নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০৫ পিএম, ২৭ জুলাই, ২০১৯
সম্প্রতি ‘দিন যায় কথা থাকে’ -শিরোনামে এক পোস্টে ইফতেখার আমিন সেবা প্রকাশনী এবং কাজী আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে বেশ কিছু কথা তুলে ধরেন। এবার সেই কথার জের ধরেই ইফতেখার আমিনের সাথে সহমত পোষণ করে আরও একটি পোস্ট নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় মাসুদ রানা এবং কুয়াশা সিরিজের লেখক শেখ আব্দুল হাকিম। দীর্ঘ সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসে আব্দুল হাকিম তুলে ধরেন কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে তার বিভিন্ন বিষয়ে মনমালিন্য হওয়ার কথা। বাংলা ইনসাইডার- পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো আব্দুল হাকিমের সেই দীর্ঘ স্ট্যাটাস
ইফতেখার আমিন সাহেবকে অজস্র ধন্যবাদ। সম্প্রতি ‘দিন যায় কথা থাকে’-শিরোনামে এক পোস্টে তিনি সেবা প্রকাশনী এবং কাজী আনোয়ার হোসেন সাহেবকে নিয়ে যা কিছু লিখেছেন তা বর্ণে বর্ণে সত্যি।
কাজী সাহেব আমাদের মতো লেখকদের বেআইনিভাবে শোষণ করছেন, এই কথাটা বেশ ক’বছর আগেই কপিরাইট অফিসকে আমি লিখিত ভাবে জানিয়েছি। তবে দেশের মানুষকে কখনো কিছু জানাইনি। তা না জানানোর মূল কারণ ছিলো নিজে বই লিখে অন্য একজনের নামে ছাপতে দেয়াটা সম্মানজনক বলে কখনো মনে হয়নি আমার। এই বোধ আমাকে সব সময় কষ্ট দিয়েছে, নিজেকে আমার মানুষ হিসেবে খুব ছোট বলে মনে হয়েছে, এবং তার পরিণতিতে আমার ভেতর নিজেকে লুকিয়ে রাখার একটা মনোবৃত্তি তৈরি হয়ে যায়, আমি সব সময় সব কিছু থেকে পালিয়ে থাকতে পারলেই স্বস্তি বোধ করেছি। আর এ কারণে বিভিন্ন চ্যানেল থেকে আমার সাক্ষাৎকার নিতে চাইলেও আমি কখনো তা দিইনি, ওদেরকে আমি সবিনয়ে জানিয়েছি যে এত প্রচার পাবার যোগ্য মানুষ আমি নই।
আজও আমার মনে পড়ে এটিএন-এর জনপ্রিয় উপস্থাপিকা মুন্নি সাহা আমাকে ফোন করে যখন বললেন তিনি পুরো টেকনিক্যাল টিম নিয়ে আমার বাড়িতে চলে আসছেন আমার সাক্ষাৎকার নিতে, আমি তখন তাঁকে বলেছিলাম, যে মানুষ নিজের নামে মাত্র গোটা দশ-বারো বই লিখল, আর চারশর ওপর বই লিখল আরেক মানুষের নামে, তার কি নিজেকে নিয়ে গর্ব করার মতো কিছু বলার থাকে? দেশ এবং মানুষের জন্যে ত্যাগ আর অবদান আছে এমন ব্যক্তি সমাজের নানা স্তরে আপনি অনেক খুঁজে পাবেন, আমাকে বাদ দিয়ে তাদের কাছে যান, আমি এমন কিছু নই যে দুনিয়ার মানুষকে সেটা জানাতে হবে।
বেশ অনেক বছর হলো আমার সিওপিডি হয়েছে, মাঝে মধ্যে শ্বাসকষ্ট মারাত্মক হয়ে ওঠে। আমি ২৬০টার বেশি মাসুদ রানা লিখেছি, কুয়াশা সিরিজের বই লিখেছি ৪০ কি ৪২টা, আরও লিখেছি নিজেকে জানো সিরিজের গোটা দুই-তিন বই, রহস্যোপন্যাস গোটা আটেক, জুল ভার্নও পাঁচ-সাতটা অনুবাদ করেছি, সবই হয় কাজী আনোয়ার হোসেনের নামে, নয়তো তাঁর নিজের পছন্দের কোনো ছদ্মনামে (যেমন, বিদ্যুৎ মিত্র), তবে এসব বইয়ের একটারও কপিরাইট আমি কাজী সাহেবের কাছে বিক্রি করিনি।
আমাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কপিরাইট অফিস অনেক বার কাজী সাহেবকে সশরীরে উপস্থিত হতে বলা সত্ত্বেও একবারও তিনি আসেননি, তার বদলে চিঠির মাধ্যমে আমার দাবি অস্বীকার করতে গিয়ে বলেছেন আমি একটাও মাসুদ রানা লিখিনি, বই লেখার কোনো ক্ষমতাই আমার নেই। এটা শুনে সত্যি আমার হাসি পেয়েছিল। হাসি পাওয়ার কারণ, আমি যে মাসুদ রানা লিখছি, এটা এত বেশি মানুষ জানতেন যে সেটা ছিলো ওপেন সিক্রেট। যারা জানতেন তাঁদের মধ্যে সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিল্পী হাশেম খান আছেন ( আমার যদি ভুল না হয় তিনি সম্ভবত আমার লেখা মাসুদ রানার প্রচ্ছদও এঁকেছেন ), আছেন ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ার কবির, স্বনামধন্য ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, সাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরি, স্নেহের আলিম আজিজ, সাহিত্যিক এবং কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, শিল্পী ধ্রুব এষ, সাপ্তাহিক বিচিত্রা সম্পাদক প্রয়াত শাহাদত চৌধুরি, প্রয়াত কবি শহীদ কাদরীসহ সমাজে নিজ মেধার গুণে প্রতিষ্ঠিত আরও বহু ব্যক্তি।
