নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৯ এএম, ১০ অগাস্ট, ২০২০
মোশতাককে কৃশ ও ক্ষুধার্ত দেখাত। মোশতাক তাদের সাথে দুপুর বা রাতে যখন খেতেন তখন মুজিব কিছুটা মজা করে তাঁর স্ত্রীকে বলতেন, তার দিকে বিশেষ নজর দিও। তাকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় যেতে দেয়া উচিত নয়। সে দিনে মাত্র একবারই আহার করে।
মুজিব ছিলেন হাসিখুশী মেজাজের এবং তাঁর খোশ মেজাজী হাসি হৃদয় উষ্ণ করে দিত। কিন্তু মোশতাক ছিল তার বিপরীত এবং তার রুগ্ন পরিহাসের হাসি একজনকে থামানোর জন্য ছিল যথেষ্ট।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর পরই মোশতাকের অনুস্মৃতি করতে যেয়ে জয়প্রকাশ নারায়ণ বলে মোশতাক সবসময় খেলাধুলা করে তাদের গড় উচ্চতার চেয়ে রুগ্ন, লাঙ্গালীদের মতো টুপি পরত। মোশতাকের টুপি ছিল তার ব্যক্তিত্বেরই অংশ। ঢাকার একজন ব্যাংকার মোশতাককে বলতেন “টুপিওয়ালা। লক্ষ লক্ষ লোক টুপি পরে; কিন্তু মোশতাকের টুপি ব্যাংকারকে পাকিস্তানী অতীতকে স্মরণ করিয়ে দিত যা তিনি ভুলতে যাইতেন। স্বাধীনতার কিছুদিন পরেই ব্যাংকার তার কয়েকজন বন্ধুকে বলেছেন, “মোশতাক একজন অপরিবর্তিত মুসলিম লীগার, সে তার পূর্ব পুরুষের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। মোশতাক ছিল ১৯৪৯ সালে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে গঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। নতুন দলের সদস্যরা ছিলেন পুরাতন মুসলিম লীগার, কিন্তু তাদের অধিকাংশের ছিল ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী এবং তাদের মধ্যে বামপন্থীরাও ছিলেন। সবাই এটিকে আওয়ামী মুসলিম লীগ নয় আওয়ামী লীগ বলেই ডাকতেন। এটি ছিল একটি প্রাদেশিক দল যা ছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদের সৌভাগ্যের প্রতীক এবং এটি পূর্ব বাংলায় রাজনৈতিক উন্নয়নের প্রেরণা যুগিয়েছিল।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী মাতৃ ভাষার জন্য বাঙালীরা প্রথম তাদের জীবন উৎসর্গ করেন। এর দুই বছর পর জনগণ প্রদেশে মুসলিম লীগ সরকারকে বর্জন করে।
১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার নির্বাচন পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন মোড় নেয়। আমরা নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করতে পারি। যাহোক, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বুঝতে হলে এ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখানে তার সংক্ষিপ্ত খসড়া দিতে চেষ্টা করবো।
পাকিস্তানের সমপর্যায়ের মুসলিম লীগ নির্বাচনে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে নেতাদের এনে এবং স্থানীয় মোল্লাদের সংগ্রহ করে ব্যাপক প্রচারকার্য চালায়। এর নির্বাচনী প্রচারাভিযানের প্রধান দফা ছিল ভারত বিদ্বেষ`। আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি ও অন্য দুটি দলের সমন্বয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্ট ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে। এটি ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারীর (ভাষা শহীদ দিবস) আবেগকে কাজে লাগায় এবং বাঙালী জাতীয়তাবাদ বিকাশের আবেদন জানায়। এর প্রধান দাবী ছিল শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা, মুদ্রা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাদে পূর্ণ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন। | মুসলিম লীগ সরকার নির্বাচনের পূর্বে শতশত বিরোধী ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মীকে আটক করে। তবুও ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী, এইচ এস, সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে যুক্তফন্ট ২৩৭ টি মুসলমান আসনের মধ্যে ২০৮ টিতে জয়লাভ করে মুসলিম লীগকে ধরাশায়ী করে। (৩০৫ সদস্য বিশিষ্ট আইন সভায় ৭২টি আসন। সংরক্ষিত ছিল)। মুসলিম লীগ মাত্র ৯টি আসন লাভে সমর্থ হয়। বালে এ.কে ফজলুল হক ১৯৫৪ সালের ৩ এপ্রিল পূর্ব বাংলার মুখ্যমী ছিল করেন, কিন্তু ইতিমধ্যেই তাঁর মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গিয়েছিল।
১৯৫৪ সালের ২৪ মে করাচীতে মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনে পাকিস্তানের জন্য পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দাবা করেন। পরদিন কেন্দ্রীয় সরকার পাকিস্তানের স্বাধীনতা দাবী করার জন্য অভিযুক্ত করে।
ফজলুল হক বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের একক স্বশাসিত হওয়া উচিত। এটা ত আদর্শ এবং আমরা এর জন্য সংগ্রাম করবো। আমি একমুহূর্তের জন্যেও বলিনি আমাদের আদর্শ স্বাধীনতা। | ফজলুল হক দেশের অর্ধেকের বেশী জনগণের প্রতিনিধি। তবু তিনি এবং ১ মসিভার সহকর্মীরা যতদূর সম্ভব ঘোষণা করেন যে, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন। হওয়া পূর্ব পাকিস্তানের লক্ষ্য নয়। কিন্তু এটিও তাদের সাহায্য করেনি। ১৯৫৪ সালের। ৩০ মে প্রধানমন্ত্রী বগুড়ার মোহাম্মদ আলা পাকিস্তানহ নিউইয়র্ক টাইমসের। সংবাদদাতার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ফজলুল হক মন্ত্রিসভাকে বরখাস্ত করে। কারণ। সংবাদদাতা বলেছে যে ফজলুল হক তার সাথে কথা বলার সময় পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বাধীনতা চেয়েছিলেন তার প্রমাণ তার সংগ্রহে রয়েছে।
