নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৩ জুলাই, ২০২১
আজ তাজউদ্দীন আহমদের ৯৬তম জন্মদিন। ১৯২৫ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। বেঁচে থাকলে তিনি ৯৬ বছর পূর্ণ করতেন। তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে সৎ, জ্ঞানী এবং পরিশীলিত একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। তবে তার সবচেয়ে বড় পরিচয় ছিল তিনি বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ একজন কর্মী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তার ওপর নির্ভর করতে পারতেন। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার জন্য একটি গণজাগরণ তৈরি করেছিল। সেই গণজাগরণের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যারা চারপাশ থেকে সহযোগিতা করেছে, বিশ্বস্ত থেকে বঙ্গবন্ধুকে বিকশিত হওয়ার পথ উন্মুখ করে দিয়েছে, আগাছা পরিস্কার করেছে তাদের মধ্যে অবশ্যই তাজউদ্দীন আহমদ অন্যতম। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুকে যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গ্রেফতার করে নিয়ে যায় তখন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী তাজউদ্দীন আহমদ মুজিবনগর সরকার পরিচালনা করেছেন। যে সরকারের হাত ধরে আমাদের স্বাধীনতা এসেছে।
বঙ্গবন্ধু তাজউদ্দীনকে যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছিলেন সেই নির্দেশনাগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। তাজউদ্দীন আহমদ সম্পর্কে সবচেয়ে বড় কথা বলা হয় যে তিনি একজন পন্ডিত ব্যক্তি ছিলেন এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতিবিদ ছিলেন। তার আদর্শের ব্যাপারে তিনি ছিলেন অটল। আর এ কারণেই স্বাধীনতার পর পঁচাত্তরের খুনিরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাজউদ্দীনকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন। মন্ত্রিসভা থেকে শুধু বাদই পড়েনি তাজউদ্দীন তাকে রাজনীতি থেকেও তিনি একরকম নিষ্ক্রিয় ছিলেন। কিন্তু পঁচাত্তরের খুনিরা ভুল করেনি। তারা জানত যে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জাতীয় চার নেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। এজন্য ৭৫ এর ৩ নভেম্বর জেল খানায় হত্যা করা হয় এই জাতীয় চার নেতাকে। তার মধ্যে তাজউদ্দীন ছিলেন অন্যতম। তাজউদ্দীন একজন পন্ডিত ছিলেন শুধু তাই নয় তিনি একজন রাজনীতিতে নেপথ্যের মানুষ ছিলেন। তিনি সামনে আসতেন না পেছন থেকে কাজগুলো করতেন। আজকে পেছনে ফিরে তাকালে বোঝা যায় যে, একটি দেশের মুক্তির জন্য তাজউদ্দীন আহমদের মতো একজন মানুষের বড্ড প্রয়োজন এবং মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু তাজউদ্দীনের মতো লোকদেরকে পাশে নিয়েছিলেন বলেই তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে পেরেছিলেন।
আজকে এত বছর পর তাজউদ্দীনের জন্মদিনে আমরা যদি জাতির পিতার ইতিহাস বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব যে বঙ্গবন্ধুর একটা বিশ্বস্ত নেতৃত্ব বাহিনী তৈরি করেছিলেন। যেই নেতারা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনাগুলো প্রতিপালনের জন্য কাজ করেছিলেন। যারা রাজনৈতিকভাবে বিচক্ষণ দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন এবং যেকোনো রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন ছিলেন। বঙ্গবন্ধু স্তরে স্তরে নেতৃত্বের উপরিকাঠামো সাজিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবচেয়ে সুসময় পার করছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা ১২ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক ইতিহাসে কখনো এত সুস্থিত সময় পার করেনি। আর এ কারণেই এখন প্রশ্ন উঠেছে যে, আওয়ামী লীগ যদি সামনে কোনো সংকটে পড়ে তাহলে আওয়ামী লীগের তাজউদ্দীন কে হবে? একাত্তরে যেমন তাজউদ্দীন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে প্রতিপালন করেছিলেন। দেশ স্বাধীন করার জন্য সর্বাত্মক যুদ্ধের অনন্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। এখন শেখ হাসিনার সেরকম একজন তাজউদ্দীন আছে কি?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন শেখ হাসিনাই হলেন প্রধান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং শুধু আওয়ামী লীগের নয় সারা দেশে একমাত্র রাজনৈতিক নেতা যার জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। কিন্তু প্রশ্ন হলো যে, শেখ হাসিনা কি একা? তাকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য তাজউদ্দীনের মত তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করার জন্য পেছন থেকে কাজ করার মতো কোনো নেতা কি আওয়ামী লীগে আছে? এরকম নেতা যদি না থাকে তাহলে সংকটে শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করবেন কে? রাজনীতিতে একজন নেতার অবশ্যই দরকার। কিন্তু তার চারপাশে থাকা দরকার যোগ্য সহযোগী। যে সহযোগীরা নেতাকে বিপদসংকুল পরিস্থিতি থেকে বাঁচাবে। যেই সহকর্মীরা নেতাকে সঠিক পরামর্শ দেবে। সেরকম নেতা কি এখন আওয়ামী লীগে আছে?
মন্তব্য করুন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।