কাজী সাহেব একটা চুক্তিপত্রও দেখাতে পারবেন না যে আমি তাঁকে লিখিতভাবে কপিরাইট অধিকার দিয়েছি যার বলে তিনি আমার লেখা একেকটা বই দশবার-বিশবার রিপ্রিন্ট করে গত চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে সম্পদের পাহাড় গড়বেন। প্রথম প্রথম কুয়াশা লিখলে দু’শ টাকা করে দিতেন তিনি। তারপর তিনশ করে। সেটা ষাটের দশকে। মনে পড়ছে, ওই সময় বাইরের লেখক বলতে সেবা প্রকাশনীতে আমি একাই ছিলাম। শত চেষ্টা করেও কাজী সাহেব দেড়-দুই যুগ আমার বিকল্প লেখক খুঁজে বের করতে পারেননি। তিন গোয়েন্দার জনপ্রিয় লেখক রকিব হাসানকে আমিই সেবা প্রকাশনীতে নিয়ে গেছি ( মাসিক কিশোর আলোয় ছাপা এক সাক্ষাৎকারে তিনিও স্বেচ্ছায় প্রকাশ করেছেন যে ততদিনে আমার দেড়শর মতো মাসুদ রানা লেখা হয়ে গেছে)। তখন সবকিছু সস্তা ছিল, আমার বোঝাও ছিলো অনেক কম, মাসে গোটা দুয়েক বই লিখতে পারলে দিন বেশ ভালোই চলে যেত। তারপর যখন মাসুদ রানা লেখা শুরু করি, প্রতি বইয়ের জন্যে আমাকে পাঁচশ টাকা দেয়া হত। এটা বাড়তে বাড়তে এক সময় নয়শ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
এরমধ্যে বনিবনা না হওয়ায় আমি দু’বার সেবা ছেড়ে চলে এসেছি। একবার কাজী সাহেব নিজে আমাদের মিরপুরের বাসায় গিয়ে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আমাকে নিয়ে আসেন, পরের বার সেবার জেনারেল ম্যানেজার কুদ্দুস সাহেবকে পাঠিয়ে ধরে নিয়ে গেছেন। তারপর আগামী প্রকাশনীর ওসগান গণি সাহেব, সালাউদ্দিন বইঘরের সালাউদ্দিন ভাইয়ের মধ্যস্থতায় আমাকে নিয়ে সেবায় মিটিং হয়। কাজী সাহেব কথা দেন এবার থেকে প্রতিটা মাসুদ রানার জন্য আলাদা আলাদা চুক্তি হবে এবং আমি প্রতিটা বইয়ের রিপ্রিন্টের টাকা পাবো।
আমি সেই মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলাম একাধিক কারণে। প্রথমত প্রকাশনা ব্যবসার দুই দিকপাল ছিলেন আমাদের চুক্তির (অলিখিত যদিও) সাক্ষী। কাজী সাহেব যে তাঁদেরকেও বোকা বানাবেন এবং আমার প্রাপ্য টাকা শেষ পর্যন্ত মেরে দেওয়ার চেষ্টা করবেন, এমন সম্ভাবনার কথা কখনোই আমার মাথায় আসেনি। লেখালেখি ছাড়া অন্য কোনো কাজ জানতাম না (আজও জানি না), এবং সেবায় লিখে যা পেতাম তাতে সংসার মোটামুটি চলে যেত। তাই কত পেলাম হিসেব না করে চোখকান বুজে লিখে যেতে থাকি। টাকার বেশি প্রয়োজন পড়লে পান্ডুলিপি জমা দিলে কাজী সাহেব ১০/১২ হাজার করে টাকা দিতেন। তবে সেগুলোর হিসেব এক খাতায় তুলতেন। আর যেগুলো জমা দিয়ে টাকা নিতাম না, সেগুলোর হিসেব উঠত অন্য খাতায়। সেরকম বই অবশ্য কমই আছে। তাই থাকার কথা। কেননা শুরু থেকেই আমি পেশাদার লেখক, এবং সংসারী। এক মাস বা তারও একটু বেশি সময় নিয়ে লিখে পান্ডুলিপি জমা দিতাম, এর মধ্যে সংসারের খরচ তো থেমে থাকত না। টাকার প্রয়োজন হতো এবং আমিও লেখা জমা দিয়ে টাকা নিতাম। যদিও সেগুলোর জন্য কাজী সাহেব ১% কম দিতেন। এই কমবেশি নিয়েও বিশেষ মাথা ঘামাইনি কারণ লেখা আমার কাছে কোনো বিষয়ই ছিল না। তাছাড়া দুই প্রকাশকের সামনে ওয়াদা করেছেন কাজী সাহেব, তাই প্রাপ্য নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাতাম না। তারপরও একেক সময় হতাশায় ভুগতাম। সুযোগ পেলে সেই চুক্তির কথা কাজী সাহেবকে মনে করিয়ে দিতাম। তিনি কী জবাব দিতেন তা ইফতেখার সাহেব তাঁর ‘দিন যায় কথা থাকে’-তে উল্লেখ করেছেন। আমি সংসারের চাকা চালু রাখার স্বার্থে ঘাড় গুঁজে কাজ করে গিয়েছি আর নিজেকে সান্তনা দিয়েছি: কাজী সাহেব ভদ্রলোক। তিনি আমার টাকা মেরে খাবেন না!
