নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৫৮ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০
ভারতের কাছে দেন-দরবার চেয়ে কোন লাভ হয় না। বরং ভারত যেভাবে চাপ সৃষ্টি করে সেই বিষয়ে স্বাবলম্বী হয়ে পাল্টা চাপ সৃষ্টি করার কৌশলই হল ভারতের সাথে সম্পর্ক রাখার ভালো উপায়। এটা মনে করেন বাংলাদেশের অনেক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ এবং গবেষকরা। বেশি দিন আগের কথা না, এক যুগ আগেও ভারতের গরুর উপর বাংলাদেশের কোরবানি নির্ভর করত। প্রতি বছর কোরবানি এলেই ভারত গরু দিবে কি দিবে না- এই নিয়ে শঙ্কা দ্বিধা এবং আতঙ্ক কাজ করত। মাঝে মাঝেই ভারত বাংলাদেশের গরু রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করত, অযাচিত কারণে। ফলে বাংলাদেশের কোরবানিতে সংকট দেখা দিত।
আমরা যদি একটু পেছনে ফিরে তাকাই দেখব, ২০০৪/২০০৬ সালে ঈদুল আযহায় বাংলাদেশে কোরবানির গরুর সংকট দেখা দিয়েছিলো ভারতের অযাচিত সিদ্ধান্তের কারণে। সে সময় ভারত বাংলাদেশে গরু প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করেছিলো এবং সীমান্তগুলোতে কঠোর নজরদারি রেখেছিল। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণ করার পর মৎস্য এবং প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়কে দিয়ে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এই মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবেই বাংলাদেশে গরুর উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে আলাদা নজর দেওয়া হয়। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের বাইরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরদারির মধ্যে ছিল। সারা দেশে ক্ষুদ্র, মাঝারি, বড় খামার তৈরি করা, পশু পালনে উৎসাহি করা প্রণোদনা দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত তদারকি শুরু করেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই কাজে সহযোগিতা করেছিলেন তৎকালীন কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রীকে বেগম মতিয়া চৌধুরী কিভাবে গরুতে স্বাবলম্বী হওয়া যায় সে ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছিলেন। আর এই সমস্ত পরামর্শ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন উদ্ভাবনী চিন্তার ফলে বাংলাদেশে একটি নীরব গরু বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে। গত চার থেকে পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশে কোরবানির জন্য ভারতের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে না।
ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক ‘দ্যা টেলিগ্রাফ’ এ বছরের জুলাই মাসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলেছে, বাংলাদেশে গরু রপ্তানি বন্ধের প্রেক্ষিতে ভারতের প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার কোটি রুপি ক্ষতি হচ্ছে। কারণ শুধু কোরবানি নয়, প্রতিদিনের আমিষের চাহিদা মেটাতেও ভারতের গরুর উপর নির্ভর ছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে গরু নিয়ে কম গরু বানায়নি ভারত। বিভিন্ন সময়ে কারণে-অকারণে গরু রপ্তানি বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের মানুষকে নাকানি-চুবানি খাওয়ানোর এক অদ্ভুত গ্রাম্য কূটনৈতিক কৌশল অবলম্বন করত ভারত প্রায় সবসময়ই।
আর ২০১২ সালের পর থেকে বাংলাদেশ পশু উৎপাদনে আস্তে আস্তে স্বাবলম্বী হয়ে উঠে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ প্রথম ঘোষণা করে যে, বাংলাদেশে কোরবানি বা প্রাণীজ আমিষের চাহিদা জন্য ভারতীয় গরুর দরকার নেই। বাংলাদেশই এখন কঠোরতা আরোপ করছে সীমান্তগুলোতে। কারণ বাংলাদেশের দেশীয় খামারিরা যেন তাদের পশুর ন্যায্য মূল্য পান, সেটি নিশ্চিত করার জন্যই সীমান্ত অঞ্চলে এখন বাংলাদেশই উল্টো কড়াকড়ি আরোপ করেছে।
ভারতের প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, বাংলাদেশে ভারতের গরুর চাহিদা কমে যাওয়ায় ভারতের গো-ভবিষ্যৎ সংকটে পড়েছে বলে তারা মনে করছেন। বিশেষ করে বলদ, ষাঁড়গুলো বয়স শেষ হলে বা পশু মৃত্যুর পর তাদের যথা বিহিত ব্যবস্থা করা ভারতের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রাণী সম্পদ বিভাগের হিসেব অনুযায়ী, এটি করতে গিয়ে ভারতকে বছরে প্রায় সাড়ে সাতশ’ কোটি টাকা গুনতে হচ্ছে। কারণ ভারতের আইন অনুযায়ী গো জবাই নিষিদ্ধ। এ রকম বাস্তবতায় ভারত এখন গরু নিয়ে উল্টো বিপদে পড়েছে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে গিয়ে।
একই রকম অবস্থা পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার প্রথম দফায় পেঁয়াজের পরই বাংলাদেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং স্বাবলম্বী করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এবার প্রধানমন্ত্রীর সহযোগী হিসেবে আছেন কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। আর এই বাস্তবতায় সারা দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের প্রণোদনা এবং পেঁয়াজের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ যেন পেঁয়াজ উৎপাদন করে। সেইসাথে পেঁয়াজের মজুত এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কৃষি মন্ত্রণালয় এখন এটি নিয়ে কাজ করছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, হয়তো এক বছর কিংবা সর্বোচ্চ দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশ পেঁয়াজে স্বাবলম্বী হবে। তখন ভারতের পেঁয়াজের দিকে আর তাকিয়ে থাকতে হবে না। পেঁয়াজে বাংলাদেশ ভারতকে গরুর শিক্ষাই দেবে। বাংলাদেশের একটা অদ্ভুত বিষয় হল যে, বাংলাদেশ যখন কোন একটা সংকটে পরে সেই সংকট থেকে বাংলাদেশ শিক্ষা নেয়। শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যায়। গরুর পর পেঁয়াজ নিয়ে বাংলাদেশ এখন যে সংকটে পড়েছে। সেই সংকট থেকে বাংলাদেশ নিজেকে স্বাবলম্বী করেই সংকট মোকাবেলা করবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও কৃষিবিদরা।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ওবায়দুল কাদের শাজাহান খান
মন্তব্য করুন
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি তারেক জিয়া শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যেটি চেয়েছিলেন যে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ উপজেলা নির্বাচন হবে, যে নির্বাচনে যে যার মতো করে অংশগ্রহণ করবেন এবং সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী বিজয়ী হবেন। সে রকম একটি নির্বাচন এখন দুরাশায় পরিণত হচ্ছে। আর এই দুরাশায় পরিণত হওয়ার প্রধান কারণ হল মন্ত্রীদের ক্ষমতার লোভ, এলাকায় তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এবং কোথাও কোথাও পরিবারতন্ত্র কায়েমের আগ্রাসী মনোভাব।
শেষ পর্যন্ত খোকনের ব্যাপারে পিছু হটল বিএনপি। তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হল না। বরং চা-নাস্তার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত তিন ঘণ্টার বৈঠকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ঠিকঠাক মতো কাজ করে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তিন ঘণ্টার বৈঠকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও যুক্ত হয়েছিলেন। তারেক জিয়ার সঙ্গেও মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং তার বিরুদ্ধ পক্ষের নেতা কায়সার কামাল কথা বলেন বলে জানা গেছে।