ধ করে দিয়ে তিনি যুবলীগকে মেধা মননের সৃষ্টিশীল সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি যুবলীগের উদ্যোগে ক্রোড়পত্র, একশ’র বেশি প্রকাশনা বের করেছিলেন। এই প্রকাশনা ও ক্রোড়পত্রগুলো আওয়ামী লীগে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল। শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
কিন্তু যুবলীগের চেয়ারম্যান কাউকে পাত্তা দিতেন না। একমাত্র শেখ হাসিনা ছাড়া তিনি কাউকে ‘কেয়ার’ করতেন না। অন্যান্য নেতারাও তার ব্যাপারে তটস্থ থাকত। যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও তাকে সমঝে চলত, ভয় করত। প্রশাসনের অন্যান্য ক্রিয়াশীল মহলকেও তিনি আমলে নিতেন না। তাদেরকে পাত্তা দিতেন না। বরং সংগঠনের ব্যাপারে শেখ হাসিনা ছাড়া কারো কাছেই তিনি দায়বদ্ধতা দেখাননি। সেটাই কি ওমর ফারুকের পাপ? সেই পাপের সাজাই কি তিনি পেলেন? এটা ঠিক যে যুবলীগের মধ্যে দুর্বৃত্তায়ন ছিল। সম্রাট খালেদের মতো দানবরা বেড়ে উঠেছিল। প্রশ্ন হল, ওমর ফারুক চৌধুরী কি তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছিলো? ওমর ফারুক চৌধুরী কি তাদেরকে যুবলীগে এনেছিল? তারা কি ওমর ফারুকের ক্যাডার ছিল? এর উত্তর খুঁজলে দেখা যায় যে, ওমর ফারুক চৌধুরীর বাস্তবিকে কোন নিয়ন্ত্রণই ছিল না। তিনি মাঠের রাজনীতিক নেতা নন। বরং তিনি একজন সংগঠক এবং নিভৃতচারী কর্মী। আর এই কারণেই তিনি কোথায় কি ঘটছে সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে নিজের সংগঠনের ভালো কাজগুলোর দিকে মনোনিবেশ করতেন। আর এই কারণেই হয়তো সরকারের চারপাশে থাকা ক্ষমতাশালী মহলের কাছে তিনি অনভিপ্রেত হন। তারা ওমর ফারুক চৌধুরীর উপর রুষ্ট হন।
বাংলাদেশে রাজনীতিবিদদের চরিত্র হননের এক অদ্ভুত প্রক্রিয়া হয়। গণমাধ্যমে একজন রাজনীতিবিদকে চোর, দুর্নীতিবাজ কিংবা কমিটি বাণিজ্যের হোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, কিন্তু সেই অভিযোগ আসলে প্রমাণিত কিনা? শেষ পর্যন্ত সেই অপরাধগুলো আসলে তিনি করেছেন কিনা তা কেউ আর প্রমাণের চেষ্টা করে না। ওমর ফারুক চৌধুরী তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। ওমর ফারুক চৌধুরী এখন কোথায় আছেন, কি করছেন তা খোঁজ নেওয়ার কেউ প্রয়োজনবোধ করেন না। বরং তার চরিত্র হনন করে তার রাজনৈতিক জীবনের কবর রচনা করেই যেন সকলের শান্তি। ওমর ফারুক চৌধুরী হয়তো আর রাজনীতি করবেন বা করবেন না। কিন্তু এই রকম ঘটনাগুলোই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভালো মানুষকে আসতে দ্বিধান্বিত করে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ওবায়দুল কাদের শাজাহান খান
মন্তব্য করুন
শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যেটি চেয়েছিলেন যে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ উপজেলা নির্বাচন হবে, যে নির্বাচনে যে যার মতো করে অংশগ্রহণ করবেন এবং সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী বিজয়ী হবেন। সে রকম একটি নির্বাচন এখন দুরাশায় পরিণত হচ্ছে। আর এই দুরাশায় পরিণত হওয়ার প্রধান কারণ হল মন্ত্রীদের ক্ষমতার লোভ, এলাকায় তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এবং কোথাও কোথাও পরিবারতন্ত্র কায়েমের আগ্রাসী মনোভাব।
শেষ পর্যন্ত খোকনের ব্যাপারে পিছু হটল বিএনপি। তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হল না। বরং চা-নাস্তার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত তিন ঘণ্টার বৈঠকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ঠিকঠাক মতো কাজ করে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তিন ঘণ্টার বৈঠকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও যুক্ত হয়েছিলেন। তারেক জিয়ার সঙ্গেও মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং তার বিরুদ্ধ পক্ষের নেতা কায়সার কামাল কথা বলেন বলে জানা গেছে।