দুঃম্বপ্নেও ভাবিনি পুরোনো ওয়াদার কথা মাঝেমধ্যে মনে করিয়ে দিয়ে আমি কাজী সাহেবের তো বটেই, তাঁর বড় ছেলে টিঙ্কুরও চরম বিরাগভাজন এবং অবাঞ্ছিত হয়ে উঠছি। এমনটাও ভাবিনি কাজী সাহেবকে পাওনা টাকার তাগাদা দেয়ার “অপরাধে” সেবা থেকে অপমান-অপদস্থ হয়ে কোনোদিন আমাকে খালি হাতে বেরিয়ে আসতে হবে। অবশেষে ২০০৮ সালে তাই ঘটল। তাদের সবার দুর্ব্যবহার এত প্রকট, এত বীভৎস রূপ নিল যে তা সহ্যের বাইরে চলে গেল। অবশেষে ছেলেমেয়ে নিয়ে না খেয়ে মরব, তবু সেবায় আর ফিরব না, এই প্রতিজ্ঞা করে একদিন বেরিয়ে পড়লাম। তারপর কাজী সাহেব আমাকে ফিরে যাওয়ার জন্য, মাসুদ রানা লেখার জন্য অনুরোধও করেছেন, অথচ আমার প্রাপ্য টাকার কী হবে তা ভুলেও উচ্চারণ করেননি।
২০১০ সালের শুরুতে ইফতেখার সাহেব জানালেন, কাজী সাহেব তার রয়্যালিটির টাকা না দিলে তিনি অ্যাকশনে যাবেন, আপনিও আসুন। আমি প্রথমে কিছুদিন দ্বিধায় ভুগেছি। তারপর এক সময় মনে হলো আমি বসে আছি কেন? কিছু একটা করি না কেন? কেন আমার এত কষ্টের টাকার দাবি অভিমান করে ছেড়ে দিয়ে বসে থাকছি? ও টাকা আমার প্রাপ্য, আমার সন্তানদের প্রাপ্য। তাতে অধিকার আমাদের, কাজী সাহেব আর তাঁর ছেলেমেয়েদের নয়। তার আগে পর্যন্ত কাজী সাহেব আমাকে ত্রৈমাসিক পেমেন্ট হিসেবে ১০ হাজার করে বছর দেড়েক দিয়েছেন ( যে অংকটা কম করেও ১ লাখ হওয়ার কথা ছিল)। পরে ইফতেখার সাহেব কাজী সাহেবের কাছে সরাসরি নিজের পাওনা টাকা দাবি করলেন। তিনি সাড়া না দেয়ায় আমরা দুজন মিলে তাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাই। কাজী সাহেব ঘাবড়ে গিয়ে আমাদের উকিলের অফিসে ছুটে গিয়ে বলে এলেন, মামলা করতে হবে না, ওদেরকে বলুন আমি পাওনা টাকা দিয়ে দেব, কত টাকা পাবেন হিসেব দিতে বলুন। আমরা হিসেব দিলাম। অমনি কাজী সাহেব বলে বসলেন আমরা তাঁর নামে কোনো বই বা মাসুদ রানা লিখিনি, সব তিনি লিখেছেন, তাই কোনো টাকা পাওনা হয়নি আমাদের। এর মধ্যে আমার ত্রৈমাসিকও বন্ধ করে দেয়া হলো।
তারপর থেকে আজ পর্যন্ত ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্য জুলাই পর্যন্ত আর ১ টাকাও পাইনি ওখান থেকে।
বছর পাঁচেক আগে আমি পাওনা টাকা চেয়ে কাজী সাহেবকে শেষবার ফোন করেছিলাম। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন ছিলো, ‘কিসের টাকা? আপনি আমার কাছে টাকা পান, এমন কিছু মনে পড়ছে না।’ আমি তাঁকে মনে করিয়ে দিতে চাইলে তিনি বললেন, ‘আমি নিজে এসব নিয়ে আপনার সঙ্গে আলাপ করতে চাই না। সেবা প্রকাশনীর ম্যানেজার মোমিনকে আপনার কাছে পাঠাব, আপনার যা বলার ওকে বলবেন।’
মোমিন আমার বাড়িতে এসে প্রথম যে বাক্যটি উচ্চারণ করলেন, তা ছিলো হুবহু এরকম: ‘কাজী সাহেব প্রথমেই বলতে বলেছেন যে তিনি আপনাকে আগের মতোই ভালোবাসেন। উত্তরে আমি বলেছি, আমার দিক থেকেও তাঁর প্রতি আগের সেই শ্রদ্ধা অম্লান আছে। তিনি আমাকে আরও জানালেন কাজী সাহেব একটা প্রস্তাব পাঠিয়েছেন: আমার লেখা যে-সব বইয়ের রয়্যালিটি আমি এত দিন পেয়ে এসেছি, কিন্তু বিরোধ শুরু হবার পর থেকে পেমেন্ট আটকে দেয়া হয়েছে, সেগুলোর পেমেন্ট আমাকে এককালীন দেয়া হবে, এবং তারপর নিয়মিত যেমন পেতাম তেমনি পেতে থাকব, তবে অংকটা কত হবে তা হিসেব করে বের করতে সময় লাগবে। শুধু তাই নয়, যে-সব মাসুদ রানা তিনি “কিনে নিয়েছেন”, সেগুলোর রয়্যালিটিও আমাকে দেয়া হবে। অর্থাৎ দু’শ ষাটটার মতো মাসুদ রানার। আমি জানতে চাই, তাতে কত আসবে? মোমিন বললেন, প্রতি তিন মাস অন্তর পঁয়তাল্লিশ থেকে পঁয়ষট্টি হাজারের মধ্যে ওঠানামা করবে। আমি মেনে নিই।
