নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৯ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০
সিদ্ধান্তটা আকস্মিক ছিল, দুইদিন আগেও ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলির সঙ্গে কথা বলেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ভার্চুয়াল এই সাক্ষাৎকারের পর ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন যে, বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক অত্যন্ত উষ্ণ এবং আন্তরিক। রক্তের ঋণের বন্ধনে দুই দেশ আবদ্ধ। কিন্তু তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিল। এই সিদ্ধান্তটি এতোই আচমকা ছিল যে, বাংলাদেশ এর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। কারণ গত কিছুদিন ধরেই পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল। এর সতর্কতা হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একাধিক দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছিল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে আর ১৫-২০ দিন পর এই সিদ্ধান্ত নিলে বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়ত না। এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অতীতের অভিজ্ঞতায় শুরু থেকেই প্রস্তুত ছিল। বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ব্যাপারে প্রক্রিয়াও শুরু করেছিল। কিন্তু সে সমস্ত পেঁয়াজ আসার আগেই ভারতের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজারকে অস্থিতিশীল করেছে।
গত বছর একই কারণে ভারতের জন্য বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ২০০ টাকা উঠেছিলো। প্রশ্ন উঠেছে, কি কারণে হঠাৎ ভারত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করল? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে একাধিক কারণ বের হচ্ছে। যদিও ভারত থেকে বলা হচ্ছে যে, তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সংকট। তাদের দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু কূটনীতিক মহল মনে করছেন, এর পেছনে অন্য কোন কারণ রয়েছে। বিশেষ করে গত কয়েক মাস ধরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের কূটনীতিক টানাপোড়েনের কথা শোনা যাচ্ছিল। এই টানাপোড়েনের মধ্যেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশে সফরে আসেন। তিনি দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছিলেন। অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিক্রিয়া হিসেবেই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে ভারত। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এর পেছনে যে কারণগুলো থাকতে পারে বলে মনে করছে তারমধ্যে রয়েছে;
নেপালে সার রপ্তানি
ভারত সাম্প্রতিক সময়ে নেপালে সার রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। সুস্পষ্টভাবে নেপালের উপর চাপ সৃষ্টির জন্যই ভারত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ নেপাল ইতোমধ্যে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে এবং বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় ভারতের সীমান্ত খুঁটি উপড়ে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে। এটা ভারত সহজভাবে নেয়নি এবং এইজন্য ভারত নেপালে সার রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। আর এই সময়ে নেপালের প্রধানমন্ত্রী টেলিফোন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে। বাংলাদেশ থেকে সার নেওয়ার জন্য নেপালের প্রধানমন্ত্রী আগ্রহ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে নেপালকে সার দেওয়ার ব্যাপারে রাজি হন এবং এজন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও প্রদান করেন। একাধিক সূত্র বলছে যে, বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্ত ভারত পছন্দ করেনি।
চীনের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক
চীনের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কথাবার্তা হচ্ছে এবং এই নিয়ে ভারতের উদ্বেগ-উৎকন্ঠার কথা প্রায় প্রতিদিনই ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে সার্ভিলেন্স সিস্টেমের কাজটি চীনা কোম্পানির পাওয়া, সিলেট বিমানবন্দরের কাজ চীনা কোম্পানির পাওয়ার প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মধ্যে একটি শীতলতা তৈরি হয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকে।
তিস্তায় গভীর জলাধার নির্মাণ
ইতোমধ্যে চীনের সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের একটি ঋণচুক্তি করেছে বাংলাদেশ। এই ঋণচুক্তির আওতায় ভারতের সীমান্তবর্তী তিস্তার দুই পাশে গভীর জলাধার নির্মাণ করা হবে। যেখানে বর্ষা মৌসুমে পানি জলাধারে সংগ্রহ করা হবে এবং তা শুকনো মৌসুমে ব্যবহার করা হবে। এর ফলে তিস্তার পানি চুক্তি অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে এবং এই নিয়ে ভারতের উপর নির্ভরশীল থাকতে হবে না বাংলাদেশকে। একাধিক সূত্র বলছে যে, ভারতের বিভিন্ন মহল থেকে এই বিষয়ে কথা হয়েছিল এবং হর্ষ বর্ধণ শ্রিংলার বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে একটি বড় বিষয় ছিল এটা। কিন্তু এই ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারত ইতিবাচক সাড়া পায়নি।