প্লেবয়’ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ আলীকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত থাকা অবস্থায় ওয়াশিংটন থেকে নিয়ে এসে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের স্থলাভিষিক্ত করা হয়। ফজলুল হক শের-ই-বাংলা (বাংলার বাঘ) হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। বাঘ হককে বরখাস্ত করল `প্লেবয়’ আলী।
পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম জনপ্রিয় নির্বাচিত মন্ত্রিসভা মাত্র ৫৭ দিন স্থায়ী হয়। কেন্দ্রীয় সরকার ভারত শাসন আইনের ৯২ এ ধারা ও পূর্ব বাংলায় গভর্ণরের শাসন আরোপ করে। | মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মীর্জা নতুন গভর্ণর নিযুক্ত হবার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত প্রতিরক্ষা সচিব পদে বহাল ছিল।।
গভর্ণর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পরদিন একটি সাংবাদিক সম্মেলনে ইস্কান্দার। মীর্জা বলে যে, ভারতীয় দালাল ও কমিউনিষ্টরা পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক ও শ্রমিক সমিতির আন্দোলনে পরিপূর্ণ কর্তৃত্ব অর্জন করে এবং যুক্তফ্রন্টের নেতারা পূর্ব বাংলাকে। ভারতের সাথে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করেছিল। সে সতর্ক করে বলে, “যদি প্রয়োজন হয় জাতীয় ঐক্য রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী ১০ হাজার লোককে হত্যা করতে দ্বিধা করবে না।”১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ৩০ লক্ষ বাঙালীকে হত্যা করে। ফজলুল হক মন্ত্রিসভাকে বরখাস্ত করার পর পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক শক্তিগুলোর। মধ্যে একটি মেরুকরণ হয়। কেন্দ্রের মুসলিম লীগ সরকার প্রতিনিধিত্বের সামান্য দাবা। হারালেও তা ক্ষমতা আঁকড়ে থাকে। ১৯৫৫ সালের প্রতিশ্রুত সাধারণ নির্বাচন অনুতা। হলোনা।
১৯৫৪ সালের শেষভাগে আওয়ামী মুসলিম লীগের অধিকাংশ সদস্য মনে করেন দলের নামে মুসলিম শব্দটি একটা বাধা বিশেষ এবং তারা এটাকে বাদ দিতে চাইলে কিন্তু মোশতাকের কাছে দলটি ছিল মুসলিম লীগ-এর সাথে আওয়ামী` শব্দটি দলের নাম থেকে বাদ দেয়ার পক্ষে ভোট দেন তখন সালাম খান ও মোশতাক অধিবেশন থেকে বেরিয়ে যান। অনেক লেখক বলেছেন, মোশতাক ফজলুল হকের কৃষক শ্রমিক পার্টিতে (কেএসপি) যোগ দেয়। তাদের কথা ভুল; মোশতাকের জন্য কেএসপিতে কোন স্থান ছিলনা। সে সালাম খানের নেতৃত্বাধীন ২২ জনের গ্রুপে যোগ দেয়ার ভান করে, যারা তখনও আওয়ামী মুসলিম লীগ বলত। কিন্তু বুদ্ধিমানের মতো এটায় যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত উকে যাওয়া গ্রুপ খন্ড-বিখন্ড হয়ে যায় এমনকি ১৯৫৮ সালের পর আর।
মোশতাক অন্তরে একজন মুসলিম লাগারই রয়ে যায়। বাংলাদেশের চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতির একটি ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। শোষক ও সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানী বাহিনীর বিপক্ষে স্বাধীনতা সগ্রাম চলার সময় হতে এর উদ্ভব হয়েছিল। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতায় মোশতাক বিরক্ত বোধ করত। স্বাধীনতার মাত্র দুই মাস পর ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারীতে সে কয়েকজন ভারতীয় সাংবাদিককে যন্ত্রণাকাতর অভিব্যক্তিতে বলে যখন আমরা ঘোষণা করেছি আমাদের প্রতিশ্রুতি সমাজতন্ত্র, এর অর্থ আমরা। ধর্মনিরপেক্ষ। কেন তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতার এই অপ্রয়োজনীয় জোরালো প্রকাশ?’’ মোশতাক ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করতো না এবং সমাজতন্ত্র ছিল তার কাছে অভিশপ্তনীতি। স্বাধীনতার পরপরই একজন মহিলা চিকিৎসক লিপিবদ্ধ করেন,” মুজিব নগরের দিনগুলোর গ্রুপ ছবিতে মোশতাককে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের একজন সদস্য নয় বরং একজন বহিরাগত বলে মনে হয়। তিনি সঠিক। এমনকি মোশতাক যখন সমানের সারিতে থাকতো, তাকে পেছনের বলে মনে হতো, সে তার সহকর্মীদের সাথে পুরোপুরি শনাক্ত হতে চাইতো না এবং সে নিজেকে পেছনে রাখার চেষ্টা করতো।
ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালে পাকিস্তান দিবসে (২৩ মার্চ) দেয়া তার বাণীতে বলে, “এখন সময় এসেছে সুষম কাজের মাধ্যমে পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অংশের সমন্বয়পূর্ণ। পদ্ধতিতে সর্বজনীন লক্ষ্যের জন্য আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের একসাথে কাজ করার।
এমনকি কল্পনার দুঃসাধ্যেরও অধিক শয়তানসুলভ বাণী। ক্ষমতা হস্তান্তরের নয়, শুরু হয় শক্তি প্রয়োগের প্রক্রিয়া। ‘অপারেশন ব্রিজ’ কিংবা যেটাকে আরো যথার্থভাবে বলা যায় ‘অপারেশন জেনোসাইড’ তার শেষ পর্যায়ের কাজের তুলির ছোঁয়া লাগানো। হছিল। ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তানী নেতাদের অল্প কয়েক ঘন্টার মধ্যে ঢাকা ত্যাগের নির্দেশ দিয়ে শক্তি প্রয়োগের জন্য মঞ্চ পরিষ্কার করে। একমাত্র ভূট্টোই। আতশবাজি’ দেখার জন্য ঢাকায় অবস্থান করে।শওকত হায়াত খান ঢাকা বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে মোশতাকের আগামাসি লেনস্থ বাসায় যায়। সে ছিল উত্তেজিত। তার তথ্য ছিল যে ২৪ মার্চ বাঙালীদের উপর বড় মানের সেনা অভিযান চালানো হবে। মুজিবের সাথে সাক্ষাৎ করা সম্ভব নয় বলে সে। হল এই বার্তা এবং মুজিবকে তার ছালাম মোশতাক পৌঁছে দেবে।
শওকত হায়াতের বার্তা নিয়ে তাড়াতাড়ি মুজিবের কাছে যাবার সময় মোশতাক তার বন্ধু ডাঃ টি, হোসেনকে এটা বলার জন্য ধানমন্ডির সিটি নার্সিং হোমে যায়।