তারপর বললেন, আমাদের উকিল সাহেবকে দিয়ে একটা চুক্তিনামা লেখাতে হবে। সেটায় আপনাকে স্বাক্ষর করতে হবে, তারপর টাকা পাবেন। আমি বললাম কোনো সমস্যা নেই, আমি স্বাক্ষর করে দেব। এরপর আমি কপিরাইট অফিসে কাজী সাহেবের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছি, সেই কাগজটাও তিনি উকিলের নাম করে নিয়ে গেলেন। তারপর ওদিক থেকে আর কোনো সাড়া নেই।
আমি বারবার ফোন করেছি, কেউ ধরে না। বেশ কদিন পর মোমিন ফোন করলেন, আমার সন্দেহ হলো তাঁর চারপাশে দুই ছেলেকে নিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেনও বসে আছেন। ম্যানেজার সাহেব বললেন, ‘কাজী সাহেব বলেছেন আপনার কোনো টাকা পাওনা হয়নি। পরে বললেন, আপনি যে অল্প কয়টা বইয়ের রয়্যালিটি পান, চাইলে তা আমরা উকিলের মাধ্যমে আপনাকে দিতে পারি।
আমার দাবি ছিল ২ কোটি ১২ লাখ টাকা (কমপক্ষে), কাজী সাহেব দিতে চান মোটে আট-দশ লাখ টাকা! স্বভাবতই তা আমি নিতে চাইনি।
প্রশ্ন জাগা খুব স্বাভাবিক, তিনি এত নাটক করে শেষ পর্যন্ত টাকাটা আমাকে দিলেন না কেন? উত্তরটা আমি নিশ্চিত জানি না, তবে অনুমান করতে পারি। ওই অভিযোগপত্রে আমি সঙ্গত কারণেই লিখেছিলাম: ‘কাজী আনোয়ার হোসেন একজন প্রতারক। তিনি আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন…’
সম্ভবত এটা পড়েই তিনি রেগে গিয়ে বলেছেন, আমি তাঁর কাছে কোনো টাকা পাই না। আমার প্রশ্ন হলো, কী আশা করেছিলেন তিনি? আমি অভিযোগপত্রে বলব: কাজী আনোয়ার হোসেন নির্লোভ দরবেশতুল্য চরিত্রের অধিকারী, তাঁর সততা নিয়ে মহাকাব্য লেখা যায়, তাই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি আমি?
যাই হোক, এখন আমি আবারও আমার পাওনা টাকা পাবার চেষ্টা করছি। সেই সঙ্গে আমার আরেকটা চাওয়া হলো, মৃত্যুর আগে যেন দেখে যেতে পারি কাজী আনোয়ার হোসেন সাহেব তাঁর উপযুক্ত কর্মফল ভোগ করছেন। সে প্রক্রিয়া বর্তমানে চলছে। আশা করি বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
যে কোনো কিছুতে অসম্মত হওয়ার প্রবণতাকে টক্সিক পারসোনালিটি বলে। এ ধরণের মানুষ আশেপাশে থাকলে তাদের জীবন থেকে এড়িয়ে চলাই উত্তম। কারণ এ ধরণের মানুষের ব্যবহার আপনার মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়, এমনকি সামাজিকভাবেও হেয় করে। টক্সিক পারসোনালিটির মানুষকে কেউ পছন্দ করে না। টক্সিক পারসোনালিটির মানুষকে এড়িয়ে চলতে পারাটাই নিজের জন্য মঙ্গল।
কথায় বলে, আপনি আপনার আশপাশের সবচেয়ে কাছের পাঁচজন মানুষের গড়। এর মানে হলো আপনার জীবনে গুরুত্ব পাওয়া মানুষগুলো আপনার চিন্তা, জীবনসঙ্গী বাছাই, পছন্দ, অপছন্দ, রুচি, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এ সবকিছুতে প্রভাব ফেলে। আপনি এই মানুষগুলোর দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হন। এই মানুষগুলো আপনাকে ক্রমাগত পিছিয়ে দেয়। এমনকি জীবন থেকে ছিটকেও পড়তে পারেন।
তাই ‘টক্সিক’ এই মানুষগুলো থেকে দূরে থাকার জন্য আপনি আগে জীবন থেকে এই মানুষগুলোকে বিদায় করুন, নিজে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন।