আর এই সমস্ত কারণেই বাংলাদেশের উপর একটা চাপ সৃষ্টির জন্যে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও দুই দেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হচ্ছে যে পেঁয়াজ কূটনীতিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের কোন সম্পর্ক নেই। কারণ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করা হয়েছে ভারতের একান্তই খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্যে। এই বিষয়টি ভারতের ফরেন ট্রেডের একটি অংশ। ভারতে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্যেই এটা করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে যাই হোক না কেন, পেঁয়াজ নিয়ে যে একটা রাজনীতি আছে তা মন করে বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণ।
মন্তব্য করুন
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনেও
অংশ নিচ্ছে না নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আপাতত ভোটের
মাঠ ছেড়ে দল গোছাতে সারা দেশে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে দলটি। প্রায় এক যুগ ধরে কোণঠাসা
হয়ে থাকলেও এবার রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে চায় তারা। অবশ্য সরকারের নেতিবাচক মনোভাবের
কারণে এখনো তাদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জামায়াত নেতারা।
জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীল একাধিক
নেতা জানান, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের
খড়্গ নেমে আসে। অধিকাংশ শীর্ষ নেতাকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার ও কারাবন্দি করা হয়।
সারা দেশে কেন্দ্র, মহানগর ও জেলা পর্যায়ে ৮৭টি দলীয় কার্যালয় থাকলেও এর প্রায় সবই
বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখনো সেগুলো তালাবন্ধ অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড
জোরদার করতে ডিজিটাল মাধ্যমকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রকাশ্য কর্মসূচির সংখ্যা
বাড়ানোর দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচন
বর্জন করলেও বসে নেই জামায়াতে ইসলামী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই সারা
দেশে সংগঠন চাঙ্গা করার দিকে নজর দিয়েছে দলটি। সেই লক্ষ্যে এরই মধ্যে মহানগর, থানা
ও উপজেলা পর্যায়ে রুকন (সদস্য) সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। গত তিন মাসে সম্মেলন হয়েছে ৩০টিরও
বেশি সাংগঠনিক জেলায়।
এ ছাড়া নবাগত ও অগ্রসর কর্মীদের জন্য
কয়েকটি শিক্ষা শিবির, সহযোগী সদস্যদের সভা ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা এবং নির্বাহী পরিষদের
একাধিক সভা ও বিশেষ রুকন সম্মেলনও হয়েছে। ঈদুল ফিতরের পর চলছে ঈদ পুনর্মিলনী। সম্প্রতি
জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলসহ প্রায় সব কেন্দ্রীয় নেতা জামিনে কারামুক্ত
হওয়ায় সাংগঠনিক তৎপরতা আরও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ১৯ এপ্রিল ঢাকা মহানগর
দক্ষিণ জামায়াতের উদ্যোগে জুম, ইউটিউব ও ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে ১৫ দিনব্যাপী ঈদ পুনর্মিলনী
ও গণসংযোগ পক্ষের উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় আমির ডা. শফিকুর রহমান। এর আগে গত রমজানে
দীর্ঘ ৮ বছর পর ঢাকায় বড় পরিসরে ইফতার মাহফিল হয়েছে। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি
জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে কর্মসূচি ঘোষণারও পরিকল্পনা করছে জামায়াত। দলটির নীতিনির্ধারকরা
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও সংকট নিরসনের দাবিতে
কর্মসূচির কথা ভাবছেন বলে জানা গেছে।
২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর একাত্তরের
মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
গঠন করে সরকার। ট্রাইব্যুনালের বিচারে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকায় জামায়াতের
শীর্ষ পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের
বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে ২০১৩
সালে রায় দেন আদালত।
এরপর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন
কমিশন। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে রাজনৈতিক দল বা সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার শুরু
করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগও নেওয়া হয়।
মূলত এসব কারণে প্রায় এক যুগ ধরে রাজনীততে
কোণঠাসা হয়ে আছে জামায়াত। শীর্ষ নেতাদের বেশ কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পাশাপাশি
কেউ কেউ দেশত্যাগ করেন। একটি অংশ জামায়াত ছেড়ে নতুন দল গঠন করেন।
অনেকে আবার রাজনীতি ছেড়েছেন। এসব সত্ত্বেও
নানা কৌশলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছে জামায়াত। দীর্ঘ বিরতির পর ২০২৩ সালের ১০
জুন প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করে দলটি। এরপর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আবারও সাংগঠনিক
কর্মকাণ্ড বৃদ্ধিতে মনোযোগী হয়েছেন দলের নেতারা।
সম্প্রতি জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমির
ডা. শফিকুর রহমান এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘যতই বাধা আসুক, আমরা ইকামাতে দ্বীনের (দ্বীন
প্রতিষ্ঠার) কাজ চালিয়ে যাব। অনলাইনের পরিবর্তে আমাদের প্রকাশ্যে প্রোগ্রাম করতে হবে।