মুজিব ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে তার সাথে দেখা করতে আসা সমস্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের ঢাকা ত্যাগ করে তাদের নিজ নিজ এলাকায় চলে যাবার নির্দেশ দেন। সেনা অভিযানের পূর্বে তারা শহর ছেড়ে যেতে পারেননি, কিন্তু তারা পূর্ব সতর্কতা হিসেবে নিজ বাসায় অবস্থান করেননি।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সকালে কয়েকজন তাদের রেডিও বা টানজিষ্টার সেট একটি সামরিক ঘোষণা শুনতে পান। যা পুনরাবৃত্তি করাহল, বড়টিকে খাঁচায় আটক হয়েছে। অন্যান্য পাখীরা তাদের বাসায় নেই। অপর সেনা ঘোষণায় বলা হয় “টি ৮ গেছে।‘বড়টি’ হলেন মুজিব এবং ‘টি’ হলেন তাজুদ্দিন।
২৭ মার্চ কয়েক ঘন্টার জন্য সান্ধ্য আইন শিথিল করা হলে তাজুদ্দিন ভারতে যাবার। জন্য ঢাকা ত্যাগ করেন। বেশীরভাগ নেতাই প্রথম সুযোগে ঢাকা ত্যাগ করেন। কিন্তু সমস্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের শহর থেকে পালানোর একদিন পর অর্থাৎ ২৮। মার্চ তার আগামাসি লেনের বাসা থেকে মোশতাককে উদ্ধার করে তার বন্ধু ডাঃ টি হোসেনের সিটি নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়া হয়। আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদে নিশ্চিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল এবং স্পীকার পদের জন্য প্রার্থী হিসেবে মোশতাকের নাম। ছিল। সেনাবাহিনী কি তাকে খুঁজতে তার বাড়ীর দিকে যায়নি যেখানে তারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার জন্যে খুজে বেড়াচ্ছিল?
এমনকি অবাঙালী চিকিৎসক ডাঃ রব তাকে দেখার পরও মোশতাক সিটি নার্সিং হোমে প্রায় দশদিন অবস্থান করে।।
যাহোক, ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল সকালে কলকাতা অল ইন্ডিয়া রেডিও একটি বেতার ঘোষণায় বলে যে, কয়েকজন ভারতীয় নেতা অতিশীঘ্র বাংলাদেশের স্বীকৃতি দাবী করেছে। মোশতাক ও তার বন্ধু হোসেন এটা বুঝতে পারে যে, ভারত যে কোনদিন। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে; যদি বীকৃতি দেয়া হয় তবে তারাও তা থেকে বঞ্চিত হতে। চায়নি। হোসেন মোশতাককে বলে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা স্বীকৃতি (বাংলাদেশকে)। দিতে সিটি নার্সিং হোমে আসতে পারবে না। কাউকে গিয়ে তাদের কাছে প্রস্তাব করতে। হবে।” বিকেলে হোসেনকে মোশতাক জিজ্ঞেস করে, তুমি কি সত্যিই মনে কর আমার। দেশের বাইরে যাওয়া উচিত? হোসেন বলে, তুমি রাজনীতিবিদ, আমি নই। কিন্তু আমি মনস্থির করেছি এবং আমি তোমাকে সবরকমের সাহায্য করতে পারি।মোশতাকের ঢাকায় উপস্থিতি গোপন থাকতে পারে না। সিটি নার্সিং হোমে ৫০ জন লোক ছিল এবং তাদের মধ্যে কয়েকজন ছিল আওয়ামী লীগের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল টিক্কা খানের ভারপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হামিদুল হক চৌধুরী। জানতে পারে যে, মোশতাক ঢাকায় আছে এবং সে মোশতাকের সংস্পর্শে যাওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু সে সময়ে মোশতাক ভারতের পথে রওয়ানা হয়ে গিয়েছিল।
হামিদুল হক চৌধুরীর অন্য কোন আওয়ামী লীগ নেতার সান্নিধ্যে যাওয়ার সাহস। ছিল না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় তাজুদ্দিন।।
হামিদুল হক মোশতাককে ভালভাবেই জানত; এমনকি যদিও তারা আপাতভাবে। বিরোধী শিবিরে ছিল তবুও তারা দু`জন অনেক ক্ষেত্রেই ছিল এক রকম।।
ভারতে পৌছে তাজুদ্দিন ঘোষণা করেন, আমরা যুদ্ধ করতে চাই, আমরা যুদ্ধ করতে চাই; কিভাবে?” তিনি প্রশ্ন করেন, তা তিনি জানতেন না। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, আমরা যুদ্ধ করবো। কয়েকজন তাজুদ্দিনের কথা স্মরণ করে, ঠাট্টা করে কিন্তু সনে। প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হয়েছে আমরা যুদ্ধ করবো” এই ঘোষণার মাধ্যমে।
মোশতাকের চিন্তাভাবনা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে ভারতে গিয়েছিল তার বন্ধু ও সহকর্মী যারা সীমান্ত অতিক্রম করার সুযোগ পেয়েছিলো তাদের সাহায্যে সরকার গঠনের সম্ভাবনা পরীক্ষা করতে। হঠাৎ সে প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হলো যে, যদি জাতীয় পরিষদ সমবেত হয় তবে সে স্পীকার হতে পারে।
মোশতাক বেশ অনিচ্ছার সাথে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ গ্রহণ। করে। কিন্তু সে তার পদকে নিজের সুবিধার্থে ব্যবহার করে। মার্কিন কটনীতিকগণ এবং অন্যান্য কর্মকর্তা যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে বিভক্ত করতে চাইছিল। তার মোশতাকের সংস্পর্শে আসে।
মোশতাক পরে বলেছে যে সে মার্কিন কূটনীতিকদের থেকে শুধুমাত্র বাংলাদেশ। সম্পর্কে ওয়াশিংটনের সরাসরি চিন্তাভাবনা জানার জন্য চেষ্টা করেছিল। এমনকি দিল্লীস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ কিটিং, ঢাকার মার্কিন কনসাল জেনারেল হারবার্ট পিঙ্ক যখন। আমেরিকার পাকিস্তানের দিকে ঝুকে পড়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছিল, সেখানে। মোশতাকের বাকচাতুর্যপূর্ণ ব্যাখ্যা হতবুদ্ধি করে দেয়। মোশতাকের ব্যাখ্যা হেনরী কিসিঞ্জার আরো হাস্যকর করে তোলে। কিসিঞ্জার দাবী করেছিল যে সে সময়ে ‘ভারতীয় আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের ইয়াহিয়া খান ও কলকাতা কেন্দ্রিক বাংলাদেশ নেতৃত্বকে আপোস মীমাংসার আলোচনা আরম্ভ করতে প্ররোচিত করেছিল। কিসিঞ্জারের ‘কলকাতা কেন্দ্রিক বাংলাদেশ নেতৃত্ব` বলতে বাংলাদেশ সরকারের অন্য চার সদস্য অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজুদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী এবং এ,এইচ, কিট কামরুজ্জামানকে নয়, শুধুমাত্র পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোশতাককেইবোঝাতো। ১৯৭১ সালের অক্টোবরে দৈনিক টেলিগ্রাফ বলে, একমাত্র বাস্তব সমাধান হলো এখন গোপন বিচারের সম্মুখীন শেখ মুজিবের সাথে আপোস করা, এমনকি তার সময়ও। অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে। এর পূর্বে যদি পাকিস্তান সরকার ও নির্বাসিত বাংলাদেশ পরকারের মধ্যে আপোস-মীমাংসা হতো তবে মুজিবকে বিনাশর্তে মুক্তি দিতে হতো। ৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে আওয়ামী লীগ বলেছিল যে রাষ্ট্রদ্রোহিতার জন্য আগরতলা ভুযন্ত্র মামলার বিচারের সম্মুখীন হওয়া কেবলমাত্র মুজিবই রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান হূত গোল টেবিল বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। ইয়াহিয়ার বন্ধু এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফরল্যান্ড দাবী করে যে সে ইয়াহিয়াকে বলেছিল আমেরিকা অনুভব করে যে মুজিব ভবিষ্যতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের স্থায়ীত্বের চাবিকাঠি। তবুও সে পশ্চিম কস্তানের একটি কারাগারে আটক মুজিবকে উপেক্ষা করে কলকাতায় থাকা মোশতাকের সাথে লেনদেন করতে চাইছিল। ফারল্যান্ড, ১৯৭১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ইয়াহিয়া খানকে পরামর্শ দেয় যে আমেরিকা পাকিস্তান সরকার এবং নির্বাসিত বাঙালীদের মধ্যে ‘গোপন যোগাযোগ স্থাপন করতে তাদের মধ্যস্থতা করবে।’ সে ইয়াহিয়ার কাছে মোশতাকের নাম সুপারিশ করেছিল।
দ্বিতীয় অংশ আগামীকাল…
হু কিলড মুজিব বই থেকে সংকলিত…
[ভারতীয় সাংবাদিক এ এল খতিবের সাংবাদিকতা জীবনের বেশির ভাগ কাটে ঢাকায়। তিনি কাছ থেকে দেখেছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ। ১৫ আগস্টের পূর্বাপর ঘটনা বিবৃত হয়েছে তাঁর হু কিলডমুজিব বইয়ে।]
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা
করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো
দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না।
পহেলা এপ্রিল পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন
করে। অন্যথায় কারো না কারো কাছে তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত হতে হবে এবং এটি নিয়ে হাস্যরস
তৈরি হতে পারে।
এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে
পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী
দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।
একই সাথে এদিন পরিবারের ছোটরা সাধারণত বড়দের সাথে নানাভাবে মজা
করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আবার বন্ধু বা কলিগরাও একে অন্যের সাথে মজা করে। তবে
যাকে বোকা বানানো হয়, তাকে শেষে সবাই মিলে চিৎকার করে জানিয়ে দেয় 'এপ্রিল ফুল'।
ধারণা করা হয়, ইউরোপে এপ্রিল ফুলের প্রসার ফ্রেঞ্চ জাতির মধ্যে।
ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল, ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন হিসেবে
পালন শুরু করে। ফ্রান্সই প্রথম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের
মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । অর্থাৎ তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে
ইতালীয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী প্রবর্তিত গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রচলন হওয়ারও
আগে। পাশাপাশি ১ এপ্রিল বন্ধুদের উপহার আদানপ্রদানের প্রথা বদলে যায় ১ জানুয়ারি। কারণ
তখন বিভিন্ন দেশে জুলিয়ীও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউইয়ার পালিত হত ১ এপ্রিলে। অনেকেই
এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু
১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর প্রথা চালু
করে।
ফ্রান্সে কাউকে বোকা বানালে বলা হত এপ্রিল মাছ (April fish), ফ্রেঞ্চ
ভাষায় poisson d’avril. এই্ নামকরণের কারণ, রাশিচক্র অনুযায়ী স্বর্গের কাল্পিক রেখা
অতিক্রম করলে এপ্রিলে সূর্যকে মাছের মত দেখায়। এইদিনে তারা ছুটি কাটাত এবং মরা মাছ
এনে তাদের বন্ধুদের পেছনে সেটে দিয়ে মজা করত।
ডাচদের আরও কারণ রয়েছে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড
শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিল তারা নিজেদেরকে গুইযেন বা ভিখারী বলে পরিচয়
দিত । ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোট শহর ডেন ব্রিয়েল
করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ
সেনাপ্রধান বা দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। সেই থেকে দিনের প্রচলন।
মুসলমানদের জন্য ট্র্যাজেডির?
বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আসলে মুসলমানদের
বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে।
অনেকেই মনে করেন ১৫শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান
রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন
এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন।
আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।
কিন্তু এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।
"এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে
দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে
সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা
গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোন কোন সূত্র
বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠনিক চুক্তি স্বাক্ষরের
মাধ্যমে হয়েছিল।"
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও
ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের
যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সাথে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।
"ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি।
আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরী করা হয়েছে, যার সাথে কোন ঐতিহাসিক
সংযোগ নেই।"
মি. ছিদ্দিক বলেন অন্যদিকে গূরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন
নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন
করে না।
মজা আনন্দের জন্য তো কোনো বিশেষ দিন আমাদের না হলেও চলে। সেখানে
কোনো ছক কষে কাউকে ঘাবড়ে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়ে আনন্দ নেওয়াটা সুস্থ
মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিতেই পারে।
মজা করে কাউকে বোকা বানাতে চাইলে সেটা বিশেষ কোনোদিনেই করতে হবে এমনটা তো নয়। মজা করুন, তবে সেটা বোকা বানিয়ে নিজের বিমলানন্দ নেওয়ার মাধ্যমে নয়। কারণ আপনি যাকে বোকা বানাতে চান, সে যে আপনাকে কখনো বোকা বানানোর চেষ্টা করতে না, এটা ভাববেন না। আর এই বোকা বানাতে গিয়ে আপনার স্বভাব, সম্পর্কগুলো যে নষ্টের দিকে যেতে পারে, সেটাও তো আপনাকে ভাবতে হবে।
মন্তব্য করুন
ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
গবেষণা অনুযায়ী, গত চার মাসে রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টিরও বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া।
মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত রোগ হচ্ছে মাইক্রোসেফালি, যা মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাইরাসের কারণে গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক অপরিপক্ব থাকে এবং শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট হয়। এই রোগের জন্য ব্রাজিলে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থেকে জনজীবনকে রক্ষা করতে হলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন মশা নিধনের কার্যকরী আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। মশার উপদ্রব ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করি।
অন্যদিকে, মাছির উপদ্রবে জরাজীর্ণ ঢাকার বসবাসরত কোটি মানুষের। সামনে আসছে বর্ষাকাল। প্রবল বৃষ্টি আর পানিতে টইটুম্বুর থাকবে বাড়ীর আঙ্গিনা রাস্তাঘাট কিংবা আশপাশের অনেক স্থান। বর্ষাকাল মানেই মশা-মাছির উপদ্রব। ছোঁয়াচে রোগের জাঁকিয়ে বসার আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তাই এই সময় দরকার অতিরিক্ত একটু সতর্কতা, অতিরিক্ত কিছুটা সাবধানতা। খাবার খোলা রাখলে, বা বাড়িতে নোংরা আবর্জনা জমলে, বা খোলা ড্রেনে মাছির উপদ্রব বাড়ে। মাছি থেকে নানা রকম রোগও ছড়ায়। তাই বাড়ি থেকে মাছি তাড়াতে অবশ্যই করুন এই কাজগুলো।
বিজ্ঞান বলছে, মাছি আমরা যা জানি তার থেকেও অনেক বেশি রোগজীবাণু বহন করে। মাছির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে।
আমেরিকান গবেষকরা বলছেন, ঘরের মাছি আর নীল মাছি মিলে ৬০০য়ের বেশি বিভিন্নধরনের রোগজীবাণু বহন করে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রমণের জন্য দায়ী, যার মধ্যে রয়েছে পেটের অসুখের জন্য দায়ী জীবাণু, রক্তে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন জীবাণু এবং নিউমোনিয়ার জীবাণু।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাছি এসব জীবাণু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়ায় তাদের পা আর ডানার মাধ্যমে। গবেষকরা বলছেন, মাছি তার প্রত্যেকটি পদচারণায় লাইভ জীবাণু ছড়াতে সক্ষম।
মাছির মাধ্যমে নানা রোগের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ এটি নর্দমায় বসে, ক্ষতিকর জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া বহণ করে। মাছি দূর করার জন্য বাজারে যেসব স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর।
মাছির উপদ্রব কমানো সহজ কাজ নয়। তবে তা কমানোর চেষ্টা তো করতেই হবে। স্বাস্থ্যক্ষাত ও সিটি কর্পোরেশনের সঠিক উদ্যেগে মাছির উপদ্রব কমানোটা অনকে সহজ হতে পারে। এছাড়াও বাসা বাড়িতে বসবাসরত মানুষজন নিজেরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাছির খাবারের উৎসগুলো ফেলে দেওয়া, পোষা প্রাণীর নোংরা দূর করা, মাছি ঢোকার পথ বন্ধ করু, বিশেষ কিছু গাছ রোপণ করুন, এমনকি প্রাকৃতিক ফাঁদ পেতেও মানুষ সতর্ক থাকতে পারে।
মশা. মাছি রাজধানী জনজীবন সিটি কর্পোরেশন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের
শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা
অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন
সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত
হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত
শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে
মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে
পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের
প্রতিফলন হয়ে দেশ ও
জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার
চেয়ে সুশিক্ষিত
হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।