১. ‘টক্সিক’ মানুষেরা সাধারণত কোনো কিছুর দায়িত্ব নিতে চায় না। যেকোনো কিছুর দায়ভার অন্যের কাঁধে চাপাতে তারা ওস্তাদ। তাদের নিজেদের দুরবস্থার জন্য আপনাকে বা অন্যদের দায়ী করে। অন্যদিকে কৃতিত্ব নিজের দিকে টেনে নেওয়ার বেলায় পটু।
২. এরা সহানুভূতিশীল নয়। ‘টক্সিক’ এই মানুষেরা কখনো আপনার জুতায় নিজের পা গলিয়ে আপনার অবস্থা বা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করবে না। এই মানুষদের আপনি আপনার অনুভূতি বোঝাতে ব্যর্থ হবেন।
৩. সমালোচনা, কথা লাগানো তাদের অবসরের প্রিয় কাজ। বিয়ের পর মানুষের ব্যক্তিগত সম্পর্ক, চরিত্রের বিশ্লেষণ, নেতিবাচক চর্চা-এগুলোতে তারা কখনোই ক্লান্ত হয় না। আপনি মনে রাখবেন, আপনার কাছে অন্যের সম্পর্কে এই ধরনের কথা বলছে। এর অর্থ হলো আপনার সম্পর্কে এই ধরনের কথা বলতেও তাদের নীতিতে আটকাবে না।
৪. সম্পর্ক মানেই বিশ্বাস, ভরসা আর স্বস্তির একটি জায়গা। তা হোক বন্ধুত্বের সম্পর্ক কিংবা ভালোবাসার। কিন্তু এই সম্পর্ক যদি আপনাকে তিনটি উপাদানের একটি দিতেও ব্যর্থ হয় তবে বুঝতে হবে, কোথাও সমস্যা আছে।
৫. ব্যক্তিভেদে সম্পর্কের ধরন ভিন্ন হয়, সম্পর্কের সংজ্ঞাও একেকজনের কাছে একেক রকম। তবে আপনার সঙ্গী যদি প্রতিনিয়ত আপনাকে ছোট করে কথা বলে, যেকোনো কাজে জবাবদিহিতা চায় এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, সবসময় আপনাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে এমন সম্পর্ককে টক্সিক বলা যায়।
৬. আপনাকে আপনার পরিবার বা কাছের মানুষদের থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারে এই টক্সিক মানুষেরা। এসব টক্সিক মানুষ আপনাকে ‘একঘরে’ করে ফেলতে পারে।
৭. এসব ‘টক্সিক’ মানুষদের সঙ্গে কথোপকথনের পর আপনার হালকা অনুভূত হয় না। বরং আবেগীয়ভাবে ভার ভার লাগে। আমাদের আশপাশেই রয়েছে অনেক ‘টক্সিক মানুষ’। এই মানুষদের সঙ্গে কথা বলার পর আপনার ওপর ‘নেতিবাচক এনার্জি’ ভর করে। মাঝেমধ্যে বিরক্তি, হতাশা আর রাগ আপনাকে গ্রাস করে।
৮. আসলে আমাদের জীবনে বাড়ির বাস্তুর প্রভাব খুব বেশি করে পড়ে।
৯. নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ করতেও পিছপা হয় না তারা।
মন্তব্য করুন
মানুষের
ব্যক্তিগত জীবনের কোনোকিছু খারাপ লাগলেও সেটি মাথা ব্যথার
কারণ কখনোই হয়নি, যে পর্যন্ত সেটি
সমাজের জন্য হানিকর বলে
বিবেচিত না হয়েছে!
ষাটোর্ধ্ব বয়সী এক লোক সম্প্রতি বিয়ে করেছেন, এই বয়সী ব্যক্তির অষ্টাদশী তরুণীর সাথে বিয়ে গ্রামে প্রায়শই কম করে হলেও ঘটে! সমস্যা এখানে নয়, সমস্যা হলো সম্প্রতি তৃতীয় বিয়ে সম্পন্নকারী এই ব্যক্তি তার বিয়ে পরবর্তী সময়কে দারুণভাবে গ্লোরিফাই করে বেড়াচ্ছেন। একইসাথে তার মত অতি প্রাপ্তবয়স্ক লোকের সাথে স্বাভাবিকভাবেই তার সহধর্মিণী সহমত পোষণ করে আরও ঝাঁঝালো বক্তব্য রেখে যাচ্ছেন এবং তিনি তা উপভোগও করছেন।
আজ বইমেলায় স্কুল, কলেজ পড়ুয়া অনেক
বাচ্চারা নববিবাহিত এই দম্পতির বই
কিনতে যেয়ে, শ্যুগা ( Sugar) ড্যাডি টার্মকে রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে এই ধরনের
বিয়ে অথবা ড্যাডি টাইপ
কারো সাথে থাকাকে জায়েজ
মনে করে নিচ্ছে! এই
কিশোরীদের সামনে প্রশ্নগুলো ছুঁড়ছে কারা? বোধহীন এই প্রশ্নগুলো করছেন,
তথাকথিত কিছু ইউটিউব চ্যানেলের
বুমধারী ব্যক্তিগণ, যাদের কাছে নিজ চ্যানেল
অথবা পেইজের কিছু সস্তা ভিউজ
প্রাপ্তি ছাড়া আর কোনো
দায়বদ্ধতা নেই!