কারণ অনলাইনে আরামপ্রিয় জনশক্তি তৈরি হবে। বিজয়ের জন্য বিপ্লবী কর্মী তৈরি হবে না।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের বিপদে-আপদে পাশে
দাঁড়াতে হবে। জনকল্যাণমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। তাহলেই আমাদের দাওয়াত কার্যকর
হবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত তিন মাসে বিভিন্ন
পর্যায়ে নানামুখী সাংগঠনিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে জামায়াত। বড় জেলাগুলোতে একক সম্মেলন
করা হয়েছে। আবার উপজেলা, থানা ও ছোট জেলাগুলোর কয়েকটি একত্র করে একই জায়গায় সম্মেলন
করা হয়েছে। পাশাপাশি কর্মী প্রশিক্ষণের জন্য করা হয়েছে শিক্ষা শিবির। অগ্রসরমান ও নবাগত
কর্মীদের জন্য অনুষ্ঠিত হয়েছে সহযোগী সম্মেলন। এসব অনুষ্ঠানের কয়েকটি হয়েছে সশরীরে,
আবার কয়েকটি হয়েছে ভার্চুয়াল মাধ্যমে।
জেলা-উপজেলা ও থানা পর্যায়ে কর্মীরা
সশরীরে উপস্থিত হলেও কেন্দ্রীয় নেতারা ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন। দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত
নেতারা প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সশরীরে কিংবা ভার্চুয়ালি
অংশ নিচ্ছেন। দলটির শীর্ষ নেতারা নানাভাবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করছেন। এ ক্ষেত্রে
ডিজিটাল মাধ্যমকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
তবে জামায়াত নেতাদের দাবি, বর্তমান
রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যেই জামায়াতে ইসলামীর জনপ্রিয়তা ও
শক্তি বেড়েছে। জামায়াত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।
জানা গেছে, সারা দেশের জামায়াতের ৮৭টি
সাংগঠনিক জেলা শাখা ও কার্যালয় রয়েছে। এর প্রায় সবই বর্তমানে তালাবদ্ধ। অবশ্য উপজেলা
পর্যায়ে কোনো কোনো এলাকায় দলীয় কার্যালয় চালু রয়েছে। ২০১১ সালে ঢাকার মগবাজারে জামায়াতের
কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও পুরানা পল্টন কার্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ
সারা দেশে শতাধিক নেতাকর্মী এখনো কারাগারে আছেন। দীর্ঘ প্রায় ১৫ মাস পর গত ১১ মার্চ
কারামুক্ত হন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তার আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ছাড়া পান সেক্রেটারি
জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। প্রায় আড়াই বছর পর ছাড়া পেয়েছেন নায়েবে আমির মাওলানা
রফিকুল ইসলাম খান। ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিনসহ আরও বেশকিছু নেতাকর্মী
কারামুক্ত হয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) জামায়াতে
ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের
পতনের আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের নেতাকর্মীরা হামলা-মামলায় জর্জরিত। এখনো শতাধিক নেতাকর্মী
কারাগারে বন্দি। কয়েকদিন আগেও রাজশাহীতে ১০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সার্বিক
পরিস্থিতি বিবেচনায় উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে সারা
দেশে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে কর্মী
শিবির, শিক্ষা শিবির, অগ্রসরমান কর্মীদের নিয়ে সেমিনারসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রম
চলছে।’
মন্তব্য করুন
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার
মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে ফোরামের সিদ্ধান্তের
বাইরে গিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র
সহ-সভাপতির পদ থেকে খোকনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ নিয়ে ফোরামে দেখা দেয় বিভক্তি।
উদ্ভূদ্ধ পরিস্থিতিতে সৃষ্ট জটিলতা আপাতত নিষ্পত্তি করেছে বিএনপি।
তবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি
পদে খোকন দায়িত্ব পালন করবেন কিনা সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দলটির
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাতে বিএনপি
চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের
উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের বৈঠক হয়। ওই বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন নেতা বলেন, একটি
সুষ্ঠু সমাধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে, এ ইস্যুতে এখন থেকে গণমাধ্যমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের
কথা বলতে বারণ করা হয়েছে।
সূত্রমতে, বৈঠকে ব্যারিস্টার মাহবুব
উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল (বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী
আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব) নিজ নিজ অবস্থান থেকে যুক্তি-পাল্টা যুক্তি তুলে ধরেন। বৈঠকের
শেষ পর্যায়ে মাহবুব উদ্দিন খোকন ও কায়সার কামাল একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ
প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ করেন। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে আপাতত কোন্দ্বল নিরসন হয়েছে
বলে মনে করছেন বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা। পরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বৈঠকের
সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