সুশিক্ষিত একজন মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকবে। মনকে সুন্দর করবে। মানসিকতাকে পরিপূর্ণ করবে মানবিকতায়। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। এক কথায় প্রজন্মকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর তাই শিক্ষাকে পর্যবসিত করতে হবে সুশিক্ষায়।
সুশিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিক্ষার এমন এক অবস্থা, যে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।
শিক্ষিত সমাজে অনেক ব্যক্তিই প্রতিনিয়ত হাজারও জঘন্য ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করছে একদল স্বার্থপর শিক্ষিত মানুষ। যাদের কাছে জিম্মি দেশের নানান শ্রেণী পেশার মানুষ,বৃদ্ধ,শিশু কিংবা নারীরা।
শিক্ষিতের ব্যানার প্রয়োগ করে হাসিল করছে তাদের নিজস্ব স্বার্থ। যা কিনা দেশ জাতীর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব নামধারী শিক্ষিত মানুষদের যেন দেখার কেউ নেই।
দেশের বর্তমান ঘটনাবহুল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, আবার তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে, শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আবার ছাত্র শিক্ষককে ধর্ষণ করছে তাহলে, শিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির মানসিকতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে বর্তমান সমাজে বাবার কাছেই তার মেয়ে নিরাপদে থাকে না। এটাই কি তাহলে শিক্ষা?
যেখানে বাবা মায়ের কলিজার টুকরা শিক্ষিত সন্তান তার পিতা-মাতাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।
শিক্ষা নামক শব্দকে ব্যবহার করে শিক্ষিত নামক লোগো লাগিয়ে ঘুরছে কিছু শিক্ষিত মহল। আর এর মারাত্মক ফলাফল হচ্ছে এসব ঘটনাগুলো। সমাজে সন্তানকে বাবা-মা বড় করছেন। শিক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু সন্তান তার বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। তাহলে এখানে আমাদের শিক্ষার আলো কোথায় গেল?
যদি শিক্ষার বদলে মানুষ সুশিক্ষা অর্জন করত, তাহলে হয়তো নারীরা লাঞ্ছিত হতনা, হতনা বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া, শিশু ধর্ষণ, কিংবা পরম মমতাময়ী মা কে থাকতে হত না বৃদ্ধাশ্রমে।
তবে,
দেশের বড় বড় দায়িত্বতে
থাকা শিক্ষিত ও সুশিক্ষিত দায়িত্ববান
ব্যক্তিরা, কিংবা রাজনীতি, সমাজ কিংবা কোন
নাম করা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে
থাকা ব্যক্তিরা তাদের সুশিক্ষিত মনোভাবে যদি দেশের তরুন
প্রজন্মকে শিক্ষিত নয়, বরং সুশিক্ষিত
করে গড়ে তোলার জন্য
ভূমিকা রাখেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের পরবর্তী
প্রজন্মে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে নিয়ে যাবে।
সুশিক্ষা প্রজন্ম বিকাশ তরুণ তরুণী শিক্ষা
মন্তব্য করুন
পুরুষের কাছে নারী মানে মহীয়সী, নারী মানে আত্মবিশ্বাসী, নারী মানে সম্মান, নারী
মানেই মাতৃত্ব, নারী মানে ঠিক যেন তাজা পবিত্র ফুল। যে ফুলকে আগলে রাখতে হয় পরম মমতায়
ভালোবাসায় যত্নে। নারী নামক এই ফুলকেই সাজিয়ে রাখতে হয় ফুলদানিতে। যেন সম্মান ছড়ায়
এক পৃথিবী সমপরিমাণ।
পুরুষের কাছে
নারী হয় ভালোবাসার ফুল, আবার সেই নারীর জন্যই কোন পুরুষ হারায় তার কূল। কেননা পৃথিবীতে
নারী স্থান যতটাই অপ্রত্যাশিত থাকে না কেন, একটি সংসার, পরিবার, সমাজ কিংবা জাতি পরিপূর্ণই
হয় এই নারীর কারণেই।
পুরুষবিহীন
যেমন পৃথিবী অসম্পূর্ণ তেমনি নারীবিহীন এই জগতসংসার পরিপূর্ণ নয়। কেননা, মাতৃগর্ভের
প্রবল নিরাপত্তা ডিঙ্গিয়ে ধূলোর এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক নারীর গর্ভ থেকেই।
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের ন্যায় নারীদের জীবনেও উচ্চ মানসম্পন্ন এবং মূল্যবান ব্যক্তিত্বের অবস্থা থাকা জরুরী। এটি নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা, সমর্থন, এবং সমানুভূতির মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়ে এবং সমাজে প্রতিরোধশীল ও উন্নত করতে সাহায্য হয়ে থাকে। এটি একটি ব্যক্তির যোগাযোগে, সাধারণ জীবনে, শিক্ষা, কাজে, এবং সমাজে প্রভাবিত হওয়ার একটি উপায়ও হতে পারে।
যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে নারীদেরও ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা নারীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর পরিপূর্ণ হবে পৃথিবীর চলমান প্রথা।
এছাড়াও ধর্মীয় জায়গা থেকে দেখা যায়, একটা সময় যেখানে গোটা দুনিয়া যেখানে নারীকে একটি অকল্যাণকর তথা সভ্যতার অপ্রয়োজনীয় উপাদান মনে করতো সেখানে ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। যেসব দোষ নারীকে দেওয়া হতো আল্লাহ তা’আলা কুরআন-উল-কারিমে আয়াত নাজিল করে নারীকে সেসব দোষ অপনোদন থেমে মুক্তি দিয়েছে। তাই নারীদের তার নিজ প্রেক্ষাপটে নিজের স্ব স্ব সঠিক দায়িত্বটা অবগত হয়ে তা পালনে মনযোগী হলে সঠিক পুরুষের কাছে নীতিগত নারী ঠিক সঠিক মূল্যয়ন ই পাবে।
তবে, এক শ্রেনির পুরুষ নামক কিছু অপ্রত্যাশিত মানুষের কাছে নারীর মর্যাদা নেই বল্লেই চলে, এদের মধ্যে কিছু পুরুষের মস্তিস্কহীন, কিছু পুরুষ মনুষ্যত্বহীন আর কিছু পুরুষ অমানুষের গণনায় অবস্থিত। কেননা পৃথিবীতে নারীদের যে পুরুষ সম্মান ভালোবাসা আর মমতায় আগলে রাখতে পারেনা বা জানেনা, সেই পুরুষ কখনোই সঠিক পুরুষের মধ্যে পড়েনা। এতে করে ওইসব নারীদের কাছে পুরুষদের অবমানা হয় যে সব নারী সঠিক পুরুষদেরকে দায়িত্ববান মনে করেন।