আমাদের স্বল্পশিক্ষিত, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত অথচ মননে অশিক্ষিত সম্প্রদায়ের হাতে নতুন কিছু ভুলক্রমে চলে আসলে সেটি ভাজা ভাজা না করে আমাদের নিস্তার নাই। সম্প্রতি শ্যুগা (Sugar) ড্যাডি অথবা মম বিষয় নিয়ে অতি উৎসাহী হওয়ার মানে দাঁড়াচ্ছে, এই মস্তিষ্ক বিবর্জিত শ্রেণী অতি সম্প্রতিই এই শব্দদ্বয়ের সাথে পরিচিত হয়েছে! যার কারণে নিজ নিজ পেইজে ১৮+ কনটেন্টের মত বিষয়াদি ছাড়াও আরও বর্জ্য সংযুক্ত করে নিচ্ছে!
অন্যদিকে ষাটোর্ধ্ব ভদ্রলোকের সহধর্মিণী তাদের এই বিয়েকে প্রতিনিয়ত জাস্টিফাই করে যাচ্ছেন। তিনি ভুল করছেন এই জায়গাতেই! কোনোকিছু স্বাভাবিক মনে করলে সেটিকে বারবার বলে বুঝাতে হয় না এটি স্বাভাবিক! এই দম্পতি সমাজের একমাত্র দম্পতি নন, অন্য সবাই তাদের মত জাস্টিফাই করতে তো আসছেন না! তারা তবে কেন এই চেষ্টা করছেন? নিজ সম্পর্ককে স্বাভাবিক বোধ করলে অন্যের কাছে তা প্রতিষ্ঠিত করার এত তীব্র চেষ্টা কেন করছেন? তবে কি তাদের নিজেদের বিশ্বাসেই ঘাটতি রয়েছে?
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ভুল নয় কিন্তু সেটিকে প্রচারণার মাধ্যমে জৌলুসপূর্ণ করে প্রকাশ করে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিভ্রান্ত করা, অত্যন্ত ভুল একটি পদ্ধতি! ১৮ বছর বয়সী কারো মাথায় সেই বোধ পুরোপুরি না-ই আসতে পারে, ষাটোর্ধ্ব কারো মাথায় এটি কেন কাজ করছে না সেটাই বোধগম্য নয়!
লেখক : ইফতেখায়রুল ইসলাম
এডিসি, ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ফোর্স ডিভিশন।
(লেখকের
ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত)
মন্তব্য করুন
টাঙ্গাইল শাড়ি এবং টাঙ্গাইল শাড়ির তাঁতিরা অনেকটা আমার মতো। বাংলাদেশে জন্ম, কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি বলে মন্তব্য করছেন ভারতে বসবাসকারী বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
তসলিমা নাসরিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের এক পোস্টে টাঙ্গাইল শাড়ি ও টাঙ্গাইল শাড়ির তাঁতিদের নিয়ে লিখতে গিয়ে বলেন, টাঙ্গাইল থেকে প্রচুর হিন্দু তাঁতি ভারত ভাগের পর পূর্ব বঙ্গ থেকে, বা পূর্ব পাকিস্তান থেকে বা বাংলাদেশ থেকে মুসলমানের অত্যাচারের ভয়ে ভারতে চলে এসেছেন। ভারতেই তাঁরা টাঙ্গাইলে যেভাবে শাড়ি বুনতেন, সেভাবেই শাড়ি বুনছেন। কিন্তু প্রচুর তাঁতি তো টাঙ্গাইলে রয়েও গেছেন। তাঁরাও বুনছেন টাঙ্গাইল শাড়ি।
আশির দশকে, আমি যখন থেকে শাড়ি পরতে শুরু করেছি, আমার সবচেয়ে প্রিয় শাড়ি ছিল টাঙ্গাইল শাড়ি। দামে কম, মানে ভাল। আমার বাড়ির কাছে বেইলি রোডে ছিল টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির। ডাক্তারি চাকরি করতাম প্রথমে মিটফোর্ডে তারপর ঢাকা মেডিকেলে। বেতনটা পেলেই বেইলি রোডের দুটো দোকানে চলে যেতাম, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির থেকে কিনতাম টাঙ্গাইল শাড়ি, আর তার পাশের সাগর পাবিলিশার্স নামের বইয়ের দোকান থেকে কিনতাম বিস্তর বই। আমি প্রচুর বই পড়তাম, এবং খুব গুছিয়ে শাড়ি পরতাম। রঙ মিলিয়ে কপালের টিপ পরতাম, রঙ মিলিয়ে হালকা কানের দুল বা হাতের চুড়ি পরতাম। আমার যত শাড়ি ছিল, তার সত্তর বা পঁচাত্তর ভাগই ছিল টাঙ্গাইল শাড়ি। টাঙ্গাইল শাড়ির প্রতি আমার ভালবাসার কথা অনেকেই জানতো। আমার সেই জীবনকে এখন রূপকথা বলে মনে হয়।
