নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৯ এএম, ১৩ অক্টোবর, ২০২১
খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি তিনি। তার ছেলে লন্ডনে পলাতক তারেক রহমান এখন দল চালাচ্ছেন। পাশাপাশি দীর্ঘদিন দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে দূরে তিনি। এ ছাড়া দুর্নীতির দুটি মামলায়ও দণ্ডিত। বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের অনুরোধে, সরকারের অনুকূল্যে ৪ দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে এখন জামিনে আছেন তিনি। বয়সও হয়ে গেছে। দেশ ছাড়ার ইচ্ছাও জানিয়েছেন পরিবারকে। বিএনপির অনেক নেতাই মনে করছেন, বেগম খালেদা জিয়ার ইমেজ রাজনৈতিক অঙ্গণে ক্ষুণ্ণ হয়ে গেছে। চিকিৎসা ও বেঁচে থাকাকেই তিনি ও তার পরিবার এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। ফলে বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিক অঙ্গণে মৌলকভাবে থাকতে পারবেন, কি পারবেন না সে আলোচনা দলের ভেতরসহ রাজনৈতিক মহলে চলছে।
খালেদা জিয়ার রাজনীতির মাঠে আসাটাকেই অনেকে অঘটন মনে করেন। ছোট বেলা তো অনেক দূরে, ১৯৮১ সালে যখন জিয়াউর রহমান নিহত হন, তখনও খালেদা জিয়া নিতান্তই গৃহীণী। রাজনীতি নিয়ে চিন্তাধারা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক কোনো অনুষ্ঠান, কোথাও তার উপস্থিতি ছিল না। তার ভাষায়- ‘রাজনীতি আমি বুঝতাম না।’ ৩রা জানুয়ারি ১৯৮২। জিয়ার মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতি হন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। এরপর তাকে হটিয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। সেসময় দলীয় কোন্দল, অনেক নেতার এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগদানের ফলে ছত্রভঙ্গ, বিপর্যস্ত এবং দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল। দল টিকিয়ে রাখাতে তৎকালীন বিএনপির সিনিয়র কিছু নেতার অনুরোধে এক পর্যায়ে বাধ্য হয়েই ১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে রাজনীতিতে আসেন খালেদা জিয়া।
রাজনীতিতে আসার ১০ বছরের মধ্যেই ১৯৯১ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান খালেদা জিয়া। ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি বিএনপির অধীনে একটি কলঙ্কিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে অল্প সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ঘটনা বাদ দিলে খালেদা জিয়া দুই বার পূর্ণ মেয়াদে সরকার পরিচালনা করেছেন। তবে এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অধ্যায় হয়তো শেষের পথেই বলে মনে করা হচ্ছে। তার মুক্তি নিয়ে কিছুই করতে পারেনি দলের নেতারা। দলের কার্যত ভূমিকার কারণসহ নানা কারণে তার রাজনৈতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজনৈতিক নেতা জেলে গেলে অনেক সময় আরও বিকশিত হন, আরও বড় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। উপমহাদেশের বহু বিখ্যাত নেতাদের কপালে কারাবাস জুটেছিল। নেহেরু জেলে ছিলেন বলে রচিত হয়েছিল ‘লেটারস টু ডটার’, কারাগার প্রধান হয়ে গিয়েছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। কিন্তু খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে তার দল কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না। ঢাকার রাজপথে কোনো আন্দোলনই গড়ে তুলতে পারেনি বিএনপি। সরকারের কঠোর অবস্থান, নেতাদের অনেকের বিক্রি হয়ে যাওয়া এক্ষেত্রে নিয়ামক শক্তির ভূমিকা পালন করেছে। দুর্বল সংগঠন, সিদ্ধান্তহীনতা আর সিদ্ধান্তে স্থির থাকতে না পারাও এখন বিএনপির নৈমিত্তিক বিষয়। ফলে খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফেরাটা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
দেশের অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক খালেদা জিয়ার শাসন আমল, ১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ -- এই দুইভাগে ভাগ করেন। তারা মনে করেন, দুই ভাগে ভাগ করলে খালেদা জিয়ার বিবর্তনগুলো সহজে বুঝা যাবে। ৯১ পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে খুনের রাজনীতি থাকার কথা ছিল না। এই খুনের রাজনীতি নতুন করে চালু করেন খালেদা ও তারেক রহমান। যেখানে ৯১-এ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালুর পরে জামায়াতের রগকাটা, চাপাতি কোপের রাজনীতিও সকল গণতান্ত্রিক দল মিলে বন্ধ করা উচিত ছিল, সেখানে এই রগকাটা, চাপাতি ও চাইনিজ কুড়ালের রাজনীতি ফুলে-ফেঁপে বেড়ে উঠতে দিল খালেদা জিয়া ও তারেক। তাই ৯১ পরবর্তীতে খুনের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার যে বিষয়টি সম্মিলিতভাবে হওয়ার কথা ছিল, সে আলোচনা আজো চলছে। অন্যদিকে, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তারেক রহমানকে অতি দ্রুততার সাথে দলের শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে আসা এবং ২১শে অগাস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার বিষয়টি বিএনপির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ ছাড়া ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় দলের সিনিয়র অনেক নেতার সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি হয়েছিল খালেদা জিয়ার। তারই একটি ফলাফল হিসেবে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বিদায় নিতে হয়েছিল।