বৈঠকে উপস্থিত একজন আইনজীবী নেতা আরও বলেন, এখন মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক
ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি-না এবং তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে দায়িত্ব
পালন করবেন কি-না সে সিদ্ধান্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেবেন।
এদিন বিকাল ৫টা থেকে ৮টা পর্যন্ত বৈঠকে মহাসচিব ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু
মাহমুদ চৌধুরী, ড. আবদুল মঈন খান এবং আইনজীবীদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই
রায় চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আযম খান উপস্থিত ছিলেন।
মাহবুব উদ্দিন খোকন ইস্যুতে বিএনপির
উচ্চপর্যায়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। গত সোমবার দলের স্থায়ী কমিটিতেও দুই ধরনের ভাষ্য
পাওয়া গেছে। বিএনপির সিনিয়র নেতা ও সিনিয়র আইনজীবীদের একাংশ খোকনকে জাতীয়তাবাদী
আইনজীবী ফোরাম থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনায় বিব্রত।
তারা মনে করেন, খোকনের মতো জনপ্রিয়
আইনজীবী নেতা এখন আর দলে নেই। তাকে অব্যাহতি দেওয়ার মাধ্যমে যাদের উৎসাহিত করা হয়েছে
তাদের আইন অঙ্গণে গ্রহণযোগ্যতা কম। আবার কারো কারো মত ছিল, দলের কেউ দলীয় স্বার্থের
ঊর্ধ্বে নয়। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনসহ যেকোনো বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত যারা
অমান্য করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খোকনের বিরুদ্ধে কেনো
ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের একটি অংশ খোকনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নিতে জনমত গঠনে আদালত পাড়ায় কাজ করেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে গত বুধবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান
তারেক রহমান আইনজীবী নেতাদের সঙ্গে ওয়ান টু কথা বলেন। আইনজীবী নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে
বৃহস্পতিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে মহাসচিব সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক
করেন। এ বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বিষয়টি এতোদিন ছিল জাতীয়তাবাদী
আইনজীবী ফোরামের, এখন তা বিএনপি টেকওভার করেছে। এই ইস্যুতে এখন সিদ্ধান্ত দেবেন দলের
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার
মাহবুব উদ্দিন বলেন, ‘ফোরামের তো গঠনতন্ত্রই নেই। সে (কায়সার কামাল) কীভাবে বহিষ্কার
করে? তার ক্ষমতা আছে বহিষ্কার করার? যে পর্যন্ত গঠনতন্ত্র না হবে, সে পর্যন্ত কাউকে
বহিষ্কার করা যাবে না। যত বহিষ্কার করা হয়েছে, তা আইনত কার্যকর নয়।’
এ সময় তিনি কায়সার কামালের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেও কথা বলেন। এর আগে গত শনিবার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ থেকে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে অব্যাহতি দেয় সংগঠনটি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি
চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার
সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠকে তিনি দলের সার্বিক বিষয়ে দলীয় প্রধানকে অবগত করেছেন।
বৃহস্পতিবার
(২৫ এপ্রিল) রাতে চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাত ৮টা
২০ মিনিটে খালেদা জিয়ার বাসভবনে প্রবেশ করেন বিএনপির মহাসচিব। রাত সোয়া ৯টার দিকে
তিনি বের হয়ে আসেন।
বিএনপির
মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ
তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতেই মির্জা ফখরুল ফিরোজায় গিয়েছিলেন। তবে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া তারেক জিয়া বিএনপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
মন্তব্য করুন
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আপাতত ভোটের মাঠ ছেড়ে দল গোছাতে সারা দেশে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে দলটি। প্রায় এক যুগ ধরে কোণঠাসা হয়ে থাকলেও এবার রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে চায় তারা। অবশ্য সরকারের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে এখনো তাদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জামায়াত নেতারা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে ফোরামের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ থেকে খোকনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ নিয়ে ফোরামে দেখা দেয় বিভক্তি। উদ্ভূদ্ধ পরিস্থিতিতে সৃষ্ট জটিলতা আপাতত নিষ্পত্তি করেছে বিএনপি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুজনই দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা বিএনপি পরামর্শ দিয়ে আসছেন এমন গুঞ্জন দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কখনও মুখ খুলেননি বিএনপির কেউই। তবে এবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি জানিয়েছেন বিএনপি থেকে বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়াকে বাদ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে দল ভাবছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে দলের এমন ভাবনার কথা জানান বিএনপির এই নেতা।