এখন টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই অর্থাৎ জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশান ভারত পেয়েছে বলে চারদিকে বিতর্ক চলছে। ভারতের লোকেরা বলছে, কাজটা ভাল হয়েছে, বাংলাদেশের লোকেরা বলছে, কাজটা ভাল হয়নি। প্রশ্ন উঠছে, টাঙ্গাইল থেকে তাঁতিরা ভারতে চলে গিয়ে একই পদ্ধতিতে যদি টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি করতে পারেন, তাহলে কি তাঁরা টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব আইনত পেতে পারেন? এ নিয়ে কেউ বলছেন পারেন, কেউ বলছেন পারেন না। টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব হয়তো ভারতে চলে আসা তাঁতিরা পেতে পারতেন, যদি টাঙ্গাইল শাড়ি বোনা টাঙ্গাইলে বন্ধ হয়ে যেত, যদি টাঙ্গাইল শাড়ি বোনার কেউ আর বাস না করতো টাঙ্গাইলে, যদি কারখানায় তালা পড়তো এবং যদি ভবিষ্যতে এই তাঁত শিল্প রক্ষা করার উপায় না থাকতো। তা কিন্তু ঘটনা নয়।
টাঙ্গাইল শাড়ি বোনার তাঁতিদের মধ্যে বসাক বংশ বিখ্যাত। বসাক বংশের সবাই বাংলাদেশ ত্যাগ করেননি। প্রচুর বসাক রয়ে গেছেন টাঙ্গাইলে, এবং বংশ পরম্পরায় তাঁরা আজও শাড়ি বুনছেন। টাঙ্গাইল টাঙ্গাইলেই আছে, থাকবে। যে বসাক তাঁতিরা টাঙ্গাইল থেকে ভারতে চলে গিয়ে শান্তিপুরে স্থায়ী হয়েছেন, সেই শান্তিপুরও শান্তিপুরেই আছে, থাকবে। শান্তিপুরের বসাকরা কিন্তু যে শাড়ি বুনছেন, সেই শাড়িকে শান্তিপুরী শাড়ি না বলে টাঙ্গাইল শাড়ি বলছেন। শান্তিপুরের নাম তাঁরা চাইলেও বদলে দিতে পারেন না, বদলে টাঙ্গাইল রাখতে পারেন না। এই তাঁতিদের একজন পদ্মশ্রী পেলেও, শান্তিপুরে বোনা শাড়িকে টাঙ্গাইল শাড়ি বলে ডাকলেও শান্তিপুরের নাম টাঙ্গাইল হবে না এবং টাঙ্গাইলের নাম টাঙ্গাইলই রয়ে যাবে। এবং টাঙ্গাইলে বোনা শাড়ির নামও টাঙ্গাইল শাড়িই রয়ে যাবে।
মনে রাখতে হবে টাঙ্গাইলের তাঁতিরা দু’দেশে ভাগ হয়ে গেছেন। টাঙ্গাইল নামের অঞ্চল তো শাড়ি বানায় না, শাড়ি বানায় মানুষ। মানুষই কারিগর। ঢাকায় যেমন আমার বাড়ির পাশে টাঙ্গাইল শাড়ির দোকান ছিল, আমি ভারতের যে শহরে এখন বাস করছি, সে শহরেও আমার বাড়ির পাশে রয়েছে একটি টাঙ্গাইল শাড়ির দোকান। এখান থেকেও আমি যখন ইচ্ছে টাঙ্গাইল শাড়ি কিনতে পারি। দেশের কত কিছু মিস করি, টাঙ্গাইল শাড়ি মিস করি না। কলকাতায় মরণচাঁদের মিষ্টির দোকান দেখে একবার চমকে উঠেছিলাম। ঢাকার মরণচাঁদের দই আর মিষ্টি স্পেশাল ছিল। এখন মরণচাঁদের উত্তরাধিকারীরা যদি তাঁদের সিক্রেট রেসিপি নিয়ে ঢাকা থেকে ব্যবসা গুটিয়ে কলকাতায় আসেন, এবং পুরোনো রেসিপি অনুযায়ী দই মিষ্টি বানান, তবে তাঁদের কেন অধিকার থাকবে না সেসবের স্বত্ব পাওয়ার? একবার তো শুনেছিলাম বাসমতি চালের স্বত্ব দাবি করেছে আমেরিকা। রসগোল্লার স্বত্ব নিয়ে বহুদিন মারামারি চলেছে পশ্চিমবঙ্গ আর উড়িষ্যার মধ্যে।
এখন জরুরি কথা হলো, শাড়ি পরা তো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে দু’দেশেই, তাহলে শাড়ির মালিকানা নিয়ে কী লাভ কার? আমি খুব চাই মেয়েরা শাড়ি পরুক, ভালবেসে পরুক। টাঙ্গাইল শাড়ি দু’দেশেই পাওয়া যায়। একই কোয়ালিটির, একই স্টাইলের। স্বত্ব নিয়ে যখন লড়াই চলছে, অনেকে হয়তো নামটা প্রথম জানবে শাড়ির। শাড়ি কেমন দেখতে চাইবে, পরতে কেমন তাও জানতে চাইবে। এভাবে আগ্রহ বাড়ুক। টাঙ্গাইল নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। টাঙ্গাইলকে কেউ ধরে বেঁধে কোথাও নিয়ে যায়নি। টাঙ্গাইল শাড়ি টাঙ্গাইলেরই থাকবে। ভারত সেই স্বত্ব ভুল করে পেলে ভারতকে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। দেশভাগের আগে টাঙ্গাইল ভারতবর্ষের অংশ হলেও দেশভাগের পর টাঙ্গাইল বাংলাদেশের অংশ। তারপরও এ কথা আমাদের অস্বীকার করার উপায় নেই যে কাঁটাতার পেরিয়ে টাঙ্গাইলের যে তাঁতিরা এপারে অর্থাৎ ভারতে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁরাও বুকের ভেতর তাঁদের জন্মের ভূমি টাঙ্গাইলকে লালন করেন, তাঁদেরও স্বত্ব পাওয়ার অধিকার আছে বলে তাঁরা মনে করেন। সেক্ষেত্রে অন্য কোনও নামে টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব তাঁরা পেতে পারেন, যেমন আদি টাঙ্গাইল শাড়ি বা নিউ টাঙ্গাইল শাড়ি। এই নামের মধ্যে রয়ে যাবে দেশ ভাগের আর সাম্প্রদায়িকতার ইতিহাস। বাংলাদেশের কিন্তু টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব আমার আমার বলে চেঁচালে চলবে না, টাঙ্গাইলে যে তাঁতিরা শাড়ি বানাচ্ছেন, তাঁরা যেন টাঙ্গাইলে নিরাপদে বাস করতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে। যে বসাকরা টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি করছেন, তাঁরা যেন তল্পি তল্পা গুটিয়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য না হন, তা দেখতে হবে। যেন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনা আর না ঘটে দেশে।
টাঙ্গাইল শাড়ি এবং টাঙ্গাইল শাড়ির তাঁতিরা অনেকটা আমার মতো। বাংলাদেশে জন্ম, কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি। বাংলাদেশ এবং ভারত...এই দু’দেশে বসবাসের সময় অনেকটা সমান হয়ে এসেছে আমার। বাংলাদেশ যতটুকু আমার, ভারতও ঠিক ততটুকু আমার। বাংলাদেশ আর ভারত দু’দেশের ক্রেতারা আমাকে ভুলতে বসেছে, এ যেমন ঠিক, আমাকে নিয়ে গর্ব করার লোকও এদেশে ওদেশে কিছু আছে...এও তেমন ঠিক।
টাঙ্গাইল শাড়ি তাঁতি তসলিমা নাসরিন
মন্তব্য করুন
সাম্প্রদায়িকতা
নির্মূলের অঙ্গীকার নিয়ে দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি লিখেছেন, ‘এই পূজা অশুভ শক্তির অবসান ঘটাক
এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ সমাজে মানুষের সমৃদ্ধি হোক।’
তিনি
আরও বলেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’
সজীব
ওয়াজেদ আরও লিখেছেন, সবাইকে দুর্গাপূজার অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
উল্লেখ্য,
গত ২০ (অক্টোবর) থেকে শুরু হয় শারদীয় দুর্গোৎসব
। আজ রোববার মহাঅষ্টমী। সকাল ৬টা ১০ মিনিটে মহাঅষ্টমী পূজা শুরু হয়। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে
পুষ্পাঞ্জলি দেয়া হয় এবং ১১টায় কুমারী পূজা। রাজধানীর রামকৃষ্ণ মঠে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত
হয়।
রাত ৮টা ৬ মিনিটে সন্ধিপূজা
শুরু হবে। রাত ৮টা ৫৪ মিনিটে পূজা শেষ হবে
পূজা সাম্প্রদায়িক অবসান ঘটাক শক্তির উৎসব
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যে কোনো কিছুতে অসম্মত হওয়ার প্রবণতাকে টক্সিক পারসোনালিটি বলে। এ ধরণের মানুষ আশেপাশে থাকলে তাদের জীবন থেকে এড়িয়ে চলাই উত্তম। কারণ এ ধরণের মানুষের ব্যবহার আপনার মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়, এমনকি সামাজিকভাবেও হেয় করে। টক্সিক পারসোনালিটির মানুষকে কেউ পছন্দ করে না। টক্সিক পারসোনালিটির মানুষকে এড়িয়ে চলতে পারাটাই নিজের জন্য মঙ্গল।
মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের কোনোকিছু খারাপ লাগলেও সেটি মাথা ব্যথার কারণ কখনোই হয়নি, যে পর্যন্ত সেটি সমাজের জন্য হানিকর বলে বিবেচিত না হয়েছে! ষাটোর্ধ্ব বয়সী এক লোক সম্প্রতি বিয়ে করেছেন, এই বয়সী ব্যক্তির অষ্টাদশী তরুণীর সাথে বিয়ে গ্রামে প্রায়শই কম করে হলেও ঘটে! সমস্যা এখানে নয়, সমস্যা হলো সম্প্রতি তৃতীয় বিয়ে সম্পন্নকারী এই ব্যক্তি তার বিয়ে পরবর্তী সময়কে দারুণভাবে গ্লোরিফাই করে বেড়াচ্ছেন। একইসাথে তার মত অতি প্রাপ্তবয়স্ক লোকের সাথে স্বাভাবিকভাবেই তার সহধর্মিণী সহমত পোষণ করে আরও ঝাঁঝালো বক্তব্য রেখে যাচ্ছেন এবং তিনি তা উপভোগও করছেন।
সাম্প্রদায়িকতা নির্মূলের অঙ্গীকার নিয়ে দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি লিখেছেন, ‘এই পূজা অশুভ শক্তির অবসান ঘটাক এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ সমাজে মানুষের সমৃদ্ধি হোক।’