তবে, পুরুষ
সর্বদা নারীদেরকে তার মনুষ্যেতর স্থান থেকে পৃথিবীর সেরা সম্মানটা দেওয়া উচিত। কেননা
সঠিক পুরুষ আর সঠিক ব্যক্তিত্বের অধিকারি হতে এই নারীদের ভূমিকাই অপরিসীম। অবস্থান,
আস্থা আর বিশ্বাষের দিক থেকে নারী পুরুষ উভয়েই সমান্তরাল হয়ে জীবন পরিচালনা করা উচিত।
এতে করে তৈরি হবে সঠিক বন্ধন। হোক সেটা সামাজিক, পারিবারিক কিংবা জাতীগত। চলে যাবে
অবমাননা, চরিত্রহীনতা কিংবা নারীর মূল্যহীনতা। থেকে যাবে হৃদয়ের বন্ধন ভালোবাসা সম্মান
আর চলমান জীবন পরিচালনার সুশিল সমাজের পারিবারিক বন্ধন। তৈরি হবে নারী পুরুষের সঠিক
বন্ধন আর ভবিষ্যত প্রজন্মের সঠিক নির্দেশনা।
নারীর প্রতি সম্মান পুরুষের ভালোবাসা নারী দিবস
মন্তব্য করুন
“পৃথিবীতে
যা কিছু মহান সৃষ্টি
চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী
অর্ধেক তার নর’’ কবি
কাজী নজরুল ইসলামের চোখে নারী এভাবেই
ধরা পড়েছে। তবে সবসময় নারীদের
এমন মহান দৃষ্টিতে দেখা
হতো না। এর জন্য
করতে হয়েছে নানা আন্দোলন। নারীর
সংগ্রামের ইতিহাস পৃথিবীতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
১৮৫৭
সালের ৮ই মার্চ নারীদের
জন্য একটি স্মরণীয় দিন
বলে বিবেচিত। এ দিন মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি
কারখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন
শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়,
অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর
পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল
বের হয়। কিন্তু পুলিশ
এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালায়।
বহু শ্রমিককে আটক করা হয়।
এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮
মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক
সূচ শ্রমিকেরা। এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা
শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা
কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি
অতিক্রম করে।
১৯০৮
সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা
জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
হয় জার্মানিতে। এই সম্মেলনে নারীদের
ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী
উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের
২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগে। এতে ১৭টি দেশের
প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ
সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক
নারী দিবস হিসেবে পালনের
সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে
প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি
পালিত হয়। ১৯১৪ সাল
থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে
পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫
সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি
পালন করতে থাকে। তবে
আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের
১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ
দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল
সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়। এর ফলে অধিকার
বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক,
অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির
পথ সুগম হয়। নারীর
অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায়
এটি এক নতুন অধ্যায়ের
সূচনা করে।
বাংলাদেশ
স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই যথাযোগ্য
মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী
দিবস পালন করে আসছে।
নারী দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাংলাদেশের সংবিধানে নারী দিবসের শিক্ষাসমূহের
প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের
সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান
মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল
নারী হওয়ার কারণে যাতে কেউ বৈষম্যের
শিকার না হয় তার
আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে নারীর সুরক্ষার
বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে এবং নারীর নিরাপত্তায়
বিশেষ বিশেষ আইন প্রণয়ন করা
হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান শিল্প পোশাক শিল্প, যার অধিকাংশ শ্রমিকই
নারী। পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ,
কর্মঘণ্টা এবং ন্যায্য মজুরী
পাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে।
যে নারী শ্রমিকদের মধ্য
থেকেই দিবসটির উৎপত্তি হয়েছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে সেরূপ নারী শ্রমিক রয়েছে
কয়েক লক্ষ। নিউইয়র্কের সেদিনকার সূচ কারখানার নারী
শ্রমিক ও বাংলাদেশের পোশাক
তৈরি কারখানার নারী শ্রমিক যেন
একই পথের অনুসারী। বাংলাদেশ
প্রতি বছর। যথাযোগ্য মর্যাদার
সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন
করে থাকে। কিন্তু এখানকার নারী পোশাক শ্রমিকেরা
কতটা সুরক্ষিত তার প্রশ্ন থেকেই
যায়।
বাংলাদেশে
নারীদের জন্য অনেক আইন
ও বিধি বিধান থাকলেও
বাস্তব ক্ষেত্রে এখনও নারীরা উপেক্ষিত।
নারীদের গৃহস্থালী কাজের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই, মাতৃত্বকালীন ছুটির
অভাব, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি লক্ষ্যণীয়।
তবে এখন এর এ
সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমেছে। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকেরা যে
সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে এর পেছনে
নারী দিবসের কিছুটা হলেও ভূমিকা আছে
বলে মনে করা হয়।
বাংলাদেশসহ
বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকেরা
আজও নানা ভাবে নির্যাতনের
শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের রানা প্লাজা ও
তাজরিন ফ্যাশনস এর দুর্ঘটনার পর
দেখা গেছে, এতে হতাহতদের মধ্যে
অধিকাংশই নারী। নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও মজুরী অধিকাংশ
উন্নয়নশীল দেশেই নিশ্চিত হয়নি বলে মনে করা
হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন
কোনো উপকারে এসেছে বলে মনে হয়
না। অনেকের মতে আন্তর্জাতিক নারী
দিবস বর্তমানে কেবল একটি উৎসবে
পরিণত হয়েছে, যার বাস্তব কোনো
সফলতা নেই।
বর্তমান
যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক
যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ
সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য
ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর
পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন
ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী উন্নয়নের প্রথম
এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক
দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে
সব সময় পুরুষের অধীন
এবং ছোট করে দেখা
হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে
না। এটিও নারী উন্নয়নের
পথে এক বড় অন্তরায়।
নারী যদি শিক্ষার আলোয়
আলোকিত না হয় তবে
সে সচেতন হয় না। তার
আয় বাড়ে না। ফলে সে
অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়।
এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের
পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।
নারী
উন্নয়ন করতে হলে নারীর
ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ
মূল্যায়ন করতে হবে। নারী
উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে
একসাথে কাজ করতে হবে।
নারীর প্রধান শক্তি শিক্ষা,
এ শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। নারীশিক্ষার বিস্তার
ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে
এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা। এর
জন্য নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি
রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বার্থের উন্নয়নে
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সহ নারীর উন্নয়নে
সহায়ক সেবা প্রদান করতে
হবে।
আন্তর্জাতিক
নারী দিবস নারীর অধিকার
আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস।
নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে
এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির
আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা।
নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ
করতে পারি, তবেই দিবসটির উদ্যাপন
সার্থক হবে।
নারী
উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা
হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে
সব সময় পুরুষের অধীন
এবং ছোট করে দেখা
হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে
না। এটিও নারী উন্নয়নের
পথে এক বড় অন্তরায়।
নারী যদি শিক্ষার আলোয়
আলোকিত না হয় তবে
সে সচেতন হয় না। তার
আয় বাড়ে না। ফলে সে
অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়।
এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর
কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের
পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।
নারী
দিবস নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী,
ডাক্তার ও কর্পোরেট সেক্টরে
নিয়োজিত কর্মজীবী নারীদের মতামত জানতে চাইলে তারা জানায়, মানুষ
এখন নারীদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়েছে।
নারীরা নিজেরাও তাদের মতামত নিয়ে বেশ সোচ্চার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ) জানায়, মেয়েদের নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাসী হতে হবে, কখনো
দমে যাওয়া যাবেনা। একে অপরকে সাহায্য
সহযোগিতা করে এগিয়ে যেতে
হবে।
প্রতিবছর
নারী দিবস উদযাপন নিয়ে
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক
আয়োজন করে থাকে। আন্তর্জাতিক
নারী দিবস ২০২৪ এর
প্রতিপাদ্য - নারীর সম অধিকার, সমসুযোগ,
এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর
অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস।
নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে
এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির
আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা
নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ
করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না। এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।
ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
বাংলাদেশের শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের প্রতিফলন হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে সুশিক্ষিত হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।