আর ক্ষমতার মেয়াদের একেবারে শেষের দিকে দল ছেড়ে গিয়েছিলেন অলি আহমদ, যিনি এক সময় খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে আনার জন্য ভূমিকা রেখেছিলেন। আর ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর খালেদা জিয়া গ্রেফতার হবার আগে মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুঁইয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করেন।
খালেদা জিয়া যখন রাজনৈতিকভাবে নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছিলেন, তখন ২০১৫ সালে ছোট ছেলে আরাফাত রহমানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তার পারিবারিক ট্র্যাজেডিও ঘটে। আর এখন তিনি নিজেই হাসপাতালের বিছানায়। আর এর মধ্য দিয়েই খালেদা জিয়ার রাজনীতির অধ্যায় শেষ হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
মন্তব্য করুন
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ (শনিবার) সকালে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
কাদের বলেন, বিএনপি দাসত্ব করে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য, জনগণকে মূল বিষয় হিসেবে মনে করে না। বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করলে ক্ষমতায় যাওয়া যায়? এখনো তাদের দুরভিসন্ধি হচ্ছে বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করে কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায়?
তিনি আরও বলেন, বিএনপিকে গণতান্ত্রিক দল মনে করি না। তাদের ইতিহাসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো নজির নেই। তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, প্রহসনে পরিণত করেছে। গণতান্ত্রিক বিধিবিধান তারা দলের মধ্যেও কোনো দিন
মানেনি। তারা বড় বড় কথা বলে, তারা কবে দলীয় কাউন্সিল করেছে? তারা কোথায় দলীয় কাউন্সিল করেছে? ৭-৮ বছর আগে লা মেরিডিয়ানে কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এ দেশে সাধারণ মানুষের মাঝে যারা রাজনীতিকে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে জাতীয় নেতা শেরে বাংলা ছিলেন অন্যতম। সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেরে বাংলাকে গ্রাম বাংলার কৃষকরা কোনোদিনও ভুলতে পারবে না। তিনি চিরদিন তাদের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। প্রজাসত্ব ও ঋণ সালিশি বোর্ড গঠন করে সুদ খোর মহাজনদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করেছেন, তিনি সে জন্য এখনও স্মরণীয় হয়ে আছেন।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আজ আমাদের অঙ্গীকার বঙ্গবন্ধু, সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা লড়ে যাচ্ছি মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে। সেটাই শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের স্বপ্ন এবং সেটা আজ আমাদের অঙ্গীকার।
ওবায়দুল কাদের ক্ষমতায় বিদেশি দাসত্ব বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যেটি চেয়েছিলেন যে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ উপজেলা নির্বাচন হবে, যে নির্বাচনে যে যার মতো করে অংশগ্রহণ করবেন এবং সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী বিজয়ী হবেন। সে রকম একটি নির্বাচন এখন দুরাশায় পরিণত হচ্ছে। আর এই দুরাশায় পরিণত হওয়ার প্রধান কারণ হল মন্ত্রীদের ক্ষমতার লোভ, এলাকায় তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এবং কোথাও কোথাও পরিবারতন্ত্র কায়েমের আগ্রাসী মনোভাব।
শেষ পর্যন্ত খোকনের ব্যাপারে পিছু হটল বিএনপি। তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হল না। বরং চা-নাস্তার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত তিন ঘণ্টার বৈঠকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ঠিকঠাক মতো কাজ করে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তিন ঘণ্টার বৈঠকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও যুক্ত হয়েছিলেন। তারেক জিয়ার সঙ্গেও মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং তার বিরুদ্ধ পক্ষের নেতা কায়সার কামাল কথা বলেন বলে জানা গেছে।